Ajker Patrika

পুলিশও তো মানুষ, নাকি?

সম্পাদকীয়
আপডেট : ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০৮: ২১
পুলিশও তো মানুষ, নাকি?

পুলিশ নিয়ে নেতিবাচক কথা অনেক আছে। তার মধ্যে বহুল প্রচলিত প্রবাদটি হলো ‘বাঘে ছুঁলে এক ঘা, পুলিশে ছুঁলে ৩৬ ঘা’; তার মানে বাঘের হাতে পড়লে প্রাণ রক্ষা যত সহজ, পুলিশের হাতে পড়লে তত সহজে নিষ্কৃতি নেই। আসলে কি তাই? পুলিশ যদি এত খারাপই হবে তাহলে পুলিশের ওপর আমাদের এত নির্ভরতা কেন? কেন পৃথিবীজুড়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব পুলিশের ওপর না দিয়ে অন্য কোনো সংস্থা গড়ার বিষয়টি ভাবা হয়নি?

পুলিশ কিন্তু রক্ত-মাংসে গড়া মানুষ,কোনো যন্ত্রবিশেষ নয়। অন্য সব মানুষের মধ্যে যেসব মানবিক ত্রুটি-দুর্বলতা আছে, পুলিশও তা মুক্ত নয়। সেটা হওয়া সম্ভবও নয়। অন্য সব পেশায় যেমন ভালো মানুষ, খারাপ মানুষ আছেন, পুলিশে তেমন থাকাই স্বাভাবিক। তবে পুলিশের কাছে আমাদের প্রত্যাশা শুধু ভালোটা। কারণ, তাদের হাতে আমাদের শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষার দায়িত্ব দিয়ে আমরা নির্ভার থাকতে চাই। এখানে পান থেকে চুন খসলে আমরা হইচই বাধিয়ে পাড়া মাতিয়ে ফেলি। পুলিশের কেউ খারাপ কিছু করলে তা পাঁচ কান হতে সময় লাগে না, ভালো কাজ করলে সেটা তেমন প্রচার পায় না। দায়িত্ব পালনে গাফিলতি করলে, কোনো অন্যায় করলে, ঘুষ নিলে তা নিয়ে লেখালেখি হয়, নিন্দা-প্রতিবাদ হয়, অথচ দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে বা কাজের ক্ষেত্রে তাদের কিছু সমস্যা আছে কি না, সেসব আমাদের জানার বাইরে।

সোমবার আজকের পত্রিকার প্রথম পৃষ্ঠায় ‘মানসিক অবসাদে পুলিশ’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, পুলিশ সদস্যদের কারও কারও মধ্যে চরম হতাশা বিরাজ করছে। পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন থাকা, ওপরের কর্মকর্তাদের খারাপ ব্যবহার, অতিরিক্ত সময় কাজ করতে বাধ্য হওয়া, ছুটি না পাওয়া এবং পদোন্নতিতে জটিলতা ইত্যাদি কারণে পুলিশের মধ্যে হতাশা কাজ করায় অবসাদগ্রস্ত হয়ে কেউ কেউ আত্মহত্যার পথও বেছে নিচ্ছেন। গত তিন মাসে চারজন পুলিশ সদস্য নিজের অস্ত্রের গুলিতে আত্মহত্যা করেছেন। পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের নিয়ম অনুযায়ী যেসব ছুটি উপভোগ করার কথা, বিভিন্ন অজুহাতে তা থেকে অনেককেই বঞ্চিত হতে হয়। থানার দরজা যেহেতু কোনো সময় বন্ধ হয় না, সেহেতু অতিরিক্ত সময় অনেককেই ডিউটি করতে হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ২৪ ঘণ্টা ডিউটি করার নজিরও আছে। বড় বা উচ্চপদে যাঁরা কাজ করেন, তাঁরা কিছুটা সুযোগ-সুবিধা বেশি পেলেও নিচের পদাধিকারীদের দুঃখ-কষ্টের শেষ নেই।

অতিরিক্ত খাটাখাটুনির কারণে কারও কারও শারীরিক-মানসিক সমস্যা দেখা দেয়, মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়, এতে যাঁরা তাঁদের কাছে অভিযোগ নিয়ে আসেন, তাঁদের সঙ্গে হয়তো দুর্ব্যবহার করে বসেন, ভুল-বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়। সোয়া দুই লাখ পুলিশ সদস্যের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষার কোনো ব্যবস্থা নেই। নিয়মিত কাউন্সেলিং ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে পুলিশ বাহিনীকে পেশাগত ও ব্যক্তিগত চাপ সহ্য করার মতো দক্ষ ও ইতিবাচক মনোভাবাপন্ন করে তোলার উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। কোটি কোটি সাধারণ নাগরিকের সুখ, শান্তি ও স্বস্তি নিশ্চিত করার দায়িত্ব যে বাহিনীর ওপর ন্যস্ত, তাদের সুবিধা-অসুবিধা, মানসিক শান্তি, স্বস্তি, সুখ উপেক্ষিত হলে সমাজে তার বিরূপ প্রতিক্রিয়া তো পড়বেই।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সাইপ্রাসে বিপুল জমি কিনছে ইসরায়েলিরা, দেশ বেদখলের শঙ্কা রাজনীতিবিদদের

যুদ্ধের পর এ যেন এক নতুন ইরান, জনগণের মতো বদলে গেছে সরকারও

কর্মীদের হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার নিষিদ্ধ করল বিমান বাংলাদেশ

বংশরক্ষায় মৃত ছেলের শুক্রাণু চান মা, সংরক্ষণের নির্দেশ মুম্বাই হাইকোর্টের

আমাকে ধর্ষণের সময় পাশে দাঁড়িয়ে দেখছিল দুই যুবক: ধর্ষণের শিকার তরুণী

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত