Ajker Patrika

ইয়াবা

সম্পাদকীয়
ইয়াবা

ইয়াবা কারবারের যে একটা সিন্ডিকেট আছে, সেই সিন্ডিকেটের ভেতরে যে পুলিশ, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের কেউ কেউ রয়েছেন, সে কথা নতুন নয়। সেই অর্থে গত শনিবারের আজকের পত্রিকায় ইয়াবা নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনটি জানা ঘটনারই পুনরাবৃত্তি। এখানে শুধু একটি বড় প্রশ্ন তুলেই ঘটনার ভয়াবহতা প্রকাশ করা যায়। গত বছরের ৫ আগস্ট পটপরিবর্তনের পর কি তাহলে পুঁজে ভরা এসব জায়গার কোনো পরিবর্তন হয়নি? বরং তা আরও ভয়ংকর হয়ে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাপনকে তছনছ করে দিচ্ছে?

নিষিদ্ধ বস্তুর প্রতি আকর্ষণ একটা চিরাচরিত ব্যাপার। মাদকের প্রতি আকৃষ্ট মানুষের সংখ্যা বাড়তে থাকে, যদি মাদকের অবাধ প্রবাহ নিশ্চিত থাকে। কোথাও বাধা না পেয়ে দেশের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে অনায়াসে যদি মাদক ঢোকে, তাহলে তা ব্যাপকভাবে দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়বে, এতে আর সন্দেহ কী? তাই আমাদের দেশে মাদক সহজলভ্য হয়ে গেছে, কৌতূহল থাকলেই মাদকদ্রব্য বিক্রেতার সঙ্গে যোগাযোগ করায় কোনো বাধা নেই। এমন অবস্থা বিরাজ করতে থাকলে মূলত তারুণ্যের মেধা ও শক্তির বিনাশ ঘটা অসম্ভব নয়। একই দিনের পত্রিকার শেষ পৃষ্ঠায় বরিশালে মামা-ভাগনের একত্রে ইয়াবা সেবনের একটি খবর প্রকাশিত হয়েছে। ইয়াবার থাবা যে গুরু-শিষ্য মানে না, সেটাও দিবালোকের মতো স্পষ্ট।

মূল প্রতিবেদনটি পড়ার পর মনে হলো, এই বিশাল সিন্ডিকেট ভাঙা খুবই শক্ত। একদিকে কোটি টাকার হাতছানি, অন্যদিকে শাস্তিবিহীন অসততার জয়গান ইয়াবার রাজ্যকে ক্রমেই শক্তিশালী করে চলেছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ও পুলিশের সদস্যরা যখন ইয়াবা চক্রের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছেন, তখন প্রমাণ সাপেক্ষে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। কী সে ব্যবস্থা? প্রতিবেদনটি থেকেই উদাহরণ নেওয়া যাক। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ১০ কোটি টাকার ইয়াবা আটকের পর তা বিক্রি করে টাকা ভাগাভাগির অভিযোগে কক্সবাজার জেলা গোয়েন্দা পুলিশের সাবেক ওসিসহ সাত পুলিশ সদস্যকে প্রত্যাহার করা হয়। আরেকবার পড়ুন: তাঁদের ‘প্রত্যাহার করা হয়’। এই হলো শাস্তি! প্রত্যাহার করা হয় মানে, তাঁদের পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করা হয়। ব্যস! কাজ শেষ! এঁরা এখন মাঠে-প্রান্তরে দৌড়ে টাকার ভাগাভাগিতে অংশ নিতে পারবেন না। কিন্তু যে কাজটি তাঁরা করেছেন, তার শাস্তি কি ‘প্রত্যাহার’-এ সীমাবদ্ধ থাকবে? এই ব্যবস্থা কি আদৌ ফল দেবে?

মিয়ানমার সীমান্ত দিয়ে ইয়াবাসহ মাদকের প্রবেশ ভয়াবহভাবে বেড়েছে। প্রশাসনে থাকা মানুষেরাও মাদকদ্রব্যে টাকার গন্ধ পেয়েছেন। পুলিশ ও প্রশাসন যদি মাদকদ্রব্য কারবারের গডফাদারদের অভয় দেয়, তাহলে মাদকদ্রব্য কারবারিদের ঠেকাবে কে? মাঝে মাঝে ইয়াবার চালান লোকদেখানোভাবে ধরা পড়ে বটে, কিন্তু তা যে আইওয়াশ হতে পারে, এমন আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।

মাদক রাজ্যের চুনোপুঁটিদের কখনো কখনো ধরা হচ্ছে বটে, কিন্তু রাঘববোয়ালেরা থেকে যাচ্ছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। পুলিশ এবং মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরে যেসব লোভী কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন, তাঁদের সমূলে উৎপাটন করা না হলে এই গডফাদাররা কি ধরা পড়বে? সেটাই লাখ টাকার প্রশ্ন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

শেখ হাসিনার বিষয়ে ঢাকার সঙ্গে আলোচনায় প্রস্তুত নয়াদিল্লি: ভারতীয় পররাষ্ট্রসচিব

দেশে ফেরা, নির্বাচন ও প্রধানমন্ত্রিত্ব নিয়ে যা বললেন তারেক রহমান

চিরশত্রু পাকিস্তানের কাছে বন্ধু রাশিয়ার জেট ইঞ্জিন বিক্রি, ভারতে রাজনৈতিক বিতর্ক তুঙ্গে

ভারতের ‘উঠান’ যেভাবে ক্রমেই চীনের ‘খেলার মাঠ’ হয়ে উঠছে

উপদেষ্টাদের অনেকে ‘বিশ্বাসঘাতকতা’ করেছেন, তাঁরা ‘সেফ এক্সিট’ খুঁজছেন— নাহিদের মন্তব্যে আলোচনার ঝড়

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত