Ajker Patrika

পদ্মা অয়েল কোম্পানি: সিবিএ নেতার তিন কোটির গাড়ি-বাড়ি ও ব্যবসা

সোহেল মারমা, চট্টগ্রাম 
মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন
মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন

মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন পদ্মা অয়েলের কর্মচারী। কিন্তু চড়েন দামি ব্যক্তিগত গাড়িতে। তাঁর নামে রয়েছে বেশ কিছু জমি। আরও আছে কয়েক কোটি টাকার কমিউনিটি সেন্টার, শেয়ারসহ নানা ব্যবসা। তাঁর বিরুদ্ধে পদ্মা অয়েলের কর্মচারীদের বদলি, পদোন্নতি নিয়ে ঘুষ-বাণিজ্যের অভিযোগ রয়েছে।

অভিযুক্ত মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন বর্তমানে চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় পদ্মা অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের ক্লেরিক্যাল সুপারভাইজার ও শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের (সিবিএ) সাধারণ সম্পাদক। এ ছাড়া তিনি আনোয়ারা উপজেলা আওয়ামী লীগের শ্রমবিষয়ক সম্পাদক। তাঁর বাড়ি চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার বৈরাগ ইউনিয়নে। নগরীতে তিনি পাঁচলাইশ থানাধীন হিল ভিউ আবাসিকে শিশু একাডেমি-সংলগ্ন ইকুইটি ভবনে থাকেন।

২০১৯ সালের ১২ মে নাছির উদ্দিন দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) সম্পদ বিবরণী জমা দেন। সম্পদ বিবরণীতে নাছির উদ্দিন ১ কোটি ৩০ লাখ টাকার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ অর্জনের ঘোষণা দেন। দুদকের প্রাথমিক অনুসন্ধানে সম্পদের তথ্য গোপন ও অবৈধভাবে সম্পদ অর্জনের অভিযোগ পাওয়ায় ২০২৩ সালে তাঁর বিরুদ্ধে একটি মামলা করে দুদক। দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয় চট্টগ্রাম-১-এর একজন উপসহকারী পরিচালক বাদী হয়ে এই মামলা করেন। এই মামলায় মোহাম্মদ নাছির উদ্দিনকে অভিযুক্ত করে গত ১১ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন দুদক চট্টগ্রাম-১ কার্যালয়ের আরেক উপসহকারী পরিচালক আপেল মাহমুদ বিপ্লব।

চার্জশিটে মোহাম্মদ নাছির উদ্দিনের বিরুদ্ধ জ্ঞাত আয়ের উৎসের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ পৌনে ৩ কোটি টাকার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ অর্জন ও ভোগদখলে রাখা এবং তথ্য গোপনের অভিযোগ আনা হয়েছে।

জানতে চাইলে দুদকের কৌঁসুলি মো. মোকাররম হোসাইন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘দুদকের মামলায় পদ্মা অয়েলের কর্মচারী মোহাম্মদ নাছির উদ্দিনকে অভিযুক্ত করে মহানগর দায়রা জজ আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে। দায়রা জজ ছুটিতে থাকায় এখনো চার্জশিট গ্রহণের বিষয়ে শুনানি হয়নি। রোববার আদালত খুললে আমরা দুদকের পক্ষ থেকে চার্জশিটের বিষয়টি উত্থাপন করব।’

দুদকের অনুসন্ধানের তথ্য অনুযায়ী, মোহাম্মদ নাছির উদ্দিনের নামে গ্রামের বাড়ি আনোয়ারায় ২৮ লাখ টাকা মূল্যের বেশ কিছু জমি, একই উপজেলার চৌমুহনী বাজারে ১ কোটি ৪২ লাখ ৮৭ হাজার টাকা ব্যয়ে নির্মিত শশী কমিউনিটি সেন্টারের ব্যবসা, ২৪ লাখ টাকা দামের একটি ব্যক্তিগত গাড়ি, চট্টগ্রাম নগরীতে ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকে ৪৫ লাখ টাকা জমা, ৪০ লাখ টাকার শেয়ার ব্যবসা, ইনস্যুরেন্সসহ আরও কিছু স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ রয়েছে। এ ছাড়া তাঁর মেডিকেলপড়ুয়া মেয়ের পেছনে তিনি তিন বছরে প্রায় ২৩ লাখ টাকার টিউশন ফি পরিশোধ করেছেন বলে দুদকের তদন্তে উঠে আসে।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, অভিযুক্ত মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন বর্তমানে দুদকের মামলাটিতে জামিনে আছেন।

দুদক জানায়, ১৯৮৬ সালে পিয়ন পদে মোহাম্মদ নাছির উদ্দিনের চাকরি নিয়মিত হয়। মূল বেতন ছিল ২৩০ টাকা। ২০১৪ সালে ট্যাংক-লরির চালকের সহকারী থেকে চেকার, পরের ছয় মাসের মাথায় সুপারভাইজার হিসেবে পদোন্নতি পান। পাশাপাশি সিবিএর সঙ্গে নিজেকে সম্পৃক্ত করেন নাছির।

পদ্মা অয়েলের কর্মচারীদের সূত্র জানায়, দাপুটে এই শ্রমিকনেতা অফিস করেন খুব কম সময়। অফিসে এলে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করে কিছু সময় অবস্থান করে চলে যান বলেও অভিযোগ রয়েছে। দুদকের মামলা তদন্ত চলাকালে ও চাকরিকালীন সময়ে গত বছর জানুয়ারির প্রথম দিকে তিনি গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে যান। পরে জামিনে বেরিয়ে পুনরায় কর্মস্থলে যোগ দেন।

দুর্নীতির মামলায় গত মাসে চার্জশিটে তাঁকে অভিযুক্ত করা হলেও তিনি এখনো কর্মস্থলে বহাল তবিয়তে। নিয়ম অনুযায়ী মামলার আসামি হয়ে কারাগারে গেলে কিংবা মামলার তদন্তে দোষী প্রমাণিত হলে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।

জানতে চাইলে পদ্মা অয়েল লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মফিজুর রহমান বলেন, ‘তাঁর বিরুদ্ধে চার্জশিট দেওয়ার বিষয়ে শুনেছি। কিন্তু আমার কাছে এখনো অফিশিয়ালি কোনো চিঠি আসেনি। চিঠি পেলে নিয়ম অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ সময়মতো অফিস না করার বিষয়টি অবগত নন বলে জানান এমডি।

অভিযোগের বিষয়ে কথা বলতে মোহাম্মদ নাছির উদ্দিনের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ধরেননি। পরে পরিচয় দিয়ে বার্তা পাঠালেও তিনি কোনো উত্তর দেননি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত