আজকের পত্রিকা ডেস্ক
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ২৯ সেপ্টেম্বর গাজা যুদ্ধ শেষ করার জন্য ২০ দফার এক শান্তি প্রস্তাব দেন। এরপর থেকেই তিনি হামাসকে একাধিক আলটিমেটাম দিয়েছেন। শুরুতে তিনি ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠীটিকে তিন থেকে চার দিনের মধ্যে উত্তর দিতে বলেন। পরে তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আরও কঠোর সময়সীমা বেঁধে দিয়ে বলেন, ৫ অক্টোবর সন্ধ্যার মধ্যে হামাস ইসরায়েলের সঙ্গে চুক্তিতে পৌঁছাতে না পারলে নরক নেমে আসবে।
হামাস অবশ্য নির্ধারিত সময়ের আগেই উত্তর দিয়েছে। ৩ অক্টোবর হামাস যেই শর্তসাপেক্ষ ‘হ্যাঁ সূচক’ বার্তা দিয়েছে, তা ট্রাম্পের প্রত্যাশার বাইরে ছিল। গোষ্ঠীটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ছাড় দিয়েছে বটে। তারা নীতিগতভাবে সম্মত হয়েছে যে ইসরায়েলি বাহিনী পুরোপুরি গাজা ছাড়ার আগেই তারা ৪৮ বন্দীর সবাইকে মুক্তি দেবে (যার মধ্যে প্রায় ২০ জন জীবিত)। তারা এটাও জানিয়েছে, গাজার প্রশাসন ভবিষ্যতে একটি টেকনোক্র্যাট সরকার পরিচালনা করতে পারে। কিন্তু তারা অস্ত্র সমর্পণ করবে কি না বা গাজা থেকে নিজেদের ক্ষমতার পাট চুকিয়ে নেবে কি না; সে ব্যাপারে কোনো প্রতিশ্রুতি দেয়নি। তাদের বার্তায় এমন শর্ত যুক্ত ছিল, যাতে বোঝা যায় বিষয়টি এখনো আলোচনার দাবিদার। তারা বলেছে, বন্দী মুক্তির জন্য ‘বিস্তারিত আলোচনা’ দরকার। এভাবেই ট্রাম্পের ২০ দফার বেশির ভাগ অংশ তারা একেবারেই উপেক্ষা করেছে।
হামাস বিবৃতিটি কৌশলে লিখেছে। দেখতে মনে হয় ‘হ্যাঁ’, কিন্তু বাস্তবে সেটা ছিল ‘হ্যাঁ, কিন্তু...’। আপাতত এতটুকুতে গদগদ হয়ে উঠেছেন বিশ্বরাজনীতির পোস্টারবয় ডোনাল্ড ট্রাম্প, তাঁর আলটিমেটামের মুখ রক্ষা হয়েছে বৈকি। এখন মূল প্রশ্ন হলো, হামাস কি আগামী আলোচনায় আরও ছাড় দেবে? সেটি এখনই বলা মুশকিল। কারণ, সংগঠনটি অন্তর্দ্বন্দ্বে বিভক্ত এবং তাদের নেতারা ট্রাম্পের ‘স্থায়ী যুদ্ধবিরতির’ প্রস্তাবে আস্থা রাখতে পারছেন না।
ট্রাম্প অন্তত শুরুতে হামাসের এই উত্তরকে ‘হ্যাঁ’ হিসেবেই নিয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তিনি লিখেছেন, ‘হামাস স্থায়ী শান্তির জন্য প্রস্তুত।’ তিনি ইসরায়েলকে নির্দেশ দিয়েছেন, ‘বন্দিবিনিময়ের সুবিধার্থে অবিলম্বে গাজায় বোমাবর্ষণ বন্ধ কর।’ ইসরায়েল অবশ্য তাতে কর্ণপাত না করে আজ শনিবার এক বোমা হামলায় ২০ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে।
ইসরায়েলি কর্মকর্তারা বলছেন, বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ট্রাম্পের এই ঘোষণা শুনে হতবাক হয়েছেন। তবুও তাঁর হাতে তেমন বিকল্প ছিল না। নেতানিয়াহু জানিয়েছেন, ইসরায়েল এখন ট্রাম্পের পরিকল্পনার ‘প্রথম ধাপ’ বাস্তবায়নের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী গাজা শহরে টানা কয়েক সপ্তাহের অভিযানের গতি শ্লথ করেছে। কাতার ও মিসর বলেছে, তারা প্রস্তাবিত বন্দিবিনিময় নিয়ে আলোচনা শুরু করতে প্রস্তুত। ইসরায়েলও কায়রোতে আলোচনার জন্য একটি প্রতিনিধিদল পাঠানোর পরিকল্পনা করছে। তবে অনেকে সংশয়ে আছেন। দক্ষিণ ক্যারোলিনার রিপাবলিকান সিনেটর এবং ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ মিত্র লিন্ডসি গ্রাহাম বলেছেন, ‘মূলত হামাসের এই প্রতিক্রিয়া ট্রাম্পের “নাও বা ছেড়ে দাও” প্রস্তাব প্রত্যাখ্যানের সমান।’ নেতানিয়াহুও হয়তো শিগগির ওয়াশিংটনের সঙ্গে যোগাযোগ করে একই বার্তা দেবেন।
আশাবাদীরা বলছেন, অবশেষে হয়তো তিন বছরে পা দিতে যাওয়া এক দীর্ঘ যুদ্ধের অবসান হতে যাচ্ছে। ট্রাম্প এবার ইসরায়েলের ওপরও মার্কিন চাপ প্রয়োগ করেছেন। গত ৯ সেপ্টেম্বর কাতারে হামাস নেতাদের হত্যার লক্ষ্যে ইসরায়েলের বিমান হামলা ব্যর্থ হয়। এই ঘটনার পর ট্রাম্প নেতানিয়াহুকে নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজনীয়তা অনুধাবন করেছেন বলেই ধারণা করা হচ্ছে। পাশাপাশি, মধ্যপ্রাচ্যের নেতারাও হামাসের ওপর চাপ বাড়াচ্ছেন। মিসর, কাতার ও তুরস্কের গুপ্তচরপ্রধানেরা গত মাসে দোহায় হামাস নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বলেছেন, ট্রাম্পের যুদ্ধ শেষ করার পরিকল্পনাই ‘শেষ সুযোগ’।
ট্রাম্পের পরিকল্পনা প্রকাশের পর সপ্তাহের শুরুতে নেতানিয়াহু ও তাঁর সহযোগীরা উল্লসিত ছিলেন। এতে তাঁদের বহু দাবি অন্তর্ভুক্ত ছিল। জেরুজালেমে প্রচলিত ধারণা ছিল, এসব শর্ত হামাসের পক্ষে গ্রহণ করা কঠিন হবে এবং এতে ইসরায়েল যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার যুক্তি পাবে। কিন্তু হামাস তা এড়িয়ে গেছে। নেতানিয়াহু এখন একদিকে দ্রুত শান্তি চুক্তি চাওয়া ট্রাম্পের চাপে, অপর দিকে দুই বছরের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে ক্লান্ত এবং বন্দীদের ফেরত পাওয়ার আকাঙ্ক্ষায় থাকা ইসরায়েলি জনগণ। ট্রাম্পের পুরো ২০ দফার পরিকল্পনায় ৭২ শতাংশ ইসরায়েলি সমর্থন দিয়েছেন, আর হামাসের প্রতিক্রিয়ার পর গাজায় প্রায় ২০ লাখ মানুষ যুদ্ধবিরতির আশায় উল্লাস করেছে।
তবে গত ২৪ ঘণ্টার আশাবাদী আলোচনা এখনো বাস্তব চ্যালেঞ্জগুলো দূর করেনি। বন্দী মুক্তি নিয়েই তাৎক্ষণিক চুক্তি কতটা সম্ভব বা অস্ত্র সমর্পণ ও যুদ্ধ-পরবর্তী গাজার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে যে মূল মতবিরোধ; সেগুলো এখনো অমীমাংসিত। কার্যত হামাস ট্রাম্পের পরিকল্পনাকে দুই ভাগ করেছে: প্রথম ভাগে যুদ্ধবিরতি, বন্দিবিনিময় ও মানবিক সহায়তা চালিয়ে যাওয়া, যা চুক্তি হলে কয়েক দিনের মধ্যে শুরু হবে। দ্বিতীয় ভাগে যুদ্ধ-পরবর্তী পুনর্গঠন ও গাজা প্রশাসনের ভবিষ্যৎ।
এক অর্থে, হামাস এখন ইসরায়েলের জানুয়ারির যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবের কৌশল নকল করছে। ইসরায়েল তিন ধাপের যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপে রাজি হলেও বাকি দুই ধাপে যোগ দেয়নি। পরে ট্রাম্প ক্ষুব্ধ হন, কারণ কিছু ইসরায়েলি বন্দীর শারীরিক অবস্থা শোচনীয় ছিল এবং হামাস তাদের প্রচারণার কাজে ব্যবহার করেছিল। শেষ পর্যন্ত তিনি ইসরায়েলের যুক্তি মেনে নিয়ে যুদ্ধ পুনরায় শুরুর সম্মতি দেন।
এবার হামাস আগে থেকেই কাতারি পৃষ্ঠপোষকদের মাধ্যমে ট্রাম্পের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করেছে। দোহায় অবস্থানরত এর রাজনৈতিক নেতারা ট্রাম্পের পরিকল্পনার প্রথম অংশ মেনে নিতে মোটামুটি রাজি, যদিও দুটি বড় শর্ত রয়েছে। প্রথমত, হামাস আশঙ্কা করছে বন্দীদের মুক্তি দেওয়ার পর চুক্তি ভেঙে যেতে পারে, কারণ এটাই তাদের একমাত্র চাপ প্রয়োগের অস্ত্র। তারা নিশ্চয়তা চায় যে নেতানিয়াহু পুনরায় যুদ্ধ শুরু করবেন না, যেমনটি মার্চে করেছিলেন। আলোচনায় যুক্ত এক আরব কর্মকর্তা বলেছেন, ‘তারা চায় না এটা তিন দিনের যুদ্ধবিরতি হয়ে যাক।’ গাজায় থাকা হামাসের সামরিক কমান্ডাররা দোহার নেতাদের চেয়ে এই আশঙ্কায় বেশি উদ্বিগ্ন, যা গোষ্ঠীটির ভেতর অন্তর্দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করেছে।
হামাসের আরেকটি প্রশ্ন ইসরায়েলের গাজা ত্যাগ নিয়ে। ট্রাম্পকে পাঠানো বার্তায় তারা বলেছে, বন্দীদের মুক্তি দেওয়া হবে গাজা থেকে ইসরায়েলি সেনাদের সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাহারের লক্ষ্যেই। কিন্তু ট্রাম্পের পরিকল্পনায় এমন কিছু নেই। এতে বলা আছে, বন্দী মুক্তির পর ইসরায়েল গাজার কিছু অংশ ছেড়ে দেবে (যদিও মানচিত্রে সেটি যথেষ্ট অস্পষ্ট)। পরবর্তী প্রত্যাহার নির্ভর করবে ‘অনির্দিষ্ট’ কিছু শর্তের ওপর, আর ইসরায়েল গাজার সীমান্তে একটি ‘বাফার জোন’ রাখার অনুমতি পাবে।
পরিকল্পনার দ্বিতীয় অংশ নিয়ে মতৈক্য আরও কম। এখানে যুদ্ধ-পরবর্তী গাজার পুনর্গঠনের একটি বিস্তৃত (তবে অস্পষ্ট) রূপরেখা দেওয়া আছে। ট্রাম্প নিজে ‘বোর্ড অব পিস’ নামে একটি সংস্থা পরিচালনা করবেন, যার সদস্য হিসেবে সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারকে রাখা হবে। আরব দেশগুলো শান্তিরক্ষী বাহিনীর জন্য সৈন্য পাঠাবে। হামাসকে অস্ত্র ত্যাগ করতে হবে এবং যুদ্ধ-পরবর্তী প্রশাসনে তাদের কোনো ভূমিকা থাকবে না। হামাস সদস্যদের সামনে বিকল্প থাকবে, ‘ক্ষমা’ বা ‘নির্বাসন’।
হামাস এসব প্রায় কিছুই মেনে নেয়নি। তারা প্রস্তাব দিয়েছে, প্রশাসন ‘স্বাধীন ফিলিস্তিনি প্রতিনিধিদের একটি সংস্থা’ পরিচালনা করবে, যা টনি ব্লেয়ারের মতো বিদেশি ব্যক্তিত্বদের ভূমিকা কার্যত বাতিল করে। তারা অস্ত্র সমর্পণ নিয়ে কিছু বলেনি। এক আরব মধ্যস্থতাকারীর মতে, হামাস হয়তো ভারী অস্ত্র যেমন রকেট হস্তান্তরে রাজি হতে পারে (যার মজুত এখন অনেকটাই ফুরিয়ে গেছে), তবে হালকা অস্ত্র রাখতে চায়। পাশাপাশি তারা যুদ্ধ-পরবর্তী গাজার ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনায় অন্তর্ভুক্ত থাকতে চায়।
ট্রাম্পের পরিকল্পনার সমর্থকদের মতে, এসব মতভেদ চুক্তির পথে বাধা হওয়া উচিত নয়। সবচেয়ে জরুরি বিষয় হলো প্রথম ধাপ দ্রুত বাস্তবায়ন করা, যেটি যুদ্ধ থামানো ও বন্দীদের মুক্তি দেওয়া। এতে সময় পাওয়া যাবে বাকি জটিল বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করতে। কিন্তু এতে ধরে নেওয়া হচ্ছে, উভয়পক্ষ আপাতত কিছু বিষয়ে ছাড় দিতে রাজি। ইসরায়েল কি এমন চুক্তি মেনে নেবে, যেখানে হামাসের নিরস্ত্রীকরণ প্রক্রিয়া বিস্তারিতভাবে নির্ধারিত নয়? হামাস কি এমন প্রস্তাব নেবে, যেখানে ইসরায়েলি প্রত্যাহারের শর্ত স্পষ্ট নয়? অনেক কিছুই এখন নির্ভর করছে ট্রাম্পের ওপর, তিনি কীভাবে উভয়পক্ষকে আশ্বাস ও চাপ দিয়ে রাজি করাতে পারেন। আলোচনায় দেরি হলে, তার আগ্রহ হাওয়ায় মিলিয়ে যেতে পারে।
ট্রাম্পের পরিকল্পনা বিশদ নয়। বাস্তবায়নের আগে কিছুদিন বা সপ্তাহব্যাপী আলোচনা লাগবে, এটা শুরু থেকেই জানা ছিল। হামাস জানিয়েছে, তারা এমন আলোচনায় অংশ নিতে প্রস্তুত। তবে সেই আলোচনার ফল সফল হবে কি না, সেটাই এখন দেখার বিষয়।
দ্য ইকোনমিস্ট অবলম্বনে লিখেছেন আবদুল বাছেদ
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ২৯ সেপ্টেম্বর গাজা যুদ্ধ শেষ করার জন্য ২০ দফার এক শান্তি প্রস্তাব দেন। এরপর থেকেই তিনি হামাসকে একাধিক আলটিমেটাম দিয়েছেন। শুরুতে তিনি ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠীটিকে তিন থেকে চার দিনের মধ্যে উত্তর দিতে বলেন। পরে তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আরও কঠোর সময়সীমা বেঁধে দিয়ে বলেন, ৫ অক্টোবর সন্ধ্যার মধ্যে হামাস ইসরায়েলের সঙ্গে চুক্তিতে পৌঁছাতে না পারলে নরক নেমে আসবে।
হামাস অবশ্য নির্ধারিত সময়ের আগেই উত্তর দিয়েছে। ৩ অক্টোবর হামাস যেই শর্তসাপেক্ষ ‘হ্যাঁ সূচক’ বার্তা দিয়েছে, তা ট্রাম্পের প্রত্যাশার বাইরে ছিল। গোষ্ঠীটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ছাড় দিয়েছে বটে। তারা নীতিগতভাবে সম্মত হয়েছে যে ইসরায়েলি বাহিনী পুরোপুরি গাজা ছাড়ার আগেই তারা ৪৮ বন্দীর সবাইকে মুক্তি দেবে (যার মধ্যে প্রায় ২০ জন জীবিত)। তারা এটাও জানিয়েছে, গাজার প্রশাসন ভবিষ্যতে একটি টেকনোক্র্যাট সরকার পরিচালনা করতে পারে। কিন্তু তারা অস্ত্র সমর্পণ করবে কি না বা গাজা থেকে নিজেদের ক্ষমতার পাট চুকিয়ে নেবে কি না; সে ব্যাপারে কোনো প্রতিশ্রুতি দেয়নি। তাদের বার্তায় এমন শর্ত যুক্ত ছিল, যাতে বোঝা যায় বিষয়টি এখনো আলোচনার দাবিদার। তারা বলেছে, বন্দী মুক্তির জন্য ‘বিস্তারিত আলোচনা’ দরকার। এভাবেই ট্রাম্পের ২০ দফার বেশির ভাগ অংশ তারা একেবারেই উপেক্ষা করেছে।
হামাস বিবৃতিটি কৌশলে লিখেছে। দেখতে মনে হয় ‘হ্যাঁ’, কিন্তু বাস্তবে সেটা ছিল ‘হ্যাঁ, কিন্তু...’। আপাতত এতটুকুতে গদগদ হয়ে উঠেছেন বিশ্বরাজনীতির পোস্টারবয় ডোনাল্ড ট্রাম্প, তাঁর আলটিমেটামের মুখ রক্ষা হয়েছে বৈকি। এখন মূল প্রশ্ন হলো, হামাস কি আগামী আলোচনায় আরও ছাড় দেবে? সেটি এখনই বলা মুশকিল। কারণ, সংগঠনটি অন্তর্দ্বন্দ্বে বিভক্ত এবং তাদের নেতারা ট্রাম্পের ‘স্থায়ী যুদ্ধবিরতির’ প্রস্তাবে আস্থা রাখতে পারছেন না।
ট্রাম্প অন্তত শুরুতে হামাসের এই উত্তরকে ‘হ্যাঁ’ হিসেবেই নিয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তিনি লিখেছেন, ‘হামাস স্থায়ী শান্তির জন্য প্রস্তুত।’ তিনি ইসরায়েলকে নির্দেশ দিয়েছেন, ‘বন্দিবিনিময়ের সুবিধার্থে অবিলম্বে গাজায় বোমাবর্ষণ বন্ধ কর।’ ইসরায়েল অবশ্য তাতে কর্ণপাত না করে আজ শনিবার এক বোমা হামলায় ২০ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে।
ইসরায়েলি কর্মকর্তারা বলছেন, বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ট্রাম্পের এই ঘোষণা শুনে হতবাক হয়েছেন। তবুও তাঁর হাতে তেমন বিকল্প ছিল না। নেতানিয়াহু জানিয়েছেন, ইসরায়েল এখন ট্রাম্পের পরিকল্পনার ‘প্রথম ধাপ’ বাস্তবায়নের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী গাজা শহরে টানা কয়েক সপ্তাহের অভিযানের গতি শ্লথ করেছে। কাতার ও মিসর বলেছে, তারা প্রস্তাবিত বন্দিবিনিময় নিয়ে আলোচনা শুরু করতে প্রস্তুত। ইসরায়েলও কায়রোতে আলোচনার জন্য একটি প্রতিনিধিদল পাঠানোর পরিকল্পনা করছে। তবে অনেকে সংশয়ে আছেন। দক্ষিণ ক্যারোলিনার রিপাবলিকান সিনেটর এবং ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ মিত্র লিন্ডসি গ্রাহাম বলেছেন, ‘মূলত হামাসের এই প্রতিক্রিয়া ট্রাম্পের “নাও বা ছেড়ে দাও” প্রস্তাব প্রত্যাখ্যানের সমান।’ নেতানিয়াহুও হয়তো শিগগির ওয়াশিংটনের সঙ্গে যোগাযোগ করে একই বার্তা দেবেন।
আশাবাদীরা বলছেন, অবশেষে হয়তো তিন বছরে পা দিতে যাওয়া এক দীর্ঘ যুদ্ধের অবসান হতে যাচ্ছে। ট্রাম্প এবার ইসরায়েলের ওপরও মার্কিন চাপ প্রয়োগ করেছেন। গত ৯ সেপ্টেম্বর কাতারে হামাস নেতাদের হত্যার লক্ষ্যে ইসরায়েলের বিমান হামলা ব্যর্থ হয়। এই ঘটনার পর ট্রাম্প নেতানিয়াহুকে নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজনীয়তা অনুধাবন করেছেন বলেই ধারণা করা হচ্ছে। পাশাপাশি, মধ্যপ্রাচ্যের নেতারাও হামাসের ওপর চাপ বাড়াচ্ছেন। মিসর, কাতার ও তুরস্কের গুপ্তচরপ্রধানেরা গত মাসে দোহায় হামাস নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বলেছেন, ট্রাম্পের যুদ্ধ শেষ করার পরিকল্পনাই ‘শেষ সুযোগ’।
ট্রাম্পের পরিকল্পনা প্রকাশের পর সপ্তাহের শুরুতে নেতানিয়াহু ও তাঁর সহযোগীরা উল্লসিত ছিলেন। এতে তাঁদের বহু দাবি অন্তর্ভুক্ত ছিল। জেরুজালেমে প্রচলিত ধারণা ছিল, এসব শর্ত হামাসের পক্ষে গ্রহণ করা কঠিন হবে এবং এতে ইসরায়েল যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার যুক্তি পাবে। কিন্তু হামাস তা এড়িয়ে গেছে। নেতানিয়াহু এখন একদিকে দ্রুত শান্তি চুক্তি চাওয়া ট্রাম্পের চাপে, অপর দিকে দুই বছরের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে ক্লান্ত এবং বন্দীদের ফেরত পাওয়ার আকাঙ্ক্ষায় থাকা ইসরায়েলি জনগণ। ট্রাম্পের পুরো ২০ দফার পরিকল্পনায় ৭২ শতাংশ ইসরায়েলি সমর্থন দিয়েছেন, আর হামাসের প্রতিক্রিয়ার পর গাজায় প্রায় ২০ লাখ মানুষ যুদ্ধবিরতির আশায় উল্লাস করেছে।
তবে গত ২৪ ঘণ্টার আশাবাদী আলোচনা এখনো বাস্তব চ্যালেঞ্জগুলো দূর করেনি। বন্দী মুক্তি নিয়েই তাৎক্ষণিক চুক্তি কতটা সম্ভব বা অস্ত্র সমর্পণ ও যুদ্ধ-পরবর্তী গাজার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে যে মূল মতবিরোধ; সেগুলো এখনো অমীমাংসিত। কার্যত হামাস ট্রাম্পের পরিকল্পনাকে দুই ভাগ করেছে: প্রথম ভাগে যুদ্ধবিরতি, বন্দিবিনিময় ও মানবিক সহায়তা চালিয়ে যাওয়া, যা চুক্তি হলে কয়েক দিনের মধ্যে শুরু হবে। দ্বিতীয় ভাগে যুদ্ধ-পরবর্তী পুনর্গঠন ও গাজা প্রশাসনের ভবিষ্যৎ।
এক অর্থে, হামাস এখন ইসরায়েলের জানুয়ারির যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবের কৌশল নকল করছে। ইসরায়েল তিন ধাপের যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপে রাজি হলেও বাকি দুই ধাপে যোগ দেয়নি। পরে ট্রাম্প ক্ষুব্ধ হন, কারণ কিছু ইসরায়েলি বন্দীর শারীরিক অবস্থা শোচনীয় ছিল এবং হামাস তাদের প্রচারণার কাজে ব্যবহার করেছিল। শেষ পর্যন্ত তিনি ইসরায়েলের যুক্তি মেনে নিয়ে যুদ্ধ পুনরায় শুরুর সম্মতি দেন।
এবার হামাস আগে থেকেই কাতারি পৃষ্ঠপোষকদের মাধ্যমে ট্রাম্পের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করেছে। দোহায় অবস্থানরত এর রাজনৈতিক নেতারা ট্রাম্পের পরিকল্পনার প্রথম অংশ মেনে নিতে মোটামুটি রাজি, যদিও দুটি বড় শর্ত রয়েছে। প্রথমত, হামাস আশঙ্কা করছে বন্দীদের মুক্তি দেওয়ার পর চুক্তি ভেঙে যেতে পারে, কারণ এটাই তাদের একমাত্র চাপ প্রয়োগের অস্ত্র। তারা নিশ্চয়তা চায় যে নেতানিয়াহু পুনরায় যুদ্ধ শুরু করবেন না, যেমনটি মার্চে করেছিলেন। আলোচনায় যুক্ত এক আরব কর্মকর্তা বলেছেন, ‘তারা চায় না এটা তিন দিনের যুদ্ধবিরতি হয়ে যাক।’ গাজায় থাকা হামাসের সামরিক কমান্ডাররা দোহার নেতাদের চেয়ে এই আশঙ্কায় বেশি উদ্বিগ্ন, যা গোষ্ঠীটির ভেতর অন্তর্দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করেছে।
হামাসের আরেকটি প্রশ্ন ইসরায়েলের গাজা ত্যাগ নিয়ে। ট্রাম্পকে পাঠানো বার্তায় তারা বলেছে, বন্দীদের মুক্তি দেওয়া হবে গাজা থেকে ইসরায়েলি সেনাদের সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাহারের লক্ষ্যেই। কিন্তু ট্রাম্পের পরিকল্পনায় এমন কিছু নেই। এতে বলা আছে, বন্দী মুক্তির পর ইসরায়েল গাজার কিছু অংশ ছেড়ে দেবে (যদিও মানচিত্রে সেটি যথেষ্ট অস্পষ্ট)। পরবর্তী প্রত্যাহার নির্ভর করবে ‘অনির্দিষ্ট’ কিছু শর্তের ওপর, আর ইসরায়েল গাজার সীমান্তে একটি ‘বাফার জোন’ রাখার অনুমতি পাবে।
পরিকল্পনার দ্বিতীয় অংশ নিয়ে মতৈক্য আরও কম। এখানে যুদ্ধ-পরবর্তী গাজার পুনর্গঠনের একটি বিস্তৃত (তবে অস্পষ্ট) রূপরেখা দেওয়া আছে। ট্রাম্প নিজে ‘বোর্ড অব পিস’ নামে একটি সংস্থা পরিচালনা করবেন, যার সদস্য হিসেবে সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারকে রাখা হবে। আরব দেশগুলো শান্তিরক্ষী বাহিনীর জন্য সৈন্য পাঠাবে। হামাসকে অস্ত্র ত্যাগ করতে হবে এবং যুদ্ধ-পরবর্তী প্রশাসনে তাদের কোনো ভূমিকা থাকবে না। হামাস সদস্যদের সামনে বিকল্প থাকবে, ‘ক্ষমা’ বা ‘নির্বাসন’।
হামাস এসব প্রায় কিছুই মেনে নেয়নি। তারা প্রস্তাব দিয়েছে, প্রশাসন ‘স্বাধীন ফিলিস্তিনি প্রতিনিধিদের একটি সংস্থা’ পরিচালনা করবে, যা টনি ব্লেয়ারের মতো বিদেশি ব্যক্তিত্বদের ভূমিকা কার্যত বাতিল করে। তারা অস্ত্র সমর্পণ নিয়ে কিছু বলেনি। এক আরব মধ্যস্থতাকারীর মতে, হামাস হয়তো ভারী অস্ত্র যেমন রকেট হস্তান্তরে রাজি হতে পারে (যার মজুত এখন অনেকটাই ফুরিয়ে গেছে), তবে হালকা অস্ত্র রাখতে চায়। পাশাপাশি তারা যুদ্ধ-পরবর্তী গাজার ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনায় অন্তর্ভুক্ত থাকতে চায়।
ট্রাম্পের পরিকল্পনার সমর্থকদের মতে, এসব মতভেদ চুক্তির পথে বাধা হওয়া উচিত নয়। সবচেয়ে জরুরি বিষয় হলো প্রথম ধাপ দ্রুত বাস্তবায়ন করা, যেটি যুদ্ধ থামানো ও বন্দীদের মুক্তি দেওয়া। এতে সময় পাওয়া যাবে বাকি জটিল বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করতে। কিন্তু এতে ধরে নেওয়া হচ্ছে, উভয়পক্ষ আপাতত কিছু বিষয়ে ছাড় দিতে রাজি। ইসরায়েল কি এমন চুক্তি মেনে নেবে, যেখানে হামাসের নিরস্ত্রীকরণ প্রক্রিয়া বিস্তারিতভাবে নির্ধারিত নয়? হামাস কি এমন প্রস্তাব নেবে, যেখানে ইসরায়েলি প্রত্যাহারের শর্ত স্পষ্ট নয়? অনেক কিছুই এখন নির্ভর করছে ট্রাম্পের ওপর, তিনি কীভাবে উভয়পক্ষকে আশ্বাস ও চাপ দিয়ে রাজি করাতে পারেন। আলোচনায় দেরি হলে, তার আগ্রহ হাওয়ায় মিলিয়ে যেতে পারে।
ট্রাম্পের পরিকল্পনা বিশদ নয়। বাস্তবায়নের আগে কিছুদিন বা সপ্তাহব্যাপী আলোচনা লাগবে, এটা শুরু থেকেই জানা ছিল। হামাস জানিয়েছে, তারা এমন আলোচনায় অংশ নিতে প্রস্তুত। তবে সেই আলোচনার ফল সফল হবে কি না, সেটাই এখন দেখার বিষয়।
দ্য ইকোনমিস্ট অবলম্বনে লিখেছেন আবদুল বাছেদ
জাপানের রাজনীতিতে নতুন অধ্যায় রচনা করতে চলেছেন সানায়ে তাকাইচি। ৬৪ বছর বয়সী এই নারী পুরুষপ্রধান লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির (এলডিপি) নেতৃত্বের দৌড়ে সবাইকে হারিয়ে দিয়েছেন। এতে জাপানের ইতিহাসে প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার দোরগোড়ায় পৌঁছে গেছেন তিনি।
৬ ঘণ্টা আগেভারতের নীতিনির্ধারকেরা যেভাবে অনেক সময় চীনের সঙ্গে সম্পর্ক পুনর্গঠনের সম্ভাবনাকে অতিমাত্রায় গুরুত্ব দেন, সেভাবেই তাঁরা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের স্থায়িত্বকে বারবার খাটো করে দেখেন। চীনের মতো যুক্তরাষ্ট্র ভারতীয় ভূখণ্ড দখল করে রাখেনি, যুদ্ধে পাকিস্তানকে গোয়েন্দা ও সামরিক সহায়তা দেয়নি কিংবা এশিয়ার
১০ ঘণ্টা আগেপোল্যান্ডের আকাশে রুশ ড্রোন; এস্তোনিয়ার আকাশসীমায় মিগ যুদ্ধবিমান; বাল্টিক সাগরের গভীরে টেলিকম কেব্ল বিনষ্টীকরণ; সাইবার ও ড্রোন হামলায় বিমানবন্দরগুলোতে অচলাবস্থা; রহস্যজনক বিস্ফোরণ ও হত্যাকাণ্ড; নির্বাচন বিঘ্ন ঘটাতে বটসেনাদের প্রোপাগান্ডা—এসবের কোনোটিই এককভাবে যুদ্ধ ঘোষণা করার মতো কারণ নয়, কিন্তু সব
১ দিন আগেভারতীয়-আমেরিকানরা সংবাদপত্রের সম্পাদকীয় বোর্ড, থিঙ্কট্যাংক, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতায় নেতৃত্ব দিচ্ছেন। রাজনৈতিক প্রচারণায় অর্থ অনুদান দেন, সিনেটরদের পরামর্শ দেন, নীতিনির্ধারণে ভূমিকা রাখেন। অথচ এক মার্কিন প্রতিনিধি ভারতীয় এমপিদের জানিয়েছেন—তাঁর অফিসে ভারতের বিরুদ্ধে প্রশাসনের পদক্ষেপ নিয়ে কোনো...
১ দিন আগে