ফিয়াদ নওশাদ ইয়ামিন
বিশ্বরাজনীতি আজ এক পরিবর্তনশীল মঞ্চ। প্রতিনিয়ত নতুন প্রজন্ম সামনে আসছে, পুরোনো শক্তি বিদায় নিচ্ছে, আর নতুন রূপরেখা আঁকছে সময়ের আবহ। সেই মঞ্চে আজকের দিনে সামনের সারির নেতৃত্বে উঠে এসেছে ‘জেন-জি’। তাদের হাতে প্ল্যাকার্ড, কণ্ঠে প্রতিবাদের ভাষা, চোখে জ্বলন্ত স্বপ্ন। দেখে মনে হয়, তারাই যেন ইতিহাস লিখছে। প্রতিদিন আন্দোলনের নতুন নাম, নতুন স্লোগান, কখনো ভাঙচুরের উত্তাপ, আবার কখনো উদ্দীপ্ত মিছিল—সবই তাদের উপস্থিতির পরিচয়। কিন্তু প্রশ্ন থাকে, ইতিহাস কি কেবল আবেগে লেখা হয়, নাকি এর আড়ালে থাকে কোনো সুপরিকল্পিত শক্তির ছায়া?
আন্দোলনের নামে বিপ্লবের স্বপ্ন ‘জেন-জি’ প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করে, তবু বাস্তবতায় সেই স্বপ্ন অনেক সময় জটিলতায় ঘেরা থাকে। শ্রীলঙ্কার আন্দোলন, বাংলাদেশের রাস্তায় অগ্নিগর্ভ মিছিল, ইন্দোনেশিয়ার সংস্কার আন্দোলন কিংবা সাম্প্রতিক নেপালের সরকার পতনের ঘটনা—সবখানেই দেখা যায়, সামনের কণ্ঠস্বর জোরালো হলেও তার পেছনে থাকে একটি পরিকল্পিত রূপরেখা। ইতিহাস কখনোই শুধু সামনে দাঁড়ানো উত্তেজিতদের নিয়ে লেখা হয়নি; বরং আড়ালে থেকেও নানা শক্তি দিকনির্দেশ দিয়েছে।
দক্ষিণ এশিয়ার রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা বলে, পাকিস্তানের গণ-আন্দোলন থেকে শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ, ভারতে ইন্দিরা গান্ধীর উত্থান, পাকিস্তানে ইমরান খানের জনপ্রিয়তা কিংবা শ্রীলঙ্কায় রাজনৈতিক পতন এসব ঘটনা কেবল সামনের সারির তর্জন-গর্জনে সীমাবদ্ধ ছিল না। এগুলোর ভেতরে ছিল কৌশল, সংগঠন, সময়োপযোগী পরিকল্পনা এবং জনগণের শক্তিকে এক জায়গায় নিয়ে আসার সৃজনশীলতা।
তবে কি ‘জেন-জি’ প্রজন্ম আন্দোলনের সম্মুখভাগে দাঁড়ালেও তাদের কণ্ঠস্বর সব সময় নিখুঁতভাবে স্বাধীন থাকে? ইতিহাস বলে, অনেক সময় সামনের সারির মুখপাত্রদের পেছনে থাকে অদৃশ্য পরিকল্পনা, ছায়াশক্তি কিংবা সুপরিকল্পিত কৌশল। জুলাই বিপ্লবের এক বছরের বেশি সময় হয়ে গেলেও জেন-জি আর সাধারণ জনগণ কি নেতাদের ডাকে তেমন একটা সাড়া দিচ্ছে?
বাংলাদেশের সাম্প্রতিক আন্দোলনেও দেখা গেছে, রাস্তার মিছিল, কোর্টে আইনি পদক্ষেপ, মিডিয়ার প্রচারণা—এসবই যেন ধারাবাহিক আন্দোলনের অংশ। ফলে প্রশ্ন জাগে, ইতিহাস কি কেবল সামনের স্লোগানে লেখা হয়, নাকি আড়ালের সেই শক্তিই নাট্যকার, আর ‘জেন-জি’ প্রজন্ম কেবল দৃশ্যমান মুখ?
এই বাস্তবতার আরেকটি দিক হলো—আন্দোলনের পর ক্ষমতায় আসা রাজনৈতিক শক্তি অনেক সময় গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করতে ব্যর্থ হয়। অতীতে বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশনকে স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দেওয়া হয়নি, বিচার বিভাগের পূর্ণ স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠিত হয়নি, সংবাদপত্রের স্বাধীনতাও হুমকির মুখে। এই অবস্থার কি কোনো পরিবর্তন হয়েছে? গণতন্ত্র এখনো কেবল ক্ষমতায় পৌঁছানোর সিঁড়ি হয়ে আছে, অথচ এর প্রকৃত উদ্দেশ্য হলো নাগরিকের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠা।
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প এখনো প্রবল। অথচ নেপালের জনগণ ঐক্যবদ্ধ হয়ে সরকারের পতন ঘটিয়ে দেখিয়েছে যে, জনশক্তি সঠিক নেতৃত্বে রূপান্তরিত হলে কোনো শক্তিই অজেয় নয়। একইভাবে শ্রীলঙ্কা কিংবা বাংলাদেশে জনগণ একত্র হলে সরকারের পতন ঘটানো সম্ভব হয়েছে।
‘জেন-জি’ প্রজন্মের ইতিবাচক ভূমিকা অস্বীকার করা যায় না। তারা প্রচলিত রীতির বাইরে গিয়ে সাহসী প্রশ্ন তুলেছে, নতুন চিন্তার আলো জ্বালিয়েছে। তারা প্রমাণ করেছে যে তরুণ প্রজন্ম শুধু দর্শক নয়, তারা সক্রিয় অংশগ্রহণকারী। তবে দীর্ঘস্থায়ী পরিবর্তনের জন্য শুধু আবেগ বা স্লোগান যথেষ্ট নয়; প্রয়োজন সংগঠিত রূপরেখা, দক্ষ নেতৃত্ব এবং গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করার অকৃত্রিম সদিচ্ছা।
রাজনীতির ইতিহাস তাই আমাদের শেখায় রাজপথে ভিড় তৈরি করা সহজ, কিন্তু রাষ্ট্রকে সুসংহত রাখা অনেক কঠিন। জেন-জি প্রজন্মকে তাই শুধু আন্দোলনের মুখপাত্র নয়, ভবিষ্যতের রাষ্ট্র গঠনেও ইতিবাচকভাবে অংশ নেওয়ার চেষ্টা করতে হবে। আজকের প্রশ্ন একটাই—তারা কি কেবল সামনের কণ্ঠস্বর, নাকি আড়ালের শক্তির ছায়া পেরিয়ে আগামী দিনের ইতিহাসের প্রকৃত নির্মাতা? সময়ই তার উত্তর দেবে।
লেখক: শিক্ষার্থী, কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ
বিশ্বরাজনীতি আজ এক পরিবর্তনশীল মঞ্চ। প্রতিনিয়ত নতুন প্রজন্ম সামনে আসছে, পুরোনো শক্তি বিদায় নিচ্ছে, আর নতুন রূপরেখা আঁকছে সময়ের আবহ। সেই মঞ্চে আজকের দিনে সামনের সারির নেতৃত্বে উঠে এসেছে ‘জেন-জি’। তাদের হাতে প্ল্যাকার্ড, কণ্ঠে প্রতিবাদের ভাষা, চোখে জ্বলন্ত স্বপ্ন। দেখে মনে হয়, তারাই যেন ইতিহাস লিখছে। প্রতিদিন আন্দোলনের নতুন নাম, নতুন স্লোগান, কখনো ভাঙচুরের উত্তাপ, আবার কখনো উদ্দীপ্ত মিছিল—সবই তাদের উপস্থিতির পরিচয়। কিন্তু প্রশ্ন থাকে, ইতিহাস কি কেবল আবেগে লেখা হয়, নাকি এর আড়ালে থাকে কোনো সুপরিকল্পিত শক্তির ছায়া?
আন্দোলনের নামে বিপ্লবের স্বপ্ন ‘জেন-জি’ প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করে, তবু বাস্তবতায় সেই স্বপ্ন অনেক সময় জটিলতায় ঘেরা থাকে। শ্রীলঙ্কার আন্দোলন, বাংলাদেশের রাস্তায় অগ্নিগর্ভ মিছিল, ইন্দোনেশিয়ার সংস্কার আন্দোলন কিংবা সাম্প্রতিক নেপালের সরকার পতনের ঘটনা—সবখানেই দেখা যায়, সামনের কণ্ঠস্বর জোরালো হলেও তার পেছনে থাকে একটি পরিকল্পিত রূপরেখা। ইতিহাস কখনোই শুধু সামনে দাঁড়ানো উত্তেজিতদের নিয়ে লেখা হয়নি; বরং আড়ালে থেকেও নানা শক্তি দিকনির্দেশ দিয়েছে।
দক্ষিণ এশিয়ার রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা বলে, পাকিস্তানের গণ-আন্দোলন থেকে শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ, ভারতে ইন্দিরা গান্ধীর উত্থান, পাকিস্তানে ইমরান খানের জনপ্রিয়তা কিংবা শ্রীলঙ্কায় রাজনৈতিক পতন এসব ঘটনা কেবল সামনের সারির তর্জন-গর্জনে সীমাবদ্ধ ছিল না। এগুলোর ভেতরে ছিল কৌশল, সংগঠন, সময়োপযোগী পরিকল্পনা এবং জনগণের শক্তিকে এক জায়গায় নিয়ে আসার সৃজনশীলতা।
তবে কি ‘জেন-জি’ প্রজন্ম আন্দোলনের সম্মুখভাগে দাঁড়ালেও তাদের কণ্ঠস্বর সব সময় নিখুঁতভাবে স্বাধীন থাকে? ইতিহাস বলে, অনেক সময় সামনের সারির মুখপাত্রদের পেছনে থাকে অদৃশ্য পরিকল্পনা, ছায়াশক্তি কিংবা সুপরিকল্পিত কৌশল। জুলাই বিপ্লবের এক বছরের বেশি সময় হয়ে গেলেও জেন-জি আর সাধারণ জনগণ কি নেতাদের ডাকে তেমন একটা সাড়া দিচ্ছে?
বাংলাদেশের সাম্প্রতিক আন্দোলনেও দেখা গেছে, রাস্তার মিছিল, কোর্টে আইনি পদক্ষেপ, মিডিয়ার প্রচারণা—এসবই যেন ধারাবাহিক আন্দোলনের অংশ। ফলে প্রশ্ন জাগে, ইতিহাস কি কেবল সামনের স্লোগানে লেখা হয়, নাকি আড়ালের সেই শক্তিই নাট্যকার, আর ‘জেন-জি’ প্রজন্ম কেবল দৃশ্যমান মুখ?
এই বাস্তবতার আরেকটি দিক হলো—আন্দোলনের পর ক্ষমতায় আসা রাজনৈতিক শক্তি অনেক সময় গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করতে ব্যর্থ হয়। অতীতে বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশনকে স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দেওয়া হয়নি, বিচার বিভাগের পূর্ণ স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠিত হয়নি, সংবাদপত্রের স্বাধীনতাও হুমকির মুখে। এই অবস্থার কি কোনো পরিবর্তন হয়েছে? গণতন্ত্র এখনো কেবল ক্ষমতায় পৌঁছানোর সিঁড়ি হয়ে আছে, অথচ এর প্রকৃত উদ্দেশ্য হলো নাগরিকের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠা।
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প এখনো প্রবল। অথচ নেপালের জনগণ ঐক্যবদ্ধ হয়ে সরকারের পতন ঘটিয়ে দেখিয়েছে যে, জনশক্তি সঠিক নেতৃত্বে রূপান্তরিত হলে কোনো শক্তিই অজেয় নয়। একইভাবে শ্রীলঙ্কা কিংবা বাংলাদেশে জনগণ একত্র হলে সরকারের পতন ঘটানো সম্ভব হয়েছে।
‘জেন-জি’ প্রজন্মের ইতিবাচক ভূমিকা অস্বীকার করা যায় না। তারা প্রচলিত রীতির বাইরে গিয়ে সাহসী প্রশ্ন তুলেছে, নতুন চিন্তার আলো জ্বালিয়েছে। তারা প্রমাণ করেছে যে তরুণ প্রজন্ম শুধু দর্শক নয়, তারা সক্রিয় অংশগ্রহণকারী। তবে দীর্ঘস্থায়ী পরিবর্তনের জন্য শুধু আবেগ বা স্লোগান যথেষ্ট নয়; প্রয়োজন সংগঠিত রূপরেখা, দক্ষ নেতৃত্ব এবং গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করার অকৃত্রিম সদিচ্ছা।
রাজনীতির ইতিহাস তাই আমাদের শেখায় রাজপথে ভিড় তৈরি করা সহজ, কিন্তু রাষ্ট্রকে সুসংহত রাখা অনেক কঠিন। জেন-জি প্রজন্মকে তাই শুধু আন্দোলনের মুখপাত্র নয়, ভবিষ্যতের রাষ্ট্র গঠনেও ইতিবাচকভাবে অংশ নেওয়ার চেষ্টা করতে হবে। আজকের প্রশ্ন একটাই—তারা কি কেবল সামনের কণ্ঠস্বর, নাকি আড়ালের শক্তির ছায়া পেরিয়ে আগামী দিনের ইতিহাসের প্রকৃত নির্মাতা? সময়ই তার উত্তর দেবে।
লেখক: শিক্ষার্থী, কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ
ইমতিয়াজ আহমেদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক অধ্যাপক। তিনি আন্তর্জাতিক সম্পর্কবিষয়ক বিশেষজ্ঞ ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক। বর্তমানে তিনি ‘অলটারনেটিভস’ সংগঠনের নির্বাহী পরিচালক। সাম্প্রতিক নেপালের গণ-অভ্যুত্থান নিয়ে...
১ দিন আগেউন্নত দেশগুলোর অতিরিক্ত কার্বন নিঃসরণ এবং জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহারের কারণে বিশ্বে জলবায়ুর পরিবর্তন ঘটছে। ফলে পৃথিবীর পানিচক্রের স্বাভাবিক ছন্দ হারিয়ে যাচ্ছে। আজকের পত্রিকায় ১৯ সেপ্টেম্বর এ নিয়ে বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার (ডব্লিউএমও) একটি রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে।
১ দিন আগেরাজনৈতিক অঙ্গনে এবং জনপরিসরে কিছুটা সন্দেহ-সংশয় থাকলেও অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে বারবারই নিশ্চিত করা হয়েছে যে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে দেশে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এই সেদিনও ইউরোপীয় ইউনিয়নের একটি প্রতিনিধিদলকে প্রধান উপদেষ্টা বললেন, ফেব্রুয়ারিতে উৎসবমুখর পরিবেশে নির্বাচন...
২ দিন আগেআমি আমার দুই যুগের বেশি সময়ের অভিজ্ঞতার আলোকে বাংলাদেশের জন্য দক্ষতা অর্জনের শীর্ষ খাতগুলো চিহ্নিত করতে পারি। যার প্রথমেই জোর দেব কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) বিষয়ক কোর্স চালু করার ওপর। এআইয়ের কারণে সৃষ্ট ধাক্কা সামলাতে শিক্ষার্থীদের এআইয়ের সর্বোচ্চ ব্যবহারই শিখতে হবে সবার আগে। এ ছাড়া অগ্রাধিকার...
২ দিন আগে