Ajker Patrika

মেরুদণ্ড

সম্পাদকীয়
মেরুদণ্ড

শিক্ষকেরা আত্মসাৎ করছেন অর্থ, একে অন্যকে সহ্য করতে পারছেন না বলে প্রধান শিক্ষককে নিষিদ্ধ করছেন স্কুলে–এ রকম খবর অলক্ষ্যেই থেকে যায়। খুব একটা মূল্য পায় না। হাজার কাজের ভিড়ে এসব বিষয় নিয়ে ভাবতে যাবে কে?

আজকের পত্রিকার বরিশাল সংস্করণের পাতা ওলটাতে গিয়ে চোখে পড়ল খবর দুটি। একটি খবরের জন্ম মুলাদিতে, অন্যটির মঠবাড়িয়ায়। একটিতে স্কুল সভাপতির স্বাক্ষর জাল করে প্রধান শিক্ষক অর্থ আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। অন্যটিতে প্রধান শিক্ষক স্কুলে ঢুকতে পারছেন না সহকারী প্রধান শিক্ষকসহ কিছুসংখ্যক শিক্ষকের হুমকিতে। আমরা স্কুল ও শিক্ষকদের নাম উচ্চারণ করলাম না। কে দোষী, কে নির্দোষ না জেনে সম্পাদকীয় স্তম্ভে নাম উল্লেখ না করাই সংগত।

আমাদের দেশে টাকা আত্মসাতের ঘটনা খুব বিরল কোনো খবর নয়। হরহামেশাই সে রকম ঘটনা ঘটছে নানাভাবে। এ মুহূর্তে অর্থ আত্মসাতের দিক থেকে আলোচনায় আছে ই-অরেঞ্জ, সাধারণ মানুষের সরলতা কিংবা লোভের সুযোগ নিয়ে এরা টাকার পাহাড় গড়ে তুলেছে। শিক্ষকদের নিয়ে এ ধরনের খবরের গুরুত্ব অন্যদিক থেকে।

শিক্ষাব্যবস্থা আর সব ব্যবস্থা থেকে একটু আলাদা। এখানে গুরু-শিষ্যের সম্পর্ক হয়। শিক্ষকেরাই অনেকাংশে গড়ে তোলেন শিক্ষার্থীর ভাবনার জগৎ। শিক্ষার্থীর সামনে দাঁড়াতে হলে শিক্ষককেও প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিতে হয়। শিক্ষার্থীর একটি যৌক্তিক মন তৈরি করে দিতে না পারলে শিক্ষকের সব পরিশ্রমই ব্যর্থ হয়। সেই ব্যর্থতার দিকেই আমরা ধাবিত হচ্ছি।

শিক্ষকদের নিয়ে দুর্নীতির প্রশ্ন ওঠায় সবচেয়ে ক্ষতি হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। তারা সততা, ন্যায়নীতির প্রতি আস্থা রাখতে পারছে না। আমরা বিভিন্ন স্কুলের গভর্নিং বডির নাম করে হওয়া দুর্নীতির খবর মাঝে মাঝেই দেখতে পাই। নামীদামি স্কুলে অর্থের বিনিময়ে ভর্তি করানোর একটা ব্যবসা গড়ে উঠেছে বলেও অভিযোগ পাওয়া যায়। স্কুলের নাম উল্লেখ না করেই কয়েকটি প্রবণতার কথা বলা যায়। একটি হচ্ছে, শিক্ষকেরা তাঁদেরই শিক্ষক পদে নিয়োগ দেন, যাঁরা তাঁদের আত্মীয়। স্বজনপ্রীতি, দুর্নীতিও নিয়োগ-বাণিজ্যের এই রমরমা বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই দেখা যায়। অর্থ আত্মসাতের জন্য সাময়িক বরখাস্ত ও বিভাগীয় মামলা হয়েছে, এমন খবর মাঝে মাঝেই দেখা যায়। এমনকি ভালো ফলাফলের জন্য সরকারের দেওয়া এক লাখ টাকা প্রণোদনা-ভাতাও এক স্কুলের শিক্ষক আত্মসাৎ করেছেন বলে খবর বেরিয়েছে। সেকায়েপ-এর (সেকেন্ডারি এডুকেশন কোয়ালিটি অ্যান্ড অ্যাকসেস এনহান্সমেন্ট প্রজেক্ট) উদ্দীপনা পুরস্কারের অর্থ বিতরণেও অনিয়ম করেছেন কোনো একজন প্রধান শিক্ষক, তাঁর বেতন-ভাতা কেন বন্ধ রাখা হবে না, তা জানতে বলা হয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে। ভবন নির্মাণসহ উন্নয়নকাজ মানেই তহবিল তছরুপের অভিযোগ, এটা তো বহুদিন ধরে দেখা যাচ্ছে।

খুব শঙ্কা নিয়ে বলতে হচ্ছে, ‘শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড’ ধরনের আপ্তবাক্যের এখন মূল্য আছে বলে মনে হয় না। যাঁরা জাতির মেরুদণ্ডটি সোজা রাখবেন বলে শিক্ষকতা পেশায় এসেছেন, তাঁরাই নীতিনির্ধারণী প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত হলে নিজেদের মেরুদণ্ড খুইয়ে বসলে জাতির মেরুদণ্ড যে নড়বড়ে হবে–এ তো জানা কথা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত