Ajker Patrika

সরকারের পতনের আন্দোলনে জনসাধারণকে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বান জানাচ্ছি: ফখরুল

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ০৪ আগস্ট ২০২৪, ১৩: ২২
সরকারের পতনের আন্দোলনে জনসাধারণকে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বান জানাচ্ছি: ফখরুল

ঐক্যবদ্ধ হয়ে সরকারপতনের আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়তে জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বিএনপি। আজ রোববার রাজধানীর গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই আহ্বান জানান। 

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা আমাদের দলের পক্ষ থেকে ছাত্রদের এই যৌক্তিক, ন্যায়সংগত, শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে পূর্ণ সমর্থন জানিয়েছি। আজ আমরা তাদের নতুন ঘোষণাকে সমর্থন জানাচ্ছি এবং এই ভয়াবহ দানবীয় খুনি শাসকগোষ্ঠীর পতনের লক্ষ্যে সব রাজনৈতিক দল, সংগঠন, ব্যক্তি, পেশাজীবী, শ্রমিক, কৃষকসহ আপামর জনসাধারণকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ে এই অবৈধ খুনি হাসিনা সরকারের পতন নিশ্চিত করার আহ্বান জানাচ্ছি।’ 
 
বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘জাতির এক চরম ক্রান্তিলগ্নে আপনাদের আমন্ত্রণ জানিয়েছি। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন তথা সাধারণ শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলন দমন করতে গিয়ে আওয়ামী লীগ সরকার যে নিষ্ঠুরতা ও বর্বরতা আশ্রয় নিয়েছে, তা উপমহাদেশের ইতিহাসে বিরল ঘটনা।’ 

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘ছাত্র আন্দোলন দমন করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও অন্যান্য নিরাপত্তা বাহিনী এবং ছাত্রলীগ-যুবলীগসহ আওয়ামী লীগের সশস্ত্র ক্যাডারেরা পাখি শিকারের মতো নির্বিচারে গুলি করে লাশের পর লাশের স্তূপ সৃষ্টি করেছে, ব্যাপক রক্তপাত ঘটিয়েছে, হাজার হাজার মানুষ গুলিবিদ্ধ হয়ে আশঙ্কাজনক অবস্থায় আছেন। সরকার তাদের এই বর্বরতা আড়াল করতে সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে কিছু স্থাপনায় ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে এর দায় বিরোধী দলের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার অপচেষ্টা করছে।’ 

মিথ্যা অভিযোগে নিরীহ ছাত্র-জনতার সঙ্গে বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনসহ অন্যান্য বিরোধী দলের সিনিয়র নেতা, কেন্দ্রীয়, জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন, গ্রাম পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের আটক করা হচ্ছে উল্লেখ করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আটকাভিযান এখনো চলছে। আন্দোলন দমাতে সান্ধ্য আইন দিয়ে, সেনাবাহিনী নামিয়ে ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয়েছে। সান্ধ্য আইনের মধ্যে রাতে বিভিন্ন এলাকায় ব্লক রেইড দিয়ে নিরীহ ছাত্রসহ বিরোধী নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার করে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করা করেছে। আটক করতে গিয়ে বাসা-বাড়িতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীবাহিনী, ক্ষমতাসীন দলের ক্যাডাররা ছাত্র ও নেতা-কর্মীদের পরিবার-পরিজনের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করছে। আসবাবপত্র ভাঙচুর এবং টাকাসহ মূল্যবান জিনিসপত্র লুটপাট করে নিয়ে যাচ্ছে। তাদের না পেয়ে তাদের বাবা, ভাই ও অন্যান্যদের গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাচ্ছে। চলছে গ্রেপ্তার বাণিজ্য ও চাঁদাবাজি। মূলত সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে ফ্যাসিস্ট সরকারের হত্যাযজ্ঞ ও ধ্বংসযজ্ঞ আড়াল করতেই তথাকথিত তৃতীয় পক্ষ আবিষ্কারের জন্য সরকারের বিরামহীন এই প্রচেষ্টা চলছে, যা জনসাধারণ ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছে।’ 

সরকার প্রথম থেকেই ছাত্র-ছাত্রীদের যৌক্তিক দাবি অস্বীকার করে নিষ্ঠুরভাবে দমন করতে প্রচেষ্টা চালিয়ে দেশকে ধ্বংস ও নৈরাজ্যের দিকে নিয়ে গেছে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘ছাত্র আন্দোলন বলপূর্বক দমন করতে রাষ্ট্র যন্ত্রকে ব্যবহার করে চলছে নজিরবিহীন তৎপরতা। দেশে আজ অস্বাভাবিক পরিস্থিতি বিরাজ করছে। জনগণের ওপর যুদ্ধ ঘোষণা করেছে সরকার। চারদিকে শুধু অনিশ্চয়তা ও অস্থিরতা। এর সম্পূর্ণ দায় রাষ্ট্র পরিচালনায় ব্যর্থ আওয়ামী লীগ সরকারের।’ 

শিক্ষার্থীদের বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন দমনে গণহত্যা, নৈরাজ্য, ধ্বংস, দমন, নিপীড়ন দেখে সারা বিশ্ব স্তম্ভিত জানিয়ে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘সরকার ছাত্র, যুবক, শিশু, নারীসহ জনতাকে নির্বিচারে নির্দয়ভাবে হত্যা করে মানবতাকে হত্যা করেছে। সরকারের মানবতাবিরোধী সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে বিশ্ব বিবেক জাগ্রত হয়েছে। দেশ-বিদেশে সরকার ধিক্কৃত ও ঘৃণিত। দেশের সকল মানুষ ও গণতন্ত্রকামী বিশ্ব গণহত্যাকারীদের গ্রেপ্তার এবং আটককৃত নেতা-কর্মীসহ নিরীহ ছাত্র-জনতাকে মুক্তি দেওয়ার আহ্বান জানালেও সরকার কূটকৌশল করে পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে।’ 

মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘এসব দাবিতে ছাত্র-জনতার কর্মসূচি বানচাল করতে সরকার আবারও নিরাপত্তা বাহিনীসহ ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীদের ছাত্র-জনতার ওপর লেলিয়ে দিয়ে আরও হত্যা, নির্যাতন, দমন-পীড়ন অব্যাহত রেখেছে। যার ফলশ্রুতিতে সমগ্র দেশ আজ অগ্নিগর্ভ। শহর থেকে গ্রাম পর্যন্ত সকল জনপদ ছাত্র-জনতার বিক্ষোভ বিদ্রোহে মুখরিত। সমগ্র দেশের গণতন্ত্রকামী মানুষ, সুশীল সমাজ, শিক্ষক, অভিভাবক, সাংবাদিক, আইনজীবী, লেখক, শিল্পী, সাহিত্যিক, শ্রমজীবী মানুষসহ ধর্ম-বর্ণ, দল-মত নির্বিশেষে সকল শ্রেণি পেশার মানুষ স্বৈরাচারী সরকারের বিরুদ্ধে ছাত্র জনতার আন্দোলনে সমর্থন দিয়ে শামিল হয়ে গণজাগরণের সৃষ্টি করেছে। গড়ে উঠেছে অভাবনীয় জাতীয় ঐক্য, জনগণের ঐক্য। সমগ্র দেশ আজ গণহত্যাকারী সরকারের বিরুদ্ধে এক এককাট্টা। গ্রাম ও শহরের ঘরে ঘরে আর্তনাদের সঙ্গে উচ্চারিত হচ্ছে খুনি সরকারের পদত্যাগের দাবি।’ 

ছাত্র-জনতার এক দাবি প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘এমন পরিস্থিতিতে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন গতকাল (শনিবার) এক দফা দাবি অর্থাৎ স্বৈরাচার সরকারের পদত্যাগের দাবি সংবলিত এক দফা ঘোষণাপত্র উত্থাপন করে। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দল আগে থেকেই গণতন্ত্র হত্যাকারী, ভোটাধিকারসহ জনগণের মৌলিক অধিকার হরণকারী, জাতীয় স্বার্থ বিপন্নকারী, জনদুর্ভোগ সৃষ্টিকারী লুটেরা দুর্নীতিবাজ আওয়ামী সরকারের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন করে আসছে। সেই আন্দোলনও দমন করতে সরকার হত্যা, গুম, দমন, নিপীড়নের স্টিমরোলার চালিয়ে ফ্যাসিবাদী ও কর্তৃত্ববাদী দুঃশাসন কায়েম করেছে।’ 

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তথা আপামর জনসাধারণের উত্থাপিত এক দফা ঘোষণাপত্রের সঙ্গে সম্পূর্ণ একাত্মতা ঘোষণা করছে। বিএনপি জাতির এই চরম ক্রান্তিলগ্নে দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থে গণতন্ত্র প্রিয় আপামর জনসাধারণ এবং বিএনপি ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের সর্বস্তরের নেতা-কর্মী, সমর্থক, শুভানুধ্যায়ীদের প্রতি রাজপথে নেমে এসে ছাত্র জনতার সঙ্গে একাত্ম হয়ে গণহত্যাকারী স্বৈরাচারী সরকারের পতন ত্বরান্বিত করতে অসহযোগ আন্দোলন সফল করার আহ্বান জানাচ্ছে। শত শত শহীদের রক্ত বৃথা যেতে পারে না। ইনশা আল্লাহ ছাত্র জনতার বিজয় অবশ্যম্ভাবী।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘তীব্র গণ-আন্দোলনে পতন অবশ্যম্ভাবী জেনে আওয়ামী লীগ আবার সংঘাত, সন্ত্রাসের আশ্রয় নিয়েছে। গত রাতে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে তারা সন্ত্রাস সৃষ্টি করেছে। বর্তমানে কারাগারে আটক বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন, চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেন, বর্তমান আহ্বায়ক এরশাদ উল্লাহর চট্টগ্রামের বাড়িতে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা আক্রমণ করে অবৈধ অস্ত্র ব্যবহার করে গুলিবর্ষণ ও অগ্নিসংযোগ করে। বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির আন্তর্জাতিক বিষয়কসহ সম্পাদক ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানার ঢাকার এলিফ্যান্ট রোডের বাসায়, মিরপুরে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্যসচিব আমিনুল হকের পারিবারিক রেস্টুরেন্টে হামলা চালিয়ে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা আক্রমণ চালিয়ে ভাঙচুর করে। সন্ত্রাসীরা রুমিন ফারহানাকে উদ্দেশ্য করে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। তার বাড়ির আশে-পাশে অন্যান্য বাড়িতেও সন্ত্রাসীরা আক্রমণ চালিয়ে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। আমিনুল হকের রেস্টুরেন্টে লুটপাট করে। এ সময় আইন শৃঙ্খলা বাহিনী নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে।’ 

এ ছাড়াও দেশের বিভিন্ন এলাকায় আওয়ামী লীগ গতরাতে সন্ত্রাস চালিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করে। আমরা আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী তৎপরতার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বলতে চাই, এসব করে তারা সরকারের পতন ঠেকাতে পারবে না বলেও জানান তিনি। 

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘দেশে আজ এক গণ-অভ্যুত্থানের সূচনা হয়েছে। ছাত্রদের বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে সাঈদ, মুগ্ধসহ শত নিরীহ ছাত্র শিশু ও জনতার রক্তে অবৈধ শাসকগোষ্ঠীর হাত রঞ্জিত হয়েছে। জনগণ এই ভয়াবহ গণহত্যার প্রতিবাদে রাস্তায় বেরিয়ে আসছে। ছাত্র, শ্রমিক, পেশাজীবী, চাকরিজীবী, মা বোন, পিতা-মাতা, শিক্ষক, সাংবাদিক, শিল্পী, লেখক আজ এক কাতারে। দলমত, বয়স, ধর্ম নির্বিশেষে সকল মানুষ ফুলে উঠেছে ক্রোধে। দ্রোহের মিছিলে শরিক হচ্ছে সকল স্তরের সকল শ্রেণির সকল বয়সের মানুষ। আমি তাদের অভিবাদন জানাই।’ 

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘গতকাল শহীদ মিনারে জনতার উত্তাল সমুদ্রে সামনে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়কারীর এই অবৈধ খুনি সরকারের প্রধান শেখ হাসিনার পদত্যাগ দাবি করেছে এবং অবিলম্বে নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের দাবি জানিয়েছে। দেশের সকল মানুষ এই দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়েছে। আমরা ২০১২ সাল থেকে এই সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন দাবি করে আসছি। অবৈধ সরকার ক্ষমতায় চিরস্থায়ী করার লক্ষ্যে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন ব্যবস্থা বাতিল করে চিরস্থায়ীভাবে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করে গণতন্ত্র ধ্বংস করেছে। দেশের গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র কাঠামো ধ্বংস করেছে নজির বিহীন দুর্নীতির মাধ্যমে অর্থনীতি ধ্বংস করেছে। এখন ছাত্রদের ন্যায় সংগত দাবি কোটা ব্যবস্থায় ব্যক্তিক সংস্কারের আন্দোলনকে নির্মম নিষ্ঠুর ভাবে দমন করতে গিয়ে শত শত তাজা প্রাণের রক্ত ঝরিয়েছে, শত শত মায়ের বুক খালি করেছে, শত সন্তানরা পিতাকে হারিয়েছে। এমনকি ৪ বছরের শিশুও রেহাই পায়নি। গণহত্যার মাধ্যমে ছাত্রদের আক্রমণকে দমন করতে ব্যর্থ হয়ে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়েছে। ছাত্র জনতার ঐক্যের মধ্য দিয়ে যে চূড়ান্ত আন্দোলন সাফল্যের দ্বারপ্রান্তে উপস্থিত, তাকে স্তব্ধ করার ক্ষমতা কারও নেই।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বিএনপি মহাসচিবকে ফোন করে বলেছিলাম, আমরা একটু আলোচনায় বসি: জামায়াত নেতা তাহের

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ০৬ নভেম্বর ২০২৫, ২৩: ০৪
জামায়াতের জ্যেষ্ঠ নায়েবে আমির আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের। ফাইল ছবি
জামায়াতের জ্যেষ্ঠ নায়েবে আমির আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের। ফাইল ছবি

জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ও গণভোটের বিষয়ে সমঝোতার জন্য আলোচনায় বসতে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে ফোন করেছেন জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের। আজ বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) বিএনপির এই নেতাকে ফোন করেন তিনি।

আজ সন্ধ্যায় ফোন করার বিষয়টি আজকের পত্রিকাকে নিশ্চিত করেন জামায়াত নেতা তাহের।

সৈয়দ তাহের বলেন, ‘আমিই বিএনপির মহাসচিবকে ফোন করেছিলাম। ওনাকে বলেছিলাম, আমরা একটু আলোচনায় বসি।’ জবাবে উনি বলেছেন জানাবেন।

গত সোমবার উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের বিষয়ে দলগুলোকে সাত দিনের মধ্যে একমত হয়ে সরকারকে জানাতে অনুরোধ করা হয়। তারই ধারাবাহিকতায় জামায়াতের পক্ষ থেকে বিএনপিকে আলোচনার জন্য আহ্বান করা হয় এবং আজ ফোনকল করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

‘যাঁরা নিজেদের লোক হত্যা করেন, তাঁরা ক্ষমতায় গেলে মানুষ নিরাপদে থাকতে পারবে না’

মুন্সিগঞ্জ প্রতিনিধি
মুন্সিগঞ্জ শহরে আজ বৃহস্পতিবার পাঁচ দফা দাবিতে গণসমাবেশে বক্তব্য দেন ইসলামী আন্দোলনের জ্যেষ্ঠ নায়েবে আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম। ছবি: আজকের পত্রিকা
মুন্সিগঞ্জ শহরে আজ বৃহস্পতিবার পাঁচ দফা দাবিতে গণসমাবেশে বক্তব্য দেন ইসলামী আন্দোলনের জ্যেষ্ঠ নায়েবে আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম। ছবি: আজকের পত্রিকা

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের জ্যেষ্ঠ নায়েবে আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম বলেছেন, বিএনপি ক্ষমতায় যাওয়ার আগেই খুনাখুনি শুরু করেছে। নিজেদের মধ্যে নিজেরাই খুনাখুনি করছে। যাঁরা নিজেদের লোককে নিজেরা হত্যা করেন, সেই দল যদি ক্ষমতায় আসে, তাহলে এই দেশের মানুষ নিরাপদে থাকতে পারবে না।

আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মুন্সিগঞ্জ শহরের পুরোনো কাচারি এলাকার ডিসি পার্ক-সংলগ্ন প্রধান সড়কে ইসলামী আন্দোলনের জেলা শাখার গণসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ফয়জুল করীম এসব কথা বলেন। আগামী জাতীয় নির্বাচনে জুলাই সনদের ভিত্তিতে উভয় কক্ষে পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনসহ ৫ দফা দাবিতে এ সমাবেশ হয়।

ফয়জুল করীম আরও বলেন, ‘দেশের মানুষ অতীতে বিএনপি ও আওয়ামী লীগ—দুই দলকেই ক্ষমতায় এনেছে। একাধিকবার তারা পরীক্ষায় ফেল করেছে। দেশের মানুষ তাদের কর্মকাণ্ড দেখেছে। তাদের কাছে সমাধান নেই।’

ইসলামী আন্দোলনের এই নেতা বলেন, ‘জিয়াউর রহমান সাহেব ভালো মানুষ ছিলেন, এই গুণকীর্তনের কারণে দেশের মানুষ ১৯৯১ ও ২০০১ সালে খালেদা জিয়াকে ক্ষমতায় এনেছিল; থাকতে পারেননি। আবার শেখ মুজিবুর রহমান সাহেবের গুণকীর্তনের কারণে ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এসেছিলেন। কী উপহার দিয়েছেন, তা দেশবাসী জানে।’

ফয়জুল করীম বলেন, ‘দুই দল মিলে দেশকে পাঁচবার দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন করেছে। শুধু ১৯৯১ থেকে ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছরে বিএনপি তিনবার বিশ্বে দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। সব দলকে পরীক্ষা করা হয়েছে, শুধু ইসলামকে পরীক্ষা করা হয়নি। ইসলামী আন্দোলনকে একবার পরীক্ষা করে দেখুন।’

গণসমাবেশে ইসলামী আন্দোলনের মুন্সিগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি মুফতি শাহাদাত হোসেনের সভাপতিত্বে কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

৮ দল নিয়ে রাজনৈতিক জোট করতে পারে এনসিপি: নাসীরুদ্দীন

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

আটটি দল নিয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) রাজনৈতিক জোট হওয়ার সম্ভাবনার কথা জানিয়েছেন দলটির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী।

আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর বাংলামোটরে এনসিপির অস্থায়ী কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা জানান।

যে দলগুলোর সঙ্গে এনসিপি জোটবদ্ধ হতে চাইছে, সেগুলো হচ্ছে—গণতন্ত্র মঞ্চে থাকা ছয়টি দল জেএসডি, নাগরিক ঐক্য, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, গণসংহতি আন্দোলন, ভাসানী জনশক্তি পার্টি ও বাংলাদেশ রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন এবং আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টি ও গণঅধিকার পরিষদ।

নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, ‘এই আট দলের সঙ্গে আমাদের একটা পলিটিক্যাল জোট হওয়ার সম্ভাবনা আছে। অর্থাৎ গণতন্ত্র মঞ্চ প্লাস যে দুই দল রয়েছে, তাদের নিয়ে রাজনৈতিক জোট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’

আগামী জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি বা জামায়াতের সঙ্গে জোট হচ্ছে কি না—সাংবাদিকদের এ প্রশ্নের জবাবে নাসীরুদ্দীন বলেন, ‘যেহেতু দেশ সংকটকালীন মুহূর্তে আছে, বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী যদি সংস্কার বাস্তবায়ন নিয়ে এক জায়গায় আসে এবং তারা যদি সংস্কারগুলো ভবিষ্যতে বাস্তবায়ন করবে—এমন প্রতিশ্রুতি দেয়, তাহলে বিএনপি এবং জামায়াত যে কারও সাথেই আমাদের জোট হতে পারে।’

নাসীরুদ্দীন বলেন, ‘আমাদের প্রাথমিক শর্ত—বিচার এবং সংস্কার। এই বিষয়ে যদি সমাধান না হয়, তাহলে কারও সাথেই জোটে যাব না।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভোটের আগে গণভোট নয়, বিএনপি ভেসে আসেনি— ফখরুলের কড়া হুঁশিয়ারি

­যশোর প্রতিনিধি
আপডেট : ০৬ নভেম্বর ২০২৫, ১৯: ৫৮
যশোরে সাবেক মন্ত্রী তরিকুল ইসলামের স্মরণসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ছবি: আজকের পত্রিকা
যশোরে সাবেক মন্ত্রী তরিকুল ইসলামের স্মরণসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ছবি: আজকের পত্রিকা

বিএনপিকে অবজ্ঞা করলে ফল ভালো হবে না বলে মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘বিএনপি ভেসে আসা দল নয়। বিএনপিকে খাটো করে দেখবেন না। আমরা যদি মাঠে নামি, তাহলে রাজনৈতিক বিষয়গুলো ভিন্নভাবে আসবে।’

যশোরে সাবেক মন্ত্রী তরিকুল ইসলামের স্মরণসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এসব কথা বলেন। বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির প্রয়াত সদস্য সাবেক মন্ত্রী তরিকুল ইসলামের সপ্তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে জেলা বিএনপির আয়োজনে আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় যশোর টাউন হল ময়দানে এই স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হয়।

‘উপদেষ্টা পরিষদ পক্ষপাতদুষ্ট হয়ে কাজ করছেন’ মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘তাঁরা ঐকমত্যের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে সাত দিন সময় দিয়েছেন, কিন্তু রাজনৈতিক দল তো হাতের খেলনার মতো নয়। সংস্কার কমিশনের সব সভায় আমরা গিয়েছি। মতামত দিয়েছি। যে বিষয়গুলোতে ঐকমত্য হয়েছে, সেগুলো নিয়ে কাজ শুরু করতে হবে। যেগুলো হয়নি, সেগুলো পরবর্তী পার্লামেন্টে নিয়ে যাওয়া হবে। কিন্তু তা না করে তাঁরা পক্ষপাতদুষ্ট হয়ে কাজ করছেন। দেশকে অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্র হচ্ছে।’

উপদেষ্টাদের ইঙ্গিত করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘অনেক রক্তের বিনিময়ে আমরা স্বাধীন হয়েছি। চব্বিশের আন্দোলনের পর সুযোগ হয়েছে গণতন্ত্রের পথে ফেরার। দয়া করে পানি ঘোলা করবেন না। দেশের পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করবেন না।’

মির্জা ফখরুল জোর দিয়ে বলেন, ‘জাতীয় নির্বাচনের দিন গণভোট হবে, এর আগে নয়। সংস্কার কমিশনে আমরা যেসব বিষয়ে একমত হয়েছি, তার ভিত্তিতে কাজ শুরু করুন। যেগুলো হয়নি, সেগুলোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত পার্লামেন্টে হবে। দ্রুত তফসিল ঘোষণা করুন। নির্বাচন দিয়ে দিন। অন্যথায় আপনারা ব্যর্থ হবেন। সে ক্ষেত্রে জনগণের কাছে জবাবদিহি করতে হবে।’

প্রয়াত তরিকুল ইসলামকে স্মরণ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ফ্যাসিস্টের বিয়োগাত্মক বিদায় তিনি দেখে যেতে পারলেন না। তাঁর বিদায়ে জাতি একজন দেশপ্রেমিক নেতাকে হারিয়েছে। তিনি একটি ইনস্টিটিউট ছিলেন। ছাত্রজীবন থেকে তিনি সংগ্রাম করেছেন, জেল খেটেছেন, নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার হয়েছেন; কিন্তু জনগণকে ছেড়ে যাননি। তাঁর মতো নেতার এখন খুব প্রয়োজন।

যশোর জেলা বিএনপির সভাপতি সৈয়দ সাবেরুল হক সাবুর সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বিএনপির কেন্দ্রীয় ধর্মবিষয়ক সহসম্পাদক অমলেন্দু দাস অপু, বিএনপির সাবেক তথ্যবিষয়ক সম্পাদক মফিকুল হাসান তৃপ্তি, কৃষক দলের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার টি এস আইয়ুব, ঝিকরগাছা থানা বিএনপির সভাপতি সাবিরা নাজমুল মুন্নী, কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ, বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য আবুল হোসেন আজাদ, জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম, যশোর বারের সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ ইসহক, যশোর চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি মিজানুর রহমান খান, যশোর নগর বিএনপির সভাপতি রফিকুল ইসলাম চৌধুরী, কোতোয়ালি বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আঞ্জুরুল হক খোকন, ইমাম পরিষদের সহসভাপতি আব্দুল মান্নান প্রমুখ।

স্মরণসভায় দোয়া পরিচালনা করেন মুফতি মাওলানা আমানুল্লাহ কাসেমী। মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন প্রয়াত তরিকুল ইসলামের সহধর্মিণী বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক নার্গিস বেগম, ছেলে কেন্দ্রীয় বিএনপির খুলনা বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত