Ajker Patrika

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়: স্থানীয়রা জড়ানোয় বাড়ল উদ্বেগ

  • শিক্ষক-কর্মকর্তাদের লাঞ্ছিত করা শিক্ষার্থীদের শাস্তি দাবি।
  • সম্পর্কের উন্নয়নে লিয়াজোঁ কমিটি করেছে বিশ্ববিদ্যালয়।
  • শাটডাউন চলছে, থেমে গেছে রাকসু নির্বাচনের প্রচার।
রাবি প্রতিনিধি  নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়: স্থানীয়রা জড়ানোয় বাড়ল উদ্বেগ

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধা বা পোষ্য কোটা ইস্যুতে শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের টানাপোড়েনের মধ্যে নতুন সংকট দেখা দিয়েছে ‘স্থানীয় চাপ’। তিন শিক্ষক-কর্মকর্তাকে লাঞ্ছিত করার সঙ্গে অভিযুক্ত শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে দ্রুত কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাচ্ছেন তাঁরা। তা না হলে নিজেরাই ‘বিচার’ করার হুমকি দিচ্ছেন।

এ অবস্থায় যেকোনো সময় অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ স্থানীয়দের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে ১৫ সদস্যের একটি লিয়াজোঁ কমিটি গঠন করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ হাসান নকীব নিজেই এ কমিটির আহ্বায়ক। তবে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচন ও শিক্ষক-কর্মকর্তাদের শাটডাউন কর্মসূচির মধ্যে উপাচার্য সেদিকে মনোযোগ দিতে পারেননি।

স্থানীয়দের মধ্যে উত্তেজনা

পোষ্য কোটা ইস্যুতে গত শনিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) মাঈন উদ্দিন, প্রক্টর অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান ও ছাপাখানার ব্যবস্থাপক রবিউল ইসলাম শিক্ষার্থীদের হাতে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত হন। তাঁদের মধ্যে রবিউল ইসলাম হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক ও রাকসু নির্বাচনের স্বতন্ত্র জিএস প্রার্থী সালাহউদ্দিন আম্মার অনুসারীদের নিয়ে ওই তিনজনকে লাঞ্ছিত করেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে মাঠে নেমেছেন স্থানীয়রা। গত সোমবার সকালে তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে এবং গতকাল মঙ্গলবার সকালে কাজলা ফটকে বিক্ষোভ ও সমাবেশ করেন। বিকেলে সমাবেশ হয় বিনোদপুর বাজারে।

গতকাল সকালে মতিহারের সচেতন এলাকাবাসীর ব্যানারে আয়োজিত সমাবেশ থেকে ঘোষণা দেওয়া হয়, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যদি সালাহউদ্দিন আম্মারের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা না নেয়, তাহলে স্থানীয়রাই তাঁকে প্রতিহত করবেন। তাঁরা ‘বিচার’ নিজের হাতেই তুলে নেবেন। এ সময় বক্তারা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থানীয়দের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের উদাহরণও দেন।

ওই সমাবেশে কাজলা কেডি ক্লাবের সভাপতি আব্দুল কুদ্দুস ডলার, সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল বাবু, স্থানীয় বাসিন্দা মো. রানা, প্রকৌশলী আমজাদ আলী, এলাকার সাবেক কাউন্সিলর আশরাফুল ইসলাম বাচ্চু, সাবেক কাউন্সিলর আনসার আলীসহ অনেকে বক্তব্য দেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের অভিযুক্ত শিক্ষার্থী সালাহউদ্দিন আম্মার বলেন, ‘এটা বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। এর মধ্যে স্থানীয়রা কেন জড়াচ্ছেন, তা বুঝতে পারছি না।’

তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ইফতিখারুল আলম মাসউদ বলেন, ‘শিক্ষক-কর্মকর্তারাও তো বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশে থাকেন। অনেকে স্থানীয় বাসিন্দা। তাঁদের অনেক আত্মীয়স্বজন আছেন। পায়ে পা দিয়ে ঝামেলা করে শিক্ষক-কর্মকর্তাদের ক্যাম্পাসে লাঞ্ছিত করলে একটি প্রভাব তো এলাকায় পড়বেই।’

প্রভাব পড়তে পারে রাকসুতে

স্থানীয়দের মধ্যে উত্তেজনার কারণে আতঙ্কিত বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থী। গতকাল সকালে যখন স্থানীয়দের কর্মসূচি চলছিল, তখন পাশেই পুলিশ বক্সের কাছে দাঁড়িয়ে শুনছিলেন শিক্ষার্থী আনোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, ‘পরিস্থিতি যে কোন দিকে যাচ্ছে বুঝতে পারছি না। আমরা শিক্ষার্থীরা আতঙ্কে পড়ে গেছি। যেকোনো সময় যেকোনো কিছু ঘটতে পারে।’

শহীদ বুদ্ধিজীবী চত্বরে কথা হয় শিক্ষার্থী মারুফ হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘এখন মনে হচ্ছে যত ঝামেলা সব রাকসু নির্বাচনকে ঘিরেই। রাকসু নির্বাচনের প্রার্থীরা শিক্ষার্থীদের কাছে হাইলাইট হতে পোষ্য কোটার বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে গিয়ে বেশ বাড়াবাড়ি করেছেন। এ জন্য শিক্ষক-কর্মকর্তা লাঞ্ছিত হওয়ার মতো ঘটনাও ঘটেছে। তা থেকে স্থানীয়দের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। রাকসু নির্বাচনের আগে পোষ্য কোটা এবং শিক্ষক-কর্মকর্তা লাঞ্ছিত হওয়ার বিষয়টি সুরাহা করতে হবে। তা না হলে স্থানীয়দের উত্তেজনার প্রভাব রাকসু নির্বাচনেও পড়তে পারে।’

থেমে গেছে প্রচারণা

বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে রাকসু নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়ার পর প্রচার-প্রচারণা একেবারে থেমে গেছে। গতকাল ক্যাম্পাসে কোনো প্যানেল কিংবা স্বতন্ত্র প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণা চালাতে দেখা যায়নি। নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়ায় এখন প্রচারণা চালানো যাবে কি না, তাও অনেক প্রার্থী জানেন না।

রাকসু ফর রেডিক্যাল চেঞ্জ প্যানেলের ভিপি প্রার্থী মেহেদী হাসান মারুফ বলেন, ‘প্রচারণা চালানো যাবে কি না, সে বিষয়ে নির্বাচন কমিশন থেকে আমরা স্পষ্ট কোনো বার্তা পাইনি। তবে ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থী কম, ছুটির আমেজ বিরাজ করছে। তাই প্রচার হচ্ছে না।’

ভোট পিছিয়ে দেওয়ায় ক্ষুব্ধ ছাত্রশিবির গতকাল কর্মসূচি পালন করতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছিল। তবে শেষ পর্যন্ত তাদের কোনো কর্মসূচি পালন করতে দেখা যায়নি। শনিবার তিন শিক্ষক-কর্মকর্তা লাঞ্ছিত এবং শিক্ষার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে পোষ্য কোটায় ভর্তির সুবিধা বাতিল করার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে শিক্ষক-কর্মকর্তারা অনির্দিষ্টকালের জন্য শাটডাউন কর্মসূচি শুরু করেন। এর জেরে পিছিয়ে গেছে রাকসু নির্বাচন। আগামীকাল বৃহস্পতিবার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। সোমবার রাতে ভোটের তারিখ পিছিয়ে ১৬ অক্টোবর ঠিক করেছে নির্বাচন কমিশন।

শিক্ষকদের শাটডাউন চলছেই

তিন শিক্ষক-কর্মকর্তা লাঞ্ছিত হওয়ার পরদিন রোববার পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালন করেন শিক্ষক-কর্মকর্তারা। সোমবার থেকে শুরু হয় কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি। গতকালও এ কর্মসূচি পালিত হয়েছে। দিনভর তাঁরা অবস্থান করছিলেন শহীদ বুদ্ধিজীবী চত্বরে। শিক্ষক-কর্মকর্তারা অভিযুক্ত শিক্ষার্থীদের বহিষ্কারের দাবি জানিয়েছেন। পাশাপাশি প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধায় সন্তানদের এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগও পুনর্বহালের দাবি তাঁদের।

এদিকে সকালে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা আন্দোলনরত শিক্ষক-কর্মকর্তাদের কয়েকজনের সঙ্গে বৈঠক করেন। সভা শেষে জনসংযোগ দপ্তরের প্রশাসক আখতার হোসেন মজুমদার সাংবাদিকদের বলেন, ‘কর্মসূচি প্রত্যাহারের জন্য তাঁদের অনুরোধ জানানো হয়েছে। তাঁরা ইতিবাচক সাড়া দিয়েছেন।’

তবে গতকাল রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত শিক্ষক-কর্মকর্তারা কর্মসূচি প্রত্যাহারের কোনো ঘোষণা দেননি। রাতে তাঁদের এ ব্যাপারে সভা হওয়ার কথা ছিল। শিক্ষকদের একটি অংশ অবশ্য অভিযুক্ত ব্যক্তিদের শাস্তি নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলনে থাকতে চান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এক নারীকে স্ত্রী দাবি করে দুই পুরুষের টানাটানি, শেষে ৩ জনই কারাগারে

১৫ শিক্ষার্থীকে যৌন হেনস্তার অভিযোগ ইবির এক ছাত্রীর বিরুদ্ধে

ড. ইউনূসের সফরসঙ্গী হয়েও ফখরুল–আখতাররা ভিভিআইপি সুবিধা পাননি কেন—জানাল প্রেস উইং

মার্কা শাপলাই হতে হবে, না হলে নির্বাচন কীভাবে হয় দেখে নেব: সারজিস আলম

ইসির তালিকায় ‘শাপলা’ নেই, বিকল্প প্রতীক নিতে হবে এনসিপিকে

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত