আবু তাহের খান
২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য কৃষি ও পল্লিঋণের লক্ষ্যমাত্রা ঘোষণা করতে গিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর ১২ আগস্ট এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ‘কৃষিঋণের সবটাই কৃষকের কাছে পৌঁছায় কি না, বাংলাদেশ ব্যাংক তা পর্যালোচনা করছে। আমরা চাই, শতভাগ কৃষিঋণ কৃষকের কাছে যাক। দালালের কাছে যেন না যায়। বাংলাদেশ ব্যাংক এটি তদারকি করবে।’ উল্লেখ্য, ওই সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য ৩৯ হাজার কোটি টাকার কৃষি ও পল্লিঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা ঘোষণা করা হয়েছে।
এখন কথা হচ্ছে, কৃষি ও পল্লিঋণের একটি অংশ প্রকৃত কৃষকের কাছে না পৌঁছাসংক্রান্ত বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নরের উক্ত উপলব্ধি ও প্রয়াসকে ব্যাংকগুলো নিজেদের পেশাগত দায়িত্ব হিসেবে গ্রহণ করলেও ব্যাংককর্মীরা সেটিকে কৃষকের প্রতি মমতাপূর্ণ আচরণ দিয়ে কতটা ধারণ করছেন? জবাবে ব্যাংককর্মীদের পাশাপাশি অনেক বিজ্ঞ নাগরিকও হয়তো বলবেন: ব্যাংকগুলো বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান। ফলে এখানে নির্ধারিত দায়িত্ব পালনের বাইরে গিয়ে কল্যাণমূলক কাজে যুক্ত হওয়া বা এরূপ দৃষ্টিভঙ্গি পোষণের বিষয়টি একেবারেই অপ্রাসঙ্গিক। আর ব্যাংককর্মীদের নিজ নিজ দায়িত্ব বিবরণী ও ঋণ নিয়মাচারের সঙ্গে মিলিয়ে এর বিচার করতে গেলে শেষোক্ত অভিমতটিই হয়তো যথার্থ। কিন্তু বিনয়ের সঙ্গে বলি, যে দেশের কৃষকের একটি বড় অংশ এখনো নিরক্ষর, ঋণলাভের আনুষ্ঠানিকতা প্রতিপালন বিষয়ে যাদের ধারণা একেবারেই অপ্রতুল, নানা কাগজপত্র ও দলিলাদির চাহিদা মিটিয়ে ঋণ গ্রহণের বিষয়ে যারা একেবারেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে না, ঋণলাভের ক্ষেত্রে পদে পদে যেখানে দালাল ও নানা অবাঞ্ছিত শ্রেণির দৌরাত্ম্য এবং বহু ক্ষেত্রে ব্যাংক ও ব্যাংকের বাইরের নানা হয়রানি ও প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলা করে যখন তাকে এ ঋণ পেতে হয়, তখন কৃষকের প্রতি ওই মমতাপূর্ণ আচরণের কোনো বিকল্প আছে কি?
আর তাই কৃষিঋণের শতভাগ প্রকৃত কৃষকের কাছে পৌঁছানোর লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের তত্ত্বাবধান ও পরিধারণ ব্যবস্থাকে জোরদার করার পাশাপাশি ব্যাংককর্মীদের মধ্যে কৃষকের প্রতি মমতা সৃষ্টির লক্ষ্যেও কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া জরুরি বলে মনে করি।
এ প্রসঙ্গে কয়েকটি প্রস্তাব করি। ব্যাংকগুলোর প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যবস্থাপনা ইনস্টিটিউট (বিআইবিএম) ও অন্য যেসব প্রতিষ্ঠানে ব্যাংককর্মীরা প্রশিক্ষণ নেন, সেসব কোর্সের প্রশিক্ষণসূচিতে কৃষি ও পল্লিঋণ বিষয়ে একটি স্বতন্ত্র ক্লাস অন্তর্ভুক্তির লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সংশ্লিষ্টদের প্রতি নির্দেশনা প্রেরণ করা যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে সব প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানের পাঠ্যসূচি যাতে অভিন্ন হয়, তজ্জন্য উল্লিখিত নির্দেশনার সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে একটি রূপরেখাও তৈরি করে দেওয়া যেতে পারে, যেখানে কৃষিঋণ বিতরণের ক্ষেত্রে কর্মকর্তারা কেন ও কীভাবে কৃষকের প্রতি মমতাপূর্ণ সহায়ক আচরণ করবেন, সে বিষয়ের বর্ণনা থাকবে। তদুপরি বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক বর্তমানে কৃষি ও পল্লিঋণের আওতাধীন যেসব অঙ্গ (component) নিয়মিত ভিত্তিতে পর্যবেক্ষণ ও পরিধারণ করা হয়, এখন থেকে সে তালিকায় কৃষকের প্রতি সহানুভূতিশীল মমতাপূর্ণ আচরণের বিষয়টিও অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে।
এবার আসা যাক কৃষিঋণ বিতরণের ক্ষেত্রে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে যুক্ত হওয়া একটি নতুন অনুষঙ্গের প্রতি। এ ক্ষেত্রে একটি উদাহরণ দিয়ে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা যাক। কৃষকেরা যাতে সহজে কৃষিঋণ ও কৃষি উপকরণ পেতে পারেন, কথিত সে উদ্দেশ্য নিয়ে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক (এমটিবি) ও পেট্রোকেম (বাংলাদেশ) লিমিটেডের মধ্যে ৭ আগস্ট এক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। ওই চুক্তির আওতায় পেট্রোকেম কৃষকদের মধ্যে মাইক্রো-নিউট্রিয়েন্ট সার, কীটনাশক, আগাছানাশক, ছত্রাকনাশক, উদ্ভিদ বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রক, বীজ ইত্যাদি কৃষি উপকরণ সরবরাহ করবে এবং পেট্রোকেমের কাছ থেকে এসব উপকরণ ক্রয়ের জন্য ঋণ দেবে এমটিবি। অভাবে পড়ে দরিদ্র কৃষক যেমন দাদনদারের কাছ থেকে উচ্চ সুদে ঋণ নিয়ে পরে নিম্নমূল্যে তার কাছে পণ্য বিক্রি করতে বাধ্য হন, এটি অনেকটা সেই দাদনদারি ব্যবস্থার মতোই হয়ে গেল না কি? ঋণ পাওয়া যাবে বটে, কিন্তু সে ঋণ কেবল তখনই মিলবে যখন কৃষক তাঁর কৃষি উপকরণ পেট্রোকেমের কাছ থেকে তাদেরই (পেট্রোকেমের) নির্ধারিত মূল্যে কিনবে। এ ক্ষেত্রে কৃষকের হাতে উপকরণ বাছাই বা মূল্য নিয়ে দরদাম করার কোনো বিকল্প সুযোগই থাকছে না।
বিষয়টির সঙ্গে ব্যাপক মিল রয়েছে বিদেশি রাষ্ট্র বা প্রতিষ্ঠানের সাপ্লায়ার্স ক্রেডিট বা সরবরাহকারী ঋণের। পার্থক্য শুধু এটুকু যে, উল্লিখিত সাপ্লায়ার্স ক্রেডিটের দাতারা বিদেশি, আর এ ক্ষেত্রে এর সরবরাহকারী হচ্ছে বাংলাদেশভিত্তিক প্রতিষ্ঠান পেট্রোকেম। উল্লেখ্য, দেশে বর্তমানে পেট্রোকেমের মতো আরও একাধিক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে কৃষি খাতে ঋণ দেওয়া হচ্ছে, যেটি বস্তুত পুরোনো দাদনদারি ব্যবস্থার নতুন সংস্করণ। তদুপরি এসব বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কোনো কোনোটি দেশে বিতর্কিত জিএমও (জেনেটিক্যালি মডিফায়েড অর্গানিজম) গোত্রের বীজ ও অন্যান্য কৃষি উপকরণ বাজারজাতকরণের সঙ্গেও জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে। বিষয়টি বাংলাদেশের কৃষি খাতের ভবিষ্যতের জন্য খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। আর তাই বিষয়টির প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের আশু দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
কৃষিঋণের শতভাগ প্রকৃত কৃষকের কাছে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে উল্লিখিত নতুন দাদনদারত্ব ছাড়া আরও বেশ কিছু বড় মাত্রার সমস্যা রয়েছে। এগুলোর মধ্যে পূর্বেকার সামাজিক টাউটের পাশাপাশি সাম্প্রতিক সময়ে দেশজুড়ে রাজনৈতিক টাউটের সংখ্যা ব্যাপক হারে বেড়ে যাওয়া, ব্যাংকের সঙ্গে চুক্তি সম্পাদনের ব্যয় বৃদ্ধি, দুর্নীতি ও অনিয়মের প্রসার, কৃষিঋণ বিতরণে বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকসমূহের ঐতিহ্যিক নির্লিপ্ততা ইত্যাদি অন্যতম। তবে সবকিছু ছাপিয়ে সবচেয়ে বড় সমস্যা আসলে কৃষক ও ব্যাংকের মধ্যে একটি নিবিড় সম্পর্ক গড়ে না ওঠা, যেটি ব্যবসায়ী ও শিল্পোদ্যোক্তাদের সঙ্গে ইতিমধ্যে বহুলাংশে গড়ে উঠেছে।
মোট অভ্যন্তরীণ উপাদানের (জিডিপি) ক্ষেত্রে কৃষি খাতের দৃশ্যমান যে অবদান, এ খাতের ওপর সমাজ, রাষ্ট্র ও অর্থনীতির প্রকৃত নির্ভরতা তারচেয়ে অনেক বেশি। এখনো এ খাতই দেশের সবচেয়ে বেশিসংখ্যক মানুষের কর্মসংস্থানের ক্ষেত্র। কৃষির বাইরে অন্য পেশায় যুক্ত শহুরে নাগরিক সমাজের একটি বিরাট অংশ এখনো প্রত্যক্ষভাবে কৃষির ওপর নির্ভরশীল। জাতীয় অর্থনীতি যখন বড় ধরনের বিপদে পড়ে, তখন এ কৃষিই সে বিপর্যয়ের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করে, যেমনটি করেছিল ২০০৭-০৮-এর বিশ্বমন্দার সময়। অতএব সার্বিক বিবেচনা থেকে কৃষিঋণের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে এর শতভাগ প্রকৃত কৃষকের কাছে পৌঁছানোটা শুধু জরুরিই নয়, একটি জাতীয় অগ্রাধিকারও বটে। কিন্তু অপ্রিয় হলেও সত্য, জাতীয় স্বার্থের বিবেচনায় এটি অগ্রাধিকার হলেও ব্যাংকগুলোর ঋণ বিতরণের অগ্রাধিকারে কৃষিঋণ কখনোই প্রথম সারির অগ্রাধিকারে ছিল না, এখনো নেই এবং তা শিগগির হবে তেমন লক্ষণও চোখে পড়ছে না। অবশ্য এরপরও আমরা আশাবাদী যে, বাংলাদেশ ব্যাংক যদি তার নীতিনির্দেশনার পাশাপাশি এর বাস্তবায়ন পরিধারণের ক্ষেত্রে কৃষিকে বিশেষ অগ্রাধিকারদানের নীতি হিসেবে গ্রহণ করে, তাহলে অবশ্যই এ ক্ষেত্রে কিছু না কিছু বাড়তি অগ্রগতি অবশ্যই অর্জিত হবে।
এই সূত্রে পরিশেষে আরেকটি প্রস্তাব যোগ করি। কৃষি খাতে বিনিয়োগকে এখনো আমরা নতুন উদ্যোক্তাদের কাছে আগ্রহোদ্দীপক ক্ষেত্র হিসেবে গড়ে তুলতে পারিনি। স্টার্টআপ কার্যক্রমকে উৎসাহদানের লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক সম্প্রতি ৯০০ কোটি টাকার নয়া তহবিল ঘোষণা করেছে, সেখানে তরুণদের কৃষি খাতে বিনিয়োগের জন্য উৎসাহিত করা হচ্ছে না কেন? কেন মনে করা হচ্ছে উদ্ভাবনাধর্মী সম্ভাবনাময় প্রকল্প কেবল শহরেই পাওয়া যায়? কৃষিঋণের শতভাগ প্রকৃত কৃষকের কাছে পৌঁছাতে হলে এ ধরনের শহরমুখী দৃষ্টিভঙ্গিতেও পরিবর্তন আনতে হবে। সে যাই হোক, ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক ৩৯ হাজার কোটি টাকা কৃষিঋণ বিতরণের যে লক্ষ্যমাত্রা ঘোষণা করেছে, তার পুরোটা না হোক অন্তত ৯০ শতাংশও যদি প্রকৃত কৃষকের কাছে পৌঁছায়, তাহলে সেটাই হবে অনেক বড় অগ্রগতি। আমরা সে অগ্রগতি দেখার অপেক্ষাতেই রইলাম।
২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য কৃষি ও পল্লিঋণের লক্ষ্যমাত্রা ঘোষণা করতে গিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর ১২ আগস্ট এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ‘কৃষিঋণের সবটাই কৃষকের কাছে পৌঁছায় কি না, বাংলাদেশ ব্যাংক তা পর্যালোচনা করছে। আমরা চাই, শতভাগ কৃষিঋণ কৃষকের কাছে যাক। দালালের কাছে যেন না যায়। বাংলাদেশ ব্যাংক এটি তদারকি করবে।’ উল্লেখ্য, ওই সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য ৩৯ হাজার কোটি টাকার কৃষি ও পল্লিঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা ঘোষণা করা হয়েছে।
এখন কথা হচ্ছে, কৃষি ও পল্লিঋণের একটি অংশ প্রকৃত কৃষকের কাছে না পৌঁছাসংক্রান্ত বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নরের উক্ত উপলব্ধি ও প্রয়াসকে ব্যাংকগুলো নিজেদের পেশাগত দায়িত্ব হিসেবে গ্রহণ করলেও ব্যাংককর্মীরা সেটিকে কৃষকের প্রতি মমতাপূর্ণ আচরণ দিয়ে কতটা ধারণ করছেন? জবাবে ব্যাংককর্মীদের পাশাপাশি অনেক বিজ্ঞ নাগরিকও হয়তো বলবেন: ব্যাংকগুলো বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান। ফলে এখানে নির্ধারিত দায়িত্ব পালনের বাইরে গিয়ে কল্যাণমূলক কাজে যুক্ত হওয়া বা এরূপ দৃষ্টিভঙ্গি পোষণের বিষয়টি একেবারেই অপ্রাসঙ্গিক। আর ব্যাংককর্মীদের নিজ নিজ দায়িত্ব বিবরণী ও ঋণ নিয়মাচারের সঙ্গে মিলিয়ে এর বিচার করতে গেলে শেষোক্ত অভিমতটিই হয়তো যথার্থ। কিন্তু বিনয়ের সঙ্গে বলি, যে দেশের কৃষকের একটি বড় অংশ এখনো নিরক্ষর, ঋণলাভের আনুষ্ঠানিকতা প্রতিপালন বিষয়ে যাদের ধারণা একেবারেই অপ্রতুল, নানা কাগজপত্র ও দলিলাদির চাহিদা মিটিয়ে ঋণ গ্রহণের বিষয়ে যারা একেবারেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে না, ঋণলাভের ক্ষেত্রে পদে পদে যেখানে দালাল ও নানা অবাঞ্ছিত শ্রেণির দৌরাত্ম্য এবং বহু ক্ষেত্রে ব্যাংক ও ব্যাংকের বাইরের নানা হয়রানি ও প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলা করে যখন তাকে এ ঋণ পেতে হয়, তখন কৃষকের প্রতি ওই মমতাপূর্ণ আচরণের কোনো বিকল্প আছে কি?
আর তাই কৃষিঋণের শতভাগ প্রকৃত কৃষকের কাছে পৌঁছানোর লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের তত্ত্বাবধান ও পরিধারণ ব্যবস্থাকে জোরদার করার পাশাপাশি ব্যাংককর্মীদের মধ্যে কৃষকের প্রতি মমতা সৃষ্টির লক্ষ্যেও কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া জরুরি বলে মনে করি।
এ প্রসঙ্গে কয়েকটি প্রস্তাব করি। ব্যাংকগুলোর প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যবস্থাপনা ইনস্টিটিউট (বিআইবিএম) ও অন্য যেসব প্রতিষ্ঠানে ব্যাংককর্মীরা প্রশিক্ষণ নেন, সেসব কোর্সের প্রশিক্ষণসূচিতে কৃষি ও পল্লিঋণ বিষয়ে একটি স্বতন্ত্র ক্লাস অন্তর্ভুক্তির লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সংশ্লিষ্টদের প্রতি নির্দেশনা প্রেরণ করা যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে সব প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানের পাঠ্যসূচি যাতে অভিন্ন হয়, তজ্জন্য উল্লিখিত নির্দেশনার সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে একটি রূপরেখাও তৈরি করে দেওয়া যেতে পারে, যেখানে কৃষিঋণ বিতরণের ক্ষেত্রে কর্মকর্তারা কেন ও কীভাবে কৃষকের প্রতি মমতাপূর্ণ সহায়ক আচরণ করবেন, সে বিষয়ের বর্ণনা থাকবে। তদুপরি বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক বর্তমানে কৃষি ও পল্লিঋণের আওতাধীন যেসব অঙ্গ (component) নিয়মিত ভিত্তিতে পর্যবেক্ষণ ও পরিধারণ করা হয়, এখন থেকে সে তালিকায় কৃষকের প্রতি সহানুভূতিশীল মমতাপূর্ণ আচরণের বিষয়টিও অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে।
এবার আসা যাক কৃষিঋণ বিতরণের ক্ষেত্রে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে যুক্ত হওয়া একটি নতুন অনুষঙ্গের প্রতি। এ ক্ষেত্রে একটি উদাহরণ দিয়ে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা যাক। কৃষকেরা যাতে সহজে কৃষিঋণ ও কৃষি উপকরণ পেতে পারেন, কথিত সে উদ্দেশ্য নিয়ে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক (এমটিবি) ও পেট্রোকেম (বাংলাদেশ) লিমিটেডের মধ্যে ৭ আগস্ট এক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। ওই চুক্তির আওতায় পেট্রোকেম কৃষকদের মধ্যে মাইক্রো-নিউট্রিয়েন্ট সার, কীটনাশক, আগাছানাশক, ছত্রাকনাশক, উদ্ভিদ বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রক, বীজ ইত্যাদি কৃষি উপকরণ সরবরাহ করবে এবং পেট্রোকেমের কাছ থেকে এসব উপকরণ ক্রয়ের জন্য ঋণ দেবে এমটিবি। অভাবে পড়ে দরিদ্র কৃষক যেমন দাদনদারের কাছ থেকে উচ্চ সুদে ঋণ নিয়ে পরে নিম্নমূল্যে তার কাছে পণ্য বিক্রি করতে বাধ্য হন, এটি অনেকটা সেই দাদনদারি ব্যবস্থার মতোই হয়ে গেল না কি? ঋণ পাওয়া যাবে বটে, কিন্তু সে ঋণ কেবল তখনই মিলবে যখন কৃষক তাঁর কৃষি উপকরণ পেট্রোকেমের কাছ থেকে তাদেরই (পেট্রোকেমের) নির্ধারিত মূল্যে কিনবে। এ ক্ষেত্রে কৃষকের হাতে উপকরণ বাছাই বা মূল্য নিয়ে দরদাম করার কোনো বিকল্প সুযোগই থাকছে না।
বিষয়টির সঙ্গে ব্যাপক মিল রয়েছে বিদেশি রাষ্ট্র বা প্রতিষ্ঠানের সাপ্লায়ার্স ক্রেডিট বা সরবরাহকারী ঋণের। পার্থক্য শুধু এটুকু যে, উল্লিখিত সাপ্লায়ার্স ক্রেডিটের দাতারা বিদেশি, আর এ ক্ষেত্রে এর সরবরাহকারী হচ্ছে বাংলাদেশভিত্তিক প্রতিষ্ঠান পেট্রোকেম। উল্লেখ্য, দেশে বর্তমানে পেট্রোকেমের মতো আরও একাধিক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে কৃষি খাতে ঋণ দেওয়া হচ্ছে, যেটি বস্তুত পুরোনো দাদনদারি ব্যবস্থার নতুন সংস্করণ। তদুপরি এসব বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কোনো কোনোটি দেশে বিতর্কিত জিএমও (জেনেটিক্যালি মডিফায়েড অর্গানিজম) গোত্রের বীজ ও অন্যান্য কৃষি উপকরণ বাজারজাতকরণের সঙ্গেও জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে। বিষয়টি বাংলাদেশের কৃষি খাতের ভবিষ্যতের জন্য খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। আর তাই বিষয়টির প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের আশু দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
কৃষিঋণের শতভাগ প্রকৃত কৃষকের কাছে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে উল্লিখিত নতুন দাদনদারত্ব ছাড়া আরও বেশ কিছু বড় মাত্রার সমস্যা রয়েছে। এগুলোর মধ্যে পূর্বেকার সামাজিক টাউটের পাশাপাশি সাম্প্রতিক সময়ে দেশজুড়ে রাজনৈতিক টাউটের সংখ্যা ব্যাপক হারে বেড়ে যাওয়া, ব্যাংকের সঙ্গে চুক্তি সম্পাদনের ব্যয় বৃদ্ধি, দুর্নীতি ও অনিয়মের প্রসার, কৃষিঋণ বিতরণে বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকসমূহের ঐতিহ্যিক নির্লিপ্ততা ইত্যাদি অন্যতম। তবে সবকিছু ছাপিয়ে সবচেয়ে বড় সমস্যা আসলে কৃষক ও ব্যাংকের মধ্যে একটি নিবিড় সম্পর্ক গড়ে না ওঠা, যেটি ব্যবসায়ী ও শিল্পোদ্যোক্তাদের সঙ্গে ইতিমধ্যে বহুলাংশে গড়ে উঠেছে।
মোট অভ্যন্তরীণ উপাদানের (জিডিপি) ক্ষেত্রে কৃষি খাতের দৃশ্যমান যে অবদান, এ খাতের ওপর সমাজ, রাষ্ট্র ও অর্থনীতির প্রকৃত নির্ভরতা তারচেয়ে অনেক বেশি। এখনো এ খাতই দেশের সবচেয়ে বেশিসংখ্যক মানুষের কর্মসংস্থানের ক্ষেত্র। কৃষির বাইরে অন্য পেশায় যুক্ত শহুরে নাগরিক সমাজের একটি বিরাট অংশ এখনো প্রত্যক্ষভাবে কৃষির ওপর নির্ভরশীল। জাতীয় অর্থনীতি যখন বড় ধরনের বিপদে পড়ে, তখন এ কৃষিই সে বিপর্যয়ের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করে, যেমনটি করেছিল ২০০৭-০৮-এর বিশ্বমন্দার সময়। অতএব সার্বিক বিবেচনা থেকে কৃষিঋণের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে এর শতভাগ প্রকৃত কৃষকের কাছে পৌঁছানোটা শুধু জরুরিই নয়, একটি জাতীয় অগ্রাধিকারও বটে। কিন্তু অপ্রিয় হলেও সত্য, জাতীয় স্বার্থের বিবেচনায় এটি অগ্রাধিকার হলেও ব্যাংকগুলোর ঋণ বিতরণের অগ্রাধিকারে কৃষিঋণ কখনোই প্রথম সারির অগ্রাধিকারে ছিল না, এখনো নেই এবং তা শিগগির হবে তেমন লক্ষণও চোখে পড়ছে না। অবশ্য এরপরও আমরা আশাবাদী যে, বাংলাদেশ ব্যাংক যদি তার নীতিনির্দেশনার পাশাপাশি এর বাস্তবায়ন পরিধারণের ক্ষেত্রে কৃষিকে বিশেষ অগ্রাধিকারদানের নীতি হিসেবে গ্রহণ করে, তাহলে অবশ্যই এ ক্ষেত্রে কিছু না কিছু বাড়তি অগ্রগতি অবশ্যই অর্জিত হবে।
এই সূত্রে পরিশেষে আরেকটি প্রস্তাব যোগ করি। কৃষি খাতে বিনিয়োগকে এখনো আমরা নতুন উদ্যোক্তাদের কাছে আগ্রহোদ্দীপক ক্ষেত্র হিসেবে গড়ে তুলতে পারিনি। স্টার্টআপ কার্যক্রমকে উৎসাহদানের লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক সম্প্রতি ৯০০ কোটি টাকার নয়া তহবিল ঘোষণা করেছে, সেখানে তরুণদের কৃষি খাতে বিনিয়োগের জন্য উৎসাহিত করা হচ্ছে না কেন? কেন মনে করা হচ্ছে উদ্ভাবনাধর্মী সম্ভাবনাময় প্রকল্প কেবল শহরেই পাওয়া যায়? কৃষিঋণের শতভাগ প্রকৃত কৃষকের কাছে পৌঁছাতে হলে এ ধরনের শহরমুখী দৃষ্টিভঙ্গিতেও পরিবর্তন আনতে হবে। সে যাই হোক, ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক ৩৯ হাজার কোটি টাকা কৃষিঋণ বিতরণের যে লক্ষ্যমাত্রা ঘোষণা করেছে, তার পুরোটা না হোক অন্তত ৯০ শতাংশও যদি প্রকৃত কৃষকের কাছে পৌঁছায়, তাহলে সেটাই হবে অনেক বড় অগ্রগতি। আমরা সে অগ্রগতি দেখার অপেক্ষাতেই রইলাম।
কিছুদিন আগে ভোলাগঞ্জের পাথর নিয়ে সারা দেশে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে—পাথর অপসারণ করা হয়েছে। দৃষ্টিনন্দন সাদাপাথর, যেখানে পর্যটকেরা এই পাথর দেখার টানে ভ্রমণে যেতেন। পাথর সরানোর পরে সেখানে গেলে দেখতে পাবেন মাটি ও বালুর বিছানা পাতা। যা হোক, প্রশাসনের উদ্যোগ ও সচেতন জনগণের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে বিষয়টি, পাথর আবার
৩ ঘণ্টা আগেরাজধানী ঢাকায় চাঁদাবাজদের রমরমা অবস্থা নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে ২৪ আগস্টের আজকের পত্রিকায়। চাঁদাবাজেরা যে কাউকে পরোয়া করে না, তারই একটি চিত্র যেন এই প্রতিবেদনটি। এত দিন পত্রপত্রিকায় পেঁপে, লাউ, আখের বাম্পার ফলন ধরনের সংবাদ ছাপা হতো। এখন যদি বলা হয়, চাঁদাবাজিরও বাম্পার ফলন হয়েছে, তাহলে কি
৩ ঘণ্টা আগে‘হাসিনা পরবর্তী বাংলাদেশ-পাকিস্তানের সম্পর্কের নতুন মোড়’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন একটি দৈনিকে প্রকাশিত হয় গত ১৭ জানুয়ারি। আল জাজিরা সূত্রের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের সম্পর্কের ইতিহাস দীর্ঘদিন ধরেই উত্তেজনাপূর্ণ।
১ দিন আগেদেশে এখন অলৌকিকত্বের জয়জয়কার। এত অলৌকিকতা আমরা স্বপ্নেও ভাবিনি। এখন যারা অন্ধকারের দিকে টানে, তারা একাত্তর মানে না, শহীদ মানে না। তাদের জন্য এই লেখাটা, হয়তো আসল অলৌকিকত্ব তাদের স্পর্শ করবে।
১ দিন আগে