Ajker Patrika

শেখ হাসিনার বিষয়ে ঢাকার সঙ্গে আলোচনায় প্রস্তুত নয়াদিল্লি: ভারতীয় পররাষ্ট্রসচিব

ইউএনবি, নয়াদিল্লি
আপডেট : ০৬ অক্টোবর ২০২৫, ১৭: ৪০
আজ সোমবার নয়াদিল্লিতে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মতবিনিময় সভায় বিক্রম মিশ্রি ও মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল। ছবি: ইউএনবি
আজ সোমবার নয়াদিল্লিতে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মতবিনিময় সভায় বিক্রম মিশ্রি ও মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল। ছবি: ইউএনবি

ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারতে অবস্থান ও দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ওপর এর প্রভাব বিষয়ে ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রি বলেছেন, এটি একটি ‘বিচারিক আইনিপ্রক্রিয়া’ এবং এর জন্য দুই সরকারের মধ্যে ‘সম্পর্ক ও আলোচনা’ প্রয়োজন।

বিক্রম মিশ্রি বলেন, ‘আমরা এ বিষয়গুলো খতিয়ে দেখছি। আমরা এ বিষয়গুলোতে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কাজ করার জন্য প্রস্তুত।’

এর বাইরে এ মুহূর্তে এ বিষয়ে আরও কিছু বলা গঠনমূলক হবে বলে মনে করেন না ভারতীয় পররাষ্ট্রসচিব।

আজ সোমবার নয়াদিল্লিতে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে (এমইএ) ডিপ্লোমেটিক করেসপনডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশের (ডিক্যাব) সদস্যদের সঙ্গে এক ঘণ্টার মতবিনিময়কালে ভারতীয় পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রি এসব কথা বলেন।

বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক ও নির্বাচন নিয়ে ভারতের অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করে বিক্রম মিশ্রি বলেন, ভারত দ্রুততম সময়ের মধ্যে বাংলাদেশে একটি ‘অবাধ, সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক’ নির্বাচনকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন করে। নির্বাচনের মাধ্যমে বাংলাদেশের জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে যে সরকারই আসুক না কেন, ভারত তার সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত।

ডিক্যাবের ২৩ সদস্যের প্রতিনিধিদল ভারত সরকারের আমন্ত্রণে দেশটি সফর করছে। মতবিনিময় সভায় অন্যদের মধ্যে এমইএ মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল, যুগ্ম সচিব (বাংলাদেশ ও মিয়ানমার) বি শ্যাম এবং ডিক্যাব সভাপতি এ কে এম মইনউদ্দিন ও সাধারণ সম্পাদক মো. আরিফুজ্জামান মামুন উপস্থিত ছিলেন।

পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রি বলেন, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার পরবর্তী পদক্ষেপগুলো শুধু এই অঞ্চলেই নয়, বিশ্বজুড়ে নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। তিনি উল্লেখ করেন, বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষ আগামী ফেব্রুয়ারি মাসের কাছাকাছি সময়ে নির্বাচনের একটি সময়সীমার ইঙ্গিত দিয়েছে।

ভারতীয় পররাষ্ট্রসচিব জানান, কর্তৃপক্ষ যখন নিজেরাই নির্বাচনের সময়সীমা সম্পর্কে কথা বলছে, তখন ভারত তাতে উৎসাহিত। ভারত এই নির্বাচন সফলভাবে অনুষ্ঠিত হওয়ার প্রত্যাশা করে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, ‘এটি হবে একটি জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে নির্বাচিত সরকার এবং বাংলাদেশের জনগণ তাদের প্রতিনিধিত্ব করার জন্য যে সরকারকেই বেছে নেবে, আমরা সেই সরকারের সঙ্গে কাজ করব।’

বাংলাদেশের নির্বাচনপ্রক্রিয়া নিয়ে বিক্রম মিশ্রি স্পষ্ট করে বলেন, নির্বাচন কেমন হবে বা এই ম্যান্ডেট গঠনকারী শর্তাবলি কী হবে—তা নির্ধারণের জন্য ভারত হস্তক্ষেপ করবে না। তিনি দৃঢ়ভাবে বলেন, এটি বাংলাদেশের জনগণের সিদ্ধান্তের বিষয়।

বিক্রম মিশ্রি উল্লেখ করেন, একটি নির্বাচন শুধু অভ্যন্তরীণ বৈধতার বিষয় নয়, এটি বৈদেশিক অনুভূতিরও বিষয়। মিশ্রি বলেন, ‘আমি স্পষ্টতই বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তের মাঝখানে ঢুকতে পারি না। এই নির্বাচনগুলো অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিকভাবে কীভাবে দেখা হচ্ছে, তা বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষ, জনগণ ও সুশীল সমাজকেই মূল্যায়ন করতে হবে।’ তিনি জোর দেন, এই সিদ্ধান্তগুলো কেবল বর্তমানকে নয়, বরং মাঝারি ও দীর্ঘমেয়াদি পরিণতি বহন করবে।

পররাষ্ট্রসচিব বাংলাদেশের শান্তি, অগ্রগতি, স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নে ভারতের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদারত্বের কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘এসব বিষয় আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার সঙ্গে যুক্ত এবং আমরা এটিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিই—কেবল নিজেদের জন্য নয়, কারণ, এটি আমাদের পারস্পরিক স্বার্থও রক্ষা করে।’

বিক্রম মিশ্রি বলেন, ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক দৃঢ় সাংস্কৃতিক, ভাষাগত, ধর্মীয় ও ঐতিহাসিক বন্ধনে নিহিত। তিনি আরও বলেন, ‘এ সম্পর্ক পাঁচ দশকেরও বেশি পুরোনো এবং আমি নিশ্চিত এটি সমৃদ্ধি লাভ করতে থাকবে।’

মতবিনিময়কালে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের বিদ্যমান কিছু সমস্যা—যেমন সীমান্ত ব্যবস্থাপনা ও পানি বণ্টন ইস্যু নিয়েও আলোচনা হয়। মিশ্রি স্বীকার করেন, যেকোনো দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে কিছু সমস্যা থাকা স্বাভাবিক। তবে তিনি অন্য কোনো তৃতীয় দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক নিয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানান।

জুলাই ও আগস্টের ঘটনার পরেও ভারত ঢাকার সঙ্গে কাজ করে চলেছে বলে উল্লেখ করেন পররাষ্ট্রসচিব। তিনি বলেন, বর্তমান রাজনৈতিক ব্যবস্থার প্রকৃতি ‘অস্বাভাবিক’ হলেও ভারত তাদের সঙ্গে কাজ করা থেকে বিরত থাকেনি। তিনি জানান, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি প্রথম নেতাদের মধ্যে ছিলেন, যিনি তাঁকে অভিনন্দন জানিয়েছিলেন।

বিক্রম মিশ্রি বলেন, এই সম্পৃক্ততা টেকসই করতে ও ভবিষ্যতে আরও শক্তিশালী সম্পর্ক গড়ার ভিত্তি হিসেবে কাজ করতে উভয় পক্ষেরই একটি উপযোগী পরিবেশ তৈরির দিকে কাজ করা প্রয়োজন। তিনি দ্বিপক্ষীয় পরিবেশকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে—এমন বিবৃতি বা পদক্ষেপ এড়ানোর গুরুত্বের ওপর জোর দেন।

ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারতে অবস্থানসংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে বিক্রম মিশ্রি বলেন, এটি একটি আইনি বিষয় এবং এর জন্য দ্বিপক্ষীয় আলোচনার প্রয়োজন রয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

শেখ হাসিনার বিষয়ে ঢাকার সঙ্গে আলোচনায় প্রস্তুত নয়াদিল্লি: ভারতীয় পররাষ্ট্রসচিব

দেশে ফেরা, নির্বাচন ও প্রধানমন্ত্রিত্ব নিয়ে যা বললেন তারেক রহমান

চিরশত্রু পাকিস্তানের কাছে বন্ধু রাশিয়ার জেট ইঞ্জিন বিক্রি, ভারতে রাজনৈতিক বিতর্ক তুঙ্গে

ভারতের ‘উঠান’ যেভাবে ক্রমেই চীনের ‘খেলার মাঠ’ হয়ে উঠছে

উপদেষ্টাদের অনেকে ‘বিশ্বাসঘাতকতা’ করেছেন, তাঁরা ‘সেফ এক্সিট’ খুঁজছেন— নাহিদের মন্তব্যে আলোচনার ঝড়

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত