রাজিউল হাসান
গাজায় চলমান যুদ্ধের কারণে ইসরায়েল দিন দিন একঘরে হয়ে পড়ছে। চাপ বাড়ছে দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর ওপর। সম্প্রতি স্বাধীন-সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিয়ে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, কানাডা, অস্ট্রেলিয়াসহ কয়েকটি রাষ্ট্র স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, গাজায় যা ঘটছে, তা গ্রহণযোগ্য নয়। এই অবস্থায় নড়েচড়ে বসেছে ইসরায়েলের সবচেয়ে বড় মিত্র যুক্তরাষ্ট্রও। দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত সোমবার গাজায় শান্তি প্রতিষ্ঠায় একটি ২০ দফার পরিকল্পনা প্রকাশ করেছেন। তারপরও গাজায় শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব হবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।
ফিলিস্তিন ভূখণ্ডের ইতিহাস, হাজার হাজার বছরের ইতিহাস। এই ভূখণ্ডের পরতে পরতে মিশে আছে আক্রমণ আর রক্তপাতের ইতিহাস। এ কারণেই ব্রিটিশ ইতিহাসবিদ সাইমন সেবাগ মন্টিফিওরি তাঁর ‘জেরুজালেম: দ্য বায়োগ্রাফি’ বইয়ের মুখবন্ধে জেরুজালেম, তথা ফিলিস্তিন ভূখণ্ডকে বর্ণনা করতে গিয়ে বলেছেন, ‘জেরুজালেমের ইতিহাস মানে বিশ্বেরই ইতিহাস। একসময় জেরুজালেমকে বিশ্বের কেন্দ্রবিন্দু মনে করা হতো। আজকের দিনে বিষয়টি আরও প্রাসঙ্গিক। এই জায়গা গ্রীষ্মের খরতাপে পোড়ে, শীতের হিমশীতল হাওয়ায় কেঁপে ওঠে, আর এর পাথুরে জমিন মানুষকে দূরে ঠেলে দিতে চায়।’
গাজা উপত্যকা, পশ্চিম তীর আর জেরুজালেম—এই তিন ভূখণ্ড নিয়েই যুগ যুগ ধরে স্বাধীন-সার্বভৌম ফিলিস্তিন ভূখণ্ডের স্বপ্ন দেখে এসেছেন ফিলিস্তিনিরা। আজও সেই স্বপ্ন সুদূরপরাহত। বরং দিন দিন তা ফিকে হচ্ছে। এই ভূখণ্ড যুগে যুগে আকর্ষণ করেছে প্রাচীন মিসরের ফারাওদের, রোমান সম্রাটদের এবং গ্রিক সম্রাটদের। এমনকি ফরাসি বীর নেপোলিয়ান বোনাপার্ট, মোগল সম্রাট চেঙ্গিস খানও এই ভূখণ্ড জয়ের মানসে অভিযানে বেরিয়েছিলেন। তুর্কি সুলতান, আরব শাসক, রাশিয়ার জারসহ আরও কত কত শাসকের নজর পড়েছে জেরুজালেম, তথা ফিলিস্তিন ভূখণ্ডের ওপর, তার কোনো ইয়ত্তা নেই। খ্রিষ্টের জন্মের বহু বছর আগে এই ভূখণ্ডে ব্যাবিলনের সম্রাট নেবুচাদনেজার ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছেন, মরেছে লাখো মানুষ। ওই ঘটনার ঠিক ৫০০ বছর পর তৎকালীন রোমান সম্রাট ভেসপাসিয়ানের ছেলে টাইটাসও এখানে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছেন। এই দুই বড় ঘটনার আগে-পরেও ফিলিস্তিন ভূখণ্ডে হত্যাযজ্ঞ সংঘটিত হয়েছে।
সে হিসেবে ফিলিস্তিন ভূখণ্ডের ইতিহাস আসলে এই অঞ্চলের দুঃখগাথা। এই গাথার প্রতিটা পরতে পরতে লুকিয়ে আছে হত্যাযজ্ঞের নারকীয় চিত্র আর স্বাধীন-সার্বভৌম ভূখণ্ড পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা। শান্তিতে নোবেলজয়ী প্রয়াত ইয়াসির আরাফাত অস্ত্র ছেড়ে আলোচনার পথ ধরেছিলেন স্বাধীন ফিলিস্তিনের স্বপ্নে বিভোর হয়েই। তবে তাঁর শুরু করা সে প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে অনেক আগেই। অপর দিকে সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের দাবি, তারা অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছে স্বাধীন ফিলিস্তিন প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে। কিন্তু তাদের সে পথও যে সঠিক নয়, তা এরই মধ্যে প্রমাণিত হয়েছে। সর্বশেষ ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে তাদের চালানো আচমকা আক্রমণের খেসারত এখনো দিতে হচ্ছে গাজাবাসীকে। চোকাতে হচ্ছে চরম মূল্য।
জাতিসংঘের একটি স্বাধীন তদন্ত কমিশন সম্প্রতি বলেছে, গাজায় গণহত্যা চলছে। এর আগে জাতিসংঘ একাধিকবার সতর্ক করেছে, গাজায় দুর্ভিক্ষ শুরু হয়েছে, অনাহারে মানুষ মরছে। তবে তাতে কর্ণপাত করেনি ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ।
গাজায় শান্তি আনতে গত জুলাইয়ে ফ্রান্স ও সৌদি আরব একটি প্রস্তাব তুলেছিল। সেখান থেকে কিছু শর্ত ধার করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত সোমবার ২০ দফার পরিকল্পনাটি প্রকাশ করেছেন। সেই পরিকল্পনায় ট্রাম্পের নেতৃত্বাধীন ‘শান্তি পরিষদ’ গঠনের কথা বলা হয়েছে, যা মূলত স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় অন্তর্বর্তী কর্তৃপক্ষ হিসেবে কাজ করবে। এই পরিষদে থাকবেন সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারও। গাজায় নৈমিত্তিক কাজ পরিচালনার জন্য এই পরিষদের অধীনে গঠন করা হবে একটি টেকনোক্র্যাট কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়া হামাসকে অস্ত্র সমর্পণ এবং জিম্মি মুক্তির শর্তও দেওয়া হয়েছে। বিনিময়ে ইসরায়েলের কারাগারে আটক ফিলিস্তিনিদের মুক্তির আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। হামাসের যে সদস্যরা অস্ত্র সমর্পণ করে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের পক্ষ নেবে, তাদের দায়মুক্তির আশ্বাসও রয়েছে পরিকল্পনায়। আর যারা অস্ত্র সমর্পণ করবে না, তাদের করা হবে বিতাড়ন।
নেতানিয়াহুকে পাশে রেখেই ট্রাম্প যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এই পরিকল্পনার কথা জানান। পাশাপাশি হুঁশিয়ারি দেন, হামাস যদি পরিকল্পনা মেনে না নেয়, তাহলে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ তাঁর পূর্ণ সমর্থন পাবে। অর্থাৎ নেতানিয়াহু যা খুশি তা করতে পারবেন এবং তাতে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন থাকবে।
এর আগে ট্রাম্পের পূর্বসূরি সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ২০২৪ সালের মে মাসে এমন একটি পরিকল্পনার ঘোষণা দিয়েছিলেন। কিন্তু সেটি ব্যর্থ হয়েছে। এবার ট্রাম্প ঘোষণা করলেন। কিন্তু এই পরিকল্পনায়ও অনেক কিছুই অস্পষ্ট রয়ে গেছে। ইসরায়েল কীভাবে গাজা থেকে সেনাবাহিনী প্রত্যাহার করবে, জিম্মি মুক্তি কীভাবে ঘটবে, ইসরায়েলি কারাগারে থাকা ফিলিস্তিনি কোন কোন বন্দী মুক্তি পাবে, যুদ্ধ বন্ধ হওয়ার পর কোন কোন পদক্ষেপ নেওয়া হবে, তার কিছুই স্পষ্ট করা হয়নি পরিকল্পনায়।
পরিকল্পনাটির একটি বিশেষ দিক হলো এখানে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের কথা বলা হয়েছে। তবে এতটাই অস্পষ্টভাবে এই বিষয়টি এসেছে যে তাতে স্বাধীন-সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বপ্নের প্রতিফলন ঘটেনি। বরং পরিকল্পনায় বলা হয়েছে, যদি রামাল্লাহভিত্তিক ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের সংস্কার করা সম্ভব হয়, তাহলে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার নির্ভরযোগ্য পথ তৈরি হবে।
প্রাথমিকভাবে আরব রাষ্ট্রগুলো ট্রাম্পের পরিকল্পনাকে স্বাগত জানিয়েছে। কারণ, তারা এটিকে বড় একটি অগ্রগতি হিসেবে দেখছে। তা ছাড়া পরিকল্পনায় ‘ইসরায়েল গাজা দখল করবে না বা ছিনিয়ে নেবে না’ বলে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। তবে দখলকৃত পশ্চিম তীরের বিষয়ে কোনো প্রতিশ্রুতি এখানে নেই। এদিকে পরিকল্পনায় গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর অবস্থানের কথাও বলা হয়েছে। সব মিলিয়ে এই পরিকল্পনা হামাস কিংবা আরব রাষ্ট্রগুলোর জন্য পুরোপুরি মেনে নেওয়া কতটা সম্ভব, সে নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।
এদিকে নেতানিয়াহু কিছুতেই স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার বিষয়টি মানতে নারাজ। তাঁর ও তাঁর সরকারের মতে, স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র ইসরায়েলের জন্য নিরাপত্তা হুমকি। ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের দাবি হলো, গাজাকে হামাসমুক্ত করতে হবে এবং ভবিষ্যতে কোনো ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা যাবে না। কাজেই নেতানিয়াহুর কট্টর ডানপন্থী সরকার ট্রাম্পের প্রস্তাব পুরোপুরি মানবে কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে।
এই অবস্থায় গাজায় শান্তি আসবে কি না, সে প্রশ্নের জবাব পেতে আমাদের ভবিষ্যতের দিকেই তাকিয়ে থাকতে হবে। তবে একটা বিষয় এরই মধ্যে স্পষ্ট হয়েছে। ইসরায়েলের একগুঁয়ে আচরণের কারণে তার পশ্চিমা মিত্ররা দিন দিন দূরে সরে যাচ্ছে। ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ায় যুক্তরাজ্য, কানাডা, ফান্স, অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রনীতিতে বেশ কিছুটা পরিবর্তন আসবে। তাতে গাজাবাসীর উপকার কতটা হবে, তা এখনই স্পষ্ট না হলেও ইসরায়েল যে আরও বেকায়দায় পড়বে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
লেখক: সাংবাদিক
গাজায় চলমান যুদ্ধের কারণে ইসরায়েল দিন দিন একঘরে হয়ে পড়ছে। চাপ বাড়ছে দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর ওপর। সম্প্রতি স্বাধীন-সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিয়ে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, কানাডা, অস্ট্রেলিয়াসহ কয়েকটি রাষ্ট্র স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, গাজায় যা ঘটছে, তা গ্রহণযোগ্য নয়। এই অবস্থায় নড়েচড়ে বসেছে ইসরায়েলের সবচেয়ে বড় মিত্র যুক্তরাষ্ট্রও। দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত সোমবার গাজায় শান্তি প্রতিষ্ঠায় একটি ২০ দফার পরিকল্পনা প্রকাশ করেছেন। তারপরও গাজায় শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব হবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।
ফিলিস্তিন ভূখণ্ডের ইতিহাস, হাজার হাজার বছরের ইতিহাস। এই ভূখণ্ডের পরতে পরতে মিশে আছে আক্রমণ আর রক্তপাতের ইতিহাস। এ কারণেই ব্রিটিশ ইতিহাসবিদ সাইমন সেবাগ মন্টিফিওরি তাঁর ‘জেরুজালেম: দ্য বায়োগ্রাফি’ বইয়ের মুখবন্ধে জেরুজালেম, তথা ফিলিস্তিন ভূখণ্ডকে বর্ণনা করতে গিয়ে বলেছেন, ‘জেরুজালেমের ইতিহাস মানে বিশ্বেরই ইতিহাস। একসময় জেরুজালেমকে বিশ্বের কেন্দ্রবিন্দু মনে করা হতো। আজকের দিনে বিষয়টি আরও প্রাসঙ্গিক। এই জায়গা গ্রীষ্মের খরতাপে পোড়ে, শীতের হিমশীতল হাওয়ায় কেঁপে ওঠে, আর এর পাথুরে জমিন মানুষকে দূরে ঠেলে দিতে চায়।’
গাজা উপত্যকা, পশ্চিম তীর আর জেরুজালেম—এই তিন ভূখণ্ড নিয়েই যুগ যুগ ধরে স্বাধীন-সার্বভৌম ফিলিস্তিন ভূখণ্ডের স্বপ্ন দেখে এসেছেন ফিলিস্তিনিরা। আজও সেই স্বপ্ন সুদূরপরাহত। বরং দিন দিন তা ফিকে হচ্ছে। এই ভূখণ্ড যুগে যুগে আকর্ষণ করেছে প্রাচীন মিসরের ফারাওদের, রোমান সম্রাটদের এবং গ্রিক সম্রাটদের। এমনকি ফরাসি বীর নেপোলিয়ান বোনাপার্ট, মোগল সম্রাট চেঙ্গিস খানও এই ভূখণ্ড জয়ের মানসে অভিযানে বেরিয়েছিলেন। তুর্কি সুলতান, আরব শাসক, রাশিয়ার জারসহ আরও কত কত শাসকের নজর পড়েছে জেরুজালেম, তথা ফিলিস্তিন ভূখণ্ডের ওপর, তার কোনো ইয়ত্তা নেই। খ্রিষ্টের জন্মের বহু বছর আগে এই ভূখণ্ডে ব্যাবিলনের সম্রাট নেবুচাদনেজার ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছেন, মরেছে লাখো মানুষ। ওই ঘটনার ঠিক ৫০০ বছর পর তৎকালীন রোমান সম্রাট ভেসপাসিয়ানের ছেলে টাইটাসও এখানে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছেন। এই দুই বড় ঘটনার আগে-পরেও ফিলিস্তিন ভূখণ্ডে হত্যাযজ্ঞ সংঘটিত হয়েছে।
সে হিসেবে ফিলিস্তিন ভূখণ্ডের ইতিহাস আসলে এই অঞ্চলের দুঃখগাথা। এই গাথার প্রতিটা পরতে পরতে লুকিয়ে আছে হত্যাযজ্ঞের নারকীয় চিত্র আর স্বাধীন-সার্বভৌম ভূখণ্ড পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা। শান্তিতে নোবেলজয়ী প্রয়াত ইয়াসির আরাফাত অস্ত্র ছেড়ে আলোচনার পথ ধরেছিলেন স্বাধীন ফিলিস্তিনের স্বপ্নে বিভোর হয়েই। তবে তাঁর শুরু করা সে প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে অনেক আগেই। অপর দিকে সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের দাবি, তারা অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছে স্বাধীন ফিলিস্তিন প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে। কিন্তু তাদের সে পথও যে সঠিক নয়, তা এরই মধ্যে প্রমাণিত হয়েছে। সর্বশেষ ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে তাদের চালানো আচমকা আক্রমণের খেসারত এখনো দিতে হচ্ছে গাজাবাসীকে। চোকাতে হচ্ছে চরম মূল্য।
জাতিসংঘের একটি স্বাধীন তদন্ত কমিশন সম্প্রতি বলেছে, গাজায় গণহত্যা চলছে। এর আগে জাতিসংঘ একাধিকবার সতর্ক করেছে, গাজায় দুর্ভিক্ষ শুরু হয়েছে, অনাহারে মানুষ মরছে। তবে তাতে কর্ণপাত করেনি ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ।
গাজায় শান্তি আনতে গত জুলাইয়ে ফ্রান্স ও সৌদি আরব একটি প্রস্তাব তুলেছিল। সেখান থেকে কিছু শর্ত ধার করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত সোমবার ২০ দফার পরিকল্পনাটি প্রকাশ করেছেন। সেই পরিকল্পনায় ট্রাম্পের নেতৃত্বাধীন ‘শান্তি পরিষদ’ গঠনের কথা বলা হয়েছে, যা মূলত স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় অন্তর্বর্তী কর্তৃপক্ষ হিসেবে কাজ করবে। এই পরিষদে থাকবেন সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারও। গাজায় নৈমিত্তিক কাজ পরিচালনার জন্য এই পরিষদের অধীনে গঠন করা হবে একটি টেকনোক্র্যাট কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়া হামাসকে অস্ত্র সমর্পণ এবং জিম্মি মুক্তির শর্তও দেওয়া হয়েছে। বিনিময়ে ইসরায়েলের কারাগারে আটক ফিলিস্তিনিদের মুক্তির আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। হামাসের যে সদস্যরা অস্ত্র সমর্পণ করে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের পক্ষ নেবে, তাদের দায়মুক্তির আশ্বাসও রয়েছে পরিকল্পনায়। আর যারা অস্ত্র সমর্পণ করবে না, তাদের করা হবে বিতাড়ন।
নেতানিয়াহুকে পাশে রেখেই ট্রাম্প যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এই পরিকল্পনার কথা জানান। পাশাপাশি হুঁশিয়ারি দেন, হামাস যদি পরিকল্পনা মেনে না নেয়, তাহলে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ তাঁর পূর্ণ সমর্থন পাবে। অর্থাৎ নেতানিয়াহু যা খুশি তা করতে পারবেন এবং তাতে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন থাকবে।
এর আগে ট্রাম্পের পূর্বসূরি সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ২০২৪ সালের মে মাসে এমন একটি পরিকল্পনার ঘোষণা দিয়েছিলেন। কিন্তু সেটি ব্যর্থ হয়েছে। এবার ট্রাম্প ঘোষণা করলেন। কিন্তু এই পরিকল্পনায়ও অনেক কিছুই অস্পষ্ট রয়ে গেছে। ইসরায়েল কীভাবে গাজা থেকে সেনাবাহিনী প্রত্যাহার করবে, জিম্মি মুক্তি কীভাবে ঘটবে, ইসরায়েলি কারাগারে থাকা ফিলিস্তিনি কোন কোন বন্দী মুক্তি পাবে, যুদ্ধ বন্ধ হওয়ার পর কোন কোন পদক্ষেপ নেওয়া হবে, তার কিছুই স্পষ্ট করা হয়নি পরিকল্পনায়।
পরিকল্পনাটির একটি বিশেষ দিক হলো এখানে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের কথা বলা হয়েছে। তবে এতটাই অস্পষ্টভাবে এই বিষয়টি এসেছে যে তাতে স্বাধীন-সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বপ্নের প্রতিফলন ঘটেনি। বরং পরিকল্পনায় বলা হয়েছে, যদি রামাল্লাহভিত্তিক ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের সংস্কার করা সম্ভব হয়, তাহলে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার নির্ভরযোগ্য পথ তৈরি হবে।
প্রাথমিকভাবে আরব রাষ্ট্রগুলো ট্রাম্পের পরিকল্পনাকে স্বাগত জানিয়েছে। কারণ, তারা এটিকে বড় একটি অগ্রগতি হিসেবে দেখছে। তা ছাড়া পরিকল্পনায় ‘ইসরায়েল গাজা দখল করবে না বা ছিনিয়ে নেবে না’ বলে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। তবে দখলকৃত পশ্চিম তীরের বিষয়ে কোনো প্রতিশ্রুতি এখানে নেই। এদিকে পরিকল্পনায় গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর অবস্থানের কথাও বলা হয়েছে। সব মিলিয়ে এই পরিকল্পনা হামাস কিংবা আরব রাষ্ট্রগুলোর জন্য পুরোপুরি মেনে নেওয়া কতটা সম্ভব, সে নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।
এদিকে নেতানিয়াহু কিছুতেই স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার বিষয়টি মানতে নারাজ। তাঁর ও তাঁর সরকারের মতে, স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র ইসরায়েলের জন্য নিরাপত্তা হুমকি। ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের দাবি হলো, গাজাকে হামাসমুক্ত করতে হবে এবং ভবিষ্যতে কোনো ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা যাবে না। কাজেই নেতানিয়াহুর কট্টর ডানপন্থী সরকার ট্রাম্পের প্রস্তাব পুরোপুরি মানবে কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে।
এই অবস্থায় গাজায় শান্তি আসবে কি না, সে প্রশ্নের জবাব পেতে আমাদের ভবিষ্যতের দিকেই তাকিয়ে থাকতে হবে। তবে একটা বিষয় এরই মধ্যে স্পষ্ট হয়েছে। ইসরায়েলের একগুঁয়ে আচরণের কারণে তার পশ্চিমা মিত্ররা দিন দিন দূরে সরে যাচ্ছে। ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ায় যুক্তরাজ্য, কানাডা, ফান্স, অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রনীতিতে বেশ কিছুটা পরিবর্তন আসবে। তাতে গাজাবাসীর উপকার কতটা হবে, তা এখনই স্পষ্ট না হলেও ইসরায়েল যে আরও বেকায়দায় পড়বে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
লেখক: সাংবাদিক
শরৎ এসেছে। এ যেন এক অনুপম কবিতা, যা বারবার নতুন করে ছুঁয়ে যায় মনকে। তপ্ত গ্রীষ্মের দীর্ঘ দাবদাহ থেকে মুক্তি আর শীতের কোমল আগমনী বার্তা মিলেমিশে একাকার হয়ে যাচ্ছে মোহময় এক অপরূপ সুরে। নীল আকাশে ভেসে বেড়ানো তুলোর মতো শুভ্র সাদা মেঘ, দোল খাওয়া কাশফুলের সমারোহ—সব মিলিয়ে শরৎ প্রকৃতিকে সাজায় শান্তি...
৬ ঘণ্টা আগেবাঙালি হিন্দুধর্মাবলম্বীদের কাছে আয়োজন ও আনুষ্ঠানিকতার দিক থেকে দুর্গাপূজাই বড় পরিসরে উদ্যাপিত হয়ে থাকে। দুর্গাপূজার প্রধান আবেদন হলো, সব অশুভ শক্তি নির্মূল করা। হিন্দু পুরাণ মতে, রামচন্দ্র রাক্ষস রাজা রাবণকে বধ করার জন্য আশ্বিন মাসে মা দুর্গার আরাধনা করেছিলেন; তখন থেকে দুর্গাপূজার প্রচলন শুরু হয়।
৬ ঘণ্টা আগেসংবাদটি অনেকটা নীরবেই এসেছে সংবাদপত্রে—দৃষ্টিও কাড়েনি তা বড় একটা। হয়তো সেটি তেমন কোনো উত্তেজক বিষয় নয় বলে; কিংবা তা সরব কোনো সংকট না হওয়ার কারণে। কিন্তু চূড়ান্ত বিচারে, সংবাদটি একটি অশনিসংকেত বয়ে আনে। বাংলাদেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ সনদপ্রাপ্ত প্রায় ৯ লাখ তরুণ কর্মহীন...
১ দিন আগেগত সরকারের আমলে দেশের অনেক বেসরকারি কলেজ সরকারীকরণ করা হয়। তবে ২০১৮ সালে সরকারি হওয়ার আদেশ জারির পর থেকে সংশ্লিষ্ট কলেজগুলোতে এক নাজুক পরিস্থিতি বিরাজ করছে। শিক্ষার্থী, শিক্ষক, অভিভাবকদের সুযোগ-সুবিধা ও কল্যাণের কথা বিবেচনা করেই তো সরকারীকরণ করা হয়েছিল...
১ দিন আগে