Ajker Patrika

জাপানের ‘আয়রন লেডি’ হতে পারবেন কি সানায়ে তাকাইচি

জাপানের ‘আয়রন লেডি’ হতে পারবেন কি সানায়ে তাকাইচি

জাপানের রাজনীতিতে নতুন অধ্যায় রচনা করতে চলেছেন সানায়ে তাকাইচি। ৬৪ বছর বয়সী এই নারী পুরুষপ্রধান লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির (এলডিপি) নেতৃত্বের দৌড়ে সবাইকে হারিয়ে দিয়েছেন। এতে জাপানের ইতিহাসে প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার দোরগোড়ায় পৌঁছে গেছেন তিনি।

চমকপ্রদ তথ্য হলো, তাকাইচির হিরো বা আদর্শ ব্যক্তিত্ব ‘আয়রন লেডি’ খ্যাত ব্রিটেনের সাবেক প্রধানমন্ত্রী মার্গারেট থ্যাচার। থ্যাচারের মতোই দৃঢ়চেতা ও আপসহীন নেতৃত্বের স্বপ্ন লালন করে আসছেন তিনি। তাকাইচির ভাষ্য, ২০১৩ সালে থ্যাচারের মৃত্যুর আগে এক সিম্পোজিয়ামে তাঁর সঙ্গে দেখা হয়েছিল, সেখান থেকেই তিনি ‘আয়রন লেডি’র চরিত্র ও কর্মপদ্ধতিকে নিজের রাজনৈতিক জীবনের অনুপ্রেরণা হিসেবে গ্রহণ করেন।

জাপানের সাবেক অর্থনৈতিক নিরাপত্তা ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তাকাইচি আগেও এলডিপির নেতৃত্বের লড়াইয়ে নামলেও সফল হননি। এলডিপি সংসদে সবচেয়ে বড় দল হলেও সাম্প্রতিক নির্বাচনে পরাজয়ের কারণে এই দলের জোট উভয় কক্ষে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়েছে। ফলে তাকাইচির প্রধানমন্ত্রিত্ব পুরোপুরি নিশ্চিত নয়। তবে দলীয় সহকর্মীদের মধ্যে তাঁর প্রতি প্রবল সমর্থন আছে।

ব্যক্তিত্ব ও রাজনৈতিক অবস্থানের কারণে তাকাইচি স্পটলাইটে এসেছেন। তিনি হেভি মেটাল সংগীতপ্রেমী ও ড্রাম বাজানোয় পারদর্শী। আবার জাতীয়তাবাদী অবস্থানের কারণেও তিনি পরিচিত। তাকাইচি নিয়মিত ইয়াসুকুনি মন্দিরে যান, যেখানে জাপানের যুদ্ধাহত সৈন্যদের পাশাপাশি যুদ্ধাপরাধীদেরও স্মরণ করা হয়। তাঁর এই অবস্থানের কারণে চীন ও দক্ষিণ কোরিয়া বারবার ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। জাপানের ‘শান্তিপূর্ণ’ সংবিধান সংশোধন করে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘সামরিক বাহিনীর ভূমিকা’র স্বীকৃতির পক্ষে তিনি এবং তাইওয়ানের সঙ্গে আংশিক নিরাপত্তা জোট গঠন করতে চান।

অর্থনৈতিক নীতির কারণেও তাকাইচি বেশ আলোচিত। প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে তিনি সবসময় ‘আবেনমিক্স’-এর জোরালো সমর্থক ছিলেন। জনগণের জীবনযাত্রার ব্যয় কমাতে সরকারি ব্যয় বাড়ানোর ও কর হ্রাসের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তাকাইচি। ব্যাংক অব জাপানের সুদবৃদ্ধি নীতির সমালোচক তিনি। কিন্তু তাঁর এসব ব্যয়বহুল পদক্ষেপ জাপানের ঋণগ্রস্ত অর্থনীতিকে বাড়তি ঝুঁকির মুখে ফেলতে পারে বলে বিনিয়োগকারীদের উদ্বেগ আছে।

তাকাইচি তিনি নারী মন্ত্রীর সংখ্যা বাড়াবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। জি–সেভেন জোটভুক্ত অন্যান্য দেশের তুলনায় এ ক্ষেত্রে জাপান এখনো পিছিয়ে। কিন্তু তিনি সমলিঙ্গ বিবাহের বিরোধী এবং বিবাহিত দম্পতিদের আলাদা পদবী রাখার বিপক্ষে। সুতরাং তাঁর রক্ষণশীল অবস্থান স্পষ্ট। ফলে নারী ভোটারদের মধ্যে তাঁর জনপ্রিয়তা সীমিত হলেও পুরুষ ভোটারদের সমর্থন তিনি বেশি পাচ্ছেন।

তাকাইচির মা ছিলেন পুলিশ কর্মকর্তা, আর বাবা কাজ করতেন জাপানের অটোমোবাইল শিল্পে। কোবে বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যবসায় প্রশাসন পড়ার পর তিনি যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসে ফেলোশিপ করেছিলেন। ১৯৯৩ সালে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রথমবারের মতো জাপানের নিম্নকক্ষের সদস্য নির্বাচিত হন। এর মধ্য দিয়ে রাজনীতিতে প্রবেশ করে ১৯৯৬ সালে এলডিপিতে যোগ দেন তিনি।

সম্প্রতি নিজের এলাকা নারায় বিদেশি পর্যটকদের হাতে হরিণ নির্যাতনের সমালোচনা করে শৃঙ্খলা রক্ষায় কঠোর অবস্থান নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। অভিবাসী ও পর্যটকের সংখ্যা বাড়ার প্রেক্ষাপটে বিষয়টি ভোটারদের মনোযোগ টানতে পেরেছে। তাঁর কঠোর জাতীয়তাবাদী ভাবমূর্তি, অর্থনৈতিক সম্প্রসারণবাদী দৃষ্টিভঙ্গি এবং থ্যাচার–অনুপ্রাণিত দৃঢ় ব্যক্তিত্ব তাঁকে জাপানের ‘আয়রন লেডি’ হওয়ার পথে এগিয়ে দিচ্ছে।

তাকাইচির বিজয় শুধু জাপানে নারী নেতৃত্বের নতুন দিগন্ত নয়, বরং রাজনীতি ও অর্থনীতিতেও বড় ধরনের পরিবর্তনের ইঙ্গিতও বহন করছে। তবে দলীয় বিভাজন, অর্থনৈতিক চাপ ও আন্তর্জাতিক ভারসাম্যের জটিল বাস্তবতায় তাঁর পরিকল্পনা দেশকে কোন পথে নিয়ে যাবে— এখন সেটিই বড় প্রশ্ন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের প্রশ্ন, থ্যাচারের আদর্শে অনুপ্রাণিত তাকাশি কি হতে পারবেন জাপানের ‘আয়রন লেডি’।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত