ড. এ এন এম মাসউদুর রহমান
জিলহজ মাস হিজরি সনের দ্বাদশ ও সর্বশেষ মাস। এ মাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ আমল হলো ১০ তারিখে ঈদুল আজহা আদায় করে আল্লাহর উদ্দেশ্যে কোরবানি করা। ঈদুল আজহার নামাজ আদায় করা যেমন ওয়াজিব, তেমনি কোরবানি করাও ওয়াজিব। কিন্তু এ কোরবানি সম্পন্ন করার কিছু বিধিবিধান আছে, যা পালন করলে কোরবানি সুচারুরূপে আদায় হয় এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন সহজ হয়।
কোরবানি নেক আমলসমূহের একটি। এ কারণেই মহানবী (সা.) নিজে কোরবানি করেছেন এবং সাহাবিদের কোরবানি করার নির্দেশ প্রদান করেছেন। সামর্থ্যবান কেউ যদি কোরবানি না করেন, তাঁর ব্যাপারে সতর্কবাণী দিয়ে তিনি ইরশাদ করেন: ‘যে ব্যক্তি সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও কোরবানি করে না, সে যেন আমাদের ঈদগাহে না আসে।’ (ইবন মাজাহ)। কোরবানি করার অনেক ফজিলত রয়েছে। এ প্রসঙ্গে হাদিসে বর্ণিত আছে: ‘একদা সাহাবিগণ রাসুলুল্লাহকে (সা.) জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহর রাসুল! এই কোরবানি কী? তিনি বললেন, এটি তোমাদের পিতা ইবরাহিম (আ.)-এর সুন্নত। তাঁরা পুনরায় প্রশ্ন করলেন, এতে আমাদের জন্য কী কল্যাণ নিহিত আছে? তিনি বললেন, এর প্রতিটি পশমের বিনিময়ে একটি করে নেকি রয়েছে। তাঁরা আবার প্রশ্ন করলেন, ছাগলের পশমেও কি তাই নেকি আছে? উত্তরে তিনি বললেন, ছাগলের প্রতিটি পশমের বিনিময়েও একটি করে নেকি রয়েছে।’ (ইবন মাজাহ, আহমদ)।
প্রাপ্তবয়স্ক, জ্ঞানবান, মুকিম ও নেসাব পরিমাণ মালের মালিক হলে তাঁর ওপর কোরবানি করা ওয়াজিব। তবে মুসাফির অবস্থায় কোরবানি ওয়াজিব হয় না। যদি কোনো নারী সম্পদের মালিক হন, তাঁর ওপরেও কোরবানি ওয়াজিব হবে। মৃত ব্যক্তির পক্ষ থেকেও কোরবানি দেওয়া যায়। অপ্রাপ্তবয়স্ক সন্তানের পক্ষ থেকে কোরবানি দিলে তা নফল হিসেবে সাব্যস্ত হবে। উট, গরু, মহিষ, ছাগল, দুম্বা, ভেড়া ব্যতীত অন্য কোনো পশু কোরবানি করা বৈধ নয়। উটের বয়স কমপক্ষে ৫ বছর, গরু-মহিষের ২ বছর এবং ছাগল, দুম্বা ও ভেড়ার এক বছর ছাড়া কোরবানি হবে না। তবে ছাগল, দুম্বা ও ভেড়ার বয়স যদি ছয় মাস হয় এবং তা দেখতে যদি এক বছরের মতো মনে হয়, তবে তা দ্বারাও কোরবানি বৈধ হবে। উট, গরু, মহিষ কোরবানির ক্ষেত্রে সাতটি ভাগ দেওয়া যায়, আর অন্যগুলোর ক্ষেত্রে একটি ভাগ দেওয়া যায়। তবে সাত ভাগে কোরবানি দিলে সবার নিয়তে বিশুদ্ধতা থাকতে হবে। একজনের নিয়তও যদি গোশত খাওয়া হয়, তবে বাকি সবার কোরবানি নষ্ট হয়ে যাবে। কোরবানি অবশ্যই আল্লাহর নামে জবেহ করতে হবে এবং পশুর কমপক্ষে চারটি রগ কাটতে হবে। এগুলো হলো: কণ্ঠনালি, খাদ্যনালি ও দুই পাশের দুটি মোটা রগ। যদি এ চারটির মধ্যে তিনটি কাটা হয়, তবে কোরবানি বৈধ হবে। দুটি কাটা হলে কোরবানি বৈধ হবে না।
কোরবানির গোশতের সুন্নত পদ্ধতি হলো, গোশত তিন ভাগ করে এক ভাগ নিজের জন্য, এক ভাগ আত্মীয়স্বজনের জন্য এবং আরেক ভাগ ফকির-মিসকিনকে প্রদান করা। কোরবানির গোশত বিক্রয় করা বৈধ নয়। যদি বিক্রয় করে, তবে চামড়ার অর্থের ন্যায় তা গরিবের মাঝে বণ্টন করতে হবে। চামড়ার অর্থ যেমন ব্যক্তি খেতে পারে না, তেমনি গোশত বিক্রির অর্থও সে খেতে পারবে না। তবে কেউ চামড়া নিজ কাজে ব্যবহার করতে চাইলে, তা করতে পারবে।
কোরবানির প্রধান বিষয় হলো আল্লাহভীতি। কারণ, আল্লাহ মানুষের অন্তর দেখেন, তিনি পশুর রক্ত-গোশত কিছুই চান না। এ প্রসঙ্গে ইরশাদ হচ্ছে: ‘আল্লাহর কাছে না এগুলোর গোশত পৌঁছে আর না রক্ত পৌঁছে; বরং তাঁর কাছে পৌঁছে তোমাদের আল্লাহভীতি।’ (সুরা হজ, ৩৭)। অন্যত্র ইরশাদ হচ্ছে: ‘নিশ্চয় আল্লাহ খোদাভীরুদের কোরবানি কবুল করেন।’ (সুরা মায়িদা, ২৭)। অনুরূপভাবে পশু ক্রয় করে তার ছবি সামাজিকমাধ্যমে শেয়ার করাও রিয়া বা লোকদেখানোর শামিল। আর রিয়া-কে আল্লাহ তাআলা কখনোই পছন্দ করেন না।
কোরবানি মুসলিম জাতির পিতা ইবরাহিম (আ.)-এর স্মৃতির একটি অংশ। এর মাধ্যমে যেমন আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা যায়, তেমনি সবাই মিলে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে অনাবিল পরিবেশ তৈরি করা যায়। ঈদুল আজহার সব বিধিবিধান মেনে আমরা যেন আমাদের কোরবানি সম্পাদন করতে পারি–এ কামনা করি মহান রবের কাছে।
লেখক: সহযোগী অধ্যাপক ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
জিলহজ মাস হিজরি সনের দ্বাদশ ও সর্বশেষ মাস। এ মাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ আমল হলো ১০ তারিখে ঈদুল আজহা আদায় করে আল্লাহর উদ্দেশ্যে কোরবানি করা। ঈদুল আজহার নামাজ আদায় করা যেমন ওয়াজিব, তেমনি কোরবানি করাও ওয়াজিব। কিন্তু এ কোরবানি সম্পন্ন করার কিছু বিধিবিধান আছে, যা পালন করলে কোরবানি সুচারুরূপে আদায় হয় এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন সহজ হয়।
কোরবানি নেক আমলসমূহের একটি। এ কারণেই মহানবী (সা.) নিজে কোরবানি করেছেন এবং সাহাবিদের কোরবানি করার নির্দেশ প্রদান করেছেন। সামর্থ্যবান কেউ যদি কোরবানি না করেন, তাঁর ব্যাপারে সতর্কবাণী দিয়ে তিনি ইরশাদ করেন: ‘যে ব্যক্তি সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও কোরবানি করে না, সে যেন আমাদের ঈদগাহে না আসে।’ (ইবন মাজাহ)। কোরবানি করার অনেক ফজিলত রয়েছে। এ প্রসঙ্গে হাদিসে বর্ণিত আছে: ‘একদা সাহাবিগণ রাসুলুল্লাহকে (সা.) জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহর রাসুল! এই কোরবানি কী? তিনি বললেন, এটি তোমাদের পিতা ইবরাহিম (আ.)-এর সুন্নত। তাঁরা পুনরায় প্রশ্ন করলেন, এতে আমাদের জন্য কী কল্যাণ নিহিত আছে? তিনি বললেন, এর প্রতিটি পশমের বিনিময়ে একটি করে নেকি রয়েছে। তাঁরা আবার প্রশ্ন করলেন, ছাগলের পশমেও কি তাই নেকি আছে? উত্তরে তিনি বললেন, ছাগলের প্রতিটি পশমের বিনিময়েও একটি করে নেকি রয়েছে।’ (ইবন মাজাহ, আহমদ)।
প্রাপ্তবয়স্ক, জ্ঞানবান, মুকিম ও নেসাব পরিমাণ মালের মালিক হলে তাঁর ওপর কোরবানি করা ওয়াজিব। তবে মুসাফির অবস্থায় কোরবানি ওয়াজিব হয় না। যদি কোনো নারী সম্পদের মালিক হন, তাঁর ওপরেও কোরবানি ওয়াজিব হবে। মৃত ব্যক্তির পক্ষ থেকেও কোরবানি দেওয়া যায়। অপ্রাপ্তবয়স্ক সন্তানের পক্ষ থেকে কোরবানি দিলে তা নফল হিসেবে সাব্যস্ত হবে। উট, গরু, মহিষ, ছাগল, দুম্বা, ভেড়া ব্যতীত অন্য কোনো পশু কোরবানি করা বৈধ নয়। উটের বয়স কমপক্ষে ৫ বছর, গরু-মহিষের ২ বছর এবং ছাগল, দুম্বা ও ভেড়ার এক বছর ছাড়া কোরবানি হবে না। তবে ছাগল, দুম্বা ও ভেড়ার বয়স যদি ছয় মাস হয় এবং তা দেখতে যদি এক বছরের মতো মনে হয়, তবে তা দ্বারাও কোরবানি বৈধ হবে। উট, গরু, মহিষ কোরবানির ক্ষেত্রে সাতটি ভাগ দেওয়া যায়, আর অন্যগুলোর ক্ষেত্রে একটি ভাগ দেওয়া যায়। তবে সাত ভাগে কোরবানি দিলে সবার নিয়তে বিশুদ্ধতা থাকতে হবে। একজনের নিয়তও যদি গোশত খাওয়া হয়, তবে বাকি সবার কোরবানি নষ্ট হয়ে যাবে। কোরবানি অবশ্যই আল্লাহর নামে জবেহ করতে হবে এবং পশুর কমপক্ষে চারটি রগ কাটতে হবে। এগুলো হলো: কণ্ঠনালি, খাদ্যনালি ও দুই পাশের দুটি মোটা রগ। যদি এ চারটির মধ্যে তিনটি কাটা হয়, তবে কোরবানি বৈধ হবে। দুটি কাটা হলে কোরবানি বৈধ হবে না।
কোরবানির গোশতের সুন্নত পদ্ধতি হলো, গোশত তিন ভাগ করে এক ভাগ নিজের জন্য, এক ভাগ আত্মীয়স্বজনের জন্য এবং আরেক ভাগ ফকির-মিসকিনকে প্রদান করা। কোরবানির গোশত বিক্রয় করা বৈধ নয়। যদি বিক্রয় করে, তবে চামড়ার অর্থের ন্যায় তা গরিবের মাঝে বণ্টন করতে হবে। চামড়ার অর্থ যেমন ব্যক্তি খেতে পারে না, তেমনি গোশত বিক্রির অর্থও সে খেতে পারবে না। তবে কেউ চামড়া নিজ কাজে ব্যবহার করতে চাইলে, তা করতে পারবে।
কোরবানির প্রধান বিষয় হলো আল্লাহভীতি। কারণ, আল্লাহ মানুষের অন্তর দেখেন, তিনি পশুর রক্ত-গোশত কিছুই চান না। এ প্রসঙ্গে ইরশাদ হচ্ছে: ‘আল্লাহর কাছে না এগুলোর গোশত পৌঁছে আর না রক্ত পৌঁছে; বরং তাঁর কাছে পৌঁছে তোমাদের আল্লাহভীতি।’ (সুরা হজ, ৩৭)। অন্যত্র ইরশাদ হচ্ছে: ‘নিশ্চয় আল্লাহ খোদাভীরুদের কোরবানি কবুল করেন।’ (সুরা মায়িদা, ২৭)। অনুরূপভাবে পশু ক্রয় করে তার ছবি সামাজিকমাধ্যমে শেয়ার করাও রিয়া বা লোকদেখানোর শামিল। আর রিয়া-কে আল্লাহ তাআলা কখনোই পছন্দ করেন না।
কোরবানি মুসলিম জাতির পিতা ইবরাহিম (আ.)-এর স্মৃতির একটি অংশ। এর মাধ্যমে যেমন আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা যায়, তেমনি সবাই মিলে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে অনাবিল পরিবেশ তৈরি করা যায়। ঈদুল আজহার সব বিধিবিধান মেনে আমরা যেন আমাদের কোরবানি সম্পাদন করতে পারি–এ কামনা করি মহান রবের কাছে।
লেখক: সহযোগী অধ্যাপক ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস স্বয়ং একাধিকবার বলেছেন, আগামী জাতীয় নির্বাচন এমন এক আবহে অনুষ্ঠিত হবে যে তা শুধু দেশে নয়, সারা পৃথিবীতে সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও সর্বজনে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের একটি অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। এটা তাঁর নিজের এবং অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে
৯ ঘণ্টা আগেসোমবার, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫। আস্থা আছে কি না, স্বপ্রণোদিত হয়ে যাচাই করতে গিয়ে বিপাকে পড়েন ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রী ফ্রাঁসোয়া বাইরু। সংসদে ১৯৪ জন সংসদ সদস্য তাঁর ওপর আস্থা জানিয়ে ভোট দিলেও ৩৬৪ জন তাঁকে লাল কার্ড দেখিয়ে দিয়েছেন। উল্লেখ্য, ফ্রান্সের আইনপ্রণেতা হচ্ছেন মোট ৫৭৭ জন। ফলে মাত্র ৯ মাস ক্ষমতায়
৯ ঘণ্টা আগেসময় এখন অদ্ভুত এক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে। মানুষ তার হাজার বছরের ইতিহাসে অনেক বিপ্লবের সাক্ষী হয়েছে—কৃষি, শিল্প, তথ্যপ্রযুক্তি। প্রতিটি বিপ্লব আমাদের জীবনধারায় গভীর পরিবর্তন এনেছে, কেউ কেউ পেছনে পড়ে গেছে, কেউ সামনের সারিতে উঠে এসেছে। কিন্তু এইবার যা আসছে, তা হয়তো আর কাউকে কেবল পেছনেই ফেলবে না; বরং মানুষক
৯ ঘণ্টা আগেবাংলাদেশে ১৯৭২ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত কীটনাশক ব্যবহারের পরিমাণ প্রায় ১০ গুণ বেড়েছে, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকি তৈরি করছে। আজকের পত্রিকায় ১০ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত ‘সেন্টার ফর অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড বায়োসায়েন্স ইন্টারন্যাশনাল’ (ক্যাবি) আয়োজিত এক কর্মশালায় এই উদ্বেগজনক তথ্য উঠে এসেছে।
৯ ঘণ্টা আগে