Ajker Patrika

চাল রপ্তানিতে নতুন শর্ত দিল ভারত, বাংলাদেশে কতটা প্রভাব পড়বে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০১: ৩৩
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

বাসমতী ছাড়া অন্যান্য চাল রপ্তানিতে এবার নতুন শর্ত জুড়ে দিয়েছে ভারত। দেশটির বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীন বৈদেশিক বাণিজ্য মহাপরিচালকের দপ্তর (ডিজিএফটি) গতকাল বুধবার (২৪ সেপ্টেম্বর) এক প্রজ্ঞাপনে নন-বাসমতী চালের রপ্তানি নীতিতে এ পরিবর্তন আনে। এর ফলে এখন থেকে নন-বাসমতী চাল রপ্তানির প্রতিটি চুক্তি ভারতের কৃষি ও প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্য রপ্তানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (এপিইডিএ) কাছে নিবন্ধন করতে হবে।

ভারতীয় সংবাদ সংস্থা এএনআইয়ের প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, এর আগে নন-বাসমতী চাল রপ্তানি ছিল ‘মুক্ত’ ক্যাটাগরির আওতায়। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এটি এখন ‘শর্তসাপেক্ষ অনুমোদিত’ পণ্য হিসেবে গণ্য হবে।

বাংলাদেশের বাজারে ভারতের নন-বাসমতী চালের একটি বড় অংশ যায়। গত অর্থবছরে ছয় লাখ টন চাল আমদানির অনুমোদন দেয় বাংলাদেশ সরকার। আমদানি করা এই চালের সিংহভাগই এসেছিল ভারত থেকে। তাই ভারতের নতুন শর্তে চাল আমদানিতে নতুন করে বাধা সৃষ্টি হতে পারে, যা আমদানিতে প্রভাব ফেলবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। তবে এর প্রভাব বাংলাদেশের চালের বাজারে কতটা পড়বে, তা এখনো স্পষ্ট নয়।

ভারতের রপ্তানিকারক ফেডারেশনের (আইআরইএফ) সভাপতি ও শ্রীলাল মহল গ্রুপের চেয়ারম্যান প্রেম গর্গ এ সিদ্ধান্তকে ঐতিহাসিক পদক্ষেপ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, এত দিন শুধু বাসমতী চাল রপ্তানিতেই নিবন্ধন বাধ্যতামূলক ছিল। এখন নন-বাসমতী চালও একই কাঠামোর আওতায় আসায় রপ্তানি নীতিতে সমতা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত হবে।

সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, প্রতি টন নন-বাসমতী চাল রপ্তানি চুক্তি নিবন্ধনে ৮ রুপি ফি দিতে হবে। ভারত প্রতিবছর ১ কোটি ৬০ লাখ থেকে ১ কোটি ৭০ লাখ টন নন-বাসমতী চাল রপ্তানি করে থাকে। ফলে নতুন এ ব্যবস্থায় বছরে ১০০ কোটি রুপির বেশি রাজস্ব আসবে।

বিশ্লেষকদের মতে, নন-বাসমতী চাল দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিকভাবে সংবেদনশীল পণ্য। হঠাৎ করে নীতি পরিবর্তনের কারণে এর আগে বহু রপ্তানিকারক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।

এদিকে এমন এক সময় ভারত চাল রপ্তানিতে নতুন শর্ত দিল, যখন ভারতের সরকারি গুদামগুলোতে চাল ও গমের মজুত নতুন রেকর্ডে পৌঁছেছে। সরকারি তথ্য বলছে, ১ সেপ্টেম্বর নাগাদ চালের মজুত গত বছরের তুলনায় ১৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ৪৮ দশমিক ২ মিলিয়ন টনে দাঁড়িয়েছে। এটি জুলাই মাসের সরকারের লক্ষ্য সাড়ে ১৩ মিলিয়ন টনের চেয়ে অনেক বেশি। একই সঙ্গে গমের মজুত ৩৩ দশমিক ৩ মিলিয়ন টনে পৌঁছেছে, যা চার বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি এবং সরকারের লক্ষ্য ২৭ দশমিক ৬ মিলিয়ন টনের চেয়ে অনেক বেশি।

বাংলাদেশ একসময় চাল আমদানির জন্য ভারতের ওপর অনেক বেশি নির্ভরশীল থাকলেও এখন অন্যান্য দেশ থেকেও আমদানি করে। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বাংলাদেশ ১৩ লাখ টন চাল আমদানি করেছে, যা ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। এর আগে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৯ দশমিক ৭ লাখ টন চাল আমদানি হয়েছিল।

চলতি অর্থবছরে ভারত থেকে ৮ লাখ টন চাল আমদানি করেছে বাংলাদেশ, যা ভারতের মোট ১৪ দশমিক ১৩ মিলিয়ন টন নন-বাসমতী চাল রপ্তানির ৫ দশমিক ৫ শতাংশ। ২০২১-২২ অর্থবছরে এর পরিমাণ ছিল ১৬ দশমিক ২ লাখ টন, যা সে বছরের রপ্তানির ১০ শতাংশ। যদিও ভারত সরকার বলছে, চাল রপ্তানিতে নতুন শর্তের অর্থ রপ্তানিতে স্বচ্ছতা ও দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা। তবে আশঙ্কা করা হচ্ছে, এর ফলে বাংলাদেশসহ অন্য যেসব দেশ ভারত থেকে চাল আমদানি করে, তাদের ওপর প্রভাব পড়তে পারে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত