Ajker Patrika

খুলনার ৬ আসন: বিএনপির মনোনয়ন-দৌড়ে যাঁরা

  • হাইকমান্ডের সঙ্গে দেনদরবার চালাচ্ছেন অনেকে।
  • কোন্দল মিটিয়ে দ্রুত প্রার্থী চূড়ান্ত না করলে নির্বাচনে প্রভাব পড়ার শঙ্কা।
  • ভোটারদের সমর্থন আদায়ে নানা কার্যক্রম চলছে।
  • মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে সবাই শতভাগ আশাবাদী।
শেখ আবু হাসান, খুলনা
খুলনার ৬ আসন: বিএনপির মনোনয়ন-দৌড়ে যাঁরা

২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে অনুষ্ঠিত হতে পারে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। প্রার্থী চূড়ান্তের কার্যক্রম চালাচ্ছে রাজনৈতিক দলগুলো। বসে নেই বড় রাজনৈতিক দল বিএনপিও। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দলটি বিভিন্ন আসনে ইতিমধ্যে প্রার্থী চূড়ান্তও করেছে। কিন্তু খুলনার ৬ আসনে এখনো প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়নি। এসব আসনে দলীয় মনোনয়ন পেতে হাইকমান্ডের সঙ্গে দেনদরবার চালাচ্ছেন অনেকে। পাশাপাশি সংসদীয় এলাকায় ভোটারদের সমর্থন আদায়ে নানা কার্যক্রম চালাচ্ছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বিএনপি বিভিন্ন আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করে তাঁদের কাজ শুরুর নির্দেশ দিয়েছে। তবে খুলনা অঞ্চলের আসনগুলোয় দলটি এখনো প্রার্থী চূড়ান্ত করতে পারেনি। ফলে মনোনয়নপ্রত্যাশীরা রয়েছেন দুশ্চিন্তায়। ভোটের আগে দলের মধ্যেই প্রার্থী হওয়ার তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামতে হচ্ছে তাঁদের। পাশাপাশি রয়েছে দলীয় কোন্দল। কোন্দল মিটিয়ে দ্রুত প্রার্থী চূড়ান্ত করতে না পারলে নির্বাচনে এর প্রভাব পড়তে পারে বলে মনে করছেন তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, খুলনা-১ (দাকোপ-বটিয়াঘাটা উপজেলা) আসনে বিএনপির দুই নেতা মনোনয়ন পেতে মরিয়া হয়ে চেষ্টা চালাচ্ছেন। তাঁরা হলেন জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক আমীর এজাজ খান এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি জিয়াউর রহমান পাপুল। দলে মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে দুজনই আশাবাদী। বর্তমানে তাঁরা এলাকায় বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড নিয়ে নির্বাচনী তৎপরতায় ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন।

খুলনার গুরুত্বপূর্ণ আসন হিসেবে বিবেচিত খুলনা-২ (খুলনা সদর-সোনাডাঙ্গা-হরিণটানা ও লবণচরা থানা) আসনে প্রার্থী নির্ধারণ নিয়ে জটিল সমীকরণের মুখে পড়েছে বিএনপি। এ আসনে দলীয় কোন্দল তীব্র। মহানগর বিএনপির বর্তমান সাধারণ সম্পাদক শফিকুল আলম তুহিন প্রার্থী হতে প্রচারণা চালাচ্ছেন। ভোটের মাঠে তৎপর রয়েছেন তাঁর প্রতিপক্ষ এই আসনের সাবেক এমপি ও মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জু। বিভেদের রাজনীতিতে এই দুই নেতা দলের দুটি অংশকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। এর পাশাপাশি নগর বিএনপির সভাপতি শফিকুল আলম মনাও দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী।

নগর বিএনপির সভাপতি মনা আজকের পত্রিকাকে বলেন, নির্বাচন ইস্যুতে দলের হাইকমান্ড ও তারেক রহমানের প্রতি তিনি পূর্ণ আস্থাশীল। তাঁদের যেকোনো সিদ্ধান্ত তিনি মেনে নেবেন। তাঁরা যাঁকেই মনোনয়ন দেবেন, তাঁর পক্ষেই তিনি কাজ করবেন।

মনোনয়নপ্রত্যাশী নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক তুহিন বলেন, ৪০ বছর ধরে দলের সঙ্গে আছেন। সব গণতান্ত্রিক, স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় থেকেছেন। জেল-জুলুম এবং অত্যাচার-নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। ওয়ান-ইলেভেনে যেসব নেতা দলের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করছিলেন, তাঁরা আজ দলের মনোনয়ন চাইছেন। দলের হাইকমান্ড নিশ্চয়ই এ বিষয় বিবেচনায় নেবেন।

মঞ্জু বলেন, তিনি দলের নীতিনির্ধারকেদের ওপর আস্থাশীল। দল নিশ্চয়ই তাঁর বিষয়ে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নেবে।

খালিশপুর, দৌলতপুর উপজেলা এবং আড়ংঘাটা ইউনিয়ন ও খানজাহান আলী থানার একাংশ নিয়ে খুলনা-৩ আসন। এখানে প্রার্থী হিসেবে দীর্ঘদিন ধরেই তৎপর বিএনপির কেন্দ্রীয় ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুল। খুলনা মহানগর ও জেলা বিএনপির বর্তমান কমিটির সব নেতাই তাঁর অনুসারী। কেন্দ্রেও তাঁর অবস্থান মজবুত। বর্তমানে এলাকায় বকুলের প্রচারণা চলছে জোরেশোরে।

তবে খুলনা মহানগর বিএনপির সাবেক সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক অধ্যক্ষ তারিকুল ইসলামও আসনটি থেকে প্রার্থী হতে তৎপরতা চালাচ্ছেন। তাঁর সঙ্গে নজরুল ইসলাম মঞ্জুর সমর্থক সাবেক কমিটির নেতা-কর্মীরা মাঠে রয়েছেন।

রূপসা-দিঘলিয়া-তেরখাদা নিয়ে গঠিত খুলনা-৪ আসনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে কর্মকাণ্ড চালাচ্ছেন কেন্দ্রীয় তথ্যবিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল। ২০১৮ সালের নির্বাচনে এই আসনে ধানের শীষের প্রার্থী ছিলেন তিনি। আসনটিতে বিএনপির প্রার্থী হতে কাজ করছেন যুক্তরাজ্য বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পারভেজ মল্লিক।

খুলনা-৫ আসনে (ডুমুরিয়া-ফুলতলা) বিএনপির প্রার্থী হিসেবে কাজ শুরু করেছেন খুলনা-২ আসনের সাবেক এমপি ও বিসিবির সাবেক সভাপতি আলী আসগর লবি। কেন্দ্রীয় নেতারা খুলনায় এসে তাঁর পক্ষে কাজ করতে অন্য নেতাদের নির্দেশ দিয়েছেন। এই নির্দেশে অনেকেই প্রার্থী হওয়ার তৎপরতা বন্ধ করে দিয়েছেন। কিন্তু এরপরও ভোটের মাঠে সক্রিয় ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের সাবেক সহসভাপতি শফি মোহাম্মদ খান। লবির পাশাপাশি তাঁকেও এলাকায় প্রচারণায় অংশ নিতে দেখা যাচ্ছে।

কয়রা-পাইকগাছা নিয়ে গঠিত খুলনা-৬ আসনে বিএনপির প্রার্থী হতে তৎপরতা চালাচ্ছেন জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সহসভাপতি আমিরুল ইসলাম কাগজী ও বাসসের চেয়ারম্যান আনোয়ার আলদীন। প্রায়ই তাঁরা এলাকায় নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিচ্ছেন। এ আসনে বিএনপির জেলা পর্যায়ের নেতারা প্রার্থী হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করলেও তাঁদের তেমন তৎপরতা দেখা যাচ্ছে না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত