সৃষ্টি মাহমুদ
দেশের দু’টি সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ—ঢাকা ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রশিবিরের অভাবনীয় উত্থান সাম্প্রতিক ছাত্রসংসদ নির্বাচনে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। যে সংগঠনটি অতীতে রাজনৈতিক সহিংসতা, সন্ত্রাস ও সাম্প্রদায়িক রাজনীতির কারণে নিষিদ্ধ ছিল, তারাই কীভাবে এত সংখ্যক পদে জয়ী হলো—এই প্রশ্ন শিক্ষিত সমাজকে ভাবিয়ে তুলেছে।
ধারণা ছিল, ছাত্রলীগের অনুপস্থিতিতে ছাত্রদল সর্ববৃহৎ শক্তি হয়ে উঠবে। আবার বাগছাস বা বামপন্থী জোটও উল্লেখযোগ্য সাফল্য পাবে বলে মনে করা হচ্ছিল। কিন্তু বাস্তবে ছাত্রদল ও বামজোটের ভরাডুবি হয়েছে। ফলাফলের পেছনে অনিয়মের অভিযোগ থাকলেও অধিকাংশ বিশ্লেষণ বলছে, শিবির দীর্ঘদিনের প্রস্তুতি, সংগঠিত প্রচার ও কৌশলগত অবস্থানের সুবিধা নিয়েছে।
শিবির সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও ইন্টারনেটে শক্তিশালী উপস্থিতি গড়ে তুলেছে। ছাত্রলীগের পতনের পর তারা নিজেদের ‘সাধারণ শিক্ষার্থী’ নামে প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়। নানা অরাজনৈতিক কার্যক্রম, কমিটি, সাংস্কৃতিক আয়োজন, এমনকি ব্যক্তিগত সহায়তা (টাকা, টিউশনি, বেতন) দিয়ে শিক্ষার্থীদের আস্থা অর্জন করেছে। মেজবান, উপঢৌকন বিতরণ থেকে শুরু করে প্রশাসনের সঙ্গে আঁতাত—সবই তাদের প্রভাব বিস্তারে ভূমিকা রেখেছে।
তাদের আরেকটি কৌশল ছিল অন্তর্ভুক্তিমূলক রূপ তৈরি করা। প্রার্থীদের মধ্যে মেধাবী, পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির তরুণদের পাশাপাশি নারী প্রার্থী ও সংখ্যালঘু শিক্ষার্থীও ছিল। ফলে তারা ‘মধ্যপন্থী’ ও আধুনিক ইমেজ তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছে। অন্যদিকে ছাত্রদল সাংগঠনিক দুর্বলতা ও অতীতের নেতিবাচক ভাবমূর্তির কারণে শিক্ষার্থীদের আস্থা অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে।
প্রশ্ন উঠছে, শিক্ষার্থীরা কেন শিবিরকে ভোট দিল? সব শিক্ষার্থী শিবিরের আদর্শের সমর্থক নয়। তারপরও তাদের জয়ের অর্থ হলো কর্মী-সমর্থকের বাইরে থেকেও শিবির ভোট পেয়েছে। অথচ এই সংগঠনের অতীত ইতিহাস ছাত্রদলের চেয়ে কম কলঙ্কিত নয়। আশি-নব্বই দশকে ‘রগ কাটা’, প্রতিপক্ষ হত্যা, হল দখল, বিশ্ববিদ্যালয় দখল—এসবই ছিল তাদের রাজনীতির অংশ। ঢাকা ও জাহাঙ্গীরনগরে শিক্ষার্থীদের দাবিতেই শিবির নিষিদ্ধ করা হয়েছিল।
জামায়াত-শিবিরের জাতীয় রাজনীতির ইতিহাসও বিতর্কিত। ১৯৭১ সালে তারা পাকিস্তানি বাহিনীর সহযোগী হয়ে গণহত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগে জড়িত ছিল। স্বাধীনতার পরও তারা সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ও সন্ত্রাস চালিয়েছে। অথচ আজ তারা নতুন সাজে হাজির হয়ে শিক্ষার্থীদের ভোট পেতে সক্ষম হয়েছে!
এখানে শুধু ছাত্রদল বা বামজোটের ব্যর্থতাই দায়ী নয়। বাংলাদেশের মূলধারার রাজনৈতিক দলগুলো—বিএনপি, আওয়ামী লীগ ও বামপন্থীরা—ক্ষমতার রাজনীতির চক্রে পড়ে নিজেদের আদর্শ দুর্বল করেছে। জামায়াতের সঙ্গে জোট বেঁধেছে, নির্বাচনে সহযোগিতা করেছে, ফলে তাদের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নেওয়ার নৈতিক ভিত্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে শিবির বৈধতা পেয়েছে, আবার জনগণের চোখে অন্য দলগুলোর ভাবমূর্তিও ক্ষুণ্ন হয়েছে।
আরেকটি কারণ সাংগঠনিক দুর্বলতা ও বিভাজন। প্রধান দলগুলো অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব, দুর্নীতি ও ব্যক্তিস্বার্থে নিমজ্জিত। এর ফলে তারা আদর্শিক রাজনীতিকে দুর্বল করেছে, আর শিবির সংগঠিত থেকে সুযোগ নিয়েছে।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, আমাদের তরুণ প্রজন্ম ইতিহাস ও ঐতিহ্য সম্পর্কে যথেষ্ট অবগত নয়। পরিবার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও গণমাধ্যম তাদেরকে শিবিরের অতীত সম্পর্কে সচেতন করতে ব্যর্থ হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, মোবাইল সংস্কৃতি ও ব্যক্তিকেন্দ্রিকতার প্রভাবে তারা সহজেই সংগঠিত গোষ্ঠীর প্রভাবের শিকার হচ্ছে। সংখ্যায় কম হলেও একটি সংগঠিত দল সমাজে বড় প্রভাব ফেলতে পারে—এ সত্য আমরা উপেক্ষা করেছি।
ঢাকা ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে শিবিরের জয় হঠাৎ কোনো ঘটনা নয়। দীর্ঘ প্রস্তুতি, সংগঠিত উপস্থিতি এবং প্রতিদ্বন্দ্বীদের দুর্বলতার ফাঁক গলেই তারা উঠেছে। তবে এ শুধু ছাত্রদল বা বামজোটের ব্যর্থতা নয়, বরং আমাদের সামগ্রিক শিক্ষা, সামাজিক ও রাজনৈতিক ব্যর্থতার প্রতিফলন। পরিবার থেকে শুরু করে রাষ্ট্র পর্যন্ত সচেতনতা ও আদর্শিক দৃঢ়তা না এলে শিবিরের মতো গোষ্ঠীর উত্থান ঠেকানো সম্ভব নয়।
লেখক: লেখক ও গবেষক
দেশের দু’টি সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ—ঢাকা ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রশিবিরের অভাবনীয় উত্থান সাম্প্রতিক ছাত্রসংসদ নির্বাচনে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। যে সংগঠনটি অতীতে রাজনৈতিক সহিংসতা, সন্ত্রাস ও সাম্প্রদায়িক রাজনীতির কারণে নিষিদ্ধ ছিল, তারাই কীভাবে এত সংখ্যক পদে জয়ী হলো—এই প্রশ্ন শিক্ষিত সমাজকে ভাবিয়ে তুলেছে।
ধারণা ছিল, ছাত্রলীগের অনুপস্থিতিতে ছাত্রদল সর্ববৃহৎ শক্তি হয়ে উঠবে। আবার বাগছাস বা বামপন্থী জোটও উল্লেখযোগ্য সাফল্য পাবে বলে মনে করা হচ্ছিল। কিন্তু বাস্তবে ছাত্রদল ও বামজোটের ভরাডুবি হয়েছে। ফলাফলের পেছনে অনিয়মের অভিযোগ থাকলেও অধিকাংশ বিশ্লেষণ বলছে, শিবির দীর্ঘদিনের প্রস্তুতি, সংগঠিত প্রচার ও কৌশলগত অবস্থানের সুবিধা নিয়েছে।
শিবির সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও ইন্টারনেটে শক্তিশালী উপস্থিতি গড়ে তুলেছে। ছাত্রলীগের পতনের পর তারা নিজেদের ‘সাধারণ শিক্ষার্থী’ নামে প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়। নানা অরাজনৈতিক কার্যক্রম, কমিটি, সাংস্কৃতিক আয়োজন, এমনকি ব্যক্তিগত সহায়তা (টাকা, টিউশনি, বেতন) দিয়ে শিক্ষার্থীদের আস্থা অর্জন করেছে। মেজবান, উপঢৌকন বিতরণ থেকে শুরু করে প্রশাসনের সঙ্গে আঁতাত—সবই তাদের প্রভাব বিস্তারে ভূমিকা রেখেছে।
তাদের আরেকটি কৌশল ছিল অন্তর্ভুক্তিমূলক রূপ তৈরি করা। প্রার্থীদের মধ্যে মেধাবী, পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির তরুণদের পাশাপাশি নারী প্রার্থী ও সংখ্যালঘু শিক্ষার্থীও ছিল। ফলে তারা ‘মধ্যপন্থী’ ও আধুনিক ইমেজ তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছে। অন্যদিকে ছাত্রদল সাংগঠনিক দুর্বলতা ও অতীতের নেতিবাচক ভাবমূর্তির কারণে শিক্ষার্থীদের আস্থা অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে।
প্রশ্ন উঠছে, শিক্ষার্থীরা কেন শিবিরকে ভোট দিল? সব শিক্ষার্থী শিবিরের আদর্শের সমর্থক নয়। তারপরও তাদের জয়ের অর্থ হলো কর্মী-সমর্থকের বাইরে থেকেও শিবির ভোট পেয়েছে। অথচ এই সংগঠনের অতীত ইতিহাস ছাত্রদলের চেয়ে কম কলঙ্কিত নয়। আশি-নব্বই দশকে ‘রগ কাটা’, প্রতিপক্ষ হত্যা, হল দখল, বিশ্ববিদ্যালয় দখল—এসবই ছিল তাদের রাজনীতির অংশ। ঢাকা ও জাহাঙ্গীরনগরে শিক্ষার্থীদের দাবিতেই শিবির নিষিদ্ধ করা হয়েছিল।
জামায়াত-শিবিরের জাতীয় রাজনীতির ইতিহাসও বিতর্কিত। ১৯৭১ সালে তারা পাকিস্তানি বাহিনীর সহযোগী হয়ে গণহত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগে জড়িত ছিল। স্বাধীনতার পরও তারা সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ও সন্ত্রাস চালিয়েছে। অথচ আজ তারা নতুন সাজে হাজির হয়ে শিক্ষার্থীদের ভোট পেতে সক্ষম হয়েছে!
এখানে শুধু ছাত্রদল বা বামজোটের ব্যর্থতাই দায়ী নয়। বাংলাদেশের মূলধারার রাজনৈতিক দলগুলো—বিএনপি, আওয়ামী লীগ ও বামপন্থীরা—ক্ষমতার রাজনীতির চক্রে পড়ে নিজেদের আদর্শ দুর্বল করেছে। জামায়াতের সঙ্গে জোট বেঁধেছে, নির্বাচনে সহযোগিতা করেছে, ফলে তাদের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নেওয়ার নৈতিক ভিত্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে শিবির বৈধতা পেয়েছে, আবার জনগণের চোখে অন্য দলগুলোর ভাবমূর্তিও ক্ষুণ্ন হয়েছে।
