Ajker Patrika

বিমা খাতে শনির দশা

সম্পাদকীয়
বিমা খাতে শনির দশা

একসময় বিমা খাত ছিল ভবিষ্যতের আর্থিক সুরক্ষার ক্ষেত্র, আজ তা পরিণত হয়েছে গ্রাহকদের হতাশা আর উদ্বেগের কেন্দ্রে। বছর বছর বিমা কোম্পানির দ্বারে দ্বারে ঘুরেও গ্রাহকেরা তাঁদের প্রাপ্য টাকা পাচ্ছেন না। কারণ দেশের বিমা কোম্পানিগুলোর কাছে গ্রাহকদের আটকে আছে ৭ হাজার কোটি টাকা, অথচ বেশির ভাগ কোম্পানিই নির্ধারিত সময়ের মধ্যে দাবি পরিশোধ করছে না। এই বাস্তব চিত্র তুলে ধরা হয়েছে আজকের পত্রিকায় ১০ অক্টোবর প্রকাশিত সংবাদে।

বিমা আইন অনুযায়ী, মেয়াদপূর্তির ৯০ দিনের মধ্যে দাবি পরিশোধ বাধ্যতামূলক, কিন্তু বাস্তবে সেই নিয়ম মানা হচ্ছে না। এতে গ্রাহকদের মধ্যে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। সাধারণ মানুষ ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে বিমা কোম্পানিতে স্কিম চালু করে। স্কিমের মেয়াদ শেষে কাঙ্ক্ষিত টাকা পাওয়া সবার প্রত্যাশা। কিন্তু বিমা কোম্পানিগুলো যথাসময়ে গ্রাহকদের টাকা দিচ্ছে না।

এ জন্য কোম্পানিগুলোর সঙ্গে এর নিয়ন্ত্রক সংস্থা বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) অবহেলা এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। সরকারি এই প্রতিষ্ঠানটির অন্যতম কাজ হলো বিমা কোম্পানিগুলো সঠিকভাবে কাজ করছে কি না এবং গ্রাহকদের স্কিমের টাকা ঠিকভাবে প্রদান করছে কি না ইত্যাদি তদারক করা। কোম্পানির লাইসেন্স টিকিয়ে রাখার জন্য বিমার দাবি দ্রুত পরিশোধ করার নিয়ম আছে। কিন্তু নিয়ন্ত্রক সংস্থা এসব অনিয়ম নিয়ে কোনো পদক্ষেপ নেয় না। ফলে বিমা কোম্পানিগুলো ইচ্ছেমতো কাজ করতে পারছে।

নোয়াখালীর একজন গৃহিণী সানজিদা আক্তার তাঁর ৩৩ হাজার টাকা পাওয়ার আশায় গত সাত বছরে ১১ বার ঢাকায় এসেছেন। এতে তাঁর যাতায়াতেই খরচ হয়েছে ১৩ হাজার ৫০০ টাকা, কিন্তু প্রাপ্য টাকা তিনি পাননি। সানজিদার মতো লাখো গ্রাহক বছরের পর বছর তাঁদের আটকে থাকা অর্থের জন্য হন্যে হয়ে ঘুরছেন। কিন্তু টাকা পাচ্ছেন না।

বিমা খাতে এই করুণ অবস্থা সৃষ্টি হওয়ার মূল কারণ হলো অর্থ লোপাট, ব্যর্থ বিনিয়োগ, নীতিগত অবহেলা এবং ইচ্ছাকৃত অর্থ আটকে রাখা। এ ছাড়া সাধারণ বিমা কোম্পানিগুলোর প্রধান সমস্যাগুলো হলো মালিকদের অর্থ আটকে রাখার মানসিকতা, গ্রাহকের অসম্পূর্ণ কাগজপত্র, সার্ভে রিপোর্টে বিলম্ব, এসবিসি থেকে পুনর্বিমার অর্থ ফেরত না পাওয়া এবং বিনিয়োগের ভুল সিদ্ধান্ত। অন্যদিকে, জীবনবিমা কোম্পানিগুলোর ক্ষেত্রে দুর্বল ব্যাংক ও লিজিং প্রতিষ্ঠানে অর্থ ঢালা এবং আবাসন খাতে ব্যর্থ বিনিয়োগের কারণে গ্রাহকের দাবি সময়মতো পরিশোধ করা যাচ্ছে না বলে অভিযোগ আছে।

বিমা খাতকে এই গভীর সংকট থেকে উত্তরণ ঘটাতে হলে কেবল অডিট বা আইনি পদক্ষেপ যথেষ্ট নয়। দরকার পুরো খাতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি প্রতিষ্ঠা করা। অর্থ লোপাটের সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে অর্থ উদ্ধার এবং ব্যর্থ বিনিয়োগের ক্ষেত্রগুলো চিহ্নিত করে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা। একই সঙ্গে আইডিআরএকে তার আইনি ক্ষমতা পূর্ণভাবে ব্যবহার করে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে দাবি পরিশোধে কোম্পানিগুলোকে বাধ্য করা। গ্রাহকের আস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য উদ্যোগগুলো কার্যকর করা দরকার।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এরদোয়ানের বাধায় নেতানিয়াহুকে মিসরের সম্মেলনে নিতে পারলেন না ট্রাম্প

ইসরায়েল থেকে মুক্তি পেলেও ফিলিস্তিনে ফিরছেন না ১৫৪ জন, যেতে হবে ‘অমানবিক’ নির্বাসনে

বাংলাদেশ-হংকং ফুটবল ম্যাচ টিভিতে দেখাবে না, তাহলে দেখার উপায়

ভারতে দলিত পুলিশ কর্মকর্তার আত্মহত্যায় তোলপাড়, সুইসাইড নোটে বর্ণবৈষম্যের অভিযোগ

রাজধানীতে ডিপ ফ্রিজ থেকে নারীর মরদেহ উদ্ধার

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত