আজকের পত্রিকা ডেস্ক

আমেরিকায় অভিবাসীদের সাফল্যের কাহিনির ভান্ডারে ভারতীয় বংশোদ্ভূত আমেরিকানদের গল্প আলাদা করে উজ্জ্বল হয়ে রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে সব জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে সবচেয়ে বেশি গড় পারিবারিক আয় তাঁদের। ফরচুন-৫০০ কোম্পানির শীর্ষ পদে রয়েছেন একাধিক ভারতীয় বংশোদ্ভূত সিইও। মার্কিন কংগ্রেসে আছেন ছয়জন সদস্য, আছেন দুই সাবেক গভর্নর। এমনকি, এফবিআই ও সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের মতো (সিডিসি) ফেডারেল সরকারের বিভিন্ন বিভাগের উচ্চপদেও রয়েছেন অনেকে। সব মিলিয়ে ভারতীয়-আমেরিকানদের প্রভাব, সাফল্য আর মূলধারার সঙ্গে ভারতের স্বার্থ সুরক্ষার ধারণা বারবার সামনে উঠে এসেছে।
কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন ভারতের বিরুদ্ধে একের পর এক কঠোর পদক্ষেপ নিলেও এ প্রভাবশালী প্রবাসী গোষ্ঠীর প্রতিক্রিয়া প্রায় নেই বললেই চলে। যুক্তরাষ্ট্র ভারতীয় পণ্যের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক বসিয়েছে। এইচ-১বি ভিসার জন্য আবেদন ফি ১ লাখ ডলার করেছে, যে ভিসার ৭০ শতাংশই পান ভারতীয়রা। ইরানের চাবাহার বন্দরে ভারতের কৌশলগত উন্নয়ন প্রকল্পে দিয়েছে নিষেধাজ্ঞা। শিক্ষার্থী ভিসা ও অভিবাসনের পথও করেছে কঠিন। এমনকি নানাভাবে ভারতকে অপমানও করা হয়েছে। অথচ এসব ঘটনায় প্রবাসী ভারতীয়দের প্রতিবাদ শোনা যায়নি।
এই নীরবতা বিস্ময়কর! ক্ষমতার কেন্দ্রে প্রবেশাধিকারের ক্ষেত্রে তাঁদের কোনো বাধা নেই। ভারতীয়-আমেরিকানরা সংবাদপত্রের সম্পাদকীয় বোর্ড, থিঙ্কট্যাংক, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতায় নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তাঁরা রাজনৈতিক প্রচারণায় অর্থ অনুদান দেন, সিনেটরদের পরামর্শ দেন, নীতিনির্ধারণে ভূমিকা রাখেন। অথচ যুক্তরাষ্ট্রে সফরকালে কংগ্রেস সদস্যদের এক বৈঠকে এক মার্কিন প্রতিনিধি ভারতীয় এমপিদের জানিয়েছিলেন—তাঁর অফিসে ভারতের বিরুদ্ধে প্রশাসনের পদক্ষেপ নিয়ে কোনো ফোনকলই আসেনি। অথচ ইসরায়েল ইস্যুতে তাঁর অফিসে অসংখ্য কল আসে নিয়মিত। তাহলে কেন ভারতের বিরুদ্ধে এমন শাস্তিমূলক পদক্ষেপের সময় প্রবাসীরা মুখ খোলেন না?
এর এক কারণ হয়তো দ্বৈত পরিচয়ের সূক্ষ্ম টানাপোড়েন। ভারতীয়-আমেরিকানরা, বিশেষ করে প্রভাবশালী ব্যক্তিরা, প্রায়ই হাঁটেন এক অদৃশ্য দড়ির ওপর। তাঁদের সাফল্য নির্ভর করছে একধরনের ভারসাম্যের ওপর—তাঁরা দীপাবলি উদ্যাপন করবেন, তবে খেয়াল রাখতে হয় যেন থ্যাঙ্কসগিভিং আড়ালে না পড়ে যায়। গান্ধীকে শ্রদ্ধা জানাবেন, তবে জেফারসনের ভাবমূর্তিকে আঘাত করবেন না। ভারতের পক্ষ নিয়ে জোরালোভাবে মুখ খোলা মানে যুক্তরাষ্ট্র সরকারকেই প্রকাশ্যে সমালোচনা করা। এতে প্রশ্ন উঠতে পারে—আপনার আনুগত্য আসলে কোথায়?
এই শঙ্কা অমূলক নয়। যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসীবিরোধী মনোভাব গত কয়েক বছরে ভয়াবহভাবে বেড়েছে। ট্রাম্প প্রথম মেয়াদে মুসলিম নিষেধাজ্ঞা থেকে শুরু করে সীমান্তে ‘আক্রমণের’ কথিত আশঙ্কা—সব মিলিয়ে পরিবেশ আরও বৈরী হয়েছে বিদেশি হিসেবে দেখা হয়, এমন সব গোষ্ঠীর জন্য। অর্থনৈতিক সাফল্য সত্ত্বেও ভারতীয়-আমেরিকানরা এর বাইরে নন। তাঁরা দৃশ্যমান সংখ্যালঘু। দক্ষিণ এশীয়দের ওপর ঘৃণামূলক হামলা বেড়েছে। গায়ের রংকে বিদেশি হিসেবে দেখার প্রবণতা এখনো আছে। এমন পরিস্থিতিতে নীরবতা তাঁদের কাছে আত্মরক্ষার উপায় বলেই মনে হচ্ছে।
আমেরিকায় বসবাসরত ভারতীয়দের আতঙ্কের একটি বাস্তব দিকও রয়েছে। মার্কিন ভারতীয় বন্ধুদের অনেকে বলেন, যারা এক প্রজন্ম আগে সেখানে গিয়ে স্থায়ী হয়েছেন, তাঁরা এখন মনে করেন এইচ-১বি ভিসা তাঁদের সন্তানদের সুযোগ কেড়ে নিচ্ছে। নতুন করে পড়াশোনা শেষ করা অনেক স্টেম (বিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয়) গ্র্যাজুয়েট—এমনকি কম্পিউটার সায়েন্সে ডিগ্রিধারীরাও—বেকার হয়ে বসে আছেন। তাঁদের অনেকেই ভারতীয়-আমেরিকান। প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো বেশি বেতনের মার্কিন কর্মীদের বাদ দিয়ে তুলনামূলক সুলভে পাওয়া এইচ-১বি ভিসাধারীদের কাজে লাগাতে চাচ্ছে। এ কারণে এসব পরিবারের কাছে নীরব থাকা মানে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নীতিকে নীরব সমর্থন দেওয়া।
এই নীরবতার পেছনে প্রজন্মগত পার্থক্যও আছে। যুক্তরাষ্ট্রে জন্ম নেওয়া দ্বিতীয় প্রজন্মের ভারতীয়-আমেরিকানদের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক অনেকটাই ঢিলা। তাঁদের পরিচয় এখন দ্বৈত, আনুগত্যও বহুমুখী। তাঁদের কাছে ভারত মূলত পূর্বপুরুষের স্মৃতির জায়গা, বাস্তব জীবনের অভিজ্ঞতা নয়। তাঁরা হোলি উদ্যাপন করেন, ক্রিকেটের স্কোর অনুসরণ করেন বটে, কিন্তু তাঁদের রাজনৈতিক সচেতনতা বেশি মার্কিন দেশীয় বিষয় নিয়ে—পুলিশি নির্যাতন, বন্দুক-সহিংসতা বা জলবায়ু পরিবর্তন। দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতি তাঁদের আলোচনার কেন্দ্র হয় না।
এটা কোনো দুর্বলতা নয়, বরং একধরনের পরিবর্তন। প্রবাসী পরিচয় এক জায়গায় থেমে থাকে না, সময়ের সঙ্গে বদলায়। তবে এর মানে দাঁড়ায়, যখন ভারত আঘাতের মুখে পড়ে, তখন তাঁদের প্রতিক্রিয়ার তাগিদও দুর্বল হয়। আবেগের টান কমে যায়, দায়িত্ববোধ হালকা হয়ে পড়ে। ইলন মাস্ক যেখানে প্রকাশ্যে ঘোষণা দিলেন, তিনি এইচ-১বি ব্যবস্থাকে রক্ষা করতে লড়াই করবেন, তারপরও ভারতীয়-আমেরিকান সিইওরা মুখ খোলেননি।
কিন্তু এই নীরবতারও মূল্য আছে। প্রবাসীরা যদি ভারতের বিরুদ্ধে নেতিবাচক নীতি প্রয়োগের সময় প্রতিরোধ না গড়ে তোলেন, তবে তাঁরা নিজেদের নৈতিক অবস্থান হারান। এতে ভারতের বিষয়ে বিশ্বে ভুল ধারণা ছড়িয়ে পড়তে থাকে যে, ভারত যেন এক ‘বাণিজ্য প্রতারক’, এক ‘কৌশলগত ঝামেলার দেশ’ এবং এক ‘অবিশ্বস্ত অংশীদার।’ একই সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত হয় সেই প্রবাসী গৌরবের গল্প, যা এত যত্নে তৈরি করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি প্রবাসীদের বলেছেন ‘রাষ্ট্রের দূত’, কিন্তু যদি সেই প্রতিনিধিত্ব বাস্তবে কোনো সমর্থনে না দাঁড়ায়, তবে তার মূল্য কোথায়?
তবুও নীরবতা একেবারে সর্বজনীন নয়। কিছু কণ্ঠস্বর শোনা গেছে—অ্যাকটিভিস্ট, শিক্ষাবিদ, কমিউনিটি নেতা আর কিছু রাজনীতিক, যেমন—নিকি হ্যালি ও রো খানা। কেউ ভিসা বিধিনিষেধের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন, কেউ আবার শুল্ক নীতির সমালোচনা করেছেন। তবে এগুলো বিচ্ছিন্ন উদ্যোগ, অন্য প্রবাসী গোষ্ঠীর মতো সংগঠিত শক্তি হয়ে ওঠেনি। যেমন ইহুদি-আমেরিকানরা নিয়মিতভাবে ইসরায়েলের পক্ষে শক্তিশালী লবিং করেন। কিউবান-আমেরিকানরা দশকের পর দশক ধরে হাভানার বিরুদ্ধে মার্কিন নীতি গড়ে তুলেছেন। এর তুলনায় ভারতীয়-আমেরিকান সমাজ এখনো খণ্ডিত—অঞ্চল, ধর্ম আর রাজনৈতিক মতভেদের কারণে তাঁরা বিভক্ত হয়ে আছেন।
প্রবাসে বসবাসকারী ভারতীয়দের মধ্যে ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে সরাসরি অবস্থান নেওয়ার ব্যাপারে একধরনের অনীহা রয়েছে। এর একটি বড় কারণ হলো—অনেক ভারতীয়-আমেরিকান সর্বশেষ নির্বাচনে ট্রাম্পকে সমর্থন করেছিলেন। ব্যবসাবান্ধব নীতি, চীনের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান এবং হিন্দুত্ববাদীদের প্রতি ট্রাম্পের আশীর্বাদসূচক মনোভাব তাঁদের আকৃষ্ট করেছিল।
‘হাউডি মোদি’ নামে যুক্তরাষ্ট্রের হিউস্টনে যে বিশাল সমাবেশ হয়েছিল, সেখানে ট্রাম্প ও মোদি এক মঞ্চে ছিলেন। এটি দুই নেতার ঘনিষ্ঠতার প্রতীক হয়ে উঠেছিল। অনেক প্রবাসী ভারতীয় এখনো ট্রাম্পকে ভারতের ‘বন্ধু’ ভাবেন। কিন্তু বন্ধুত্ব মানেই তো অন্ধ আনুগত্য নয়। বন্ধুত্বেরও পরীক্ষা থাকে।
যদি ট্রাম্পের শুল্কনীতি ভারতীয় রপ্তানিকারকদের ক্ষতি করে, যদি ভিসা ফি বাড়িয়ে দেওয়া ভারতীয় পেশাজীবীদের ওপর বোঝা চাপায়, যদি নিষেধাজ্ঞা ভারতের কৌশলগত স্বকীয়তাকে ব্যাহত করে—তাহলে চুপ করে থাকাটা আর বন্ধুত্ব নয়, বরং অপরাধে অংশগ্রহণের মতো। প্রবাসী সমাজকে বুঝতে হবে—প্রতীকী করমর্দনের চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো বাস্তব নীতিগত সিদ্ধান্ত। হিউস্টনে একটি করমর্দন দিল্লির ওপর জারি হওয়া নিষেধাজ্ঞা মুছে দেয় না।
এই প্রসঙ্গে আরও গভীর একটি প্রশ্ন উঠে আসে—প্রবাসী হওয়া মানে কী? এটা কি শুধু নস্টালজিয়া—বলিউড সিনেমা, বিরিয়ানি আর ভরতনাট্যম প্রেমের মধ্যেই সীমাবদ্ধ? নাকি এর মানে রাজনৈতিক দায়িত্বও রয়েছে? যখন দেশের ক্ষতি হয়, তখন প্রতিবাদ করা, ক্ষমতাধরদের সামনে সত্য বলা—এই দায়িত্ব কি তাঁদের নেওয়া উচিত নয়? প্রবাসী হয়ে কি শুধু দর্শক হয়ে থাকা যায়, নাকি সেতুবন্ধ গড়া উচিত?
ভারতীয়-আমেরিকান সমাজের হাতে রয়েছে প্রচুর অর্থ, প্রভাব ও মর্যাদা। তাঁরা চাইলে মার্কিন কংগ্রেসে লবিং করতে পারেন, মিডিয়াকে প্রভাবিত করতে পারেন, জনগণকে সংগঠিত করতে পারেন। কিন্তু তার আগে দরকার—নিজস্ব অবস্থান থেকে স্পষ্ট ও নীতিভিত্তিক বক্তব্য দেওয়া। এমন বক্তব্য নয়, যা শুধু দিল্লির সরকারকে অনুসরণ করে, বরং এমন শব্দ যার প্রভাব পড়ে ওয়াশিংটনে।
ভারতেরও উচিত তার প্রবাসীদের সঙ্গে আরও গভীর সম্পর্ক গড়ে তোলা। শুধু রেমিট্যান্স পাঠানো কিংবা সফট পাওয়ার হিসেবে তাঁদের তুলে ধরলেই হবে না, তাঁদের কৌশলগত অংশীদার হিসেবে বিবেচনা করতে হবে। তাঁদের বক্তব্য মনোযোগ দিয়ে শুনতে হবে, তাঁদের সীমাবদ্ধতাও বুঝতে হবে এবং তাঁদের সক্রিয়ভাবে কাজ করার সুযোগ করে দিতে হবে।
বর্তমানে আমরা ওয়াশিংটনে কোটি কোটি টাকা খরচ করি পেশাদার লবিস্টদের পেছনে। কিন্তু যারা ভারতীয় বংশোদ্ভূত, সেই ভারতীয়-আমেরিকান নাগরিকদের সংগঠিত করে ভারতের স্বার্থে কাজ করতে উদ্বুদ্ধ করার ক্ষেত্রে আমরা খুব কমই উদ্যোগ নিয়েছি।
প্রবাসী ভারতীয়দের নীরবতা মূলত একটি দ্বিধা থেকে আসে—তাঁদের সাফল্য ও সংহতি, আত্তীকরণ ও আনুগত্যের মাঝামাঝি টানাপোড়েন থেকেই এই নীরবতা জন্ম নেয়। আর ভারতের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে, এটা মনে রাখা জরুরি—কোনো প্রবাসী সমাজের কণ্ঠস্বর বিবেচিত হয়, তারা কতটা ধনী বা প্রভাবশালী, তা দিয়ে নয়, বরং দেশ মুশকিলে পড়লে তাদের প্রতিবাদী কণ্ঠ কতটা জোরালো হয়, সেটির ভিত্তিতেই।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস থেকে অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান

আমেরিকায় অভিবাসীদের সাফল্যের কাহিনির ভান্ডারে ভারতীয় বংশোদ্ভূত আমেরিকানদের গল্প আলাদা করে উজ্জ্বল হয়ে রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে সব জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে সবচেয়ে বেশি গড় পারিবারিক আয় তাঁদের। ফরচুন-৫০০ কোম্পানির শীর্ষ পদে রয়েছেন একাধিক ভারতীয় বংশোদ্ভূত সিইও। মার্কিন কংগ্রেসে আছেন ছয়জন সদস্য, আছেন দুই সাবেক গভর্নর। এমনকি, এফবিআই ও সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের মতো (সিডিসি) ফেডারেল সরকারের বিভিন্ন বিভাগের উচ্চপদেও রয়েছেন অনেকে। সব মিলিয়ে ভারতীয়-আমেরিকানদের প্রভাব, সাফল্য আর মূলধারার সঙ্গে ভারতের স্বার্থ সুরক্ষার ধারণা বারবার সামনে উঠে এসেছে।
কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন ভারতের বিরুদ্ধে একের পর এক কঠোর পদক্ষেপ নিলেও এ প্রভাবশালী প্রবাসী গোষ্ঠীর প্রতিক্রিয়া প্রায় নেই বললেই চলে। যুক্তরাষ্ট্র ভারতীয় পণ্যের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক বসিয়েছে। এইচ-১বি ভিসার জন্য আবেদন ফি ১ লাখ ডলার করেছে, যে ভিসার ৭০ শতাংশই পান ভারতীয়রা। ইরানের চাবাহার বন্দরে ভারতের কৌশলগত উন্নয়ন প্রকল্পে দিয়েছে নিষেধাজ্ঞা। শিক্ষার্থী ভিসা ও অভিবাসনের পথও করেছে কঠিন। এমনকি নানাভাবে ভারতকে অপমানও করা হয়েছে। অথচ এসব ঘটনায় প্রবাসী ভারতীয়দের প্রতিবাদ শোনা যায়নি।
এই নীরবতা বিস্ময়কর! ক্ষমতার কেন্দ্রে প্রবেশাধিকারের ক্ষেত্রে তাঁদের কোনো বাধা নেই। ভারতীয়-আমেরিকানরা সংবাদপত্রের সম্পাদকীয় বোর্ড, থিঙ্কট্যাংক, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতায় নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তাঁরা রাজনৈতিক প্রচারণায় অর্থ অনুদান দেন, সিনেটরদের পরামর্শ দেন, নীতিনির্ধারণে ভূমিকা রাখেন। অথচ যুক্তরাষ্ট্রে সফরকালে কংগ্রেস সদস্যদের এক বৈঠকে এক মার্কিন প্রতিনিধি ভারতীয় এমপিদের জানিয়েছিলেন—তাঁর অফিসে ভারতের বিরুদ্ধে প্রশাসনের পদক্ষেপ নিয়ে কোনো ফোনকলই আসেনি। অথচ ইসরায়েল ইস্যুতে তাঁর অফিসে অসংখ্য কল আসে নিয়মিত। তাহলে কেন ভারতের বিরুদ্ধে এমন শাস্তিমূলক পদক্ষেপের সময় প্রবাসীরা মুখ খোলেন না?
এর এক কারণ হয়তো দ্বৈত পরিচয়ের সূক্ষ্ম টানাপোড়েন। ভারতীয়-আমেরিকানরা, বিশেষ করে প্রভাবশালী ব্যক্তিরা, প্রায়ই হাঁটেন এক অদৃশ্য দড়ির ওপর। তাঁদের সাফল্য নির্ভর করছে একধরনের ভারসাম্যের ওপর—তাঁরা দীপাবলি উদ্যাপন করবেন, তবে খেয়াল রাখতে হয় যেন থ্যাঙ্কসগিভিং আড়ালে না পড়ে যায়। গান্ধীকে শ্রদ্ধা জানাবেন, তবে জেফারসনের ভাবমূর্তিকে আঘাত করবেন না। ভারতের পক্ষ নিয়ে জোরালোভাবে মুখ খোলা মানে যুক্তরাষ্ট্র সরকারকেই প্রকাশ্যে সমালোচনা করা। এতে প্রশ্ন উঠতে পারে—আপনার আনুগত্য আসলে কোথায়?
এই শঙ্কা অমূলক নয়। যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসীবিরোধী মনোভাব গত কয়েক বছরে ভয়াবহভাবে বেড়েছে। ট্রাম্প প্রথম মেয়াদে মুসলিম নিষেধাজ্ঞা থেকে শুরু করে সীমান্তে ‘আক্রমণের’ কথিত আশঙ্কা—সব মিলিয়ে পরিবেশ আরও বৈরী হয়েছে বিদেশি হিসেবে দেখা হয়, এমন সব গোষ্ঠীর জন্য। অর্থনৈতিক সাফল্য সত্ত্বেও ভারতীয়-আমেরিকানরা এর বাইরে নন। তাঁরা দৃশ্যমান সংখ্যালঘু। দক্ষিণ এশীয়দের ওপর ঘৃণামূলক হামলা বেড়েছে। গায়ের রংকে বিদেশি হিসেবে দেখার প্রবণতা এখনো আছে। এমন পরিস্থিতিতে নীরবতা তাঁদের কাছে আত্মরক্ষার উপায় বলেই মনে হচ্ছে।
আমেরিকায় বসবাসরত ভারতীয়দের আতঙ্কের একটি বাস্তব দিকও রয়েছে। মার্কিন ভারতীয় বন্ধুদের অনেকে বলেন, যারা এক প্রজন্ম আগে সেখানে গিয়ে স্থায়ী হয়েছেন, তাঁরা এখন মনে করেন এইচ-১বি ভিসা তাঁদের সন্তানদের সুযোগ কেড়ে নিচ্ছে। নতুন করে পড়াশোনা শেষ করা অনেক স্টেম (বিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয়) গ্র্যাজুয়েট—এমনকি কম্পিউটার সায়েন্সে ডিগ্রিধারীরাও—বেকার হয়ে বসে আছেন। তাঁদের অনেকেই ভারতীয়-আমেরিকান। প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো বেশি বেতনের মার্কিন কর্মীদের বাদ দিয়ে তুলনামূলক সুলভে পাওয়া এইচ-১বি ভিসাধারীদের কাজে লাগাতে চাচ্ছে। এ কারণে এসব পরিবারের কাছে নীরব থাকা মানে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নীতিকে নীরব সমর্থন দেওয়া।
এই নীরবতার পেছনে প্রজন্মগত পার্থক্যও আছে। যুক্তরাষ্ট্রে জন্ম নেওয়া দ্বিতীয় প্রজন্মের ভারতীয়-আমেরিকানদের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক অনেকটাই ঢিলা। তাঁদের পরিচয় এখন দ্বৈত, আনুগত্যও বহুমুখী। তাঁদের কাছে ভারত মূলত পূর্বপুরুষের স্মৃতির জায়গা, বাস্তব জীবনের অভিজ্ঞতা নয়। তাঁরা হোলি উদ্যাপন করেন, ক্রিকেটের স্কোর অনুসরণ করেন বটে, কিন্তু তাঁদের রাজনৈতিক সচেতনতা বেশি মার্কিন দেশীয় বিষয় নিয়ে—পুলিশি নির্যাতন, বন্দুক-সহিংসতা বা জলবায়ু পরিবর্তন। দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতি তাঁদের আলোচনার কেন্দ্র হয় না।
এটা কোনো দুর্বলতা নয়, বরং একধরনের পরিবর্তন। প্রবাসী পরিচয় এক জায়গায় থেমে থাকে না, সময়ের সঙ্গে বদলায়। তবে এর মানে দাঁড়ায়, যখন ভারত আঘাতের মুখে পড়ে, তখন তাঁদের প্রতিক্রিয়ার তাগিদও দুর্বল হয়। আবেগের টান কমে যায়, দায়িত্ববোধ হালকা হয়ে পড়ে। ইলন মাস্ক যেখানে প্রকাশ্যে ঘোষণা দিলেন, তিনি এইচ-১বি ব্যবস্থাকে রক্ষা করতে লড়াই করবেন, তারপরও ভারতীয়-আমেরিকান সিইওরা মুখ খোলেননি।
কিন্তু এই নীরবতারও মূল্য আছে। প্রবাসীরা যদি ভারতের বিরুদ্ধে নেতিবাচক নীতি প্রয়োগের সময় প্রতিরোধ না গড়ে তোলেন, তবে তাঁরা নিজেদের নৈতিক অবস্থান হারান। এতে ভারতের বিষয়ে বিশ্বে ভুল ধারণা ছড়িয়ে পড়তে থাকে যে, ভারত যেন এক ‘বাণিজ্য প্রতারক’, এক ‘কৌশলগত ঝামেলার দেশ’ এবং এক ‘অবিশ্বস্ত অংশীদার।’ একই সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত হয় সেই প্রবাসী গৌরবের গল্প, যা এত যত্নে তৈরি করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি প্রবাসীদের বলেছেন ‘রাষ্ট্রের দূত’, কিন্তু যদি সেই প্রতিনিধিত্ব বাস্তবে কোনো সমর্থনে না দাঁড়ায়, তবে তার মূল্য কোথায়?
তবুও নীরবতা একেবারে সর্বজনীন নয়। কিছু কণ্ঠস্বর শোনা গেছে—অ্যাকটিভিস্ট, শিক্ষাবিদ, কমিউনিটি নেতা আর কিছু রাজনীতিক, যেমন—নিকি হ্যালি ও রো খানা। কেউ ভিসা বিধিনিষেধের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন, কেউ আবার শুল্ক নীতির সমালোচনা করেছেন। তবে এগুলো বিচ্ছিন্ন উদ্যোগ, অন্য প্রবাসী গোষ্ঠীর মতো সংগঠিত শক্তি হয়ে ওঠেনি। যেমন ইহুদি-আমেরিকানরা নিয়মিতভাবে ইসরায়েলের পক্ষে শক্তিশালী লবিং করেন। কিউবান-আমেরিকানরা দশকের পর দশক ধরে হাভানার বিরুদ্ধে মার্কিন নীতি গড়ে তুলেছেন। এর তুলনায় ভারতীয়-আমেরিকান সমাজ এখনো খণ্ডিত—অঞ্চল, ধর্ম আর রাজনৈতিক মতভেদের কারণে তাঁরা বিভক্ত হয়ে আছেন।
প্রবাসে বসবাসকারী ভারতীয়দের মধ্যে ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে সরাসরি অবস্থান নেওয়ার ব্যাপারে একধরনের অনীহা রয়েছে। এর একটি বড় কারণ হলো—অনেক ভারতীয়-আমেরিকান সর্বশেষ নির্বাচনে ট্রাম্পকে সমর্থন করেছিলেন। ব্যবসাবান্ধব নীতি, চীনের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান এবং হিন্দুত্ববাদীদের প্রতি ট্রাম্পের আশীর্বাদসূচক মনোভাব তাঁদের আকৃষ্ট করেছিল।
‘হাউডি মোদি’ নামে যুক্তরাষ্ট্রের হিউস্টনে যে বিশাল সমাবেশ হয়েছিল, সেখানে ট্রাম্প ও মোদি এক মঞ্চে ছিলেন। এটি দুই নেতার ঘনিষ্ঠতার প্রতীক হয়ে উঠেছিল। অনেক প্রবাসী ভারতীয় এখনো ট্রাম্পকে ভারতের ‘বন্ধু’ ভাবেন। কিন্তু বন্ধুত্ব মানেই তো অন্ধ আনুগত্য নয়। বন্ধুত্বেরও পরীক্ষা থাকে।
যদি ট্রাম্পের শুল্কনীতি ভারতীয় রপ্তানিকারকদের ক্ষতি করে, যদি ভিসা ফি বাড়িয়ে দেওয়া ভারতীয় পেশাজীবীদের ওপর বোঝা চাপায়, যদি নিষেধাজ্ঞা ভারতের কৌশলগত স্বকীয়তাকে ব্যাহত করে—তাহলে চুপ করে থাকাটা আর বন্ধুত্ব নয়, বরং অপরাধে অংশগ্রহণের মতো। প্রবাসী সমাজকে বুঝতে হবে—প্রতীকী করমর্দনের চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো বাস্তব নীতিগত সিদ্ধান্ত। হিউস্টনে একটি করমর্দন দিল্লির ওপর জারি হওয়া নিষেধাজ্ঞা মুছে দেয় না।
এই প্রসঙ্গে আরও গভীর একটি প্রশ্ন উঠে আসে—প্রবাসী হওয়া মানে কী? এটা কি শুধু নস্টালজিয়া—বলিউড সিনেমা, বিরিয়ানি আর ভরতনাট্যম প্রেমের মধ্যেই সীমাবদ্ধ? নাকি এর মানে রাজনৈতিক দায়িত্বও রয়েছে? যখন দেশের ক্ষতি হয়, তখন প্রতিবাদ করা, ক্ষমতাধরদের সামনে সত্য বলা—এই দায়িত্ব কি তাঁদের নেওয়া উচিত নয়? প্রবাসী হয়ে কি শুধু দর্শক হয়ে থাকা যায়, নাকি সেতুবন্ধ গড়া উচিত?
ভারতীয়-আমেরিকান সমাজের হাতে রয়েছে প্রচুর অর্থ, প্রভাব ও মর্যাদা। তাঁরা চাইলে মার্কিন কংগ্রেসে লবিং করতে পারেন, মিডিয়াকে প্রভাবিত করতে পারেন, জনগণকে সংগঠিত করতে পারেন। কিন্তু তার আগে দরকার—নিজস্ব অবস্থান থেকে স্পষ্ট ও নীতিভিত্তিক বক্তব্য দেওয়া। এমন বক্তব্য নয়, যা শুধু দিল্লির সরকারকে অনুসরণ করে, বরং এমন শব্দ যার প্রভাব পড়ে ওয়াশিংটনে।
ভারতেরও উচিত তার প্রবাসীদের সঙ্গে আরও গভীর সম্পর্ক গড়ে তোলা। শুধু রেমিট্যান্স পাঠানো কিংবা সফট পাওয়ার হিসেবে তাঁদের তুলে ধরলেই হবে না, তাঁদের কৌশলগত অংশীদার হিসেবে বিবেচনা করতে হবে। তাঁদের বক্তব্য মনোযোগ দিয়ে শুনতে হবে, তাঁদের সীমাবদ্ধতাও বুঝতে হবে এবং তাঁদের সক্রিয়ভাবে কাজ করার সুযোগ করে দিতে হবে।
বর্তমানে আমরা ওয়াশিংটনে কোটি কোটি টাকা খরচ করি পেশাদার লবিস্টদের পেছনে। কিন্তু যারা ভারতীয় বংশোদ্ভূত, সেই ভারতীয়-আমেরিকান নাগরিকদের সংগঠিত করে ভারতের স্বার্থে কাজ করতে উদ্বুদ্ধ করার ক্ষেত্রে আমরা খুব কমই উদ্যোগ নিয়েছি।
প্রবাসী ভারতীয়দের নীরবতা মূলত একটি দ্বিধা থেকে আসে—তাঁদের সাফল্য ও সংহতি, আত্তীকরণ ও আনুগত্যের মাঝামাঝি টানাপোড়েন থেকেই এই নীরবতা জন্ম নেয়। আর ভারতের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে, এটা মনে রাখা জরুরি—কোনো প্রবাসী সমাজের কণ্ঠস্বর বিবেচিত হয়, তারা কতটা ধনী বা প্রভাবশালী, তা দিয়ে নয়, বরং দেশ মুশকিলে পড়লে তাদের প্রতিবাদী কণ্ঠ কতটা জোরালো হয়, সেটির ভিত্তিতেই।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস থেকে অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান
আজকের পত্রিকা ডেস্ক

আমেরিকায় অভিবাসীদের সাফল্যের কাহিনির ভান্ডারে ভারতীয় বংশোদ্ভূত আমেরিকানদের গল্প আলাদা করে উজ্জ্বল হয়ে রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে সব জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে সবচেয়ে বেশি গড় পারিবারিক আয় তাঁদের। ফরচুন-৫০০ কোম্পানির শীর্ষ পদে রয়েছেন একাধিক ভারতীয় বংশোদ্ভূত সিইও। মার্কিন কংগ্রেসে আছেন ছয়জন সদস্য, আছেন দুই সাবেক গভর্নর। এমনকি, এফবিআই ও সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের মতো (সিডিসি) ফেডারেল সরকারের বিভিন্ন বিভাগের উচ্চপদেও রয়েছেন অনেকে। সব মিলিয়ে ভারতীয়-আমেরিকানদের প্রভাব, সাফল্য আর মূলধারার সঙ্গে ভারতের স্বার্থ সুরক্ষার ধারণা বারবার সামনে উঠে এসেছে।
কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন ভারতের বিরুদ্ধে একের পর এক কঠোর পদক্ষেপ নিলেও এ প্রভাবশালী প্রবাসী গোষ্ঠীর প্রতিক্রিয়া প্রায় নেই বললেই চলে। যুক্তরাষ্ট্র ভারতীয় পণ্যের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক বসিয়েছে। এইচ-১বি ভিসার জন্য আবেদন ফি ১ লাখ ডলার করেছে, যে ভিসার ৭০ শতাংশই পান ভারতীয়রা। ইরানের চাবাহার বন্দরে ভারতের কৌশলগত উন্নয়ন প্রকল্পে দিয়েছে নিষেধাজ্ঞা। শিক্ষার্থী ভিসা ও অভিবাসনের পথও করেছে কঠিন। এমনকি নানাভাবে ভারতকে অপমানও করা হয়েছে। অথচ এসব ঘটনায় প্রবাসী ভারতীয়দের প্রতিবাদ শোনা যায়নি।
এই নীরবতা বিস্ময়কর! ক্ষমতার কেন্দ্রে প্রবেশাধিকারের ক্ষেত্রে তাঁদের কোনো বাধা নেই। ভারতীয়-আমেরিকানরা সংবাদপত্রের সম্পাদকীয় বোর্ড, থিঙ্কট্যাংক, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতায় নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তাঁরা রাজনৈতিক প্রচারণায় অর্থ অনুদান দেন, সিনেটরদের পরামর্শ দেন, নীতিনির্ধারণে ভূমিকা রাখেন। অথচ যুক্তরাষ্ট্রে সফরকালে কংগ্রেস সদস্যদের এক বৈঠকে এক মার্কিন প্রতিনিধি ভারতীয় এমপিদের জানিয়েছিলেন—তাঁর অফিসে ভারতের বিরুদ্ধে প্রশাসনের পদক্ষেপ নিয়ে কোনো ফোনকলই আসেনি। অথচ ইসরায়েল ইস্যুতে তাঁর অফিসে অসংখ্য কল আসে নিয়মিত। তাহলে কেন ভারতের বিরুদ্ধে এমন শাস্তিমূলক পদক্ষেপের সময় প্রবাসীরা মুখ খোলেন না?
এর এক কারণ হয়তো দ্বৈত পরিচয়ের সূক্ষ্ম টানাপোড়েন। ভারতীয়-আমেরিকানরা, বিশেষ করে প্রভাবশালী ব্যক্তিরা, প্রায়ই হাঁটেন এক অদৃশ্য দড়ির ওপর। তাঁদের সাফল্য নির্ভর করছে একধরনের ভারসাম্যের ওপর—তাঁরা দীপাবলি উদ্যাপন করবেন, তবে খেয়াল রাখতে হয় যেন থ্যাঙ্কসগিভিং আড়ালে না পড়ে যায়। গান্ধীকে শ্রদ্ধা জানাবেন, তবে জেফারসনের ভাবমূর্তিকে আঘাত করবেন না। ভারতের পক্ষ নিয়ে জোরালোভাবে মুখ খোলা মানে যুক্তরাষ্ট্র সরকারকেই প্রকাশ্যে সমালোচনা করা। এতে প্রশ্ন উঠতে পারে—আপনার আনুগত্য আসলে কোথায়?
এই শঙ্কা অমূলক নয়। যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসীবিরোধী মনোভাব গত কয়েক বছরে ভয়াবহভাবে বেড়েছে। ট্রাম্প প্রথম মেয়াদে মুসলিম নিষেধাজ্ঞা থেকে শুরু করে সীমান্তে ‘আক্রমণের’ কথিত আশঙ্কা—সব মিলিয়ে পরিবেশ আরও বৈরী হয়েছে বিদেশি হিসেবে দেখা হয়, এমন সব গোষ্ঠীর জন্য। অর্থনৈতিক সাফল্য সত্ত্বেও ভারতীয়-আমেরিকানরা এর বাইরে নন। তাঁরা দৃশ্যমান সংখ্যালঘু। দক্ষিণ এশীয়দের ওপর ঘৃণামূলক হামলা বেড়েছে। গায়ের রংকে বিদেশি হিসেবে দেখার প্রবণতা এখনো আছে। এমন পরিস্থিতিতে নীরবতা তাঁদের কাছে আত্মরক্ষার উপায় বলেই মনে হচ্ছে।
আমেরিকায় বসবাসরত ভারতীয়দের আতঙ্কের একটি বাস্তব দিকও রয়েছে। মার্কিন ভারতীয় বন্ধুদের অনেকে বলেন, যারা এক প্রজন্ম আগে সেখানে গিয়ে স্থায়ী হয়েছেন, তাঁরা এখন মনে করেন এইচ-১বি ভিসা তাঁদের সন্তানদের সুযোগ কেড়ে নিচ্ছে। নতুন করে পড়াশোনা শেষ করা অনেক স্টেম (বিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয়) গ্র্যাজুয়েট—এমনকি কম্পিউটার সায়েন্সে ডিগ্রিধারীরাও—বেকার হয়ে বসে আছেন। তাঁদের অনেকেই ভারতীয়-আমেরিকান। প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো বেশি বেতনের মার্কিন কর্মীদের বাদ দিয়ে তুলনামূলক সুলভে পাওয়া এইচ-১বি ভিসাধারীদের কাজে লাগাতে চাচ্ছে। এ কারণে এসব পরিবারের কাছে নীরব থাকা মানে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নীতিকে নীরব সমর্থন দেওয়া।
এই নীরবতার পেছনে প্রজন্মগত পার্থক্যও আছে। যুক্তরাষ্ট্রে জন্ম নেওয়া দ্বিতীয় প্রজন্মের ভারতীয়-আমেরিকানদের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক অনেকটাই ঢিলা। তাঁদের পরিচয় এখন দ্বৈত, আনুগত্যও বহুমুখী। তাঁদের কাছে ভারত মূলত পূর্বপুরুষের স্মৃতির জায়গা, বাস্তব জীবনের অভিজ্ঞতা নয়। তাঁরা হোলি উদ্যাপন করেন, ক্রিকেটের স্কোর অনুসরণ করেন বটে, কিন্তু তাঁদের রাজনৈতিক সচেতনতা বেশি মার্কিন দেশীয় বিষয় নিয়ে—পুলিশি নির্যাতন, বন্দুক-সহিংসতা বা জলবায়ু পরিবর্তন। দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতি তাঁদের আলোচনার কেন্দ্র হয় না।
এটা কোনো দুর্বলতা নয়, বরং একধরনের পরিবর্তন। প্রবাসী পরিচয় এক জায়গায় থেমে থাকে না, সময়ের সঙ্গে বদলায়। তবে এর মানে দাঁড়ায়, যখন ভারত আঘাতের মুখে পড়ে, তখন তাঁদের প্রতিক্রিয়ার তাগিদও দুর্বল হয়। আবেগের টান কমে যায়, দায়িত্ববোধ হালকা হয়ে পড়ে। ইলন মাস্ক যেখানে প্রকাশ্যে ঘোষণা দিলেন, তিনি এইচ-১বি ব্যবস্থাকে রক্ষা করতে লড়াই করবেন, তারপরও ভারতীয়-আমেরিকান সিইওরা মুখ খোলেননি।
কিন্তু এই নীরবতারও মূল্য আছে। প্রবাসীরা যদি ভারতের বিরুদ্ধে নেতিবাচক নীতি প্রয়োগের সময় প্রতিরোধ না গড়ে তোলেন, তবে তাঁরা নিজেদের নৈতিক অবস্থান হারান। এতে ভারতের বিষয়ে বিশ্বে ভুল ধারণা ছড়িয়ে পড়তে থাকে যে, ভারত যেন এক ‘বাণিজ্য প্রতারক’, এক ‘কৌশলগত ঝামেলার দেশ’ এবং এক ‘অবিশ্বস্ত অংশীদার।’ একই সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত হয় সেই প্রবাসী গৌরবের গল্প, যা এত যত্নে তৈরি করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি প্রবাসীদের বলেছেন ‘রাষ্ট্রের দূত’, কিন্তু যদি সেই প্রতিনিধিত্ব বাস্তবে কোনো সমর্থনে না দাঁড়ায়, তবে তার মূল্য কোথায়?
তবুও নীরবতা একেবারে সর্বজনীন নয়। কিছু কণ্ঠস্বর শোনা গেছে—অ্যাকটিভিস্ট, শিক্ষাবিদ, কমিউনিটি নেতা আর কিছু রাজনীতিক, যেমন—নিকি হ্যালি ও রো খানা। কেউ ভিসা বিধিনিষেধের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন, কেউ আবার শুল্ক নীতির সমালোচনা করেছেন। তবে এগুলো বিচ্ছিন্ন উদ্যোগ, অন্য প্রবাসী গোষ্ঠীর মতো সংগঠিত শক্তি হয়ে ওঠেনি। যেমন ইহুদি-আমেরিকানরা নিয়মিতভাবে ইসরায়েলের পক্ষে শক্তিশালী লবিং করেন। কিউবান-আমেরিকানরা দশকের পর দশক ধরে হাভানার বিরুদ্ধে মার্কিন নীতি গড়ে তুলেছেন। এর তুলনায় ভারতীয়-আমেরিকান সমাজ এখনো খণ্ডিত—অঞ্চল, ধর্ম আর রাজনৈতিক মতভেদের কারণে তাঁরা বিভক্ত হয়ে আছেন।
প্রবাসে বসবাসকারী ভারতীয়দের মধ্যে ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে সরাসরি অবস্থান নেওয়ার ব্যাপারে একধরনের অনীহা রয়েছে। এর একটি বড় কারণ হলো—অনেক ভারতীয়-আমেরিকান সর্বশেষ নির্বাচনে ট্রাম্পকে সমর্থন করেছিলেন। ব্যবসাবান্ধব নীতি, চীনের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান এবং হিন্দুত্ববাদীদের প্রতি ট্রাম্পের আশীর্বাদসূচক মনোভাব তাঁদের আকৃষ্ট করেছিল।
‘হাউডি মোদি’ নামে যুক্তরাষ্ট্রের হিউস্টনে যে বিশাল সমাবেশ হয়েছিল, সেখানে ট্রাম্প ও মোদি এক মঞ্চে ছিলেন। এটি দুই নেতার ঘনিষ্ঠতার প্রতীক হয়ে উঠেছিল। অনেক প্রবাসী ভারতীয় এখনো ট্রাম্পকে ভারতের ‘বন্ধু’ ভাবেন। কিন্তু বন্ধুত্ব মানেই তো অন্ধ আনুগত্য নয়। বন্ধুত্বেরও পরীক্ষা থাকে।
যদি ট্রাম্পের শুল্কনীতি ভারতীয় রপ্তানিকারকদের ক্ষতি করে, যদি ভিসা ফি বাড়িয়ে দেওয়া ভারতীয় পেশাজীবীদের ওপর বোঝা চাপায়, যদি নিষেধাজ্ঞা ভারতের কৌশলগত স্বকীয়তাকে ব্যাহত করে—তাহলে চুপ করে থাকাটা আর বন্ধুত্ব নয়, বরং অপরাধে অংশগ্রহণের মতো। প্রবাসী সমাজকে বুঝতে হবে—প্রতীকী করমর্দনের চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো বাস্তব নীতিগত সিদ্ধান্ত। হিউস্টনে একটি করমর্দন দিল্লির ওপর জারি হওয়া নিষেধাজ্ঞা মুছে দেয় না।
এই প্রসঙ্গে আরও গভীর একটি প্রশ্ন উঠে আসে—প্রবাসী হওয়া মানে কী? এটা কি শুধু নস্টালজিয়া—বলিউড সিনেমা, বিরিয়ানি আর ভরতনাট্যম প্রেমের মধ্যেই সীমাবদ্ধ? নাকি এর মানে রাজনৈতিক দায়িত্বও রয়েছে? যখন দেশের ক্ষতি হয়, তখন প্রতিবাদ করা, ক্ষমতাধরদের সামনে সত্য বলা—এই দায়িত্ব কি তাঁদের নেওয়া উচিত নয়? প্রবাসী হয়ে কি শুধু দর্শক হয়ে থাকা যায়, নাকি সেতুবন্ধ গড়া উচিত?
ভারতীয়-আমেরিকান সমাজের হাতে রয়েছে প্রচুর অর্থ, প্রভাব ও মর্যাদা। তাঁরা চাইলে মার্কিন কংগ্রেসে লবিং করতে পারেন, মিডিয়াকে প্রভাবিত করতে পারেন, জনগণকে সংগঠিত করতে পারেন। কিন্তু তার আগে দরকার—নিজস্ব অবস্থান থেকে স্পষ্ট ও নীতিভিত্তিক বক্তব্য দেওয়া। এমন বক্তব্য নয়, যা শুধু দিল্লির সরকারকে অনুসরণ করে, বরং এমন শব্দ যার প্রভাব পড়ে ওয়াশিংটনে।
ভারতেরও উচিত তার প্রবাসীদের সঙ্গে আরও গভীর সম্পর্ক গড়ে তোলা। শুধু রেমিট্যান্স পাঠানো কিংবা সফট পাওয়ার হিসেবে তাঁদের তুলে ধরলেই হবে না, তাঁদের কৌশলগত অংশীদার হিসেবে বিবেচনা করতে হবে। তাঁদের বক্তব্য মনোযোগ দিয়ে শুনতে হবে, তাঁদের সীমাবদ্ধতাও বুঝতে হবে এবং তাঁদের সক্রিয়ভাবে কাজ করার সুযোগ করে দিতে হবে।
বর্তমানে আমরা ওয়াশিংটনে কোটি কোটি টাকা খরচ করি পেশাদার লবিস্টদের পেছনে। কিন্তু যারা ভারতীয় বংশোদ্ভূত, সেই ভারতীয়-আমেরিকান নাগরিকদের সংগঠিত করে ভারতের স্বার্থে কাজ করতে উদ্বুদ্ধ করার ক্ষেত্রে আমরা খুব কমই উদ্যোগ নিয়েছি।
প্রবাসী ভারতীয়দের নীরবতা মূলত একটি দ্বিধা থেকে আসে—তাঁদের সাফল্য ও সংহতি, আত্তীকরণ ও আনুগত্যের মাঝামাঝি টানাপোড়েন থেকেই এই নীরবতা জন্ম নেয়। আর ভারতের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে, এটা মনে রাখা জরুরি—কোনো প্রবাসী সমাজের কণ্ঠস্বর বিবেচিত হয়, তারা কতটা ধনী বা প্রভাবশালী, তা দিয়ে নয়, বরং দেশ মুশকিলে পড়লে তাদের প্রতিবাদী কণ্ঠ কতটা জোরালো হয়, সেটির ভিত্তিতেই।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস থেকে অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান

আমেরিকায় অভিবাসীদের সাফল্যের কাহিনির ভান্ডারে ভারতীয় বংশোদ্ভূত আমেরিকানদের গল্প আলাদা করে উজ্জ্বল হয়ে রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে সব জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে সবচেয়ে বেশি গড় পারিবারিক আয় তাঁদের। ফরচুন-৫০০ কোম্পানির শীর্ষ পদে রয়েছেন একাধিক ভারতীয় বংশোদ্ভূত সিইও। মার্কিন কংগ্রেসে আছেন ছয়জন সদস্য, আছেন দুই সাবেক গভর্নর। এমনকি, এফবিআই ও সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের মতো (সিডিসি) ফেডারেল সরকারের বিভিন্ন বিভাগের উচ্চপদেও রয়েছেন অনেকে। সব মিলিয়ে ভারতীয়-আমেরিকানদের প্রভাব, সাফল্য আর মূলধারার সঙ্গে ভারতের স্বার্থ সুরক্ষার ধারণা বারবার সামনে উঠে এসেছে।
কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন ভারতের বিরুদ্ধে একের পর এক কঠোর পদক্ষেপ নিলেও এ প্রভাবশালী প্রবাসী গোষ্ঠীর প্রতিক্রিয়া প্রায় নেই বললেই চলে। যুক্তরাষ্ট্র ভারতীয় পণ্যের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক বসিয়েছে। এইচ-১বি ভিসার জন্য আবেদন ফি ১ লাখ ডলার করেছে, যে ভিসার ৭০ শতাংশই পান ভারতীয়রা। ইরানের চাবাহার বন্দরে ভারতের কৌশলগত উন্নয়ন প্রকল্পে দিয়েছে নিষেধাজ্ঞা। শিক্ষার্থী ভিসা ও অভিবাসনের পথও করেছে কঠিন। এমনকি নানাভাবে ভারতকে অপমানও করা হয়েছে। অথচ এসব ঘটনায় প্রবাসী ভারতীয়দের প্রতিবাদ শোনা যায়নি।
এই নীরবতা বিস্ময়কর! ক্ষমতার কেন্দ্রে প্রবেশাধিকারের ক্ষেত্রে তাঁদের কোনো বাধা নেই। ভারতীয়-আমেরিকানরা সংবাদপত্রের সম্পাদকীয় বোর্ড, থিঙ্কট্যাংক, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতায় নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তাঁরা রাজনৈতিক প্রচারণায় অর্থ অনুদান দেন, সিনেটরদের পরামর্শ দেন, নীতিনির্ধারণে ভূমিকা রাখেন। অথচ যুক্তরাষ্ট্রে সফরকালে কংগ্রেস সদস্যদের এক বৈঠকে এক মার্কিন প্রতিনিধি ভারতীয় এমপিদের জানিয়েছিলেন—তাঁর অফিসে ভারতের বিরুদ্ধে প্রশাসনের পদক্ষেপ নিয়ে কোনো ফোনকলই আসেনি। অথচ ইসরায়েল ইস্যুতে তাঁর অফিসে অসংখ্য কল আসে নিয়মিত। তাহলে কেন ভারতের বিরুদ্ধে এমন শাস্তিমূলক পদক্ষেপের সময় প্রবাসীরা মুখ খোলেন না?
এর এক কারণ হয়তো দ্বৈত পরিচয়ের সূক্ষ্ম টানাপোড়েন। ভারতীয়-আমেরিকানরা, বিশেষ করে প্রভাবশালী ব্যক্তিরা, প্রায়ই হাঁটেন এক অদৃশ্য দড়ির ওপর। তাঁদের সাফল্য নির্ভর করছে একধরনের ভারসাম্যের ওপর—তাঁরা দীপাবলি উদ্যাপন করবেন, তবে খেয়াল রাখতে হয় যেন থ্যাঙ্কসগিভিং আড়ালে না পড়ে যায়। গান্ধীকে শ্রদ্ধা জানাবেন, তবে জেফারসনের ভাবমূর্তিকে আঘাত করবেন না। ভারতের পক্ষ নিয়ে জোরালোভাবে মুখ খোলা মানে যুক্তরাষ্ট্র সরকারকেই প্রকাশ্যে সমালোচনা করা। এতে প্রশ্ন উঠতে পারে—আপনার আনুগত্য আসলে কোথায়?
এই শঙ্কা অমূলক নয়। যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসীবিরোধী মনোভাব গত কয়েক বছরে ভয়াবহভাবে বেড়েছে। ট্রাম্প প্রথম মেয়াদে মুসলিম নিষেধাজ্ঞা থেকে শুরু করে সীমান্তে ‘আক্রমণের’ কথিত আশঙ্কা—সব মিলিয়ে পরিবেশ আরও বৈরী হয়েছে বিদেশি হিসেবে দেখা হয়, এমন সব গোষ্ঠীর জন্য। অর্থনৈতিক সাফল্য সত্ত্বেও ভারতীয়-আমেরিকানরা এর বাইরে নন। তাঁরা দৃশ্যমান সংখ্যালঘু। দক্ষিণ এশীয়দের ওপর ঘৃণামূলক হামলা বেড়েছে। গায়ের রংকে বিদেশি হিসেবে দেখার প্রবণতা এখনো আছে। এমন পরিস্থিতিতে নীরবতা তাঁদের কাছে আত্মরক্ষার উপায় বলেই মনে হচ্ছে।
আমেরিকায় বসবাসরত ভারতীয়দের আতঙ্কের একটি বাস্তব দিকও রয়েছে। মার্কিন ভারতীয় বন্ধুদের অনেকে বলেন, যারা এক প্রজন্ম আগে সেখানে গিয়ে স্থায়ী হয়েছেন, তাঁরা এখন মনে করেন এইচ-১বি ভিসা তাঁদের সন্তানদের সুযোগ কেড়ে নিচ্ছে। নতুন করে পড়াশোনা শেষ করা অনেক স্টেম (বিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয়) গ্র্যাজুয়েট—এমনকি কম্পিউটার সায়েন্সে ডিগ্রিধারীরাও—বেকার হয়ে বসে আছেন। তাঁদের অনেকেই ভারতীয়-আমেরিকান। প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো বেশি বেতনের মার্কিন কর্মীদের বাদ দিয়ে তুলনামূলক সুলভে পাওয়া এইচ-১বি ভিসাধারীদের কাজে লাগাতে চাচ্ছে। এ কারণে এসব পরিবারের কাছে নীরব থাকা মানে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নীতিকে নীরব সমর্থন দেওয়া।
এই নীরবতার পেছনে প্রজন্মগত পার্থক্যও আছে। যুক্তরাষ্ট্রে জন্ম নেওয়া দ্বিতীয় প্রজন্মের ভারতীয়-আমেরিকানদের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক অনেকটাই ঢিলা। তাঁদের পরিচয় এখন দ্বৈত, আনুগত্যও বহুমুখী। তাঁদের কাছে ভারত মূলত পূর্বপুরুষের স্মৃতির জায়গা, বাস্তব জীবনের অভিজ্ঞতা নয়। তাঁরা হোলি উদ্যাপন করেন, ক্রিকেটের স্কোর অনুসরণ করেন বটে, কিন্তু তাঁদের রাজনৈতিক সচেতনতা বেশি মার্কিন দেশীয় বিষয় নিয়ে—পুলিশি নির্যাতন, বন্দুক-সহিংসতা বা জলবায়ু পরিবর্তন। দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতি তাঁদের আলোচনার কেন্দ্র হয় না।
এটা কোনো দুর্বলতা নয়, বরং একধরনের পরিবর্তন। প্রবাসী পরিচয় এক জায়গায় থেমে থাকে না, সময়ের সঙ্গে বদলায়। তবে এর মানে দাঁড়ায়, যখন ভারত আঘাতের মুখে পড়ে, তখন তাঁদের প্রতিক্রিয়ার তাগিদও দুর্বল হয়। আবেগের টান কমে যায়, দায়িত্ববোধ হালকা হয়ে পড়ে। ইলন মাস্ক যেখানে প্রকাশ্যে ঘোষণা দিলেন, তিনি এইচ-১বি ব্যবস্থাকে রক্ষা করতে লড়াই করবেন, তারপরও ভারতীয়-আমেরিকান সিইওরা মুখ খোলেননি।
কিন্তু এই নীরবতারও মূল্য আছে। প্রবাসীরা যদি ভারতের বিরুদ্ধে নেতিবাচক নীতি প্রয়োগের সময় প্রতিরোধ না গড়ে তোলেন, তবে তাঁরা নিজেদের নৈতিক অবস্থান হারান। এতে ভারতের বিষয়ে বিশ্বে ভুল ধারণা ছড়িয়ে পড়তে থাকে যে, ভারত যেন এক ‘বাণিজ্য প্রতারক’, এক ‘কৌশলগত ঝামেলার দেশ’ এবং এক ‘অবিশ্বস্ত অংশীদার।’ একই সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত হয় সেই প্রবাসী গৌরবের গল্প, যা এত যত্নে তৈরি করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি প্রবাসীদের বলেছেন ‘রাষ্ট্রের দূত’, কিন্তু যদি সেই প্রতিনিধিত্ব বাস্তবে কোনো সমর্থনে না দাঁড়ায়, তবে তার মূল্য কোথায়?
তবুও নীরবতা একেবারে সর্বজনীন নয়। কিছু কণ্ঠস্বর শোনা গেছে—অ্যাকটিভিস্ট, শিক্ষাবিদ, কমিউনিটি নেতা আর কিছু রাজনীতিক, যেমন—নিকি হ্যালি ও রো খানা। কেউ ভিসা বিধিনিষেধের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন, কেউ আবার শুল্ক নীতির সমালোচনা করেছেন। তবে এগুলো বিচ্ছিন্ন উদ্যোগ, অন্য প্রবাসী গোষ্ঠীর মতো সংগঠিত শক্তি হয়ে ওঠেনি। যেমন ইহুদি-আমেরিকানরা নিয়মিতভাবে ইসরায়েলের পক্ষে শক্তিশালী লবিং করেন। কিউবান-আমেরিকানরা দশকের পর দশক ধরে হাভানার বিরুদ্ধে মার্কিন নীতি গড়ে তুলেছেন। এর তুলনায় ভারতীয়-আমেরিকান সমাজ এখনো খণ্ডিত—অঞ্চল, ধর্ম আর রাজনৈতিক মতভেদের কারণে তাঁরা বিভক্ত হয়ে আছেন।
প্রবাসে বসবাসকারী ভারতীয়দের মধ্যে ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে সরাসরি অবস্থান নেওয়ার ব্যাপারে একধরনের অনীহা রয়েছে। এর একটি বড় কারণ হলো—অনেক ভারতীয়-আমেরিকান সর্বশেষ নির্বাচনে ট্রাম্পকে সমর্থন করেছিলেন। ব্যবসাবান্ধব নীতি, চীনের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান এবং হিন্দুত্ববাদীদের প্রতি ট্রাম্পের আশীর্বাদসূচক মনোভাব তাঁদের আকৃষ্ট করেছিল।
‘হাউডি মোদি’ নামে যুক্তরাষ্ট্রের হিউস্টনে যে বিশাল সমাবেশ হয়েছিল, সেখানে ট্রাম্প ও মোদি এক মঞ্চে ছিলেন। এটি দুই নেতার ঘনিষ্ঠতার প্রতীক হয়ে উঠেছিল। অনেক প্রবাসী ভারতীয় এখনো ট্রাম্পকে ভারতের ‘বন্ধু’ ভাবেন। কিন্তু বন্ধুত্ব মানেই তো অন্ধ আনুগত্য নয়। বন্ধুত্বেরও পরীক্ষা থাকে।
যদি ট্রাম্পের শুল্কনীতি ভারতীয় রপ্তানিকারকদের ক্ষতি করে, যদি ভিসা ফি বাড়িয়ে দেওয়া ভারতীয় পেশাজীবীদের ওপর বোঝা চাপায়, যদি নিষেধাজ্ঞা ভারতের কৌশলগত স্বকীয়তাকে ব্যাহত করে—তাহলে চুপ করে থাকাটা আর বন্ধুত্ব নয়, বরং অপরাধে অংশগ্রহণের মতো। প্রবাসী সমাজকে বুঝতে হবে—প্রতীকী করমর্দনের চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো বাস্তব নীতিগত সিদ্ধান্ত। হিউস্টনে একটি করমর্দন দিল্লির ওপর জারি হওয়া নিষেধাজ্ঞা মুছে দেয় না।
এই প্রসঙ্গে আরও গভীর একটি প্রশ্ন উঠে আসে—প্রবাসী হওয়া মানে কী? এটা কি শুধু নস্টালজিয়া—বলিউড সিনেমা, বিরিয়ানি আর ভরতনাট্যম প্রেমের মধ্যেই সীমাবদ্ধ? নাকি এর মানে রাজনৈতিক দায়িত্বও রয়েছে? যখন দেশের ক্ষতি হয়, তখন প্রতিবাদ করা, ক্ষমতাধরদের সামনে সত্য বলা—এই দায়িত্ব কি তাঁদের নেওয়া উচিত নয়? প্রবাসী হয়ে কি শুধু দর্শক হয়ে থাকা যায়, নাকি সেতুবন্ধ গড়া উচিত?
ভারতীয়-আমেরিকান সমাজের হাতে রয়েছে প্রচুর অর্থ, প্রভাব ও মর্যাদা। তাঁরা চাইলে মার্কিন কংগ্রেসে লবিং করতে পারেন, মিডিয়াকে প্রভাবিত করতে পারেন, জনগণকে সংগঠিত করতে পারেন। কিন্তু তার আগে দরকার—নিজস্ব অবস্থান থেকে স্পষ্ট ও নীতিভিত্তিক বক্তব্য দেওয়া। এমন বক্তব্য নয়, যা শুধু দিল্লির সরকারকে অনুসরণ করে, বরং এমন শব্দ যার প্রভাব পড়ে ওয়াশিংটনে।
ভারতেরও উচিত তার প্রবাসীদের সঙ্গে আরও গভীর সম্পর্ক গড়ে তোলা। শুধু রেমিট্যান্স পাঠানো কিংবা সফট পাওয়ার হিসেবে তাঁদের তুলে ধরলেই হবে না, তাঁদের কৌশলগত অংশীদার হিসেবে বিবেচনা করতে হবে। তাঁদের বক্তব্য মনোযোগ দিয়ে শুনতে হবে, তাঁদের সীমাবদ্ধতাও বুঝতে হবে এবং তাঁদের সক্রিয়ভাবে কাজ করার সুযোগ করে দিতে হবে।
বর্তমানে আমরা ওয়াশিংটনে কোটি কোটি টাকা খরচ করি পেশাদার লবিস্টদের পেছনে। কিন্তু যারা ভারতীয় বংশোদ্ভূত, সেই ভারতীয়-আমেরিকান নাগরিকদের সংগঠিত করে ভারতের স্বার্থে কাজ করতে উদ্বুদ্ধ করার ক্ষেত্রে আমরা খুব কমই উদ্যোগ নিয়েছি।
প্রবাসী ভারতীয়দের নীরবতা মূলত একটি দ্বিধা থেকে আসে—তাঁদের সাফল্য ও সংহতি, আত্তীকরণ ও আনুগত্যের মাঝামাঝি টানাপোড়েন থেকেই এই নীরবতা জন্ম নেয়। আর ভারতের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে, এটা মনে রাখা জরুরি—কোনো প্রবাসী সমাজের কণ্ঠস্বর বিবেচিত হয়, তারা কতটা ধনী বা প্রভাবশালী, তা দিয়ে নয়, বরং দেশ মুশকিলে পড়লে তাদের প্রতিবাদী কণ্ঠ কতটা জোরালো হয়, সেটির ভিত্তিতেই।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস থেকে অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান

ইরানের সঙ্গে নতুন করে বড় ধরনের সামরিক সংঘাতের আশঙ্কা ঘনীভূত হচ্ছে—এমন ইঙ্গিতই দিচ্ছে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক তৎপরতা। দেশটির পার্লামেন্টের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা কমিটির এক গোপন বৈঠকে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা ইরানের সঙ্গে সম্ভাব্য নতুন যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে বিস্তারিত...
৩ ঘণ্টা আগে
পাকিস্তানের কাছে ৬৮ কোটি ৬০ লাখ ডলার মূল্যের উন্নত প্রযুক্তি ও আধুনিক পার্টস বিক্রির অনুমোদন দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এই প্যাকেজটি পাকিস্তানের কাছে থাকা এফ-১৬ যুদ্ধবিমানগুলোর আধুনিকীকরণের জন্য দেওয়া হয়েছে। চির প্রতিদ্বন্দ্বী ভারত–পাকিস্তানের মধ্যে চলমান উত্তেজনার আবহে এই চুক্তি সম্পন্ন হলো।
৫ ঘণ্টা আগে
আন্তর্জাতিক সমুদ্র চুক্তি অনুযায়ী, একটি নির্দিষ্ট টনেজের চেয়ে বেশি ওজনের সব জাহাজেই স্বয়ংক্রিয় শনাক্তকরণ ব্যবস্থা (এআইএস) থাকা বাধ্যতামূলক, যা জাহাজের অবস্থান নিয়মিতভাবে সম্প্রচার করে। কিন্তু ‘স্কিপার’-এর গতিবিধির পাবলিক রেকর্ড হয় অসম্পূর্ণ অথবা বিভ্রান্তিকর।
২ দিন আগে
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই যখন যুক্তরাষ্ট্রে চাকরি সংকট সৃষ্টি করছে, ঠিক তখনই ভারতের ছোট ছোট শহরে বেড়ে চলেছে কর্মসংস্থানের নতুন সুযোগ। এই বিষয়ে নিক্কেই এশিয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে—দক্ষিণ ভারতের কারুর শহরের একটি অফিসে বসে ধারাণি চন্দ্রশেখর যখন কৃত্রিমভাবে তৈরি ছবি শনাক্ত করছেন...
৩ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ইরানের সঙ্গে নতুন করে বড় ধরনের সামরিক সংঘাতের আশঙ্কা ঘনীভূত হচ্ছে—এমন ইঙ্গিতই দিচ্ছে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক তৎপরতা। দেশটির পার্লামেন্টের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা কমিটির এক গোপন বৈঠকে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা ইরানের সঙ্গে সম্ভাব্য নতুন যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে বিস্তারিত ব্রিফ করেছেন।
হিব্রু ভাষার ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম মারিভের খবরে বলা হয়েছে, ওই বৈঠকে এক সামরিক প্রতিনিধি সংসদ সদস্যদের জানান, তেহরান ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদন বাড়িয়েছে এবং হামলার সক্ষমতা পুরোপুরি পুনর্গঠন ও সম্প্রসারণের চেষ্টা করছে। আইডিএফের আশঙ্কা, আগের মতোই ইরান একযোগে শত শত ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে ইসরায়েলের ভূখণ্ডে বড় ধরনের আঘাত হানতে পারে।
গত এক মাসে পশ্চিমা মূলধারার গণমাধ্যমগুলোতেও ইসরায়েল-ইরান উত্তেজনা নিয়ে সতর্কবার্তা জোরালো হয়েছে। দ্য নিউইয়র্ক টাইমস যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের ও কিছু বিশ্লেষকদের উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছে, দুই দেশের মধ্যে সরাসরি সামরিক সংঘর্ষ এড়ানো দিন দিন কঠিন হয়ে পড়ছে। নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, উভয় পক্ষ দ্রুত সামরিক সক্ষমতা বাড়াচ্ছে, পরোক্ষ বা প্রক্সি ফ্রন্ট বিস্তৃত করছে এবং কূটনৈতিক পথ থেকে আরও দূরে সরে যাচ্ছে। সব মিলিয়ে যুদ্ধের ঝুঁকি প্রতি সপ্তাহেই বাড়ছে।
নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বর্তমান উত্তেজনার একটি বড় কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে ২০১৫ সালের পারমাণবিক চুক্তির (জেসিপিওএ) মেয়াদ শেষ হওয়া। চলতি বছরের অক্টোবরে চুক্তিটি বাতিল হয়ে যাওয়ার পর ইরানের ওপর নতুন করে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ হয়। ফলে পারমাণবিক চুক্তি নিয়ে আলোচনার পথ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়।
নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, তেহরানের দাবি অনুযায়ী তারা উচ্চমাত্রার সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের সব মজুত ধ্বংস করেছে। কিন্তু ইসরায়েলি কর্মকর্তারা মনে করেন, এর একটি অংশ গোপনে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। উপসাগরীয় দেশগুলোর মধ্যেও উদ্বেগ বাড়ছে—তাদের মতে, ইরানে ইসরায়েলের আরেকটি হামলা ‘হবে কি না’ এটা প্রশ্ন নয়, হামলা ‘কবে হবে’—সেটাই বড় প্রশ্ন। ইসরায়েলের দৃষ্টিতে, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি তাদের অস্তিত্বের জন্য হুমকি। তেল আবিবের এই মনোভাব সামরিক হামলার সম্ভাবনাকে প্রায় অনিবার্য করে তুলছে।
এদিকে, আন্তর্জাতিক সংকট বিষয়ক গবেষণা সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের ইরান প্রকল্পের পরিচালক আলি ভায়েজ জানান, তাঁর ইরানি সূত্র অনুযায়ী দেশটির ক্ষেপণাস্ত্র কারখানাগুলো দিনে ২৪ ঘণ্টাই চালু আছে। তাঁর ভাষায়, নতুন কোনো সংঘাত হলে ইরান আগের মতো ১২ দিনে ৫০০টি নয়, বরং একযোগে ২ হাজার ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেঙে দিতে চায়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইরান-ইসরায়েল দ্বন্দ্বের মূল কারণগুলো এখনো অমীমাংসিত থাকায় সংঘাতের একটি চক্রাকার ধারা তৈরি হয়েছে, যেখানে উত্তেজনা প্রায় কাঠামোগতভাবেই অনিবার্য। ইরানের দীর্ঘদিন ধরে গড়ে তোলা তথাকথিত ‘প্রতিরোধের অক্ষ’ (যার মধ্যে বিভিন্ন আঞ্চলিক মিত্র ও গোষ্ঠী রয়েছে) গত জুনে ১২ দিনের যুদ্ধে এবং বিশেষ করে গত বছর সিরিয়ায় সরকার পরিবর্তনের পর বড় ধাক্কা খেয়েছে। তবু ইরানের হাতে এখনো গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক রসদ রয়েছে। যেমন—ইয়েমেনের আনসারুল্লাহ (হুতি), লেবাননের হিজবুল্লাহ এবং ইরাকের বিভিন্ন শিয়া মিলিশিয়া। এসব শক্তির মাধ্যমে তেহরান এখনো এক ধরনের অপ্রতিসম প্রতিরোধ সক্ষমতা ধরে রেখেছে।
ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম কার্সরইনফোর বরাতে জানা যায়, দেশটির নিরাপত্তা সংস্থার এক শীর্ষ সূত্রের দাবি—ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই, অর্থাৎ ২০২৯ সালের জানুয়ারির আগে ইরানে শাসক পরিবর্তনের সম্ভাবনা বিবেচনায় রেখেছে ইসরায়েল। সূত্রটি জানায়, ইরান একদিকে যেমন ক্ষেপণাস্ত্র ভান্ডার বাড়াচ্ছে, অন্যদিকে ইসরায়েল ইরানের পারমাণবিক ও প্রতিরক্ষা স্থাপনাগুলো নিরবচ্ছিন্নভাবে নজরদারিতে রেখেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, আরেকটি সামরিক সংঘাত এখন কেবল সময়ের ব্যাপার।
নিউইয়র্ক টাইমস বলছে, ইরান নাতানজের দক্ষিণে ‘পিকঅ্যাক্স মাউন্টেন’ নামে একটি নতুন ভূগর্ভস্থ স্থাপনায় পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির মূল উপাদান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার কাজ করছে। সেখানে এখনো আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) পরিদর্শকদের প্রবেশাধিকার দেওয়া হয়নি।
এই প্রেক্ষাপটে ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান বলেছেন, তেহরান শান্তি ও সংলাপ চায়, তবে চাপের কাছে মাথা নত করবে না, পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচিও পরিত্যাগ করবে না। তাঁর মতে, এসব কর্মসূচি জাতীয় সার্বভৌমত্বের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। তিনি বহুপক্ষীয় আলোচনায় ফেরার আগ্রহ দেখালেও শর্ত দিয়েছেন—‘ইরানের বৈজ্ঞানিক, প্রযুক্তিগত ও প্রতিরক্ষা সক্ষমতা অক্ষুণ্ন রাখতে হবে’।
এখন প্রশ্ন উঠেছে, ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ বাধলে যুক্তরাষ্ট্র কি আবারও তাতে জড়াবে?
গেল নভেম্বরের শুরুতে ডোনাল্ড ট্রাম্প স্বীকার করেন, জুনে ইরানে ইসরায়েলি হামলায় যুক্তরাষ্ট্র সম্পৃক্ত ছিল। বিষয়টি এত দিন হোয়াইট হাউস অস্বীকার করে আসছিল। ওই সময় ট্রাম্প আরও বলেন, ওয়াশিংটন চাইলে তেহরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা শিথিল করতেও প্রস্তুত।
ট্রাম্পের এমন বক্তব্যের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ওয়াশিংটনে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে তাঁর বৈঠক হয়। সেখানে ট্রাম্প আবার বলেন, ইরান যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তি চায় এবং ওয়াশিংটন আলোচনায় প্রস্তুত। একই দিনে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির উপদেষ্টা কামাল খারাজি জানান, পারস্পরিক সম্মান ও সমতার ভিত্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় বসতে প্রস্তুত ইরান, তবে প্রথম পদক্ষেপ ওয়াশিংটনকেই নিতে হবে। তিনি স্পষ্ট করে বলেন, ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি আলোচনার বাইরে, কারণ এটি জাতীয় প্রতিরোধের মূল স্তম্ভ। কেবল পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়েই সীমিত আলোচনার সুযোগ রয়েছে, তাও সার্বভৌমত্ব ক্ষুণ্ন না হলে।
বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রকে সরাসরি ইরানের সঙ্গে যুদ্ধে জড়াতে চান না। অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অর্থনৈতিক চাপে আরেকটি যুদ্ধ যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ব্যয়বহুল হবে। কিন্তু ইসরায়েল এই পরিস্থিতিকে একটি ঐতিহাসিক সুযোগ হিসেবে দেখছে। ইসরায়েল চাচ্ছে, তারা এই সুযোগে ইরানের পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতা স্থায়ীভাবে ধ্বংস করে দেবে।
সব মিলিয়ে, তেহরান আশাবাদী কথাবার্তায় ভরসা করছে না। ইরানি কূটনীতিকদের ধারণা, ইসরায়েল আঞ্চলিক প্রতিক্রিয়া বা যুক্তরাষ্ট্রের আপত্তি উপেক্ষা করেই সামরিক পরিকল্পনা এগিয়ে নিচ্ছে। তাদের মতে, ইসরায়েল হামলা চালালে যুক্তরাষ্ট্রকে যেকোনোভাবে সংঘাতে টেনে আনার চেষ্টা করবে—যদিও ট্রাম্প নতুন যুদ্ধ এড়াতে চান।
যুক্তরাষ্ট্র চাক বা না চাক, পরিস্থিতির চাপে তাকে শেষ পর্যন্ত সংঘাতে জড়িয়ে পড়তে হতে পারে। আর যদি ইরান ইসরায়েলি হামলার জবাবে আরও কঠোর প্রতিক্রিয়া দেখায়, তাহলে ওয়াশিংটনের সামনে কঠিন সিদ্ধান্ত এসে দাঁড়াবে—হস্তক্ষেপ করবে, নাকি নিয়ন্ত্রণ হারাবে। ইরান অবশ্য স্পষ্ট বার্তা দিচ্ছে—তারা ধ্বংসের ভয় পায় না এবং সর্বাত্মক যুদ্ধে নামলে ‘ইসরায়েলকেও সঙ্গে নিয়ে ডুববে’।
আরটি থেকে অনুবাদ করেছেন জগৎপতি বর্মা

ইরানের সঙ্গে নতুন করে বড় ধরনের সামরিক সংঘাতের আশঙ্কা ঘনীভূত হচ্ছে—এমন ইঙ্গিতই দিচ্ছে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক তৎপরতা। দেশটির পার্লামেন্টের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা কমিটির এক গোপন বৈঠকে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা ইরানের সঙ্গে সম্ভাব্য নতুন যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে বিস্তারিত ব্রিফ করেছেন।
হিব্রু ভাষার ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম মারিভের খবরে বলা হয়েছে, ওই বৈঠকে এক সামরিক প্রতিনিধি সংসদ সদস্যদের জানান, তেহরান ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদন বাড়িয়েছে এবং হামলার সক্ষমতা পুরোপুরি পুনর্গঠন ও সম্প্রসারণের চেষ্টা করছে। আইডিএফের আশঙ্কা, আগের মতোই ইরান একযোগে শত শত ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে ইসরায়েলের ভূখণ্ডে বড় ধরনের আঘাত হানতে পারে।
গত এক মাসে পশ্চিমা মূলধারার গণমাধ্যমগুলোতেও ইসরায়েল-ইরান উত্তেজনা নিয়ে সতর্কবার্তা জোরালো হয়েছে। দ্য নিউইয়র্ক টাইমস যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের ও কিছু বিশ্লেষকদের উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছে, দুই দেশের মধ্যে সরাসরি সামরিক সংঘর্ষ এড়ানো দিন দিন কঠিন হয়ে পড়ছে। নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, উভয় পক্ষ দ্রুত সামরিক সক্ষমতা বাড়াচ্ছে, পরোক্ষ বা প্রক্সি ফ্রন্ট বিস্তৃত করছে এবং কূটনৈতিক পথ থেকে আরও দূরে সরে যাচ্ছে। সব মিলিয়ে যুদ্ধের ঝুঁকি প্রতি সপ্তাহেই বাড়ছে।
নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বর্তমান উত্তেজনার একটি বড় কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে ২০১৫ সালের পারমাণবিক চুক্তির (জেসিপিওএ) মেয়াদ শেষ হওয়া। চলতি বছরের অক্টোবরে চুক্তিটি বাতিল হয়ে যাওয়ার পর ইরানের ওপর নতুন করে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ হয়। ফলে পারমাণবিক চুক্তি নিয়ে আলোচনার পথ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়।
নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, তেহরানের দাবি অনুযায়ী তারা উচ্চমাত্রার সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের সব মজুত ধ্বংস করেছে। কিন্তু ইসরায়েলি কর্মকর্তারা মনে করেন, এর একটি অংশ গোপনে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। উপসাগরীয় দেশগুলোর মধ্যেও উদ্বেগ বাড়ছে—তাদের মতে, ইরানে ইসরায়েলের আরেকটি হামলা ‘হবে কি না’ এটা প্রশ্ন নয়, হামলা ‘কবে হবে’—সেটাই বড় প্রশ্ন। ইসরায়েলের দৃষ্টিতে, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি তাদের অস্তিত্বের জন্য হুমকি। তেল আবিবের এই মনোভাব সামরিক হামলার সম্ভাবনাকে প্রায় অনিবার্য করে তুলছে।
এদিকে, আন্তর্জাতিক সংকট বিষয়ক গবেষণা সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের ইরান প্রকল্পের পরিচালক আলি ভায়েজ জানান, তাঁর ইরানি সূত্র অনুযায়ী দেশটির ক্ষেপণাস্ত্র কারখানাগুলো দিনে ২৪ ঘণ্টাই চালু আছে। তাঁর ভাষায়, নতুন কোনো সংঘাত হলে ইরান আগের মতো ১২ দিনে ৫০০টি নয়, বরং একযোগে ২ হাজার ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেঙে দিতে চায়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইরান-ইসরায়েল দ্বন্দ্বের মূল কারণগুলো এখনো অমীমাংসিত থাকায় সংঘাতের একটি চক্রাকার ধারা তৈরি হয়েছে, যেখানে উত্তেজনা প্রায় কাঠামোগতভাবেই অনিবার্য। ইরানের দীর্ঘদিন ধরে গড়ে তোলা তথাকথিত ‘প্রতিরোধের অক্ষ’ (যার মধ্যে বিভিন্ন আঞ্চলিক মিত্র ও গোষ্ঠী রয়েছে) গত জুনে ১২ দিনের যুদ্ধে এবং বিশেষ করে গত বছর সিরিয়ায় সরকার পরিবর্তনের পর বড় ধাক্কা খেয়েছে। তবু ইরানের হাতে এখনো গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক রসদ রয়েছে। যেমন—ইয়েমেনের আনসারুল্লাহ (হুতি), লেবাননের হিজবুল্লাহ এবং ইরাকের বিভিন্ন শিয়া মিলিশিয়া। এসব শক্তির মাধ্যমে তেহরান এখনো এক ধরনের অপ্রতিসম প্রতিরোধ সক্ষমতা ধরে রেখেছে।
ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম কার্সরইনফোর বরাতে জানা যায়, দেশটির নিরাপত্তা সংস্থার এক শীর্ষ সূত্রের দাবি—ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই, অর্থাৎ ২০২৯ সালের জানুয়ারির আগে ইরানে শাসক পরিবর্তনের সম্ভাবনা বিবেচনায় রেখেছে ইসরায়েল। সূত্রটি জানায়, ইরান একদিকে যেমন ক্ষেপণাস্ত্র ভান্ডার বাড়াচ্ছে, অন্যদিকে ইসরায়েল ইরানের পারমাণবিক ও প্রতিরক্ষা স্থাপনাগুলো নিরবচ্ছিন্নভাবে নজরদারিতে রেখেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, আরেকটি সামরিক সংঘাত এখন কেবল সময়ের ব্যাপার।
নিউইয়র্ক টাইমস বলছে, ইরান নাতানজের দক্ষিণে ‘পিকঅ্যাক্স মাউন্টেন’ নামে একটি নতুন ভূগর্ভস্থ স্থাপনায় পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির মূল উপাদান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার কাজ করছে। সেখানে এখনো আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) পরিদর্শকদের প্রবেশাধিকার দেওয়া হয়নি।
এই প্রেক্ষাপটে ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান বলেছেন, তেহরান শান্তি ও সংলাপ চায়, তবে চাপের কাছে মাথা নত করবে না, পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচিও পরিত্যাগ করবে না। তাঁর মতে, এসব কর্মসূচি জাতীয় সার্বভৌমত্বের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। তিনি বহুপক্ষীয় আলোচনায় ফেরার আগ্রহ দেখালেও শর্ত দিয়েছেন—‘ইরানের বৈজ্ঞানিক, প্রযুক্তিগত ও প্রতিরক্ষা সক্ষমতা অক্ষুণ্ন রাখতে হবে’।
এখন প্রশ্ন উঠেছে, ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ বাধলে যুক্তরাষ্ট্র কি আবারও তাতে জড়াবে?
গেল নভেম্বরের শুরুতে ডোনাল্ড ট্রাম্প স্বীকার করেন, জুনে ইরানে ইসরায়েলি হামলায় যুক্তরাষ্ট্র সম্পৃক্ত ছিল। বিষয়টি এত দিন হোয়াইট হাউস অস্বীকার করে আসছিল। ওই সময় ট্রাম্প আরও বলেন, ওয়াশিংটন চাইলে তেহরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা শিথিল করতেও প্রস্তুত।
ট্রাম্পের এমন বক্তব্যের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ওয়াশিংটনে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে তাঁর বৈঠক হয়। সেখানে ট্রাম্প আবার বলেন, ইরান যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তি চায় এবং ওয়াশিংটন আলোচনায় প্রস্তুত। একই দিনে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির উপদেষ্টা কামাল খারাজি জানান, পারস্পরিক সম্মান ও সমতার ভিত্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় বসতে প্রস্তুত ইরান, তবে প্রথম পদক্ষেপ ওয়াশিংটনকেই নিতে হবে। তিনি স্পষ্ট করে বলেন, ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি আলোচনার বাইরে, কারণ এটি জাতীয় প্রতিরোধের মূল স্তম্ভ। কেবল পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়েই সীমিত আলোচনার সুযোগ রয়েছে, তাও সার্বভৌমত্ব ক্ষুণ্ন না হলে।
বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রকে সরাসরি ইরানের সঙ্গে যুদ্ধে জড়াতে চান না। অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অর্থনৈতিক চাপে আরেকটি যুদ্ধ যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ব্যয়বহুল হবে। কিন্তু ইসরায়েল এই পরিস্থিতিকে একটি ঐতিহাসিক সুযোগ হিসেবে দেখছে। ইসরায়েল চাচ্ছে, তারা এই সুযোগে ইরানের পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতা স্থায়ীভাবে ধ্বংস করে দেবে।
সব মিলিয়ে, তেহরান আশাবাদী কথাবার্তায় ভরসা করছে না। ইরানি কূটনীতিকদের ধারণা, ইসরায়েল আঞ্চলিক প্রতিক্রিয়া বা যুক্তরাষ্ট্রের আপত্তি উপেক্ষা করেই সামরিক পরিকল্পনা এগিয়ে নিচ্ছে। তাদের মতে, ইসরায়েল হামলা চালালে যুক্তরাষ্ট্রকে যেকোনোভাবে সংঘাতে টেনে আনার চেষ্টা করবে—যদিও ট্রাম্প নতুন যুদ্ধ এড়াতে চান।
যুক্তরাষ্ট্র চাক বা না চাক, পরিস্থিতির চাপে তাকে শেষ পর্যন্ত সংঘাতে জড়িয়ে পড়তে হতে পারে। আর যদি ইরান ইসরায়েলি হামলার জবাবে আরও কঠোর প্রতিক্রিয়া দেখায়, তাহলে ওয়াশিংটনের সামনে কঠিন সিদ্ধান্ত এসে দাঁড়াবে—হস্তক্ষেপ করবে, নাকি নিয়ন্ত্রণ হারাবে। ইরান অবশ্য স্পষ্ট বার্তা দিচ্ছে—তারা ধ্বংসের ভয় পায় না এবং সর্বাত্মক যুদ্ধে নামলে ‘ইসরায়েলকেও সঙ্গে নিয়ে ডুববে’।
আরটি থেকে অনুবাদ করেছেন জগৎপতি বর্মা

ভারতীয়-আমেরিকানরা সংবাদপত্রের সম্পাদকীয় বোর্ড, থিঙ্কট্যাংক, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতায় নেতৃত্ব দিচ্ছেন। রাজনৈতিক প্রচারণায় অর্থ অনুদান দেন, সিনেটরদের পরামর্শ দেন, নীতিনির্ধারণে ভূমিকা রাখেন। অথচ এক মার্কিন প্রতিনিধি ভারতীয় এমপিদের জানিয়েছেন—তাঁর অফিসে ভারতের বিরুদ্ধে প্রশাসনের পদক্ষেপ নিয়ে কোনো...
০৩ অক্টোবর ২০২৫
পাকিস্তানের কাছে ৬৮ কোটি ৬০ লাখ ডলার মূল্যের উন্নত প্রযুক্তি ও আধুনিক পার্টস বিক্রির অনুমোদন দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এই প্যাকেজটি পাকিস্তানের কাছে থাকা এফ-১৬ যুদ্ধবিমানগুলোর আধুনিকীকরণের জন্য দেওয়া হয়েছে। চির প্রতিদ্বন্দ্বী ভারত–পাকিস্তানের মধ্যে চলমান উত্তেজনার আবহে এই চুক্তি সম্পন্ন হলো।
৫ ঘণ্টা আগে
আন্তর্জাতিক সমুদ্র চুক্তি অনুযায়ী, একটি নির্দিষ্ট টনেজের চেয়ে বেশি ওজনের সব জাহাজেই স্বয়ংক্রিয় শনাক্তকরণ ব্যবস্থা (এআইএস) থাকা বাধ্যতামূলক, যা জাহাজের অবস্থান নিয়মিতভাবে সম্প্রচার করে। কিন্তু ‘স্কিপার’-এর গতিবিধির পাবলিক রেকর্ড হয় অসম্পূর্ণ অথবা বিভ্রান্তিকর।
২ দিন আগে
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই যখন যুক্তরাষ্ট্রে চাকরি সংকট সৃষ্টি করছে, ঠিক তখনই ভারতের ছোট ছোট শহরে বেড়ে চলেছে কর্মসংস্থানের নতুন সুযোগ। এই বিষয়ে নিক্কেই এশিয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে—দক্ষিণ ভারতের কারুর শহরের একটি অফিসে বসে ধারাণি চন্দ্রশেখর যখন কৃত্রিমভাবে তৈরি ছবি শনাক্ত করছেন...
৩ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

পাকিস্তানের কাছে ৬৮ কোটি ৬০ লাখ ডলার মূল্যের উন্নত প্রযুক্তি ও আধুনিক পার্টস বিক্রির অনুমোদন দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এই প্যাকেজটি পাকিস্তানের কাছে থাকা এফ-১৬ যুদ্ধবিমানগুলোর আধুনিকীকরণের জন্য দেওয়া হয়েছে। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে চলমান উত্তেজনার আবহে এই চুক্তি সম্পন্ন হলো।
মনে রাখা দরকার, এ বছরের মে মাসে ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে এক হামলার পর দুই দেশের মধ্যে পাঁচ দিনের সংঘাত বাধে। এদিকে যুক্তরাষ্ট্র সম্প্রতি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকেও আরও মার্কিন অস্ত্র কেনার জন্য চাপ দিয়ে যাচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পাকিস্তানের কী চুক্তি হলো
ব্রাসেলসভিত্তিক থিংকট্যাংক আন্তর্জাতিক ক্রাইসিস গ্রুপের জ্যেষ্ঠ বিশ্লেষক প্রবীণ দোন্থি জানান, এই অনুমোদনটি মূলত ২০২২ সালের এক রক্ষণাবেক্ষণ চুক্তির অংশ। এই চুক্তির লক্ষ্য পাকিস্তানের এফ-১৬ যুদ্ধবিমানের বহরকে কার্যক্ষম রাখা। তিনি বলেন, ‘এই এফ-১৬ চুক্তিটি বৃহত্তর যুক্তরাষ্ট্র-পাকিস্তান দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এ কারণে কিছুটা দেরি হলেও প্রেসিডেন্ট বাইডেনের দেখানো পথেই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রশাসনও এটিকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছেন। দুই পক্ষই এই অঞ্চলে যৌথ সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানে এই যুদ্ধবিমানগুলোর উপযোগিতার ওপর জোর দেয়।’
সর্বশেষ এই চুক্তি নতুন কোনো যুদ্ধবিমান বিক্রির জন্য নয়, বরং পাকিস্তানের হাতে থাকা এফ-১৬ বহরের জন্য প্রযুক্তি বিক্রি এবং সেগুলোর আধুনিকীকরণের জন্য। যুক্তরাষ্ট্রর প্রতিরক্ষা নিরাপত্তা সহযোগিতা সংস্থা (ডিএসসিএ) ৪ ডিসেম্বর দেশটির কংগ্রেসে একটি প্রতিবেদন পাঠিয়ে চুক্তিটি নিশ্চিত করে।
ধারণা করা হয়, পাকিস্তানের কাছে ৭০ থেকে ৮০টি কার্যক্ষম এফ-১৬ বিমান আছে। এর মধ্যে কিছু পুরোনো কিন্তু পরে আধুনিক করে তোলা ‘ব্লক-১৫’ মডেল, জর্ডানের কাছ থেকে পাওয়া কিছু এফ-১৬ এবং কিছু নতুন ‘ব্লক ৫২+’ মডেলের বিমান রয়েছে।
এই প্যাকেজে আছে—উন্নত ফ্লাইট অপারেশন ও বিমানের ইলেকট্রনিক সিস্টেমের জন্য হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার আপডেট। অ্যাডভান্সড আইডেনটিফিকেশন ফ্রেন্ড অর ফো (আইএফএফ) সিস্টেম, যা পাইলটদের শত্রু বিমান থেকে মিত্র বিমান শনাক্ত করতে সাহায্য করে। নেভিগেশন আপগ্রেড, খুচরা পার্টস ও মেরামত সুবিধা।
এফ-১৬-এর সাপোর্ট ও আপগ্রেডের জন্য ৬৪ কোটি ৯০ লাখ ডলার বরাদ্দ করা হয়েছে। এ ছাড়া আরও ৩ কোটি ৭০ লাখ ডলারের গুরুত্বপূর্ণ সামরিক সরঞ্জাম (এমডিই) দেওয়া হবে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ৯২টি লিংক-১৬ সিস্টেম। এই লিংক-১৬ একটি সুরক্ষিত সামরিক ট্যাকটিক্যাল ডেটা লিংক নেটওয়ার্ক, যার মাধ্যমে সামরিক বিমান, জাহাজ এবং স্থলবাহিনীর মধ্যে খুদে বার্তা বা ছবির মাধ্যমে রিয়েল টাইম বা তাৎক্ষণিকভাবে যোগাযোগ করা যায়।
বিক্রির জন্য অনুমোদিত অন্য গুরুত্বপূর্ণ সরঞ্জামগুলোর মধ্যে রয়েছে ছয়টি এমকে-৮২ ৫০০-পাউন্ড সাধারণ বোমার কাভার। এগুলো বিস্ফোরক ছাড়া কংক্রিট বা বালু দিয়ে পূর্ণ থাকে এবং প্রশিক্ষণ বা পরীক্ষার কাজে ব্যবহৃত হয়। এমকে-৮২ যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি একটি আনগাইডেড বোমা, যা নিখুঁত-নির্দেশনা দেওয়া অস্ত্রের ওয়ারহেড হিসেবেও ব্যবহার করা যায়।
এফ-১৬ যুদ্ধবিমান কী
এফ-১৬ যুদ্ধবিমানটি এফ-১৬ ফাইটিং ফ্যালকন বা ভাইপার নামেও পরিচিত। এটি এক ইঞ্জিনবিশিষ্ট যুদ্ধবিমান। এটি যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের দ্বারা আকাশপথে যুদ্ধ ও আকাশ থেকে ভূমিতে আক্রমণের জন্য ব্যবহৃত হয়। প্রথমে এটি তৈরি করেছিল জেনারেল ডাইনামিকস নামে একটি মার্কিন কোম্পানি। বর্তমানে এটি উৎপাদন করে লকহিড মার্টিন।
ভিয়েতনাম যুদ্ধের শেষ দিকে সোভিয়েত মিকোয়ান-গুরেভিচ (মিগ) বিমানের সঙ্গে পাল্লা দেওয়ার জন্য এটিকে তৈরি করা হয়। এটি প্রথম উড্ডয়ন করে ১৯৭৪ সালে। লকহিড মার্টিনের ওয়েবসাইট অনুযায়ী, এফ-১৬ এখন বিশ্বের ২৯টি দেশে ব্যবহৃত অন্যতম বহুল ব্যবহৃত যুদ্ধবিমান। পাকিস্তান ছাড়াও ইউক্রেন, তুরস্ক, ইসরায়েল, মিশর, পোল্যান্ড, গ্রিস, তাইওয়ান, চিলি, সিঙ্গাপুর, বেলজিয়াম, ডেনমার্ক, নেদারল্যান্ডস ও নরওয়ের মতো দেশগুলো এফ-১৬ ব্যবহার করে।
ভারত-পাকিস্তানের মে মাসের সংঘাতে এফ-১৬-এর ভূমিকা কী ছিল
এপ্রিলের ২২ তারিখে ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে সশস্ত্র হামলায় ২৬ জন নিহত হয়। হামলার দায় স্বীকার করে ‘দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট (টিআরএফ) ’ নামে একটি বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী। ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র এটিকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। নয়াদিল্লির অভিযোগ, এর সঙ্গে পাকিস্তানভিত্তিক লস্কর-ই-তাইয়্যেবার যোগসূত্র আছে। তবে ইসলামাবাদ এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
পেহেলগাম হামলার পর নয়াদিল্লি ইসলামাবাদের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক তলানিতে নামিয়ে আনে এবং ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে সিন্ধু নদের পানি ভাগাভাগি নিশ্চিত করার সিন্ধু পানিবণ্টন চুক্তি স্থগিত করে। ৭ মে ভারত ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে পাকিস্তান ও পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের ৯টি জায়গায় আঘাত হানে। ইসলামাবাদের দাবি, এসব হামলায় বহু বেসামরিক নাগরিক নিহত হন। এরপরের তিন দিন দুই দেশ ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে একে অপরের সামরিক ঘাঁটি লক্ষ্য করে আকাশপথে তীব্র সংঘাত চালায়।
পাকিস্তানের এয়ার ভাইস মার্শাল আওরঙ্গজেব আহমেদের ভাষ্যমতে, এই আকাশযুদ্ধে পাকিস্তান ৪২টি ‘হাই-টেক বিমান’ ব্যবহার করেছিল, যার মধ্যে এফ-১৬ ছাড়াও চীনের তৈরি জেএফ-১৭ ও জে-১০ বিমান ছিল। অবশেষে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় ১০ মে একটি যুদ্ধবিরতি ঘোষিত হয়।
পাকিস্তানকে এফ-১৬-এর প্রযুক্তি দেওয়ার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র কি ভারতের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে
হ্যাঁ, কয়েকটি কারণে। পাকিস্তানের এফ-১৬ আপগ্রেডের জন্য যুক্তরাষ্ট্রর এই অনুমোদন এমন এক সময় এল, যখন ট্রাম্প প্রশাসন ভারতকে তাদের থেকে আরও অস্ত্র কিনতে চাপ দিচ্ছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্স তিন ভারতীয় কর্মকর্তার উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছিল, গত আগস্টে নয়াদিল্লি মার্কিন অস্ত্র ও বিমান কেনার পরিকল্পনা স্থগিত করে। এর ঠিক কয়েক সপ্তাহ আগে ভারতীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের ওয়াশিংটন সফরের কথা ছিল, যেখানে তিনি কিছু অস্ত্র কেনার কথা ঘোষণা করতে পারতেন। সেই সফরটি বাতিল হয়ে যায়।
ভারত-যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কেও সম্প্রতি উত্তেজনা বিরাজ করছে। গত ৬ আগস্ট ট্রাম্প প্রশাসন ভারতের আমদানি করা পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক চাপিয়েছিলেন। এর আগে থেকেই ভারতীয় পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক বহাল ছিল। ফলে মোট শুল্কের পরিমাণ দাঁড়ায় ৫০ শতাংশে। ভারতকে রাশিয়া থেকে সস্তা অপরিশোধিত তেল কেনার শাস্তি হিসেবে এই শুল্ক আরোপ করা হয়।
ট্রাম্প এক নির্বাহী আদেশে এই শুল্কের ঘোষণা দিয়ে লেখেন, ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক কার্যকলাপ অব্যাহত থাকায় এটি একটি ‘জাতীয় জরুরি অবস্থা’ এবং তাই রাশিয়ার অপরিশোধিত তেলের শীর্ষ ক্রেতা ভারতের ওপর বর্ধিত শুল্ক আরোপ করা ‘প্রয়োজনীয় ও যথাযথ।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি দেখছি যে ভারত সরকার বর্তমানে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে রাশিয়ান ফেডারেশনের তেল আমদানি করছে।’
যদিও যুক্তরাষ্ট্রর চাপের ফলস্বরূপ ভারত রাশিয়া থেকে তেল কেনা সামান্য কমিয়েছে, তবে নয়াদিল্লি মস্কো থেকে কেনা চালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছে। রাশিয়া থেকে তেল কেনার ক্ষেত্রে চীনের পর ভারতই দ্বিতীয় বৃহত্তম ক্রেতা। গত সপ্তাহে নয়াদিল্লিতে রাশিয়া-ভারত বার্ষিক দ্বিপক্ষীয় শীর্ষ সম্মেলনে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন প্রধানমন্ত্রী মোদির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং সেখানে বলেন, ‘ভারতকে জ্বালানির নিরবচ্ছিন্ন চালান সরবরাহ করতে রাশিয়া প্রস্তুত।’
পাকিস্তানের এফ-১৬ বিমান রক্ষণাবেক্ষণ ও আধুনিকীকরণের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের এই সর্বশেষ চুক্তি ঘোষণার ফলে ভারত সন্তুষ্ট হবে না বলেই মনে করা হচ্ছে। প্রবীণ দোন্থি জানান, আগে থেকেই পাকিস্তান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা, যার আওতায় পাকিস্তানের এফ-১৬ বহরের রক্ষণাবেক্ষণ করা নিয়ে নয়াদিল্লি আপত্তি জানিয়েছিল। ভারতের দাবি, এফ-১৬ বিমান তাদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হয়।
দোন্থি বলেন, ‘ওয়াশিংটন এবার আগেভাগেই বলে দিয়েছে যে এই বিক্রির ফলে অঞ্চলের মৌলিক সামরিক ভারসাম্যের পরিবর্তন হবে না।’
ওয়াশিংটন ডিসিভিত্তিক দক্ষিণ এশিয়া বিশ্লেষক মাইকেল কুগেলম্যান বলেন, ‘এখানে ভারতের দিকটি বেশি অতিরঞ্জিত করে দেখা উচিত নয়। কেউ কেউ এটিকে হয়তো ওয়াশিংটনের সর্বশেষ কৌশল হিসেবে দেখতে পারে, পাকিস্তানের প্রতি উদারতা দেখিয়ে ভারতকে বাণিজ্য আলোচনায় আরও ছাড় দিতে চাপ দেওয়া।’
তবে তিনি আরও যোগ করেন, এই চুক্তির ‘একটি নিজস্ব যুক্তি আছে, যা ভারতের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়।’ কুগেলম্যানের ব্যাখ্যা অনুযায়ী, এটি মূলত পাকিস্তানের যুক্তরাষ্ট্র নির্মিত বিমানগুলোকে রক্ষণাবেক্ষণ করার জন্য এক দীর্ঘমেয়াদি কর্মসূচির অধীনে এক স্বতন্ত্র ব্যবস্থা। এটি ভারতের সঙ্গে অব্যাহত, যদিও কম উদার মার্কিন প্রতিরক্ষা সহযোগিতার পাশাপাশি বিদ্যমান।
যুক্তরাষ্ট্রের এই অনুমোদন পাকিস্তানকে কতটা শক্তিশালী করবে
কুগেলম্যান জানান, এই প্যাকেজটি তাৎপর্যপূর্ণ। তিনি বলেন, ‘এটি সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পাকিস্তানকে দেওয়া অন্যতম উদার নিরাপত্তা সহায়তা প্যাকেজ। প্রায় ৭০ কোটি ডলারকে ছোট করে দেখার সুযোগ নেই।’ এই চুক্তি যুক্তরাষ্ট্র-পাকিস্তান সম্পর্কের ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এটি সন্ত্রাসবিরোধী সহযোগিতায় ট্রাম্প প্রশাসন যে গুরুত্ব দিচ্ছে, তার ইঙ্গিত বহন করে। তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র-পাকিস্তান সম্পর্কের পুনরুত্থান নিয়ে আলোচনায় সাধারণত গুরুত্বপূর্ণ খনিজ ও অন্যান্য বাণিজ্যিক সুযোগগুলোই বেশি শিরোনামে আসে। কিন্তু সন্ত্রাসবিরোধী সহযোগিতা, যার ব্যাপ্তি সামান্য হলেও এই প্রশাসনের কাছে গুরুত্বপূর্ণ।’
তবে দোন্থি মনে করিয়ে দেন, যুক্তরাষ্ট্রর এই সর্বশেষ প্যাকেজটি পাকিস্তানকে ২০৪০ সাল পর্যন্ত তার বহর রক্ষণাবেক্ষণে সাহায্য করবে বটে, কিন্তু ২০২০ সাল থেকে পাকিস্তানের ৮০ শতাংশের বেশি অস্ত্র সরবরাহ করেছে চীন। সুইডিশ থিংকট্যাংক সিআইপিআরআইয়ের এই বছরের একটি প্রতিবেদনেও এই পরিসংখ্যানের সমর্থন পাওয়া যায়।
দোন্থি বলেন, ‘ভারতের সঙ্গে মে মাসের সংঘাতে পাকিস্তান চীনের তৈরি জে-১০ বিমান ব্যবহার করেছিল। ইসলামাবাদ ওয়াশিংটন ও বেইজিং—উভয় পক্ষ থেকেই সুবিধা নিয়ে ভারসাম্য বজায় রেখে চলেছে।’
আল জাজিরা থেকে অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান

পাকিস্তানের কাছে ৬৮ কোটি ৬০ লাখ ডলার মূল্যের উন্নত প্রযুক্তি ও আধুনিক পার্টস বিক্রির অনুমোদন দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এই প্যাকেজটি পাকিস্তানের কাছে থাকা এফ-১৬ যুদ্ধবিমানগুলোর আধুনিকীকরণের জন্য দেওয়া হয়েছে। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে চলমান উত্তেজনার আবহে এই চুক্তি সম্পন্ন হলো।
মনে রাখা দরকার, এ বছরের মে মাসে ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে এক হামলার পর দুই দেশের মধ্যে পাঁচ দিনের সংঘাত বাধে। এদিকে যুক্তরাষ্ট্র সম্প্রতি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকেও আরও মার্কিন অস্ত্র কেনার জন্য চাপ দিয়ে যাচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পাকিস্তানের কী চুক্তি হলো
ব্রাসেলসভিত্তিক থিংকট্যাংক আন্তর্জাতিক ক্রাইসিস গ্রুপের জ্যেষ্ঠ বিশ্লেষক প্রবীণ দোন্থি জানান, এই অনুমোদনটি মূলত ২০২২ সালের এক রক্ষণাবেক্ষণ চুক্তির অংশ। এই চুক্তির লক্ষ্য পাকিস্তানের এফ-১৬ যুদ্ধবিমানের বহরকে কার্যক্ষম রাখা। তিনি বলেন, ‘এই এফ-১৬ চুক্তিটি বৃহত্তর যুক্তরাষ্ট্র-পাকিস্তান দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এ কারণে কিছুটা দেরি হলেও প্রেসিডেন্ট বাইডেনের দেখানো পথেই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রশাসনও এটিকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছেন। দুই পক্ষই এই অঞ্চলে যৌথ সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানে এই যুদ্ধবিমানগুলোর উপযোগিতার ওপর জোর দেয়।’
সর্বশেষ এই চুক্তি নতুন কোনো যুদ্ধবিমান বিক্রির জন্য নয়, বরং পাকিস্তানের হাতে থাকা এফ-১৬ বহরের জন্য প্রযুক্তি বিক্রি এবং সেগুলোর আধুনিকীকরণের জন্য। যুক্তরাষ্ট্রর প্রতিরক্ষা নিরাপত্তা সহযোগিতা সংস্থা (ডিএসসিএ) ৪ ডিসেম্বর দেশটির কংগ্রেসে একটি প্রতিবেদন পাঠিয়ে চুক্তিটি নিশ্চিত করে।
ধারণা করা হয়, পাকিস্তানের কাছে ৭০ থেকে ৮০টি কার্যক্ষম এফ-১৬ বিমান আছে। এর মধ্যে কিছু পুরোনো কিন্তু পরে আধুনিক করে তোলা ‘ব্লক-১৫’ মডেল, জর্ডানের কাছ থেকে পাওয়া কিছু এফ-১৬ এবং কিছু নতুন ‘ব্লক ৫২+’ মডেলের বিমান রয়েছে।
এই প্যাকেজে আছে—উন্নত ফ্লাইট অপারেশন ও বিমানের ইলেকট্রনিক সিস্টেমের জন্য হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার আপডেট। অ্যাডভান্সড আইডেনটিফিকেশন ফ্রেন্ড অর ফো (আইএফএফ) সিস্টেম, যা পাইলটদের শত্রু বিমান থেকে মিত্র বিমান শনাক্ত করতে সাহায্য করে। নেভিগেশন আপগ্রেড, খুচরা পার্টস ও মেরামত সুবিধা।
এফ-১৬-এর সাপোর্ট ও আপগ্রেডের জন্য ৬৪ কোটি ৯০ লাখ ডলার বরাদ্দ করা হয়েছে। এ ছাড়া আরও ৩ কোটি ৭০ লাখ ডলারের গুরুত্বপূর্ণ সামরিক সরঞ্জাম (এমডিই) দেওয়া হবে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ৯২টি লিংক-১৬ সিস্টেম। এই লিংক-১৬ একটি সুরক্ষিত সামরিক ট্যাকটিক্যাল ডেটা লিংক নেটওয়ার্ক, যার মাধ্যমে সামরিক বিমান, জাহাজ এবং স্থলবাহিনীর মধ্যে খুদে বার্তা বা ছবির মাধ্যমে রিয়েল টাইম বা তাৎক্ষণিকভাবে যোগাযোগ করা যায়।
বিক্রির জন্য অনুমোদিত অন্য গুরুত্বপূর্ণ সরঞ্জামগুলোর মধ্যে রয়েছে ছয়টি এমকে-৮২ ৫০০-পাউন্ড সাধারণ বোমার কাভার। এগুলো বিস্ফোরক ছাড়া কংক্রিট বা বালু দিয়ে পূর্ণ থাকে এবং প্রশিক্ষণ বা পরীক্ষার কাজে ব্যবহৃত হয়। এমকে-৮২ যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি একটি আনগাইডেড বোমা, যা নিখুঁত-নির্দেশনা দেওয়া অস্ত্রের ওয়ারহেড হিসেবেও ব্যবহার করা যায়।
এফ-১৬ যুদ্ধবিমান কী
এফ-১৬ যুদ্ধবিমানটি এফ-১৬ ফাইটিং ফ্যালকন বা ভাইপার নামেও পরিচিত। এটি এক ইঞ্জিনবিশিষ্ট যুদ্ধবিমান। এটি যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের দ্বারা আকাশপথে যুদ্ধ ও আকাশ থেকে ভূমিতে আক্রমণের জন্য ব্যবহৃত হয়। প্রথমে এটি তৈরি করেছিল জেনারেল ডাইনামিকস নামে একটি মার্কিন কোম্পানি। বর্তমানে এটি উৎপাদন করে লকহিড মার্টিন।
ভিয়েতনাম যুদ্ধের শেষ দিকে সোভিয়েত মিকোয়ান-গুরেভিচ (মিগ) বিমানের সঙ্গে পাল্লা দেওয়ার জন্য এটিকে তৈরি করা হয়। এটি প্রথম উড্ডয়ন করে ১৯৭৪ সালে। লকহিড মার্টিনের ওয়েবসাইট অনুযায়ী, এফ-১৬ এখন বিশ্বের ২৯টি দেশে ব্যবহৃত অন্যতম বহুল ব্যবহৃত যুদ্ধবিমান। পাকিস্তান ছাড়াও ইউক্রেন, তুরস্ক, ইসরায়েল, মিশর, পোল্যান্ড, গ্রিস, তাইওয়ান, চিলি, সিঙ্গাপুর, বেলজিয়াম, ডেনমার্ক, নেদারল্যান্ডস ও নরওয়ের মতো দেশগুলো এফ-১৬ ব্যবহার করে।
ভারত-পাকিস্তানের মে মাসের সংঘাতে এফ-১৬-এর ভূমিকা কী ছিল
এপ্রিলের ২২ তারিখে ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে সশস্ত্র হামলায় ২৬ জন নিহত হয়। হামলার দায় স্বীকার করে ‘দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট (টিআরএফ) ’ নামে একটি বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী। ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র এটিকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। নয়াদিল্লির অভিযোগ, এর সঙ্গে পাকিস্তানভিত্তিক লস্কর-ই-তাইয়্যেবার যোগসূত্র আছে। তবে ইসলামাবাদ এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
পেহেলগাম হামলার পর নয়াদিল্লি ইসলামাবাদের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক তলানিতে নামিয়ে আনে এবং ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে সিন্ধু নদের পানি ভাগাভাগি নিশ্চিত করার সিন্ধু পানিবণ্টন চুক্তি স্থগিত করে। ৭ মে ভারত ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে পাকিস্তান ও পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের ৯টি জায়গায় আঘাত হানে। ইসলামাবাদের দাবি, এসব হামলায় বহু বেসামরিক নাগরিক নিহত হন। এরপরের তিন দিন দুই দেশ ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে একে অপরের সামরিক ঘাঁটি লক্ষ্য করে আকাশপথে তীব্র সংঘাত চালায়।
পাকিস্তানের এয়ার ভাইস মার্শাল আওরঙ্গজেব আহমেদের ভাষ্যমতে, এই আকাশযুদ্ধে পাকিস্তান ৪২টি ‘হাই-টেক বিমান’ ব্যবহার করেছিল, যার মধ্যে এফ-১৬ ছাড়াও চীনের তৈরি জেএফ-১৭ ও জে-১০ বিমান ছিল। অবশেষে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় ১০ মে একটি যুদ্ধবিরতি ঘোষিত হয়।
পাকিস্তানকে এফ-১৬-এর প্রযুক্তি দেওয়ার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র কি ভারতের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে
হ্যাঁ, কয়েকটি কারণে। পাকিস্তানের এফ-১৬ আপগ্রেডের জন্য যুক্তরাষ্ট্রর এই অনুমোদন এমন এক সময় এল, যখন ট্রাম্প প্রশাসন ভারতকে তাদের থেকে আরও অস্ত্র কিনতে চাপ দিচ্ছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্স তিন ভারতীয় কর্মকর্তার উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছিল, গত আগস্টে নয়াদিল্লি মার্কিন অস্ত্র ও বিমান কেনার পরিকল্পনা স্থগিত করে। এর ঠিক কয়েক সপ্তাহ আগে ভারতীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের ওয়াশিংটন সফরের কথা ছিল, যেখানে তিনি কিছু অস্ত্র কেনার কথা ঘোষণা করতে পারতেন। সেই সফরটি বাতিল হয়ে যায়।
ভারত-যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কেও সম্প্রতি উত্তেজনা বিরাজ করছে। গত ৬ আগস্ট ট্রাম্প প্রশাসন ভারতের আমদানি করা পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক চাপিয়েছিলেন। এর আগে থেকেই ভারতীয় পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক বহাল ছিল। ফলে মোট শুল্কের পরিমাণ দাঁড়ায় ৫০ শতাংশে। ভারতকে রাশিয়া থেকে সস্তা অপরিশোধিত তেল কেনার শাস্তি হিসেবে এই শুল্ক আরোপ করা হয়।
ট্রাম্প এক নির্বাহী আদেশে এই শুল্কের ঘোষণা দিয়ে লেখেন, ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক কার্যকলাপ অব্যাহত থাকায় এটি একটি ‘জাতীয় জরুরি অবস্থা’ এবং তাই রাশিয়ার অপরিশোধিত তেলের শীর্ষ ক্রেতা ভারতের ওপর বর্ধিত শুল্ক আরোপ করা ‘প্রয়োজনীয় ও যথাযথ।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি দেখছি যে ভারত সরকার বর্তমানে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে রাশিয়ান ফেডারেশনের তেল আমদানি করছে।’
যদিও যুক্তরাষ্ট্রর চাপের ফলস্বরূপ ভারত রাশিয়া থেকে তেল কেনা সামান্য কমিয়েছে, তবে নয়াদিল্লি মস্কো থেকে কেনা চালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছে। রাশিয়া থেকে তেল কেনার ক্ষেত্রে চীনের পর ভারতই দ্বিতীয় বৃহত্তম ক্রেতা। গত সপ্তাহে নয়াদিল্লিতে রাশিয়া-ভারত বার্ষিক দ্বিপক্ষীয় শীর্ষ সম্মেলনে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন প্রধানমন্ত্রী মোদির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং সেখানে বলেন, ‘ভারতকে জ্বালানির নিরবচ্ছিন্ন চালান সরবরাহ করতে রাশিয়া প্রস্তুত।’
পাকিস্তানের এফ-১৬ বিমান রক্ষণাবেক্ষণ ও আধুনিকীকরণের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের এই সর্বশেষ চুক্তি ঘোষণার ফলে ভারত সন্তুষ্ট হবে না বলেই মনে করা হচ্ছে। প্রবীণ দোন্থি জানান, আগে থেকেই পাকিস্তান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা, যার আওতায় পাকিস্তানের এফ-১৬ বহরের রক্ষণাবেক্ষণ করা নিয়ে নয়াদিল্লি আপত্তি জানিয়েছিল। ভারতের দাবি, এফ-১৬ বিমান তাদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হয়।
দোন্থি বলেন, ‘ওয়াশিংটন এবার আগেভাগেই বলে দিয়েছে যে এই বিক্রির ফলে অঞ্চলের মৌলিক সামরিক ভারসাম্যের পরিবর্তন হবে না।’
ওয়াশিংটন ডিসিভিত্তিক দক্ষিণ এশিয়া বিশ্লেষক মাইকেল কুগেলম্যান বলেন, ‘এখানে ভারতের দিকটি বেশি অতিরঞ্জিত করে দেখা উচিত নয়। কেউ কেউ এটিকে হয়তো ওয়াশিংটনের সর্বশেষ কৌশল হিসেবে দেখতে পারে, পাকিস্তানের প্রতি উদারতা দেখিয়ে ভারতকে বাণিজ্য আলোচনায় আরও ছাড় দিতে চাপ দেওয়া।’
তবে তিনি আরও যোগ করেন, এই চুক্তির ‘একটি নিজস্ব যুক্তি আছে, যা ভারতের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়।’ কুগেলম্যানের ব্যাখ্যা অনুযায়ী, এটি মূলত পাকিস্তানের যুক্তরাষ্ট্র নির্মিত বিমানগুলোকে রক্ষণাবেক্ষণ করার জন্য এক দীর্ঘমেয়াদি কর্মসূচির অধীনে এক স্বতন্ত্র ব্যবস্থা। এটি ভারতের সঙ্গে অব্যাহত, যদিও কম উদার মার্কিন প্রতিরক্ষা সহযোগিতার পাশাপাশি বিদ্যমান।
যুক্তরাষ্ট্রের এই অনুমোদন পাকিস্তানকে কতটা শক্তিশালী করবে
কুগেলম্যান জানান, এই প্যাকেজটি তাৎপর্যপূর্ণ। তিনি বলেন, ‘এটি সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পাকিস্তানকে দেওয়া অন্যতম উদার নিরাপত্তা সহায়তা প্যাকেজ। প্রায় ৭০ কোটি ডলারকে ছোট করে দেখার সুযোগ নেই।’ এই চুক্তি যুক্তরাষ্ট্র-পাকিস্তান সম্পর্কের ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এটি সন্ত্রাসবিরোধী সহযোগিতায় ট্রাম্প প্রশাসন যে গুরুত্ব দিচ্ছে, তার ইঙ্গিত বহন করে। তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র-পাকিস্তান সম্পর্কের পুনরুত্থান নিয়ে আলোচনায় সাধারণত গুরুত্বপূর্ণ খনিজ ও অন্যান্য বাণিজ্যিক সুযোগগুলোই বেশি শিরোনামে আসে। কিন্তু সন্ত্রাসবিরোধী সহযোগিতা, যার ব্যাপ্তি সামান্য হলেও এই প্রশাসনের কাছে গুরুত্বপূর্ণ।’
তবে দোন্থি মনে করিয়ে দেন, যুক্তরাষ্ট্রর এই সর্বশেষ প্যাকেজটি পাকিস্তানকে ২০৪০ সাল পর্যন্ত তার বহর রক্ষণাবেক্ষণে সাহায্য করবে বটে, কিন্তু ২০২০ সাল থেকে পাকিস্তানের ৮০ শতাংশের বেশি অস্ত্র সরবরাহ করেছে চীন। সুইডিশ থিংকট্যাংক সিআইপিআরআইয়ের এই বছরের একটি প্রতিবেদনেও এই পরিসংখ্যানের সমর্থন পাওয়া যায়।
দোন্থি বলেন, ‘ভারতের সঙ্গে মে মাসের সংঘাতে পাকিস্তান চীনের তৈরি জে-১০ বিমান ব্যবহার করেছিল। ইসলামাবাদ ওয়াশিংটন ও বেইজিং—উভয় পক্ষ থেকেই সুবিধা নিয়ে ভারসাম্য বজায় রেখে চলেছে।’
আল জাজিরা থেকে অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান

ভারতীয়-আমেরিকানরা সংবাদপত্রের সম্পাদকীয় বোর্ড, থিঙ্কট্যাংক, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতায় নেতৃত্ব দিচ্ছেন। রাজনৈতিক প্রচারণায় অর্থ অনুদান দেন, সিনেটরদের পরামর্শ দেন, নীতিনির্ধারণে ভূমিকা রাখেন। অথচ এক মার্কিন প্রতিনিধি ভারতীয় এমপিদের জানিয়েছেন—তাঁর অফিসে ভারতের বিরুদ্ধে প্রশাসনের পদক্ষেপ নিয়ে কোনো...
০৩ অক্টোবর ২০২৫
ইরানের সঙ্গে নতুন করে বড় ধরনের সামরিক সংঘাতের আশঙ্কা ঘনীভূত হচ্ছে—এমন ইঙ্গিতই দিচ্ছে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক তৎপরতা। দেশটির পার্লামেন্টের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা কমিটির এক গোপন বৈঠকে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা ইরানের সঙ্গে সম্ভাব্য নতুন যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে বিস্তারিত...
৩ ঘণ্টা আগে
আন্তর্জাতিক সমুদ্র চুক্তি অনুযায়ী, একটি নির্দিষ্ট টনেজের চেয়ে বেশি ওজনের সব জাহাজেই স্বয়ংক্রিয় শনাক্তকরণ ব্যবস্থা (এআইএস) থাকা বাধ্যতামূলক, যা জাহাজের অবস্থান নিয়মিতভাবে সম্প্রচার করে। কিন্তু ‘স্কিপার’-এর গতিবিধির পাবলিক রেকর্ড হয় অসম্পূর্ণ অথবা বিভ্রান্তিকর।
২ দিন আগে
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই যখন যুক্তরাষ্ট্রে চাকরি সংকট সৃষ্টি করছে, ঠিক তখনই ভারতের ছোট ছোট শহরে বেড়ে চলেছে কর্মসংস্থানের নতুন সুযোগ। এই বিষয়ে নিক্কেই এশিয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে—দক্ষিণ ভারতের কারুর শহরের একটি অফিসে বসে ধারাণি চন্দ্রশেখর যখন কৃত্রিমভাবে তৈরি ছবি শনাক্ত করছেন...
৩ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে তেল পাচারে যুক্ত থাকার অভিযোগে গত বুধবার মার্কিন বাহিনী ভেনেজুয়েলা উপকূলের কাছাকাছি অভিযান চালিয়ে একটি তেল ট্যাংকার জব্দ করেছে। ট্যাংকারে ভেনেজুয়েলা ও ইরানের তেল বহন করা হচ্ছিল বলে দাবি যুক্তরাষ্ট্রের। এই ঘটনার পর ভেনেজুয়েলার তেল বহনের অভিযোগের আরও ছয়টি জাহাজের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন।
জাহাজ ট্র্যাকিং ডেটা অনুযায়ী, প্রথম ট্যাংকারটির অবস্থান (লোকেশন) গোপন করার বা মিথ্যা তথ্য দেওয়ার দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। মার্কিন অ্যাটর্নি জেনারেল পাম বন্ডি নিশ্চিত করেছেন, জব্দ হওয়া জাহাজটির নাম ‘স্কিপার’। তাঁর দাবি, এটি ভেনেজুয়েলা এবং ইরানের নিষেধাজ্ঞা ভুক্ত অপরিশোধিত তেল পরিবহনে ব্যবহৃত ক্রুড অয়েল ট্যাংকার।
আন্তর্জাতিক সমুদ্র চুক্তি অনুযায়ী, একটি নির্দিষ্ট টনেজের চেয়ে বেশি ওজনের সব জাহাজেই স্বয়ংক্রিয় শনাক্তকরণ ব্যবস্থা (এআইএস) থাকা বাধ্যতামূলক, যা জাহাজের অবস্থান নিয়মিতভাবে সম্প্রচার করে। কিন্তু ‘স্কিপার’-এর গতিবিধির পাবলিক রেকর্ড হয় অসম্পূর্ণ অথবা বিভ্রান্তিকর। জব্দ হওয়ার আগে এটি গত ৭ নভেম্বর থেকে তার অবস্থান প্রকাশ করেনি।
মেরিন অ্যানালিটিক্স ফার্ম কেপ্লার (Kpler) জানিয়েছে, ‘স্কিপার’-এর অবস্থান গোপন করার (স্পুফিং) দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। জানা যায়, ২০২২ সালে যখন জাহাজটি ‘আদিশা’ (Adisa) নামে চলছিল, তখন মার্কিন ট্রেজারি বিভাগ এটিকে একটি ‘আন্তর্জাতিক তেল পাচার নেটওয়ার্কের’ অংশ হিসেবে চিহ্নিত করে প্রথম নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, ‘স্কিপার’ ঘন ঘন ট্র্যাকারকে মিথ্যা তথ্য দিত। যেমন, এআইএস সিস্টেমে জাহাজটি ৭ ও ৮ জুলাই ইরাকের বসরা অয়েল টার্মিনালে অবস্থান দেখালেও, টার্মিনাল রিপোর্টে এর কোনো রেকর্ড ছিল না। উল্টো কেপ্লার জানিয়েছে, সেই সময়েই ট্যাংকারটি ইরানের খার্গ দ্বীপ থেকে অপরিশোধিত তেল বোঝাই করছিল। এ ছাড়া, ২৮ অক্টোবর থেকে ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত জাহাজটি এআইএস-এ সম্পূর্ণ ভুল সংকেত পাঠাচ্ছিল, যা এর আসল অবস্থানকে প্রতিফলিত করেনি।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ‘স্কিপার’ সম্ভবত ‘ডার্ক ফ্লিট’ নামক বিশ্বব্যাপী তেলবাহী ট্যাংকারের একটি নেটওয়ার্কের অংশ। এই নেটওয়ার্কটি মালিকানা, পরিচয় এবং ভ্রমণ ইতিহাস গোপন করে তেলের ওপর জারি করা নিষেধাজ্ঞা এড়াতে কাজ করে।
যদিও ‘স্কিপার’ গায়ানার পতাকা ব্যবহার করে যাত্রা করছিল, কিন্তু গায়ানা সরকার দ্রুত বিবৃতি দিয়ে জানায় যে ২০ বছর বয়সী এই ট্যাংকারটি তাদের দেশে নিবন্ধিত নয় এবং এটি ‘অবৈধভাবে গায়ানার পতাকা ব্যবহার করছিল’। জাহাজটির নিবন্ধিত মালিক হিসেবে মার্শাল দ্বীপপুঞ্জ-ভিত্তিক ‘ট্রাইটন নেভিগেশন করপোরেশন’-এর নাম রয়েছে। তবে, মার্কিন ট্রেজারি বিভাগ জানিয়েছে, এই ট্রাইটন করপোরেশনকে একজন নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্ত রুশ জ্বালানি ধনকুবের ভিক্তর আর্তেমভ তাঁর বৈশ্বিক ‘তেল পাচার নেটওয়ার্ক’ পরিচালনার জন্য ব্যবহার করতেন।
ভেনেজুয়েলার তেল মজুত বিশ্বের বৃহত্তম হলেও, মাদুরোর প্রশাসনকে ক্ষমতাচ্যুত করার চেষ্টায় যুক্তরাষ্ট্র ২০১৯ সাল থেকে দেশটির তেল রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। নিষেধাজ্ঞা এড়াতে ‘স্কিপার’ বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করত। কেপ্লার বিশ্লেষকেরা জানান, ট্যাংকারটি ভেনেজুয়েলার হোসে বন্দর থেকে প্রায় ১ দশমিক ১ মিলিয়ন (১১ লাখ) ব্যারেল মেরে ক্রুড তেল বোঝাই করেছিল এবং গন্তব্য হিসেবে কিউবার নাম উল্লেখ করেছিল।
১১ থেকে ১৩ আগস্টের মধ্যে এটি পূর্বে যাত্রা করে একটি ‘শিপ-টু-শিপ ট্রান্সফার’ সম্পন্ন করে। এটির কার্গো পরে চীনেও ‘ভুয়া ঘোষিত’ হয়েছিল। মার্কিন অভিযানের মাত্র কয়েক দিন আগে, ৭ ডিসেম্বরে এটি ভেনেজুয়েলা উপকূলের কাছে অন্য একটি জাহাজের সঙ্গে স্থানান্তরে জড়িত ছিল বলে স্যাটেলাইট চিত্রে দেখা যায়। বেলজিয়ামের নৌবাহিনীর সাবেক লেফটেন্যান্ট ফ্রেডেরিক ভ্যান লোকারেন জানান, এই ধরনের স্থানান্তর আইনত অবৈধ না হলেও, তা ‘অত্যন্ত অস্বাভাবিক’ এবং সাধারণত নিষেধাজ্ঞা এড়ানোর জন্যই করা হয়।
‘স্কিপার’ সর্বশেষ ৭ নভেম্বর তার অবস্থান ঘোষণা করে ‘নিখোঁজ’ হয়ে যায়। মার্কিন অভিযানে ১০ ডিসেম্বর এর অবস্থান পুনরায় দৃশ্যমান হয়। এই অন্তর্বর্তী সময়ে, ১৮ নভেম্বর স্যাটেলাইট চিত্রগুলো নিশ্চিত করছে যে ট্যাংকারটি ভেনেজুয়েলার হোসে বন্দরে ছিল।
তথ্যসূত্র: বিবিসি

নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে তেল পাচারে যুক্ত থাকার অভিযোগে গত বুধবার মার্কিন বাহিনী ভেনেজুয়েলা উপকূলের কাছাকাছি অভিযান চালিয়ে একটি তেল ট্যাংকার জব্দ করেছে। ট্যাংকারে ভেনেজুয়েলা ও ইরানের তেল বহন করা হচ্ছিল বলে দাবি যুক্তরাষ্ট্রের। এই ঘটনার পর ভেনেজুয়েলার তেল বহনের অভিযোগের আরও ছয়টি জাহাজের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন।
জাহাজ ট্র্যাকিং ডেটা অনুযায়ী, প্রথম ট্যাংকারটির অবস্থান (লোকেশন) গোপন করার বা মিথ্যা তথ্য দেওয়ার দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। মার্কিন অ্যাটর্নি জেনারেল পাম বন্ডি নিশ্চিত করেছেন, জব্দ হওয়া জাহাজটির নাম ‘স্কিপার’। তাঁর দাবি, এটি ভেনেজুয়েলা এবং ইরানের নিষেধাজ্ঞা ভুক্ত অপরিশোধিত তেল পরিবহনে ব্যবহৃত ক্রুড অয়েল ট্যাংকার।
আন্তর্জাতিক সমুদ্র চুক্তি অনুযায়ী, একটি নির্দিষ্ট টনেজের চেয়ে বেশি ওজনের সব জাহাজেই স্বয়ংক্রিয় শনাক্তকরণ ব্যবস্থা (এআইএস) থাকা বাধ্যতামূলক, যা জাহাজের অবস্থান নিয়মিতভাবে সম্প্রচার করে। কিন্তু ‘স্কিপার’-এর গতিবিধির পাবলিক রেকর্ড হয় অসম্পূর্ণ অথবা বিভ্রান্তিকর। জব্দ হওয়ার আগে এটি গত ৭ নভেম্বর থেকে তার অবস্থান প্রকাশ করেনি।
মেরিন অ্যানালিটিক্স ফার্ম কেপ্লার (Kpler) জানিয়েছে, ‘স্কিপার’-এর অবস্থান গোপন করার (স্পুফিং) দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। জানা যায়, ২০২২ সালে যখন জাহাজটি ‘আদিশা’ (Adisa) নামে চলছিল, তখন মার্কিন ট্রেজারি বিভাগ এটিকে একটি ‘আন্তর্জাতিক তেল পাচার নেটওয়ার্কের’ অংশ হিসেবে চিহ্নিত করে প্রথম নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, ‘স্কিপার’ ঘন ঘন ট্র্যাকারকে মিথ্যা তথ্য দিত। যেমন, এআইএস সিস্টেমে জাহাজটি ৭ ও ৮ জুলাই ইরাকের বসরা অয়েল টার্মিনালে অবস্থান দেখালেও, টার্মিনাল রিপোর্টে এর কোনো রেকর্ড ছিল না। উল্টো কেপ্লার জানিয়েছে, সেই সময়েই ট্যাংকারটি ইরানের খার্গ দ্বীপ থেকে অপরিশোধিত তেল বোঝাই করছিল। এ ছাড়া, ২৮ অক্টোবর থেকে ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত জাহাজটি এআইএস-এ সম্পূর্ণ ভুল সংকেত পাঠাচ্ছিল, যা এর আসল অবস্থানকে প্রতিফলিত করেনি।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ‘স্কিপার’ সম্ভবত ‘ডার্ক ফ্লিট’ নামক বিশ্বব্যাপী তেলবাহী ট্যাংকারের একটি নেটওয়ার্কের অংশ। এই নেটওয়ার্কটি মালিকানা, পরিচয় এবং ভ্রমণ ইতিহাস গোপন করে তেলের ওপর জারি করা নিষেধাজ্ঞা এড়াতে কাজ করে।
যদিও ‘স্কিপার’ গায়ানার পতাকা ব্যবহার করে যাত্রা করছিল, কিন্তু গায়ানা সরকার দ্রুত বিবৃতি দিয়ে জানায় যে ২০ বছর বয়সী এই ট্যাংকারটি তাদের দেশে নিবন্ধিত নয় এবং এটি ‘অবৈধভাবে গায়ানার পতাকা ব্যবহার করছিল’। জাহাজটির নিবন্ধিত মালিক হিসেবে মার্শাল দ্বীপপুঞ্জ-ভিত্তিক ‘ট্রাইটন নেভিগেশন করপোরেশন’-এর নাম রয়েছে। তবে, মার্কিন ট্রেজারি বিভাগ জানিয়েছে, এই ট্রাইটন করপোরেশনকে একজন নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্ত রুশ জ্বালানি ধনকুবের ভিক্তর আর্তেমভ তাঁর বৈশ্বিক ‘তেল পাচার নেটওয়ার্ক’ পরিচালনার জন্য ব্যবহার করতেন।
ভেনেজুয়েলার তেল মজুত বিশ্বের বৃহত্তম হলেও, মাদুরোর প্রশাসনকে ক্ষমতাচ্যুত করার চেষ্টায় যুক্তরাষ্ট্র ২০১৯ সাল থেকে দেশটির তেল রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। নিষেধাজ্ঞা এড়াতে ‘স্কিপার’ বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করত। কেপ্লার বিশ্লেষকেরা জানান, ট্যাংকারটি ভেনেজুয়েলার হোসে বন্দর থেকে প্রায় ১ দশমিক ১ মিলিয়ন (১১ লাখ) ব্যারেল মেরে ক্রুড তেল বোঝাই করেছিল এবং গন্তব্য হিসেবে কিউবার নাম উল্লেখ করেছিল।
১১ থেকে ১৩ আগস্টের মধ্যে এটি পূর্বে যাত্রা করে একটি ‘শিপ-টু-শিপ ট্রান্সফার’ সম্পন্ন করে। এটির কার্গো পরে চীনেও ‘ভুয়া ঘোষিত’ হয়েছিল। মার্কিন অভিযানের মাত্র কয়েক দিন আগে, ৭ ডিসেম্বরে এটি ভেনেজুয়েলা উপকূলের কাছে অন্য একটি জাহাজের সঙ্গে স্থানান্তরে জড়িত ছিল বলে স্যাটেলাইট চিত্রে দেখা যায়। বেলজিয়ামের নৌবাহিনীর সাবেক লেফটেন্যান্ট ফ্রেডেরিক ভ্যান লোকারেন জানান, এই ধরনের স্থানান্তর আইনত অবৈধ না হলেও, তা ‘অত্যন্ত অস্বাভাবিক’ এবং সাধারণত নিষেধাজ্ঞা এড়ানোর জন্যই করা হয়।
‘স্কিপার’ সর্বশেষ ৭ নভেম্বর তার অবস্থান ঘোষণা করে ‘নিখোঁজ’ হয়ে যায়। মার্কিন অভিযানে ১০ ডিসেম্বর এর অবস্থান পুনরায় দৃশ্যমান হয়। এই অন্তর্বর্তী সময়ে, ১৮ নভেম্বর স্যাটেলাইট চিত্রগুলো নিশ্চিত করছে যে ট্যাংকারটি ভেনেজুয়েলার হোসে বন্দরে ছিল।
তথ্যসূত্র: বিবিসি

ভারতীয়-আমেরিকানরা সংবাদপত্রের সম্পাদকীয় বোর্ড, থিঙ্কট্যাংক, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতায় নেতৃত্ব দিচ্ছেন। রাজনৈতিক প্রচারণায় অর্থ অনুদান দেন, সিনেটরদের পরামর্শ দেন, নীতিনির্ধারণে ভূমিকা রাখেন। অথচ এক মার্কিন প্রতিনিধি ভারতীয় এমপিদের জানিয়েছেন—তাঁর অফিসে ভারতের বিরুদ্ধে প্রশাসনের পদক্ষেপ নিয়ে কোনো...
০৩ অক্টোবর ২০২৫
ইরানের সঙ্গে নতুন করে বড় ধরনের সামরিক সংঘাতের আশঙ্কা ঘনীভূত হচ্ছে—এমন ইঙ্গিতই দিচ্ছে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক তৎপরতা। দেশটির পার্লামেন্টের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা কমিটির এক গোপন বৈঠকে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা ইরানের সঙ্গে সম্ভাব্য নতুন যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে বিস্তারিত...
৩ ঘণ্টা আগে
পাকিস্তানের কাছে ৬৮ কোটি ৬০ লাখ ডলার মূল্যের উন্নত প্রযুক্তি ও আধুনিক পার্টস বিক্রির অনুমোদন দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এই প্যাকেজটি পাকিস্তানের কাছে থাকা এফ-১৬ যুদ্ধবিমানগুলোর আধুনিকীকরণের জন্য দেওয়া হয়েছে। চির প্রতিদ্বন্দ্বী ভারত–পাকিস্তানের মধ্যে চলমান উত্তেজনার আবহে এই চুক্তি সম্পন্ন হলো।
৫ ঘণ্টা আগে
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই যখন যুক্তরাষ্ট্রে চাকরি সংকট সৃষ্টি করছে, ঠিক তখনই ভারতের ছোট ছোট শহরে বেড়ে চলেছে কর্মসংস্থানের নতুন সুযোগ। এই বিষয়ে নিক্কেই এশিয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে—দক্ষিণ ভারতের কারুর শহরের একটি অফিসে বসে ধারাণি চন্দ্রশেখর যখন কৃত্রিমভাবে তৈরি ছবি শনাক্ত করছেন...
৩ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই যখন যুক্তরাষ্ট্রে চাকরি সংকট সৃষ্টি করছে, ঠিক তখনই ভারতের ছোট ছোট শহরে বেড়ে চলেছে কর্মসংস্থানের নতুন সুযোগ। এই বিষয়ে নিক্কেই এশিয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে—দক্ষিণ ভারতের কারুর শহরের একটি অফিসে বসে ধারাণি চন্দ্রশেখর যখন কৃত্রিমভাবে তৈরি ছবি শনাক্ত করছেন, তখন একই অফিসে বসে সৌম্যা বসরমালিংগম বিভিন্ন ভিডিওর ঘরানা, চরিত্রের মুড ও টোন বিশ্লেষণ করছেন। আসলে তাঁরা দুজনই এমন এক শিল্পের কর্মী, যে শিল্প বিশ্বজুড়ে এআই মডেল প্রশিক্ষণের জন্য বিপুল পরিমাণ তথ্য ছাঁকছে ও বিশ্লেষণ করছে।
এই কাজকে প্রযুক্তি জগতে বলা হয় ডেটা অ্যানোটেশন—যেখানে মানুষ ছবি, ভিডিও ও টেক্সট ডেটাকে ট্যাগ করে এআইয়ের শেখার উপযোগী করে তোলে। ভারত এখন এই শিল্পের সবচেয়ে বড় বাজারগুলোর একটি। ২০২০ সালে যেখানে মাত্র ৭০ হাজার মানুষ এই খাতে কাজ করত, ২০৩০ সালের মধ্যে তা পৌঁছাতে পারে ১০ লাখে। একই সময়ে এই বাজারের মূল্য বেড়ে ৭ বিলিয়ন ডলার হতে পরে বলে জানিয়েছে ভারতের সফটওয়্যার শিল্প সংস্থা নাস্কম।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের চিত্রটি সম্পূর্ণ ভিন্ন। সেখানে শুধুমাত্র নভেম্বর মাসেই ৭১ হাজারের বেশি মানুষ চাকরি হারিয়েছেন। এর মধ্যে ৬ হাজারের বেশি চাকরি হারানোর কারণ হিসেবে সরাসরি এআইকে দায়ী করা হয়েছে। ২০২৩ সাল থেকে আজ পর্যন্ত আমেরিকায় এআই–সম্পর্কিত ছাঁটাইয়ের সংখ্যা ৭১ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। বড় বড় প্রযুক্তি কোম্পানি—মাইক্রোসফট, গুগল, অ্যামাজন, মেটা—সবাই কর্মী ছাঁটাই করছে। ফলে এআইকে ঘিরে উদ্বেগ বাড়ছে প্রতিনিয়ত।
কিন্তু একই এআই যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থাগুলোর আউটসোর্সিং বাড়িয়ে দিচ্ছে এশিয়ায়। এর ফলে পাকিস্তান, ভারত ও ফিলিপাইনে আউটসোর্সিং কর্মীসংখ্যা গত পাঁচ বছরে ৩২ শতাংশ বেড়েছে। বিশেষজ্ঞরা দাবি করছেন—দক্ষিণ এশিয়ার কম খরচের দক্ষ জনবলকে এআই সহজে প্রতিস্থাপন করতে পারবে না। স্ট্যানফোর্ডের অর্থনীতিবিদ নিল মাহোনি বলেন, ‘যে কাজ খুব সহজ এবং ব্যয়বহুল—সেই কাজই প্রথমে এআই দিয়ে প্রতিস্থাপিত হয়। এশিয়ার শ্রমবাজার এখনো খুব সস্তা।’
বিশ্লেষকেরা বলছেন, ভবিষ্যতে এআই–চালিত ‘হিউম্যান ইন দ্য লুপ’ মডেল আরও গুরুত্বপূর্ণ হবে—যেখানে মানুষ এআইয়ের ভুল সংশোধন করবে। উদাহরণ হিসেবে ভারতের নেক্সটওয়েলথ কোম্পানির কাজ উল্লেখযোগ্য। তারা এমন দোকানে নজরদারি করে যেখানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে ক্যাশিয়ার ছাড়াই কেনাকাটা করা যায়। কোনো ভুল হলে কয়েক সেকেন্ডেই মানুষ যাচাই করে তা সংশোধন করে।
এই সব কাজ ভারতের ছোট শহরের যুবকদের জন্য বড় সুযোগ তৈরি করেছে। কারুর শহরের সেই কর্মী ধারাণি চন্দ্রশেখর জানান, পারিবারিক কারণে তিনি কখনো বড় শহরে চাকরি খোঁজেননি, কিন্তু এখন তিনি প্রযুক্তি খাতে কাজ করতে পারছেন নিজের শহরেই। অন্যদিকে তাঁর সহকর্মী ধনাসীলন পলানিয়াপ্পান এই শিল্পে কাজ করে জীবনে প্রথমবারের মতো বিদেশযাত্রার সুযোগ পেয়েছেন। সম্প্রতি তিনি চীনের কিংদাও শহরে গিয়েছিলেন ক্লায়েন্ট মিটিংয়ে।
এআই যতই উন্নত হোক, শিল্প বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডেটা অ্যানোটেশনের প্রয়োজন কখনোই শেষ হবে না। কারণ বাস্তব জগতে কাজ করতে গেলে এআইকে সব সময় মানুষের সুপারভিশনের প্রয়োজন হবে। এমনকি মেটার মতো কোম্পানি যখন স্কেল এআই–এ ১৪.৩ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করে, তখন তা প্রমাণ করে এই ক্ষেত্রের গুরুত্ব কমছে না।
তবুও অনেক কর্মীর মনের ভেতর প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে—এআই কি একদিন আমাদের চাকরি খেয়ে ফেলবে? কারুরের তরুণ নবিন বলেন, ‘আমরা প্রযুক্তির যুগের সবচেয়ে বড় ঢেউয়ের সঙ্গে কাজ করছি। কিন্তু মনে মনে একটা ভয় তো থেকেই যায়—এআই যেন আমাদের জায়গা দখল না করে।’

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই যখন যুক্তরাষ্ট্রে চাকরি সংকট সৃষ্টি করছে, ঠিক তখনই ভারতের ছোট ছোট শহরে বেড়ে চলেছে কর্মসংস্থানের নতুন সুযোগ। এই বিষয়ে নিক্কেই এশিয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে—দক্ষিণ ভারতের কারুর শহরের একটি অফিসে বসে ধারাণি চন্দ্রশেখর যখন কৃত্রিমভাবে তৈরি ছবি শনাক্ত করছেন, তখন একই অফিসে বসে সৌম্যা বসরমালিংগম বিভিন্ন ভিডিওর ঘরানা, চরিত্রের মুড ও টোন বিশ্লেষণ করছেন। আসলে তাঁরা দুজনই এমন এক শিল্পের কর্মী, যে শিল্প বিশ্বজুড়ে এআই মডেল প্রশিক্ষণের জন্য বিপুল পরিমাণ তথ্য ছাঁকছে ও বিশ্লেষণ করছে।
এই কাজকে প্রযুক্তি জগতে বলা হয় ডেটা অ্যানোটেশন—যেখানে মানুষ ছবি, ভিডিও ও টেক্সট ডেটাকে ট্যাগ করে এআইয়ের শেখার উপযোগী করে তোলে। ভারত এখন এই শিল্পের সবচেয়ে বড় বাজারগুলোর একটি। ২০২০ সালে যেখানে মাত্র ৭০ হাজার মানুষ এই খাতে কাজ করত, ২০৩০ সালের মধ্যে তা পৌঁছাতে পারে ১০ লাখে। একই সময়ে এই বাজারের মূল্য বেড়ে ৭ বিলিয়ন ডলার হতে পরে বলে জানিয়েছে ভারতের সফটওয়্যার শিল্প সংস্থা নাস্কম।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের চিত্রটি সম্পূর্ণ ভিন্ন। সেখানে শুধুমাত্র নভেম্বর মাসেই ৭১ হাজারের বেশি মানুষ চাকরি হারিয়েছেন। এর মধ্যে ৬ হাজারের বেশি চাকরি হারানোর কারণ হিসেবে সরাসরি এআইকে দায়ী করা হয়েছে। ২০২৩ সাল থেকে আজ পর্যন্ত আমেরিকায় এআই–সম্পর্কিত ছাঁটাইয়ের সংখ্যা ৭১ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। বড় বড় প্রযুক্তি কোম্পানি—মাইক্রোসফট, গুগল, অ্যামাজন, মেটা—সবাই কর্মী ছাঁটাই করছে। ফলে এআইকে ঘিরে উদ্বেগ বাড়ছে প্রতিনিয়ত।
কিন্তু একই এআই যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থাগুলোর আউটসোর্সিং বাড়িয়ে দিচ্ছে এশিয়ায়। এর ফলে পাকিস্তান, ভারত ও ফিলিপাইনে আউটসোর্সিং কর্মীসংখ্যা গত পাঁচ বছরে ৩২ শতাংশ বেড়েছে। বিশেষজ্ঞরা দাবি করছেন—দক্ষিণ এশিয়ার কম খরচের দক্ষ জনবলকে এআই সহজে প্রতিস্থাপন করতে পারবে না। স্ট্যানফোর্ডের অর্থনীতিবিদ নিল মাহোনি বলেন, ‘যে কাজ খুব সহজ এবং ব্যয়বহুল—সেই কাজই প্রথমে এআই দিয়ে প্রতিস্থাপিত হয়। এশিয়ার শ্রমবাজার এখনো খুব সস্তা।’
বিশ্লেষকেরা বলছেন, ভবিষ্যতে এআই–চালিত ‘হিউম্যান ইন দ্য লুপ’ মডেল আরও গুরুত্বপূর্ণ হবে—যেখানে মানুষ এআইয়ের ভুল সংশোধন করবে। উদাহরণ হিসেবে ভারতের নেক্সটওয়েলথ কোম্পানির কাজ উল্লেখযোগ্য। তারা এমন দোকানে নজরদারি করে যেখানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে ক্যাশিয়ার ছাড়াই কেনাকাটা করা যায়। কোনো ভুল হলে কয়েক সেকেন্ডেই মানুষ যাচাই করে তা সংশোধন করে।
এই সব কাজ ভারতের ছোট শহরের যুবকদের জন্য বড় সুযোগ তৈরি করেছে। কারুর শহরের সেই কর্মী ধারাণি চন্দ্রশেখর জানান, পারিবারিক কারণে তিনি কখনো বড় শহরে চাকরি খোঁজেননি, কিন্তু এখন তিনি প্রযুক্তি খাতে কাজ করতে পারছেন নিজের শহরেই। অন্যদিকে তাঁর সহকর্মী ধনাসীলন পলানিয়াপ্পান এই শিল্পে কাজ করে জীবনে প্রথমবারের মতো বিদেশযাত্রার সুযোগ পেয়েছেন। সম্প্রতি তিনি চীনের কিংদাও শহরে গিয়েছিলেন ক্লায়েন্ট মিটিংয়ে।
এআই যতই উন্নত হোক, শিল্প বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডেটা অ্যানোটেশনের প্রয়োজন কখনোই শেষ হবে না। কারণ বাস্তব জগতে কাজ করতে গেলে এআইকে সব সময় মানুষের সুপারভিশনের প্রয়োজন হবে। এমনকি মেটার মতো কোম্পানি যখন স্কেল এআই–এ ১৪.৩ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করে, তখন তা প্রমাণ করে এই ক্ষেত্রের গুরুত্ব কমছে না।
তবুও অনেক কর্মীর মনের ভেতর প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে—এআই কি একদিন আমাদের চাকরি খেয়ে ফেলবে? কারুরের তরুণ নবিন বলেন, ‘আমরা প্রযুক্তির যুগের সবচেয়ে বড় ঢেউয়ের সঙ্গে কাজ করছি। কিন্তু মনে মনে একটা ভয় তো থেকেই যায়—এআই যেন আমাদের জায়গা দখল না করে।’

ভারতীয়-আমেরিকানরা সংবাদপত্রের সম্পাদকীয় বোর্ড, থিঙ্কট্যাংক, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতায় নেতৃত্ব দিচ্ছেন। রাজনৈতিক প্রচারণায় অর্থ অনুদান দেন, সিনেটরদের পরামর্শ দেন, নীতিনির্ধারণে ভূমিকা রাখেন। অথচ এক মার্কিন প্রতিনিধি ভারতীয় এমপিদের জানিয়েছেন—তাঁর অফিসে ভারতের বিরুদ্ধে প্রশাসনের পদক্ষেপ নিয়ে কোনো...
০৩ অক্টোবর ২০২৫
ইরানের সঙ্গে নতুন করে বড় ধরনের সামরিক সংঘাতের আশঙ্কা ঘনীভূত হচ্ছে—এমন ইঙ্গিতই দিচ্ছে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক তৎপরতা। দেশটির পার্লামেন্টের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা কমিটির এক গোপন বৈঠকে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা ইরানের সঙ্গে সম্ভাব্য নতুন যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে বিস্তারিত...
৩ ঘণ্টা আগে
পাকিস্তানের কাছে ৬৮ কোটি ৬০ লাখ ডলার মূল্যের উন্নত প্রযুক্তি ও আধুনিক পার্টস বিক্রির অনুমোদন দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এই প্যাকেজটি পাকিস্তানের কাছে থাকা এফ-১৬ যুদ্ধবিমানগুলোর আধুনিকীকরণের জন্য দেওয়া হয়েছে। চির প্রতিদ্বন্দ্বী ভারত–পাকিস্তানের মধ্যে চলমান উত্তেজনার আবহে এই চুক্তি সম্পন্ন হলো।
৫ ঘণ্টা আগে
আন্তর্জাতিক সমুদ্র চুক্তি অনুযায়ী, একটি নির্দিষ্ট টনেজের চেয়ে বেশি ওজনের সব জাহাজেই স্বয়ংক্রিয় শনাক্তকরণ ব্যবস্থা (এআইএস) থাকা বাধ্যতামূলক, যা জাহাজের অবস্থান নিয়মিতভাবে সম্প্রচার করে। কিন্তু ‘স্কিপার’-এর গতিবিধির পাবলিক রেকর্ড হয় অসম্পূর্ণ অথবা বিভ্রান্তিকর।
২ দিন আগে