Ajker Patrika

সরকারি ওষুধ গুদামে পচে

সম্পাদকীয়
সরকারি ওষুধ গুদামে পচে

দেশের সরকারি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে বিনা মূল্যে বরাদ্দের ওষুধ গুদামে মজুত আছে। অথচ রোগী এলে বলা হয়, ওষুধের সাপ্লাই নেই। দেশের জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের ৬৪টি সরকারি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বিরুদ্ধে এই অভিযোগসহ গুরুতর সাতটি অভিযোগ পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পৃথক অভিযান ও গোপন অনুসন্ধান চালায় দুদক। অন্য অভিযোগগুলো হলো: রোগীদের বরাদ্দের চেয়ে কম ও নিম্নমানের খাবার সরবরাহ, ওষুধ না দিয়ে বাইরে থেকে কিনতে বাধ্য করা, অতিরিক্ত ফি আদায়, রোগ নির্ণয়ের যন্ত্রপাতি ব্যবহার না করা, কেনাকাটায় অনিয়ম ও নিয়োগে অনিয়ম।

এই পরিস্থিতিগুলো এক দিনে তৈরি হয়নি। দীর্ঘদিন ধরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তদারকির অভাবে দুর্নীতির ঘটনাগুলো ডালপালা ছড়িয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, দুদক আমাদের জানায়নি। তারা জানালে আমরা ব্যবস্থা নেব। এ কথাগুলো যে দায়িত্বে অবহেলার বড় প্রমাণ, সেটা ওই কর্মকর্তাকে কে বোঝাবে? যাঁরা এ বিষয়গুলোর তদারকি করবেন, তাঁরাই নির্বোধের মতো কথা বলছেন। দেশের এত বড় একটি জনস্বাস্থ্যবিষয়ক গুরুতর দুর্নীতি নিয়ে তাঁরা কীভাবে অন্ধকারে থাকতে পারেন? অথবা যদি জেনেই থাকেন, তবে ব্যবস্থা নিতে কেন দুদকের আনুষ্ঠানিক প্রতিবেদনের জন্য অপেক্ষা করতে হবে? এই ধরনের উদাসীনতা প্রকারান্তরে তাঁদের গাফিলতি এবং দুর্নীতিবাজদের প্রতি নরম হওয়ার বিষয়টিকে স্পষ্ট করে।

দুদকের অভিযানে ৫০ জন চিকিৎসক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে বরখাস্ত করা নিঃসন্দেহে একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ। কিন্তু এইটুকুতেই থেমে থাকলে চলবে না। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামানের অভিমতটি এখানে প্রণিধানযোগ্য—যাঁরা প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে জড়িত, তাঁদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনতে হবে। কেবল বিভাগীয় ব্যবস্থা বা বরখাস্ত করাই যথেষ্ট নয়, রাষ্ট্রীয় সম্পদের অপচয় ও জীবন নিয়ে খেলার জন্য ফৌজদারি মামলা হওয়া উচিত।

সরকারি স্বাস্থ্যসেবার এই নৈরাজ্য বন্ধে অবিলম্বে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। শুধু বরখাস্ত নয়, প্রমাণ সাপেক্ষে জড়িতদের অর্থ আত্মসাৎ ও সরকারি অর্থ অপচয়ের জন্য কঠোর আইনগত শাস্তি নিশ্চিত করা দরকার।

হাসপাতালের স্থায়ী কর্মচারীদের জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে। এটা নিশ্চিত করতে হলে প্রশাসনিক প্রধানদের নিয়ন্ত্রণ-ক্ষমতা বাড়াতে হবে।

গুদামের ওষুধ, ল্যাবরেটরির রি-এজেন্ট এবং খাবার বরাদ্দের ওপর নিয়মিত, আকস্মিক ও কঠোর তৃতীয় পক্ষের অডিট নিশ্চিত করতে হবে। কেনাকাটার প্রতিটি ধাপ হতে হবে

উন্মুক্ত ও স্বচ্ছ।

গুদামে ওষুধ পচছে, অথচ রোগীর হাতে তা পৌঁছাচ্ছে না—এটা অসভ্য এক ব্যবস্থাপনার নজির। দুদক খুব ভালো কাজ করেছে, এখন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও সরকারকে প্রমাণ করতে হবে, তারা এই দুর্নীতির সিন্ডিকেট ভেঙে দিয়ে মানুষের জীবন রক্ষার পক্ষে আছে। এখনই সময়, দুর্বৃত্তের হাত থেকে জনস্বাস্থ্যকে রক্ষা করা। কিন্তু বিড়ালের গলায় ঘণ্টা পরাবে কে?

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত