Ajker Patrika

দুর্গাপূজায় অপ্রীতিকর ঘটনার আশঙ্কা নিয়ে বিএনপি নেতার বিতর্কিত মন্তব্য

নেত্রকোনা প্রতিনিধি
বিএনপি নেতা জিয়া উদ্দিন। ছবি: সংগৃহীত
বিএনপি নেতা জিয়া উদ্দিন। ছবি: সংগৃহীত

আসন্ন দুর্গাপূজায় বিভিন্ন পূজামণ্ডপে জামায়াতে ইসলামী (জামায়াত), এনসিপি ও আওয়ামী লীগের এজেন্টরা অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটানোর চেষ্টা করতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন নেত্রকোনার খালিয়াজুরী উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক জিয়া উদ্দিন। তিনি বলেন, পূজার নিরাপত্তার বিষয়ে আমাদের দলের নেতা-কর্মীদের যথাযথ দায়িত্ব পালন করতে হবে। তাঁর এই বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে নানা আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি হয়। এতে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন এনসিপি ও জামায়াতে ইসলামীর নেতারা।

গত বৃহস্পতিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) বিকেলে খালিয়াজুরী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স মাঠে উপজেলা বিএনপির জরুরি সভায় এ মন্তব্য করেন জিয়া উদ্দিন। এ সময় সভায় উপজেলা বিএনপির সভাপতি মো. আব্দুর রউফ স্বাধীন ও সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর রহমান তালুকদার কেষ্টুসহ দলের অনেক নেতা-কর্মী উপস্থিত ছিলেন।

গতকাল শনিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) জিয়া উদ্দিনের বক্তব্যের ভিডিওটি ফেসবুকে ভাইরাল হলে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানান এনসিপি নেতারা।

ওই বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় এনসিপির উত্তরাঞ্চলের সংগঠক প্রীতম সোহাগ ফেসবুকে জিয়া উদ্দিনের বক্তব্যের ভিডিও ক্লিপ যুক্ত করে দীর্ঘ এক পোস্টে লেখেন, খালিয়াজুরী উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মীর্জা জিয়া উদ্দীন ধনু নদে লেপসিয়া গ্রামের পাশ দিয়ে যাওয়া জলযান থেকে চাঁদাবাজি চক্রের প্রধান। তিনি লুৎফুজ জামান বাবর সাহেবের চাচাতো ভাই পরিচয়ে চাঁদাবাজির সাম্রাজ্য তৈরি করে রেখেছেন। খালিয়াজুড়িতে চাঁদাবাজ চক্রের এই গডফাদার হঠকারী বক্তব্য দিয়েছে যে, এনসিপি নাকি হিন্দু ভাই-বোনদের পূজামণ্ডপে হামলা করবে। অথচ জেলাজুড়ে হিন্দু ভাইদের নামে গণহারে মিথ্যা মামলা এবং তাঁদের দোকানপাটে লুটপাট ও হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করেছেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা।

অন্যদিকে হিন্দু-মুসলিম তরুণদের সমন্বয়ে গঠিত দল এনসিপির নেতারাই ৫ আগস্টের পর সনাতন ধর্মাবলম্বী ভাই-বোনদের মন্দির পাহারা দিয়েছিলেন।

প্রীতম সোহাগ আরও লেখেন, বিগত ১৩-১৪ মাসে নেত্রকোনায় এনসিপির কোনো নেতা-কর্মী কোনো উপজেলা বা ইউনিয়নে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কোনো মন্দিরে হামলা বা আক্রমণের কোনো নজির যদি দেখাতে না পারেন, তাহলে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মির্জা উদ্দিনকে ক্ষমা চেয়ে এনসিপিকে জড়িয়ে তাঁর বক্তব্য প্রত্যাহার করতে হবে। জেলা বিএনপিকে এই সাংগঠনিক সম্পাদকের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিতে হবে। অন্যথায় ধরা হবে এটি নেত্রকোনা জেলা বিএনপির দলীয় বক্তব্য। তখন জেলা এনসিপিও বসে থাকবে না বলে হুঁশিয়ারি দেন।

এনসিপির কেন্দ্রীয় সদস্য ফাহিম রহমান খান পাঠান এই ‘সাংঘর্ষিক বক্তব্যের’ তীব্র নিন্দা জানিয়ে জেলা বিএনপি ও কেন্দ্রীয় বিএনপিকে এমন বক্তব্য দেওয়া থেকে বিরত থাকার অনুরোধ করেন। তিনি বলেন, ‘আমরা ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে ঐক্যবদ্ধ ছিলাম।’

এদিকে উপজেলা জামায়াতের আমির মাওলানা ইসমাইল হোসেনও এই বক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা অতীতেও অন্য ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিলাম এবং ভবিষ্যতেও থাকব। বিএনপি নেতা যে বক্তব্য দিয়েছেন, সেটা সাংঘর্ষিক। তাঁরা এমন ধরনের ঘটনা ঘটিয়ে আমাদের ওপর দায় চাপাতে পারেন বলে আমরা আশঙ্কা করছি।’

বক্তব্যের পর থেকে উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক জিয়া উদ্দিনের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন বন্ধ রয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে উপজেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুর রউফ স্বাধীনের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

তবে উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর রহমান কেষ্টু বলেন, ‘ওই দিন আমি সভা সঞ্চালনার দায়িত্বে ছিলাম। জিয়া উদ্দিন যে বক্তব্য দিয়েছেন, সেটা বুঝেশুনেই দিয়েছেন। ওই দিন প্রচণ্ড গরম ছিল। গরমে দীর্ঘ সময় সভায় থাকার কারণে হয়তো এমনটা বলে ফেলেছে।’

জিয়া উদ্দিনের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না, জানতে চাইলে তিনি এ বিষয়ে সভাপতির সঙ্গে কথা বলতে বলেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত