Ajker Patrika

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার প্রতীকী কফিন নিয়ে বৈষম্যবিরোধীদের বিক্ষোভ

 নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
আপডেট : ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২১: ২৮
চট্টগ্রামে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার গায়েবানা জানাজায় প্রতীকী কফিন। ছবি: আজকের পত্রিকা
চট্টগ্রামে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার গায়েবানা জানাজায় প্রতীকী কফিন। ছবি: আজকের পত্রিকা

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা চট্টগ্রামে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর গায়েবানা জানাজা পড়েছেন। এরপর তাঁর প্রতীকী কফিন নিয়ে টানাটানি করেন।

আজ শনিবার বেলা ৩টার দিকে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে এই কর্মসূচি পালন করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা। এ সময় শিক্ষার্থীরা তাঁকে নিয়ে ব্যাপক ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

শিক্ষার্থীরা এ সময় আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করারও দাবি জানান। একই সঙ্গে গতকাল গাজীপুরে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার সুষ্ঠু বিচার দাবি জানান।

গায়েবানা জানাজায় ইমামতি করেন মাদ্রাসাশিক্ষক ওসমান গণি। তিনি বলেন, ‘আমি আন্দোলনে গুলি খেয়েছি। অনেক ছাত্র আহত হয়েছেন, শহীদ হয়েছেন। এত এত রক্ত ঝরেছে। এখন আবারও আওয়ামী লীগ মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। এটা কোনোভাবেই বরদাশত করা হবে না। আমরা প্রয়োজনে আবার মাঠে নামব, আন্দোলন করব, গুলি খাব, শহীদ হব। আর কোনো ফ্যাসিবাদকে ফিরে আসতে দেওয়া হবে না।’

এ সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক রাসেল আহম্মেদ বলেন, ‘এই যে সারা দেশে আওয়ামী লীগ ধৃষ্টতা দেখাচ্ছে, সেসব অন্তর্বর্তী সরকারের ব্যর্থতার কারণে। এই সরকারের আইন উপদেষ্টা, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা তাদের ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। তারা নীরব ভূমিকা পালন করছে। ছয় মাসেও তারা কিছু করতে পারেনি। দৃশ্যমান কোনো বিচারিক অগ্রগতি নেই। কেন আমরা জীবন দিলাম। কেন স্বৈরাচার বিদায় করলাম।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শাহজালালে অগ্নিকাণ্ড: আসছে না রি-এজেন্ট, চমেকে বন্ধ ৩ পরীক্ষা

  • টেস্ট তিনটি হলো বোন স্ক্যান, রেনোগ্রাম ও থাইরয়েড স্ক্যান।
  • সপ্তাহে গড়ে ১৫০ রোগী এই তিন পরীক্ষা করাতে আসেন।
  • বেসরকারি ল্যাবে এসব পরীক্ষা না হওয়ায় বিপাকে রোগী।
  • দ্রুত এই সংকটের সমাধানের দাবি ভুক্তভোগীদের।
  • সমাধানে দ্রুত সংশ্লিষ্টদের নজর দেওয়া জরুরি: পরিচালক
সবুর শুভ, চট্টগ্রাম    
আপডেট : ১২ নভেম্বর ২০২৫, ০৩: ৪৯
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

রি-এজেন্ট সংকটে কিডনি ও ক্যানসারের মতো মরণব্যাধির বিশেষায়িত তিন ধরনের পরীক্ষা হচ্ছে না চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে। সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, দুই সপ্তাহ ধরে এসব পরীক্ষা করা যাচ্ছে না। এদিকে বেসরকারি ল্যাবে এসব পরীক্ষা করা যায় না বলে বিপাকে রোগী ও তাঁদের স্বজনেরা।

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজ কমপ্লেক্সে আগুন লাগার পর থেকে এসব টেস্টের রি-এজেন্ট আসছে না। বন্ধ হয়ে যাওয়া পরীক্ষা তিনটি হলো বোন স্ক্যান, রেনোগ্রাম ও থাইরয়েড স্ক্যান। এর মধ্যে বোন স্ক্যান ও রেনোগ্রাম টেস্ট ৩ হাজার টাকা করে এবং থাইরয়েড স্ক্যান টেস্ট ৭০০ টাকা।

জানা গেছে, চমেক হাসপাতাল ক্যাম্পাসের ইনস্টিটিউট অব নিউক্লিয়ার মেডিসিন অ্যান্ড অ্যালায়েড সায়েন্সে (ইনমাস) আধুনিক মেশিনের মাধ্যমে কিডনি ও ক্যানসার নির্ণয়ে ওই তিনটি পরীক্ষা করা হয়। তথ্যমতে, গত ১৯ অক্টোবর ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজ কমপ্লেক্সে ভয়াবহ আগুন লাগে। কার্গো ভিলেজের (পণ্য রাখার স্থান) যে অংশে আগুন লেগেছিল, সেখানে আমদানি করা পণ্য রাখা হয়। সেখানে ওষুধের বিভিন্ন উপকরণও ছিল। আগুনের হাত থেকে সেসব রক্ষা করা যায়নি। অগ্নিকাণ্ডের পর নতুন করে উল্লিখিত টেস্টের উপকরণ বিদেশ থেকে আনা হয়নি।

এ বিষয়ে ইনমাস চট্টগ্রামের পরিচালক অধ্যাপক পবিত্র কুমার ভট্টাচার্য বলেন, ‘ঢাকায় শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আগুন লাগার পরও কিছুদিন এ তিনটি পরীক্ষা চলছিল। আগের রি-এজেন্টগুলো শেষ হয়ে যাওয়ায় দুই সপ্তাহ ধরে কিডনি ও ক্যানসার নির্ণয়ে পরীক্ষাগুলো বন্ধ রয়েছে। এখন সমস্যা হলো, এই তিনটি পরীক্ষা বেসরকারিভাবে চট্টগ্রামে কোথাও হয় না। তাই এখন রোগীদের বিপাকে পড়তে হচ্ছে।’

পবিত্র কুমার আরও বলেন, ‘প্রতি সপ্তাহে গড়ে প্রায় ১৫০ জন রোগী তিনটি পরীক্ষা করাতে আসেন।

এখন পরীক্ষাগুলো বন্ধ হওয়ায় তাঁরা ঝুঁকিতে পড়ছেন। এ নিয়ে রোগীরাও আমাদের কাছে আসেন। তাঁদের আবার সময় নিয়ে কাউন্সেলিং করতে হয়।’ এই বিষয়ে খুব দ্রুত সংশ্লিষ্টদের নজর দেওয়া উচিত বলেও জানান এই চিকিৎসক।

চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, বোন স্ক্যান হলো চিকিৎসায় একটি পারমাণবিক ইমেজিং পরীক্ষা, যা হাড়ের বিভিন্ন রোগনির্ণয়, যেমন ফ্র্যাকচার, সংক্রমণ, হাড়ের ক্যানসার এবং অন্যান্য অস্বাভাবিকতা শনাক্তে ব্যবহৃত হয়। এই পরীক্ষায় শরীরে একটি তেজস্ক্রিয় ট্রেসার ইনজেকশন দেওয়া হয়, যা পরে হাড়ে জমা হয় এবং স্ক্যানার দিয়ে হাড়ের একটি বিস্তারিত ছবি তোলা হয়। এটি এক্স-রে বা সিটি স্ক্যানের চেয়েও দ্রুত হাড়ের সমস্যাগুলো চিহ্নিত করতে পারে।

অন্যদিকে, রেনোগ্রাম হচ্ছে একটি রেডিও নিউক্লিয়ার ইমেজিং পরীক্ষা, যা কিডনির গঠন এবং কার্যকারিতা মূল্যায়নে ব্যবহৃত হয়। এই পদ্ধতিতে একটি তেজস্ক্রিয় ট্রেসার শিরায় ইনজেকশন করা হয় এবং বিশেষ ক্যামেরা ব্যবহার করে কিডনির ছবি তোলা হয়; যাতে দুটি কিডনি সঠিকভাবে কাজ করে কি না এবং এতে কোনো অস্বাভাবিকতা আছে কি না, তা পরীক্ষা করা হয়।

থাইরয়েড স্ক্যান হলো একটি ইমেজিং পদ্ধতি, যা থাইরয়েড গ্রন্থির কার্যকারিতা এবং গঠন পরীক্ষা করতে ব্যবহৃত হয়। এটি থাইরয়েডের আয়োডিন শোষণ করার ক্ষমতা মূল্যায়ন করে এবং হাইপারথাইরয়েডিজম, ক্যানসার বা অন্য কোনো অস্বাভাবিকতা বৃদ্ধি শনাক্ত করতে সাহায্য করে। থাইরয়েড স্ক্যানের দুটি প্রধান পদ্ধতি হলো নিউক্লিয়ার মেডিসিন স্ক্যান এবং আলট্রাসাউন্ড (ইউএসজি) স্ক্যান।

দ্রুততার সঙ্গে এই সংকটের সমাধান না হলে রোগীদের অবস্থা আরও নাজুক হবে বলে মন্তব্য করেন কাপ্তাই থেকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা আপ্রুমা মারমা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ফরিদপুরের বোয়ালমারী: এক মামলায় স্থবির ৫ ইউপি

  • গত শুক্রবার বিকেলে বিএনপির দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়।
  • উপজেলার ১০ ইউপির মধ্যে ৫টির চেয়ারম্যান আসামি।
হাসান মাতুব্বর (শ্রাবণ) ফরিদপুর
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনায় করা মামলায় পাঁচ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যানকে আসামি করা হয়েছে। মামলা করার পর থেকেই এসব ইউপির স্বাভাবিক কার্যক্রম বিঘ্নিত হচ্ছে বলে জানা গেছে। এতে নাগরিক সেবায় ব্যাঘাত ঘটছে বলে সংশ্লিষ্ট ইউপির একাধিক সদস্য (মেম্বার) জানিয়েছেন।

এর আগে শুক্রবার বিকেলে বোয়ালমারী উপজেলা সদরে বিএনপির দুটি পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার পরদিন শনিবার রাতে থানায় বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে পৃথক দুটি মামলা করে দুই পক্ষ। দুই মামলায় ২২৪ জনের নাম উল্লেখসহ ৮৭৪ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে।

থানা-পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, দুটি মামলার মধ্যে একটি করেন উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি ও ফরিদপুর-১ আসন থেকে দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী শামসুদ্দিন মিয়া ঝুনুর সমর্থক মজিবুর রহমান বাবু। তিনি উপজেলা বিএনপির সাবেক কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। তাঁর করা মামলায় অন্য মনোনয়নপ্রত্যাশী সাবেক সংসদ সদস্য ও কৃষক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি খন্দকার নাসিরুল ইসলামকে ১ নম্বর আসামিসহ ১৮৭ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়া অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে ২০০-২৫০ জনকে।

মজিবুর রহমান বাবুর করা মামলার এজাহার বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, বোয়ালমারী উপজেলার ১০টি ইউপির মধ্যে ৫টির চেয়ারম্যানকে এ মামলায় আসামি করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন ৬ নম্বরে গুনবহা ইউপির চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম (৫৭), ২২ নম্বরে শেখর ইউপির চেয়ারম্যান কামাল আহমেদ (৪৮), ১১২ নম্বরে সাতৈর ইউপির চেয়ারম্যান রাফিউল আলম মিন্টু (৪৮), ১১৩ নম্বরে দাদপুরের মোশারফ হোসেন মুশা (৪৭) ও ১৫০ নম্বরে রূপাপাতের মিজানুর রহমান সোনা মিয়া (৪৪)।

সংশ্লিষ্ট ইউপির একাধিক সদস্য ও সচিবদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এসব ইউপির চেয়ারম্যানদের আসামি করায় স্বাভাবিক কার্যক্রমে কিছুটা ব্যাঘাত ঘটছে। কেউ কেউ পরিষদে এলেও কিছু সময় থেকেই চলে যান।

শেখর ইউপির ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মো. শফিকুল ইসলাম সরদার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘চেয়ারম্যান ঠিকমতো পরিষদে আসছেন না, কোনো একসময় আসেন আবার চলে যান। তাঁকে আমাদের প্রয়োজন অনুযায়ী পাওয়া যাচ্ছে না।

এ ছাড়া যাঁরা জন্মনিবন্ধনসহ অন্য সেবা নিতে আসছেন, সে ক্ষেত্রে চেয়ারম্যানের স্বাক্ষরের জন্য সময়ক্ষেপণ হচ্ছে।’

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তানভীর হাসান চৌধুরী বলেন, নাগরিক সেবায় যেন কোনো ব্যাঘাত না ঘটে, সে বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হবে। এ ছাড়া এমন অভিযোগ পেলে আইন অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট চেয়ারম্যানদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এদিকে মামলার বাদী মজিবুর রহমান বাবু বলেন, ‘এই পাঁচ চেয়ারম্যান খন্দকার নাসিরুল ইসলামের সমর্থক। এই পাঁচজনের মধ্যে শুধু সিরাজুল ইসলাম বিএনপির এবং বাকিরা আওয়ামী লীগের লোক। গত ৫ আগস্টের পর খন্দকার নাসির সাহেবের আশ্রয়ে যায় এবং তাঁকে বিভিন্ন কর্মসূচিতে বিপুল পরিমাণ টাকা ও লোকজন দিয়ে সহযোগিতা করে আসছে। শুক্রবারের ঘটনায় তাঁরাই বিপুলসংখ্যক লোকের সমাগম ঘটিয়ে আমাদের ওপর হামলা চালান।’

তবে এ সংঘর্ষ ও মামলা সম্পর্কে কিছুই জানতেন না দাবি করে দাদপুর ইউপির চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন বলেন, ‘আমি বিএনপির রাজনীতিই করি না এবং সম্পৃক্তও নই।’ তিনি বলেন, ‘আমাকে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে ইউনিয়নের প্রতিপক্ষের ইন্ধনে আসামি করা হয়েছে।’

এদিকে সাতৈর ইউপির চেয়ারম্যানকে মোবাইল ফোনে কল করা হলে তিনি চিকিৎসক দেখাতে ঢাকায় অবস্থান করছেন বলে জানান। বাকি তিনজনের সঙ্গে কথা বলতে মোবাইলে নম্বরে কল করা হলেও সাড়া পাওয়া যায়নি।

শুক্রবারের ওই সংঘর্ষের ঘটনায় ৩৭ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ৩০০-৪০০ জনকে আসামি করে আরেকটি মামলা করেন বোয়ালমারী উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও খন্দকার নাসিরুল ইসলামের সমর্থক অ্যাডভোকেট সিরাজুল ইসলাম। তিনি গুনবহা ইউপির চেয়ারম্যান ও অন্য মামলার আসামি

বোয়ালমারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাহামুদুল হাসান বলেন, সংঘর্ষের ঘটনায় দুটি মামলা করা হয়েছে। তবে কাউকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বগুড়া-১ আসন: দলের নেতারাই প্রার্থীর বিপক্ষে

  • সম্ভাব্য প্রার্থীর নাম ঘোষণার পরপরই গ্রুপিং প্রকাশ্যে আসে।
  • বিএনপির গ্রুপিংয়ের সুযোগ কাজে লাগাতে চায় জামায়াত।
গনেশ দাস, বগুড়া 
আপডেট : ১২ নভেম্বর ২০২৫, ০২: ১৭
কাজী রফিকুল ইসলাম। ছবি: সংগৃহীত
কাজী রফিকুল ইসলাম। ছবি: সংগৃহীত

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বগুড়া-১ (সোনাতলা-সারিয়াকান্দি) আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীর নাম ঘোষণার পরপরই গ্রুপিং প্রকাশ্যে আসতে শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে বিএনপি ঘোষিত প্রার্থীর বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে দলের একাংশ। আবার দলীয় পদে রয়েছেন এমন অনেক নেতা নীরব ভূমিকা পালন করছেন। নির্বাচনী মাঠে বিএনপির এই গ্রুপিংয়ের সুযোগ কাজে লাগাতে চায় জামায়াতে ইসলামী।

বগুড়ার সোনাতলা ও সারিয়াকান্দি উপজেলা নিয়ে গঠিত বগুড়া-১ আসন। দেশ স্বাধীনের পর থেকে এই আসনে বারবার বিএনপির প্রার্থী বিজয়ী হলেও ২০০৮ সালের নির্বাচনের পর থেকে দীর্ঘদিন আসনটি ছিল আওয়ামী লীগের দখলে।

নির্বাচন সামনে রেখে গত বছরের ৫ আগস্টের পরপরই মাঠে নেমেছিলেন অনেকেই। কিন্তু গত এক সপ্তাহ আগে বিএনপি থেকে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে সাবেক সংসদ সদস্য কাজী রফিকুল ইসলামের নাম ঘোষণা করা হয়। এর পর থেকেই মনোনয়নপ্রত্যাশী প্রার্থীর সংখ্যা কমে যায়।

দলীয় সূত্রে জানা যায়, সারিয়াকান্দি উপজেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট নুরে আজম বাবু বেশ কিছুদিন ধরে হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত। এ কারণে তিনি নির্বাচনী মাঠে নেই। উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমানও মাঠে নেই।

সাধারণ কর্মীরা বলছেন, কাজী রফিকুল ইসলামকে পছন্দ করেন না সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান। এ কারণে তিনিও নীরব ভূমিকা পালন করছেন।

তবে সারিয়াকান্দি উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান বলেন, ‘চূড়ান্ত মনোনয়ন যাকে দেওয়া হবে, আমি তার সঙ্গেই কাজ করব।’ নীরব ভূমিকা পালন করা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘যেহেতু চূড়ান্ত মনোনয়ন হয়নি, সে কারণে কোনো ব্যক্তির নাম উল্লেখ না করে ধানের শীষের ভোট চাচ্ছি।’

এদিকে জামায়াত আরও তিন মাস আগে তাদের একক প্রার্থী অধ্যক্ষ শাহাবুদ্দিন আহম্মেদের নাম ঘোষণা করে প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে। বিগত সময়ে জামায়াতে ইসলামী বিএনপির সঙ্গে জোট করে নির্বাচনে অংশ নিলেও এবারই প্রথম তারা এককভাবে নির্বাচনী প্রচারণা করছেন।

বগুড়া জেলা জামায়াতের সাবেক আমির অধ্যক্ষ শাহাবুদ্দিন আহম্মেদ বলেন, ‘আমরা জনগণের কাছে যাচ্ছি। জনগণই বিচার-বিবেচনা করে ভোট দেবেন।’

অন্যদিকে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে কাজী রফিকুল ইসলাম মাঠে কাজ শুরু করার পরপরই গত শনিবার তাঁর বিপক্ষে বিএনপির একটি অংশ মাঠে নামে। সোনাতলা উপজেলার বালুয়াহাট ইউনিয়ন বিএনপি ও তার অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা কাজী রফিকুল ইসলামকে আওয়ামী লীগের দোসর আখ্যায়িত করে তাঁকে প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়ে বিক্ষোভ করেন।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, সোনাতলা উপজেলা বিএনপির সভাপতি আহসানুল তৈয়ব জাকির প্রার্থী হতে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে যাচ্ছিলেন। কিন্তু এবার প্রার্থী হিসেবে তাঁর নাম ঘোষণা না হওয়ায় তাঁর সমর্থকেরা ক্ষুব্ধ। এ কারণে সোনাতলা উপজেলা বিএনপিও দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। আহসানুল তৈয়ব জাকির নীরব থাকলেও সোনাতলা উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জিয়াউল হক লিপন কাজী রফিকুল ইসলামের পক্ষে কাজ শুরু করেছেন।

আহসানুল তৈয়ব জাকির বলেন, ‘আমি চিকিৎসার জন্য ঢাকায় আছি।’

প্রার্থী কাজী রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমি প্রতিহিংসার রাজনীতি করি না। দলের নির্দেশ সব সময় মেনে চলেছি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

মধুপুর শালবন: কৌশলে গজারিগাছ হত্যা

  • বনভূমির মধ্যে প্রাকৃতিক বন ৬ হাজার ৭৫৬ একর।
  • হত্যার কৌশল বনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জানলেও রহস্যজনক কারণে নীরব।
  • অসাধু কর্মকর্তারা বনের জায়গা ফাঁকা করে বিঘাপ্রতি ভাড়া দেন।
  • জবরদখলকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে: রেঞ্জ কর্মকর্তা
আনোয়ার সাদাৎ ইমরান, টাঙ্গাইল 
গাছের গোড়ার ছাল তুলে মাটিচাপা দিয়ে অংশটি ঢেকে রাখে দুর্বৃত্তরা। এতে দ্রুত গাছ মরে যায়। সম্প্রতি মধুপুর বনের আমলীতলা থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
গাছের গোড়ার ছাল তুলে মাটিচাপা দিয়ে অংশটি ঢেকে রাখে দুর্বৃত্তরা। এতে দ্রুত গাছ মরে যায়। সম্প্রতি মধুপুর বনের আমলীতলা থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

৪৫ হাজার ৫৬৫ একর আয়তনের টাঙ্গাইলের মধুপুর শালবনে একসময় শাল-গজারিসহ ৬৩ প্রজাতির গাছের পাশাপাশি ভেষজ গুল্ম-লতায় ভরা ছিল। বিচরণ ছিল চিতাবাঘ, হরিণ, বানর, হনুমানসহ অন্তত ২০ প্রকার প্রাণী ও বিষধর সাপের। তবে সেসব আজ অতীত। অভিনব কায়দায় হত্যা করা হচ্ছে এই বনের গজারিগাছ। দিন দিন কমছে বনের আয়তনও। বন বিভাগের হিসাব অনুসারে, ২৬ হাজার ৯৩৫ একর জমি বেহাত।

স্থানীয়দের দাবি, বন ধ্বংসের অভিনব এই কৌশল মধুপুর বনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অবগত থাকলেও রহস্যজনক কারণে তাঁরা নীরব থাকেন। এই অপকর্মে সহযোগিতা করেন অসাধু কিছু বন কর্মকর্তা-কর্মচারী ও সিএমসি সদস্যরা।

গজারিগাছ ধ্বংসের পুরো চিত্র ফুটে উঠেছে বন রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা বন বিভাগের অনুমোদিত সংগঠন কমিউনিটি ম্যানেজমেন্ট কমিটির (সিএমসি) দোখলা অঞ্চলের সভাপতি মো. মোতালেব হোসেনের বক্তব্যে। তিনি বলেন, ‘পরথমে গাছের গোড়া পরিষ্কার করে। তারপর গজারিগাছের ছাল এক দেড় ফুট তুইলা ফালায়। এরপর মাটি চাপা দিয়া গাছের গোড়া ঢাইকা দেয়। এক দেড় মাসের মধ্যে ওই গাছ মইরা যায়। এইডা হইল গজারিগাছ মাইরা ফালানোর প্রসেস। যারাই আনারস ও কলাবাগান করে, তারাই এই প্রসেসে বাগানের আগাছা পরিষ্কারের সাথে সাথে গজারিরগাছ পরিষ্কার করে।’

স্থানীয় বাসিন্দাদের ভাষ্য, একসময়ের ঘন বন আজ বৃক্ষশূন্য হয়ে পড়েছে রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের দখলবাজি, তৎকালীন পুলিশ কর্মকর্তা-কর্মচারী, স্থানীয় প্রশাসন ও বনদস্যুদের সম্মিলিত বৃক্ষ পাচার আর অপরিণামদর্শী সরকারি প্রকল্পের কারণে। সামাজিক ও অংশীদারত্বের বনায়নের নামে বন খেকোদের বৈধতা দেওয়ায় মধুপুর বন ধ্বংস ত্বরান্বিত হয়েছে।

বন বিভাগ বলছে, ৪৫ হাজার ৫৬৫ একর বনভূমির মধ্যে প্রাকৃতিক বন ৬ হাজার ৭৫৬ একর। সামাজিক বন ৬ হাজার ১৭৯ একর। আর ৮ হাজার ৩৩২ জনের দখলে ১৯ হাজার ১৩৫ একর বনভূমি। ৭ হাজার ৮০০ একরজুড়ে রয়েছে রাবার বাগান। এই হিসাব অনুসারে ২৬ হাজার ৯৩৫ একর বনের জমি বেহাত রয়েছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, একসময়ের ঘন আরণ্যক অঞ্চল আমলীতলা কলা আর আনারস বাগানে পরিণত হয়েছে। দোখলা যাওয়ার পথে ওই গ্রামের বাইদের উজানে ডান পাশে সিনা টান করে দাঁড়িয়ে আছে গজারিগাছ। প্রতিটি গাছের গোড়া মাটি চাপা দেওয়া। কিছু অংশে ঠিকাদারেরা পাথর ও পিচের ড্রাম রেখে দিয়েছে। মাস দেড়েক আগেও এই জায়গায় শাল-গজারিগাছের নিচে ছিল আনারসবাগান। আশপাশেও পাতাঝরা এই বনের পাতা মাটিতে পড়ে না। পড়ে আনারসগাছের ওপর। বন বিভাগের সহযোগিতায় সবই দখলদারদের হেফাজতে। দখলদারেরা গজারি বনের ভেতরে ফাঁকা জায়গাগুলোতে আনারস আবাদ করেছেন। ওই বাগান পরিষ্কারের সময় কৌশলে বড় বড় গাছও পরিষ্কার করেন তাঁরা। ঠিকাদারের ভাড়া নেওয়া জায়গার গজারিগাছগুলোর গোড়া মাটির ঢিবি দিয়ে ঢাকা। ওই ঢিবির মাটি সরানোর পর বেরিয়ে আসে গজারিগাছ হত্যার রহস্য। প্রতিটি গজারিগাছের গোড়া এক-দেড় ফুট ছাল তুলে ফেলা হয়েছে। যাতে করে দ্রুত গাছগুলো মরে যায়।

এভাবেই গাছের গোড়ার ছাল তুলে ফেলা হয়। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, এ বিষয়ে বনকর্মীরা অবগত থাকলেও রহস্যজনক কারণে তাঁরা নীরব থাকেন। বরং কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী এতে সহযোগিতা করেন। ছবি: আজকের পত্রিকা
এভাবেই গাছের গোড়ার ছাল তুলে ফেলা হয়। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, এ বিষয়ে বনকর্মীরা অবগত থাকলেও রহস্যজনক কারণে তাঁরা নীরব থাকেন। বরং কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী এতে সহযোগিতা করেন। ছবি: আজকের পত্রিকা

ঠিকাদারের প্রতিনিধি মো. হারুন অর রশিদ বলেন, ‘আমি ও মনির হোসেন দুজনে মিলে মধুপুর দোখলা সড়ক উন্নয়নের কাজটি সাব-কন্ট্রাক্ট নিয়েছি। নির্মাণকাজের উপকরণ রাখার জায়গা না থাকায় আমলীতলায় মরে যাওয়া আনারসের বাগান ভাড়া নিয়েছি। ওই জমির আনারসচাষি শাহাজাহানকে গাছ পরিষ্কার করার জন্য ১০ হাজার টাকা দিয়েছি। তারা গাছ পরিষ্কার করে দিয়েছে। আমরা বন বিভাগের সঙ্গে আলোচনা করে নির্মাণের সময়ের জন্য জায়গাটুকু ব্যবহার করছি।’

স্থানীয় বাসিন্দা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, গজারিগাছ নিধনে নতুন কৌশল নিয়েছে বন কর্মচারী, সিএমসি সদস্য ও দখলদারেরা। অসাধু এই ব্যক্তিরা বনের জায়গা ফাঁকা করে বিঘাপ্রতি ভাড়া দেন। তারা প্রতি বিঘা ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত নিয়ে থাকে। এ জন্য তারা প্রথমে গজারিগাছের ছাল (চামড়া) গোড়া থেকে এক-দেড় ফুট পর্যন্ত চারদিকে তুলে ফেলে। তারপর গাছের কাণ্ডে হাতুড়ি বা কুঠার দিয়ে আঘাত করে থেঁতলে অ্যাসিড দিয়ে দেয়। পরে গাছের গোড়ায় মাটি ও আবর্জনা দিয়ে ঢেকে দেয়। যাতে করে গ্যাস সৃষ্টি হয়ে দ্রুত গাছ মরে যায়। আর এই পদ্ধতিতে একটি গাছ দেড় থেকে দুই মাসের মধ্যে মরে যায়।

মধুপুর বনাঞ্চলের জয়েনশাহী আদিবাসী উন্নয়ন পরিষদের সভাপতি ইউজিন নকরেক বলেন, ‘কয়েক বছর ধরে দখলদারেরা গাছের চামড়া ছিলে গজারিগাছ মেরে ফেলছে। আনারস-কলাচাষি, বনের অসাধু কর্মচারী ও দখলদার এবং সামাজিক বনায়নের প্লটধারীরা এভাবে বনের গজারিগাছ ধ্বংস করে থাকেন।’

এ ব্যাপারে দোখলা রেঞ্জের কর্মকর্তা সাব্বির হোসেন বলেন, ‘আমরা ঘটনাস্থল দেখে এসেছি। জবরদখলকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। তাৎক্ষণিক কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারিনি স্থানীয়দের হামলার ভয়ে। আমরা বন বিভাগের কয়েক কর্মচারী অসহায়। কিছু বললেই স্থানীয়দের হামলার ভয় থাকে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত