Ajker Patrika

বৈশ্বিক বিপর্যয় থেকে বিশ্ব কি সরে আসছে

মেরি দেজেভস্কি
আপডেট : ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৮: ১৮
রাশিয়ার প্রস্তাব যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেনি। ছবি: সংগৃহীত
রাশিয়ার প্রস্তাব যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেনি। ছবি: সংগৃহীত

যদি সাম্প্রতিক গাজা ও ইউক্রেনের সংঘাত কোনো বার্তা বহন করে থাকে, তবে সেটি হলো: ‘সব আগের মতোই চলছে, তবে আরও বড় আকারে।’

ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছ থেকে সহিংসতা বন্ধ হওয়ার যে আশা জেগেছিল, তা মিলিয়ে গেছে। এখন প্রায় কারও মুখে ‘যুদ্ধবিরতি’ শব্দটি শোনা যায় না। যেকোনো পদক্ষেপ যুদ্ধ কমানোর বদলে আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে।

জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে এই সপ্তাহে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি সতর্ক করেছেন যে রাশিয়া মানব ইতিহাসের ‘সবচেয়ে ধ্বংসাত্মক অস্ত্র প্রতিযোগিতা’ শুরু করার পথে। দশ দিন আগে, কথিত রুশ ড্রোন পোল্যান্ডে প্রবেশ করার পর পোল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ডোনাল্ড টুস্ক বলেছিলেন, তাঁর দেশ এখন ‘দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি’ যুদ্ধের কাছাকাছি পৌঁছে গেছে। ট্রাম্প সম্প্রতি একপ্রকার সবুজ সংকেত দিয়েছেন যে ন্যাটো দেশগুলো তাদের ভূখণ্ডে প্রবেশ করা রুশ ড্রোন ভূপাতিত করতে পারে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রধান উরসুলা ফন ডের লায়েনও এই অবস্থানকে সমর্থন করেছেন।

তবু এই অন্ধকার ছবির মধ্য থেকে এক ঝলক আশার আলো দেখা দিল—তা-ও একেবারেই অপ্রত্যাশিত দিক থেকে। রাশিয়ার নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকের আগে দেওয়া এক বিবৃতিতে ভ্লাদিমির পুতিন ঘোষণা করলেন, রাশিয়া স্ট্র্যাটেজিক আর্মস রিডাকশন ট্রিটি (START-III) বা কৌশলগত আক্রমণাত্মক অস্ত্র হ্রাস চুক্তি এক বছরের জন্য বাড়াতে রাজি, যার মেয়াদ ফেব্রুয়ারিতে শেষ হচ্ছে। শর্ত শুধু একটি: যুক্তরাষ্ট্রকেও একইভাবে রাজি হতে হবে এবং যুক্তরাষ্ট্র পরমাণু ক্ষেত্রে বর্তমান স্ট্যাটাস-কো পাল্টানোর মতো কোনো পদক্ষেপ নেবে না।

যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেনি। হোয়াইট হাউসের প্রেস সচিব বলেছেন, প্রস্তাবটি ‘খুব একটা খারাপ শোনাচ্ছে না’, তবে ট্রাম্প নিজেই এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দেবেন।

এই প্রস্তাবের প্রভাব কেবল দুই পক্ষেই সীমাবদ্ধ নয়। এটি সাধারণ কূটনৈতিক পরিবেশের বিরুদ্ধে গেলেও, একে তুলনামূলকভাবে ছোট কিন্তু বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ হিসেবে দেখা যেতে পারে। এতে যুক্তরাষ্ট্রের কিছুই খরচ হবে না, বরং বৈশ্বিক নিরাপত্তার বৃহত্তর স্বার্থ রক্ষা পাবে।

START-III চুক্তি হলো অস্ত্র নিয়ন্ত্রণের সেই শেষ অবশিষ্ট কাঠামো, যা সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্র ধাপে ধাপে গড়ে তুলেছিল। সোভিয়েত পতনের পর রাশিয়াও যুক্ত হয়েছিল এতে। যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী প্রেসিডেন্টদের সঙ্গেও এটি ছিল রাশিয়ার আলোচ্যসূচির এক নির্ভরযোগ্য বিষয়। যদি আলোচনার আর কোনো জরুরি বিষয় না থাকে, তবে অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ, প্রযুক্তিগত দিক ও পারস্পরিক আস্থার বিষয়গুলো আলোচনা চালিয়ে যেতে সাহায্য করে। এই ক্ষেত্রটিতে রাশিয়া সব সময় মনে করেছে, যুক্তরাষ্ট্র তাকে সমানভাবে বিবেচনা করছে।

চুক্তি বাড়ানোর পক্ষে যুক্তি দিয়ে ক্রেমলিনের মুখপাত্র বলেছেন, নতুন চুক্তি নিয়ে আলোচনার সময় শেষ হয়ে আসছে। এর ফলে এমন পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে, যেখানে কৌশলগত নিরাপত্তা নিয়ন্ত্রণে কোনো দ্বিপক্ষীয় দলিলই থাকবে না। চুক্তি বলবৎ থাকলে অন্তত ব্যয়বহুল অস্ত্র প্রতিযোগিতা এড়ানো বা কিছুটা পিছিয়ে দেওয়া সম্ভব হবে, যা চুক্তি শেষ হয়ে গেলে শুরু হয়ে যেত। আরও এক বছর সময় পাওয়া গেলে শুধু নতুন চুক্তির খসড়া নয়, বরং সম্ভাব্য এক ত্রিপক্ষীয় পারমাণবিক কৌশলগত চুক্তি নিয়েও চীনের অবস্থান বোঝা যেতে পারে।

এটা গুরুত্বপূর্ণ যে এই প্রস্তাব রাশিয়ার দিক থেকে এসেছে—যা তার বিরলভাবে স্বীকার করা দুর্বলতাকেও নির্দেশ করে। অবশ্যই, ক্রেমলিনের মুখপাত্র ও পুতিন দুজনেই বলেছেন, চুক্তি শেষ হলেও রাশিয়া নিজের নিরাপত্তা রক্ষা করতে পারবে। কিন্তু স্পষ্টতই তারা চুক্তির দেওয়া নিশ্চয়তাগুলো রাখতে চাইছে।

এখানে ইউক্রেন সংঘাতের সঙ্গেও যোগসূত্র টানা যায়। পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ন্ত্রণের শেষ অবলম্বন বাঁচানোর আশা যুক্তরাষ্ট্র—এমনকি ন্যাটোকেও— বোঝাতে পারে যে রাশিয়ার নিরাপত্তাভীতি অন্তত আংশিকভাবে ২০২২ সালের সামরিক অভিযানের কারণ ছিল। ট্রাম্প ও পুতিন যখনই ইউক্রেন প্রসঙ্গে কথা বলেছেন, রাশিয়ার এক নম্বর দাবি ছিল: যুদ্ধ সম্পূর্ণ বন্ধ করতে হলে ‘সংঘাতের মূল কারণ’ অনুসন্ধান করে তা মেটাতে হবে।

শুধু ইউক্রেন ও তার ইউরোপীয় মিত্ররাই যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে নিরাপত্তা নিশ্চয়তা চায় না; রাশিয়াও একই রকম নিশ্চয়তা খুঁজছে। তাই START-III চুক্তি নবায়ন আন্তর্জাতিক অস্ত্র নিয়ন্ত্রণের নতুন অধ্যায়ের প্রথম ধাপ হতে পারে। বিপরীতে, চুক্তি শেষ হয়ে গেলে বৈশ্বিক নিরাপত্তা আরও খারাপ অবস্থায় যাবে।

ক্রেমলিনের প্রস্তাব তাই একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ। এটি রাশিয়ার ভেতরের অনিরাপত্তা প্রকাশ করছে—যা ট্রাম্প বহুদিন ধরেই বুঝেছেন। তবে বিশ্বের নিরাপত্তায় সামান্য হলেও আশা জাগাতে হলে এই প্রস্তাবকে গুরুত্ব দিয়ে নিতে হবে। পুতিন তাঁর অবস্থান স্পষ্ট করেছেন এবং তিনি সম্ভবত আর পুনরায় বলবেন না। এখন পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়ার দায়িত্ব ডোনাল্ড ট্রাম্পের।

লেখক: ব্রিটিশ সাংবাদিক

(ব্রিটেনের দি ইনডিপেনডেন্ট পত্রিকায় প্রকাশিত)

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

দুর্গাপূজায় অপ্রীতিকর ঘটনার আশঙ্কা নিয়ে বিএনপি নেতার বিতর্কিত মন্তব্য

হাজি সেলিমের আজিমপুরের বাড়িতে যৌথ বাহিনীর অভিযান, ৬টি বিলাসবহুল গাড়ি উদ্ধার

গ্যালারিতে বসে দেখার দিন শেষ, আমরা এখন নিজে খেলব: প্রধান উপদেষ্টা

ভারত-পাকিস্তান ‘হাইভোল্টেজ’ ফাইনাল নিয়ে সুপার কম্পিউটার কী বলে

ক্রেডিট কার্ড ছাড়াই কিস্তিতে মোবাইল ফোন কেনার সুযোগ

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত