মৃত্যুঞ্জয় রায়
মাত্র ২০০ বছর আগেও পৃথিবীটা ভালো ছিল, ছিল স্বাস্থ্যকর, পরিবেশ ছিল সবুজ-শ্যামলিমায় শান্ত-স্নিগ্ধ আরামদায়ক। বনে বনে ছিল বন্য প্রাণীদের আনন্দময় বিচরণ, গাছে গাছে ছিল পাখিদের কূজন, নদীতে-সাগরে সাঁতরে বেড়াত ডানকানা মাছ-ডলফিন ও দৈত্যাকার তিমিরা। মানুষও ছিল হাসিখুশি, বায়ুমণ্ডল থেকে মানুষও বুকভরে নিতে পারত বিশুদ্ধ বাতাস। কিন্তু এরপর কী যে হলো! আমরা যারা প্রকৃতিবাসী ছিলাম, তারা হঠাৎ প্রকৃতি ছেড়ে বিলাসী হয়ে উঠলাম। আমাদের স্যুট-কোট, টি-শার্টের দরকার হলো, চিপস-চকলেট খাওয়ার জন্য লোভাতুর হয়ে পড়লাম, নদীর পাড়ের শীতল বাতাস আমাদের শান্তি দিল না। তা ছেড়ে নিজেদের সঁপে দিলাম এয়ারকন্ডিশনার যন্ত্রের কাছে, আমরা গৃহবন্দী হলাম। হাওয়ায় চলা পালের জাহাজ ছেড়ে বিশাল বিশাল যান্ত্রিক জাহাজ আর উড়োজাহাজে চড়ে দেশান্তরী হলাম। আমাদের এসব বিলাস-ব্যসনের চাহিদা মেটাতে প্রয়োজন পড়ল নানা ধরনের শিল্প-কলকারখানা স্থাপনের। আর সেসব কলকারখানা চালাতে অনিবার্য হয়ে পড়ল জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার। মাটির বুক থেকে নিংড়ে আমরা বের করা শুরু করলাম জীবাশ্ম জ্বালানি, পুড়িয়ে বাতাসে ছাড়তে শুরু করলাম বিষাক্ত কার্বন ডাই-অক্সাইড, কার্বন মনোক্সাইডের মতো বিষাক্ত গ্যাস, জীবাশ্ম জ্বালানি পুড়িয়ে তা থেকে উৎপাদন করলাম বিদ্যুৎশক্তি। সেই বিদ্যুৎশক্তি ব্যবহার করে আমরা বানালাম রাসায়নিক ইউরিয়া সার। সেই সার ফসলের খেতে দেওয়ায় সেখান থেকে বাতাসে মিশল নাইট্রাস অক্সাইড নামের আরেক বিষ গ্যাস। বিপত্তির শুরুটা সেখান থেকেই।
এর পর থেকেই পৃথিবী ও বায়ুমণ্ডলের স্বাস্থ্য খারাপ হতে লাগল, আমরাও রুগ্ণ হতে হতে অকাল মৃত্যুকে আলিঙ্গন করতে শুরু করলাম। চারদিক থেকে শোরগোল উঠল, মানুষই মানুষের এই অকাল মৃত্যুর জন্য দায়ী, তারাই তাদের বিলাসী খায়েশ পূরণের জন্য পরিবেশের দূষণ ঘটাচ্ছে। জাপানি দার্শনিক মাসানোবু ফুকুওকা হয়তো সেটা অনুধাবন করতে পেরেই বলেছিলেন যে এ পৃথিবী ধ্বংসের মূলে রয়েছে মানুষের অতিরিক্ত ভোগস্পৃহা। পরিবেশবিদ থেকে শুরু করে সব মানুষই মানুষকেই প্রধানত দায়ী করছেন আজকের এই পরিস্থিতির জন্য। এ দেশে স্বাধীনতার পর এ বছরের মতো এত দীর্ঘ সময় ধরে বর্ষাকাল কে কবে দেখেছে? ইউরোপে গত এক বছরে গরমে প্রায় ৬২ হাজার মানুষ মরেছে। বৈশ্বিক গড়ের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ গতিতে উষ্ণ হচ্ছে ইউরোপ। এ তাপপ্রবাহের প্রথম শিকার প্রবীণ ব্যক্তি ও শিশুরা। ইউরোপে গত তিনটি গরমকালে মোট মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৮১ হাজার। গত গ্রীষ্মে সবচেয়ে বেশি মানুষ মারা গেছে ইতালিতে। ফিরে এসেছে প্রশান্ত মহাসাগরীয় তীব্র তাপপ্রবাহ ‘ব্লব’।
জলবায়ুর এরূপ খামখেয়ালি আচরণ ও পরিবর্তন আমাদের বিচলিত করে তুলেছে, যা ঘটছে তার পেছনে রয়েছে মানুষের পরিবেশবিনাশী ক্রিয়াকলাপ। দীর্ঘদিন ধরেই পৃথিবীর বুকে মানুষ ও প্রাণীরা বিচরণ করছে। কিন্তু অতীতের সব অনিয়ম-অনাচারকে ছাড়িয়ে গেছে বর্তমানে অতিলোভী মানুষের কর্মকাণ্ড। কেবল আমাদের টাকা চাই, তাতে যে মরে মরুক! কেবল অর্থনৈতিক উন্নয়নই যেন প্রধান লক্ষ্য, পরিবেশ নিয়ে আমরা যত কথা বলি তা কেবল গালভরা বুলির মতো শোনায়। কাগজে লিখি, আলোচনায় বলি, কিন্তু নিজে কী করছি? আমি কি প্রাকৃতিক সুতায় চরকায় বোনা জামা বা শাড়িটা পরছি, হেঁটে বা সাইকেলে চড়ে স্বল্প দূরত্বে যাতায়াত করছি, গাড়ি ছাড়ছি, শপিং করতে পলিব্যাগ ছাড়ছি, প্লাস্টিকের কোনো সামগ্রীর ব্যবহার কমিয়েছি, বৈদ্যুতিক কোনো যন্ত্রপাতির ব্যবহার বাদ দিয়েছি? মৃত্তিকা-মাতার বুক চিরে জীবাশ্ম জ্বালানি, তেল, গ্যাস, কয়লা, পানি এসব ওঠানো বন্ধ করেছি? কৃষকের রক্ত-ঘামে ফলানো খাদ্যের অপচয় কমিয়েছি, অথবা পরিবেশ বিষানো বালাইনাশককে ছাড়তে পেরেছি? নির্মাণ করতে গিয়ে ধুলা ও শব্দের দূষণ কমাতে কোনো ব্যবস্থা নিয়েছি? গার্হস্থ্য বর্জ্যগুলোর কী করছি? এ রকম হাজারো প্রশ্নের বাণ এখন আমাদের দিকে তেড়ে আসছে। ভাবখানা এমন যেন বাণে বাণে আমরা জর্জরিত হব, তবু এগুলো ছাড়ব না, একরত্তি ব্যবহার কমাব না। ভোগবাদী সমাজের এই উদাসীনতা ও অবহেলা আমাদের এক অনিবার্য বিপর্যযের মুখে দাঁড় করিয়েছে। এ বিপর্যয় ও বাস্তব সত্যকে এখন আর অস্বীকার করার জো নেই।
কথায় বলে লোভে পাপ, পাপে মৃত্যু। অল্প-স্বল্প পাপে হয়তো আমরা বড় কোনো শাস্তি ভোগ করি না। কিন্তু ছোট ছোট পাপই জমা হতে হতে একদিন তা আমাদের চরম পরিণতি ও সর্বনাশের দিকে নিয়ে যাবে। নিশ্চয়ই কোনো খারাপ কাজ করে কেউ ভালো থাকতে পারে না। মুশকিলটা হলো, পাপী মরে দশ ঘর নিয়ে। কয়েকজনের গুরু পাপে শাস্তি ভোগ করবে এ পৃথিবীর সব মানুষ, সবুজ পৃথিবী স্বয়ং। আমরা সব মানুষও যদি পৃথিবীর বুক থেকে কখনো নিশ্চিহ্ন হয়ে যাই, তাতেও প্রকৃতির কিছুই যাবে-আসবে না। কেননা, মানুষকে প্রকৃতির দরকার নেই, মানুষ না থাকলেও প্রকৃতি তার আপন নিয়মে চলতে পারবে। বরং মানুষের কারণেই প্রকৃতির জগৎটাকে নানাভাবে রোজ রোজ বদলাতে হচ্ছে, নিজেদের পরিবর্তন করতে হচ্ছে আর তা করছে মানুষই তার প্রয়োজনে। প্রকৃতির নিজের তা করার আদৌ দরকার নেই। মানুষ ভালো করেই জানে যে প্রকৃতি ভালো না থাকলে কোনো মানুষই ভালো থাকবে না, গাছ না থাকলে আমরা বাঁচার জন্য অক্সিজেনটুকুও পাব না। তখন হয়তো স্কুলব্যাগের মতো অক্সিজেন ব্যাগ পিঠে করে সবাইকে চলতে হবে, বাঁচতে হবে। সেরূপ সাংঘাতিক একটা দিন যেন না আসে! এ জন্য এখনই আমাদের সংশোধনমূলক ভাবনা ও কাজগুলোকে খাওয়ার চেয়েও বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। না খেয়ে দুদিন বাঁচা যায়, কিন্তু শ্বাসের সঙ্গে অক্সিজেন না পেলে আমরা দুই মিনিটও বাঁচব না। এখনো সব শেষ হয়ে যায়নি। প্রকৃতির সঙ্গে সখ্য গড়েই আমাদের বাঁচতে হবে। আমাদের স্বার্থেই প্রকৃতিকে টিকিয়ে রাখতে হবে। আর কোনো ধ্বংস নয়, প্রকৃতির কোনো ক্ষতি নয়। আসুন, সবাই মিলে আমরা প্রকৃতিকে ভালো রাখার সব ভাবনা ও কর্মকে সবার মধ্যে ছড়িয়ে দিই। সবাইকে সঙ্গে নিয়ে নিজেদের সমাজ, দেশ ও পৃথিবীকে ভালো রাখার চেষ্টা করি।
২. পৃথিবীর পরিবেশ ও প্রকৃতিকে ভালো রাখার সহজ কোনো ওষুধ নেই, নেই কোনো দ্রুত কার্যকর সূত্র। যত দিন ধরে পৃথিবীর পরিবেশের আমরা ক্ষতি করেছি, যদি এখনই আমরা সেসব ক্ষতির কাজগুলো করা থেকে বিরত থাকি তবু পৃথিবীর সেই ২০০ বছর আগের পরিবেশে ফিরতে অনেক সময় লাগবে। প্রধান পদক্ষেপ তিনটি—পরিবেশের ক্ষতি হয় এমন কাজ না করা, ক্ষতি হলে তা সংশোধনের পদক্ষেপ নেওয়া এবং পরিবেশের পরিবর্তনের সঙ্গে নিজেদের মানিয়ে নেওয়া। মানিয়ে নিতে দরকার উপযুক্ত প্রযুক্তি বা কলাকৌশল, মানসিকতা। সব ক্ষেত্রেই প্রথমে দরকার সঠিক তথ্য ও আমাদের সচেতনতা। এ বিষয়ে আমাদের অভ্যাস ও আচরণের পরিবর্তন না হলে গবেষণা, তথ্য, প্রকাশনা, প্রকল্প গ্রহণ, পরামর্শ সভা, র্যালি, টক শো—এসব কিছুই কাজে আসবে না। দিনটা শুরু হোক এভাবে, আজ যে প্যান্টটা পরলাম সেটি যেন কালই না বদলাই। কেননা, এক কেজি তুলা উৎপাদন করতে লাগে ১০ হাজার লিটার পানি, একটা জিনসের প্যান্ট বানাতে লাগে প্রায় সাড়ে ৭ হাজার লিটার পানি, যা তোলা হয় ভূগর্ভ থেকে। বেঁচে থাকার জন্য তো দশটা প্যান্ট লাগে না। আমরা আমাদের ভোগের সামগ্রী ব্যবহারের পরিমাণ যত কমাতে বা সীমিত করতে পারব, ততই শিল্প-কলকারখানার উৎপাদন কমবে, আস্তে আস্তে কারখানার সংখ্যাও কমবে, চাপ কমবে প্রাকৃতিক সম্পদ অবক্ষয়ের ওপর। এতে সাশ্রয় হবে প্রাকৃতিক সম্পদের। রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে নিজেকে প্রশ্ন করি, পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর কোন কাজটা করা থেকে আমি আজ নিজেকে বিরত রাখতে পেরেছি। এভাবেই আসবে আমাদের অভ্যাস ও আচরণের পরিবর্তন। আপাতত সেটাই পরিবেশকে ভালো রাখার প্রথম মন্ত্র।
মৃত্যুঞ্জয় রায়, কৃষিবিদ ও প্রকৃতিবিষয়ক লেখক
মাত্র ২০০ বছর আগেও পৃথিবীটা ভালো ছিল, ছিল স্বাস্থ্যকর, পরিবেশ ছিল সবুজ-শ্যামলিমায় শান্ত-স্নিগ্ধ আরামদায়ক। বনে বনে ছিল বন্য প্রাণীদের আনন্দময় বিচরণ, গাছে গাছে ছিল পাখিদের কূজন, নদীতে-সাগরে সাঁতরে বেড়াত ডানকানা মাছ-ডলফিন ও দৈত্যাকার তিমিরা। মানুষও ছিল হাসিখুশি, বায়ুমণ্ডল থেকে মানুষও বুকভরে নিতে পারত বিশুদ্ধ বাতাস। কিন্তু এরপর কী যে হলো! আমরা যারা প্রকৃতিবাসী ছিলাম, তারা হঠাৎ প্রকৃতি ছেড়ে বিলাসী হয়ে উঠলাম। আমাদের স্যুট-কোট, টি-শার্টের দরকার হলো, চিপস-চকলেট খাওয়ার জন্য লোভাতুর হয়ে পড়লাম, নদীর পাড়ের শীতল বাতাস আমাদের শান্তি দিল না। তা ছেড়ে নিজেদের সঁপে দিলাম এয়ারকন্ডিশনার যন্ত্রের কাছে, আমরা গৃহবন্দী হলাম। হাওয়ায় চলা পালের জাহাজ ছেড়ে বিশাল বিশাল যান্ত্রিক জাহাজ আর উড়োজাহাজে চড়ে দেশান্তরী হলাম। আমাদের এসব বিলাস-ব্যসনের চাহিদা মেটাতে প্রয়োজন পড়ল নানা ধরনের শিল্প-কলকারখানা স্থাপনের। আর সেসব কলকারখানা চালাতে অনিবার্য হয়ে পড়ল জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার। মাটির বুক থেকে নিংড়ে আমরা বের করা শুরু করলাম জীবাশ্ম জ্বালানি, পুড়িয়ে বাতাসে ছাড়তে শুরু করলাম বিষাক্ত কার্বন ডাই-অক্সাইড, কার্বন মনোক্সাইডের মতো বিষাক্ত গ্যাস, জীবাশ্ম জ্বালানি পুড়িয়ে তা থেকে উৎপাদন করলাম বিদ্যুৎশক্তি। সেই বিদ্যুৎশক্তি ব্যবহার করে আমরা বানালাম রাসায়নিক ইউরিয়া সার। সেই সার ফসলের খেতে দেওয়ায় সেখান থেকে বাতাসে মিশল নাইট্রাস অক্সাইড নামের আরেক বিষ গ্যাস। বিপত্তির শুরুটা সেখান থেকেই।
এর পর থেকেই পৃথিবী ও বায়ুমণ্ডলের স্বাস্থ্য খারাপ হতে লাগল, আমরাও রুগ্ণ হতে হতে অকাল মৃত্যুকে আলিঙ্গন করতে শুরু করলাম। চারদিক থেকে শোরগোল উঠল, মানুষই মানুষের এই অকাল মৃত্যুর জন্য দায়ী, তারাই তাদের বিলাসী খায়েশ পূরণের জন্য পরিবেশের দূষণ ঘটাচ্ছে। জাপানি দার্শনিক মাসানোবু ফুকুওকা হয়তো সেটা অনুধাবন করতে পেরেই বলেছিলেন যে এ পৃথিবী ধ্বংসের মূলে রয়েছে মানুষের অতিরিক্ত ভোগস্পৃহা। পরিবেশবিদ থেকে শুরু করে সব মানুষই মানুষকেই প্রধানত দায়ী করছেন আজকের এই পরিস্থিতির জন্য। এ দেশে স্বাধীনতার পর এ বছরের মতো এত দীর্ঘ সময় ধরে বর্ষাকাল কে কবে দেখেছে? ইউরোপে গত এক বছরে গরমে প্রায় ৬২ হাজার মানুষ মরেছে। বৈশ্বিক গড়ের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ গতিতে উষ্ণ হচ্ছে ইউরোপ। এ তাপপ্রবাহের প্রথম শিকার প্রবীণ ব্যক্তি ও শিশুরা। ইউরোপে গত তিনটি গরমকালে মোট মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৮১ হাজার। গত গ্রীষ্মে সবচেয়ে বেশি মানুষ মারা গেছে ইতালিতে। ফিরে এসেছে প্রশান্ত মহাসাগরীয় তীব্র তাপপ্রবাহ ‘ব্লব’।
জলবায়ুর এরূপ খামখেয়ালি আচরণ ও পরিবর্তন আমাদের বিচলিত করে তুলেছে, যা ঘটছে তার পেছনে রয়েছে মানুষের পরিবেশবিনাশী ক্রিয়াকলাপ। দীর্ঘদিন ধরেই পৃথিবীর বুকে মানুষ ও প্রাণীরা বিচরণ করছে। কিন্তু অতীতের সব অনিয়ম-অনাচারকে ছাড়িয়ে গেছে বর্তমানে অতিলোভী মানুষের কর্মকাণ্ড। কেবল আমাদের টাকা চাই, তাতে যে মরে মরুক! কেবল অর্থনৈতিক উন্নয়নই যেন প্রধান লক্ষ্য, পরিবেশ নিয়ে আমরা যত কথা বলি তা কেবল গালভরা বুলির মতো শোনায়। কাগজে লিখি, আলোচনায় বলি, কিন্তু নিজে কী করছি? আমি কি প্রাকৃতিক সুতায় চরকায় বোনা জামা বা শাড়িটা পরছি, হেঁটে বা সাইকেলে চড়ে স্বল্প দূরত্বে যাতায়াত করছি, গাড়ি ছাড়ছি, শপিং করতে পলিব্যাগ ছাড়ছি, প্লাস্টিকের কোনো সামগ্রীর ব্যবহার কমিয়েছি, বৈদ্যুতিক কোনো যন্ত্রপাতির ব্যবহার বাদ দিয়েছি? মৃত্তিকা-মাতার বুক চিরে জীবাশ্ম জ্বালানি, তেল, গ্যাস, কয়লা, পানি এসব ওঠানো বন্ধ করেছি? কৃষকের রক্ত-ঘামে ফলানো খাদ্যের অপচয় কমিয়েছি, অথবা পরিবেশ বিষানো বালাইনাশককে ছাড়তে পেরেছি? নির্মাণ করতে গিয়ে ধুলা ও শব্দের দূষণ কমাতে কোনো ব্যবস্থা নিয়েছি? গার্হস্থ্য বর্জ্যগুলোর কী করছি? এ রকম হাজারো প্রশ্নের বাণ এখন আমাদের দিকে তেড়ে আসছে। ভাবখানা এমন যেন বাণে বাণে আমরা জর্জরিত হব, তবু এগুলো ছাড়ব না, একরত্তি ব্যবহার কমাব না। ভোগবাদী সমাজের এই উদাসীনতা ও অবহেলা আমাদের এক অনিবার্য বিপর্যযের মুখে দাঁড় করিয়েছে। এ বিপর্যয় ও বাস্তব সত্যকে এখন আর অস্বীকার করার জো নেই।
কথায় বলে লোভে পাপ, পাপে মৃত্যু। অল্প-স্বল্প পাপে হয়তো আমরা বড় কোনো শাস্তি ভোগ করি না। কিন্তু ছোট ছোট পাপই জমা হতে হতে একদিন তা আমাদের চরম পরিণতি ও সর্বনাশের দিকে নিয়ে যাবে। নিশ্চয়ই কোনো খারাপ কাজ করে কেউ ভালো থাকতে পারে না। মুশকিলটা হলো, পাপী মরে দশ ঘর নিয়ে। কয়েকজনের গুরু পাপে শাস্তি ভোগ করবে এ পৃথিবীর সব মানুষ, সবুজ পৃথিবী স্বয়ং। আমরা সব মানুষও যদি পৃথিবীর বুক থেকে কখনো নিশ্চিহ্ন হয়ে যাই, তাতেও প্রকৃতির কিছুই যাবে-আসবে না। কেননা, মানুষকে প্রকৃতির দরকার নেই, মানুষ না থাকলেও প্রকৃতি তার আপন নিয়মে চলতে পারবে। বরং মানুষের কারণেই প্রকৃতির জগৎটাকে নানাভাবে রোজ রোজ বদলাতে হচ্ছে, নিজেদের পরিবর্তন করতে হচ্ছে আর তা করছে মানুষই তার প্রয়োজনে। প্রকৃতির নিজের তা করার আদৌ দরকার নেই। মানুষ ভালো করেই জানে যে প্রকৃতি ভালো না থাকলে কোনো মানুষই ভালো থাকবে না, গাছ না থাকলে আমরা বাঁচার জন্য অক্সিজেনটুকুও পাব না। তখন হয়তো স্কুলব্যাগের মতো অক্সিজেন ব্যাগ পিঠে করে সবাইকে চলতে হবে, বাঁচতে হবে। সেরূপ সাংঘাতিক একটা দিন যেন না আসে! এ জন্য এখনই আমাদের সংশোধনমূলক ভাবনা ও কাজগুলোকে খাওয়ার চেয়েও বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। না খেয়ে দুদিন বাঁচা যায়, কিন্তু শ্বাসের সঙ্গে অক্সিজেন না পেলে আমরা দুই মিনিটও বাঁচব না। এখনো সব শেষ হয়ে যায়নি। প্রকৃতির সঙ্গে সখ্য গড়েই আমাদের বাঁচতে হবে। আমাদের স্বার্থেই প্রকৃতিকে টিকিয়ে রাখতে হবে। আর কোনো ধ্বংস নয়, প্রকৃতির কোনো ক্ষতি নয়। আসুন, সবাই মিলে আমরা প্রকৃতিকে ভালো রাখার সব ভাবনা ও কর্মকে সবার মধ্যে ছড়িয়ে দিই। সবাইকে সঙ্গে নিয়ে নিজেদের সমাজ, দেশ ও পৃথিবীকে ভালো রাখার চেষ্টা করি।
২. পৃথিবীর পরিবেশ ও প্রকৃতিকে ভালো রাখার সহজ কোনো ওষুধ নেই, নেই কোনো দ্রুত কার্যকর সূত্র। যত দিন ধরে পৃথিবীর পরিবেশের আমরা ক্ষতি করেছি, যদি এখনই আমরা সেসব ক্ষতির কাজগুলো করা থেকে বিরত থাকি তবু পৃথিবীর সেই ২০০ বছর আগের পরিবেশে ফিরতে অনেক সময় লাগবে। প্রধান পদক্ষেপ তিনটি—পরিবেশের ক্ষতি হয় এমন কাজ না করা, ক্ষতি হলে তা সংশোধনের পদক্ষেপ নেওয়া এবং পরিবেশের পরিবর্তনের সঙ্গে নিজেদের মানিয়ে নেওয়া। মানিয়ে নিতে দরকার উপযুক্ত প্রযুক্তি বা কলাকৌশল, মানসিকতা। সব ক্ষেত্রেই প্রথমে দরকার সঠিক তথ্য ও আমাদের সচেতনতা। এ বিষয়ে আমাদের অভ্যাস ও আচরণের পরিবর্তন না হলে গবেষণা, তথ্য, প্রকাশনা, প্রকল্প গ্রহণ, পরামর্শ সভা, র্যালি, টক শো—এসব কিছুই কাজে আসবে না। দিনটা শুরু হোক এভাবে, আজ যে প্যান্টটা পরলাম সেটি যেন কালই না বদলাই। কেননা, এক কেজি তুলা উৎপাদন করতে লাগে ১০ হাজার লিটার পানি, একটা জিনসের প্যান্ট বানাতে লাগে প্রায় সাড়ে ৭ হাজার লিটার পানি, যা তোলা হয় ভূগর্ভ থেকে। বেঁচে থাকার জন্য তো দশটা প্যান্ট লাগে না। আমরা আমাদের ভোগের সামগ্রী ব্যবহারের পরিমাণ যত কমাতে বা সীমিত করতে পারব, ততই শিল্প-কলকারখানার উৎপাদন কমবে, আস্তে আস্তে কারখানার সংখ্যাও কমবে, চাপ কমবে প্রাকৃতিক সম্পদ অবক্ষয়ের ওপর। এতে সাশ্রয় হবে প্রাকৃতিক সম্পদের। রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে নিজেকে প্রশ্ন করি, পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর কোন কাজটা করা থেকে আমি আজ নিজেকে বিরত রাখতে পেরেছি। এভাবেই আসবে আমাদের অভ্যাস ও আচরণের পরিবর্তন। আপাতত সেটাই পরিবেশকে ভালো রাখার প্রথম মন্ত্র।
মৃত্যুঞ্জয় রায়, কৃষিবিদ ও প্রকৃতিবিষয়ক লেখক
‘আচ্ছা, আমরা গেলাম, তোমরা ভালো থেকো’—ডোনাল্ড ট্রাম্পের গত সপ্তাহের ইউক্রেন-সম্পর্কিত বক্তব্যকে এভাবেই সংক্ষেপে বলা যায়। মার্কিন প্রেসিডেন্ট হঠাৎ ঘোষণা করলেন, ইউক্রেন রাশিয়ার কাছ থেকে তার সব হারানো ভূখণ্ড ফিরে পেতে পারে, তবে সেটা কেবল ইউরোপের সমর্থনে।
১২ ঘণ্টা আগেযদি সাম্প্রতিক গাজা ও ইউক্রেনের সংঘাত কোনো বার্তা বহন করে থাকে, তবে সেটি হলো: ‘সব আগের মতোই চলছে, তবে আরও বড় আকারে।’ ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছ থেকে সহিংসতা বন্ধ হওয়ার যে আশা জেগেছিল, তা মিলিয়ে গেছে। এখন প্রায় কারও মুখে ‘যুদ্ধবিরতি’ শব্দটি শোনা যায় না। যেকোনো পদক্ষেপ যুদ্ধ কমানোর বদলে আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে।
১৩ ঘণ্টা আগেখেলার মাঠ শুধু একটি খেলার জায়গা নয়, এটি একটি এলাকার শিশু-কিশোর, বয়স্ক মানুষের খেলাধুলা ও হাঁটাচলার জায়গাও। মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার শরীফপুর ইউনিয়নের তেলিবিল সঞ্জরপুর এলাকায় তেলিবিল উচ্চবিদ্যালয় সরকারি মাঠের জায়গা দখল করে বাড়িঘর নির্মাণের সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে ২৫ সেপ্টেম্বর আজকের পত্রিকায়।
১৩ ঘণ্টা আগেদেশে অনেক ঘটনা ঘটেছে, কিন্তু সবকিছুই পুঁজিবাদের দুঃশাসনের অধীনেই; বাস্তবতা হচ্ছে, একমাত্র ক্ষমতা-বদল ভিন্ন তেমন কোনো রদবদল ঘটেনি। সবই আগের নিয়মে বহাল রয়েছে। ক্ষেত্রবিশেষে আরও অবনতি লক্ষ করা যাচ্ছে। বরং বলা যায়, পুঁজিবাদের চেহারার আরও উন্মোচন ঘটেছে। তালেবান বিতাড়নের নামে আফগানিস্তান দখল করা হয়েছে, কি
১ দিন আগে