আরেকটি কারণ সাংগঠনিক দুর্বলতা ও বিভাজন। প্রধান দলগুলো অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব, দুর্নীতি ও ব্যক্তিস্বার্থে নিমজ্জিত। এর ফলে তারা আদর্শিক রাজনীতিকে দুর্বল করেছে, আর শিবির সংগঠিত থেকে সুযোগ নিয়েছে।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, আমাদের তরুণ প্রজন্ম ইতিহাস ও ঐতিহ্য সম্পর্কে যথেষ্ট অবগত নয়। পরিবার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও গণমাধ্যম তাদেরকে শিবিরের অতীত সম্পর্কে সচেতন করতে ব্যর্থ হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, মোবাইল সংস্কৃতি ও ব্যক্তিকেন্দ্রিকতার প্রভাবে তারা সহজেই সংগঠিত গোষ্ঠীর প্রভাবের শিকার হচ্ছে। সংখ্যায় কম হলেও একটি সংগঠিত দল সমাজে বড় প্রভাব ফেলতে পারে—এ সত্য আমরা উপেক্ষা করেছি।
ঢাকা ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে শিবিরের জয় হঠাৎ কোনো ঘটনা নয়। দীর্ঘ প্রস্তুতি, সংগঠিত উপস্থিতি এবং প্রতিদ্বন্দ্বীদের দুর্বলতার ফাঁক গলেই তারা উঠেছে। তবে এ শুধু ছাত্রদল বা বামজোটের ব্যর্থতা নয়, বরং আমাদের সামগ্রিক শিক্ষা, সামাজিক ও রাজনৈতিক ব্যর্থতার প্রতিফলন। পরিবার থেকে শুরু করে রাষ্ট্র পর্যন্ত সচেতনতা ও আদর্শিক দৃঢ়তা না এলে শিবিরের মতো গোষ্ঠীর উত্থান ঠেকানো সম্ভব নয়।
লেখক: লেখক ও গবেষক
যশোর-খুলনা অঞ্চলের দুঃখ বলা হয় ভবদহকে। কারণ, প্রায় চার দশক ধরে এ অঞ্চলের লাখ লাখ মানুষ এক অভিশপ্ত জলাবদ্ধতার শিকার। বছরের অধিকাংশ সময়ই তারা পানির মধ্যে নিমজ্জিত থাকে। বিভিন্ন সরকারের আমলে জলাবদ্ধতা নিরসনে নানা প্রকল্প গ্রহণ করা হলেও কোনোটাই তাদের জীবনে স্বস্তি বয়ে আনেনি।
১৯ ঘণ্টা আগেডোনাল্ড ট্রাম্পের উত্থানের পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে অশালীন ভাষার ক্রমবর্ধমান ব্যবহার দেখা যাচ্ছে। এ নিয়ে অনেকের বিস্ময়, অস্বস্তি ও অসন্তোষ দৃশ্যমান। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ভুল ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মিথ্যা তথ্যের ছড়াছড়ি, মিথ্যা বয়ান। এর বিপরীতে ফ্যাক্টচেকারদের ক্যারিয়ারেরও উত্তরোত্তর উন্নতি ঘটছে।
১৯ ঘণ্টা আগেকাতারের আকাশে সেই রাতের নীরবতা হঠাৎই ভেঙে গেল এক ভয়ংকর বিস্ফোরণের গর্জনে। দোহায় হামাসের এক শীর্ষ নেতাকে লক্ষ্য করে ইসরায়েলের ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ যেন শুধু একটি বাড়ি নয়, ভেঙে দিল গোটা মধ্যপ্রাচ্যের দীর্ঘদিনের নিরাপত্তা-সমীকরণের দেয়াল। কাতার—যে নগরী এত দিন কূটনৈতিক আলোচনার মঞ্চ ছিল...
১৯ ঘণ্টা আগেগাজার বোমা আর ক্ষুধার ঘায়ে জর্জরিত ফিলিস্তিনিদের ক্ষতে ক্ষণিকের হলেও স্বস্তির পরশ দিচ্ছে তাদের রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পথে স্বীকৃতির ‘ঘনঘটা’। ইতিহাসের পরিহাস, স্বীকৃতিদাতা কিছু দেশেরই অস্ত্রশস্ত্র, কূটনৈতিক সমর্থনে পুষ্ট হয়ে ফিলিস্তিনিদের পীড়ন করে এসেছে ক্ষমতাদর্পী ইসরায়েল। ইসরায়েল গাজার সাধারণ বাসিন্দাদ
২ দিন আগে