Ajker Patrika

ভারতে দলিত পুলিশ কর্মকর্তার আত্মহত্যায় তোলপাড়, সুইসাইড নোটে বর্ণবৈষম্যের অভিযোগ

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৪ অক্টোবর ২০২৫, ১৪: ১৩
আইপিএস অফিসার পুরাণ কুমার। ছবি: সংগৃহীত
আইপিএস অফিসার পুরাণ কুমার। ছবি: সংগৃহীত

ভারতের হরিয়ানা রাজ্যের আইপিএস অফিসার ওয়াই পুরাণ কুমারের (৫২) কথিত আত্মহত্যার ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজ্যের রাজনীতিতে তুমুল উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। গত ৭ অক্টোবর এই কর্মকর্তা মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে আত্মহত্যা করেন বলে অভিযোগ। মৃত্যুর আগে লেখা সুইসাইড নোটে রাজ্য পুলিশের মহানির্দেশক (ডিজিপি)-সহ মোট আটজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে হয়রানি ও বর্ণ বৈষম্যের অভিযোগ এনেছেন তিনি। এ নিয়ে সরকার তীব্র চাপের মুখে পড়েছে।

গতকাল সোমবার গভীর রাতে প্রশাসন বিশেষ পদক্ষেপ হিসেবে বর্তমান ডিজিপি শত্রুজিৎ কাপুরকে ছুটিতে পাঠিয়েছে। এর আগে রোহতকের তৎকালীন পুলিশ সুপার নরেন্দ্র বিজারনিয়াকেও বদলি করা হয়। মুখ্যমন্ত্রীর মিডিয়া উপদেষ্টা রাজীব জেটলি এই সিদ্ধান্তের কথা গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলোর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আইপিএস অফিসার ওয়াই পুরাণ কুমার একটি আট পাতার ‘ফাইনাল নোট’ বা ‘মৃত্যুকালীন জবানবন্দি’ রেখে গেছেন। সেই নোটে তিনি ডিজিপি শত্রুজিৎ কাপুর এবং নরেন্দ্র বিজারনিয়াসহ আটজন জ্যেষ্ঠ আইপিএস কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ‘প্রকাশ্য অপমান, বর্ণভিত্তিক বৈষম্য এবং মানসিকভাবে হয়রানি করার’ মতো গুরুতর অভিযোগ এনেছেন।

নিহত কর্মকর্তার স্ত্রী, সিনিয়র আইএএস অফিসার অম্রিত পি কুমার-এর দাবি, তাঁর স্বামীর আত্মহত্যার প্ররোচনাদানকারী হিসেবে কাপুর ও বিজারনিয়ার নাম এফআইআর-এ অন্তর্ভুক্ত করতে হবে এবং তাঁদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার করতে হবে। পরিবারের সদস্যরা দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত ময়নাতদন্ত ও শেষকৃত্য সম্পন্ন করতে দিতে অস্বীকার করেছেন।

এই ঘটনা নিয়ে হরিয়ানার বিজেপি সরকারের ওপর বিরোধীরা জোরালো আক্রমণ শুরু করেছে। কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী আজ মঙ্গলবার পুরাণ কুমারের পরিবারের সঙ্গে দেখা করার কথা রয়েছে। এ ছাড়া তেলেঙ্গানার উপ-মুখ্যমন্ত্রী মল্লু ভাট্টি বিক্রমরকা, রোহতকের কংগ্রেস সাংসদ দীপেন্দ্র সিং হুদা, আইএনএলডি প্রধান অভয় সিং চৌতালা এবং পাঞ্জাবের অর্থমন্ত্রী হরপাল সিং চিমাসহ একাধিক বিরোধী দলের নেতা গতকাল পরিবারটির সঙ্গে দেখা করে সমবেদনা জানিয়েছেন।

মল্লু ভাট্টি বিক্রমরকা সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন, কুমারের ‘মৃত্যুকালীন জবানবন্দি’ অনুযায়ী অবিলম্বে অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। তিনি অভিযোগ করেন, ডিজিপি শত্রুজিৎ কাপুর এবং তৎকালীন এসপি নরেন্দ্র বিজারনিয়া কুমারকে অপমান ও লাঞ্ছিত করেছেন এবং তাঁরাই এই আত্মহত্যার মূল কারণ।

এদিকে, নিহত কর্মকর্তার পরিবারের জন্য ‘ন্যায়বিচার’ চাইতে গঠিত একটি ৩১ সদস্যের কমিটি অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সরকারকে ডেডলাইন বেঁধে দিয়েছে।

তবে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রামদাস আথাওয়ালে পরিবারটির সঙ্গে দেখা করার পর জানান, হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী নয়া সিঙ্ঘ সাইনি তাঁকে আশ্বাস দিয়েছেন তদন্তে দোষী সাব্যস্ত হলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে অবশ্যই কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে। চণ্ডীগড় পুলিশ ইতিমধ্যে মামলাটি তদন্তের জন্য ছয় সদস্যের একটি বিশেষ তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এরদোয়ানের বাধায় নেতানিয়াহুকে মিসরের সম্মেলনে নিতে পারলেন না ট্রাম্প

ইসরায়েল থেকে মুক্তি পেলেও ফিলিস্তিনে ফিরছেন না ১৫৪ জন, যেতে হবে ‘অমানবিক’ নির্বাসনে

ভারতে দলিত পুলিশ কর্মকর্তার আত্মহত্যায় তোলপাড়, সুইসাইড নোটে বর্ণবৈষম্যের অভিযোগ

বাংলাদেশ-হংকং ফুটবল ম্যাচ টিভিতে দেখাবে না, তাহলে দেখার উপায়

গাজা শান্তি সম্মেলনে ‘সুন্দরী’ মেলোনিকে নিয়ে মাতলেন বিশ্বনেতারা

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

চীনে আন্ডারগ্রাউন্ড গির্জায় পুলিশের অভিযান, বেশ কয়েকজন পাদ্রি আটক

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

অভিযান চালিয়ে চীনের অন্যতম বৃহৎ এক আন্ডারগ্রাউন্ড চার্চের বেশ কয়েকজন পাদ্রিকে আটক করেছে পুলিশ। চার্চের এক মুখপাত্র ও আটক ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যরা বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। ২০১৮ সালের পর চীনের খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীদের বিরুদ্ধে এটিই সবচেয়ে বড় দমন অভিযান।

চীনে আন্ডারগ্রাউন্ড চার্চ বলতে বোঝানো হয়, সেসব ক্যাথলিক চার্চকে, যারা রাষ্ট্র অনুমোদিত ক্যাথলিক সংগঠনের সঙ্গে সম্পর্ক না রেখে স্বাধীনভাবে পরিচালিত হয়।

গত সপ্তাহে বেইজিং বিরল খনিজ রপ্তানিতে নতুন নিয়ন্ত্রণ আরোপ করার পর ওয়াশিংটনের সঙ্গে উত্তেজনা বেড়ে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে গির্জায় এই অভিযান চালানো হয়।

ঘটনাটির নিন্দা জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও গত রোববার এক বিবৃতিতে আটক পাদ্রিদের অবিলম্বে মুক্তির আহ্বান জানান।

চীনা সরকারের অনুমোদন না থাকা জায়ন চার্চের প্রতিষ্ঠাতা যাজক জিন মিংরিকে গত শুক্রবার সন্ধ্যায় চীনের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর বেইহাইয়ে তাঁর বাড়ি থেকে আটক করা হয়। তাঁর মেয়ে গ্রেস জিন এবং চার্চের মুখপাত্র শন লং এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

মুখপাত্র শন লং রয়টার্সকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বলেন, ‘যা ঘটল, তা এই বছরের ধর্মীয় নিপীড়নের নতুন ঢেউয়ের অংশ। পুলিশ দেড় শতাধিক উপাসককে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। পাশাপাশি সাম্প্রতিক মাসগুলোতে রোববারের প্রার্থনার সময় হয়রানিও বাড়িয়েছে তারা।’

গত মাসে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং ঘোষণা দেন, ধর্মীয় কর্মকাণ্ডে কঠোর আইন প্রয়োগ করা হবে এবং ধর্মের রীতিনীতি এমনভাবে গড়ে তুলতে হবে, যাতে তা চীনা কমিউনিস্ট পার্টির মূল্যবোধ, ভাষা, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এরদোয়ানের বাধায় নেতানিয়াহুকে মিসরের সম্মেলনে নিতে পারলেন না ট্রাম্প

ইসরায়েল থেকে মুক্তি পেলেও ফিলিস্তিনে ফিরছেন না ১৫৪ জন, যেতে হবে ‘অমানবিক’ নির্বাসনে

ভারতে দলিত পুলিশ কর্মকর্তার আত্মহত্যায় তোলপাড়, সুইসাইড নোটে বর্ণবৈষম্যের অভিযোগ

বাংলাদেশ-হংকং ফুটবল ম্যাচ টিভিতে দেখাবে না, তাহলে দেখার উপায়

গাজা শান্তি সম্মেলনে ‘সুন্দরী’ মেলোনিকে নিয়ে মাতলেন বিশ্বনেতারা

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ট্রাম্পের ছেলের সঙ্গে সাক্ষাতের ‘গোপন আবদার’ ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্টের

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ট্রাম্পের ছেলের সঙ্গে সাক্ষাতের ‘গোপন আবদার’ ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্টের

ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট প্রাবোও সুবিয়ান্তোকে একটি হট মাইকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে জিজ্ঞেস করতে শোনা গেছে, তিনি এরিক ট্রাম্পের সঙ্গে দেখা করতে পারবেন কি না।

গাজায় দীর্ঘস্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে মিসরে এক শীর্ষ সম্মেলনে এই ঘটনা ঘটে।

ধারণা করা হচ্ছে, সুবিয়ান্তো হয়তো জানতেন না একটি লাইভ মাইক্রোফোন তাঁর কথোপকথন রেকর্ড করছে। তিনি ট্রাম্পের সঙ্গে কথা বলছিলেন এবং এমন এক অঞ্চলের উল্লেখ করেন, যা ‘নিরাপত্তার দিক থেকে সুরক্ষিত নয়’।

এরপর তিনি ট্রাম্পকে জিজ্ঞেস করেন, ‘আমি কি এরিকের সঙ্গে দেখা করতে পারি?’

জবাবে ট্রাম্প বলেন, ‘আমি এরিককে ফোন করতে বলব। এটা কি আমার করা উচিত? ও খুব ভালো ছেলে। আমি এরিককে ফোন করতে বলব।’

আজ মঙ্গলবার এক প্রতিবেদনে দ্য গার্ডিয়ান জানিয়েছে, এরিক ট্রাম্প এবং তাঁর ভাই ডোনাল্ড ট্রাম্প জুনিয়র দুজনেই ট্রাম্প অর্গানাইজেশনের নির্বাহী ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে কর্মরত।

সুবিয়ান্তো এরপর ট্রাম্পকে বলেন, ‘আমরা একটি ভালো জায়গা খুঁজব।’

ট্রাম্প আবার বলেন, ‘আমি এরিককে আপনাকে ফোন করতে বলব।’

সুবিয়ান্তো বলেন, ‘এরিক বা ডন জুনিয়র (ডোনাল্ড ট্রাম্প জুনিয়র)।’

অডিওতে এটি স্পষ্ট ছিল না, তাঁরা ট্রাম্প অর্গানাইজেশন বা প্রেসিডেন্ট বা তাঁর পরিবারের সঙ্গে জড়িত কোনো ব্যবসায়িক চুক্তির কথা বলছিলেন কি না।

তবে স্থানীয় এক সংস্থার সহযোগিতায় ট্রাম্প অর্গানাইজেশন গত মার্চে ট্রাম্পের নামে তাদের প্রথম গলফ ক্লাবটি ইন্দোনেশিয়ায় চালু করে।

দ্বিতীয় মেয়াদে হোয়াইট হাউসে ফেরার পর ট্রাম্প তাঁর ব্যবসায়িক স্বার্থের বিষয়ে নতুন করে তদন্তের মুখে পড়েন। তাঁর ক্রমবর্ধমান বৈশ্বিক রিয়েল এস্টেট সাম্রাজ্যের মাধ্যমে সম্ভাব্য স্বার্থের সংঘাত সৃষ্টি হচ্ছে। তিনি প্রেসিডেন্ট পদকে আর্থিকভাবে ব্যবহার করছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে।

এ বছরের শুরুতে হোয়াইট হাউসে ফিরে আসার আগে ট্রাম্প তাঁর ব্যবসা পরিচালনার দায়িত্ব ছেলে এরিক এবং ডন জুনিয়রের হাতে তুলে দেন।

ট্রাম্পের সংস্থা বলছে, দৈনন্দিন সিদ্ধান্ত গ্রহণে ট্রাম্পের কোনো ভূমিকা নেই। এই ব্যবস্থা মোটামুটিভাবে তাঁর প্রথম মেয়াদের মতোই।

সেই সময়ে বিশেষজ্ঞরা বলেছিলেন, এই ব্যবস্থা তাঁর সরকারি দায়িত্ব এবং ব্যবসায়িক সাম্রাজ্যের মধ্যকার সংঘাত প্রতিরোধে যথেষ্ট নয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এরদোয়ানের বাধায় নেতানিয়াহুকে মিসরের সম্মেলনে নিতে পারলেন না ট্রাম্প

ইসরায়েল থেকে মুক্তি পেলেও ফিলিস্তিনে ফিরছেন না ১৫৪ জন, যেতে হবে ‘অমানবিক’ নির্বাসনে

ভারতে দলিত পুলিশ কর্মকর্তার আত্মহত্যায় তোলপাড়, সুইসাইড নোটে বর্ণবৈষম্যের অভিযোগ

বাংলাদেশ-হংকং ফুটবল ম্যাচ টিভিতে দেখাবে না, তাহলে দেখার উপায়

গাজা শান্তি সম্মেলনে ‘সুন্দরী’ মেলোনিকে নিয়ে মাতলেন বিশ্বনেতারা

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

রামাল্লার এক দিন: ২৪ বছর পর মায়ের কোলে ফেরা, ভাইকে না পেয়ে বোনের বুকফাটা আর্তনাদ

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
সোমবার রামাল্লায় আনন্দ ও আর্তনাদের একটি দিন। ছবি: সংগৃহীত
সোমবার রামাল্লায় আনন্দ ও আর্তনাদের একটি দিন। ছবি: সংগৃহীত

পশ্চিম তীরের রামাল্লা কালচারাল সেন্টার তখন আবেগের মহামঞ্চ। এক দিকে ২৪ বছর পর মায়ের কোলে ফেরা সন্তান, অন্য দিকে প্রিয়জনের মুক্তি না পাওয়ায় বোনের বুকফাটা আর্তনাদ!

সোমবার দুপুরের রামাল্লা কালচারাল সেন্টারের বাতাস ছিল উত্তেজনায় থমথমে, যেন কয়েক দশকের কান্না ও প্রতীক্ষা জমাট বেঁধে আছে। ইসরায়েলি কারাগার থেকে ফিলিস্তিনি বন্দীদের নিয়ে আসা বাসের বহর যখন থিয়েটারের সামনে এসে থামল, মুহূর্তের মধ্যে উত্তেজনা রূপ নিল বাঁধভাঙা জোয়ারে। পুলিশের তৈরি ব্যারিকেড ভেঙে শত শত মানুষ ছুটে গেল বাসের জানালার দিকে। প্রতিটি মুখ খুঁজছিল বছরের পর বছর হারানো প্রিয়জনকে। অনেকের ঠোঁটে ছিল প্রিয়জনের নাম ধরে চাপা স্লোগান—নাম ধরে ডাকা সেই মানুষটিকে, যাকে তাঁরা হয়তো এক দশক দেখেননি।

জানালা দিয়ে বেরিয়ে আসা ক্লিষ্ট মুখগুলো দেখে স্বজনেরা সহজে চিনতে পারছিলেন। কারণ এই মুখগুলোই তাঁদের বহু বছরের স্বপ্নের সঙ্গে মিলছিল না। মুক্তি পাওয়া বন্দীদের অনেকের গালে এখনো সদ্য সেরে ওঠা আঘাতের চিহ্ন—কারাগারের ভয়াবহতার নীরব সাক্ষী। দীর্ঘ কারাবাসের কারণে তাঁদের চেহারায় এক অস্বাভাবিক কাঠিন্য এসেছে।

ভিড়ের মধ্যে থেকে মুক্তি পেয়ে এগিয়ে এলেন সাবের মাসালমা। ফিলিস্তিন মুক্তি সংগঠন (পিএলও) ফাতাহ-এর এই সদস্য চব্বিশটি বছর ধরে কারাগারের নিকষ অন্ধকারে ছিলেন। ষড়যন্ত্র ও প্রাণঘাতী হামলার অভিযোগে তাঁকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। সাবেরকে বহনকারী বাস থেকে নামিয়ে কাঁধে তুলে নিল স্বজনেরা, যেন সদ্য মুক্ত হওয়া এক বিজয়ী বীর। পরনে ফিলিস্তিনি কেফিয়াহ, দুই আঙুল তুলে দেখাচ্ছিলেন বিজয় চিহ্ন।

সোমবার রামাল্লায় জড়ো হওয়া শত শত মানুষের মধ্যে ছিল আনন্দ আর না পাওয়ার বেদনা। ছবি: এএফপি
সোমবার রামাল্লায় জড়ো হওয়া শত শত মানুষের মধ্যে ছিল আনন্দ আর না পাওয়ার বেদনা। ছবি: এএফপি

কিন্তু সেই বিজয়ের মুহূর্তেই এক পরম মানবিক দৃশ্য। ভিড়ের মধ্যে তাঁকে নামানো হলো তাঁর মায়ের পায়ের কাছে। মুহূর্তে সাবের মাটিতে বসে মায়ের পায়ে চুমু খেতে শুরু করলেন। এই দৃশ্যে ভিড়ের চোখও অশ্রুসিক্ত হয়ে উঠল—দীর্ঘ ২৪ বছরের নীরবতা যেন এই চুম্বন দিয়েই ভাঙল!

সাবেরের এক আত্মীয়, যিনি দুই বছর ধরে তাঁর সঙ্গে দেখা করতে পারেননি, তিনি তাঁর শীর্ণ শরীর দেখে ফিসফিস করে বললেন, ‘ওকে তো জিন্দা লাশের মতো দেখাচ্ছে! কিন্তু আমরা ওকে আবার বাঁচিয়ে তুলব।’ তিনি সাবেরের মুখে ফোন গুঁজে দিলেন, যাতে সাবের তাঁর প্রাপ্তবয়স্ক ভাগনির সঙ্গে ভিডিও কলে কথা বলতে পারেন। কারাগারে অপুষ্টিতে ভোগা সাবেরকে নিয়ে তাঁদের চিন্তা শুরু হলো তখনই। রেস্টুরেন্টে নিয়ে গিয়ে সাবেরকে সাবধানে খাওয়াতে হবে, কারণ তাঁর পেট এত খাবার নিতে অভ্যস্ত নয়।

সোমবার রামাল্লায় জড়ো হওয়া শত শত মানুষের মধ্যে ছিল আনন্দ আর না পাওয়ার বেদনা। ছবি: এএফপি
সোমবার রামাল্লায় জড়ো হওয়া শত শত মানুষের মধ্যে ছিল আনন্দ আর না পাওয়ার বেদনা। ছবি: এএফপি

কারাগারের ভেতরের অবস্থা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে সাবের কাঁপা কাঁপা গলায় শুধু বললেন—‘ভয়ংকর!’ প্রতিশোধের ভয়ে এর বেশি কিছু বলতে সাহস পেলেন না তিনি। দুই দশক ধরে ইসরায়েলি কারাগারে অমানবিক নির্যাতনের শিকার হওয়া হাজারো ফিলিস্তিনির কষ্ট যেন এই একটি শব্দে লুকিয়ে ছিল। অন্য বন্দীরাও তাঁদের দুরবস্থার কথা জানালেন, কেউ কেউ বললেন, গত দুই বছর ছিল তাঁদের জীবনের ‘সবচেয়ে খারাপ সময়’।

সাবেরের মতো কেউ কেউ যখন আনন্দে মাতোয়ারা, তখন কয়েক মিটার দূরেই অপেক্ষা করছিলেন উম্ম আবেদ। তিনি অপেক্ষা করছিলেন তাঁর ভাই কামাল ইমরানের জন্য। কামালও মুক্তিপ্রার্থীদের তালিকায় ছিলেন। ইসরায়েলি নিরাপত্তা বাহিনী তাঁদের বাড়িতে এসে কঠোরভাবে নিষেধ করে গিয়েছিল কোনো ধরনের আনন্দ-উৎসব না করতে। এই নিষেধাজ্ঞা জানান দিচ্ছিল যে কামাল অবশ্যই মুক্তি পাচ্ছেন।

সোমবার রামাল্লায় জড়ো হওয়া শত শত মানুষের মধ্যে ছিল আনন্দ আর না পাওয়ার বেদনা। ছবি: এএফপি
সোমবার রামাল্লায় জড়ো হওয়া শত শত মানুষের মধ্যে ছিল আনন্দ আর না পাওয়ার বেদনা। ছবি: এএফপি

দুই দিন ধরে অপেক্ষার পর বাসগুলো যখন একে একে খালি হতে শুরু করল, উম্ম আবেদের বুক ধড়ফড় করছিল। প্রতিটি মুখের দিকে তাকিয়ে তিনি কেবল কামালকে খুঁজছিলেন। হঠাৎই খবর আসে, কামালকে গাজায় নির্বাসন দেওয়া হতে পারে—এই খবর শুনেই তিনি হতবাক হয়ে গিয়েছিলেন। যদি কামালকে গাজায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়, তাহলে হয়তো আর কোনো দিনই তাঁর সঙ্গে দেখা হবে না।

সোমবার রামাল্লায় জড়ো হওয়া শত শত মানুষের মধ্যে ছিল আনন্দ আর না পাওয়ার বেদনা। ছবি: এএফপি
সোমবার রামাল্লায় জড়ো হওয়া শত শত মানুষের মধ্যে ছিল আনন্দ আর না পাওয়ার বেদনা। ছবি: এএফপি

শেষ বন্দীটিও যখন বাস থেকে নেমে গেলেন এবং কামাল ইমরানের দেখা মিলল না, উম্ম আবেদ দুই হাতে নিজের গাল চেপে ধরে কাঁদতে শুরু করলেন, ‘আমরা দুই দিন ধরে এখানে ওর জন্য অপেক্ষা করছি। মুক্তি না পেয়ে নির্বাসনের খবর শুনে আমরা স্তম্ভিত।’

তাঁর পাশে দাঁড়িয়ে থাকা কামালের আত্মীয় রায়েদ ইমরান হতাশায় মুষড়ে পড়লেন। তিনি উম্ম আবেদকে টেনে গাড়িতে নিয়ে যাচ্ছিলেন, যেখানে কামালকে গ্রহণ করার জন্য মিষ্টি ও ফুল রাখা ছিল। রায়েদ বললেন, ‘যদি নির্বাসনই দিতে হতো, তবে প্রথম থেকে আমাদের বলে দিলেই হতো! আমরা জানি না সে এখন কোথায়—মিসরে না গাজায়? আমরা ধ্বংস হয়ে গেলাম!’ কান্নায় ভেঙে পড়া আরেকজন নারী চিৎকার করে বলছিলেন, ‘কেন তারা ওকে নির্বাসন দিচ্ছে?’

সোমবার রামাল্লায় জড়ো হওয়া শত শত মানুষের মধ্যে ছিল আনন্দ আর না পাওয়ার বেদনা। ছবি: এএফপি
সোমবার রামাল্লায় জড়ো হওয়া শত শত মানুষের মধ্যে ছিল আনন্দ আর না পাওয়ার বেদনা। ছবি: এএফপি

এভাবে, যুদ্ধবিরতির পর বন্দী মুক্তির দিনটি রামাল্লার জন্য একই সঙ্গে হয়ে রইল মুক্তি ও হতাশার দিন—একদিকে যেমন ফিলিস্তিনিদের মুক্তির অদম্য আকাঙ্ক্ষার জয় হলো, তেমনি অন্যদিকে অবিচার ও অনিশ্চয়তার বেদনা আরও গভীর হলো। দিনটি প্রমাণ করল, অধিকৃত অঞ্চলের মানুষের জীবনে ব্যক্তিগত আনন্দ ও রাজনৈতিক ট্র্যাজেডি একসূত্রে গাঁথা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এরদোয়ানের বাধায় নেতানিয়াহুকে মিসরের সম্মেলনে নিতে পারলেন না ট্রাম্প

ইসরায়েল থেকে মুক্তি পেলেও ফিলিস্তিনে ফিরছেন না ১৫৪ জন, যেতে হবে ‘অমানবিক’ নির্বাসনে

ভারতে দলিত পুলিশ কর্মকর্তার আত্মহত্যায় তোলপাড়, সুইসাইড নোটে বর্ণবৈষম্যের অভিযোগ

বাংলাদেশ-হংকং ফুটবল ম্যাচ টিভিতে দেখাবে না, তাহলে দেখার উপায়

গাজা শান্তি সম্মেলনে ‘সুন্দরী’ মেলোনিকে নিয়ে মাতলেন বিশ্বনেতারা

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

হামাস নেতাদের সঙ্গে ট্রাম্পের জামাতার বৈঠকেই চূড়ান্ত হয় চুক্তি

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৪ অক্টোবর ২০২৫, ১৪: ৫৪
জ্যারেড কুশনার ও স্টিভ উইটকফ। ছবি: এএফপি
জ্যারেড কুশনার ও স্টিভ উইটকফ। ছবি: এএফপি

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের জামাতা জ্যারেড কুশনার ও তাঁর দূত স্টিভ উইটকফ সশরীর হামাস নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন। মূলত ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধবিরতিতে রাজি করাতে হামাসের সঙ্গে তাঁরা ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠীটির সঙ্গে সরাসরি সাক্ষাৎ করেন।

মার্কিন সংবাদমাধ্যম অ্যাক্সিওস একাধিক সূত্রের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, গত সপ্তাহের বুধবার তাঁরা হামাস নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। হামাস নেতাদের এই অস্বাভাবিক ও নাটকীয় বৈঠক গাজা শান্তিচুক্তিকে চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে যেতে বড় ভূমিকা রেখেছে বলে সরাসরি এ বিষয়ে অবগত তিনটি সূত্র অ্যাক্সিওসকে জানিয়েছে।

চুক্তির পথে প্রধান বাধা ছিল হামাস নেতাদের এই আশঙ্কা যে ইসরায়েল জিম্মিদের ছেড়ে দেওয়ার পর আবার যুদ্ধ শুরু করবে। একটি সূত্রের দাবি, চুক্তি নিশ্চিত করতে স্টিভ উইটকফ ও জ্যারেড কুশনার হামাস নেতাদের সঙ্গে মুখোমুখি বৈঠক করেন এবং তাঁদের সরাসরি আশ্বস্ত করতে হয় যে হামাস চুক্তির শর্ত মেনে চললে ট্রাম্প ইসরায়েলকে যুদ্ধ পুনরায় শুরু করতে দেবেন না।

এর আগের দিন হোয়াইট হাউসে বৈঠকের সময় ট্রাম্প ব্যক্তিগতভাবে উইটকফ ও কুশনারকে অনুমতি দেন, প্রয়োজনে তাঁরা হামাস নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে পারেন চুক্তি সম্পন্ন করার স্বার্থে। তাঁরা মিসরের উদ্দেশে রওনা দেওয়ার আগে ওভাল অফিসে এই সিদ্ধান্ত হয়। এরপর শারম আল শেখে পৌঁছে উইটকফ কাতারের, মিসরীয় ও তুর্কি মধ্যস্থতাকারীদের ট্রাম্পের সবুজ সংকেতের কথা জানান।

বুধবার রাতে স্থানীয় সময় প্রায় ১১টার দিকে কাতারের মধ্যস্থতাকারীরা ফোর সিজন হোটেলের উইটকফের ভিলায় এসে জানান, আলোচনায় অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে। এক সূত্রের ভাষ্য, তাঁরা তখন জানতে চান, মার্কিন দূতেরা কি হামাস নেতাদের সঙ্গে সরাসরি দেখা করতে প্রস্তুত।

এক জ্যেষ্ঠ কাতারের কর্মকর্তা উইটকফকে বলেন, ‘আমাদের মনে হয়, আপনি যদি তাদের সঙ্গে দেখা করেন ও হাত মেলান, তাহলে চুক্তি হয়ে যাবে।’ কয়েক মিনিট পর উইটকফ ও কুশনার লোহিত সাগরের তীরের ওই রিসোর্টের আরেকটি ভিলায় প্রবেশ করেন।

ভেতরে উপস্থিত ছিলেন মিসর ও তুরস্কের গোয়েন্দাপ্রধান, কাতারের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা এবং আলোচনায় যুক্ত হামাসের চার শীর্ষ নেতা। হামাস প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন খলিল আল-হাইয়া, যিনি তিন সপ্তাহ আগে দোহায় ইসরায়েলের এক হত্যাপ্রচেষ্টা থেকে বেঁচে গিয়েছিলেন।

প্রায় ৪৫ মিনিটের বৈঠকে উইটকফ হামাস কর্মকর্তাদের বলেন, এখন জিম্মিরা তাদের জন্য ‘সম্পদের চেয়ে দায়ে পরিণত হয়েছে’। তাই সময় এসেছে চুক্তির প্রথম ধাপ এগিয়ে নেওয়ার এবং ‘দুই দিকের মানুষদের ঘরে ফিরিয়ে আনার’। খলিল আল-হাইয়া জানতে চান, উইটকফ ও কুশনার কি ট্রাম্পের কোনো বার্তা নিয়ে এসেছেন। তখন উইটকফ বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বার্তা হলো, আপনাদের সঙ্গে ন্যায়সংগত আচরণ করা হবে। তিনি তাঁর শান্তি পরিকল্পনার সব ২০টি দফা বাস্তবায়ন নিশ্চিত করবেন।’

বৈঠক শেষে হামাস নেতারা মিসরীয়, কাতারের ও তুর্কি মধ্যস্থতাকারীদের সঙ্গে অন্য এক কক্ষে চলে যান। কয়েক মিনিট পর মিসরের গোয়েন্দা প্রধান হাসান রাশাদ তাঁর তুর্কি ও কাতারের সমকক্ষদের নিয়ে ফিরে এসে বলেন, ‘আমরা যে বৈঠকটা এখন করলাম, তার ভিত্তিতে বলতে পারি—চুক্তি হয়ে গেছে।’

শারম আল শেখের এই বৈঠক ছিল ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে হামাসের দ্বিতীয় সরাসরি যোগাযোগ। এর আগে, গত মার্চে যুক্তরাষ্ট্রের জিম্মি-বিষয়ক দূত অ্যাডাম বোহলার দোহায় হামাস নেতাদের সঙ্গে নজিরবিহীন বৈঠক করেন। উদ্দেশ্য ছিল আমেরিকান জিম্মি ইদান আলেকজান্ডারকে মুক্ত করা এবং হামাসের হাতে নিহত আরও চারজন মার্কিন নাগরিকের মরদেহ ফেরত আনা।

তবে ইসরায়েল সরকারের তীব্র বিরোধিতার কারণে সেই উদ্যোগ ব্যর্থ হয়। কারণ, ইসরায়েল তখনো সরাসরি এই আলোচনার বিষয়ে কিছু জানত না। সূত্রমতে, রাজনৈতিক ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও উইটকফ ও কুশনারের হামাস নেতাদের সঙ্গে দেখা করার সিদ্ধান্ত হামাসকে বুঝিয়ে দেয়—যুক্তরাষ্ট্র সত্যিই একটি কার্যকর চুক্তি করতে এবং তা বাস্তবায়নে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।

এক সূত্র বলে, এ কারণেই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের দূতেরা যখন তাদের কথা দিলেন যে এই চুক্তি পুরোপুরি বাস্তবায়ন হবে, তারা তা বিশ্বাস করেছিল।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এরদোয়ানের বাধায় নেতানিয়াহুকে মিসরের সম্মেলনে নিতে পারলেন না ট্রাম্প

ইসরায়েল থেকে মুক্তি পেলেও ফিলিস্তিনে ফিরছেন না ১৫৪ জন, যেতে হবে ‘অমানবিক’ নির্বাসনে

ভারতে দলিত পুলিশ কর্মকর্তার আত্মহত্যায় তোলপাড়, সুইসাইড নোটে বর্ণবৈষম্যের অভিযোগ

বাংলাদেশ-হংকং ফুটবল ম্যাচ টিভিতে দেখাবে না, তাহলে দেখার উপায়

গাজা শান্তি সম্মেলনে ‘সুন্দরী’ মেলোনিকে নিয়ে মাতলেন বিশ্বনেতারা

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত