Ajker Patrika

দীর্ঘমেয়াদি রোগের ক্ষত

সম্পাদকীয়
দীর্ঘমেয়াদি রোগের ক্ষত

আমাদের চিকিৎসাব্যবস্থায় বড় ক্ষত হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে দীর্ঘমেয়াদি রোগ। দেশের প্রায় ৫৩ শতাংশ পরিবারের অন্তত একজন সদস্য কোনো না কোনো দীর্ঘমেয়াদি রোগে আক্রান্ত। ‘পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার’ (পিপিআরসি)-এর সম্প্রতি এক গবেষণায় এ ভয়াবহ তথ্য উঠে এসেছে।

দীর্ঘমেয়াদি রোগ যেমন ক্যানসার, ডায়াবেটিস, হৃদ্‌রোগ এবং কিডনি রোগের প্রকোপ বাড়ছে। এই রোগগুলো শুধু রোগীর শারীরিক ক্ষতি করে না, এর প্রভাব রোগী এবং তার পরিবারের অর্থনৈতিক ও মানসিক ক্ষতি বয়ে নিয়ে আসে।

দীর্ঘমেয়াদি রোগ চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় ক্রনিক ডিজিজ নামে পরিচিত। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এটাকে একটি নীরব মহামারি বলা যায়। এই রোগগুলো কেবল রোগীর শরীরকে দুর্বল করে না, বরং পরিবারের মধ্যে মনস্তাত্ত্বিক, অর্থনীতির ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলে। বাংলাদেশে যেখানে স্বাস্থ্যসেবা এখনো সম্পূর্ণ ব্যক্তির আয়ের ওপর নির্ভর করতে হয়, সেখানে সেই পরিবারকে কী অবস্থার মধ্যে যেতে হয়, সেটা ভুক্তভোগীমাত্রই উপলব্ধি করতে পারেন।

আমাদের দেশে সরকারি স্বাস্থ্যব্যবস্থা জনসংখ্যার তুলনায় অপ্রতুল। সরকারি হাসপাতালে নানা অব্যবস্থাপনা, লোকবল ও চিকিৎসা সরঞ্জামের অভাবের কারণে সবার পক্ষে চিকিৎসা গ্রহণ করা সম্ভব হয় না। অন্যদিকে বেসরকারি হাসপাতালে ব্যয়বহুল চিকিৎসার কারণে সেখানে দেশের অধিকাংশ মানুষ চিকিৎসা নেওয়ার সামর্থ্য রাখে না। এই উভয় সমস্যা আমাদের দেশের চিকিৎসাব্যবস্থার বড় সংকট। এ জায়গায় রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ জরুরি।

দীর্ঘমেয়াদি রোগের চিকিৎসা অত্যন্ত ব্যয়বহুল। নিয়মিত ডাক্তারের ফি, ওষুধপথ্য, প্যাথলজিক্যাল টেস্ট এবং হাসপাতালে ভর্তি থাকা—এসবের খরচ একটি পরিবারের জন্য অর্থনৈতিক সংকট সৃষ্টি করে। অনেক পরিবারকে চিকিৎসার খরচ জোগাতে নিজেদের জমি বা সম্পত্তি বিক্রি করতে হয়। এতে পরিবারের সংকট আরও বেড়ে যায়।

এ ধরনের রোগ থেকে মুক্তি পেতে ব্যক্তির সচেতনতা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এই রোগ প্রতিরোধ করতে হলে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। কিন্তু আমাদের দেশে সচেতনতার অভাবে অনেক ক্ষেত্রে ব্যক্তি বড় কোনো শারীরিক জটিলতা দেখা না দিলে চিকিৎসকের কাছে যেতে চান না। যখন পরিস্থিতি খুব খারাপ হয়ে যায়, তখন চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন। আবার চিকিৎসক যথাসময়ে রোগ নির্ণয় করতে পারেন না। ফলে রোগীর আসল চিকিৎসার অভাবে পরিস্থিতি জটিল আকার ধারণ করে।

আমাদের দেশের অধিকাংশ লোকের খাদ্যাভ্যাসের কারণেও এ ধরনের রোগ হয়ে থাকে। এ জন্য নিয়ম মেনে খাদ্য গ্রহণ এবং শৃঙ্খলাময় জীবনযাপনের দিকে সবার গুরুত্ব দেওয়া উচিত।

সরকারকে স্বাস্থ্যব্যবস্থার উন্নতির দিকে মনোযোগ দেওয়া জরুরি। রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে দীর্ঘমেয়াদি রোগ প্রতিরোধ করার জন্য জনগণের প্রতি সচেতনতামূলক কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে। এতে এ ধরনের রোগ থেকে মুক্তি পেতে যাতে নিজেরাই সচেতন হতে পারে। একই সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি রোগের চিকিৎসায় রাষ্ট্রকে ভর্তুকি দিতে হবে, যাতে সাধারণ মানুষ অপ্রত্যাশিত চিকিৎসার খরচ মেটাতে পারে। দীর্ঘমেয়াদি রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের প্রতি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করাও দরকার।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মন্ত্রণালয়ের গুরুত্বপূর্ণ ফাইল বাসায় নিয়ে গায়েব করেন উপদেষ্টা— আসিফ মাহমুদের বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের মেয়রের অভিযোগ

চীনা যুদ্ধবিমান থেকে এলএস-৬ বোমা ফেলে কেন নিজ দেশে ‘হত্যাযজ্ঞ’ চালাল পাকিস্তান

ফিলিস্তিনকে আজই রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দেবে আরও ৬ দেশ, বিরোধিতা ইসরায়েল–যুক্তরাষ্ট্রের

ভবদহের দুঃখ ঘোচাতে আসছে সেনাবাহিনী, খনন করবে ৫ নদ-নদীর ৮১.৫ কিমি

ধর্ষণের শিকার শিশুর স্বজনকে মারতে উদ্যত হওয়া সেই চিকিৎসক বরখাস্ত

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত