শশী থারুরের নিবন্ধ
আজকের পত্রিকা ডেস্ক
ভারতে দর্শন বা বিশ্বাসের ভিত্তিতে রাজনৈতিক মতভেদ হওয়াটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। বিজেপি নেতা রাকেশ সিনহা যেমনটা বলেছেন, গণতন্ত্রে এ ধরনের মতভেদ অনিবার্য, এমনকি তা কাম্যও বটে। তাই হিন্দু ধর্মকে কেন্দ্র করে দেশে মৌলিক প্রশ্নে ভিন্নমত থাকাটা আশ্চর্যের নয়। তবে সিনহার দাবি, কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর বক্তব্যে ভারতীয়দের ‘সমষ্টিগত চেতনা’র প্রতিফলন নেই—এটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
বাস্তবতা হলো, ভারতের প্রায় ৮০ শতাংশ মানুষ হিন্দু ধর্মে বিশ্বাসী। ফলে, বিজেপি ও কংগ্রেস—সব দলের ভেতরেই এই সংখ্যাগরিষ্ঠরা বিপুলভাবে আছেন। তবে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ বা আরএসএস-বিজেপি ‘হিন্দুত্ব’ নামের রাজনৈতিক মতবাদে বিশ্বাসী। হিন্দু ধর্মের ব্যাপক বিস্তৃত দার্শনিক ও আধ্যাত্মিক জগত থেকে তারা দূরে। অপরদিকে, কংগ্রেসের হিন্দুরা যে বিশ্বাসের কথা বলেন, তা শিক্ষা দিয়েছেন ধর্মগুরু ও ঋষিরা, কোনো রাজনীতিবিদের দীক্ষা অনুযায়ী তাঁরা বিশ্বাসকে বোঝেন না।
রাহুল গান্ধী যখন হিন্দুধর্মকে অহিংসা, গ্রহণযোগ্যতা ও অন্তর্ভুক্তির ধর্ম হিসেবে বর্ণনা করেন, তখন তিনি আসলে সেই ব্যাখ্যাই তুলে ধরেন, যা শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে গুরু ও ঋষিরা প্রচার করে গেছেন। মহাত্মা গান্ধীর জীবনেই এই দৃষ্টিভঙ্গির সবচেয়ে স্পষ্ট প্রকাশ দেখা গেছে। তাঁর অহিংসা ও সত্যাগ্রহের দর্শন হিন্দু মূল্যবোধকে জাতীয় আন্দোলনে যুক্ত করেছিল এবং পাশাপাশি সব ধর্মকেও জায়গা দিয়েছিল।
সিনহার দাবি—আরএসএসের ‘হিন্দুত্ব’ কোনো রাজনৈতিক মতবাদ নয়—এটা হাস্যকর। কারণ, আরএসএসের নিজস্ব ভাবাদর্শীরা বহুবার হিন্দুত্বকে রাজনৈতিক দর্শন হিসেবে ব্যাখ্যা করেছেন। এমনকি ১৯৮৯ সালের পালামপুর প্রস্তাবে বিজেপি আনুষ্ঠানিকভাবে হিন্দুত্বকে তাদের রাজনৈতিক নীতি হিসেবে গ্রহণ করে। সিনহার মতে, আরএসএস কেবল স্বামী বিবেকানন্দ, স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতী, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ও আর কে মুখার্জির মতো হিন্দু চিন্তাবিদদের ভাবনা প্রচার করছে। কিন্তু বাস্তবে এই চিন্তাবিদদের দর্শন ও আরএসএস—এর নির্বাচিত ব্যাখ্যার মধ্যে বিস্তর ফারাক আছে।
উদাহরণ হিসেবে শিকাগোতে উচ্চারিত স্বামী বিবেকানন্দের সেই বিখ্যাত উক্তির কথা স্মরণ করা যেতে পারে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও লোকসভার বিতর্কে রাহুল গান্ধীর জবাব দিতে গিয়ে স্বামী বিবেকানন্দের সেই উদ্ধৃতি দিয়েছিলেন, সেখানে তিনি গর্বের সঙ্গে বলেছিলেন, তিনি এমন এক ধর্মের পক্ষে কথা বলছেন, যে ধর্ম শুধু সহনশীলতা নয় বরং গ্রহণযোগ্যতার শিক্ষা দিয়েছে।
আরএসএস সহনশীলতার কথা বলে, স্বামীজি যেটিকে মূলত একটি ‘প্রশ্রয়মূলক ধারণা’ হিসেবে বুঝেছিলেন। সহনশীল সংখ্যাগরিষ্ঠরা তাদের নিজস্ব সত্যের পবিত্রতায় বিশ্বাস করে এবং সেই সঙ্গে অন্যদের তাদের দৃষ্টিতে ‘ভুল’ করার অধিকার দেয়। ‘গ্রহণ’ বা ‘গ্রাহ্য করা’ বলতে সংখ্যাগরিষ্ঠ এবং সংখ্যালঘু উভয়ের বিশ্বাস করা নিজ নিজ সত্যের প্রতি পারস্পরিক শ্রদ্ধা বোঝায়। আরএসএস বা বিজেপি কোথাও এই নীতির পক্ষে কথা বলেনি।
একইভাবে, স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতীর মূল শিক্ষা ছিল মূর্তিপূজা, তীর্থযাত্রা, পুরোহিততন্ত্র, মন্দিরে দান-দক্ষিণা, নারীর প্রতি বৈষম্য—এসব প্রথার বিরোধিতা করা। অথচ, বিজেপি–আরএসএসের হিন্দুত্বের পক্ষের অনেক প্রচারক—এমনকি প্রধানমন্ত্রী মোদি নিজেও—এসব চর্চা ও প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। তাই বিজেপি বা আরএসএস যখন দাবি করে যে, তারা এই মহর্ষিদের শিক্ষার অনুসারী, সেটা আসলে ভণ্ডামি ছাড়া আর কিছুই নয়।
যখন রাকেশ সিনহা অযোধ্যার রামমন্দিরকে —রাজনৈতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক এলিটদের শৃঙ্খল থেকে ধর্মনিরপেক্ষতার সংজ্ঞাকে মুক্ত করা—অর্থে সমর্থন করেন, সেটি আমাদের বিস্মিত করে! রামমন্দির হয়তো কোটি কোটি হিন্দুর স্বপ্ন পূরণ করেছে, কিন্তু এর সঙ্গে ধর্মনিরপেক্ষতার কোনো সম্পর্ক নেই; এটি নিছকই এক ধর্মবিশ্বাসের বিষয়। আর এই মন্দির তৈরি হয়েছে সহিংসতা ও ভাঙচুরের পর, যেখানে আগে একটি মসজিদ ধ্বংস করা হয়েছিল। অথচ সিনহা যখন বলেন, এই ঘটনাই নাকি ‘ভারতের ধারণাকে নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করার সুযোগ ও পরিসর তৈরি করেছে’—তখন তা নিছকই অবাস্তব ও অগ্রহণযোগ্য শোনায়।
রাষ্ট্র হিসেবে ভারতের ধারণা হলো সেই ধারণা, যা সংবিধানে লিপিবদ্ধ আছে। নানা ধর্ম, ভাষা আর পরিচয় নিয়ে গড়ে ওঠা এক দেশ, যেখানে নাগরিকের সুরক্ষা প্রশ্নে সবাই সমান। এই ধারণায় কোনো ধরনের সহিংসতার স্থান নেই। অযোধ্যা মামলার রায়ে সুপ্রিম কোর্টও তা স্পষ্ট করেছে। রায়ে বলা হয়, ‘আমাদের সংবিধান অনুযায়ী, যে কোনো ধর্ম, বিশ্বাস ও মতের অনুসারী নাগরিকেরা আইনের অধীন এবং আইনের সামনে সমান। সংবিধান এক ধর্মকে অন্য ধর্ম থেকে আলাদা করে না। (সংবিধানের দৃষ্টিতে) সব ধরনের বিশ্বাস, উপাসনা ও প্রার্থনা সমান।’ এটিই ভারতের ধারণার পুনঃপ্রতিষ্ঠা। এটিকে ভারতের ধারণার ‘পুনর্নির্ধারণ’ বলা যাবে না।
রাকেশ সিনহা বলেছেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে কংগ্রেস হিন্দুত্বের বিস্তার ও আরএসএসের প্রভাব নিয়ে সততার সঙ্গে আলোচনা করেনি।’ এটা ঠিক নয়। আমরা বহু জায়গায় এই আলোচনা করেছি, সর্বশেষ উদয়পুর চিন্তন শিবিরেও করেছি। সেখানে আমরা স্পষ্ট করেছি, হিন্দুত্ব কোনো ধর্ম নয়। এটি সংখ্যাগরিষ্ঠের আধিপত্যবাদী রাজনৈতিক মতবাদ, যা আমাদের দীর্ঘদিনের সবচেয়ে মূল্যবান নীতি—বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য—কে দুর্বল করে দেয়। অথচ রাকেশ সিনহারা হিন্দুত্বকে জাতীয়তাবাদ ও গণতান্ত্রিক অগ্রগতির সঙ্গে মিলিয়ে দেখতে চাচ্ছেন। এতে জাতীয়তাবাদ এক সম্প্রদায়ের হাতে সীমিত হয়ে যায়, আর গণতন্ত্র সংখ্যালঘুদের উপেক্ষা করে দাঁড়ায়। এর না আছে রাজনৈতিক, না আছে সংজ্ঞাগত অর্থ।
আরএসএস সব সময় সংবিধানে লেখা ভারতের ধারণাকে প্রত্যাখ্যান করেছে। তারা এটিকে পাশ্চাত্যের ধারণা বলে অবজ্ঞা করেছে এবং ভারতীয় ঐতিহ্যের সঙ্গে সম্পর্কহীন বলে মনে করেছে। বরং মনুস্মৃতিকে তারা মান্যতা দিয়েছে। রাহুল গান্ধী যখন আরএসএসের বিরোধিতা করেন, তখন তিনি করেন সংবিধানের মঞ্চ থেকে। আবার তিনি একজন হিন্দু হিসেবেও কথা বলেন, যিনি তাঁর ধর্ম থেকে অহিংসা, সহিষ্ণুতা আর অন্তর্ভুক্তির শিক্ষা পেয়েছেন। যারা মুসলিম বা অন্য সংখ্যালঘুদের প্রতি ঘৃণা ছড়িয়েছে বা তাদের ওপর সহিংসতা চালিয়েছে, তারা শুধু হিন্দুধর্মকেই নয়, সংবিধানের সঙ্গেও বিশ্বাসঘাতকতা করেছে।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস থেকে অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকা সহসম্পাদক আব্দুর রহমান
ভারতে দর্শন বা বিশ্বাসের ভিত্তিতে রাজনৈতিক মতভেদ হওয়াটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। বিজেপি নেতা রাকেশ সিনহা যেমনটা বলেছেন, গণতন্ত্রে এ ধরনের মতভেদ অনিবার্য, এমনকি তা কাম্যও বটে। তাই হিন্দু ধর্মকে কেন্দ্র করে দেশে মৌলিক প্রশ্নে ভিন্নমত থাকাটা আশ্চর্যের নয়। তবে সিনহার দাবি, কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর বক্তব্যে ভারতীয়দের ‘সমষ্টিগত চেতনা’র প্রতিফলন নেই—এটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
বাস্তবতা হলো, ভারতের প্রায় ৮০ শতাংশ মানুষ হিন্দু ধর্মে বিশ্বাসী। ফলে, বিজেপি ও কংগ্রেস—সব দলের ভেতরেই এই সংখ্যাগরিষ্ঠরা বিপুলভাবে আছেন। তবে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ বা আরএসএস-বিজেপি ‘হিন্দুত্ব’ নামের রাজনৈতিক মতবাদে বিশ্বাসী। হিন্দু ধর্মের ব্যাপক বিস্তৃত দার্শনিক ও আধ্যাত্মিক জগত থেকে তারা দূরে। অপরদিকে, কংগ্রেসের হিন্দুরা যে বিশ্বাসের কথা বলেন, তা শিক্ষা দিয়েছেন ধর্মগুরু ও ঋষিরা, কোনো রাজনীতিবিদের দীক্ষা অনুযায়ী তাঁরা বিশ্বাসকে বোঝেন না।
রাহুল গান্ধী যখন হিন্দুধর্মকে অহিংসা, গ্রহণযোগ্যতা ও অন্তর্ভুক্তির ধর্ম হিসেবে বর্ণনা করেন, তখন তিনি আসলে সেই ব্যাখ্যাই তুলে ধরেন, যা শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে গুরু ও ঋষিরা প্রচার করে গেছেন। মহাত্মা গান্ধীর জীবনেই এই দৃষ্টিভঙ্গির সবচেয়ে স্পষ্ট প্রকাশ দেখা গেছে। তাঁর অহিংসা ও সত্যাগ্রহের দর্শন হিন্দু মূল্যবোধকে জাতীয় আন্দোলনে যুক্ত করেছিল এবং পাশাপাশি সব ধর্মকেও জায়গা দিয়েছিল।
সিনহার দাবি—আরএসএসের ‘হিন্দুত্ব’ কোনো রাজনৈতিক মতবাদ নয়—এটা হাস্যকর। কারণ, আরএসএসের নিজস্ব ভাবাদর্শীরা বহুবার হিন্দুত্বকে রাজনৈতিক দর্শন হিসেবে ব্যাখ্যা করেছেন। এমনকি ১৯৮৯ সালের পালামপুর প্রস্তাবে বিজেপি আনুষ্ঠানিকভাবে হিন্দুত্বকে তাদের রাজনৈতিক নীতি হিসেবে গ্রহণ করে। সিনহার মতে, আরএসএস কেবল স্বামী বিবেকানন্দ, স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতী, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ও আর কে মুখার্জির মতো হিন্দু চিন্তাবিদদের ভাবনা প্রচার করছে। কিন্তু বাস্তবে এই চিন্তাবিদদের দর্শন ও আরএসএস—এর নির্বাচিত ব্যাখ্যার মধ্যে বিস্তর ফারাক আছে।
উদাহরণ হিসেবে শিকাগোতে উচ্চারিত স্বামী বিবেকানন্দের সেই বিখ্যাত উক্তির কথা স্মরণ করা যেতে পারে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও লোকসভার বিতর্কে রাহুল গান্ধীর জবাব দিতে গিয়ে স্বামী বিবেকানন্দের সেই উদ্ধৃতি দিয়েছিলেন, সেখানে তিনি গর্বের সঙ্গে বলেছিলেন, তিনি এমন এক ধর্মের পক্ষে কথা বলছেন, যে ধর্ম শুধু সহনশীলতা নয় বরং গ্রহণযোগ্যতার শিক্ষা দিয়েছে।
আরএসএস সহনশীলতার কথা বলে, স্বামীজি যেটিকে মূলত একটি ‘প্রশ্রয়মূলক ধারণা’ হিসেবে বুঝেছিলেন। সহনশীল সংখ্যাগরিষ্ঠরা তাদের নিজস্ব সত্যের পবিত্রতায় বিশ্বাস করে এবং সেই সঙ্গে অন্যদের তাদের দৃষ্টিতে ‘ভুল’ করার অধিকার দেয়। ‘গ্রহণ’ বা ‘গ্রাহ্য করা’ বলতে সংখ্যাগরিষ্ঠ এবং সংখ্যালঘু উভয়ের বিশ্বাস করা নিজ নিজ সত্যের প্রতি পারস্পরিক শ্রদ্ধা বোঝায়। আরএসএস বা বিজেপি কোথাও এই নীতির পক্ষে কথা বলেনি।
একইভাবে, স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতীর মূল শিক্ষা ছিল মূর্তিপূজা, তীর্থযাত্রা, পুরোহিততন্ত্র, মন্দিরে দান-দক্ষিণা, নারীর প্রতি বৈষম্য—এসব প্রথার বিরোধিতা করা। অথচ, বিজেপি–আরএসএসের হিন্দুত্বের পক্ষের অনেক প্রচারক—এমনকি প্রধানমন্ত্রী মোদি নিজেও—এসব চর্চা ও প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। তাই বিজেপি বা আরএসএস যখন দাবি করে যে, তারা এই মহর্ষিদের শিক্ষার অনুসারী, সেটা আসলে ভণ্ডামি ছাড়া আর কিছুই নয়।
যখন রাকেশ সিনহা অযোধ্যার রামমন্দিরকে —রাজনৈতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক এলিটদের শৃঙ্খল থেকে ধর্মনিরপেক্ষতার সংজ্ঞাকে মুক্ত করা—অর্থে সমর্থন করেন, সেটি আমাদের বিস্মিত করে! রামমন্দির হয়তো কোটি কোটি হিন্দুর স্বপ্ন পূরণ করেছে, কিন্তু এর সঙ্গে ধর্মনিরপেক্ষতার কোনো সম্পর্ক নেই; এটি নিছকই এক ধর্মবিশ্বাসের বিষয়। আর এই মন্দির তৈরি হয়েছে সহিংসতা ও ভাঙচুরের পর, যেখানে আগে একটি মসজিদ ধ্বংস করা হয়েছিল। অথচ সিনহা যখন বলেন, এই ঘটনাই নাকি ‘ভারতের ধারণাকে নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করার সুযোগ ও পরিসর তৈরি করেছে’—তখন তা নিছকই অবাস্তব ও অগ্রহণযোগ্য শোনায়।
রাষ্ট্র হিসেবে ভারতের ধারণা হলো সেই ধারণা, যা সংবিধানে লিপিবদ্ধ আছে। নানা ধর্ম, ভাষা আর পরিচয় নিয়ে গড়ে ওঠা এক দেশ, যেখানে নাগরিকের সুরক্ষা প্রশ্নে সবাই সমান। এই ধারণায় কোনো ধরনের সহিংসতার স্থান নেই। অযোধ্যা মামলার রায়ে সুপ্রিম কোর্টও তা স্পষ্ট করেছে। রায়ে বলা হয়, ‘আমাদের সংবিধান অনুযায়ী, যে কোনো ধর্ম, বিশ্বাস ও মতের অনুসারী নাগরিকেরা আইনের অধীন এবং আইনের সামনে সমান। সংবিধান এক ধর্মকে অন্য ধর্ম থেকে আলাদা করে না। (সংবিধানের দৃষ্টিতে) সব ধরনের বিশ্বাস, উপাসনা ও প্রার্থনা সমান।’ এটিই ভারতের ধারণার পুনঃপ্রতিষ্ঠা। এটিকে ভারতের ধারণার ‘পুনর্নির্ধারণ’ বলা যাবে না।
রাকেশ সিনহা বলেছেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে কংগ্রেস হিন্দুত্বের বিস্তার ও আরএসএসের প্রভাব নিয়ে সততার সঙ্গে আলোচনা করেনি।’ এটা ঠিক নয়। আমরা বহু জায়গায় এই আলোচনা করেছি, সর্বশেষ উদয়পুর চিন্তন শিবিরেও করেছি। সেখানে আমরা স্পষ্ট করেছি, হিন্দুত্ব কোনো ধর্ম নয়। এটি সংখ্যাগরিষ্ঠের আধিপত্যবাদী রাজনৈতিক মতবাদ, যা আমাদের দীর্ঘদিনের সবচেয়ে মূল্যবান নীতি—বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য—কে দুর্বল করে দেয়। অথচ রাকেশ সিনহারা হিন্দুত্বকে জাতীয়তাবাদ ও গণতান্ত্রিক অগ্রগতির সঙ্গে মিলিয়ে দেখতে চাচ্ছেন। এতে জাতীয়তাবাদ এক সম্প্রদায়ের হাতে সীমিত হয়ে যায়, আর গণতন্ত্র সংখ্যালঘুদের উপেক্ষা করে দাঁড়ায়। এর না আছে রাজনৈতিক, না আছে সংজ্ঞাগত অর্থ।
আরএসএস সব সময় সংবিধানে লেখা ভারতের ধারণাকে প্রত্যাখ্যান করেছে। তারা এটিকে পাশ্চাত্যের ধারণা বলে অবজ্ঞা করেছে এবং ভারতীয় ঐতিহ্যের সঙ্গে সম্পর্কহীন বলে মনে করেছে। বরং মনুস্মৃতিকে তারা মান্যতা দিয়েছে। রাহুল গান্ধী যখন আরএসএসের বিরোধিতা করেন, তখন তিনি করেন সংবিধানের মঞ্চ থেকে। আবার তিনি একজন হিন্দু হিসেবেও কথা বলেন, যিনি তাঁর ধর্ম থেকে অহিংসা, সহিষ্ণুতা আর অন্তর্ভুক্তির শিক্ষা পেয়েছেন। যারা মুসলিম বা অন্য সংখ্যালঘুদের প্রতি ঘৃণা ছড়িয়েছে বা তাদের ওপর সহিংসতা চালিয়েছে, তারা শুধু হিন্দুধর্মকেই নয়, সংবিধানের সঙ্গেও বিশ্বাসঘাতকতা করেছে।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস থেকে অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকা সহসম্পাদক আব্দুর রহমান
দক্ষিণ আর্মেনিয়ার এক পরিত্যক্ত রেলস্টেশন, মরিচা ধরা কয়েকটি বগি আর কয়েক মিটার রেললাইন—এসবই এখন সোভিয়েত যুগের একটি রেলপথের শেষ চিহ্ন। তবে অবিশ্বাস্য শোনালেও দক্ষিণ ককেশাসের এই ভাঙাচোরা রেললাইনই এখন মার্কিন প্রেসিডেন্টের মধ্যস্থতায় শান্তির প্রতীক হয়ে উঠতে যাচ্ছে। এই শান্তি প্রক্রিয়ার নাম দেওয়া হয়েছে...
৩ ঘণ্টা আগেচীন ভারতের আশপাশের অঞ্চলকে নিজেদের কার্যক্রম ও প্রভাব বিস্তারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করে। ভারত যেটিকে নিজের এলাকা বা প্রতিবেশ মনে করে, সেটিকে চীনও নিজেদের প্রভাবের জন্য সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ মনে করে। এটি যেমন চীনের পেছনের উঠান, ভারতেরও তেমন।
৬ ঘণ্টা আগেমার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ২৯ সেপ্টেম্বর গাজা যুদ্ধ শেষ করার জন্য ২০ দফার এক শান্তি প্রস্তাব দেন। এরপর থেকেই তিনি হামাসকে একাধিক আলটিমেটাম দিয়েছেন। শুরুতে তিনি ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠীটিকে তিন থেকে চার দিনের মধ্যে উত্তর দিতে বলেন।
২ দিন আগেজাপানের রাজনীতিতে নতুন অধ্যায় রচনা করতে চলেছেন সানায়ে তাকাইচি। ৬৪ বছর বয়সী এই নারী পুরুষপ্রধান লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির (এলডিপি) নেতৃত্বের দৌড়ে সবাইকে হারিয়ে দিয়েছেন। এতে জাপানের ইতিহাসে প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার দোরগোড়ায় পৌঁছে গেছেন তিনি।
২ দিন আগে