Ajker Patrika

ভাগ্যিস!

সম্পাদকীয়
ভাগ্যিস!

বর্তমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই। চাঁদাবাজির এক নীরব বিপ্লব ঘটে গেছে। আগে যারা চাঁদাবাজি করত, তারা সরে যেতে বাধ্য হওয়ার পর সে শূন্যস্থান পূরণ করেছে অন্য সংগঠনগুলোর চাঁদাবাজেরা। আজকের পত্রিকার প্রথম পাতায় যে খবরটি প্রকাশিত হয়েছে ২০ সেপ্টেম্বর, তাতে দেখা যাচ্ছে চাঁদাবাজিতে আনকোরা নতুন মুখই ৫৭ শতাংশ!

এতে বিস্মিত হবেন যিনি, তিনি বর্তমান সময়টির দিকে গভীর নজর রাখেননি। মূলত কিছু মানুষ যেমন হত্যা মামলা খেলায় শরিক হয়েছে, তেমনি কিছু মানুষ মবের ভয় দেখিয়ে লুটেপুটে খাওয়ার খেলায়ও মেতেছে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা দুটো ঘটনা ঘটেছে ঢাকা শহরে। একদল মানুষের মনে হয়েছে গুলশানের নিকেতনে রাজউকের ২৭ কাঠা জমি অবলীলায় দখল করে নেওয়া যায়। রাজউকের প্রতিনিধিদের তারা হুমকি দিয়েছে। পুলিশ তাদের চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে।

ভাগ্যিস, গ্রেপ্তার করেছে, নইলে এরা এখানে আধিপত্য বিস্তার করে হজম করে নিতে পারত জমি! একইভাবে কয়েক মাস আগে লালবাগে ঘটেছে আরেক ঘটনা। ইশপের গল্পের সঙ্গে তার রয়েছে মিল। গল্পটা বলা যাক। এক মেষশাবক ঝরনার পানি খাচ্ছিল ঝরনার একেবারে নিচের দিকে এসে। বাঘ পানি খাচ্ছিল ওপরের দিকে। বাঘের ইচ্ছে হলো সে এই মেষশাবককে খাবে। তাই এসে বলল, ‘এই তুই আমার জল ঘোলা করছিস কেন?’ মেষশাবক বলল, ‘আপনি তো ওপরের পানি খাচ্ছিলেন।’ বাঘ বলল, ‘সে যা-ই হোক, গত বছর তুই আমাকে অপমান করেছিলি।’ মেষশাবক বলল, ‘আমি তো গত বছর মায়ের পেটে ছিলাম।’ ‘তাহলে তোর বাবা জল ঘোলা করেছিল।’ বলে বাঘটি মেষশাবককে খেয়ে ফেলল। শঠের ছলের অভাব হয় না। লালবাগেও ঠিক একই ঘটনা ঘটেছে। একজন ইভেন্ট ম্যানেজারের কাছে গিয়ে একজন নব্য মাস্তান বলেছেন, একসময় এই ইভেন্ট ম্যানেজারের ভাই নব্য মাস্তানকে অনেক জ্বালাতন করেছে। তাই এই এলাকায় টিকে থাকতে হলে ইভেন্ট ম্যানেজারকে মাসে এক লাখ টাকা করে দিতে হবে। এ যেন মামাবাড়ির আবদার। ভাগ্যিস, সেনাসদস্যরা এই নব্য মাস্তানকে গ্রেপ্তার করেছে!

প্রতিবেদনে উল্লিখিত দুটি ঘটনা সম্পর্কে ‘ভাগ্যিস’ শব্দটি ব্যবহার করা গেল। কিন্তু এ ধরনের কত ঘটনা আছে, যা পুলিশ বা সেনাবাহিনীর চোখের আড়ালে থেকে যায়, তা কে জানে। ঢাকা এবং ঢাকার বাইরে যারা ইচ্ছেমতো মব সৃষ্টি করছে, তাদের রাজনৈতিক পরিচয়গুলোও বৈচিত্র্যময়। প্রতিবেদনে উল্লিখিত দুই মাস্তানই বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত বলে জানানো হয়েছে। সন্দেহ নেই, গত বছর পটপরিবর্তনের পর বিএনপির বহু নেতা-কর্মীই চাঁদাবাজিতে যুক্ত হয়েছে, কিন্তু এই নব্য চাঁদাবাজদের তালিকায় অন্যান্য দলের চাঁদাবাজেরাও যে আছে, সেটাও মনে রাখতে হবে। সারা দেশেই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের একটা অংশ মব সৃষ্টি করে যে চাঁদাবাজি করেছে, সে খবরও পত্রপত্রিকায় এসেছে।

দুঃখ হয়, রাজনীতির মাঠটিকে চাঁদাবাজমুক্ত করার যে সুযোগ পাওয়া গিয়েছিল, তা আমরা হেলায় হারাতে বসেছি!

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত