বিভুরঞ্জন সরকার
ঢাকার পুরানা পল্টনের দুটি নম্বর, দুটি ঠিকানা, দুটি বাড়ি আমাকে, আমার মতো আরও অনেককে খুব টানত। ১০ পুরানা পল্টনে ছিল ছাত্র ইউনিয়ন অফিস। আর ২১/১ পুরানা পল্টনে কমিউনিস্ট পার্টির অফিস। কত দিন, কত ঘণ্টা যে আমরা অনেকে ওই দুই অফিসে কাটিয়েছি, তার হিসাব নেই। কবিতা লেখা, আর প্রেমে পড়া নাকি বাঙালি তরুণদের সহজাত। কবিতা লেখার ব্যর্থ চেষ্টা করেছি। প্রেমেও পড়েছি। তবে কোনো মানবীর নয়, রাজনীতির। নারী প্রেমেও যে কেউ কেউ পড়েননি, তা নয়। তবে তা ছিল একান্ত আপন এবং গোপন। আহা, সেই সব দিনগুলো। সোনা রঙের সেই দিনগুলো কোথায় হারিয়ে গেল। ১০ পুরানা পল্টনে ছাত্র ইউনিয়ন অফিস ছিল ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ পর্যন্ত। সেখানে ছাত্র ইউনিয়নের সাপ্তাহিক মুখপত্র ‘জয়ধ্বনি’ অফিসও ছিল। ছাত্রদের একটি নিয়মিত পত্রিকা, যার প্রকাশনার দায়িত্ব ছাত্রদের, জয়ধ্বনি ছাড়া এ দেশে তার দ্বিতীয় নজির নেই। অন্য দেশেও বেশি আছে বলে মনে হয় না।
১৯৭৩ সালে ঢাকা এসে খুব দ্রুত আমি জয়ধ্বনির সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলাম। প্রথমে জয়ধ্বনির সম্পাদক ছিলেন আব্দুল কাইয়ুম মুকুল (এখন প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক)। পরে সম্পাদক হন অজয় দাশগুপ্ত (একুশে পদকপ্রাপ্ত সিনিয়র সাংবাদিক)। ছাত্র ইউনিয়ন কেন্দ্রীয় নেতাদের কয়েকজনকে নিয়ে একটি সম্পাদকীয় বোর্ড ছিল। এ ছাড়া চার-পাঁচজনের একটি টিম জয়ধ্বনি প্রকাশের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, সবাই ছাত্র। আমি যাদের পেয়েছি, তাঁদের মধ্যে ছিলেন মনিরুজ্জান লস্কর বাদল, তাঁর ভাই জুয়েল, আ ক ম নূর হোসেন। আজকের পত্রিকার সম্পাদক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ড. মো. গোলাম রহমানও আমাদের টিমে ছিলেন। সব মিলিয়ে কি জমজমাট সময় ছিল তখন। ১০ পুরানা পল্টন ছিল আমাদের কাছে নেশার মতো। দিনে এক চক্কর না দিলে পেটের ভাত হজম না হওয়ার অবস্থা।
২১/১ পুরানা পল্টনের (এখন কমরেড মণি সিংহ সড়ক) কমিউনিস্ট পার্টি অফিসও ছিল আমাদের আরেক বড় আকর্ষণ। আমরা বলতাম, বিপ্লবের লাল দুর্গ। যেখানে বসে মণি সিংহ, আব্দুস সালাম, খোকা রায়, অনিল মুখার্জি, জ্ঞান চক্রবর্তী, অজয় রায়, মোহাম্মদ ফরহাদ, সাইফউদ্দিন আহমেদ মানিক, মনজুরুল আহসান খান, নূরুল ইসলাম নাহিদ, মুজাহিদুল ইসলাম সেলিমেরা হৃদয়ের উত্তাপ দিয়ে বিপ্লবের বাষ্প তৈরি করে সারা দেশে ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টারত। সে বাষ্পতাপ একবার শরীরে না নিয়ে কি হলে ফেরা যায়? কমিউনিস্ট পার্টি অফিস এখনো ২১/১ নম্বরে থাকলেও আগের অবস্থায় নেই। যেমন আগের অবস্থায় নেই আমি, আমার মতো আরও অনেকে। কমিউনিস্ট পার্টির একতলা হলুদ বাড়িটি এক সময় বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক-প্রগতিশীল আন্দোলনের প্রধান ঠিকানায় পরিণত হয়েছিল। এখন মাঝখানে দেয়াল তুলে দুদিকে দুই বিরাট ভবন তৈরি হয়েছে। একদিকে কমিউনিস্ট পার্টি, অন্যদিকে সাবেক কমিউনিস্টরা মণি সিংহ ও মোহাম্মদ ফরহাদের নামে ট্রাস্ট গঠন করে দখলিস্বত্ব কায়েম করে আছেন। ঠিকানা আছে অপরিবর্তিত, শুধু যাওয়া-আসা কমেছে পুরনো মানুষদের। নতুনদের আনাগোনাও কি খুব বেড়েছে? জানি না।
ছাত্র ইউনিয়ন অফিসের সঙ্গে লাগোয়া ছিল মরণচাঁদের মিষ্টির দোকান, ওই দোকান এখনো আছে। তখন ছাত্র ইউনিয়ন অফিস থেকে বের হয়ে মরণচাঁদ পার হতে গিয়ে দোকানের ভেতর কাচঘেরা আলমারিতে থরে থরে সাজানো বিভিন্ন রকম মিষ্টির থালা দেখে মনে হতো, আহ, সব পদের একটি করে মিষ্টি যদি খেতে পারতাম! পকেটে হাত দিয়ে মনের ইচ্ছাটা চাপা দিতাম। ছাত্র ইউনিয়ন অফিসের উল্টোদিকে রাস্তার ওপারে ছিল তখনকার খুব নামকরা ফ্ল্যামিঙ্গো রেস্টুরেন্ট। আমাদের কেউ কেউ, বিশেষ করে যাদের মেয়ে বন্ধু ছিল, তাদের একটু বেশি যাতায়াত ছিল ফ্ল্যামিঙ্গোতে। নিজের পয়সায় ফ্ল্যামিঙ্গো যাওয়ার সাধ্য আমার ছিল না। তবে কোনো না কোনো বন্ধুর সৌজন্যে ফ্ল্যামিঙ্গোতে গিয়েছি। বিশেষ করে মনে আছে কথাসাহিত্যিক শওকত ওসমান কমপক্ষে দুদিন আমাকে এবং তানভীরকে (তানভীর মোকাম্মেল, একুশে পুরস্কারপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র নির্মাতা) ফ্ল্যামিঙ্গোতে নিয়ে খাইয়েছিলেন, বেশ কিছু সময় আড্ডায় মেতে ছিলেন। তানভীর ঢাকা কলেজে শওকত ওসমানের সরাসরি ছাত্র ছিলেন। ছাত্রকে নিয়ে রেস্টুরেন্টে শিক্ষকের আড্ডা—হ্যাঁ, শওকত ওসমান অমনই ছিলেন।
কমিউনিস্ট পার্টি অফিসের আগেই ছিল ম্যান্ডারিন নামের চাইনিজ রেস্টুরেন্ট। প্রথম দিকে শুধু বাইরে দাঁড়িয়ে ভেতরের দৃশ্য কল্পনা করতাম। আর মনকে এই বলে সান্ত্বনা দিতাম যে, আমরা হলাম মস্কোপন্থী, চাইনিজ খাবারে আমাদের লোভ থাকতে নেই! চাইনিজ খাওয়া হয়েছিল প্রথম সম্ভবত বন্ধু মহসিন আলীর কল্যাণে। মহসিন এখন ওয়েভ নামের একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার প্রধান নির্বাহী।
১৯৭৫ সালে বাকশাল গঠনের পর দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বদলে যেতে থাকে। ১৫ আগস্টের নারকীয় হত্যাকাণ্ড পরিস্থিতি আমূল পাল্টে দেয়। পরে জিয়াউর রহমানের সময় রাজনৈতিক কার্যক্রম শুরু হলেও পুরানা পল্টনে ছাত্র ইউনিয়ন অফিস আর ফিরে পাওয়া যায়নি। তখন ছাত্র ইউনিয়ন অফিস নেওয়া হয়েছিল হোসনি দালানে। জিয়া অবশ্য কমিউনিস্ট পার্টি অফিস পার্টিকে ফেরত দিয়েছিলেন। সে সময় পার্টির নমনীয় নীতির পুরস্কার হিসেবেই পার্টি অফিস ফেরত পাওয়া হয়েছিল কিনা, তা অবশ্য এখনো পরিষ্কার নয়।
২১/১-এ আমাদের সময় কেটেছে তুলনামূলকভাবে বেশি। আমিতো ১৯৭৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে এসে মোহাম্মদ ফরহাদের সৌজন্যে কমিউনিস্ট পার্টি অফিসে সপ্তাহখানেক রাতও কাটিয়েছি। তখন শেখরদা (শেখর দত্ত) পার্টি অফিসেই থাকতেন। আমি ফরহাদ ভাইয়ের এলাকা থেকে আসায় একটু বাড়তি খাতির পেয়েছিলাম বলে মনে হয়। তখন আমাদের মনে কত আশা, কত স্বপ্ন। দেশে বিপ্লব হবে। সমাজতন্ত্র কায়েম হবে। কত মিছিল। কত স্লোগান—‘কেউ খাবে আর কেউ খাবে না, তা হবে না তা হবে না’, ‘ভাত-কাপড়-জমি-কাজ, কমিউনিস্ট পার্টির এক আওয়াজ’, ‘আমার ভোট আমি দেব, যাকে খুশি তাকে দেব’। মণি সিংহের বজ্রদীপ্ত ঘোষণা—বাংলাদেশ হবে ১৫তম সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র। কত আয়োজন। কত প্রস্তুতি। কত সংগঠন। কত সংগঠক। কত বন্ধু। কত চেনা মুখ। ম হামিদ, শহীদুল ইসলাম বাদল, অজয় দাশগুপ্ত, বিধান বিশ্বাস, আ ক ম জাহাঙ্গীর, কামালউদ্দিন আহমেদ, কাজী আকরাম হোসেন, মুহম্মদ হিলালউদ্দিন, কামরুল আহসান খান, খায়রুল আহসান খান, মৃণাল সরকার, সুরেশ দত্ত, মনীরুজ্জামান লস্কর বাদল, খন্দকার শওকত হোসেন জুলিয়াস, শওকাত হোসেন, নিতাই দাস, খন্দকার ফারুক, আনোয়ারুল হক, রঞ্জন কর্মকার, নুরুল ইসলাম, জীবন সাহা, সুলতান আহমেদ, মিজানুর রহমান চৌধুরী, মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, তাহেরউল্লাহ, আরিফুল হক কাবুল, মোসলেহউদ্দিন, নাসিরউদ্দোজাসহ আরও কত নাম স্মৃতির পাতায় ভাসছে। একসঙ্গে কাজ করার সৌভাগ্য হয়েছে বর্তমানে খ্যাতিমান অর্থনীতিবিদ ড. নজরুল ইসলাম, ড. বিনায়ক সেন, ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, ড. মোস্তাফিজুর রহমান, অধ্যাপক ড. এম এম আকাশসহ আরও কতজনের সঙ্গে। আমাদের যারা আরও সিনিয়র কিংবা পদধারী বড় নেতা, তাঁদের নামতো উল্লেখই করলাম না। একপর্যায়ে কমিউনিস্ট পার্টির কত প্রভাব। আওয়ামী লীগ, বিএনপির মতো বড় দলের নেতারাও এসে ধরনা দিচ্ছেন কমিউনিস্ট পার্টি অফিসে। এরশাদবিরোধী আন্দোলনের চালকের আসনে যেন মোহাম্মদ ফরহাদ, কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক। আমাদের বুকে কত বল। কত ভরসা।
অকস্মাৎ বজ্রপাত হলো। আমরা বিহ্বল হলাম। চিকিৎসার জন্য মস্কো গিয়ে মোহাম্মদ ফরহাদ ফিরে এলেন শব হয়ে। নক্ষত্রের পতন হলো। অসুস্থ হয়ে শয্যাগত কিংবদন্তি কমিউনিস্ট নেতা মণি সিংহ। এত তারা আকাশে। অথচ সব কেমন নিষ্প্রুভ মনে হতে লাগল। কী থেকে কী হয়ে গেল। যে সোভিয়েত ইউনিয়নের সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব এ দেশসহ দেশে দেশে অসংখ্য মানুষকে বিপ্লবের মন্ত্রে দীক্ষিত করে তুলেছিল, সেই মহাপরাক্রমশীল রাষ্ট্র সোভিয়েত ইউনিয়ন তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ল। আমাদের দেশের কমিউনিস্ট নেতারাও মুখ থুবড়ে পড়লেন। আমার মনে হয়, আমাদের নেতারা ছিলেন সোভিয়েতঅন্ধ। অন্ধের হাতে ওয়াকিং স্টিক তুলে না দিয়ে সোভিয়েতের ভেঙে পড়ায় তাঁরা বিভ্রমে পড়েন এবং এত এত মানুষের আত্মদান, রক্ত, ত্যাগে গড়া পার্টিটা হুড়মুড় করে ভেঙে দিলেন। ঐতিহাসিক আপসরফায় পার্টি অফিসে দেয়াল তুলে দিলেন। একদিকে আদি কমিউনিস্টরা লাল ঝান্ডা উড়িয়ে জানান দিচ্ছেন—‘সব শেষ হয়ে যায়নি। মানুষের শোষণ মুক্তির আশা জেগে থাকবেই। লড়াই জারি রহে গা।’
অন্যদিকে মণি সিংহ-মোহাম্মদ ফরহাদ স্মৃতি ট্রাস্ট। প্রবাদপ্রতিম দুই কমিউনিস্টের নাম জড়িয়ে যারা ট্রাস্ট করলেন, তাঁরা আর নিজেদের কমিউনিস্ট বলে পরিচয় দেন না। হায়, এক জীবনে কত কী দেখছি। কী চেয়ে কী পেলাম! কাদের হাতে আমরা আমাদের ভাগ্য সঁপে দিয়ে জীবনের শ্রেষ্ঠ সময়গুলো বিলিয়ে দিলাম! এখন আর পুরানা পল্টনের দিকে খুব একটা যাওয়া হয় না। তবে ফেলে আসা দিনগুলোর জন্য মন কেমন করাটা কাটাতে পারি না। যে পার্টি অফিসে প্রাণ খুলে আড্ডা দিয়েছি, নানা তর্ক-বিতর্কে অংশ নিয়েছি, সেখানে যেতে এখনো মন চায়। কিন্তু এ ভেবে অস্বস্তি বোধ করি, আমি যে আর কমিউনিস্ট নেই। মার্কসবাদকে আমি আর সব রোগের মহৌষধ মনে করি না। যারা মার্কসবাদে আস্থা রেখে বিপ্লবের স্বপ্ন এখনো জাগিয়ে রেখেছেন, তাঁদের কাছে আমি যে আর বন্ধু নই। তাঁরা বিশ্বাসী, তারা মহৎ। আমি বিশ্বাস রাখতে ব্যর্থ হয়েছি। আমার চিত্ত দুর্বল। তবে আমি বিত্তবৈভবের পেছনে ছুটিনি। সৎভাবে জীবনরক্ষার সংগ্রামে লিপ্ত। আমার চেয়ে অধম আর কে হতে পারে! বিশ্বাসে মিলায় বস্তু, তর্কে বহু দূর।
পৃথিবীর রং নাকি আবার বদলাবে। মানুষের শোষণ মুক্তির স্বপ্ন মিথ্যা নয়। আশায় বুক বাঁধি। কিন্তু হতাশার কারণই বেশি ঘটতে দেখি। দুনিয়াব্যাপী ধর্মোন্মাদনার ঝড়ো হাওয়া। থামানোর পথ দেখা যাচ্ছে কি? কান পেতে শোনার চেষ্টা করি কালের ঘণ্টাধ্বনি। কাল বহমান। নিরবধি গতিময়। সবকিছু ভেসে যায়–জীবন, যৌবন, ধন, মান। থাকে তবে কী? ‘থাকে শুধু অন্ধকার’, ‘দু’দণ্ড শান্তি’ দেওয়ার ও ‘মুখোমুখি বসিবার নাটোরের বনলতা সেন’!
পল্টন যদি আমাদের আবার এক করতে পারত! আছে কোনো জাদুরকাঠি?
লেখক: সহকারী সম্পাদক, আজকের পত্রিকা
ঢাকার পুরানা পল্টনের দুটি নম্বর, দুটি ঠিকানা, দুটি বাড়ি আমাকে, আমার মতো আরও অনেককে খুব টানত। ১০ পুরানা পল্টনে ছিল ছাত্র ইউনিয়ন অফিস। আর ২১/১ পুরানা পল্টনে কমিউনিস্ট পার্টির অফিস। কত দিন, কত ঘণ্টা যে আমরা অনেকে ওই দুই অফিসে কাটিয়েছি, তার হিসাব নেই। কবিতা লেখা, আর প্রেমে পড়া নাকি বাঙালি তরুণদের সহজাত। কবিতা লেখার ব্যর্থ চেষ্টা করেছি। প্রেমেও পড়েছি। তবে কোনো মানবীর নয়, রাজনীতির। নারী প্রেমেও যে কেউ কেউ পড়েননি, তা নয়। তবে তা ছিল একান্ত আপন এবং গোপন। আহা, সেই সব দিনগুলো। সোনা রঙের সেই দিনগুলো কোথায় হারিয়ে গেল। ১০ পুরানা পল্টনে ছাত্র ইউনিয়ন অফিস ছিল ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ পর্যন্ত। সেখানে ছাত্র ইউনিয়নের সাপ্তাহিক মুখপত্র ‘জয়ধ্বনি’ অফিসও ছিল। ছাত্রদের একটি নিয়মিত পত্রিকা, যার প্রকাশনার দায়িত্ব ছাত্রদের, জয়ধ্বনি ছাড়া এ দেশে তার দ্বিতীয় নজির নেই। অন্য দেশেও বেশি আছে বলে মনে হয় না।
১৯৭৩ সালে ঢাকা এসে খুব দ্রুত আমি জয়ধ্বনির সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলাম। প্রথমে জয়ধ্বনির সম্পাদক ছিলেন আব্দুল কাইয়ুম মুকুল (এখন প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক)। পরে সম্পাদক হন অজয় দাশগুপ্ত (একুশে পদকপ্রাপ্ত সিনিয়র সাংবাদিক)। ছাত্র ইউনিয়ন কেন্দ্রীয় নেতাদের কয়েকজনকে নিয়ে একটি সম্পাদকীয় বোর্ড ছিল। এ ছাড়া চার-পাঁচজনের একটি টিম জয়ধ্বনি প্রকাশের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, সবাই ছাত্র। আমি যাদের পেয়েছি, তাঁদের মধ্যে ছিলেন মনিরুজ্জান লস্কর বাদল, তাঁর ভাই জুয়েল, আ ক ম নূর হোসেন। আজকের পত্রিকার সম্পাদক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ড. মো. গোলাম রহমানও আমাদের টিমে ছিলেন। সব মিলিয়ে কি জমজমাট সময় ছিল তখন। ১০ পুরানা পল্টন ছিল আমাদের কাছে নেশার মতো। দিনে এক চক্কর না দিলে পেটের ভাত হজম না হওয়ার অবস্থা।
২১/১ পুরানা পল্টনের (এখন কমরেড মণি সিংহ সড়ক) কমিউনিস্ট পার্টি অফিসও ছিল আমাদের আরেক বড় আকর্ষণ। আমরা বলতাম, বিপ্লবের লাল দুর্গ। যেখানে বসে মণি সিংহ, আব্দুস সালাম, খোকা রায়, অনিল মুখার্জি, জ্ঞান চক্রবর্তী, অজয় রায়, মোহাম্মদ ফরহাদ, সাইফউদ্দিন আহমেদ মানিক, মনজুরুল আহসান খান, নূরুল ইসলাম নাহিদ, মুজাহিদুল ইসলাম সেলিমেরা হৃদয়ের উত্তাপ দিয়ে বিপ্লবের বাষ্প তৈরি করে সারা দেশে ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টারত। সে বাষ্পতাপ একবার শরীরে না নিয়ে কি হলে ফেরা যায়? কমিউনিস্ট পার্টি অফিস এখনো ২১/১ নম্বরে থাকলেও আগের অবস্থায় নেই। যেমন আগের অবস্থায় নেই আমি, আমার মতো আরও অনেকে। কমিউনিস্ট পার্টির একতলা হলুদ বাড়িটি এক সময় বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক-প্রগতিশীল আন্দোলনের প্রধান ঠিকানায় পরিণত হয়েছিল। এখন মাঝখানে দেয়াল তুলে দুদিকে দুই বিরাট ভবন তৈরি হয়েছে। একদিকে কমিউনিস্ট পার্টি, অন্যদিকে সাবেক কমিউনিস্টরা মণি সিংহ ও মোহাম্মদ ফরহাদের নামে ট্রাস্ট গঠন করে দখলিস্বত্ব কায়েম করে আছেন। ঠিকানা আছে অপরিবর্তিত, শুধু যাওয়া-আসা কমেছে পুরনো মানুষদের। নতুনদের আনাগোনাও কি খুব বেড়েছে? জানি না।
ছাত্র ইউনিয়ন অফিসের সঙ্গে লাগোয়া ছিল মরণচাঁদের মিষ্টির দোকান, ওই দোকান এখনো আছে। তখন ছাত্র ইউনিয়ন অফিস থেকে বের হয়ে মরণচাঁদ পার হতে গিয়ে দোকানের ভেতর কাচঘেরা আলমারিতে থরে থরে সাজানো বিভিন্ন রকম মিষ্টির থালা দেখে মনে হতো, আহ, সব পদের একটি করে মিষ্টি যদি খেতে পারতাম! পকেটে হাত দিয়ে মনের ইচ্ছাটা চাপা দিতাম। ছাত্র ইউনিয়ন অফিসের উল্টোদিকে রাস্তার ওপারে ছিল তখনকার খুব নামকরা ফ্ল্যামিঙ্গো রেস্টুরেন্ট। আমাদের কেউ কেউ, বিশেষ করে যাদের মেয়ে বন্ধু ছিল, তাদের একটু বেশি যাতায়াত ছিল ফ্ল্যামিঙ্গোতে। নিজের পয়সায় ফ্ল্যামিঙ্গো যাওয়ার সাধ্য আমার ছিল না। তবে কোনো না কোনো বন্ধুর সৌজন্যে ফ্ল্যামিঙ্গোতে গিয়েছি। বিশেষ করে মনে আছে কথাসাহিত্যিক শওকত ওসমান কমপক্ষে দুদিন আমাকে এবং তানভীরকে (তানভীর মোকাম্মেল, একুশে পুরস্কারপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র নির্মাতা) ফ্ল্যামিঙ্গোতে নিয়ে খাইয়েছিলেন, বেশ কিছু সময় আড্ডায় মেতে ছিলেন। তানভীর ঢাকা কলেজে শওকত ওসমানের সরাসরি ছাত্র ছিলেন। ছাত্রকে নিয়ে রেস্টুরেন্টে শিক্ষকের আড্ডা—হ্যাঁ, শওকত ওসমান অমনই ছিলেন।
কমিউনিস্ট পার্টি অফিসের আগেই ছিল ম্যান্ডারিন নামের চাইনিজ রেস্টুরেন্ট। প্রথম দিকে শুধু বাইরে দাঁড়িয়ে ভেতরের দৃশ্য কল্পনা করতাম। আর মনকে এই বলে সান্ত্বনা দিতাম যে, আমরা হলাম মস্কোপন্থী, চাইনিজ খাবারে আমাদের লোভ থাকতে নেই! চাইনিজ খাওয়া হয়েছিল প্রথম সম্ভবত বন্ধু মহসিন আলীর কল্যাণে। মহসিন এখন ওয়েভ নামের একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার প্রধান নির্বাহী।
১৯৭৫ সালে বাকশাল গঠনের পর দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বদলে যেতে থাকে। ১৫ আগস্টের নারকীয় হত্যাকাণ্ড পরিস্থিতি আমূল পাল্টে দেয়। পরে জিয়াউর রহমানের সময় রাজনৈতিক কার্যক্রম শুরু হলেও পুরানা পল্টনে ছাত্র ইউনিয়ন অফিস আর ফিরে পাওয়া যায়নি। তখন ছাত্র ইউনিয়ন অফিস নেওয়া হয়েছিল হোসনি দালানে। জিয়া অবশ্য কমিউনিস্ট পার্টি অফিস পার্টিকে ফেরত দিয়েছিলেন। সে সময় পার্টির নমনীয় নীতির পুরস্কার হিসেবেই পার্টি অফিস ফেরত পাওয়া হয়েছিল কিনা, তা অবশ্য এখনো পরিষ্কার নয়।
২১/১-এ আমাদের সময় কেটেছে তুলনামূলকভাবে বেশি। আমিতো ১৯৭৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে এসে মোহাম্মদ ফরহাদের সৌজন্যে কমিউনিস্ট পার্টি অফিসে সপ্তাহখানেক রাতও কাটিয়েছি। তখন শেখরদা (শেখর দত্ত) পার্টি অফিসেই থাকতেন। আমি ফরহাদ ভাইয়ের এলাকা থেকে আসায় একটু বাড়তি খাতির পেয়েছিলাম বলে মনে হয়। তখন আমাদের মনে কত আশা, কত স্বপ্ন। দেশে বিপ্লব হবে। সমাজতন্ত্র কায়েম হবে। কত মিছিল। কত স্লোগান—‘কেউ খাবে আর কেউ খাবে না, তা হবে না তা হবে না’, ‘ভাত-কাপড়-জমি-কাজ, কমিউনিস্ট পার্টির এক আওয়াজ’, ‘আমার ভোট আমি দেব, যাকে খুশি তাকে দেব’। মণি সিংহের বজ্রদীপ্ত ঘোষণা—বাংলাদেশ হবে ১৫তম সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র। কত আয়োজন। কত প্রস্তুতি। কত সংগঠন। কত সংগঠক। কত বন্ধু। কত চেনা মুখ। ম হামিদ, শহীদুল ইসলাম বাদল, অজয় দাশগুপ্ত, বিধান বিশ্বাস, আ ক ম জাহাঙ্গীর, কামালউদ্দিন আহমেদ, কাজী আকরাম হোসেন, মুহম্মদ হিলালউদ্দিন, কামরুল আহসান খান, খায়রুল আহসান খান, মৃণাল সরকার, সুরেশ দত্ত, মনীরুজ্জামান লস্কর বাদল, খন্দকার শওকত হোসেন জুলিয়াস, শওকাত হোসেন, নিতাই দাস, খন্দকার ফারুক, আনোয়ারুল হক, রঞ্জন কর্মকার, নুরুল ইসলাম, জীবন সাহা, সুলতান আহমেদ, মিজানুর রহমান চৌধুরী, মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, তাহেরউল্লাহ, আরিফুল হক কাবুল, মোসলেহউদ্দিন, নাসিরউদ্দোজাসহ আরও কত নাম স্মৃতির পাতায় ভাসছে। একসঙ্গে কাজ করার সৌভাগ্য হয়েছে বর্তমানে খ্যাতিমান অর্থনীতিবিদ ড. নজরুল ইসলাম, ড. বিনায়ক সেন, ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, ড. মোস্তাফিজুর রহমান, অধ্যাপক ড. এম এম আকাশসহ আরও কতজনের সঙ্গে। আমাদের যারা আরও সিনিয়র কিংবা পদধারী বড় নেতা, তাঁদের নামতো উল্লেখই করলাম না। একপর্যায়ে কমিউনিস্ট পার্টির কত প্রভাব। আওয়ামী লীগ, বিএনপির মতো বড় দলের নেতারাও এসে ধরনা দিচ্ছেন কমিউনিস্ট পার্টি অফিসে। এরশাদবিরোধী আন্দোলনের চালকের আসনে যেন মোহাম্মদ ফরহাদ, কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক। আমাদের বুকে কত বল। কত ভরসা।
অকস্মাৎ বজ্রপাত হলো। আমরা বিহ্বল হলাম। চিকিৎসার জন্য মস্কো গিয়ে মোহাম্মদ ফরহাদ ফিরে এলেন শব হয়ে। নক্ষত্রের পতন হলো। অসুস্থ হয়ে শয্যাগত কিংবদন্তি কমিউনিস্ট নেতা মণি সিংহ। এত তারা আকাশে। অথচ সব কেমন নিষ্প্রুভ মনে হতে লাগল। কী থেকে কী হয়ে গেল। যে সোভিয়েত ইউনিয়নের সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব এ দেশসহ দেশে দেশে অসংখ্য মানুষকে বিপ্লবের মন্ত্রে দীক্ষিত করে তুলেছিল, সেই মহাপরাক্রমশীল রাষ্ট্র সোভিয়েত ইউনিয়ন তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ল। আমাদের দেশের কমিউনিস্ট নেতারাও মুখ থুবড়ে পড়লেন। আমার মনে হয়, আমাদের নেতারা ছিলেন সোভিয়েতঅন্ধ। অন্ধের হাতে ওয়াকিং স্টিক তুলে না দিয়ে সোভিয়েতের ভেঙে পড়ায় তাঁরা বিভ্রমে পড়েন এবং এত এত মানুষের আত্মদান, রক্ত, ত্যাগে গড়া পার্টিটা হুড়মুড় করে ভেঙে দিলেন। ঐতিহাসিক আপসরফায় পার্টি অফিসে দেয়াল তুলে দিলেন। একদিকে আদি কমিউনিস্টরা লাল ঝান্ডা উড়িয়ে জানান দিচ্ছেন—‘সব শেষ হয়ে যায়নি। মানুষের শোষণ মুক্তির আশা জেগে থাকবেই। লড়াই জারি রহে গা।’
অন্যদিকে মণি সিংহ-মোহাম্মদ ফরহাদ স্মৃতি ট্রাস্ট। প্রবাদপ্রতিম দুই কমিউনিস্টের নাম জড়িয়ে যারা ট্রাস্ট করলেন, তাঁরা আর নিজেদের কমিউনিস্ট বলে পরিচয় দেন না। হায়, এক জীবনে কত কী দেখছি। কী চেয়ে কী পেলাম! কাদের হাতে আমরা আমাদের ভাগ্য সঁপে দিয়ে জীবনের শ্রেষ্ঠ সময়গুলো বিলিয়ে দিলাম! এখন আর পুরানা পল্টনের দিকে খুব একটা যাওয়া হয় না। তবে ফেলে আসা দিনগুলোর জন্য মন কেমন করাটা কাটাতে পারি না। যে পার্টি অফিসে প্রাণ খুলে আড্ডা দিয়েছি, নানা তর্ক-বিতর্কে অংশ নিয়েছি, সেখানে যেতে এখনো মন চায়। কিন্তু এ ভেবে অস্বস্তি বোধ করি, আমি যে আর কমিউনিস্ট নেই। মার্কসবাদকে আমি আর সব রোগের মহৌষধ মনে করি না। যারা মার্কসবাদে আস্থা রেখে বিপ্লবের স্বপ্ন এখনো জাগিয়ে রেখেছেন, তাঁদের কাছে আমি যে আর বন্ধু নই। তাঁরা বিশ্বাসী, তারা মহৎ। আমি বিশ্বাস রাখতে ব্যর্থ হয়েছি। আমার চিত্ত দুর্বল। তবে আমি বিত্তবৈভবের পেছনে ছুটিনি। সৎভাবে জীবনরক্ষার সংগ্রামে লিপ্ত। আমার চেয়ে অধম আর কে হতে পারে! বিশ্বাসে মিলায় বস্তু, তর্কে বহু দূর।
পৃথিবীর রং নাকি আবার বদলাবে। মানুষের শোষণ মুক্তির স্বপ্ন মিথ্যা নয়। আশায় বুক বাঁধি। কিন্তু হতাশার কারণই বেশি ঘটতে দেখি। দুনিয়াব্যাপী ধর্মোন্মাদনার ঝড়ো হাওয়া। থামানোর পথ দেখা যাচ্ছে কি? কান পেতে শোনার চেষ্টা করি কালের ঘণ্টাধ্বনি। কাল বহমান। নিরবধি গতিময়। সবকিছু ভেসে যায়–জীবন, যৌবন, ধন, মান। থাকে তবে কী? ‘থাকে শুধু অন্ধকার’, ‘দু’দণ্ড শান্তি’ দেওয়ার ও ‘মুখোমুখি বসিবার নাটোরের বনলতা সেন’!
পল্টন যদি আমাদের আবার এক করতে পারত! আছে কোনো জাদুরকাঠি?
লেখক: সহকারী সম্পাদক, আজকের পত্রিকা
কাশ্মীরের বুক চিরে বয়ে চলেছে ঝিলাম নদী। কাশ্মীর উপত্যকা হলো ঝিলামের উত্তর ভাগের অংশ। উপত্যকাটি ১৩৭ কিলোমিটার লম্বা এবং ৩০ থেকে ৪০ কিমি চওড়া। নৈসর্গিক সৌন্দর্যের কারণে কাশ্মীরকে বলা হয় ভূস্বর্গ। এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আকর্ষণে সেখানে অনেকে বেড়াতে যান। ১৯৪৭ সালের আগে কেউ ভাবতে পারেননি যে কাশ্মীর হয়ে
৮ ঘণ্টা আগেসমাজের ধনী গরিব বৈষম্যের দূরত্বটাকে কমিয়ে, সম্পদের অধিকতর সুষম বণ্টন নিশ্চিত করে, একটি সুখী বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন নিয়ে মানুষের মৌলিক চাহিদা সম্পন্ন পণ্যের মূল্য নির্ধারণে একটি নতুন প্রস্তাবনা পেশ করছি। প্রথমেই বলে রাখি, এই উদ্যোগটি হবে সীমিত আকারের এবং এর সাফল্যের ভিত্তিতে এটি সারা বাংলাদেশে ছড়িয়ে
৯ ঘণ্টা আগেরাখাইনে মানবিক করিডরের প্রস্তাব বাংলাদেশের জন্য একদিকে মানবিক দায়িত্ব পালনের সুযোগ, অন্যদিকে চরম ভূ-রাজনৈতিক ঝুঁকি। মিয়ানমারের জান্তা, বিদ্রোহী গোষ্ঠী ও ভারত-চীনের প্রতিক্রিয়া না বুঝে করিডর চালু করলে তা ‘প্রক্সি যুদ্ধের ফাঁদে’ পরিণত হতে পারে। ভারতের কালাদান প্রকল্প ও চীনের ২১ বিলিয়ন ডলারের
১১ ঘণ্টা আগেসহজ কথা বলা যেমন সহজ নয়, তেমনি সহজ নয় আমাদের দেশে রাজনৈতিক বিষয়ে একমত হওয়া। আমাদের দেশে যত মাথা, তত মত—যে যার মতে অটল, নিজের বক্তব্যে অনড়। ফলে এখানে একটি সিদ্ধান্তে পৌঁছানোই যেন যুদ্ধ জয়ের সমান। রাজনীতি তো আর গণিতের সূত্র নয়, যেখানে সবাই একই জবাব মেনে নেবে; এখানে আবেগ, স্বার্থ, বিশ্বাস আর...
২০ ঘণ্টা আগে