মহিউদ্দিন খান মোহন
সম্প্রতি দেশের সচেতন মহলে সরকারি আমলা বনাম রাজনীতিকদের দ্বন্দ্ব নিয়ে বেশ আলোচনা হচ্ছে। আলোচনার সূত্রপাত হয়েছে গত ২৮ জুন জাতীয় সংসদে কয়েকজন সিনিয়র সাংসদের আমলাদের সম্পর্কে উষ্মামিশ্রিত বক্তব্য দানের পর থেকে। তার রেশ এখনো চলছে। পত্রপত্রিকার কলামে, টিভির টক শোর আলোচনায় বিশিষ্টজনেরা এ বিষয়ে তাঁদের মতামত তুলে ধরছেন। নানাজনের মন্তব্য নানা রকম হলেও একটি বিষয়ে সবাই মোটামুটি একমত–রাষ্ট্র বা সরকার পরিচালনা করতে হলে আমলাদের যেমন প্রয়োজন রয়েছে, তেমনি সুযোগ পেয়ে তাঁরা যাতে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে না যান, সেদিকেও কড়া নজরদারি আবশ্যক।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, একটি গাড়ি রাস্তায় চালাতে হলে চালককে ইঞ্জিনের ওপরই নির্ভর করতে হয়। কেননা, ইঞ্জিনই গাড়ি সামনে বা পেছনে নিয়ে যেতে পারে। সেই ইঞ্জিন যদি চালকের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়, তার অনিবার্য পরিণতি দুর্ঘটনা। ঠিক তেমনি, রাষ্ট্র নামক গাড়িটিতে আমলারা ইঞ্জিনসম। রাষ্ট্র চালাতে তাঁদের অবশ্যই দরকার। তবে, স্টিয়ারিং থাকতে হবে রাজনীতিকদের হাতে। তাঁরা যাতে সহযোগী থেকে চালকের আসনে বসে না পড়েন, সেটা নিশ্চিত করার দায়িত্বও রাজনীতিকদেরই।
রাষ্ট্রযন্ত্রকে সুষ্ঠু ও গতিশীল রাখার জন্য আমলাদের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। কিন্তু আমাদের দেশে ছোট-বড় সব আমলাই ইদানীং কর্তৃত্বপরায়ণ রোগে আক্রান্ত। আমলারা যে শাসক নন, জনগণের সেবক–এটা যেন তাঁরা ভুলতে বসেছেন। একজন ইউএনও মনে করেন, তিনি তাঁর উপজেলার সর্বময় কর্তা। আর ডিসি মনে করেন, পুরো জেলাটাই তাঁর চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের তালুক। ফলে তাঁরা কাউকে পাত্তা দিতে চান না। জনপ্রতিনিধিরা তাঁদের কৃপাপ্রার্থী হয়ে কাজকর্ম করেন। ইউএনওর কাছে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানরা আজ্ঞাবাহীর মতো। উপজেলা চেয়ারম্যানদের তাঁরা মনে করেন উপদ্রব।
হাজার হাজার জনগণের ভোটে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের যখন এ অবস্থা, তখন সাধারণ মানুষের অবস্থা কী–তা বলে বোঝানোর দরকার পড়ে না। একজন সাংসদের স্থানীয় অফিস কিংবা বাড়িতে সাধারণ মানুষ সহজেই ঢুকতে পারলেও ইউএনও কিংবা ডিসি অফিসে প্রবেশাধিকার সংরক্ষিত। সেই পুরোনো আমলের জমিদারবাড়ির গেটে হাতজোড় করে দাঁড়িয়ে থাকার অবস্থা। অথচ সরকার আমলাদের নিয়োগ দেয় সংশ্লিষ্ট এলাকার জনগণের দেখভাল করার জন্য।
‘পাবলিক সার্ভেন্ট’ শব্দ দুটির সরল বাংলা প্রতিশব্দ দাঁড়ায় ‘জনগণের ভৃত্য’। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে এখন তাঁরা পরিণত হয়েছেন প্রভুতে। জনগণ অসহায়। আর ঊর্ধ্বতন আমলাদের কথা যত কম বলা যায় ততই ভালো। তাঁদের দর্শন পাওয়া তো মহা ভাগ্যের ব্যাপার। একটি কথা শুনতে খারাপ লাগলেও বলতে দ্বিধা নেই, আমলারা নিজেদের এখন সব ধরনের জবাবদিহির ঊর্ধ্বে এক বিশেষ শ্রেণির মনে করেন। তাঁরা মনে করেন, সরকার তাঁদের নিয়োগ দিয়েছে, তাঁরা যা খুশি করবেন–কেউ তাঁদের কিছু করতে পারবে না।
প্রশ্ন হলো, আমলারা কেন এমন কর্তৃত্বপরায়ণ হয়ে উঠলেন। সংবিধান অনুযায়ী মন্ত্রীরা মন্ত্রণালয়ের নির্বাহী প্রধান। কিন্তু কয়জন মন্ত্রী নির্বাহী প্রধানের মতো দায়িত্ব পালন করতে পারছেন–এ প্রশ্ন এড়িয়ে যাওয়ার উপায় নেই। আবার উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত প্রতিনিধি হলেও সেখানে নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে বসে আছেন ইউএনওরা। তেমনি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানরাও ‘উজিরে খামোখা’র মতো চেয়ারের শোভাবর্ধন করে আছেন।
সব ক্ষমতা ডিসি সাহেবের। মূলত এবার করোনাকালীন দুর্যোগে জেলায় সমন্বয়কারী হিসেবে সচিবদের দায়িত্ব দিয়ে সাংসদ তথা জনপ্রতিনিধিদের প্রকারান্তরে প্রশ্নের মুখোমুখি দাঁড় করানো হয়েছে। এ থেকে এটা অনুমিত হওয়া স্বাভাবিক যে, সাংসদদের ওপর খোদ সরকারেরই কোনো আস্থা নেই। আর এ থেকেই আমলারা নিজেদের সর্বেসর্বা ভাবার সুযোগ পেয়ে যাচ্ছেন। কেন আমলাদের এতটা বাড়বাড়ন্ত–এ নিয়ে বিশিষ্টজনেরা তাঁদের অভিমত ব্যক্ত করেছেন গণমাধ্যমে।
তাঁরা বলেছেন, প্রকৃতপক্ষে রাজনীতিকরাই নিজেদের এমন পর্যায়ে নিয়ে গেছেন যে, তাঁরা আমলাদের জবাবদিহি নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হচ্ছেন। এ কারণেই আমলারা কর্তৃত্ব করার সুযোগ পাচ্ছেন। এ প্রসঙ্গে সিপিবির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম সম্প্রতি একটি দৈনিকের সঙ্গে আলাপকালে বলেছেন, ‘আসলে দেশে এখন রাজনীতিবিদ বলে কিছু নেই, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিও নেই। সংসদে অধিকাংশই ব্যবসায়ী। আমলারা জানেন, এই জনপ্রতিনিধিরা কোন প্রক্রিয়ায় নির্বাচিত হয়েছেন। তাঁরা সত্যিকারের জনপ্রতিনিধি নন। জনগণও তাঁদের সঙ্গে নেই। এ কারণেই আমলারা তাঁদের মানছেন না।’
অন্যদিকে স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, ‘রাজনৈতিক সরকার যদি সত্যিকার অর্থে জনপ্রতিনিধিত্বশীল হয়, তাহলে কোনো অবস্থায়ই আমলাতন্ত্র জবাবদিহির ঊর্ধ্বে উঠে কর্তৃত্বপরায়ণ হয়ে উঠতে পারে না। সাংসদেরা তো আইনপ্রণেতা। তাঁরা কেন নির্বাহী কর্তৃত্ব চান? আবার স্থানীয় সরকারকে দুর্বল করতে সাংসদরাই আমলাদের কর্তৃত্ব দিতে ভূমিকা রাখেন। একটা আইন তৈরির সময় আমলারা যেভাবে বলেন, রাজনীতিবিদরা সেটাই মেনে নেন, অন্যসব মত অগ্রাহ্য করেন। (সূত্র: সমকাল, ৭ জুলাই ২০২১)।
বলা হয়ে থাকে, দেশের রাজনীতি এখন অরাজনৈতিক ব্যক্তিদের হাতে চলে গেছে। সেখানে প্রাধান্য বিস্তার করে আছেন ব্যবসায়ী আর সাবেক আমলারা। যাঁদের রাজনীতি করার কথা, তাঁরা নানা কারণে এ ময়দান থেকে দূরে। প্রায় সব কটি রাজনৈতিক দল সংসদ সদস্যপদে মনোনয়নের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেয় টাকাওয়ালাদের। সেই সঙ্গে কার কতটা পেশিশক্তি আছে–সেটাও যোগ্যতার একটি মাপকাঠি। ফলে প্রকৃত রাজনীতিক যাঁরা, তাঁরা মনোনয়ন লড়াইয়ে নকআউট হয়ে ছিটকে পড়ছেন রিংয়ের বাইরে। আর সাধু-অসাধু ব্যবসায়ী এবং সন্ত্রাসীদের গডফাদার কিংবা মাদক কারবারের সম্রাটরা দুই বাহু উঁচিয়ে নিজেদের বিজয়ী ঘোষণা করছেন। অরাজনৈতিক এসব ব্যক্তি যখন কোনো দপ্তর পেয়ে যান, তখন তাঁরা সচিব-আমলাদের ওপর পরিপূর্ণ নির্ভরশীল হয়ে পড়েন।
কখনো কখনো সমীহ করেন। তাঁরা সচিব-আমলাদের হুকুম দিতে পারেন না; বরং পরামর্শের ছদ্মাবরণে তাঁদের হুকুম তালিম করেন ঘাড় গুঁজে। রাজনীতি এবং প্রশাসন সম্বন্ধে অজ্ঞ এসব সাংসদ-মন্ত্রী সচিবদের ওপর কর্তৃত্ব করার অবকাশ পান না। এ কারণে আমলারা এসব সাংসদ-মন্ত্রীর আমলনামা পুরোটা সম্পর্কেই জ্ঞাত। তাঁরা জানেন কীভাবে এঁদের হ্যান্ডেল করতে হয়। এঁদের অনেকে আবার ব্যক্তিগত বা গোষ্ঠীগত স্বার্থ হাসিলের কাজে আমলাদের ব্যবহার করেন। একজন সাংসদ যখন ডিসি বা ইউএনওকে বলেন, আমার এই ছেলেগুলোকে দেখবেন, তখন ওই ডিসি-ইউএনও বুঝে যান, এমপি সাহেবের দুর্বলতা কোথায়। এর ফলে তিনি অবলীলায় সাংসদ-মন্ত্রীকে অবজ্ঞা করার দুঃসাহস দেখাতে পারেন।
এ কথা নিশ্চয়ই অত্যুক্তি হবে না যে, রাজনীতির মূলনীতি থেকে বিচ্যুত হয়ে রাজনীতিকেরা নিজেরাই নিজেদের পায়ে কুড়াল মেরেছেন। এখন আর তা নিয়ে হা-হুতাশ করে কী লাভ? কথায় আছে, বাঁশি হারিয়ে কি-তে ফুঁ দিলে সুর বেরোয় না। আমাদের রাজনীতিকেরা তাঁদের হাতের বাঁশি অনেক আগেই হারিয়ে ফেলেছেন।
লেখক: সাংবাদিক ও রাজনীতি বিশ্লেষক
সম্প্রতি দেশের সচেতন মহলে সরকারি আমলা বনাম রাজনীতিকদের দ্বন্দ্ব নিয়ে বেশ আলোচনা হচ্ছে। আলোচনার সূত্রপাত হয়েছে গত ২৮ জুন জাতীয় সংসদে কয়েকজন সিনিয়র সাংসদের আমলাদের সম্পর্কে উষ্মামিশ্রিত বক্তব্য দানের পর থেকে। তার রেশ এখনো চলছে। পত্রপত্রিকার কলামে, টিভির টক শোর আলোচনায় বিশিষ্টজনেরা এ বিষয়ে তাঁদের মতামত তুলে ধরছেন। নানাজনের মন্তব্য নানা রকম হলেও একটি বিষয়ে সবাই মোটামুটি একমত–রাষ্ট্র বা সরকার পরিচালনা করতে হলে আমলাদের যেমন প্রয়োজন রয়েছে, তেমনি সুযোগ পেয়ে তাঁরা যাতে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে না যান, সেদিকেও কড়া নজরদারি আবশ্যক।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, একটি গাড়ি রাস্তায় চালাতে হলে চালককে ইঞ্জিনের ওপরই নির্ভর করতে হয়। কেননা, ইঞ্জিনই গাড়ি সামনে বা পেছনে নিয়ে যেতে পারে। সেই ইঞ্জিন যদি চালকের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়, তার অনিবার্য পরিণতি দুর্ঘটনা। ঠিক তেমনি, রাষ্ট্র নামক গাড়িটিতে আমলারা ইঞ্জিনসম। রাষ্ট্র চালাতে তাঁদের অবশ্যই দরকার। তবে, স্টিয়ারিং থাকতে হবে রাজনীতিকদের হাতে। তাঁরা যাতে সহযোগী থেকে চালকের আসনে বসে না পড়েন, সেটা নিশ্চিত করার দায়িত্বও রাজনীতিকদেরই।
রাষ্ট্রযন্ত্রকে সুষ্ঠু ও গতিশীল রাখার জন্য আমলাদের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। কিন্তু আমাদের দেশে ছোট-বড় সব আমলাই ইদানীং কর্তৃত্বপরায়ণ রোগে আক্রান্ত। আমলারা যে শাসক নন, জনগণের সেবক–এটা যেন তাঁরা ভুলতে বসেছেন। একজন ইউএনও মনে করেন, তিনি তাঁর উপজেলার সর্বময় কর্তা। আর ডিসি মনে করেন, পুরো জেলাটাই তাঁর চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের তালুক। ফলে তাঁরা কাউকে পাত্তা দিতে চান না। জনপ্রতিনিধিরা তাঁদের কৃপাপ্রার্থী হয়ে কাজকর্ম করেন। ইউএনওর কাছে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানরা আজ্ঞাবাহীর মতো। উপজেলা চেয়ারম্যানদের তাঁরা মনে করেন উপদ্রব।
হাজার হাজার জনগণের ভোটে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের যখন এ অবস্থা, তখন সাধারণ মানুষের অবস্থা কী–তা বলে বোঝানোর দরকার পড়ে না। একজন সাংসদের স্থানীয় অফিস কিংবা বাড়িতে সাধারণ মানুষ সহজেই ঢুকতে পারলেও ইউএনও কিংবা ডিসি অফিসে প্রবেশাধিকার সংরক্ষিত। সেই পুরোনো আমলের জমিদারবাড়ির গেটে হাতজোড় করে দাঁড়িয়ে থাকার অবস্থা। অথচ সরকার আমলাদের নিয়োগ দেয় সংশ্লিষ্ট এলাকার জনগণের দেখভাল করার জন্য।
‘পাবলিক সার্ভেন্ট’ শব্দ দুটির সরল বাংলা প্রতিশব্দ দাঁড়ায় ‘জনগণের ভৃত্য’। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে এখন তাঁরা পরিণত হয়েছেন প্রভুতে। জনগণ অসহায়। আর ঊর্ধ্বতন আমলাদের কথা যত কম বলা যায় ততই ভালো। তাঁদের দর্শন পাওয়া তো মহা ভাগ্যের ব্যাপার। একটি কথা শুনতে খারাপ লাগলেও বলতে দ্বিধা নেই, আমলারা নিজেদের এখন সব ধরনের জবাবদিহির ঊর্ধ্বে এক বিশেষ শ্রেণির মনে করেন। তাঁরা মনে করেন, সরকার তাঁদের নিয়োগ দিয়েছে, তাঁরা যা খুশি করবেন–কেউ তাঁদের কিছু করতে পারবে না।
প্রশ্ন হলো, আমলারা কেন এমন কর্তৃত্বপরায়ণ হয়ে উঠলেন। সংবিধান অনুযায়ী মন্ত্রীরা মন্ত্রণালয়ের নির্বাহী প্রধান। কিন্তু কয়জন মন্ত্রী নির্বাহী প্রধানের মতো দায়িত্ব পালন করতে পারছেন–এ প্রশ্ন এড়িয়ে যাওয়ার উপায় নেই। আবার উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত প্রতিনিধি হলেও সেখানে নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে বসে আছেন ইউএনওরা। তেমনি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানরাও ‘উজিরে খামোখা’র মতো চেয়ারের শোভাবর্ধন করে আছেন।
সব ক্ষমতা ডিসি সাহেবের। মূলত এবার করোনাকালীন দুর্যোগে জেলায় সমন্বয়কারী হিসেবে সচিবদের দায়িত্ব দিয়ে সাংসদ তথা জনপ্রতিনিধিদের প্রকারান্তরে প্রশ্নের মুখোমুখি দাঁড় করানো হয়েছে। এ থেকে এটা অনুমিত হওয়া স্বাভাবিক যে, সাংসদদের ওপর খোদ সরকারেরই কোনো আস্থা নেই। আর এ থেকেই আমলারা নিজেদের সর্বেসর্বা ভাবার সুযোগ পেয়ে যাচ্ছেন। কেন আমলাদের এতটা বাড়বাড়ন্ত–এ নিয়ে বিশিষ্টজনেরা তাঁদের অভিমত ব্যক্ত করেছেন গণমাধ্যমে।
তাঁরা বলেছেন, প্রকৃতপক্ষে রাজনীতিকরাই নিজেদের এমন পর্যায়ে নিয়ে গেছেন যে, তাঁরা আমলাদের জবাবদিহি নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হচ্ছেন। এ কারণেই আমলারা কর্তৃত্ব করার সুযোগ পাচ্ছেন। এ প্রসঙ্গে সিপিবির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম সম্প্রতি একটি দৈনিকের সঙ্গে আলাপকালে বলেছেন, ‘আসলে দেশে এখন রাজনীতিবিদ বলে কিছু নেই, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিও নেই। সংসদে অধিকাংশই ব্যবসায়ী। আমলারা জানেন, এই জনপ্রতিনিধিরা কোন প্রক্রিয়ায় নির্বাচিত হয়েছেন। তাঁরা সত্যিকারের জনপ্রতিনিধি নন। জনগণও তাঁদের সঙ্গে নেই। এ কারণেই আমলারা তাঁদের মানছেন না।’
অন্যদিকে স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, ‘রাজনৈতিক সরকার যদি সত্যিকার অর্থে জনপ্রতিনিধিত্বশীল হয়, তাহলে কোনো অবস্থায়ই আমলাতন্ত্র জবাবদিহির ঊর্ধ্বে উঠে কর্তৃত্বপরায়ণ হয়ে উঠতে পারে না। সাংসদেরা তো আইনপ্রণেতা। তাঁরা কেন নির্বাহী কর্তৃত্ব চান? আবার স্থানীয় সরকারকে দুর্বল করতে সাংসদরাই আমলাদের কর্তৃত্ব দিতে ভূমিকা রাখেন। একটা আইন তৈরির সময় আমলারা যেভাবে বলেন, রাজনীতিবিদরা সেটাই মেনে নেন, অন্যসব মত অগ্রাহ্য করেন। (সূত্র: সমকাল, ৭ জুলাই ২০২১)।
বলা হয়ে থাকে, দেশের রাজনীতি এখন অরাজনৈতিক ব্যক্তিদের হাতে চলে গেছে। সেখানে প্রাধান্য বিস্তার করে আছেন ব্যবসায়ী আর সাবেক আমলারা। যাঁদের রাজনীতি করার কথা, তাঁরা নানা কারণে এ ময়দান থেকে দূরে। প্রায় সব কটি রাজনৈতিক দল সংসদ সদস্যপদে মনোনয়নের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেয় টাকাওয়ালাদের। সেই সঙ্গে কার কতটা পেশিশক্তি আছে–সেটাও যোগ্যতার একটি মাপকাঠি। ফলে প্রকৃত রাজনীতিক যাঁরা, তাঁরা মনোনয়ন লড়াইয়ে নকআউট হয়ে ছিটকে পড়ছেন রিংয়ের বাইরে। আর সাধু-অসাধু ব্যবসায়ী এবং সন্ত্রাসীদের গডফাদার কিংবা মাদক কারবারের সম্রাটরা দুই বাহু উঁচিয়ে নিজেদের বিজয়ী ঘোষণা করছেন। অরাজনৈতিক এসব ব্যক্তি যখন কোনো দপ্তর পেয়ে যান, তখন তাঁরা সচিব-আমলাদের ওপর পরিপূর্ণ নির্ভরশীল হয়ে পড়েন।
কখনো কখনো সমীহ করেন। তাঁরা সচিব-আমলাদের হুকুম দিতে পারেন না; বরং পরামর্শের ছদ্মাবরণে তাঁদের হুকুম তালিম করেন ঘাড় গুঁজে। রাজনীতি এবং প্রশাসন সম্বন্ধে অজ্ঞ এসব সাংসদ-মন্ত্রী সচিবদের ওপর কর্তৃত্ব করার অবকাশ পান না। এ কারণে আমলারা এসব সাংসদ-মন্ত্রীর আমলনামা পুরোটা সম্পর্কেই জ্ঞাত। তাঁরা জানেন কীভাবে এঁদের হ্যান্ডেল করতে হয়। এঁদের অনেকে আবার ব্যক্তিগত বা গোষ্ঠীগত স্বার্থ হাসিলের কাজে আমলাদের ব্যবহার করেন। একজন সাংসদ যখন ডিসি বা ইউএনওকে বলেন, আমার এই ছেলেগুলোকে দেখবেন, তখন ওই ডিসি-ইউএনও বুঝে যান, এমপি সাহেবের দুর্বলতা কোথায়। এর ফলে তিনি অবলীলায় সাংসদ-মন্ত্রীকে অবজ্ঞা করার দুঃসাহস দেখাতে পারেন।
এ কথা নিশ্চয়ই অত্যুক্তি হবে না যে, রাজনীতির মূলনীতি থেকে বিচ্যুত হয়ে রাজনীতিকেরা নিজেরাই নিজেদের পায়ে কুড়াল মেরেছেন। এখন আর তা নিয়ে হা-হুতাশ করে কী লাভ? কথায় আছে, বাঁশি হারিয়ে কি-তে ফুঁ দিলে সুর বেরোয় না। আমাদের রাজনীতিকেরা তাঁদের হাতের বাঁশি অনেক আগেই হারিয়ে ফেলেছেন।
লেখক: সাংবাদিক ও রাজনীতি বিশ্লেষক
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস স্বয়ং একাধিকবার বলেছেন, আগামী জাতীয় নির্বাচন এমন এক আবহে অনুষ্ঠিত হবে যে তা শুধু দেশে নয়, সারা পৃথিবীতে সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও সর্বজনে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের একটি অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। এটা তাঁর নিজের এবং অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে
৯ ঘণ্টা আগেসোমবার, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫। আস্থা আছে কি না, স্বপ্রণোদিত হয়ে যাচাই করতে গিয়ে বিপাকে পড়েন ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রী ফ্রাঁসোয়া বাইরু। সংসদে ১৯৪ জন সংসদ সদস্য তাঁর ওপর আস্থা জানিয়ে ভোট দিলেও ৩৬৪ জন তাঁকে লাল কার্ড দেখিয়ে দিয়েছেন। উল্লেখ্য, ফ্রান্সের আইনপ্রণেতা হচ্ছেন মোট ৫৭৭ জন। ফলে মাত্র ৯ মাস ক্ষমতায়
৯ ঘণ্টা আগেসময় এখন অদ্ভুত এক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে। মানুষ তার হাজার বছরের ইতিহাসে অনেক বিপ্লবের সাক্ষী হয়েছে—কৃষি, শিল্প, তথ্যপ্রযুক্তি। প্রতিটি বিপ্লব আমাদের জীবনধারায় গভীর পরিবর্তন এনেছে, কেউ কেউ পেছনে পড়ে গেছে, কেউ সামনের সারিতে উঠে এসেছে। কিন্তু এইবার যা আসছে, তা হয়তো আর কাউকে কেবল পেছনেই ফেলবে না; বরং মানুষক
৯ ঘণ্টা আগেবাংলাদেশে ১৯৭২ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত কীটনাশক ব্যবহারের পরিমাণ প্রায় ১০ গুণ বেড়েছে, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকি তৈরি করছে। আজকের পত্রিকায় ১০ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত ‘সেন্টার ফর অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড বায়োসায়েন্স ইন্টারন্যাশনাল’ (ক্যাবি) আয়োজিত এক কর্মশালায় এই উদ্বেগজনক তথ্য উঠে এসেছে।
৯ ঘণ্টা আগে