Ajker Patrika

মৃত্যুঝুঁকি

সম্পাদকীয়
মৃত্যুঝুঁকি

বাংলাদেশে ১৯৭২ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত কীটনাশক ব্যবহারের পরিমাণ প্রায় ১০ গুণ বেড়েছে, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকি তৈরি করছে। আজকের পত্রিকায় ১০ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত ‘সেন্টার ফর অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড বায়োসায়েন্স ইন্টারন্যাশনাল’ (ক্যাবি) আয়োজিত এক কর্মশালায় এই উদ্বেগজনক তথ্য উঠে এসেছে।

১৯৫৩ সালে দেশে কীটনাশকের ব্যবহার শুরু হয়। তখন রাষ্ট্রীয় কর্তাব্যক্তিরা কৃষককে প্রলুব্ধ করতেন ‘বোকার ফসল পোকায় খায়’ বলে। দেশে কীটনাশক ব্যবহার দিনদিন বেড়েছে মূলত পোকার হাত থেকে ফসল রক্ষা করতে এবং উৎপাদন বাড়াতে। কিন্তু অতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহারের ফলে মানুষের জীবনে যে দুর্ভোগ নেমে এসেছে, সে বিষয়ে আমাদের মধ্যে সচেতনতা নেই বললেই চলে। জনগণকে সচেতন করার জন্য রাষ্ট্রীয় উদ্যোগও নেই। ফলে দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে ক্যানসার, জন্মগত ত্রুটি, প্রজননক্ষমতা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া, রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কমে যাওয়া এবং স্নায়ুর সমস্যাসহ নানা রোগব্যাধি। সবচেয়ে আশঙ্কার কথা হলো, ক্যানসার, কিডনিসহ নানা ধরনের ব্যয়বহুল চিকিৎসার রোগ এই কীটনাশকের কারণে হচ্ছে। কিন্তু জনগণ সচেতন হচ্ছে না।

জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে একদিকে যেমন জমির পরিমাণ কমে যাচ্ছে, অন্যদিকে বিশাল জনগোষ্ঠীর জন্য খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে বাধ্য হয়ে কৃষক ফসল রক্ষায় কীটনাশক ব্যবহার করছেন। যে ফসল মানুষ বাঁচার জন্য খাবে, সেই ফসলই মানুষের মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে, সেটা তাঁরা বুঝছেন না। এই পরিস্থিতির জন্য শুধু কীটনাশকের যথেচ্ছ ব্যবহারই দায়ী নয়, বরং এর পেছনে রয়েছে সচেতনতার অভাব এবং দুর্বল নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা। ক্যাবির প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশের ৬০ শতাংশ কৃষকেরই কীটনাশক ব্যবহারের সঠিক জ্ঞান নেই। ফলে ২৭ শতাংশ কৃষক কীটনাশক ব্যবহারের পর অসুস্থ হয়ে পড়েন। এই জ্ঞানহীনতা শুধু কৃষকের স্বাস্থ্যের জন্য নয়, বরং দেশের মানুষের জন্য এক ভয়াবহ বিপদ ডেকে আনছে।

একই সঙ্গে মাছ চাষ ও শুঁটকি প্রক্রিয়াজাতকরণেও কীটনাশকের ব্যবহার বেড়ে চলেছে, যা শুধু কৃষিক্ষেত্রেই নয়, বরং আমাদের সামগ্রিক খাদ্যশৃঙ্খলায় বিষ ছড়িয়ে দিচ্ছে।

এই বিপদ থেকে বেরিয়ে আসার জন্য এখনই জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণ করা দরকার। কীটনাশকের ব্যবহার কমানোর পাশাপাশি কৃষকের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে হবে। নিরাপদ উপায়ে কীটনাশক ব্যবহারের প্রশিক্ষণ প্রদান এবং ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম ব্যবহারের গুরুত্ব বোঝানো দরকার। এ জন্য জৈব বা বায়ো-পেস্টিসাইড ব্যবহারের দিকে মনোযোগ দেওয়া উচিত।

কীটনাশকের ব্যবহার কমানোর পাশাপাশি নিরাপদ ও পুষ্টিকর খাদ্য উৎপাদনের জন্য রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ দরকার। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরকে কৃষকের মধ্যে জৈব কৃষিপদ্ধতি জনপ্রিয় করা এবং এর সুবিধা সম্পর্কে ব্যাপক প্রচার চালানো জরুরি। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের

জন্য নিরাপদ ও পুষ্টিকর খাদ্য উৎপাদনের পরিকল্পনা দ্রুত গ্রহণ করা দরকার। মনে রাখতে হবে, শুধু খাদ্য উৎপাদন বাড়ানোই যথেষ্ট নয়, বরং সেই খাদ্য কতটা নিরাপদ, তা নিশ্চিত করা আমাদের সবার দায়িত্ব।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত