Ajker Patrika

জাকসু নির্বাচন: অভিযোগ-বর্জনে ম্লান ভোট উৎসব

  • নির্বাচন বর্জন পাঁচ প্যানেলের।
  • আবার নির্বাচন দাবি ছাত্রদলের।
  • দাবির মুখে যন্ত্র ছেড়ে হাতে ভোট গণনা।
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৯: ১৭
জাকসু নির্বাচনের ভোট গ্রহণে ‘ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের’ অভিযোগ তুলে ভোট বর্জন করে ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেল। এরপর মিছিল করেছেন সংগঠনটির নেতা-কর্মীরা। গতকাল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। ছবি: আজকের পত্রিকা
জাকসু নির্বাচনের ভোট গ্রহণে ‘ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের’ অভিযোগ তুলে ভোট বর্জন করে ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেল। এরপর মিছিল করেছেন সংগঠনটির নেতা-কর্মীরা। গতকাল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। ছবি: আজকের পত্রিকা

দীর্ঘ ৩৩ বছর পর গতকাল বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত হয়েছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) নির্বাচন। বহুল প্রতীক্ষিত এ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যে উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি হয়েছিল, তার শেষটা ম্লান হলো অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা ও জাল ভোটসহ নানা অভিযোগে। গতকাল দুপুরের পরই ‘ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের’ অভিযোগ তুলে ভোট বর্জন করে ছাত্রদলসমর্থিত প্যানেল।

কারচুপির অভিযোগ করে নির্বাচন বাতিল ও নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করে ‘অংশগ্রহণমূলক ও নিরপেক্ষ’ নির্বাচনের দাবিতে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করেছে ছাত্রদল। রাত সোয়া ৯টার দিকে বের হওয়া মিছিলটি নতুন কলাভবন এলাকা থেকে শুরু হয়ে সিনেট ভবন ও পরিবহন এলাকা ঘুরে চৌরঙ্গীতে গিয়ে শেষ হয়। মিছিলে ‘প্রহসনের জাকসু, মানি না মানব না’, ‘বয়কট বয়কট, জাকসু বয়কট’সহ বিভিন্ন স্লোগান দেন ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা।

জাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ শেষে রাতে ভোট গণনা শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এর আগে গতকাল সন্ধ্যায় নির্বাচন কমিশনের সদস্যসচিব অধ্যাপক রশিদুল আলম জানিয়েছেন, ফলাফল পেতে আজ শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। তিনি বলেন, ‘ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে (হাতে) ভোট গণনা করা হবে। ফলাফল পেতে আগামীকাল (শুক্রবার) সকাল বা দুপুর পর্যন্ত সময় লাগতে পারে।’

নানা অনিয়মের অভিযোগ তুলেছে ছাত্রশিবির ও বামপন্থী ছাত্রসংগঠনগুলোর সমর্থিত প্যানেলও। অনিয়মের অভিযোগ করে নির্বাচন চলার সময় দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন তিনজন শিক্ষক। এদিকে নতুন তফসিল দিয়ে পুনরায় নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি করে রাত ৯টার দিকে ক্যাম্পাসে মিছিল করেছে ছাত্রদল।

কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (জাকসু) নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এক মাস ধরেই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে বিরাজ করেছে উৎসবের আমেজ। নির্বাচনে চারটি পূর্ণাঙ্গ ও চারটি আংশিক প্যানেল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছে। পূর্ণাঙ্গ প্যানেলগুলো হলো শিবির-সমর্থিত সমন্বিত শিক্ষার্থী জোট, বাগছাস-সমর্থিত শিক্ষার্থী ঐক্য ফোরাম, ছাত্রদল-সমর্থিত প্যানেল, প্রগতিশীল শিক্ষার্থীদের সম্প্রীতির ঐক্য প্যানেল। এ ছাড়া আংশিক প্যানেলের মধ্যে জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোট-সমর্থিত স্বতন্ত্র অঙ্গীকার পরিষদ, স্বতন্ত্র প্রার্থীদের নিয়ে স্বতন্ত্র ঐক্য সম্মিলন, ছাত্র ইউনিয়ন (একাংশ) সমর্থিত সংশপ্তক পর্ষদ ও ছাত্র ফ্রন্ট (মার্ক্সবাদী) সমর্থিত প্যানেল।

গত বুধবার রাত থেকেই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা ও প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের আনাগোনায় উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, বুধবার রাতেই জাকসু নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ে ঢাকা জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হাসান অভি, শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক জহিরউদ্দিন বাবর, সদস্যসচিব ওয়াসিম আহমেদ অনীকসহ ছাত্রদলের নেতাদের দেখা গেছে। বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি মুহিবুর রহমান নির্বাচন কমিশনের কার্যালয়ে একটি কক্ষে বসে ফোনে কথা বলছেন—এমন ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ার পর উত্তেজনা আরও বাড়ে।

সকাল থেকেই ওঠে অভিযোগ

সকাল ৯টা থেকে ভোট গ্রহণ শুরু হয়। তবে সকালে কেন্দ্রে ভোটারদের উপস্থিতি কম দেখা গেছে। শুরুর দিকে শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট গ্রহণ চললেও বেলা গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে নানা অভিযোগে ক্রমেই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে নির্বাচনের আবহ।

ভোট গ্রহণ শুরুর ২ ঘণ্টার মধ্যে হলগুলোতে ভোটারের চেয়ে বেশি ব্যালট পেপার সরবরাহ করার অভিযোগ করেন শিবির-সমর্থিত সমন্বিত শিক্ষার্থী জোটের জিএস পদপ্রার্থী মাজহারুল ইসলাম। নিজের ভোট দেওয়ার পর তিনি এই অভিযোগ করে বলেন, ‘আমরা নির্বাচন কমিশনকে বাড়তি ব্যালট সরাতে বলেছিলাম। দেখা যাচ্ছে, প্রতিটি হলেই অতিরিক্ত ব্যালট রাখা হয়েছে। এর কোনো স্বচ্ছ ব্যাখ্যা কমিশনের পক্ষ থেকে পাওয়া যায়নি। নির্বাচন কমিশন তাদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করছে না।’

পরে বিভিন্ন কেন্দ্র ঘুরে বিকেলে সংবাদ সম্মেলন করে দুটি কেন্দ্রে ভোট শুরু হতে ২ ঘণ্টা বিলম্ব, পোলিং এজেন্ট দেওয়া নিয়ে চরম বিশৃঙ্খলা, বহিরাগতদের আনাগোনা নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনের ব্যর্থতা, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের আচরণবিধি লঙ্ঘন, দলবল নিয়ে ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি ইত্যাদি অভিযোগ করেন মাজহারুল ইসলাম।

অন্যদিকে সকালে প্রশাসনের বিরুদ্ধে গাফিলতি ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ তোলেন ছাত্রদল-সমর্থিত প্যানেলের ভিপি মো. শেখ সাদী হাসান। তিনি নির্বাচন কমিশনে শিবির সভাপতির অবস্থান, বহিরাগতদের আনাগোনা এবং ভোট গণনার ওএমআর মেশিন নিয়ে অভিযোগ করেন। শেখ সাদী ভোট হাতে গণনার দাবি জানিয়ে বলেন, যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ না করেই জামায়াতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একটি প্রতিষ্ঠান থেকে ব্যালট পেপার ও ওএমআর মেশিন কেনা হয়েছে। ছাত্রশিবির তাদের নিজস্ব কোম্পানি থেকে আলাদাভাবে ব্যালট পেপার সংগ্রহ করে কারচুপির মাধ্যমে জয়ী হওয়ার পরিকল্পনা করেছে।

নানা অসংগতিসহ ‘ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের’ অভিযোগ তুলে ভোট গ্রহণ শেষ হওয়ার দেড় ঘণ্টা আগে বেলা সাড়ে ৩টার দিকে নির্বাচন বর্জন করে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল-সমর্থিত প্যানেল। তাদের অভিযোগ ছিল, ব্যাপক অনিয়ম, ভোট কারচুপি ও প্রশাসনের পক্ষপাতিত্বের কারণে নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠিত হচ্ছে না।

ভোট বর্জনের কথা জানাতে ডাকা জরুরি সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রদল-সমর্থিত প্যানেলের সাধারণ সম্পাদক (জিএস) প্রার্থী তানজিলা হোসেন বৈশাখী বলেন, ‘শুরু থেকেই আমাদের আশঙ্কা ছিল, এটি সাজানো নির্বাচন হবে। আমরা বারবার প্রশাসনকে জানিয়েছিলাম, সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না। কিন্তু প্রশাসন আমাদের দাবি উপেক্ষা করেছে।’ বৈশাখী এ সময় বিভিন্ন হলে ভোট গ্রহণে অনিয়ম, জাল ভোট, নকল ব্যালট ব্যবহার, পোলিং এজেন্টদের কাজে বাধা দেওয়া এবং শিবির-সমর্থিত প্রার্থীদের বিশেষ সুবিধা দেওয়ার অভিযোগ তোলেন।

‘ব্যাপক অনিয়মের’ অভিযোগ তুলে নির্বাচন বর্জন করেছে প্রগতিশীল শিক্ষার্থীদের চারটি প্যানেলও। দ্রুত সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য প্রক্রিয়ায় আবার নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি জানিয়েছে তারা। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন চত্বরে চারটি প্যানেলের পক্ষ থেকে এ ঘোষণা দেন শরণ এহসান। এতে সংহতি জানায় ‘সম্প্রীতির ঐক্য’ প্যানেল, ‘সংশপ্তক পর্ষদ’, স্বতন্ত্র শিক্ষার্থীদের প্যানেল ‘স্বতন্ত্র অঙ্গীকার পরিষদ’ এবং সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট (মার্ক্সবাদী) প্যানেল।

সম্প্রীতির ঐক্য প্যানেলের জিএস প্রার্থী শরণ এহসান বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের নিষ্ক্রিয়তা, অব্যবস্থাপনা ও অথর্বতা সমগ্র নির্বাচনের ন্যায্যতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। আমরা কিছুদিন ধরে লক্ষ করেছি, এই নির্বাচনকে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশনের সর্বোচ্চ অসহযোগিতা, পক্ষপাতদুষ্টতা ও সুষ্ঠু নির্বাচন করার চূড়ান্ত অনিচ্ছা রয়েছে।’

শরণ এহসান বলেন, পোলিং এজেন্টদের কাজ করতে না দেওয়া, নারী হলে পুরুষ প্রার্থী প্রবেশ, ভোটার লিস্টে ছবি না থাকা, আঙুলে অমোচনীয় কালির দাগ না দেওয়া, ভোটার তালিকায় নাম না থাকা, ভোটারের তুলনায় ব্যালট বেশি ছাপানো, লাইন জ্যামিং, বহিরাগতদের আনাগোনা ইত্যাদি অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা ও গাফিলতির কারণে এই নির্বাচনকে ঘিরে অনেক সন্দেহ আর প্রশ্ন ওঠার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।

নানা অব্যবস্থাপনার অভিযোগ

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিরুদ্ধে নানা অব্যবস্থাপনার অভিযোগ এনেছেন শিক্ষার্থী এবং বিভিন্ন প্যানেল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। তাঁরা জানান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হলে (বর্তমানে ১০ নম্বর) সকাল ৯টায় ভোট গ্রহণ শুরু হওয়ার কথা থাকলেও পৌনে ১ ঘণ্টা পিছিয়ে পৌনে ১০টায় ভোট গ্রহণ শুরু হয়। সাড়ে ১০টার দিকে বৈদ্যুতিক গোলযোগে ২৫ মিনিট মোবাইল ফোনের আলো দিয়েই চলে ভোট গ্রহণ। এই কেন্দ্রে ব্যালট আসতে দেরি হয়েছে বলে জানান নির্বাচনসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

বিদ্যুৎ-বিভ্রাটের কারণ সম্পর্কে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি সেলের সদস্য ফজলুল করিম পাটোয়ারী বলেন, ‘সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য নোটিশ দেওয়া হয়েছিল প্রশাসনকে। কেন বিদ্যুৎ-বিভ্রাট হয়েছে, সে বিষয়ে অবগত নই।’ ভোট গ্রহণ শুরুর পরপরই বৃষ্টি শুরু হয়। এরপর মওলানা ভাসানী হল, শহীদ রফিক-জব্বার হল, ফজিলাতুন নেছা হল, এ এফ এম কামালউদ্দিন হল, প্রীতিলতা হল এবং বীর প্রতীক তারামন বিবি হলেও বিদ্যুৎ চলে যায়।

বেশ কয়েকটি কেন্দ্রে মোট ভোটারের চেয়ে বেশিসংখ্যক ব্যালট পেপার নেওয়ার অভিযোগ করেছেন ছাত্রদল ও শিবিরসহ কয়েকটি সংগঠনের প্রার্থীরা। ছবিযুক্ত ভোটার তালিকা করার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত তা করতে পারেনি প্রশাসন। ৫-৬টি কেন্দ্রে ভোট দেওয়ার পর শিক্ষার্থীদের আঙুলে মার্কারের দাগ দেওয়া হয়নি। কোনো কোনো কেন্দ্রে দাগ দেওয়া হলেও, দ্রুতই তা মুছে গেছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ (বাগছাস) সমর্থিত প্যানেলের সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদপ্রার্থী আবু তৌহিদ মোহাম্মদ সিয়াম অভিযোগ করে বলেন, এ ক্ষেত্রে প্রশাসন অদক্ষতা ও অবহেলার পরিচয় দিয়েছে।

কাজী নজরুল ইসলাম হলের ছাত্রদলের এজেন্ট জিসান বলেন, ‘নির্বাচনে কোনো পোলিং এজেন্টকে কার্ড দেওয়া হয়নি। এ ছাড়াও আমার হলে ভোট দেওয়ার পর মার্কার দিয়ে আঙুলে দাগ দেওয়া হচ্ছে না। বিভিন্ন কেন্দ্রে সাংবাদিক প্রবেশেও বাধা দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।’

যন্ত্রের বদলে হাতে ভোট গণনা

ওএমআর মেশিনের মাধ্যমে ভোট গণনার পরিকল্পনা থাকলেও শেষ দিকে এ সিদ্ধান্ত বাতিল করে হাতে গোনার সিদ্ধান্ত নেয় নির্বাচন কমিশন। বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষণ কমিটির সদস্য ড. সালেহ আহম্মদ খান বলেন, ডাকসু নির্বাচনে মেশিনে ভোট গণনা নিয়ে বিতর্ক উঠেছে। সেই অভিজ্ঞতা থেকেই জাকসুতে ভোট হাতে গণনা করা হচ্ছে।

কিছুসংখ্যক শিক্ষার্থী ব্যালট পেপারে ভুল থাকার কথাও জানিয়েছেন। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম হলে কার্যকরী সদস্যপদে ৩ জন প্রার্থী থাকলেও ব্যালটে দেওয়া নির্দেশনায় কেবল একজন প্রার্থীর পাশে টিকচিহ্ন দেওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এতে ভোটারদের মধ্যে বিভ্রান্তি দেখা দেয়। হলের পোলিং কর্মকর্তা উজ্জ্বল কুমার মণ্ডল বলেন, ‘বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। আমরা দ্রুত নির্বাচন কমিশনকে জানিয়েছি। শিক্ষার্থীদের করণীয় বুঝিয়ে বলা হয়েছে।’

দীর্ঘ সময় ভোটের লাইনে অপেক্ষা

কাজী নজরুল ইসলাম হল কেন্দ্রে সন্ধ্যা ৬টা ৪৫ মিনিটেও ৫০ জনের বেশি শিক্ষার্থীকে লাইনে দাঁড়িয়ে ভোট দেওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। লাইনে থাকা কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, ভোট দিতে আড়াই থেকে তিন ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে। ৫২ ব্যাচের শিক্ষার্থী বিশ্বাস মাধুর্য সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘কয়েক ঘণ্টা ধরে লাইনে দাঁড়িয়ে আছি।’ কেন্দ্রের রিটার্নিং কর্মকর্তা অধ্যাপক ড. মীর ফেরদৌস হোসেন বলেন, একেকজন ভোটারের গোপন কক্ষে ঢুকে ভোটদান করতে অনেক সময় লেগে যাচ্ছে। এ কারণে নির্দিষ্ট সময় বিকেল ৫টার মধ্যে ভোট গ্রহণ শেষ করা সম্ভব হয়নি।

দুই কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ বন্ধ

অনিয়মের অভিযোগ ওঠায় শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ হল ও বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা হলে (বর্তমান ১৫ নম্বর) দুবার করে বেশ কিছু সময় ভোট গ্রহণ বন্ধ ছিল। শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, ভোটের পর আঙুলে অমোচনীয় কালির দাগ না দেওয়া এবং কারচুপির অভিযোগে ছাত্রদল-সমর্থিত ভিপি প্রার্থী ও তাঁর সমর্থকেরা হলে প্রবেশ করলে হট্টগোল শুরু হয়। এ কারণে শেখ ফজিলাতুন নেছা হলে দুপুর সোয়া ১২টা থেকে বেলা দেড়টা পর্যন্ত ভোট গ্রহণ বন্ধ ছিল। এর আগে দুপুর ১২টা থেকে ২০ মিনিটের মতো তাজউদ্দীন আহমদ হলে ভোট গ্রহণ বন্ধ ছিল। হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক লুৎফুল এলাহী বলেন, দুপুর পৌনে ১২টার দিকে কেন্দ্রে কিছুটা সমস্যা দেখা দিলে ভোট গ্রহণ কিছু সময় বন্ধ রাখা হয়।

ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নেতা আটক

নির্বাচন চলার সময় ক্যাম্পাসে অবৈধভাবে অবস্থান করার অভিযোগে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি হাফিজুর রহমান সোহানকে আটক করা হয়। সোহান বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ৩৬তম ব্যাচের (প্রাক্তন) শিক্ষার্থী। বেলা ১১টার দিকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের একটি কক্ষ থেকে তাঁকে আটক করা হয়। প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম রাশিদুল আলম বলেন, সোহানের কাছ থেকে মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়।

নির্বাচন ‘সুষ্ঠু’ দাবি প্রশাসনের

নির্বাচনের সামগ্রিক পরিবেশ সুষ্ঠু ছিল বলে দাবি করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মোহাম্মদ কামরুল আহসান। গতকাল বিকেলে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ হল কেন্দ্র পরিদর্শনের পর তিনি বলেন, ‘পরিবেশটা আমাদের প্রত্যাশা অনুযায়ী আছে। দু-একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া সব জায়গায় স্বাভাবিকভাবেই ভোট গ্রহণ চলছে। আশা করি, শেষ পর্যন্ত এভাবেই চলবে।’

ক্যাম্পাসের বাইরে জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মীরা

বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি গেটের বাইরে দুপুর থেকে জামায়াতের নেতা-কর্মীদের অবস্থান করতে দেখা যায়। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের গেরুয়া গেটের বাইরে বাজারে জামায়াতের নেতা-কর্মীদের বিচ্ছিন্নভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। এই গেটে সকাল থেকে মোতায়েন ছিলেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অতিরিক্ত সদস্যরা। রাত ৯টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক ডেইরি গেটের বাইরেও শতাধিক লোককে ভিড় করতে দেখা যায়। সেখানে কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাঁদের অনেকে জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মী।

পলাশবাড়ি এলাকার জামায়াতের কর্মী পরিচয় দেওয়া কামাল উদ্দিন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা ভোটের ফল জানার জন্য অপেক্ষায় আছি।’

রাত সাড়ে ১১টার দিকে প্রান্তিক গেটের বাইরে দেখা যায়, প্রায় অর্ধশত লোক অবস্থান করছেন। জানতে চাইলে তৌহিদুর রহমান নামের একজন বলেন, ‘আমরা ভোটের ফল জানার জন্য বসে আছি।’

ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার মো. আনিসুজ্জামান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বিভিন্ন গেটে লোকজন আছে, তা আমরা জানি। তবে সেসব গেটে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পর্যাপ্ত সদস্য মোতায়েন রয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্ডধারী ও অনুমোদিত ব্যক্তি বা পরিবহন ছাড়া বাইরের কাউকে ঢুকতে দেওয়া হবে না।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

আর পি সাহা বিশ্ববিদ্যালয়: হাসি গল্প গানের মিলনমেলা

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ০২ নভেম্বর ২০২৫, ১৬: ০৪
পাঠকবন্ধুর কেন্দ্রীয় সদস্যদের সঙ্গে আরপিএসইউ শাখার সদস্যরা। ছবি: তৈয়বুর রহমান তন্ময়
পাঠকবন্ধুর কেন্দ্রীয় সদস্যদের সঙ্গে আরপিএসইউ শাখার সদস্যরা। ছবি: তৈয়বুর রহমান তন্ময়

বন্ধুদের সঙ্গে সবাই কমবেশি আড্ডা দিই। তবে শিক্ষার্থীদের এমন আড্ডায় যদি যোগ দেন শিক্ষকেরা, ভাগাভাগি করেন জীবনের নানা অভিজ্ঞতার গল্প, আর শিক্ষার্থীরা খুঁজে পান অনুপ্রেরণা, তখন সেই আড্ডা হয়ে ওঠে সত্যিই ব্যতিক্রম। ঠিক এমনই ভিন্নধর্মী এক আড্ডার আয়োজন করেছে পাঠকবন্ধু আর পি সাহা বিশ্ববিদ্যালয় (আরপিএসইউ) শাখা। এটি ছিল পাঠকবন্ধুর দ্বিতীয় পর্বের প্রাণবন্ত ‘ক্যাম্পাস আড্ডা’, যেখানে হাসি, গল্প ও সৃজনশীলতায় মিলিত হয়েছে এক মধুর মিলনক্ষেত্র।

২৯ অক্টোবর নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যার তীরঘেঁষা সবুজ ক্যাম্পাসের মুক্তমঞ্চে বসে এই প্রাণবন্ত আড্ডা। এতে শিক্ষার্থীরা অংশ নেন কুইজ প্রতিযোগিতা, রম্য বিতর্ক, মজার ‘পিলো পাসিং’ খেলা এবং সুরের তালে তালে গান।

মঞ্চে বসে বন্ধুদের আয়োজন উপভোগ করছেন আরপিএসইউর উপাচার্য। ছবি: তৈয়বুর রহমান তন্ময়
মঞ্চে বসে বন্ধুদের আয়োজন উপভোগ করছেন আরপিএসইউর উপাচার্য। ছবি: তৈয়বুর রহমান তন্ময়

অনুষ্ঠানের শুরুতে প্রধান অতিথিসহ অন্যান্য অতিথিকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানিয়ে বরণ করেন আরপিএসইউ পাঠকবন্ধু শাখার সদস্যরা। পরে নুসরাত আহমেদ কণার সঞ্চালনায় শুরু হয় আড্ডার আলোচনা। শুরুতে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মনীন্দ্র কুমার রায়। পাশাপাশি বক্তব্য দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা মো. আসাদুজ্জামান, আজকের পত্রিকার পক্ষে হেড অব ডিজিটাল অ্যাড সেলস মো. সিরাজুল ইসলাম সুমন, পাঠকবন্ধুর কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী মো. আব্দুর রাজ্জাক খান, যুগ্ম আহ্বায়ক মো. তাহমিদ আল মাহবুব খান এলিন এবং পাঠকবন্ধু আরপিএসইউ শাখার সাধারণ সম্পাদক জাকিয়া সুলতানা।

আরপিএসইউর উপাচার্যকে উপহার তুলে দিচ্ছেন পাঠকবন্ধুর কেন্দ্রীয় সদস্যরা। ছবি: তৈয়বুর রহমান তন্ময়
আরপিএসইউর উপাচার্যকে উপহার তুলে দিচ্ছেন পাঠকবন্ধুর কেন্দ্রীয় সদস্যরা। ছবি: তৈয়বুর রহমান তন্ময়

ছাত্র উপদেষ্টা মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘একটি সুন্দর পৃথিবী আমরা গড়ে তুলতে চাইলে শুধু পরিবেশ সুন্দর করাই যথেষ্ট নয়। প্রথমে আমাদের মনের ভেতরটি পরিষ্কার ও সুন্দর করতে হবে। প্রতিটি ভালো কাজে নিজেকে যুক্ত রাখতে হবে। তখন শরীর-মন সুস্থ থাকবে, রোগ-বালাই কমবে। মানবিকতা গড়ে তোলা, সুন্দরভাবে বাঁচা—এই প্রত্যয় আমাদের রাখতে হবে।’

প্রযুক্তির এই যুগে আমরা ধীরে ধীরে বই পড়া থেকে দূরে সরে যাচ্ছি। তবে পাঠকবন্ধু চেষ্টা করছে শিক্ষার্থীদের বইয়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত রাখতে এবং তাদের পাঠাভ্যাস বাড়িয়ে তুলতে। এ ছাড়া ছাত্র-শিক্ষকের সম্পর্কের বাইরে শিক্ষার্থীরা অনেক কিছু শিখেছে। সেই অভিজ্ঞতাগুলো তুলে ধরা—এটিই আজকের ক্যাম্পাস আড্ডার মূল উদ্দেশ্য বলে উল্লেখ করেন মো. সিরাজুল ইসলাম সুমন।

রম্য বিতর্কে অংশ নিয়েছেন পাঠকবন্ধুর সদস্যরা। ছবি: তৈয়বুর রহমান তন্ময়
রম্য বিতর্কে অংশ নিয়েছেন পাঠকবন্ধুর সদস্যরা। ছবি: তৈয়বুর রহমান তন্ময়

পাঠকবন্ধু আরপিএসইউ শাখার সদস্যদের ধন্যবাদ জানিয়ে মো. আব্দুর রাজ্জাক খান বলেন, ‘আমরা এমন এক আড্ডার আয়োজন করেছি, যেখানে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা একত্রে বসে তাদের অভিজ্ঞতা, স্মৃতিচারণা ও স্বপ্নগুলো ভাগাভাগি করবেন। অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের কাছ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে আমাদের ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে পারব।’

মো. তাহমিদ আল মাহবুব খান এলিন বলেন, ‘আমরা যারা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, আমাদের প্রতিনিয়ত বিভিন্ন বৈচিত্রের মধ্য দিয়ে যেতে হয়। এই ধরনের সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার মাধ্যমে আমরা সামাজিক বিভিন্ন দায়িত্ব পালনে সক্ষম হই এবং একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ ও আন্তসম্পর্ক গড়ে তুলি।’

ক্যাম্পাস আড্ডা উপভোগ করছেন শিক্ষার্থীরা। ছবি: তৈয়বুর রহমান তন্ময়
ক্যাম্পাস আড্ডা উপভোগ করছেন শিক্ষার্থীরা। ছবি: তৈয়বুর রহমান তন্ময়

পাঠকবন্ধু আরপিএসইউ শাখার সাধারণ সম্পাদক জাকিয়া সুলতানা বলেন, ‘পাঠকবন্ধুর ক্যাম্পাস আড্ডা একটি অনন্য মঞ্চ। শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও পাঠপ্রেমীরা একত্র হয়ে জ্ঞান, চিন্তা ও মানবিকতার সুন্দর বন্ধনে মিলিত হন। পাঠ শুধুই বিদ্বান বানায় না, মানুষও গড়ে তোলে।’

আলোচনা শেষে অনুষ্ঠিত হয় রম্য বিতর্ক ‘পরীক্ষায় প্রশ্ন কঠিন নয়, শিক্ষার্থীর কল্পনাশক্তিই ভয়ংকর!’। এতে অংশ নেন তামান্না আক্তার, আফরিন আক্তার, জাকিয়া সুলতানা ও এশা ইসলাম। প্রথম স্থান অধিকার করেন জাকিয়া সুলতানা।

সনদ ও পুরস্কার নিচ্ছেন এক বন্ধু। ছবি: তৈয়বুর রহমান তন্ময়
সনদ ও পুরস্কার নিচ্ছেন এক বন্ধু। ছবি: তৈয়বুর রহমান তন্ময়

এরপর শুরু হয় মজার ‘পিলো পাসিং’ খেলা, যেখানে মিউজিকের তালে শিক্ষার্থীরা উপভোগ করেন খেলার আনন্দ। প্রথম হন মেহেরুনেছা মেরি। এরপর মঞ্চে গান পরিবেশন করেন আরপিএসইউ কালচারাল ক্লাবের সদস্যরা। অনুষ্ঠানের আগের দিন অনুষ্ঠিত হয় কুইজ প্রতিযোগিতা, যেখানে প্রায় ৬০ জন শিক্ষার্থী অংশ নেন। প্রথম স্থান অধিকার করেন নাদিয়া আক্তার।

পাঠকবন্ধু আরপিএসইউ শাখার সদস্যদের নিরলস পরিশ্রমের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানটি সাফল্যের মুখ দেখেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা উপস্থিত থেকে তরুণদের এই সৃষ্টিশীল উদ্যোগের প্রশংসা করেছেন। অনুষ্ঠানের সমন্বয়ক সাবরিন সুলতানা উর্বরা জানান, আরপিএসইউ ক্যাম্পাসে এক অনন্য বিকেল কাটল পাঠপ্রেমী তরুণদের সঙ্গে। বই শুধুই পড়ার বস্তু নয়, এটি একটি সেতুবন্ধন, যা মানুষকে মানুষে যুক্ত করে, ভাবনায় গভীরতা আনে এবং সংস্কৃতিকে সমৃদ্ধ করে।’

অনুষ্ঠান শেষে পাঠকবন্ধুর অতিথি ও সদস্যরা পুরো ক্যাম্পাস ঘুরে দেখেন। হাসি, গল্প আর গানে গানে এক আনন্দঘন দিন কাটে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও পাঠকবন্ধুদের।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

পাঠকবন্ধু ক্যাম্পাস আড্ডা /নিজের ইতিবাচক শক্তি জাগিয়ে তুলতে হবে

অধ্যাপক ড. মনীন্দ্র কুমার রায়
আপডেট : ০২ নভেম্বর ২০২৫, ১৫: ২৯
পাঠকবন্ধুদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য দিচ্ছেন আরপিএসইউর উপাচার্য অধ্যাপক ড. মনীন্দ্র কুমার রায়
পাঠকবন্ধুদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য দিচ্ছেন আরপিএসইউর উপাচার্য অধ্যাপক ড. মনীন্দ্র কুমার রায়

আড্ডা এখন অনেক কমে গেছে। এর প্রধান কারণ হলো আমাদের হাতে থাকা ছোট্ট একটি যন্ত্র—মোবাইল ফোনসেট। এই যন্ত্র আমাদের একে-অপরের কাছ থেকে দূরে সরিয়ে দিয়েছে। আমি বলি ‘রেস ডিসকানেকটেড আস, রিলিজিয়ন সেপারেট আস, পলিটিকস ডিভাইড আস, ওয়েলথ ক্ল্যাসিফাই আস’। এর সঙ্গে যোগ করতে চাই ‘মোবাইল ডিমোরালাইজড’। যদিও এই উক্তি নিয়ে বিতর্ক আছে, তবু সত্যি হলো, মোবাইল জীবনের অপরিহার্য অংশ হলেও এর অপব্যবহার ভয়াবহ ক্ষতি করতে পারে।

আজকাল ছোট বাচ্চাদের খাওয়ানোর সময়ও হাতে মোবাইল ধরিয়ে দেওয়া হয়। এক পরিবারের তিনজন সদস্য একসঙ্গে বসলেও প্রত্যেকে ব্যস্ত নিজের মোবাইলের মধ্যে, কথাবার্তা প্রায় নেই। অথচ মোবাইলের মধ্যে রয়েছে অসীম সম্ভাবনা। এটি দিয়ে তুমি প্রজেক্ট, থিসিস বা যেকোনো একাডেমিক গবেষণা করতে পারো। আমাদের সময়ে এই ধরনের সুযোগ ছিল না। এখন ইন্টারনেট তোমার হাতের মুঠোয়। জ্ঞান আহরণ করতে চাইলে তুমি পুরো বিশ্ব জয় করতে পারো। মনে রাখতে হবে, মোবাইলের দুটি দিক আছে—একটি সুফল, অন্যটি কুফল। সুফল কাজে লাগাতে হবে। নেতিবাচক ব্যবহার আমাদের যুবসমাজে বিভিন্ন আসক্তি, হতাশা এবং দুঃখজনক আত্মহত্যার মতো প্রবণতা তৈরি করছে। তাই তোমরা মোবাইল ব্যবহার করবে এর ইতিবাচক দিকগুলো কাজে লাগিয়ে।

জীবনে সব সময় ইতিবাচক থাকতে হবে। আমি নিজে খারাপ থাকলেও বলি, ‘আমি খুব ভালো আছি’। এই মানসিক ইতিবাচকতা মানুষকে এগিয়ে নিয়ে যায়। আর স্বপ্ন থাকতে হবে—স্বপ্ন ছাড়া কেউ বড় হতে পারে না। ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি এ পি জে আবদুল কালাম বলেছিলেন, ‘স্বপ্ন সেটা নয়, যা আমরা ঘুমিয়ে দেখি; স্বপ্ন সেটাই, যা আমাদের ঘুমাতে দেয় না।’

তোমরা যে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছ ‘আর পি সাহা বিশ্ববিদ্যালয়’, এর প্রতিষ্ঠাতা আর পি সাহাও ছিলেন একজন মহান স্বপ্নদ্রষ্টা। মাত্র সাত বছর বয়সে মাকে হারিয়ে তিনি প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, ‘আমি যদি কখনো সম্পদশালী হই, তাহলে একটি মাতৃসদন হাসপাতাল গড়ে তুলব, যেন কোনো মা বিনা চিকিৎসায় মারা না যায়।’ ক্লাস থ্রি পর্যন্ত পড়াশোনা করা, দারিদ্র্যপীড়িত সেই মানুষটি ফুটপাতে ঘুমিয়েছে, সংবাদপত্র বিক্রি করেছে, গাড়ি মুছেছে। কিন্তু অক্লান্ত পরিশ্রমে মাত্র ছয় বছরে তিনি ব্যবসায়িক সাফল্য অর্জন করেন। কয়লা, জুট, চামড়া, লবণ, নৌপরিবহন—সব ক্ষেত্রে সফল হয়েছেন।

তবে সেই সম্পদ নিজের জন্য নয়, তিনি উৎসর্গ করেছিলেন মানুষের কল্যাণে। প্রতিষ্ঠা করেছেন কুমুদিনী ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট, কুমুদিনী হাসপাতাল, কুমুদিনী কলেজ, দেবেন্দ্র কলেজ—সবই মানবতার সেবায় নিবেদিত।

তোমাদেরও তাই স্বপ্ন দেখতে হবে, নিজের ভেতরে ইতিবাচক শক্তি জাগিয়ে তুলতে হবে, যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হবে এবং সমাজ পরিবর্তনে এগিয়ে আসতে হবে।

অধ্যাপক ড. মনীন্দ্র কুমার রায়, উপাচার্য, আর পি সাহা বিশ্ববিদ্যালয়

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঢাবির আইবিএর ভর্তি পরীক্ষা ২৮ নভেম্বর

শিক্ষা ডেস্ক
ঢাবির আইবিএর ভর্তি পরীক্ষা ২৮ নভেম্বর

২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটের (আইবিএ) অধীনে ব্যাচেলর অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (বিবিএ) কোর্সের ভর্তি পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। আগামী ২৮ নভেম্বর এ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, আগামী ২৮ নভেম্বর (শুক্রবার) সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হবে।

গত ২৯ অক্টোবর থেকে অনলাইনের মাধ্যমে আইবিএ ভর্তি আবেদন শুরু হয়েছে চলবে ১৬ নভেম্বর পর্যন্ত রাত ১১টা ৫৯ পর্যন্ত। আবেদন শেষে আগামী ২৪ নভেম্বর থেকে পরীক্ষা শুরুর ১ ঘণ্টা আগেপর্যন্ত ভর্তি পরীক্ষার প্রবেশপত্র ডাউনলোড করা যাবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি আবেদন শুরু ৭ নভেম্বর

শিক্ষা ডেস্ক
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুবি) স্নাতক প্রথম বর্ষে ভর্তি আবেদন আগামী ৭ নভেম্বর থেকে শুরু হবে। চলবে ২৭ নভেম্বর পর্যন্ত। আর ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে ১৮ ও ১৯ ডিসেম্বর। ফলাফল প্রকাশ করা হবে ৩০ ডিসেম্বর। চূড়ান্ত ভর্তি শেষে আগামী বছরের ২৫ জানুয়ারি থেকে ওরিয়েন্টেশন, রেজিস্ট্রেশন ও শ্রেণি কার্যক্রম শুরু হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে মোট ১ হাজার ১০৯টি আসনে ভর্তি পরীক্ষার সময়সূচি ও নিয়মাবলি ঘোষণা করা হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘এ’ ইউনিটের (বিজ্ঞান, প্রকৌশল ও প্রযুক্তিবিদ্যা স্কুল) মোট আসন সংখ্যা ৩২০, যার মধ্যে সাধারণ আসন ৩০৩ এবং কোটায় ১৭। আবেদনের যোগ্যতার শর্ত হলো এসএসসি ২০২২-২৩ ও এইচএসসি ২০২৪-২৫ পরীক্ষায় সম্মিলিত জিপিএ কমপক্ষে ৮.০০। ভর্তি পরীক্ষা ৬০ নম্বরের এমসিকিউ ও ৪০ নম্বরের লিখিত অংশের মাধ্যমে অনুষ্ঠিত হবে। স্থাপত্য ডিসিপ্লিনের শিক্ষার্থীদের জন্য অতিরিক্ত অঙ্কন পরীক্ষা থাকবে।

‘বি’ ইউনিটের (জীববিজ্ঞান স্কুল) মোট আসন সংখ্যা ২৮১, যার মধ্যে সাধারণ আসন ২৬৬ ও কোটায় ১৫। আবেদনের যোগ্যতার শর্ত হলো সম্মিলিত জিপিএ ন্যূনতম ৮.০০। পরীক্ষা পদ্ধতি ‘এ’ ইউনিটের মতো হবে। ‘সি’ ইউনিটের (কলা ও মানবিক, সামাজিক বিজ্ঞান, আইন, শিক্ষা ও চারুকলা স্কুল) মোট আসন সংখ্যা ৪১৫, যার মধ্যে সাধারণ আসন ৩৯১ ও কোটায় ২৪।

আবেদনের যোগ্যতার শর্ত হলো এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় সম্মিলিত জিপিএ কমপক্ষে ৭ পেতে হবে। চারুকলা ডিসিপ্লিনের শিক্ষার্থীদের জন্য অতিরিক্ত লিখিত ও অঙ্কন পরীক্ষা নেওয়া হবে। ‘ডি’ ইউনিটের (ব্যবস্থাপনা ও ব্যবসায় প্রশাসন স্কুল) মোট আসন সংখ্যা ৮৮, যার মধ্যে সাধারণ আসন ৮৩ ও কোটায় ৫।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত