আজকের পত্রিকা ডেস্ক
খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশে পাকিস্তানের বিমানবাহিনীর হামলায় নারী-শিশুসহ অন্তত ৩০ জন নিহত হয়েছে বলে জানা গেছে। তিরাহ উপত্যকার একটি গ্রামে দেশটির বিমানবাহিনী জে-১৭ যুদ্ধবিমান (চীনের তৈরি) থেকে চীনা নির্মিত আটটি এলএস-৬ বোমা (লেজার-গাইডেড নির্ভুল যুদ্ধাস্ত্র) নিক্ষেপ করে। গতকাল রোববার দিবাগত রাত ২টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
স্থানীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, নিহত ব্যক্তিদের সবাই বেসামরিক নাগরিক। হামলায় বহু মানুষ আহত হয়েছে, তবে তাদের অবস্থা সম্পর্কে এখনো কিছু জানা যায়নি।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ঘটনাস্থলের ছবি ও ভিডিওতে দেখা গেছে, শিশুদেরসহ আরও অনেক মরদেহ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে রয়েছে। ধ্বংসস্তূপের নিচে আরও মরদেহ থাকার আশঙ্কায় উদ্ধারকর্মীরা তল্লাশি চালাচ্ছেন। আশঙ্কা করা হচ্ছে, মৃতের সংখ্যা আরও বাড়বে।
খাইবার পাখতুনখাওয়ায় অতীতেও বহু সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান চালানো হয়েছে এবং সেখানে বহু বেসামরিক নাগরিকের মৃত্যুর খবরও পাওয়া গেছে। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে খাইবার পাখতুনখাওয়ায় সন্ত্রাসী হামলা বাড়ার কারণে আগে থেকে স্থানীয় বাসিন্দারা ক্ষুব্ধ ছিলেন। এর মধ্যে আজকের এই মৃত্যুর ঘটনা ব্যাপক ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে।
পাকিস্তানের প্রধান বিরোধী দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) এ ঘটনার জন্য সরকারের কঠোর সমালোচনা করেছে। দলের খাইবার কার্যালয় এক্সে এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘কোনো শব্দ দিয়ে এই দুঃখ ও শোককে প্রকাশ করা যাবে না। ড্রোন ও বোমা হামলা এই প্রদেশে এত বেশি ঘৃণার বীজ বপন করেছে যে...কিছুই অবশিষ্ট থাকছে না।’
পাকিস্তান মানবাধিকার কমিশন (এইচআরসিপি) আজ সোমবার এক বিবৃতিতে জানায়, খাইবার পাখতুনখাওয়ার তিরাহ এলাকায় ‘আকাশপথে বোমা হামলায়’ বেশ কয়েকজন বেসামরিক নাগরিকের মৃত্যুর খবরে তারা গভীরভাবে মর্মাহত। এইচআরসিপি এ বিষয়ে দ্রুত তদন্তের দাবি জানিয়েছে।
তবে এখন পর্যন্ত সরকার বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ ঘটনার বিস্তারিত তথ্য জানিয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি প্রকাশ করেনি।
খাইবার থেকে নির্বাচিত ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির সদস্য মোহাম্মদ ইকবাল খান আফ্রিদি একটি ভিডিও বার্তায় এ ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন। তিনি ভিডিওটি গণমাধ্যমের কাছেও পাঠান। তিনি বলেন, তিরাহ উপত্যকায় যুদ্ধবিমানের বোমার আঘাতে বয়স্ক নারী ও শিশুদের হত্যা করা হয়েছে। এই হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ জানাতে তিনি জনগণকে ঘটনাস্থলে আসার আহ্বান জানান।
স্থানীয় গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গতকাল রাতের এই হামলার লক্ষ্য ছিল তেহরিক-ই-তালেবানের (টিটিপি) একটি বোমা তৈরির কারখানা। খাইবার প্রদেশের এক পুলিশ কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা এপিকে জানান, টিটিপির দুই কমান্ডার আমান গুল ও মাসুদ খান ওই গ্রামে বোমা তৈরির কারখানা স্থাপন করেছিলেন। তাঁরা বেসামরিক নাগরিকদের ‘মানব ঢাল’ হিসেবে ব্যবহার করতেন। বোমা তৈরির পর সেগুলো কাছের এলাকার বিভিন্ন মসজিদে সংরক্ষণ করা হতো।
পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে এ হামলা (অভিযান) চালানো হয়েছে। তারা দাবি করেছে, সন্ত্রাসীরা বেসামরিক এলাকা ব্যবহার করে তাদের কার্যকলাপ আড়াল করছে। কিন্তু এই অভিযানের পর একাধিক বেসামরিক নাগরিকের মৃত্যু প্রদেশের গোয়েন্দা সংস্থা ও সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানের মান নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
গতকাল রাতের এই হামলার আগে দক্ষিণ ওয়াজিরিস্তানে টিটিপির অতর্কিত হামলায় ১২ জন পাকিস্তানি সেনা নিহত এবং আরও চারজন আহত হয়েছিলেন বলে জানা গেছে। টিটিপি সামাজিক মাধ্যমে এ হামলার দায় স্বীকার করেছিল।
ইসলামাবাদের দাবি, এসব অভিযান চলমান প্রচেষ্টার অংশ ছিল, যার মাধ্যমে তারা খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশে টিটিপির নিয়ন্ত্রণ সীমিত করতে চাচ্ছে। ২০২১ সালে আফগানিস্তানে তালেবান ক্ষমতায় আসার পর থেকে এই অঞ্চলে টিটিপির প্রভাব বেড়েছে।
তবে সমালোচকেরা বারবার বেসামরিক নাগরিকদের জীবন ও সম্পদ রক্ষায় প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের প্রশাসনের সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। গত জুনে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের দক্ষিণ এশিয়া কার্যালয় ‘বেসামরিক মানুষের জীবনের প্রতি অবজ্ঞা’র জন্য সরকারের তীব্র সমালোচনা করেছিল। সে সময় ড্রোন হামলায় এক শিশুর মৃত্যুর পর অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এ বিবৃতি দিয়েছিল।
গত মার্চেও খাইবার প্রদেশের কাতলাং এলাকায় সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানে ১০ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হন। ওই অভিযানের পর প্রাদেশিক সরকারের মুখপাত্র মুহাম্মদ সাইফ এপিকে বলেছিলেন, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে এই অভিযান চালানো হয়েছিল। তথ্য ছিল, এলাকাটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর ‘আস্তানা ও যাতায়াতের পথ’ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এরপরই ওই এলাকায় সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান চালানো হয়। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, অভিযানের পর ওই এলাকা থেকে নারী-শিশুসহ ১০ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছিল।
কিন্তু কেন এই হত্যাযজ্ঞ
খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশের সঙ্গে আফগানিস্তানের আন্তর্জাতিক সীমান্ত রয়েছে। পাকিস্তান দাবি করে, সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলো আফগানিস্তানে ঘাঁটি গেড়েছে এবং সেই দেশের সরকারের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ রয়েছে। পাকিস্তান সরকার বারবার আফগান সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে, তারা যেন সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর পৃষ্ঠপোষকতা ও সীমান্ত হামলা বন্ধ করে।
তবে আফগানিস্তান বরাবরই এ দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে। গত ১৪ এপ্রিল আফগানিস্তানের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা বাখতার নিউজ এজেন্সির প্রতিবেদনে তালেবানের মুখপাত্র হামদুল্লাহ ফিতরাতের বক্তব্য তুলে ধরা হয়। তিনি পাকিস্তানের অভিযোগকে অস্বীকার করে উল্টো ইসলামাবাদের বিরুদ্ধে সহিংসতা নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার দায় এড়ানোর অভিযোগ করেন। হামদুল্লাহ ফিতরাত সংবাদ সংস্থাটিকে বলেন, পাকিস্তানের নিরাপত্তা সমস্যা তাদের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। আফগানিস্তানকে দোষারোপ করে ইসলামাবাদ তাদের নিজস্ব ব্যর্থতার জবাবদিহি এড়াতে চাইছে।
খাইবার পাখতুনখাওয়া একটি প্রত্যন্ত ও পাহাড়ি অঞ্চল, যা সন্ত্রাসী আস্তানায় পরিপূর্ণ। অঞ্চলটি পাকিস্তান সরকারের জন্য নিজেদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার একটি মূল যুদ্ধক্ষেত্র। আর আফগান সীমান্ত কাছাকাছি হওয়ায় পাকিস্তান বারবার দাবি করে, এই সন্ত্রাসীদের সঙ্গে আফগানিস্তানের সম্পর্ক রয়েছে।
খাইবার প্রদেশটি পাকিস্তানের চারটি প্রদেশের অন্যতম এবং এটি দেশটির উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত। এর পূর্বে ও দক্ষিণ-পূর্বে রয়েছে পাঞ্জাব প্রদেশ। দক্ষিণে বেলুচিস্তান এবং উত্তরে গিলগিট-বালতিস্তান—যা ভারতের অবৈধভাবে দখল করা এলাকা। প্রাদেশিক রাজধানী পেশোয়ার ঐতিহাসিক খাইবার গিরিপথের কাছে অবস্থিত। এ প্রদেশের পশ্চিম সীমান্ত আফগানিস্তানের সঙ্গে সংযুক্ত।
রুক্ষ পাহাড়ি ভূখণ্ড হওয়ায় সেখানে সহজে পৌঁছানো কঠিন, যা সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর সম্প্রসারণের জন্য একটি উপযুক্ত স্থান। সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানে বেসামরিক নাগরিকদের মৃত্যুর পর পাকিস্তানি কর্মকর্তারা প্রায়ই বিষয়টি উল্লেখ করেন।
১৯৭৯ সালে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন আফগানিস্তান আক্রমণ করলে যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তান গোয়েন্দা সংস্থার (আইএসআই) সহায়তায় এই অঞ্চলের প্রতিরোধ গোষ্ঠীগুলোকে অর্থ ও অস্ত্র সরবরাহ করে। যুদ্ধ শেষ হলে বহু যোদ্ধা এবং বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গোলাবারুদ খাইবার এলাকায় থেকে যায়। দুর্গম ভূখণ্ড হওয়ায় এখানে কিছু সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর জন্ম হয়, যাদের অনেকে ২০০১ সালে তালেবান সরকারের পতনের পর খাইবার পাখতুনখাওয়ায় আশ্রয় নেয়।
পরে এই গোষ্ঠীগুলো বছরের পর বছর ধরে বিকশিত, বিভক্ত ও একত্র হতে থাকে। এরপর ২০০০ সালের শেষের দিকে তেহরিক-ই-তালেবান গঠিত হয়। পাকিস্তান এখন দাবি করে, টিটিপি আফগানিস্তানে ঘাঁটি গেড়েছে এবং সোভিয়েত যুগের যুদ্ধের সময় ব্যবহৃত গোপন সুড়ঙ্গ ও পথ ব্যবহার করে সীমান্ত পার হয়ে সন্ত্রাসী হামলা চালাচ্ছে।
পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম দ্য ডন খাইবার পাখতুনখাওয়া পুলিশের তথ্যের বরাতে জানিয়েছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত সেখানে ৬০৫টি সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ঘটেছে। এতে অন্তত ১৩৮ জন বেসামরিক ও ৭৯ জন পাকিস্তানি পুলিশ নিহত হয়েছে। শুধু আগস্ট মাসেই এমন ১২৯টি ঘটনা নথিভুক্ত হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে ছয়জন পাকিস্তানি সেনা ও আধা সামরিক ফেডারেল কনস্টাবুলারি সদস্যের হত্যাকাণ্ডও অন্তর্ভুক্ত।
খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশে পাকিস্তানের বিমানবাহিনীর হামলায় নারী-শিশুসহ অন্তত ৩০ জন নিহত হয়েছে বলে জানা গেছে। তিরাহ উপত্যকার একটি গ্রামে দেশটির বিমানবাহিনী জে-১৭ যুদ্ধবিমান (চীনের তৈরি) থেকে চীনা নির্মিত আটটি এলএস-৬ বোমা (লেজার-গাইডেড নির্ভুল যুদ্ধাস্ত্র) নিক্ষেপ করে। গতকাল রোববার দিবাগত রাত ২টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
স্থানীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, নিহত ব্যক্তিদের সবাই বেসামরিক নাগরিক। হামলায় বহু মানুষ আহত হয়েছে, তবে তাদের অবস্থা সম্পর্কে এখনো কিছু জানা যায়নি।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ঘটনাস্থলের ছবি ও ভিডিওতে দেখা গেছে, শিশুদেরসহ আরও অনেক মরদেহ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে রয়েছে। ধ্বংসস্তূপের নিচে আরও মরদেহ থাকার আশঙ্কায় উদ্ধারকর্মীরা তল্লাশি চালাচ্ছেন। আশঙ্কা করা হচ্ছে, মৃতের সংখ্যা আরও বাড়বে।
খাইবার পাখতুনখাওয়ায় অতীতেও বহু সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান চালানো হয়েছে এবং সেখানে বহু বেসামরিক নাগরিকের মৃত্যুর খবরও পাওয়া গেছে। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে খাইবার পাখতুনখাওয়ায় সন্ত্রাসী হামলা বাড়ার কারণে আগে থেকে স্থানীয় বাসিন্দারা ক্ষুব্ধ ছিলেন। এর মধ্যে আজকের এই মৃত্যুর ঘটনা ব্যাপক ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে।
পাকিস্তানের প্রধান বিরোধী দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) এ ঘটনার জন্য সরকারের কঠোর সমালোচনা করেছে। দলের খাইবার কার্যালয় এক্সে এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘কোনো শব্দ দিয়ে এই দুঃখ ও শোককে প্রকাশ করা যাবে না। ড্রোন ও বোমা হামলা এই প্রদেশে এত বেশি ঘৃণার বীজ বপন করেছে যে...কিছুই অবশিষ্ট থাকছে না।’
পাকিস্তান মানবাধিকার কমিশন (এইচআরসিপি) আজ সোমবার এক বিবৃতিতে জানায়, খাইবার পাখতুনখাওয়ার তিরাহ এলাকায় ‘আকাশপথে বোমা হামলায়’ বেশ কয়েকজন বেসামরিক নাগরিকের মৃত্যুর খবরে তারা গভীরভাবে মর্মাহত। এইচআরসিপি এ বিষয়ে দ্রুত তদন্তের দাবি জানিয়েছে।
তবে এখন পর্যন্ত সরকার বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ ঘটনার বিস্তারিত তথ্য জানিয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি প্রকাশ করেনি।
খাইবার থেকে নির্বাচিত ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির সদস্য মোহাম্মদ ইকবাল খান আফ্রিদি একটি ভিডিও বার্তায় এ ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন। তিনি ভিডিওটি গণমাধ্যমের কাছেও পাঠান। তিনি বলেন, তিরাহ উপত্যকায় যুদ্ধবিমানের বোমার আঘাতে বয়স্ক নারী ও শিশুদের হত্যা করা হয়েছে। এই হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ জানাতে তিনি জনগণকে ঘটনাস্থলে আসার আহ্বান জানান।
স্থানীয় গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গতকাল রাতের এই হামলার লক্ষ্য ছিল তেহরিক-ই-তালেবানের (টিটিপি) একটি বোমা তৈরির কারখানা। খাইবার প্রদেশের এক পুলিশ কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা এপিকে জানান, টিটিপির দুই কমান্ডার আমান গুল ও মাসুদ খান ওই গ্রামে বোমা তৈরির কারখানা স্থাপন করেছিলেন। তাঁরা বেসামরিক নাগরিকদের ‘মানব ঢাল’ হিসেবে ব্যবহার করতেন। বোমা তৈরির পর সেগুলো কাছের এলাকার বিভিন্ন মসজিদে সংরক্ষণ করা হতো।
পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে এ হামলা (অভিযান) চালানো হয়েছে। তারা দাবি করেছে, সন্ত্রাসীরা বেসামরিক এলাকা ব্যবহার করে তাদের কার্যকলাপ আড়াল করছে। কিন্তু এই অভিযানের পর একাধিক বেসামরিক নাগরিকের মৃত্যু প্রদেশের গোয়েন্দা সংস্থা ও সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানের মান নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
গতকাল রাতের এই হামলার আগে দক্ষিণ ওয়াজিরিস্তানে টিটিপির অতর্কিত হামলায় ১২ জন পাকিস্তানি সেনা নিহত এবং আরও চারজন আহত হয়েছিলেন বলে জানা গেছে। টিটিপি সামাজিক মাধ্যমে এ হামলার দায় স্বীকার করেছিল।
ইসলামাবাদের দাবি, এসব অভিযান চলমান প্রচেষ্টার অংশ ছিল, যার মাধ্যমে তারা খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশে টিটিপির নিয়ন্ত্রণ সীমিত করতে চাচ্ছে। ২০২১ সালে আফগানিস্তানে তালেবান ক্ষমতায় আসার পর থেকে এই অঞ্চলে টিটিপির প্রভাব বেড়েছে।
তবে সমালোচকেরা বারবার বেসামরিক নাগরিকদের জীবন ও সম্পদ রক্ষায় প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের প্রশাসনের সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। গত জুনে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের দক্ষিণ এশিয়া কার্যালয় ‘বেসামরিক মানুষের জীবনের প্রতি অবজ্ঞা’র জন্য সরকারের তীব্র সমালোচনা করেছিল। সে সময় ড্রোন হামলায় এক শিশুর মৃত্যুর পর অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এ বিবৃতি দিয়েছিল।
গত মার্চেও খাইবার প্রদেশের কাতলাং এলাকায় সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানে ১০ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হন। ওই অভিযানের পর প্রাদেশিক সরকারের মুখপাত্র মুহাম্মদ সাইফ এপিকে বলেছিলেন, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে এই অভিযান চালানো হয়েছিল। তথ্য ছিল, এলাকাটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর ‘আস্তানা ও যাতায়াতের পথ’ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এরপরই ওই এলাকায় সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান চালানো হয়। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, অভিযানের পর ওই এলাকা থেকে নারী-শিশুসহ ১০ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছিল।
কিন্তু কেন এই হত্যাযজ্ঞ
খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশের সঙ্গে আফগানিস্তানের আন্তর্জাতিক সীমান্ত রয়েছে। পাকিস্তান দাবি করে, সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলো আফগানিস্তানে ঘাঁটি গেড়েছে এবং সেই দেশের সরকারের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ রয়েছে। পাকিস্তান সরকার বারবার আফগান সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে, তারা যেন সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর পৃষ্ঠপোষকতা ও সীমান্ত হামলা বন্ধ করে।
তবে আফগানিস্তান বরাবরই এ দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে। গত ১৪ এপ্রিল আফগানিস্তানের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা বাখতার নিউজ এজেন্সির প্রতিবেদনে তালেবানের মুখপাত্র হামদুল্লাহ ফিতরাতের বক্তব্য তুলে ধরা হয়। তিনি পাকিস্তানের অভিযোগকে অস্বীকার করে উল্টো ইসলামাবাদের বিরুদ্ধে সহিংসতা নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার দায় এড়ানোর অভিযোগ করেন। হামদুল্লাহ ফিতরাত সংবাদ সংস্থাটিকে বলেন, পাকিস্তানের নিরাপত্তা সমস্যা তাদের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। আফগানিস্তানকে দোষারোপ করে ইসলামাবাদ তাদের নিজস্ব ব্যর্থতার জবাবদিহি এড়াতে চাইছে।
খাইবার পাখতুনখাওয়া একটি প্রত্যন্ত ও পাহাড়ি অঞ্চল, যা সন্ত্রাসী আস্তানায় পরিপূর্ণ। অঞ্চলটি পাকিস্তান সরকারের জন্য নিজেদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার একটি মূল যুদ্ধক্ষেত্র। আর আফগান সীমান্ত কাছাকাছি হওয়ায় পাকিস্তান বারবার দাবি করে, এই সন্ত্রাসীদের সঙ্গে আফগানিস্তানের সম্পর্ক রয়েছে।
খাইবার প্রদেশটি পাকিস্তানের চারটি প্রদেশের অন্যতম এবং এটি দেশটির উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত। এর পূর্বে ও দক্ষিণ-পূর্বে রয়েছে পাঞ্জাব প্রদেশ। দক্ষিণে বেলুচিস্তান এবং উত্তরে গিলগিট-বালতিস্তান—যা ভারতের অবৈধভাবে দখল করা এলাকা। প্রাদেশিক রাজধানী পেশোয়ার ঐতিহাসিক খাইবার গিরিপথের কাছে অবস্থিত। এ প্রদেশের পশ্চিম সীমান্ত আফগানিস্তানের সঙ্গে সংযুক্ত।
রুক্ষ পাহাড়ি ভূখণ্ড হওয়ায় সেখানে সহজে পৌঁছানো কঠিন, যা সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর সম্প্রসারণের জন্য একটি উপযুক্ত স্থান। সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানে বেসামরিক নাগরিকদের মৃত্যুর পর পাকিস্তানি কর্মকর্তারা প্রায়ই বিষয়টি উল্লেখ করেন।
১৯৭৯ সালে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন আফগানিস্তান আক্রমণ করলে যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তান গোয়েন্দা সংস্থার (আইএসআই) সহায়তায় এই অঞ্চলের প্রতিরোধ গোষ্ঠীগুলোকে অর্থ ও অস্ত্র সরবরাহ করে। যুদ্ধ শেষ হলে বহু যোদ্ধা এবং বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গোলাবারুদ খাইবার এলাকায় থেকে যায়। দুর্গম ভূখণ্ড হওয়ায় এখানে কিছু সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর জন্ম হয়, যাদের অনেকে ২০০১ সালে তালেবান সরকারের পতনের পর খাইবার পাখতুনখাওয়ায় আশ্রয় নেয়।
পরে এই গোষ্ঠীগুলো বছরের পর বছর ধরে বিকশিত, বিভক্ত ও একত্র হতে থাকে। এরপর ২০০০ সালের শেষের দিকে তেহরিক-ই-তালেবান গঠিত হয়। পাকিস্তান এখন দাবি করে, টিটিপি আফগানিস্তানে ঘাঁটি গেড়েছে এবং সোভিয়েত যুগের যুদ্ধের সময় ব্যবহৃত গোপন সুড়ঙ্গ ও পথ ব্যবহার করে সীমান্ত পার হয়ে সন্ত্রাসী হামলা চালাচ্ছে।
পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম দ্য ডন খাইবার পাখতুনখাওয়া পুলিশের তথ্যের বরাতে জানিয়েছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত সেখানে ৬০৫টি সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ঘটেছে। এতে অন্তত ১৩৮ জন বেসামরিক ও ৭৯ জন পাকিস্তানি পুলিশ নিহত হয়েছে। শুধু আগস্ট মাসেই এমন ১২৯টি ঘটনা নথিভুক্ত হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে ছয়জন পাকিস্তানি সেনা ও আধা সামরিক ফেডারেল কনস্টাবুলারি সদস্যের হত্যাকাণ্ডও অন্তর্ভুক্ত।
চীনের তৈরি এই ‘এলএস’কে বলা হয় ‘থান্ডার স্টোন প্রিসিশন গাইডেড বোমা’। এই বোমাগুলো তৈরি করেছে চায়না অ্যারোস্পেস সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি করপোরেশনের (সিএএসসি) সহায়ক প্রতিষ্ঠান লুওয়াং ইলেকট্রো-অপটিকস টেকনোলজি ডেভেলপমেন্ট সেন্টার। এগুলোকে ‘থান্ডার স্টোন গ্লাইডিং গাইডেড বোমা’ বা এলএস জিজিবি...
২৫ মিনিট আগেজাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে আজ ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার ঘোষণা দিতে পারে ফ্রান্স। তবে এর আগে থেকে ফ্রান্সের বিভিন্ন শহরের মেয়ররা সরকারের সতর্কবার্তা উপেক্ষা করে শহরের টাউন হলগুলোতে ফিলিস্তিনের পতাকা উড়িয়েছেন।
৪ ঘণ্টা আগেখাইবার পাখতুনখাওয়ায় অতীতেও বহু সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান চালানো হয়েছে এবং সেখানে বহু বেসামরিক নাগরিকের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। চলতি বছরের জুনে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলেছিল, খাইবার পাখতুনখাওয়ায় বারবার ড্রোন হামলা পাকিস্তানে বেসামরিক জীবনকে ভয়াবহভাবে অবজ্ঞা করার ইঙ্গিত দেয়।
৫ ঘণ্টা আগেগাজায় ইসরায়েলি সেনাদের (আইডিএফ) পরিবর্তে একটি আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষী বাহিনী পাঠানোর উদ্যোগ নিয়েছে ফ্রান্স। যুদ্ধ শেষে এই বাহিনী অঞ্চলটির দায়িত্ব নেবে এবং হামাসকে নিরস্ত্র করার কাজ করবে। ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইসরায়েল প্রাপ্ত খসড়া প্রস্তাবের বরাতে এমন তথ্য জানিয়েছে।
৬ ঘণ্টা আগে