এস. এম. এম. মুসাব্বির উদ্দিন
বাংলাদেশে স্মার্টফোন চুরি এখন আর নতুন ঘটনা নয়। স্মার্টফোনের ব্যবহার শুরু হওয়ার পর থেকেই এই অপরাধ ধীরে ধীরে বেড়ে উঠেছে। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এর মাত্রা ভয়ংকর আকার ধারণ করেছে। প্রযুক্তি যতই উন্নত হচ্ছে, নতুন নিরাপত্তা ফিচার যোগ হচ্ছে, আর চোরদের কৌশলও ততই আধুনিক হয়ে উঠছে। ফলে সাধারণ মানুষের জন্য ফোন চুরি এখন এক আতঙ্ক।
চোরেরা সুযোগ খোঁজে জনসমাগমপূর্ণ স্থান, যানবাহনের ভিড় কিংবা অসাবধান মুহূর্ত। শহরের ব্যস্ত বাস, মার্কেট, মেলা, রেলস্টেশন কিংবা রাস্তার জ্যামে দাঁড়িয়ে থাকা যানবাহন—এসবই চুরির জন্য আদর্শ জায়গা। অনেক ক্ষেত্রে ছিনতাই বা ডাকাতির সময়ও ফোন হাতিয়ে নেওয়া হয়। উদাহরণস্বরূপ, রাতের বেলায় বাস থেকে নামার সময় ভিড়ের মধ্যে হঠাৎ ধাক্কা লাগিয়ে চোর মুহূর্তেই ফোন উধাও করে দিতে পারে, আর ভুক্তভোগী বুঝতেই পারেন না।
প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন শহরে শত শত স্মার্টফোন চুরি হয়। কিছু পরিসংখ্যান অনুযায়ী, প্রতিদিন গড়ে ২০০ থেকে ৩০০ ফোন চুরি হয় এবং এর বড় অংশ ঢাকাসহ প্রধান শহরগুলোতে ঘটে।
মোবাইল ফোন চুরি হলে বেশির ভাগ মানুষই থানায় গিয়ে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। কিন্তু বাস্তব অভিজ্ঞতা বলছে, শুধু জিডি করলেই তেমন কোনো লাভ হয় না। যেসব পুলিশ কর্মকর্তা এই কাজের দায়িত্ব পান, তাঁদের অনেকের কাছ থেকে কার্যকর পদক্ষেপ পেতে ঘুষ বা ব্যক্তিগত পরিচিতির প্রয়োজন হয়। পরিচিতি থাকলে হয়তো এক-দুই মাসের মধ্যে ফোন ফেরত পাওয়া যায়, কিন্তু অন্যথায় অধিকাংশ মোবাইল ফোন আর ফিরে আসে না।
বাংলাদেশ পুলিশ চুরি যাওয়া মোবাইলের মাত্র ৫-১০ শতাংশ উদ্ধার করতে পারে, বাকিগুলো হারিয়ে যায় অন্ধকারে। তুলনায়, উন্নত দেশগুলোতে মোবাইল চুরি হলে উন্নত ট্র্যাকিং সিস্টেম ও আইনশৃঙ্খলার সমন্বয়ে দ্রুত উদ্ধার সম্ভব হয়। আমাদের দেশে একটি মোবাইল ফেরত পেতে দুই মাস থেকে দুই বছর পর্যন্ত সময় লাগতে পারে—তা-ও যদি উদ্ধার হয়! এটি পুরোপুরি বাংলাদেশ প্রশাসন ও পুলিশের ব্যর্থতা।
আইফোনে ই-সিম এবং শক্তিশালী ‘ফাইন্ড মাই আইফোন’ ফিচারের কারণে চুরি হওয়া আইফোন উদ্ধার করা তুলনামূলক সহজ। এ কারণে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আইফোন চুরির ঘটনা কিছুটা কমেছে। কিন্তু অ্যান্ড্রয়েড ফোন এখনো চোরদের প্রধান টার্গেট।
চুরি হওয়া মোবাইল সাধারণত ‘ফ্ল্যাশ’ বা ‘ফ্যাক্টরি রিসেট’ করে নতুনের মতো বানিয়ে বাজারে বিক্রি করা হয়। যেসব মোবাইলে ফ্ল্যাশ করা সম্ভব নয়, সেগুলোর পার্টস খুলে আলাদা করে বিক্রি করা হয়। সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো—অনেক ক্ষেত্রে মোবাইল ফোনের আইএমইআই নম্বর পরিবর্তন করে দেওয়া হয়, যা আইনত দণ্ডনীয় হলেও বাস্তবে সহজেই ঘটছে। এতে ফোন ট্র্যাক করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে।
এই চুরি হওয়া মোবাইলগুলো পরবর্তীকালে বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে ব্যবহৃত
হতে পারে—যেমন প্রতারণা, চাঁদাবাজি বা অবৈধ যোগাযোগ। এতে শুধু ব্যক্তিগত ক্ষতি নয়, সমাজে বড় ধরনের নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি হয়।
বাংলাদেশে ফোন চুরির বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হলে শুধু পুলিশের তৎপরতা বাড়ালেই হবে না; প্রয়োজন সমন্বিত নীতিমালা ও প্রযুক্তিনির্ভর উদ্যোগ। উন্নত দেশগুলোর মতো ফোন ট্র্যাকিং সিস্টেমকে বাধ্যতামূলক ও কার্যকর করতে হবে। আইএমইআই পরিবর্তন রোধে কঠোর আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন জরুরি।
এ ছাড়া ফোন কেনাবেচায় নিবন্ধনব্যবস্থা চালু করা যেতে পারে, যাতে প্রতিটি ফোনের মালিকানা স্পষ্ট থাকে এবং চুরি হওয়া ফোন বাজারে বিক্রি কঠিন হয়ে পড়ে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভেতরে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করাও অত্যন্ত জরুরি।
ফোনসেট চুরি এখন শুধু একটি ব্যক্তিগত ক্ষতির ঘটনা নয়; এটি একটি সামাজিক ও প্রশাসনিক ব্যর্থতার প্রতিচ্ছবি। কষ্টার্জিত অর্থ দিয়ে কেনা স্মার্টফোন হারিয়ে গেলে মানুষ শুধু অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় না, ব্যক্তিগত তথ্য হারানোর ঝুঁকিতেও পড়ে। প্রযুক্তি ও আইন প্রয়োগের সমন্বিত প্রচেষ্টা ছাড়া এ সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব নয়। সরকার, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং জনগণ—সব পক্ষের সম্মিলিত উদ্যোগই পারে স্মার্টফোন চুরির এই দুষ্টচক্র ভাঙতে।
লেখক: শিক্ষার্থী, ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ
বাংলাদেশে স্মার্টফোন চুরি এখন আর নতুন ঘটনা নয়। স্মার্টফোনের ব্যবহার শুরু হওয়ার পর থেকেই এই অপরাধ ধীরে ধীরে বেড়ে উঠেছে। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এর মাত্রা ভয়ংকর আকার ধারণ করেছে। প্রযুক্তি যতই উন্নত হচ্ছে, নতুন নিরাপত্তা ফিচার যোগ হচ্ছে, আর চোরদের কৌশলও ততই আধুনিক হয়ে উঠছে। ফলে সাধারণ মানুষের জন্য ফোন চুরি এখন এক আতঙ্ক।
চোরেরা সুযোগ খোঁজে জনসমাগমপূর্ণ স্থান, যানবাহনের ভিড় কিংবা অসাবধান মুহূর্ত। শহরের ব্যস্ত বাস, মার্কেট, মেলা, রেলস্টেশন কিংবা রাস্তার জ্যামে দাঁড়িয়ে থাকা যানবাহন—এসবই চুরির জন্য আদর্শ জায়গা। অনেক ক্ষেত্রে ছিনতাই বা ডাকাতির সময়ও ফোন হাতিয়ে নেওয়া হয়। উদাহরণস্বরূপ, রাতের বেলায় বাস থেকে নামার সময় ভিড়ের মধ্যে হঠাৎ ধাক্কা লাগিয়ে চোর মুহূর্তেই ফোন উধাও করে দিতে পারে, আর ভুক্তভোগী বুঝতেই পারেন না।
প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন শহরে শত শত স্মার্টফোন চুরি হয়। কিছু পরিসংখ্যান অনুযায়ী, প্রতিদিন গড়ে ২০০ থেকে ৩০০ ফোন চুরি হয় এবং এর বড় অংশ ঢাকাসহ প্রধান শহরগুলোতে ঘটে।
মোবাইল ফোন চুরি হলে বেশির ভাগ মানুষই থানায় গিয়ে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। কিন্তু বাস্তব অভিজ্ঞতা বলছে, শুধু জিডি করলেই তেমন কোনো লাভ হয় না। যেসব পুলিশ কর্মকর্তা এই কাজের দায়িত্ব পান, তাঁদের অনেকের কাছ থেকে কার্যকর পদক্ষেপ পেতে ঘুষ বা ব্যক্তিগত পরিচিতির প্রয়োজন হয়। পরিচিতি থাকলে হয়তো এক-দুই মাসের মধ্যে ফোন ফেরত পাওয়া যায়, কিন্তু অন্যথায় অধিকাংশ মোবাইল ফোন আর ফিরে আসে না।
বাংলাদেশ পুলিশ চুরি যাওয়া মোবাইলের মাত্র ৫-১০ শতাংশ উদ্ধার করতে পারে, বাকিগুলো হারিয়ে যায় অন্ধকারে। তুলনায়, উন্নত দেশগুলোতে মোবাইল চুরি হলে উন্নত ট্র্যাকিং সিস্টেম ও আইনশৃঙ্খলার সমন্বয়ে দ্রুত উদ্ধার সম্ভব হয়। আমাদের দেশে একটি মোবাইল ফেরত পেতে দুই মাস থেকে দুই বছর পর্যন্ত সময় লাগতে পারে—তা-ও যদি উদ্ধার হয়! এটি পুরোপুরি বাংলাদেশ প্রশাসন ও পুলিশের ব্যর্থতা।
আইফোনে ই-সিম এবং শক্তিশালী ‘ফাইন্ড মাই আইফোন’ ফিচারের কারণে চুরি হওয়া আইফোন উদ্ধার করা তুলনামূলক সহজ। এ কারণে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আইফোন চুরির ঘটনা কিছুটা কমেছে। কিন্তু অ্যান্ড্রয়েড ফোন এখনো চোরদের প্রধান টার্গেট।
চুরি হওয়া মোবাইল সাধারণত ‘ফ্ল্যাশ’ বা ‘ফ্যাক্টরি রিসেট’ করে নতুনের মতো বানিয়ে বাজারে বিক্রি করা হয়। যেসব মোবাইলে ফ্ল্যাশ করা সম্ভব নয়, সেগুলোর পার্টস খুলে আলাদা করে বিক্রি করা হয়। সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো—অনেক ক্ষেত্রে মোবাইল ফোনের আইএমইআই নম্বর পরিবর্তন করে দেওয়া হয়, যা আইনত দণ্ডনীয় হলেও বাস্তবে সহজেই ঘটছে। এতে ফোন ট্র্যাক করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে।
এই চুরি হওয়া মোবাইলগুলো পরবর্তীকালে বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে ব্যবহৃত
হতে পারে—যেমন প্রতারণা, চাঁদাবাজি বা অবৈধ যোগাযোগ। এতে শুধু ব্যক্তিগত ক্ষতি নয়, সমাজে বড় ধরনের নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি হয়।
বাংলাদেশে ফোন চুরির বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হলে শুধু পুলিশের তৎপরতা বাড়ালেই হবে না; প্রয়োজন সমন্বিত নীতিমালা ও প্রযুক্তিনির্ভর উদ্যোগ। উন্নত দেশগুলোর মতো ফোন ট্র্যাকিং সিস্টেমকে বাধ্যতামূলক ও কার্যকর করতে হবে। আইএমইআই পরিবর্তন রোধে কঠোর আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন জরুরি।
এ ছাড়া ফোন কেনাবেচায় নিবন্ধনব্যবস্থা চালু করা যেতে পারে, যাতে প্রতিটি ফোনের মালিকানা স্পষ্ট থাকে এবং চুরি হওয়া ফোন বাজারে বিক্রি কঠিন হয়ে পড়ে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভেতরে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করাও অত্যন্ত জরুরি।
ফোনসেট চুরি এখন শুধু একটি ব্যক্তিগত ক্ষতির ঘটনা নয়; এটি একটি সামাজিক ও প্রশাসনিক ব্যর্থতার প্রতিচ্ছবি। কষ্টার্জিত অর্থ দিয়ে কেনা স্মার্টফোন হারিয়ে গেলে মানুষ শুধু অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় না, ব্যক্তিগত তথ্য হারানোর ঝুঁকিতেও পড়ে। প্রযুক্তি ও আইন প্রয়োগের সমন্বিত প্রচেষ্টা ছাড়া এ সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব নয়। সরকার, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং জনগণ—সব পক্ষের সম্মিলিত উদ্যোগই পারে স্মার্টফোন চুরির এই দুষ্টচক্র ভাঙতে।
লেখক: শিক্ষার্থী, ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ
আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে কি সন্দেহ-সংশয় আছে? আপাতদৃষ্টিতে নেই। নির্বাচন ওই সময়েই হবে— সাধারণভাবে এমনটাই ধারণা করা যায়। সরকারের ঘোষণা ও নানা সময়ের বক্তব্য, নির্বাচন কমিশনের কর্মকাণ্ড, রাজনৈতিক দলগুলোর প্রস্তুতি—এসবই এই ধারণার ভিত্তি।
৫ ঘণ্টা আগেসংবিধানের ১৮ (১) অনুচ্ছেদে উল্লেখ আছে, ‘জনগণের পুষ্টির স্তর উন্নয়ন ও জনস্বাস্থ্যের উন্নতি রাষ্ট্রের অন্যতম প্রাথমিক কর্তব্য বলে গণ্য হইবে।’ অথচ দেশে ঠিক উল্টোটা লক্ষ করছি আমরা। খাদ্যের পুষ্টিমান দূরের কথা, আসল খাদ্যই পাওয়া মুশকিল হয়ে গেছে এখন।
৬ ঘণ্টা আগেইসরায়েলি আক্রমণের মুখে পড়েছে ফ্লোটিলা। গাজা অভিমুখে ত্রাণবাহী নৌবহর ‘গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা’ গন্তব্যে পৌঁছাতে পারেনি। এই বহরে থাকা সব নৌযান থেকেই অধিকারকর্মীদের আটক করেছে ইসরায়েল। এদের মধ্যে সুইডিশ অধিকারকর্মী গ্রেটা থুনবার্গও রয়েছেন।
৬ ঘণ্টা আগেআসুন, একটা অমানবিক গল্প বলি। ঘটনার জন্ম যশোর জেলায়। এই জেলায় প্রায়ই ঘটছে অটোরিকশা চুরির ঘটনা। অটোরিকশা বলতে শুধু এককালের বেবিট্যাক্সির কথা বলা হচ্ছে না। এখন তো ইজিবাইকের রমরমা। দেড় থেকে দুই লাখ টাকায় কেনা যায় তা। অটোভ্যান রয়েছে, যেগুলো কিনতে হলে লাগে ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা।
১ দিন আগে