Ajker Patrika

জাতীয় সংসদ নির্বাচন: আসন ভাগে দর-কষাকষি

  • বিএনপির কাছে শতাধিক আসন চায় সমমনা দলগুলো
  • মিত্রদের সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকা চেয়েছে বিএনপি
  • ১০০ আসন ছাড়ার পরিকল্পনায় জামায়াত
  • এনসিপিকে চায় বিএনপি ও জামায়াত
‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ছবি: আজকের পত্রিকা
ছবি: আজকের পত্রিকা

ঘোষিত সময় অনুযায়ী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বাকি আর চার-সাড়ে চার মাস। ভোটে জিতে সরকার কীভাবে গড়া যায়, সেই হিসাব আর কৌশল ঠিক করছে রাজনৈতিক দলগুলো। তবে দলগুলোর মধ্যে বড় ধরনের এপাশ-ওপাশ বা জোট গঠনের ইঙ্গিত এখনো মেলেনি। কিন্তু সমমনাদের মধ্যে আসন ভাগাভাগির কথা প্রকাশ্যে বলছেন নেতারা। কোন দল কত আসন ছাড়বে আর সেটা কোন দলকে দেওয়া হবে, তা নিয়ে চলছে জোর দর-কষাকষি।

রমজান শুরুর আগে আগামী ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি জাতীয় নির্বাচন হবে বলে ঘোষণা দিয়ে রেখেছে অন্তর্বর্তী সরকার। সেই হিসাবে নভেম্বরের মাঝামাঝি থেকে শেষ দিকে তফসিল ঘোষণা করবে নির্বাচন কমিশন। তার আগে প্রার্থী যাচাই-বাছাই ও নির্ধারণে ব্যস্ত রাজনৈতিক দলগুলো।

বিএনপির কাছে শতাধিক আসন চায় সমমনা দলগুলো

নির্বাচন সামনে রেখে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিচ্ছে অন্যতম বড় দল বিএনপি, চলছে প্রার্থী বাছাই। সব ঠিক থাকলে চলতি মাসেই আসনভিত্তিক একক প্রার্থী ঘোষণা দিতে চায় দলটি। একই সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনের শরিকদের সঙ্গে নিয়ে নির্বাচনের বৈতরণী পার হতে চায় বিএনপি। এ জন্য তাদের সঙ্গে জোট অথবা আসন ছাড়েরও পরিকল্পনা আছে দলটির।

বিএনপি ও এর সমমনা দলগুলোর সূত্র বলছে, বিএনপির কাছে মিত্র দলগুলো শতাধিক আসন দাবি করেছে। তবে মিত্রদলগুলোর কাছ থেকে সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকা চেয়েছে বিএনপি। বেশ কয়েকটি দল ও জোট এরই মধ্যে তালিকা দিয়েছে। দু-এক দিনের মধ্যে আরও কয়েকটি দল তালিকা দেবে। আর মিত্র কয়েকটি দলের একাধিক নেতা তালিকা নিয়ে আবার লন্ডনেও গেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে কথা বলতে। কেউ আবার আগেই সবুজসংকেত পেয়ে মাঠে কাজ শুরু করেছেন।

জানা গেছে, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) মহাসচিব রেদোয়ান আহমেদ লন্ডনে গেছেন। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সঙ্গে তাঁর সাক্ষাতের কথা রয়েছে। এলডিপির কেন্দ্রীয় এক নেতা জানান, আগামী নির্বাচনে বিএনপির কাছে অন্তত ১৫টি আসন চাইবে তারা।

এ ছাড়া গণতন্ত্র মঞ্চ বিএনপির কাছে অর্ধশত আসন চায় বলে জানা গেছে। তারা ইতিমধ্যে তাদের এই চাওয়া বিএনপিকে জানিয়েছে। গতকাল শনিবার এ নিয়ে দুই পক্ষের বৈঠকও হয়।

আর অন্তত ২০ আসন চেয়েছে ১২ দলীয় জোট। জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট চেয়েছে ৯টি আসন। অন্য সমমনা দলগুলোরও আসন নিয়ে এমন চাওয়া রয়েছে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ গত শুক্রবার নিজ বাসায় সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা জোটের কাছে সেই আসনগুলো চাইব বা শেয়ার করব, যে আসনগুলো জিতিয়ে নিয়ে আসতে পারব বলে আশা রাখি। জোটের সঙ্গে সেই বিষয় নিয়ে আমাদের আলোচনা হচ্ছে।’

১০০ আসনে ছাড় দিতে প্রস্তুত জামায়াত

নির্বাচনে কমপক্ষে ২০০ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চায় জামায়াতে ইসলামী। যদিও এর মধ্যে ৩০০ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছে দলটি। এলাকায় জনসংযোগে নেমেছেন সেই প্রার্থীরা। এর মধ্যে নির্বাচনী জোট ও আসন সমঝোতা নিয়ে সমমনাদের সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত রেখেছে দলটি। এ নিয়ে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত না এলেও সমমনাদের জন্য সর্বোচ্চ ১০০টি আসনে ছাড় দেওয়ার বিষয়ে প্রাথমিক পরিকল্পনা নিয়ে রেখেছেন দলের নীতিনির্ধারকেরা।

গত শুক্রবার খুলনায় এক অনুষ্ঠানে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘আমিরে জামায়াত (শফিকুর রহমান) আমাকে একটা ধারণা দিয়েছেন। এমনও হতে পারে, সমঝোতা করতে করতে শেষ পর্যন্ত ১০০ আসনও আমাদের ছেড়ে দিতে হতে পারে।’

তবে আসন সমঝোতা নিয়ে এখনো কোনো আলোচনা হয়নি বলে জানান জামায়াতের সমমনা দল ইসলামী আন্দোলনের প্রেসিডিয়াম সদস্য আশরাফ আলী আকন। জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেলের বক্তব্যের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘একজন একটা বিক্ষিপ্ত কথা বলে পরিবেশটা নষ্ট করেছেন। সেটা তাঁর ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত হতে পারে, দলের কথা নয়। সব দল বসব এবং সারা দেশে জরিপ হবে, কোন দলের কোন প্রার্থী কোন আসনে ভালো, তা দেখা হবে।’

এনসিপিকে নিয়ে টানাটানি

নির্বাচনী জোটের বিষয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সঙ্গে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও আরও কয়েকটি দলের প্রাথমিক আলাপ-আলোচনা চলছে। এনসিপির কয়েকটি সূত্র দাবি করেছে, বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী দুটি দলই এনসিপিকে জোটসঙ্গী হিসেবে চায়। গত দুই সপ্তাহের মধ্যে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের সঙ্গে জামায়াত ও বিএনপির পৃথক দুটি বৈঠক হয়েছে। শুরুতে জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমানের সঙ্গে এবং এরপর বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদের সঙ্গে বৈঠক করেন নাহিদ। এসব বৈঠকে জোটের বিষয়ে প্রাথমিক আলোচনা হলেও চূড়ান্ত কোনো সমঝোতা হয়নি বা সিদ্ধান্ত আসেনি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এনসিপির এক যুগ্ম আহ্বায়ক বলেন, ‘আমরা সমঝোতা বা জোট করব পরিস্থিতি অনুযায়ী। কার দিকে গেলে পাল্লা ভারী হবে, সেটা আমরা বিবেচনা করব না। বিএনপি-জামায়াত দুই পক্ষই আমাদের জোটে টানতে চায়।’

এনসিপি নির্বাচনে অংশ নেবে কি না, তা নিয়ে অনেকের মনেই রয়েছে নানা প্রশ্ন। জুলাই সনদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি ছাড়া তারা নির্বাচনে যাবে না বলে বিভিন্ন সময়ে জানিয়েছেন একাধিক নেতা। নির্বাচনে গেলে কাদের সঙ্গে জোট হবে, তা নিয়েও রয়েছে নানা আলোচনা।

তবে জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি নিশ্চিত হয়ে গেলে এনসিপি নির্বাচনে যাবে বলে জানিয়েছেন দলের যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার। জোটের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘৩০০ আসনে আমরা প্রার্থী দিই বা না দিই, ৩০০ আসনে প্রার্থী দেওয়ার সক্ষমতা তৈরি করতে চাই। এরপর কারও সঙ্গে যদি জোট বা সমঝোতা হয়, তাহলে সেভাবে ছাড় দিতে হবে।’

এনসিপির সঙ্গে আলোচনার বিষয়ে বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন বলেন, রাজনৈতিক আলোচনা তো সব দলের সঙ্গেই হয়। এনসিপির সঙ্গেও হয়। তবে আসনভিত্তিক কোনো আলোচনা তাদের সঙ্গে হয়নি।

বৃহত্তর বলয় গড়তে তৎপর বামরাও

দীর্ঘদিন ধরে বামপন্থীদের বৃহত্তর ঐক্য তৈরিতে তৎপর রয়েছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টিসহ বেশ কিছু বামপন্থী দল। তারই ধারাবাহিকতায় ছয়টি রাজনৈতিক দলের জোট বাম গণতান্ত্রিক জোট, সাতটি বাম দলের ফ্যাসিবাদবিরোধী বাম মোর্চাসহ বাংলাদেশ জাসদ, ঐক্য ন্যাপসহ বিভিন্ন বামপন্থী দল ও সংগঠনকে ঐক্যবদ্ধ করার প্রচেষ্টা চলছে। এসব দলের নেতারা জানিয়েছেন, আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের আগে এসব দলসহ অন্যান্য জোটে থাকা বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দলকে ঐক্যবদ্ধ করে বামপন্থীদের বৃহত্তর জোটের আত্মপ্রকাশ ঘটতে পারে। তবে এসব বিষয়ে আলোচনা এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে।

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ ক্বাফী রতন আজকের পত্রিকাকে বলেন, দেশের বামপন্থীদের একটি বড় ঐক্য তৈরির প্রচেষ্টা আমাদের দীর্ঘদিন ধরেই আছে। তবে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কোনো ঐক্য বা জোটের আলোচনা এখনো কারও সঙ্গে হয়নি। আমরা শুধু রাজনৈতিক দল নয়, বিভিন্ন প্রান্তিক জনগোষ্ঠী বা প্রগতিশীল সংগঠনগুলোর সঙ্গেও বৃহত্তর ঐক্যের আলোচনা করছি।

জাতীয় পার্টিকে নিয়ে সন্দেহ-সংশয়

জোট ও সমঝোতার আলোচনা থেকে বাদ পড়ছে না নানাভাবে চাপে থাকা জাতীয় পার্টিও। বিগত তিন জাতীয় সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টি বর্তমানে একাধিক ধারায় বিভক্ত। সম্মেলন নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে গত জুলাই মাসে আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, তৎকালীন মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুসহ কয়েক নেতাকে বহিষ্কার করেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ (জি এম) কাদের। জি এম কাদেরকে বাদ দিয়ে নতুন সম্মেলন করে বহিষ্কৃত নেতারা। তাতে চেয়ারম্যান হন আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এবং মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদার। নির্বাহী চেয়ারম্যান হন মুজিবুল হক চুন্নু। নতুন এ কমিটি দলীয় প্রতীক লাঙ্গল দেওয়ার জন্য নির্বাচন কমিশনকে চিঠি দিয়েছে।

নির্বাচনী জোট নিয়ে জাপার দুই অংশের নেতারা তৎপর বলে জানা গেছে। রাজনৈতিক মাঠে চাউর হয়েছে জামায়াত-এনসিপি নির্বাচন না করলে জাতীয় পার্টিকে বিরোধী দলের আসনে বসাতে তৎপর একটি পক্ষ। এরই মধ্যে নির্বাচনী জোট করার ঘোষণা দিয়েছেন জাপার (একাংশ) চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ।

দলটির মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, ‘এখন পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে নির্বাচনী জোট হয়। আমাদের এখানেও এবার জোট ছাড়া নির্বাচন হবে না। আমাদেরও জোট করতে হবে। এখনো এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক আলাপ-আলোচনা না হলেও একপর্যায়ে নিতে হবে।’

জাতীয় পার্টির আরেক অংশের চেয়ারম্যান জি এম কাদের বলেন, ‘আমাদের তো কার্যক্রম করতেই দিচ্ছে না। মামলা দিয়ে নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। এখন আমরা নিজেদের গোছাতে চেষ্টা করছি। নির্বাচনী জোটের বিষয়ে কারও সঙ্গে কথা হয়নি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

তোফায়েল আহমেদের অবস্থা ‘ক্রিটিক্যাল’

ইসরায়েলি কৌশলেই ট্রাম্পকে ‘হ্যাঁ’ বলল হামাস, উভয়সংকটে নেতানিয়াহু

ফরিদপুরে শ্বশুরবাড়িতে যুবককে গলা কেটে হত্যার চেষ্টা, পাশের ঘরে খোঁড়া হয় কবর

গুলশান থেকে আওয়ামী লীগ নেতা আহসান হাবিব ভূঁইয়া গ্রেপ্তার

চীনের মিত্র পাকিস্তানের নতুন কৌশল, যুক্তরাষ্ট্রের মন পেতে বন্দর দিতে চান সেনাপ্রধান আসিম মুনির

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত