আজকের পত্রিকা ডেস্ক
দক্ষিণ আর্মেনিয়ার এক পরিত্যক্ত রেলস্টেশন, মরিচা ধরা কয়েকটি বগি আর কয়েক মিটার রেললাইন—এসবই এখন সোভিয়েত যুগের একটি রেলপথের শেষ চিহ্ন। তবে অবিশ্বাস্য শোনালেও দক্ষিণ ককেশাসের এই ভাঙাচোরা রেললাইনই এখন মার্কিন প্রেসিডেন্টের মধ্যস্থতায় শান্তির প্রতীক হয়ে উঠতে যাচ্ছে। এই শান্তি প্রক্রিয়ার নাম দেওয়া হয়েছে ‘ট্রাম্প রুট ফর ইন্টারন্যাশনাল পিস অ্যান্ড প্রস্পারিটি’, সংক্ষেপে ‘ট্রিপ’।
চারপাশে পড়ে আছে ভাঙা ভাস্কর্যের বিভিন্ন টুকরো। এক কমিউনিস্ট নায়কের স্মৃতিস্তম্ভের ছিন্নভিন্ন মাথা, হাতবিহীন এক নারী মূর্তি। এসব দেখিয়ে স্থানীয় সাংবাদিক মারুত ভানইয়ান বললেন, ‘আমরা এখন ট্রাম্প রুটে আছি। এটিকে শান্তির সড়ক, সিল্ক রোড কিংবা জাঙ্গেজুর করিডরও বলা হয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত কিছুই আমেরিকান মনে হচ্ছে না।’
এই রুটকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট এমন এক যুদ্ধের অবসানের প্রতীক হিসেবে তুলে ধরছেন, যেটিকে তিনি ‘অনিঃশেষ যুদ্ধ’ বলে আখ্যা দিয়েছিলেন। আর্মেনিয়া ও দীর্ঘদিনের শত্রু আজারবাইজানের মধ্যে হওয়া এক সমঝোতার ভিত্তিতেই এ শান্তি প্রক্রিয়ার উদ্যোগ।
পরিকল্পনা অনুযায়ী, মার্কিন কোম্পানিগুলো ৯৯ বছরের চুক্তিতে আর্মেনিয়ার ভেতর দিয়ে ৪৩ কিলোমিটার দীর্ঘ এই রুট নির্মাণ ও উন্নয়নের দায়িত্ব নেবে। এই রুট ইরানের সীমান্ত ঘেঁষে পুরো আর্মেনিয়া পেরিয়ে আজারবাইজানকে তার বিচ্ছিন্ন অঞ্চল নাখিচিভানের সঙ্গে যুক্ত করবে।
প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে রেললাইন, মহাসড়ক ও পাইপলাইন নির্মাণের। ট্রাম্প বলেছেন, মার্কিন কোম্পানিগুলো এখানে প্রচুর অর্থ বিনিয়োগ করবে, যা আর্মেনিয়া, আজারবাইজান ও যুক্তরাষ্ট্র—তিন দেশেরই অর্থনীতিতে সুফল আনবে। কিন্তু মাঠের বাস্তবতা অন্য রকম। পুরো পরিবহন রুট গড়ে তুলতে হবে শূন্য থেকে। তবে অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের চেয়েও বড় চ্যালেঞ্জ রাজনৈতিক বাধা। ট্রাম্পের এই উদ্যোগে দক্ষিণ ককেশাসের ভূরাজনীতিতে বড় পরিবর্তন আসতে পারে। কারণ, এই অঞ্চলকে রাশিয়া তার প্রভাব বলয়ভুক্ত বলে দাবি করে। একই সঙ্গে তেহরানও উদ্বিগ্ন, তারা প্রকল্পটি আটকে দেওয়ার হুমকি দিচ্ছে।
ককেশাসে যুদ্ধ আর শান্তি
ট্রিপ পরিকল্পনাটি আর্মেনিয়া-আজারবাইজান সংঘাতের অবসানের চাবিকাঠি হিসেবে দেখা হচ্ছে পশ্চিমা বিশ্বে। এ সংঘাত শুরু হয়েছিল নাগোরনো-কারাবাখ অঞ্চল নিয়ে। এটি আজারবাইজানের অংশ হলেও ঐতিহাসিকভাবে এখানে আর্মেনীয়রা বসবাস করে।
২০২৩ সালে আজারবাইজান ওই এলাকা পুনর্দখল করে নেয়। ঘরবাড়ি ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয় প্রায় সব আর্মেনীয় বাসিন্দা। তবে এটি প্রথমবার নয়। এর আগে ১৯৯০-এর দশকে আর্মেনিয়ার অভিযানে হয়েছিল পাঁচ লাখেরও বেশি আজারবাইজানি।
ভানইয়ান নিজেও ২০২৩ সালে বাস্তুচ্যুত হয়ে পালাতে বাধ্য হন। পরে তিনি আশ্রয় নেন আর্মেনিয়ার দক্ষিণাঞ্চলীয় প্রদেশ সিউনিক এলাকায়। কিন্তু এখানেই আবার নতুন উত্তেজনার কেন্দ্র তৈরি হয়। আজারবাইজান দাবি তোলে, নাখিচিভানের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য আর্মেনিয়ার এই অঞ্চল দিয়ে একটি ‘করিডর’ দিতে হবে। অঞ্চলটির আরেক নাম জাঙ্গেজুর। সেই প্রস্তাবই পরিচিত হয় ‘জাঙ্গেজুর করিডর’ নামে।
কিন্তু আর্মেনিয়া সে দাবি প্রত্যাখ্যান করে। এরপর সীমান্তে সংঘর্ষ শুরু হয়, নতুন যুদ্ধের আশঙ্কাও তৈরি হয়। ঠিক তখনই, ২০২৫ সালের আগস্টে ট্রাম্প অপ্রত্যাশিত উদ্যোগ নেন। তিনি ওয়াশিংটনে আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভ ও আর্মেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী নিকোল পাশিনিয়ানকে একসঙ্গে বসান। দেন এক সমাধান, যা দুই পক্ষকেই সন্তুষ্ট করে।
ভবিষ্যতের ট্রাম্প প্রস্তাবিত রুট আজারবাইজানের জন্য নিশ্চিত করবে ‘অবাধ যোগাযোগ।’ একই সঙ্গে আর্মেনিয়ার সার্বভৌমত্বকেও পূর্ণ সম্মান জানানো হবে। পুরো রুট পরিচালনা করবে একটি মার্কিন বেসরকারি কোম্পানি। দুই দেশের নেতা বলছেন, ওয়াশিংটনের এই বৈঠক তাদের অঞ্চলে শান্তি ফিরিয়ে এনেছে। তারা ট্রাম্পের মধ্যস্থতাকে ‘গেম চেঞ্জার’ হিসেবে প্রশংসা করেছেন।
ওয়াশিংটনে আজারবাইজান ও আর্মেনিয়ার নেতারা যে দলিলে করেছেন, তবে তাতে খুব বেশি তথ্য নেই। ট্রাম্প রুট কবে তৈরি হবে, সে নিয়েও কোনো সময়সীমা দেওয়া হয়নি।
পশ্চিমা বিশ্ব, রুশ ও ইরানি স্বার্থের সন্ধিক্ষণ এই রুট
দক্ষিণ ককেশাসে রাশিয়ার অবস্থান দুর্বল হয়ে পড়ায় যুক্তরাষ্ট্র এখানে মধ্যস্থতার সুযোগ পেয়েছে। বছরের পর বছর ধরে ক্রেমলিন এই রুটটি চালু করার চেষ্টা করছিল। অথচ, রুশ প্রেক্ষাপট থেকে—ভাগ্যের নির্মম পরিহাস সেই রুটের নাম এখন একজন মার্কিন প্রেসিডেন্টের নামে।
রাশিয়ার প্রস্তাব ছিল ভবিষ্যতের এই সড়ক পাহারা দেবে তাদের গোয়েন্দা সংস্থা এফএসবির সীমান্তরক্ষীরা। যদিও এই প্রস্তাব খারিজ হয়েছে। তবে এই বাহিনী এখনো আর্মেনিয়া-ইরান সীমান্তের ওই অংশ পাহারা দিচ্ছে, যেটি দিয়ে ট্রাম্প রুট যাওয়ার কথা।
আর্মেনিয়ার সিউনিক অঞ্চল রপ্তানির গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। এখানে ইরানের ব্যবসায়ী ও ট্রাক নিয়মিত আসা যাওয়া করে। ইরানি নির্মাণ প্রতিষ্ঠানগুলো একটি নতুন সেতু তৈরি করছে, যা ট্রাম্প রুটের ওপর দিয়ে যাবে। ইরান ও আর্মেনিয়ার সীমানা বয়ে চলা আরাস নদীর প্রবাহ ধরে এই রুট নির্মিত হওয়ার পরিকল্পনা আছে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানি কোম্পানি একসঙ্গে আর্মেনিয়ায় কাজ করবে কি না, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র সম্প্রতি ইসরায়েল-ইরান যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ায় বিষয়টি আরও সংবেদনশীল হয়ে উঠেছে।
ইরানের সর্বোচ্চ নেতার এক জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা হুমকি দিয়েছেন, ট্রাম্প রুটকে তারা ‘ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভাড়াটে সৈন্যদের কবরস্থানে’ পরিণত করবে। তবে ইরানের সরকার অনেক বেশি সংযত ভঙ্গিতে প্রতিক্রিয়া দিয়েছে। তেহরানকে আশ্বস্ত করেছে আর্মেনিয়া। তারা জানিয়েছে, প্রকল্পটি ইরানের স্বার্থের বিরুদ্ধে নয়।
ইউরোপ ও তুরস্কের আগ্রহ
দক্ষিণ আর্মেনিয়ায় ইউরোপের উপস্থিতিও বেড়েছে। ফ্রান্স সম্প্রতি আর্মেনিয়াকে অস্ত্র বিক্রি শুরু করেছে এবং সিউনিক অঞ্চলে একটি কনস্যুলেট খুলেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের একটি পর্যবেক্ষক মিশনও সেখানে কাজ করছে। তাদের দৃষ্টিতে ট্রাম্প রুট হচ্ছে ‘মধ্য করিডরের’ অংশ, যা রাশিয়াকে এড়িয়ে ইউরোপকে মধ্য এশিয়া ও চীনের সঙ্গে যুক্ত করবে।
রাশিয়ার প্রভাব কমে যাওয়ায় তুরস্কও এ সুযোগ নিতে চাইছে। আঙ্কারা আর্মেনিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে আলোচনা করছে। তারা ট্রাম্প রুটকে সমর্থন জানিয়েছে। এই রুট হলে তুরস্ক সরাসরি আজারবাইজানের সঙ্গে যুক্ত হতে পারবে, তার বিচ্ছিন্ন অঞ্চল (এক্সক্লেভ) হয়ে।
আর্মেনিয়ার সরকার বিভিন্ন শক্তির স্বার্থ নিয়ে আপাতত শান্ত রয়েছে। তারা দেশটিকে ‘ক্রসরোড অব পিস’ হিসেবে গড়ে তুলতে চায়, যেখানে সব আঞ্চলিক শক্তি একসঙ্গে কাজ করবে। স্থানীয় নাগরিক মারুত ভানইয়ান বলেন, ‘তারা বলছে সব ঠিক হয়ে যাবে, কোটি কোটি ইউরোর বিনিয়োগ আসবে, নতুন রাস্তা হবে, আর ইরান, আমেরিকা, ইউরোপ, তুরস্ক ও আজারবাইজানের সঙ্গে বাণিজ্য হবে।’ কথাগুলো বলার সময় তাঁর মুখে ছিল অবিশ্বাসের হাসি।
যুদ্ধবিরতির স্বস্তি
এখনো আজারবাইজান-আর্মেনিয়ার মধ্যে আনুষ্ঠানিক শান্তিচুক্তি হয়নি। তবে একটি বিষয় পরিষ্কার—ওয়াশিংটনে বৈঠকের পর থেকে সীমান্তে একটি গুলিও ছোড়া হয়নি। ট্রাম্পের হস্তক্ষেপ অন্তত সাময়িক স্বস্তি দিয়েছে সেই মানুষদের, যারা বছরের পর বছর নতুন করে যুদ্ধ বাঁধার আতঙ্কে বেঁচে ছিলেন।
বিবিসি থেকে অনুবাদ করেছে আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান
দক্ষিণ আর্মেনিয়ার এক পরিত্যক্ত রেলস্টেশন, মরিচা ধরা কয়েকটি বগি আর কয়েক মিটার রেললাইন—এসবই এখন সোভিয়েত যুগের একটি রেলপথের শেষ চিহ্ন। তবে অবিশ্বাস্য শোনালেও দক্ষিণ ককেশাসের এই ভাঙাচোরা রেললাইনই এখন মার্কিন প্রেসিডেন্টের মধ্যস্থতায় শান্তির প্রতীক হয়ে উঠতে যাচ্ছে। এই শান্তি প্রক্রিয়ার নাম দেওয়া হয়েছে ‘ট্রাম্প রুট ফর ইন্টারন্যাশনাল পিস অ্যান্ড প্রস্পারিটি’, সংক্ষেপে ‘ট্রিপ’।
চারপাশে পড়ে আছে ভাঙা ভাস্কর্যের বিভিন্ন টুকরো। এক কমিউনিস্ট নায়কের স্মৃতিস্তম্ভের ছিন্নভিন্ন মাথা, হাতবিহীন এক নারী মূর্তি। এসব দেখিয়ে স্থানীয় সাংবাদিক মারুত ভানইয়ান বললেন, ‘আমরা এখন ট্রাম্প রুটে আছি। এটিকে শান্তির সড়ক, সিল্ক রোড কিংবা জাঙ্গেজুর করিডরও বলা হয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত কিছুই আমেরিকান মনে হচ্ছে না।’
এই রুটকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট এমন এক যুদ্ধের অবসানের প্রতীক হিসেবে তুলে ধরছেন, যেটিকে তিনি ‘অনিঃশেষ যুদ্ধ’ বলে আখ্যা দিয়েছিলেন। আর্মেনিয়া ও দীর্ঘদিনের শত্রু আজারবাইজানের মধ্যে হওয়া এক সমঝোতার ভিত্তিতেই এ শান্তি প্রক্রিয়ার উদ্যোগ।
পরিকল্পনা অনুযায়ী, মার্কিন কোম্পানিগুলো ৯৯ বছরের চুক্তিতে আর্মেনিয়ার ভেতর দিয়ে ৪৩ কিলোমিটার দীর্ঘ এই রুট নির্মাণ ও উন্নয়নের দায়িত্ব নেবে। এই রুট ইরানের সীমান্ত ঘেঁষে পুরো আর্মেনিয়া পেরিয়ে আজারবাইজানকে তার বিচ্ছিন্ন অঞ্চল নাখিচিভানের সঙ্গে যুক্ত করবে।
প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে রেললাইন, মহাসড়ক ও পাইপলাইন নির্মাণের। ট্রাম্প বলেছেন, মার্কিন কোম্পানিগুলো এখানে প্রচুর অর্থ বিনিয়োগ করবে, যা আর্মেনিয়া, আজারবাইজান ও যুক্তরাষ্ট্র—তিন দেশেরই অর্থনীতিতে সুফল আনবে। কিন্তু মাঠের বাস্তবতা অন্য রকম। পুরো পরিবহন রুট গড়ে তুলতে হবে শূন্য থেকে। তবে অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের চেয়েও বড় চ্যালেঞ্জ রাজনৈতিক বাধা। ট্রাম্পের এই উদ্যোগে দক্ষিণ ককেশাসের ভূরাজনীতিতে বড় পরিবর্তন আসতে পারে। কারণ, এই অঞ্চলকে রাশিয়া তার প্রভাব বলয়ভুক্ত বলে দাবি করে। একই সঙ্গে তেহরানও উদ্বিগ্ন, তারা প্রকল্পটি আটকে দেওয়ার হুমকি দিচ্ছে।
ককেশাসে যুদ্ধ আর শান্তি
ট্রিপ পরিকল্পনাটি আর্মেনিয়া-আজারবাইজান সংঘাতের অবসানের চাবিকাঠি হিসেবে দেখা হচ্ছে পশ্চিমা বিশ্বে। এ সংঘাত শুরু হয়েছিল নাগোরনো-কারাবাখ অঞ্চল নিয়ে। এটি আজারবাইজানের অংশ হলেও ঐতিহাসিকভাবে এখানে আর্মেনীয়রা বসবাস করে।
২০২৩ সালে আজারবাইজান ওই এলাকা পুনর্দখল করে নেয়। ঘরবাড়ি ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয় প্রায় সব আর্মেনীয় বাসিন্দা। তবে এটি প্রথমবার নয়। এর আগে ১৯৯০-এর দশকে আর্মেনিয়ার অভিযানে হয়েছিল পাঁচ লাখেরও বেশি আজারবাইজানি।
ভানইয়ান নিজেও ২০২৩ সালে বাস্তুচ্যুত হয়ে পালাতে বাধ্য হন। পরে তিনি আশ্রয় নেন আর্মেনিয়ার দক্ষিণাঞ্চলীয় প্রদেশ সিউনিক এলাকায়। কিন্তু এখানেই আবার নতুন উত্তেজনার কেন্দ্র তৈরি হয়। আজারবাইজান দাবি তোলে, নাখিচিভানের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য আর্মেনিয়ার এই অঞ্চল দিয়ে একটি ‘করিডর’ দিতে হবে। অঞ্চলটির আরেক নাম জাঙ্গেজুর। সেই প্রস্তাবই পরিচিত হয় ‘জাঙ্গেজুর করিডর’ নামে।
কিন্তু আর্মেনিয়া সে দাবি প্রত্যাখ্যান করে। এরপর সীমান্তে সংঘর্ষ শুরু হয়, নতুন যুদ্ধের আশঙ্কাও তৈরি হয়। ঠিক তখনই, ২০২৫ সালের আগস্টে ট্রাম্প অপ্রত্যাশিত উদ্যোগ নেন। তিনি ওয়াশিংটনে আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভ ও আর্মেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী নিকোল পাশিনিয়ানকে একসঙ্গে বসান। দেন এক সমাধান, যা দুই পক্ষকেই সন্তুষ্ট করে।
ভবিষ্যতের ট্রাম্প প্রস্তাবিত রুট আজারবাইজানের জন্য নিশ্চিত করবে ‘অবাধ যোগাযোগ।’ একই সঙ্গে আর্মেনিয়ার সার্বভৌমত্বকেও পূর্ণ সম্মান জানানো হবে। পুরো রুট পরিচালনা করবে একটি মার্কিন বেসরকারি কোম্পানি। দুই দেশের নেতা বলছেন, ওয়াশিংটনের এই বৈঠক তাদের অঞ্চলে শান্তি ফিরিয়ে এনেছে। তারা ট্রাম্পের মধ্যস্থতাকে ‘গেম চেঞ্জার’ হিসেবে প্রশংসা করেছেন।
ওয়াশিংটনে আজারবাইজান ও আর্মেনিয়ার নেতারা যে দলিলে করেছেন, তবে তাতে খুব বেশি তথ্য নেই। ট্রাম্প রুট কবে তৈরি হবে, সে নিয়েও কোনো সময়সীমা দেওয়া হয়নি।
পশ্চিমা বিশ্ব, রুশ ও ইরানি স্বার্থের সন্ধিক্ষণ এই রুট
দক্ষিণ ককেশাসে রাশিয়ার অবস্থান দুর্বল হয়ে পড়ায় যুক্তরাষ্ট্র এখানে মধ্যস্থতার সুযোগ পেয়েছে। বছরের পর বছর ধরে ক্রেমলিন এই রুটটি চালু করার চেষ্টা করছিল। অথচ, রুশ প্রেক্ষাপট থেকে—ভাগ্যের নির্মম পরিহাস সেই রুটের নাম এখন একজন মার্কিন প্রেসিডেন্টের নামে।
রাশিয়ার প্রস্তাব ছিল ভবিষ্যতের এই সড়ক পাহারা দেবে তাদের গোয়েন্দা সংস্থা এফএসবির সীমান্তরক্ষীরা। যদিও এই প্রস্তাব খারিজ হয়েছে। তবে এই বাহিনী এখনো আর্মেনিয়া-ইরান সীমান্তের ওই অংশ পাহারা দিচ্ছে, যেটি দিয়ে ট্রাম্প রুট যাওয়ার কথা।
আর্মেনিয়ার সিউনিক অঞ্চল রপ্তানির গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। এখানে ইরানের ব্যবসায়ী ও ট্রাক নিয়মিত আসা যাওয়া করে। ইরানি নির্মাণ প্রতিষ্ঠানগুলো একটি নতুন সেতু তৈরি করছে, যা ট্রাম্প রুটের ওপর দিয়ে যাবে। ইরান ও আর্মেনিয়ার সীমানা বয়ে চলা আরাস নদীর প্রবাহ ধরে এই রুট নির্মিত হওয়ার পরিকল্পনা আছে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানি কোম্পানি একসঙ্গে আর্মেনিয়ায় কাজ করবে কি না, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র সম্প্রতি ইসরায়েল-ইরান যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ায় বিষয়টি আরও সংবেদনশীল হয়ে উঠেছে।
ইরানের সর্বোচ্চ নেতার এক জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা হুমকি দিয়েছেন, ট্রাম্প রুটকে তারা ‘ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভাড়াটে সৈন্যদের কবরস্থানে’ পরিণত করবে। তবে ইরানের সরকার অনেক বেশি সংযত ভঙ্গিতে প্রতিক্রিয়া দিয়েছে। তেহরানকে আশ্বস্ত করেছে আর্মেনিয়া। তারা জানিয়েছে, প্রকল্পটি ইরানের স্বার্থের বিরুদ্ধে নয়।
ইউরোপ ও তুরস্কের আগ্রহ
দক্ষিণ আর্মেনিয়ায় ইউরোপের উপস্থিতিও বেড়েছে। ফ্রান্স সম্প্রতি আর্মেনিয়াকে অস্ত্র বিক্রি শুরু করেছে এবং সিউনিক অঞ্চলে একটি কনস্যুলেট খুলেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের একটি পর্যবেক্ষক মিশনও সেখানে কাজ করছে। তাদের দৃষ্টিতে ট্রাম্প রুট হচ্ছে ‘মধ্য করিডরের’ অংশ, যা রাশিয়াকে এড়িয়ে ইউরোপকে মধ্য এশিয়া ও চীনের সঙ্গে যুক্ত করবে।
রাশিয়ার প্রভাব কমে যাওয়ায় তুরস্কও এ সুযোগ নিতে চাইছে। আঙ্কারা আর্মেনিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে আলোচনা করছে। তারা ট্রাম্প রুটকে সমর্থন জানিয়েছে। এই রুট হলে তুরস্ক সরাসরি আজারবাইজানের সঙ্গে যুক্ত হতে পারবে, তার বিচ্ছিন্ন অঞ্চল (এক্সক্লেভ) হয়ে।
আর্মেনিয়ার সরকার বিভিন্ন শক্তির স্বার্থ নিয়ে আপাতত শান্ত রয়েছে। তারা দেশটিকে ‘ক্রসরোড অব পিস’ হিসেবে গড়ে তুলতে চায়, যেখানে সব আঞ্চলিক শক্তি একসঙ্গে কাজ করবে। স্থানীয় নাগরিক মারুত ভানইয়ান বলেন, ‘তারা বলছে সব ঠিক হয়ে যাবে, কোটি কোটি ইউরোর বিনিয়োগ আসবে, নতুন রাস্তা হবে, আর ইরান, আমেরিকা, ইউরোপ, তুরস্ক ও আজারবাইজানের সঙ্গে বাণিজ্য হবে।’ কথাগুলো বলার সময় তাঁর মুখে ছিল অবিশ্বাসের হাসি।
যুদ্ধবিরতির স্বস্তি
এখনো আজারবাইজান-আর্মেনিয়ার মধ্যে আনুষ্ঠানিক শান্তিচুক্তি হয়নি। তবে একটি বিষয় পরিষ্কার—ওয়াশিংটনে বৈঠকের পর থেকে সীমান্তে একটি গুলিও ছোড়া হয়নি। ট্রাম্পের হস্তক্ষেপ অন্তত সাময়িক স্বস্তি দিয়েছে সেই মানুষদের, যারা বছরের পর বছর নতুন করে যুদ্ধ বাঁধার আতঙ্কে বেঁচে ছিলেন।
বিবিসি থেকে অনুবাদ করেছে আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান
চীন ভারতের আশপাশের অঞ্চলকে নিজেদের কার্যক্রম ও প্রভাব বিস্তারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করে। ভারত যেটিকে নিজের এলাকা বা প্রতিবেশ মনে করে, সেটিকে চীনও নিজেদের প্রভাবের জন্য সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ মনে করে। এটি যেমন চীনের পেছনের উঠান, ভারতেরও তেমন।
৬ ঘণ্টা আগেবাস্তবতা হলো, ভারতের প্রায় ৮০ শতাংশ মানুষ হিন্দু ধর্মে বিশ্বাসী। ফলে, বিজেপি ও কংগ্রেস—সব দলের ভেতরেই এই সংখ্যাগরিষ্ঠরা বিপুলভাবে আছেন। তবে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ বা আরএসএস-বিজেপি ‘হিন্দুত্ব’ নামের রাজনৈতিক মতবাদে বিশ্বাসী। হিন্দু ধর্মের ব্যাপক বিস্তৃত দার্শনিক ও আধ্যাত্মিক জগত থেকে তারা দূরে।
১ দিন আগেমার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ২৯ সেপ্টেম্বর গাজা যুদ্ধ শেষ করার জন্য ২০ দফার এক শান্তি প্রস্তাব দেন। এরপর থেকেই তিনি হামাসকে একাধিক আলটিমেটাম দিয়েছেন। শুরুতে তিনি ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠীটিকে তিন থেকে চার দিনের মধ্যে উত্তর দিতে বলেন।
২ দিন আগেজাপানের রাজনীতিতে নতুন অধ্যায় রচনা করতে চলেছেন সানায়ে তাকাইচি। ৬৪ বছর বয়সী এই নারী পুরুষপ্রধান লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির (এলডিপি) নেতৃত্বের দৌড়ে সবাইকে হারিয়ে দিয়েছেন। এতে জাপানের ইতিহাসে প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার দোরগোড়ায় পৌঁছে গেছেন তিনি।
২ দিন আগে