Ajker Patrika

চাঁদাবাজির বাম্পার ফলন

সম্পাদকীয়
চাঁদাবাজির বাম্পার ফলন

রাজধানী ঢাকায় চাঁদাবাজদের রমরমা অবস্থা নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে ২৪ আগস্টের আজকের পত্রিকায়। চাঁদাবাজেরা যে কাউকে পরোয়া করে না, তারই একটি চিত্র যেন এই প্রতিবেদনটি। এত দিন পত্রপত্রিকায় পেঁপে, লাউ, আখের বাম্পার ফলন ধরনের সংবাদ ছাপা হতো। এখন যদি বলা হয়, চাঁদাবাজিরও বাম্পার ফলন হয়েছে, তাহলে কি খুব ভুল বলা হবে?

গত ছয় মাসে ডিএমপির ৫০ থানায় চাঁদাবাজির অভিযোগে ৪১৯ মামলা হয়েছে। চাঁদাবাজদের ব্যাপারে আতঙ্কে দিশেহারা থাকছেন নানা পেশার মানুষ। অনেকেই পুলিশে গিয়ে মামলা করার সাহস পান না। তাই অনুমান করে নেওয়া যায়, চাঁদাবাজির বহু ঘটনাই থেকে যায় পুলিশের খাতার বাইরে। ফ্যাসিবাদের দোসর, স্বৈরাচারের দোসর হিসেবে ট্যাগ দিয়ে মোটা টাকা হাতিয়ে নেওয়ার ‘ব্যবসা’টাই এখন চাঁদাবাজির একটি মোক্ষম অস্ত্রে পরিণত হয়েছে। কথায় কথায় হত্যা মামলা দেওয়ার হুমকিও যেন দুধভাত হয়ে গেছে। রিয়াদ অ্যান্ড গং নিয়ে কত কাণ্ডই না ঘটে গেল, সে কথা দেশের মানুষ ভুলবে কী করে? সংরক্ষিত আসনের সাবেক এমপি শাম্মী আহমেদের বাড়িতে দ্বিতীয় কিস্তির চাঁদা নিতে গিয়ে ধরা পড়েছিলেন রিয়াদ। এরপর একে একে তাঁর থলের বিড়ালগুলো বেরিয়ে আসতে থাকে। রংপুরের এক সাবেক এমপির ঢাকার গ্রিন রোডের বাড়ি থেকে ৫ কোটি টাকার ১১টি চেক নেওয়ার ঘটনাও জানা যায়। এ রকম কত রিয়াদ যে চাঁদাবাজি করে আখের গুছিয়ে নিয়েছেন, সে কথা কে জানে! কোত্থেকে চাঁদাবাজির মদদ আসে, কারা এর ভাগ পায়, পুলিশের মৌনতার কারণ কী ইত্যাদি বিষয়েও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা হয়েছে। মূলধারার পত্রপত্রিকায়ও কিছু কিছু প্রতিবেদন ছাপা হয়েছে। তাতে চাঁদাবাজির চিত্রটি খোলাসা হয়েছে। অনেক চাঁদাবাজির ক্ষেত্রেই হুমকি থাকে হত্যার, তাই গোপনে কে কত টাকা দিয়ে জীবন বাঁচাচ্ছেন, সেটা জানা সম্ভব নয়।

এ তো গেল রাজনৈতিক ঘটনায় ফায়দা ওঠানোর গল্প। ব্যবসায়ীদের জীবন অতিষ্ঠ করে দেওয়া বেদনাদায়ক চাঁদাবাজির ঘটনাও উঠে এসেছে আজকের পত্রিকার প্রতিবেদনে। মিরপুরের বেনারসিপল্লি, পান্থপথের আসবাব মার্কেটের কথাই ধরা যাক। বিভিন্ন অজুহাতে বেনারসিপল্লিতে চাঁদাবাজির ঘটনাগুলো বেশি দিন আগের কথা নয়। এখানকার ব্যবসায়ীদেরও জুলাই হত্যাকাণ্ডের মামলায় ফাঁসানোর ভয় দেখানো হচ্ছে। আমাদের প্রশ্ন, এত দিন পর যদি কাউকে জুলাই হত্যাকাণ্ডের মামলায় ফাঁসানোর ভয় দেখানো হয়, তাহলে কি তার বিরুদ্ধে কোনো অবস্থান পরিষ্কার করতে পারে না সরকার? সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে কি ঘোষণা দেওয়া যায় না, মিথ্যে মামলার প্রমাণ পেলে মামলাকারীর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে? এ রকম একটি বার্তা দেওয়া হলে এই ধরনের চাঁদাবাজদের দৌরাত্ম্য কমবে। চাঁদা না দেওয়ায় পান্থপথের একটি দোকান ভাঙচুর করে দোকানের সাইনবোর্ড বদলে দখল করে নেওয়া হয়েছে। নিরুপায় মালিক পুলিশের কাছে না গিয়ে বিএনপির জ্যেষ্ঠ মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

চাঁদাবাজদের দমন করতে না পারলে জনগণের আতঙ্ক কাটবে না। এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত দ্রুত।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত