Ajker Patrika

খেলার মাঠ দখল

সম্পাদকীয়
খেলার মাঠ দখল

খেলার মাঠ শুধু একটি খেলার জায়গা নয়, এটি একটি এলাকার শিশু-কিশোর, বয়স্ক মানুষের খেলাধুলা ও হাঁটাচলার জায়গাও। মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার শরীফপুর ইউনিয়নের তেলিবিল সঞ্জরপুর এলাকায় তেলিবিল উচ্চবিদ্যালয় সরকারি মাঠের জায়গা দখল করে বাড়িঘর নির্মাণের সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে ২৫ সেপ্টেম্বর আজকের পত্রিকায়।

তেলিবিল উচ্চবিদ্যালয় সরকারি মাঠ নামে পরিচিত হলেও এর ভূমি আসলে খাসজমি, অর্থাৎ রাষ্ট্রের সম্পত্তি। রাষ্ট্রের সম্পদ রক্ষার দায়িত্ব যাদের, তাদের নাকের ডগায় কীভাবে বছরের পর বছর ধরে প্রভাবশালী ব্যক্তিরা সরকারি জমিতে বসতবাড়ি তৈরি করেন বা নিজেদের সীমানা বাড়িয়ে মাঠের জায়গা দখল করে চলেছেন, তা এক গুরুতর প্রশ্ন। এই মাঠটি একসময় বিশাল ছিল, কিন্তু এখন এলাকার কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তির অবৈধ দখলে ক্রমেই ছোট হয়ে আসছে। তাঁদের এই কর্মকাণ্ডের কারণে মাঠের উত্তর ও দক্ষিণ অংশ প্রায় বিলীন হওয়ার পথে।

খেলার মাঠ গণসম্পদ হিসেবে বিবেচিত হওয়ার কথা থাকলেও, স্থানীয় প্রভাবশালীরা এটাকে নিজেদের ব্যক্তিগত স্বার্থ হিসেবে দেখছেন বলে তাঁরা অবলীলায় মাঠটিকে দখলে নিতে পেরেছেন। এ ক্ষেত্রে স্থানীয় প্রশাসনের ব্যর্থতা আছে। কারণ, খাসজমি দেখভালের দায়িত্ব স্থানীয় প্রশাসনের।

শিশুদের সুস্থ শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্য খেলার মাঠ অপরিহার্য। খেলাধুলা তাদের সৃজনশীলতা, দলবদ্ধভাবে কাজ করার মানসিকতা তৈরি করতে এবং শারীরিক সুস্থতা নিশ্চিত করে। এভাবে প্রভাবশালীদের কারণে খেলাধুলার সুযোগ কমে আসা মানেই শিশু-কিশোরদের শৈশবকে সংকীর্ণ করে দেওয়া। বয়স্ক মানুষেরা সকালে বা সন্ধ্যায় মাঠে হাঁটেন। শুধু তা-ই নয়, অনেকে একাকিত্ব লাঘবের জন্য অন্যদের সঙ্গে আড্ডাও দেন। তাই এলাকার একটি মাঠ শুধু খেলাধুলা বা শরীরচর্চার জায়গা নয়, এটাকে সামাজিক যোগাযোগের মিলনস্থানও বলা যায়। আবার যেকোনো এলাকার বসতবাড়ির কাছাকাছি এই খোলা জায়গাগুলো অনেকটা ফুসফুসের মতো কাজ করে, যা পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে।

কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বলেছেন, তিনি দখলের বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখবেন এবং অভিযান পরিচালনা করবেন।

আমরা আশা করি, প্রশাসন অবিলম্বে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করে মাঠটিকে তার পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনবে। এ ক্ষেত্রে কোনো প্রকার রাজনৈতিক বা সামাজিক চাপকে প্রশ্রয় দেওয়া যাবে না।

উচ্ছেদের পর মাঠের চারপাশে স্থায়ী সীমানা দিয়ে ঘিরে দিতে হবে। নিয়মিত নজরদারির ব্যবস্থা করতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে কেউ আর দখল করার সাহস না পায়। পাশাপাশি খেলার মাঠ যে একটি গণসম্পদ, এ বিষয়ে স্থানীয়দের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে হবে স্থানীয় প্রশাসনকে।

তেলিবিলের এই ঘটনা একটি সতর্কবার্তা। যদি সমাজের এই গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলো রক্ষা করা না যায়, তবে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে আমরা একটি সুস্থ ও সুন্দর পরিবেশ দিতে ব্যর্থ হব। প্রশাসনকে মনে রাখতে হবে, খাসজমি রক্ষা করা শুধু প্রশাসনিক দায়িত্ব নয়, এটি স্থানীয় জনগণের প্রতি একটি অঙ্গীকারও। শিগগির মাঠটিকে দখলমুক্ত করতে হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

দুর্গাপূজায় অপ্রীতিকর ঘটনার আশঙ্কা নিয়ে বিএনপি নেতার বিতর্কিত মন্তব্য

হাজি সেলিমের আজিমপুরের বাড়িতে যৌথ বাহিনীর অভিযান, ৬টি বিলাসবহুল গাড়ি উদ্ধার

গ্যালারিতে বসে দেখার দিন শেষ, আমরা এখন নিজে খেলব: প্রধান উপদেষ্টা

ভারত-পাকিস্তান ‘হাইভোল্টেজ’ ফাইনাল নিয়ে সুপার কম্পিউটার কী বলে

ক্রেডিট কার্ড ছাড়াই কিস্তিতে মোবাইল ফোন কেনার সুযোগ

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত