Ajker Patrika

রাঙামাটিতে বিশুদ্ধ পানিবঞ্চিত ৪০ হাজার মানুষ

হিমেল চাকমা, রাঙামাটি 
আপডেট : ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৮: ১৪
নালার পানি দিয়ে শিশুকে গোসল করাচ্ছেন এক মা। সম্প্রতি রাঙামাটির বরকল উপজেলার ভুষণছড়া ইউনিয়নের চান্দবিঘাট এলাকা। ছবি: আজকের পত্রিকা
নালার পানি দিয়ে শিশুকে গোসল করাচ্ছেন এক মা। সম্প্রতি রাঙামাটির বরকল উপজেলার ভুষণছড়া ইউনিয়নের চান্দবিঘাট এলাকা। ছবি: আজকের পত্রিকা

রাঙামাটির ভারত সীমান্তবর্তী বরকলের আইমাছড়া ভূষণছড়া, বড়হরিণা, জুরাছড়ির দুমদুম্যা ইউনিয়নের প্রায় ৪০ হাজার মানুষ এখনো বিশুদ্ধ পানি থেকে পুরোপুরি বঞ্চিত। স্বাধীনতার ৫৪ বছর পেরোলেও এসব সীমান্ত এলাকায় এখনো নেই কোনো বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা। নেই কোনো সরকারি টিউবওয়েল। ফলে নদী, ছড়া বা কুয়া থেকে পানি সংগ্রহ করেন তাঁরা। এসব পানি দিয়েই গোসল, রান্না, ধোয়াসহ পান করেন এসব ইউনিয়নের মানুষ।

এতে সারা বছর ধরে এসব এলাকার মানুষ ডায়রিয়া, আমাশয়, কলেরা, টাইফয়েডসহ পানি বাহিত নানা রোগে ভোগেন। এমনকি এসব এলাকায় নেই স্বাস্থ্যসেবাকেন্দ্রও।

সম্প্রতি সীমান্ত এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, বরকল উপজেলার ভূষণছড়া ইউনিয়নে চান্দবিঘাট গ্রামে ২ শতাধিক পরিবারের বসবাস। এ গ্রামে নেই কোনো বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা। সারা বছর কুয়া আর ঠেগা নদী থেকে পানি সংগ্রহ করে সেটা পান করেন গ্রামের মানুষ। গত বছর এই গ্রামে দুই মাসের ব্যবধানে বিভিন্ন রোগে পাঁচজন মারা যান। এতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। শতভাগ জুম কৃষিনির্ভর এ গ্রামে পরিবারগুলোর অন্যতম একটি জীবিকা পশু পালন। দেখা গেছে, পালিত এসব পশুপাখি পানির ক্ষেত্রগুলোতে বিচরণ করায় পানি থাকে দূষিত। এসব দূষিত পানি দিয়েই চলে চান্দবিঘাট গ্রামের মানুষদের জীবন।

জনতে চাইলে গ্রামের সূর্যমুখী চাকমা (৪৩) বলেন, ‘কুয়া থেকে পানি সংগ্রহ করি। এই পানি দিয়ে সবকিছু করতে হয়। এ ছাড়া আমাদের কোনো বিকল্প নেই।’ মনিমালা চাকমা (৬০) বলেন, ‘আমার এত বছরের জীবনে নলকূপের পানি পান করার সুযোগ হয়নি। মনে হয় এ বয়সে আর পাব না।’

শুধু চান্দবিঘাট গ্রাম নয়, আইমাছড়া ইউনিয়নের কালাপুনাছড়া, আন্দারমানিক, করল্যাছড়ি, উপর করল্যাছড়ি, ভুয়োঠেক, পেরাছড়া, গোইহাটছড়া ও নোয়াপাড়া, ভূষনছড়া ইউনিয়নের তাগলকবাক, মরাঠেগা, তালছড়া, খুব্বাং, তমবাক, ছাদারা ছড়া, মধ্যে ছাদারাছড়া, চান্দবীঘাট, বড় হরিণা বড় হরিণা মুখ, কুকিছড়া বাজার, কালাপান্যা, ভাইবোন ছড়া, দোকানঘাট, শ্রীনগর, মাজিপাড়া ও নোয়াপাড়ার আশপাশে ঝর্ণা না থাকায় পানি পান করেন কর্ণফুলী, ঠেগা নদী, বড় হরিণা ছড়া থেকে। সীমান্তবর্তী সব গ্রামের একাই চিত্র। এসব ইউনিয়নের ৪০ হাজার বেশি মানুষ বিশুদ্ধ পানিসেবা থেকে একেবারে বঞ্চিত।

আন্দরমানিক এলাকার বাসিন্দা ও স্থানীয় ইউপি সদস্য সুশীল জীবন চাকমা বলেন, ‘আমরা বেঁচে আছি ভগবানের দয়ায়। আমাদের সরকারি সুবিধা বলতে গেলে একেবারেই নেই। দাবিদাওয়া বলতে গেলে, যত সুযোগ-সুবিধা রয়েছে আমরা সরকারের কাছে সবগুলোই চাই। কারণ এ এলাকাটি সুবিধা বঞ্চিত এলাকা। ঠেগা নদীর পাড়ে টিউবওয়েল বসানো যাবে। কিন্তু কোনো সরকারি সংস্থা টিউবওয়েল বসাতে আসে না। টিউবওয়েল হবে কি না, তার সম্ভাব্যতা যাচাইও করা হয়নি কোনোবার। এখানে বরাদ্দ বাড়িয়ে হলেও টিউবওয়েল করা দরকার।’

আইমাছড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সুবিমল চাকমা বলেন, ‘স্বাধীনতার ৫৪ বছর পরও এসব এলাকায় গভীর নলকূপ স্থাপনের উদ্যোগ নেয়নি জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর। ফলে বিশুদ্ধ পানি থেকে বঞ্চিত সীমান্ত পাড়ের মানুষ। যে দু-চারটি গভীর নলকূপ বরাদ্দ দেওয়া হয়, সে বরাদ্দ সীমান্ত এলাকায় পৌঁছায় না। এই এলাকায় সৌরবিদ্যুতের মাধ্যমে হলেও যেন নলকূপ স্থাপন করা যায়, এ নিয়ে বারবার আবেদন জানানো হলেও সরকারের পক্ষ থেকে সাড়া মেলে না। এই এলাকায় বিভিন্ন সময় বিশুদ্ধ পানীয়জল সরবরাহের কথা বলা হলেও কার্যত কোনো সরকারের আমলে তা শুরু হয়নি।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পানি-সংকটের কথা স্বীকার করেন রাঙামাটি জেলা জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী পরাগ বড়ুয়া। তিনি বলেন, ‘এসব এলাকায় কখনো সার্ভে হয়নি। এসব এলাকায় নলকূপ বসাতে গেলে বরাদ্দ বেশি প্রয়োজন। সে বরাদ্দ না থাকায় ঠিকাদারেরা সেখানে গিয়ে কাজ করতে চান না।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মন্ত্রণালয়ের গুরুত্বপূর্ণ ফাইল বাসায় নিয়ে গায়েব করেন উপদেষ্টা— আসিফ মাহমুদের বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের মেয়রের অভিযোগ

চীনা যুদ্ধবিমান থেকে এলএস-৬ বোমা ফেলে কেন নিজ দেশে ‘হত্যাযজ্ঞ’ চালাল পাকিস্তান

ফিলিস্তিনকে আজই রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দেবে আরও ৬ দেশ, বিরোধিতা ইসরায়েল–যুক্তরাষ্ট্রের

ধর্ষণের শিকার শিশুর স্বজনকে মারতে উদ্যত হওয়া সেই চিকিৎসক বরখাস্ত

সখীপুরে বনপ্রহরীদের ওপর হামলা: ইউপি সদস্য, বিএনপি নেতাসহ ৭ জনের নামে মামলা

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত