Ajker Patrika

রাষ্ট্র সংস্কারের অংশ হিসেবে ব্যক্তির সংস্কার

সেঁজুতি মুমু
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

রাষ্ট্র সংস্কারের কথা চলছে অনেক আগে থেকে। শোনা যাচ্ছে নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের কথা। সবকিছু সংস্কার ও বিনির্মাণ করা হবে। কিন্তু সংস্কার কি শুধু রাষ্ট্রের ক্ষেত্রেই প্রয়োজন? ব্যক্তির সংস্কার প্রয়োজন নেই?

রাষ্ট্রের অন্যতম অংশ তার নাগরিক তথা মানুষ। তাই নাগরিকের সংস্কার হওয়াটাও জরুরি। কিন্তু নাগরিক তো বস্তু নয় যে জোর করে তাদের বিনির্মাণ বা সংস্কার করা যায়। হয়তো আইন প্রয়োগ করে বা কঠোর ব্যবস্থা নিয়ে দুর্নীতি দমানো সম্ভব। কিন্তু অন্তরে যে বিষ রয়ে যায়, তাকে কীভাবে বের করা হবে? তা একমাত্র তখনই সম্ভব, যখন আমরা মন থেকে দেশকে ভালোবেসে দেশের কল্যাণ চাইব। একটা কথা আছে, ‘নিজে ভালো তো জগৎ ভালো’। অর্থাৎ নিজে ঠিক থাকলেই হলো। যদি এক শ জনে পাঁচজনও নিজেকে সংস্কারের কথা ভাবে, তাহলে দেশের অনেকটা পরিবর্তন কি অসম্ভব? এই পরিবর্তনের ভিত্তি ধর্মীয় হতে পারে, নৈতিকতা হতে পারে আবার দেশপ্রেমও হতে পারে। তবে যাই হোক, যদি ব্যক্তি হিসেবে কেউ নিজেকে সংস্কার করতে একবার আগ্রহী হন, তবে তাঁর দ্বারা দেশের উন্নয়ন সম্ভব বলে বিশ্বাস করি। ব্যক্তির সংস্কার রাষ্ট্র সংস্কারে কীভাবে সাহায্য করে—এই প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। ধরা যাক, আজ থেকে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হলাম যে আর কোনো দিন রাস্তাঘাটে যেখানে-সেখানে আবর্জনা, চিপস-চকলেটের প্যাকেট ফেলব না, শুধু নির্দিষ্ট ডাস্টবিনেই ফেলব। এ রকম আরও পাঁচজন করল। তাহলে কি আমাদের রাস্তাঘাট পরিষ্কার থাকবে না? আমরা একটি সুস্থ পরিবেশ পাব না? এভাবে ব্যক্তির সংস্কার বা নিজেকে পরিবর্তনের ছোট ছোট ধাপ দিয়ে আমরা রাষ্ট্র সংস্কারেও বড় ভূমিকা রাখতে পারি।

কখনো ডাস্টবিন ছাড়া যেখানে-সেখানে ময়লা ফেলব না। জনসমাগমপূর্ণ এলাকায়, বিশেষ করে শিশুদের সামনে ধূমপান করব না। নিজের কাজকে অবহেলা করব না, হোক তা পড়াশোনা বা চাকরি অথবা ব্যক্তিগত কোনো কাজ। কখনো রাস্তায় চলাচলের সময় ট্রাফিক আইন ভঙ্গ করব না। চুরি বা ছিনতাই হতে দেখলে বা অন্যায় হতে দেখলে প্রতিরোধ করব, অপরাধীকে পুলিশের হাতে তুলে দেব। কাউকে ধর্মীয় উসকানিমূলক কোনো কথা বলব না। কাউকে এ রকম কথা বলতে শুনলে বা এ রকম বিভেদ সৃষ্টিমূলক কাজ করতে দেখলে প্রতিবাদ করব। বিশ্ববিদ্যালয়ের জুনিয়র শিক্ষার্থীদের তথাকথিত ম্যানারস শেখানোর নামে অত্যাচার করব না ইত্যাদি। এতে দেশের উন্নয়নের পাশাপাশি ব্যক্তিগত ক্ষেত্রেও আমাদের লাভ ছাড়া ক্ষতি হবে না। আমরা যদি নিজেরা ট্রাফিক আইন মেনে চলি এবং কোনো পরিস্থিতিতেই তা ভঙ্গ না করি, তাহলে রোড অ্যাক্সিডেন্ট কমানো সম্ভব! আমরা যদি নিজেদের কাজগুলোয় অবহেলা না করি, যেমন শিক্ষার্থীরা পড়াশোনায় অবহেলা না করে কর্তব্য পালন করলে শিক্ষিতের হার বেড়ে যাবে। যানবাহনের ফিটনেস পরীক্ষাকারী ব্যক্তি যদি নিজে ঠিক থাকেন, তাহলে রোড অ্যাক্সিডেন্টের ঝুঁকি কমতে বাধ্য।

এভাবে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পরিবর্তনের মাধ্যমে আমরা দেশ বিনির্মাণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারি। তরুণেরাই তো জাতির কর্ণধার। তাই আসুন, আমরা তথা যুবসমাজ রাষ্ট্র সংস্কারের অংশ হিসেবে ব্যক্তির সংস্কারে অঙ্গীকারবদ্ধ হই। তরুণদের কয়েকজন এ রকম পরিবর্তন শুরু করলেই অন্যরা তা দেখে অনুপ্রাণিত হবেন, এগিয়ে আসবেন। এভাবে আমরা প্রত্যেকে নিজের অবস্থান থেকে দেশ ও জাতির উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হব। নতুন করে এখন এই অঙ্গীকার করি—দেশের জন্য, জাতির জন্য, নিজের জন্য নিজেকে সংস্কার করতে আমরা পিছপা হব না।

লেখক: শিক্ষার্থী, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এরদোয়ানের বাধায় নেতানিয়াহুকে মিসরের সম্মেলনে নিতে পারলেন না ট্রাম্প

ইসরায়েল থেকে মুক্তি পেলেও ফিলিস্তিনে ফিরছেন না ১৫৪ জন, যেতে হবে ‘অমানবিক’ নির্বাসনে

ভারতে দলিত পুলিশ কর্মকর্তার আত্মহত্যায় তোলপাড়, সুইসাইড নোটে বর্ণবৈষম্যের অভিযোগ

বাংলাদেশ-হংকং ফুটবল ম্যাচ টিভিতে দেখাবে না, তাহলে দেখার উপায়

গাজা শান্তি সম্মেলনে ‘সুন্দরী’ মেলোনিকে নিয়ে মাতলেন বিশ্বনেতারা

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

আইএমএফের ঋণে বেকারত্ব কেন বাড়ে

আইএমএফ অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশকেও ভর্তুকি প্রত্যাহারের কথা বলে। কিন্তু বাস্তবে সে ভর্তুকি তারা মূলত কৃষি ও নিম্নবিত্তের মানুষের সঙ্গে সম্পর্কিত খাতগুলোতে কমানোর জন্যই অধিক চাপ দেয়। বিত্তবান উদ্যোক্তাদের জন্য যেসব নগদ প্রণোদনা ও অন্যান্য ভর্তুকি চালু আছে, সেগুলো কমানোর কথা বললেও সেটি তারা বলে খুবই মৃদু কণ্ঠে। কারণ, এসব খাতে ভর্তুকি বহাল থাকলে পশ্চিমের ক্রেতারা তা থেকে লাভবান হতে পারেন।

আবু তাহের খান 
আইএমএফের ঋণে বেকারত্ব কেন বাড়ে

ইউরোপিয়ান জার্নাল অব পলিটিক্যাল ইকোনমিতে প্রকাশিত গ্রিক অর্থনীতিবিদ মাইকেল ক্লেটসস ও আন্দ্রেয়াস সিন্টোসের লেখা ‘দ্য ইফেক্টস অব আইএমএফ কন্ডিশনাল প্রোগ্রাম অন দ্য আনএমপ্লয়মেন্ট রেট’ শীর্ষক প্রবন্ধের উদ্ধৃতি দিয়ে বাংলাদেশের একটি দৈনিক পত্রিকায় ‘আইএমএফ থেকে ঋণ গ্রহণকারী দেশগুলোয় বেকারত্ব বেড়েছে, কর্মসংস্থান সংকুচিত হয়েছে এবং শ্রমবাজারে অনিশ্চয়তা গভীরতর হয়েছে’ বিষয়ে খবর প্রকাশিত হয়েছে। ১৯৮১-২০১৪ মধ্যবর্তী সময়ে আইএমএফ থেকে ঋণ গ্রহণকারী দেশগুলোর ওপর পরিচালিত গবেষণার ফলাফলের ভিত্তিতে প্রণীত এ প্রবন্ধটিতে বাংলাদেশ, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, কেনিয়া প্রভৃতি দেশের অভিজ্ঞতার বর্ণনা এবং তথ্যও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

সেই গবেষণা মতে, আইএমএফের কাছ থেকে ঋণ পাওয়ার শর্ত হিসেবে সংশ্লিষ্ট দেশগুলো বাজেট ঘাটতি কমানো, রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান বেসরকারীকরণ, শ্রমবাজার উদারীকরণ ও রাষ্ট্রীয় ব্যয় সংকোচনের মতো কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে গিয়ে সেখানকার লাখ লাখ মানুষকে বেকারত্বের মুখে ঠেলে দিয়েছে এবং তাদের সামাজিক সুরক্ষাব্যবস্থাও দুর্বল থেকে ক্রমেই অধিকতর দুর্বল হয়ে পড়েছে। লক্ষ করা যাচ্ছে যে বৈদেশিক বাণিজ্যের ঘাটতি মোকাবিলার জন্য সদস্যদেশসমূহকে ঋণ দিয়ে ইতিবাচকভাবে সাহায্য করা যেখানে আইএমএফের গঠনতান্ত্রিক দায়িত্ব, সেখানে ওই দায়িত্ব পালনের পরিবর্তে প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে তারা ঋণগ্রহীতা দেশের সঙ্গে অন্যায় ও অমর্যাদাকর খবরদারিমূলক আচরণ করে যাচ্ছে। এর সঙ্গে বাংলাদেশের দাদনদার এবং কোনো কোনো এনজিও ঋণের অনেক মিল রয়েছে। এ দেশের অসহায় দরিদ্র কৃষক বা বর্গাচাষি যেমন নিরুপায় হয়ে ঋণের জন্য দাদনদার বা এনজিওর শরণাপন্ন হন, আর সেই সুযোগে দাদনদার ও এনজিও তাঁদের ওপর উচ্চসুদ ও অন্যান্য অন্যায্য শর্ত চাপিয়ে দেয়, আইএমএফের ক্ষেত্রেও বিষয়টি অনেকটা সে রকমই। বৈদেশিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে উচ্চ রপ্তানি ঘাটতিতে থাকা দেশগুলো যখন বৈদেশিক মুদ্রার অভাবে অত্যাবশ্যকীয় আমদানি ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাজ সম্পন্ন করতে অপারগ হয়ে ওঠে, তখনই তারা নিরুপায় হয়ে আইএমএফের শরণাপন্ন হয়। আর এই সুযোগে এ প্রতিষ্ঠানটিও ঋণপ্রার্থী দেশের ওপর এমন সব শর্ত চাপিয়ে দেয়, যেগুলো পূরণ করে ঋণ নেওয়ার ফলে তাৎক্ষণিকভাবে সংশ্লিষ্ট দেশের ঋণচাহিদা পূরণ হয় বটে, কিন্তু বেকারত্ব, ছাঁটাই বা কর্মচ্যুতি ও নানা অমানবিক অনুষঙ্গ দেশগুলোকে আষ্টেপৃষ্ঠে চেপে ধরে। আর সে চেপে ধরা পরিস্থিতিরই বিশদ ব্যাখ্যা করা হয়েছে আলোচ্য প্রবন্ধে।

বাংলাদেশের প্রত্যন্ত কৃষিপ্রধান এলাকাগুলোতে এরূপ ঘটনা প্রায় ঘটে থাক। ফসল ওঠার এক-দুই মাস আগে অভাবী কৃষক তাঁর মাঠের ফসল অতি কম মূল্যে দাদনদারের কাছে অগ্রিম বিক্রি করে দেন অথবা এই শর্তে অতি উচ্চ সুদে ঋণ নিতে বাধ্য হন। শর্ত থাকে যে ফসল ওঠার পর ওই দাদনদারের কাছেই তা বিক্রি করতে হবে। সমুদ্র বা নদীর ইলিশ শিকারি জেলে কিংবা আখচাষিদের ক্ষেত্রেও ঘটনাগুলো মোটামুটি একই রকম। আর সেসব ঘটনারই মোটামুটি ধাঁচের পুনরাবৃত্তি ঘটাচ্ছে আইএমএফও। পার্থক্য শুধু এটুকু যে দাদনদার উচ্চহারে সুদ কষছে আর আইএমএফ উচ্চমাত্রার কঠিন সব শর্ত আরোপ করছে। কিন্তু ফলাফল সেই একই রকম। দাদনদারের শর্তে অসহায় কৃষক দরিদ্র থেকে আরও দরিদ্র ও অধিকতর নিঃস্ব হচ্ছে এবং তাঁর কষ্ট ও ভোগান্তি উভয় মাত্রা আরও বাড়ছে। অন্যদিকে আইএমএফের ঋণে বাড়ছে ছাঁটাই, বেকারত্ব, সামাজিক অনিরাপত্তা ও সাধারণ মানুষের জীবনযাপনের ভোগান্তি। ফলে পশ্চিমা পুঁজির প্রতিনিধি আইএমএফ ও বাংলাদেশের ক্ষয়িষ্ণু সামন্ত পুঁজির প্রতিনিধি দাদনদার ও মহাজন বস্তুত সেই একই আদর্শেরই প্রতিনিধি।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, আইএমএফের এরূপ নীরব পীড়ন ও শোষণ থেকে বাঁচা যাবে কেমন করে? তাৎক্ষণিক জবাব হচ্ছে, উৎপাদন ও রপ্তানি বাড়িয়ে বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে হবে, যাতে বৈদেশিক মুদ্রার জন্য আইএমএফের কাছে ঘন ঘন হাত পাততে না হয়। আর এর টেকসই সমাধান হচ্ছে, উৎপাদন ও রপ্তানি বাড়ানোর পাশাপাশি রাষ্ট্রের ব্যয় খাতকে পুনর্বিন্যাস করতে হবে। এর পরিচালন ব্যয়, বিশেষত জনপ্রশাসনের বিলাসী ব্যয় কমিয়ে উন্নয়ন বা মূলধন ব্যয় বাড়াতে হবে। কিন্তু শেষোক্ত বিষয়ে আইএমএফের পক্ষ থেকে পরামর্শ, পথ্য বা তাগাদা বলতে গেলে প্রায় নেই বললেই চলে। কারণ, আইএমএফের পরামর্শদাতারাও জানেন, ঋণগ্রহীতা দেশের জনগণের উপকারের নামে আইএমএফের কাছ থেকে দাদন গ্রহণ ছাড়া আর কোনো উপায় নেই মর্মের সুপারিশটি জনপ্রশাসনের ওই চতুর সদস্যরাই চূড়ান্ত করে থাকেন। ফলে আইএমএফের নিজের স্বার্থেই তাঁরা কারখানা থেকে লোকবল ছাঁটাই ও কল্যাণমূলক ব্যয় কমানোর কথা বললেও জনপ্রশাসনের ব্যয় কমানোর সুপারিশ তাঁরা কখনোই করে থাকে না। আলোচ্য গবেষণার ফলাফল থেকে বস্তুত সেটাই বেরিয়ে এসেছে।

আইএমএফ অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশকেও ভর্তুকি প্রত্যাহারের কথা বলে। কিন্তু বাস্তবে সে ভর্তুকি তারা মূলত কৃষি ও নিম্নবিত্তের মানুষের সঙ্গে সম্পর্কিত খাতগুলোতে কমানোর জন্যই অধিক চাপ দেয়। বিত্তবান উদ্যোক্তাদের জন্য যেসব নগদ প্রণোদনা ও অন্যান্য ভর্তুকি চালু আছে, সেগুলো কমানোর কথা বললেও সেটি তারা বলে খুবই মৃদু কণ্ঠে। কারণ, এসব খাতে ভর্তুকি বহাল থাকলে পশ্চিমের ক্রেতারা তা থেকে লাভবান হতে পারেন। একইভাবে আইএমএফ জ্বালানি তেলের ওপর থেকে ভর্তুকি প্রত্যাহারের কথা বলে। আর এ ক্ষেত্রে ডিজেলের চাহিদা সর্বাধিক বিধায় এর ওপরই খড়্গটি সবচেয়ে আগে কার্যকর করা হয়—বিত্তবানের ব্যবহার্য পেট্রল ও অকটেন সেখানে থাকে অনেকটাই পরের সারিতে। কিন্তু একবারও ভাবা হয় না যে এই জিজেলের ভোক্তা আসলে কৃষক ও অন্যান্য খাতের নিম্ন আয়ের মানুষ। রাষ্ট্রের লোকসান কমাতে আইএমএফ জ্বালানি তেলের ওপর থেকে ভর্তুকি প্রত্যাহারের কথা বললেও জ্বালানি (গ্যাস ও অন্যান্য) অনুসন্ধানের জন্য ঘুণাক্ষরেও তাগাদা দেয় না। কারণ, বাংলাদেশের মতো অনগ্রসর দেশগুলোর নিজস্ব জ্বালানি নিরাপত্তাব্যবস্থা না গড়ে উঠলে তাতে পশ্চিমের নিয়ন্ত্রণাধীন মধ্যপ্রাচ্যীয় জ্বালানিব্যবস্থার চাবিকাঠি পশ্চিমেই রাখা যাবে বৈকি।

আইএমএফ তার ঋণের বিপরীতে সুদ নিলেও এটি কোনো বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান নয়। ফলে সদস্যদের চাঁদা, অনুদান ও অন্যবিধ সহযোগিতায় গড়ে ওঠা আইএমএফের তহবিল ব্যবহার অন্য সদস্যরাষ্ট্রের ওপর খবরদারি করার গঠনতান্ত্রিক কোনো অধিকার সেটার একেবারেই নেই। তা সত্ত্বেও আইএমএফ যা করছে, তা আসলে ঋণগ্রহীতা সদস্যদেশগুলোর জন্য পরিপূর্ণভাবে অনৈতিক ও চরম অমর্যাদাকর। কিন্তু এরপরও ঋণগ্রহীতা সরকারগুলো এ বিষয়ে কোনো প্রতিবাদ করে না। এর মূল কারণ হলো, এ সরকারগুলো জনগণের প্রতিনিধিত্বের নাম করে ক্ষমতায় থাকলেও প্রকৃতপক্ষে এরা কখনোই সাধারণ জনগণের স্বার্থের প্রতিনিধিত্ব করে না। ভেতরে-ভেতরে এরা (রাজনীতিক ও আমলা উভয়ই) বরং আইএমএফের শর্ত মানতে পারলেই অধিক খুশি। কারণ, এতে একদিকে তাদের শ্রেণিস্বার্থ যেমন রক্ষা পায়, অন্যদিকে তেমনি এ সম্পর্কের ফাঁকফোকর গলিয়ে নানা ব্যক্তিগত সুযোগ-সুবিধা জোটানোও সহজ হয়। তদুপরি আইএমএফের যারা নেপথ্যনিয়ন্তা, আইএমএফের পরামর্শ মেনে চলার সুবাদে ক্ষমতায় থাকার জন্য সেই নিয়ন্তাদের আশীর্বাদ পাওয়ার বিষয়টিও অনেকটা সহজ হয়ে আসে।

আইএমএফের বয়সকাল ইতিমধ্যে ৮১ বছর পেরিয়ে গেছে। ১৯৯০ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পর থেকেই বস্তুত এর প্রভাব অধিক হারে সর্বগ্রাসী হয়ে উঠেছে। তাই এর প্রভাবে ও নানা কঠোর শর্তের কারণে ঋণগ্রহীতা দেশগুলোতে বৈষম্য, বেকারত্ব ও সামাজিক অস্থিরতা অধিক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। ধারণা করা যায়, বিশ্বব্যাপী পুঁজির একচেটিয়াত্ব যে হারে বাড়ছে, তাতে নিকট ভবিষ্যতের দিনগুলোতে আইএমএফের খবরদারি আরও বাড়বে। আর ওই দুই অর্থনীতিবিদ যতই দেখান না কেন যে আইএমএফের কাছ থেকে ঋণ গ্রহণের ফলে সংশ্লিষ্ট সব দেশেই কর্মহানি, বেকারত্ব, সামাজিক অস্থিরতা ও মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধি পেয়েছে, তথাপি বাংলাদেশের মতো দেশগুলো কর্তৃক আইএমএফের কাছ থেকে ঋণ গ্রহণের পরিমাণ বাড়তেই থাকবে। কারণ, এ ঋণের মাধ্যমে এসব দেশের সাধারণ মানুষ উপকারের পরিবর্তে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও এ ঋণ ক্ষমতাসীনদের জন্য আশীর্বাদ হিসেবেই কাজ করবে।

অতএব, চূড়ান্ত সত্য এটাই যে একটি সত্যিকার জনপ্রতিনিধিত্বমূলক সরকার ক্ষমতায় না আসা পর্যন্ত আইএমএফের খবরদারির আওতাতেই এ দেশের জনগণকে বসবাস করতে হবে।

লেখক: সাবেক পরিচালক, বিসিক

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এরদোয়ানের বাধায় নেতানিয়াহুকে মিসরের সম্মেলনে নিতে পারলেন না ট্রাম্প

ইসরায়েল থেকে মুক্তি পেলেও ফিলিস্তিনে ফিরছেন না ১৫৪ জন, যেতে হবে ‘অমানবিক’ নির্বাসনে

ভারতে দলিত পুলিশ কর্মকর্তার আত্মহত্যায় তোলপাড়, সুইসাইড নোটে বর্ণবৈষম্যের অভিযোগ

বাংলাদেশ-হংকং ফুটবল ম্যাচ টিভিতে দেখাবে না, তাহলে দেখার উপায়

গাজা শান্তি সম্মেলনে ‘সুন্দরী’ মেলোনিকে নিয়ে মাতলেন বিশ্বনেতারা

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

আড়িয়ল বিলের প্রাণপ্রাচুর্য

শাইখ সিরাজ
আড়িয়ল বিলের আশ্চর্য সৌন্দর্য হলো শাপলা। ছবি: হৃদয়ে মাটি ও মানুষ
আড়িয়ল বিলের আশ্চর্য সৌন্দর্য হলো শাপলা। ছবি: হৃদয়ে মাটি ও মানুষ

বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চলের এক বিশাল জলাভূমি—আড়িয়ল বিল। এটি যেন এক প্রাচীন প্রাণকোষ, যা যুগ যুগ ধরে দেশের মধ্যাঞ্চলের কৃষি, মৎস্য ও জীববৈচিত্র্যের কেন্দ্র হিসেবে টিকে আছে। মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলা এবং ঢাকার নবাবগঞ্জ ও দোহার উপজেলার বিস্তীর্ণ অংশজুড়ে বিস্তৃত প্রায় ১ লাখ ৬৭ হাজার একর আয়তনের এই বিল পদ্মা ও ধলেশ্বরীর মাঝে অবস্থিত। প্রাচীন ভূপ্রকৃতির এই জলাভূমি দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রাকৃতিক সম্পদ, যেখানে প্রকৃতি, কৃষি ও মানবজীবন একে অপরের সঙ্গে নিবিড়ভাবে জড়িত।

বিগত কয়েক দশকে আমি বহুবার গিয়েছি আড়িয়ল বিলে। কখনো বর্ষায় নৌকায় চড়ে জেলেদের মাছ ধরা দেখেছি, কখনো শুকনো মৌসুমে কৃষকের সঙ্গে মাঠে নেমেছি। টেলিভিশনে এই বিলে নির্ভর মানুষের জীবন, তাদের সুখ-দুঃখ, বেঁচে থাকার সংগ্রাম তুলে ধরেছি।

কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে আবার যখন আড়িয়ল বিলে যাওয়ার সুযোগ হলো, তখন এক ভয়ানক পরিবর্তনের মুখোমুখি হলাম। ভোরের অন্ধকার কাটিয়ে ফজরের সময় পৌঁছালাম মুন্সিগঞ্জের হাসাড়া মাছবাজারে। একসময় এই বাজারের খ্যাতি ছিল পুরো দেশে। হাসাড়া বাজারে একসময় সকালবেলা বিলের দেশি মাছের হাট বসত। কিন্তু এবার গিয়ে দেখি, সেই চিত্র বদলে গেছে। বিলের মাছ নেই বললেই চলে। বাজারভর্তি চাষের মাছ—তেলাপিয়া, পাঙাশ, রুই। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানালেন, বিলে এখন আর আগের মতো মাছ পাওয়া যায় না; ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে বাধ্য হয়ে তাঁরা এখন চাষের মাছ বিক্রি করছেন। মনে পড়ে গেল চলনবিলের মহিষলুটি বাজারের কথা। সেখানেও একই বিষয় দেখেছি। বিল ভরাট, পুকুর খনন, পরিবেশ ধ্বংস—সব মিলিয়ে বিলের স্বাভাবিক মাছ উৎপাদন শেষ হয়ে গেছে। মনে হলো, আড়িয়ল বিলও যেন সেই পথেই হাঁটছে।

হাসাড়া থেকে আমরা রওনা হলাম ইছামতী নদীর ঘাটে। ভোরের আলো ফুটছে, নদীতীরের মানুষ ঘুম থেকে জেগে উঠছে। ট্রলারে চড়ে যখন আমরা নদীর বুক চিরে এগিয়ে যাচ্ছিলাম, তখন মনে হচ্ছিল একসময়ের উজ্জ্বল প্রকৃতি এখন ধীরে ধীরে নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে। নদীর জল ঘোলা, পাড়ের গাছপালা কেমন ধূসর হয়ে গেছে। দুই তীরজুড়ে এখন গড়ে উঠেছে আধুনিক ঘরবাড়ি, শহুরে রূপ নিচ্ছে গ্রাম। কোথাও কোথাও চলছে আবাসন প্রকল্প, ঝুলছে জমি বিক্রির সাইনবোর্ড।

ইছামতী নদী শেষ হয়ে মিশেছে আড়িয়ল বিলে। ১৩৬ বর্গকিলোমিটারের এক বিস্তীর্ণ জলাভূমি, যা একসময় ছিল প্রাণবৈচিত্র্যের অভয়ারণ্য। বিলে কেউ জাল ফেলছেন, কেউ কচুরিপানা জড়ো করে শুকনো মৌসুমের সবজিচাষের ধাপ তৈরি করছেন, কেউবা বিলের বুক থেকে শাপলা তুলছেন। কিন্তু আগের মতো মাছের প্রাচুর্য আর নেই। স্থানীয় জেলেরা জানালেন, সারা রাত জাল ফেলে হাতে আসে অল্প কিছু মাছ। এমনকি নিষিদ্ধ কারেন্ট জাল দিয়েও তেমন কিছু ধরা পড়ে না। অথচ একসময় এই বিল ছিল দেশি মাছের ভান্ডার। রুই, কাতলা, মৃগেল, ট্যাংরা, শিং, পাবদাসহ নানান মাছ পাওয়া যেত এখানে।

আড়িয়ল বিল একসময় দেশের মাছের পুষ্টি চাহিদার বড় একটি অংশ জোগাত। বিলসংলগ্ন কৃষকেরা নিজেরাই তৈরি করতেন মাছের অভয়াশ্রম। বাঁশ, গাছের ডাল ও ঝোপঝাড় দিয়ে বানানো ‘ডেঙ্গা’ থেকে একেকজন কৃষক বছরে ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকার মাছ বিক্রি করতে পারতেন। আমি একাধিকবার সেই দৃশ্য টেলিভিশনের জন্য ধারণ করেছি নৌকাভর্তি মাছ, উৎসবের মতো আনন্দ। আজ সে দৃশ্য যেন শুধুই স্মৃতি।

বিলের অর্থনীতি শুধু মাছের ওপর নির্ভরশীল নয়। শুকনো মৌসুমে প্রাকৃতিকভাবে জন্মানো কচুরিপানার ধাপ শুকিয়ে তৈরি হয় সবজিচাষের জমি। কৃষকেরা একত্র হয়ে এখনো সেই প্রস্তুতি নিচ্ছেন। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, আড়িয়ল বিলে প্রায় ৭,৯৭০ হেক্টর আবাদযোগ্য জমি আছে। ধানই প্রধান ফসল, তবে শীতকালে প্রচুর সবজি হয় এখানে। বেগুন, লালশাক, মিষ্টিকুমড়া, কাঁচা মরিচ, টমেটো, ঢ্যাঁড়স, আরও অনেক কিছু। বিশেষ করে আড়িয়ল বিলের মিষ্টিকুমড়া বড় আকারের, ঘন মিষ্টি স্বাদের জন্য সুপরিচিত। এমন কুমড়া দেশের আর কোথাও জন্মে না।

আড়িয়ল বিলের আরেক আশ্চর্য সৌন্দর্য হলো শাপলা। বর্ষা ও শরতের সংযোগকালে পুরো বিল ঢেকে যায় শাপলায়। হাজার হাজার শাপলার ফুল যেন বিলের বুকজুড়ে ছড়িয়ে থাকা এক জীবন্ত রঙিন চাদর। এই শাপলা শুধু সৌন্দর্যের নয়, অর্থনীতিরও উৎস। অনেক নারী-পুরুষ শাপলা তুলে বাজারে বিক্রি করেন, কেউ শিকড় শুকিয়ে বিক্রি করেন। বিল যেন হয়ে ওঠে জীবিকার উৎসস্থল।

কিন্তু এই আশীর্বাদপূর্ণ ভূমি এখন মারাত্মক হুমকির মুখে। বিলে দেখা যায় মাটিভর্তি ট্রলারের সারি, মাটি কেটে নেওয়া হচ্ছে, কোথাও আবার বিল ভরাট করা হচ্ছে। বড় বড় ট্রলারের বিকট শব্দ। এভাবে চলতে থাকলে কয়েক শতাব্দী ধরে গড়ে ওঠা প্রাকৃতিক ভারসাম্য একেবারে ধ্বংস হয়ে যাবে। জলাশয়ের গভীরতা কমে যাচ্ছে, মাছের প্রজনন ব্যাহত হচ্ছে, জলজ উদ্ভিদ মরে যাচ্ছে।

এই ভয়াবহ পরিস্থিতি নিয়ে কথা বললাম স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে। তাঁরা বললেন, শৈশবে যে আড়িয়ল বিল দেখেছেন, সেই বিল আজ আর নেই। দখল, ভূমিদস্যুতা, ড্রেজার দিয়ে ভরাট, সব মিলিয়ে বিল হারিয়ে ফেলছে তার জীবনশক্তি। তাঁদের ভাষায়, আড়িয়ল বিল এখন টিকে থাকার লড়াই করছে। তাঁরা বুঝতে পারছেন, বিলের অস্তিত্ব হারিয়ে গেলে শুধু এই এলাকার মানুষ নয়, পুরো দেশের খাদ্যনিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়বে।

একসময় দেশের খাল-বিল ছিল স্বাদুপানির মাছের অভয়াশ্রম। সেসব জলাশয়েই ছিল জীববৈচিত্র্যের সমৃদ্ধ কেন্দ্র। মানুষ ও প্রকৃতি মিলেমিশে সেখানে গড়ে তুলেছিল এক ভারসাম্যপূর্ণ বাস্তুতন্ত্র। কিন্তু লোভ, অব্যবস্থাপনা ও উন্নয়নের ভুল পথে হাঁটার কারণে আমরা সেই সম্পদ ধ্বংস করছি নিজেরাই। গবেষকেরা বলছেন, পরিবেশ বিনষ্ট করে উন্নয়ন কখনো টেকসই হতে পারে না।

আজকের উন্নয়ন চিন্তায় যদি আগামী প্রজন্মের জীবন ভুলে যাই, তাহলে তা হবে এক অপূরণীয় ক্ষতি। আমাদের বুঝতে হবে, প্রকৃতির ভারসাম্যের সঙ্গে মানুষের টিকে থাকা ওতপ্রোতভাবে জড়িত। আড়িয়ল বিলের প্রাকৃতিক সম্পদের প্রাচুর্য আজ দ্রুত হারিয়ে যাচ্ছে, তার সঙ্গে হারিয়ে যাচ্ছে মানুষের প্রকৃত সমৃদ্ধি ও জীবনের ভারসাম্য।

এখনই সময় সচেতন হওয়ার। সরকারের সুপরিকল্পিত নীতিমালা, বাস্তবসম্মত উদ্যোগ ও স্থানীয় জনগণের অংশগ্রহণ ছাড়া আড়িয়ল বিলকে রক্ষা করা সম্ভব নয়। একই সঙ্গে আমাদের প্রতিটি নাগরিককেও হতে হবে দায়িত্বশীল।

আমরা যদি আজই উদ্যোগ নিই, তবে হয়তো একদিন আবার দেখা যাবে বিলের বুকভরা শাপলা, মাছভরা ঘাট, কৃষকের মুখে হাসি। কিন্তু যদি চুপচাপ বসে থাকি, তাহলে একদিন হয়তো মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাবে এই ঐতিহ্যবাহী আড়িয়ল বিল। আর সেই ক্ষতি আর কোনো উন্নয়ন দিয়েই হয়তো পূরণ করা যাবে না।

লেখক: পরিচালক ও বার্তাপ্রধান, চ্যানেল আই

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এরদোয়ানের বাধায় নেতানিয়াহুকে মিসরের সম্মেলনে নিতে পারলেন না ট্রাম্প

ইসরায়েল থেকে মুক্তি পেলেও ফিলিস্তিনে ফিরছেন না ১৫৪ জন, যেতে হবে ‘অমানবিক’ নির্বাসনে

ভারতে দলিত পুলিশ কর্মকর্তার আত্মহত্যায় তোলপাড়, সুইসাইড নোটে বর্ণবৈষম্যের অভিযোগ

বাংলাদেশ-হংকং ফুটবল ম্যাচ টিভিতে দেখাবে না, তাহলে দেখার উপায়

গাজা শান্তি সম্মেলনে ‘সুন্দরী’ মেলোনিকে নিয়ে মাতলেন বিশ্বনেতারা

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বিমা খাতে শনির দশা

সম্পাদকীয়
বিমা খাতে শনির দশা

একসময় বিমা খাত ছিল ভবিষ্যতের আর্থিক সুরক্ষার ক্ষেত্র, আজ তা পরিণত হয়েছে গ্রাহকদের হতাশা আর উদ্বেগের কেন্দ্রে। বছর বছর বিমা কোম্পানির দ্বারে দ্বারে ঘুরেও গ্রাহকেরা তাঁদের প্রাপ্য টাকা পাচ্ছেন না। কারণ দেশের বিমা কোম্পানিগুলোর কাছে গ্রাহকদের আটকে আছে ৭ হাজার কোটি টাকা, অথচ বেশির ভাগ কোম্পানিই নির্ধারিত সময়ের মধ্যে দাবি পরিশোধ করছে না। এই বাস্তব চিত্র তুলে ধরা হয়েছে আজকের পত্রিকায় ১০ অক্টোবর প্রকাশিত সংবাদে।

বিমা আইন অনুযায়ী, মেয়াদপূর্তির ৯০ দিনের মধ্যে দাবি পরিশোধ বাধ্যতামূলক, কিন্তু বাস্তবে সেই নিয়ম মানা হচ্ছে না। এতে গ্রাহকদের মধ্যে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। সাধারণ মানুষ ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে বিমা কোম্পানিতে স্কিম চালু করে। স্কিমের মেয়াদ শেষে কাঙ্ক্ষিত টাকা পাওয়া সবার প্রত্যাশা। কিন্তু বিমা কোম্পানিগুলো যথাসময়ে গ্রাহকদের টাকা দিচ্ছে না।

এ জন্য কোম্পানিগুলোর সঙ্গে এর নিয়ন্ত্রক সংস্থা বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) অবহেলা এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। সরকারি এই প্রতিষ্ঠানটির অন্যতম কাজ হলো বিমা কোম্পানিগুলো সঠিকভাবে কাজ করছে কি না এবং গ্রাহকদের স্কিমের টাকা ঠিকভাবে প্রদান করছে কি না ইত্যাদি তদারক করা। কোম্পানির লাইসেন্স টিকিয়ে রাখার জন্য বিমার দাবি দ্রুত পরিশোধ করার নিয়ম আছে। কিন্তু নিয়ন্ত্রক সংস্থা এসব অনিয়ম নিয়ে কোনো পদক্ষেপ নেয় না। ফলে বিমা কোম্পানিগুলো ইচ্ছেমতো কাজ করতে পারছে।

নোয়াখালীর একজন গৃহিণী সানজিদা আক্তার তাঁর ৩৩ হাজার টাকা পাওয়ার আশায় গত সাত বছরে ১১ বার ঢাকায় এসেছেন। এতে তাঁর যাতায়াতেই খরচ হয়েছে ১৩ হাজার ৫০০ টাকা, কিন্তু প্রাপ্য টাকা তিনি পাননি। সানজিদার মতো লাখো গ্রাহক বছরের পর বছর তাঁদের আটকে থাকা অর্থের জন্য হন্যে হয়ে ঘুরছেন। কিন্তু টাকা পাচ্ছেন না।

বিমা খাতে এই করুণ অবস্থা সৃষ্টি হওয়ার মূল কারণ হলো অর্থ লোপাট, ব্যর্থ বিনিয়োগ, নীতিগত অবহেলা এবং ইচ্ছাকৃত অর্থ আটকে রাখা। এ ছাড়া সাধারণ বিমা কোম্পানিগুলোর প্রধান সমস্যাগুলো হলো মালিকদের অর্থ আটকে রাখার মানসিকতা, গ্রাহকের অসম্পূর্ণ কাগজপত্র, সার্ভে রিপোর্টে বিলম্ব, এসবিসি থেকে পুনর্বিমার অর্থ ফেরত না পাওয়া এবং বিনিয়োগের ভুল সিদ্ধান্ত। অন্যদিকে, জীবনবিমা কোম্পানিগুলোর ক্ষেত্রে দুর্বল ব্যাংক ও লিজিং প্রতিষ্ঠানে অর্থ ঢালা এবং আবাসন খাতে ব্যর্থ বিনিয়োগের কারণে গ্রাহকের দাবি সময়মতো পরিশোধ করা যাচ্ছে না বলে অভিযোগ আছে।

বিমা খাতকে এই গভীর সংকট থেকে উত্তরণ ঘটাতে হলে কেবল অডিট বা আইনি পদক্ষেপ যথেষ্ট নয়। দরকার পুরো খাতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি প্রতিষ্ঠা করা। অর্থ লোপাটের সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে অর্থ উদ্ধার এবং ব্যর্থ বিনিয়োগের ক্ষেত্রগুলো চিহ্নিত করে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা। একই সঙ্গে আইডিআরএকে তার আইনি ক্ষমতা পূর্ণভাবে ব্যবহার করে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে দাবি পরিশোধে কোম্পানিগুলোকে বাধ্য করা। গ্রাহকের আস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য উদ্যোগগুলো কার্যকর করা দরকার।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এরদোয়ানের বাধায় নেতানিয়াহুকে মিসরের সম্মেলনে নিতে পারলেন না ট্রাম্প

ইসরায়েল থেকে মুক্তি পেলেও ফিলিস্তিনে ফিরছেন না ১৫৪ জন, যেতে হবে ‘অমানবিক’ নির্বাসনে

ভারতে দলিত পুলিশ কর্মকর্তার আত্মহত্যায় তোলপাড়, সুইসাইড নোটে বর্ণবৈষম্যের অভিযোগ

বাংলাদেশ-হংকং ফুটবল ম্যাচ টিভিতে দেখাবে না, তাহলে দেখার উপায়

গাজা শান্তি সম্মেলনে ‘সুন্দরী’ মেলোনিকে নিয়ে মাতলেন বিশ্বনেতারা

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

‘সেফ এক্সিট’ নিয়ে এত কথা কেন

কেউ যখন ক্ষমতায় থাকেন, আমাদের দেশে সাধারণত তাঁকে প্রশ্নের মুখে পড়তে হয় না। এই সংস্কৃতিতে তাঁরা এতটাই অভ্যস্ত হয়ে পড়েন যে ক্ষমতা চলে গেলে নতুন কী বাস্তবতার মুখে তাঁদের পড়তে হবে, সেটা তাঁরা চিন্তাও করতে পারেন না।

মাসুদ কামাল
আপডেট : ১৩ অক্টোবর ২০২৫, ০৮: ৩৫
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

কয়েক দিন ধরে ‘সেফ এক্সিট’ নিয়ে বেশ আলোচনা হচ্ছে। কথাটার অর্থ কী? আপনাদের কার কী অভিজ্ঞতা আমি জানি না, তবে নিজের কথা বলতে পারি, ‘এক্সিট’ শব্দটা আমি প্রথম দেখেছি সিনেমা হলে। মুভি যখন চলে, তখন পুরো হল অন্ধকার থাকলেও দরজাগুলোর ওপর ‘এক্সিট’ লেখাটা জ্বলজ্বল করতে থাকে। তখন আমি ছোট, অর্থটা ঠিক বুঝতাম না। পরে আব্বাকে জিজ্ঞাসা করে জেনে নিয়েছি। তিনি ব্যাখ্যা করে বলেছেন, হঠাৎ করে বের হতে গিয়ে যাতে কেউ বিভ্রান্ত না হয়, সে জন্য। আরও পরে অনেক মুভি হলে ‘এক্সিট’-এর পরিবর্তে ‘প্রস্থান’ লেখাও দেখেছি।

তখন আমার মনে হতো, এক্সিট মানেই তো সেফ, নিরাপদ। সেখানে আবার এক্সিটের আগে ‘সেফ’ কথাটার দরকার কী? কিন্তু এখন রাজনীতির এবং জীবনের নানা জটিলতা দেখার পর বুঝতে পারছি সব এক্সিটই সেফ হয় না। অনেককে গলাধাক্কা দিয়েও বের করা হয়। আবার অনেকে প্রস্থানের পরপরই নানা বিপদে পড়েন। ক্ষমতায় থাকার কারণে তাঁর যেসব কর্মকাণ্ড নিয়ে বিচার দূরে থাক, প্রশ্ন করারই সাহস সাধারণ মানুষ পায় না, ক্ষমতা থেকে সরে যাওয়ামাত্র সেসব নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। বিচারের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেওয়া হয়। ফলে ‘এক্সিট’ আর ‘সেফ এক্সিট’ বিষয়টা প্রায়ই ভিন্ন অর্থ বহন করে।

মাস কয়েক আগের কথা, গত ৩০ জুলাই গুলশানের একটা হোটেলে ‘ডেমোক্রেসি ডায়াস বাংলাদেশ’ নামের একটা সংগঠনের সেমিনারে গিয়েছিলাম। সেখানে আরও অনেকের মধ্যে সিপিডির বিশেষ ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য উপস্থিত ছিলেন। তিনি বললেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের এক্সিট পলিসি চিন্তা করার সময় এসেছে।’ সেই সঙ্গে তিনি এমনও বললেন, এই সরকারের কর্মকাণ্ড নিয়ে আগামী সরকারের মূল্যায়ন কেমন হবে, সেসব নিয়ে চিন্তাভাবনার সময় এখন এসে গেছে।

ড. দেবপ্রিয়র এমন কথায় খুব স্পষ্ট কিছু ইঙ্গিত ছিল। পরদিন অধিকাংশ মিডিয়া এই ‘এক্সিট’ শব্দটিকে ব্যবহার করে তাদের শিরোনাম করেছিল। সেই থেকে শব্দটি প্রায়ই বিভিন্নজন সরকারের, উপদেষ্টাদের নানা কর্মকাণ্ডের কথা বলতে গিয়ে ব্যবহার করেছেন। তবে এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুতরভাবে শব্দটির ব্যবহার দেখা গেল এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের কণ্ঠে। তিনি বললেন, সরকারের উপদেষ্টাদের কেউ কেউ সেফ এক্সিটের লক্ষ্যে অনেক রাজনীতিবিদের সঙ্গে লিয়াজোঁ করছেন!

ঠিক এই জায়গাটিতে বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যায়। ফেব্রুয়ারিতে যদি নির্বাচন হয়, বর্তমানে যাঁরা সরকারে আছেন, তাঁদের চলে যেতে হবে। এটা তো তাঁরা জানেনই। তাহলে তাঁদের কেউ কেউ রাজনীতিবিদদের সঙ্গে লিয়াজোঁ কেন করছেন? কেন এ রকম যোগাযোগ করতে হচ্ছে? আসলে এটাই হচ্ছে মূল কথা। তাঁরা জানেন, গত এক বছরের বেশি সময়ে তাঁরা কী কী করেছেন। তাঁদের কয়টা কাজ এই গণ-আন্দোলনের মূল চেতনার পক্ষে ছিল। কয়টা কাজ কেবলই তাঁর ব্যক্তিগত স্বার্থসিদ্ধির জন্য করেছেন। নতুন যে সরকার আসবে, তারা এসব নিয়ে প্রশ্ন তুলবেই। সেই প্রশ্ন তাঁকে কোথায় নিয়ে যাবে, কোথায় নিয়ে দাঁড় করাবে? বিচারের কাঠগড়ায় নিয়ে যাবে না তো? হয়তো এ কারণেই যে রাজনৈতিক দল আগামী নির্বাচনে ক্ষমতায় আসবে বলে তাঁরা মনে করেন, সেই দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন।

এমন প্র্যাকটিস কিন্তু এই দেশে নতুন কিছু নয়। আওয়ামী লীগ আমলে ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের সঙ্গে লিয়াজোঁ করে বিএনপির অনেক নেতাই কিন্তু বহাল তবিয়তে দেশে অবস্থান করেছেন, এমনকি অনেকে দাপটের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্যও করেছেন। আবার বর্তমান সরকারের অনেক উপদেষ্টার সঙ্গে ব্যক্তিগত অথবা পারিবারিক সম্পর্কের জোরে আওয়ামী লীগ সরকারের অনেক দুর্নীতিবাজ ব্যক্তির অর্থসম্পদ ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে। এসব অনেক দিন ধরেই চলে আসছে এই দেশে। সেই পদাঙ্ক অনুসরণ করেই হয়তো উপদেষ্টাদের কেউ কেউ রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছেন।

নাহিদ ইসলামের এ রকম খোলামেলা অভিযোগ নিয়েও কেউ কেউ প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি কি সত্যিই কিছু জানেন? নাকি হাওয়ার ওপর দিয়ে মেরে দিয়েছেন? সেটাই-বা কীভাবে হয়? তিনি তো এলেবেলে লোক নন। একটা গুরুত্বপূর্ণ দলের শীর্ষ নেতা। নিজেও একসময় এই সরকারের উপদেষ্টা ছিলেন। ফলে সাবেক সহকর্মী হিসেবে উপদেষ্টাদের অনেকের সঙ্গেই তাঁর ব্যক্তিগত সম্পর্ক থাকাটা স্বাভাবিক। কাজেই তাঁর অভিযোগ ভিত্তিহীন হওয়ার আশঙ্কা খুবই কম। সে ক্ষেত্রে যে প্রশ্নটি খুবই জরুরি, ওই আলোচিত উপদেষ্টারা আসলে কারা? কী অপরাধ তাঁরা করেছেন যে সেফ এক্সিট পাওয়ার জন্য তাঁদের এখন থেকেই লিয়াজোঁ করতে হচ্ছে?

উপদেষ্টাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ কিন্তু নতুন কিছু নয়। এর আগে ৮ আগস্ট সাবেক এক সচিব, যিনি খালেদা জিয়ার একান্ত সচিব হিসেবেও কাজ করছেন, তিনি প্রকাশ্যে বলেছিলেন, আটজন উপদেষ্টার দুর্নীতির বিষয়ে তথ্য-প্রমাণ তাঁর কাছে রয়েছে। কথাগুলো বলেছিলেন তিনি প্রশাসন ক্যাডারদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন আয়োজিত এক সেমিনারে। সেখানে প্রশাসন ক্যাডারের বর্তমান এবং সাবেক অনেক কর্মকর্তাই উপস্থিত ছিলেন। সাবেক ওই সচিব এ বি এম আবদুস সাত্তার যখন এই কথাগুলো বলছিলেন, সেখানে উপস্থিত কর্মকর্তারা তখন ‘ঠিক ঠিক’ বলে তাঁকে সমর্থনও দিয়েছিলেন। তার মানে বিষয়গুলো তাঁরাও জানতেন।

এই যে এমন প্রকাশ্য অভিযোগ, তথ্য-প্রমাণ আছে বলে ঘোষণা, তারপর কী হলো? দৃশ্যত কিছুই হয়নি। কেন হয়নি? হয়তো সরকার চায়নি বলে হয়নি। এই সরকার চায়নি বলে কি আগামী সরকার চাইবে না? গোয়েন্দা রিপোর্টগুলো তো রয়েই গেছে। এরই মধ্যে কপি হয়ে হয়তো অনেকের হাতেও চলে গেছে। এখন ক্ষমতার জোরে হয়তো ধামাচাপা দিয়ে রাখা হয়েছে, সরকার পরিবর্তনের পরপরই কি সেগুলো আবার ভেসে উঠবে না? নিশ্চিত থাকতে পারেন, অবশ্যই সেগুলো আলোচনায় চলে আসবে। যাঁরা এগুলো ধামাচাপা দিয়েছেন, দিতে সাহায্য করেছেন, তাঁদেরও নাম তখন আসবে। এ কারণেই ক্ষমতার শেষ দিকে এসে সবাই ব্যস্ত হয়ে পড়েন সেফ এক্সিটের জন্য। সেটা নিশ্চিত করতে ছোটাছুটি করেন রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে সম্পর্ক করতে।

এই সেফ এক্সিট নিয়ে এরই মধ্যে বেশ কয়েকজন উপদেষ্টা অবশ্য কথা বলেছেন। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেছেন আইনবিষয়ক উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। তিনি বলেছেন, ‘এখন সেফ এক্সিট নিয়ে কথা হচ্ছে। আমরা উপদেষ্টারা নিশ্চিতভাবে জানি, আমাদের কারও কোনো সেফ এক্সিটের প্রয়োজন নেই।’ এরপর উল্টো তিনি এমন কথাও বলেছেন, উপদেষ্টাদের নয়, বরং সেফ এক্সিট দরকার এখন দেশের।

আইনবিষয়ক উপদেষ্টার এই দ্বিতীয় কথাটার সঙ্গে আমি খুবই একমত। আসলেই আমাদের দেশ অনেক বছর ধরেই একটা গাড্ডায় পড়ে আছে। রাষ্ট্রকাঠামোকে এমন এক চরিত্র দেওয়া হয়েছে, যা নিজেই বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে গেছে। এখান থেকে বের হতে হবে। এই বের হওয়ার প্রবল আকাঙ্ক্ষা নিয়েই কিন্তু ড. ইউনূসকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। উনি আসিফ নজরুলসহ বেশ কয়েকজনকে তাঁর উপদেষ্টামণ্ডলীতে অন্তর্ভুক্ত করেছেন। তাঁরা দেশকে সেই সমস্যাসংকুল রাষ্ট্রকাঠামো থেকে বের করতে পেরেছেন? তাঁরা কি সেই জন-আকাঙ্ক্ষাকে তাঁদের চিন্তায় ধারণ করতে পেরেছেন? যদি না করতে পারেন, এই ব্যর্থতার জন্যও কি তাঁদের দায়ী করা যাবে না?

আর প্রথম যে কথাটা ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, সেটাকে আমি তাঁর জন্য কিছুটা আত্মঘাতী বলেই মনে করি। তিনি কীভাবে বলেন, ‘আমাদের কারও কোনো সেফ এক্সিটের প্রয়োজন নেই!’ সব উপদেষ্টার দায়িত্ব তিনি একাই নিয়ে নিলেন! অতি আত্মবিশ্বাসী হলে উনি বড়জোর নিজের কথাটা বলতে পারতেন। কিন্তু বাকিদের দায়িত্ব উনি কীভাবে নিলেন? আমি নিশ্চিত, নতুন সরকার আসার সঙ্গে সঙ্গে অনেক উপদেষ্টার কর্মকাণ্ড প্রকাশিত হতে থাকবে। আসিফ নজরুল কি তখন অন্যদের দায়ও নিজের কাঁধে নেবেন?

আসলে সমস্যা হয় কি, কেউ যখন ক্ষমতায় থাকেন, আমাদের দেশে সাধারণত তাঁকে প্রশ্নের মুখে পড়তে হয় না। এই সংস্কৃতিতে তাঁরা এতটাই অভ্যস্ত হয়ে পড়েন যে ক্ষমতা চলে গেলে নতুন কী বাস্তবতার মুখে তাঁদের পড়তে হবে, সেটা তাঁরা চিন্তাও করতে পারেন না। সবার সুমতি হোক।

লেখক: সাংবাদিক

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এরদোয়ানের বাধায় নেতানিয়াহুকে মিসরের সম্মেলনে নিতে পারলেন না ট্রাম্প

ইসরায়েল থেকে মুক্তি পেলেও ফিলিস্তিনে ফিরছেন না ১৫৪ জন, যেতে হবে ‘অমানবিক’ নির্বাসনে

ভারতে দলিত পুলিশ কর্মকর্তার আত্মহত্যায় তোলপাড়, সুইসাইড নোটে বর্ণবৈষম্যের অভিযোগ

বাংলাদেশ-হংকং ফুটবল ম্যাচ টিভিতে দেখাবে না, তাহলে দেখার উপায়

গাজা শান্তি সম্মেলনে ‘সুন্দরী’ মেলোনিকে নিয়ে মাতলেন বিশ্বনেতারা

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত