Ajker Patrika

শারদীয় দুর্গোৎসব

সম্পাদকীয়
শারদীয় দুর্গোৎসব

বাঙালি হিন্দুধর্মাবলম্বীদের কাছে আয়োজন ও আনুষ্ঠানিকতার দিক থেকে দুর্গাপূজাই বড় পরিসরে উদ্‌যাপিত হয়ে থাকে। দুর্গাপূজার প্রধান আবেদন হলো, সব অশুভ শক্তি নির্মূল করা। হিন্দু পুরাণ মতে, রামচন্দ্র রাক্ষস রাজা রাবণকে বধ করার জন্য আশ্বিন মাসে মা দুর্গার আরাধনা করেছিলেন; তখন থেকে দুর্গাপূজার প্রচলন শুরু হয়। এই উৎসবের আগমন ঘটে শরৎকালের শিউলি ফুলের গন্ধে আর কাশফুলের শুভ্রতায়। প্রকৃতি যেন নিজে এই উৎসবে মেতে ওঠে।

দেবী দুর্গা মহাশক্তির প্রতীক। অশুভ শক্তিকে দমন করার জন্য দেবী দুর্গার আবির্ভাব। সব ধরনের বিপদ থেকে যিনি জীবকে রক্ষা করেন, জগতের কল্যাণ সাধন করেন এবং মানুষের দুঃখ-কষ্ট দূর করেন, তিনিই হচ্ছেন দুর্গা। তিনি আদ্যাশক্তি, মহামায়া, শিবানী, ভবানী, দশভুজা, চণ্ডী, নারায়ণী প্রভৃতি নামে অভিহিত হন।

মূলত মহালয়ার মাধ্যমে পূজার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। তারপর পঞ্চমী, ষষ্ঠী, সপ্তমী, অষ্টমী, নবমী এবং দশমীর দিনে দুর্গার বিসর্জনের মাধ্যমে সমাপ্তি ঘটে পূজার আনুষ্ঠানিকতার।

দুর্গাপূজা হিন্দু সম্প্রদায়ের উৎসব হলেও জাতি-ধর্মনির্বিশেষে সবাই এই আনন্দ উৎসবে মেতে ওঠে। তাই দুর্গোৎসব শুধু ধর্মীয় উৎসবই নয়, এটি একটি সর্বজনীন উৎসব এবং এই উৎসবে বাঙালির মধ্যে এক অসাম্প্রদায়িক চেতনা ফুটে ওঠে।

আমাদের দেশে প্রতিবছর পূজার সময় পূজামণ্ডপে হামলা থেকে শুরু করে নানা ধরনের অপকর্ম হয়। এ বছরও এর ব্যতিক্রম নয়। তবে এ বছর বড় কোনো অপকর্মের ঘটনা ঘটেনি। কিছু বিপথগামী মানুষ এ ধরনের অপকর্মের সঙ্গে জড়িত থাকে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা তৎপর থাকার পরও ঘটনাগুলো ঘটে থাকে। সমাজে যত দিন পর্যন্ত অসাম্প্রদায়িক চেতনার বিকাশ এবং অন্য ধর্মের লোকের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ তৈরি না হবে, তত দিন এ ধরনের ঘটনা ঘটতে থাকবে। এই অসাম্প্রদায়িক বোধ জাগরিত করার দায়িত্ব আসলে সবার।

পূজার আনন্দের মধ্যেও কিছু নেতিবাচক ব্যাপার চোখে পড়ে। পূজার বিপুল খরচ, আড়ম্বরের প্রতিযোগিতা এবং প্লাস্টিক ও অন্যান্য বর্জ্যের দূষণ পরিবেশের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। আধুনিক পূজায় থিম ও লাইটিংয়ের গুরুত্ব বাড়লেও অনেক ক্ষেত্রে পূজার মূল শিক্ষা থেকে অনেকে দূরে সরে যাচ্ছে। এই বিষয়ে আমাদের সচেতন হওয়া প্রয়োজন। পূজা হওয়া উচিত আরও পরিবেশবান্ধব এবং এর মূল উদ্দেশ্য হওয়া উচিত আধ্যাত্মিক শান্তি ও সামাজিক সম্প্রীতি বৃদ্ধি।

শক্তির প্রতীক রূপেই দুর্গার পূজা করা হয়। দুর্গাপূজা মানে নিজের ভেতর সেই শক্তির সঞ্চার ঘটানো, যে শক্তি দিয়ে সব অপশক্তিতে প্রতিহত ও নির্মূল করা যায়। সব যুগে অপশক্তির দাপট থাকে। কাজী নজরুল ইসলাম তাই বলেছেন—‘দশমুখো ঐ ধনিক রাবণ, দশ দিকে আছে মেলিয়া মুখ, বিশ হাতে করে লুণ্ঠন তবু, ভরে নাকো ওর ক্ষুধিত বুক।’ তাই এ কালের রাবণদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর শিক্ষা যেন আমরা ভুলে না যাই।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

গাজার জলসীমায় পৌঁছে গেছে ফ্লোটিলার এক জাহাজ, পথে আরও ২৩টি

ইসরায়েলি সব কূটনীতিককে দেশ থেকে বের হয়ে যাওয়ার নির্দেশ কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্টের

বাংলাদেশ–নেপালে সহিংস আন্দোলন হলেও পরিবর্তন আসেনি, বিদেশি হস্তক্ষেপের সুযোগ তৈরি হয়েছে: আরএসএস প্রধান

এখনো গাজা অভিমুখে চলছে ফ্লোটিলার ২৬ নৌযান, অবস্থান ৫০ কিমি দূরে

২০২৫ সালে বসবাসের জন্য সেরা ৫ দেশ

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত