জাহাঙ্গীর আলম
ডোনাল্ড ট্রাম্পের উত্থানের পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে অশালীন ভাষার ক্রমবর্ধমান ব্যবহার দেখা যাচ্ছে। এ নিয়ে অনেকের বিস্ময়, অস্বস্তি ও অসন্তোষ দৃশ্যমান। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ভুল ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মিথ্যা তথ্যের ছড়াছড়ি, মিথ্যা বয়ান। এর বিপরীতে ফ্যাক্টচেকারদের ক্যারিয়ারেরও উত্তরোত্তর উন্নতি ঘটছে।
কিন্তু বাস্তবে এতে কোনো কাজ হচ্ছে কি? মিডিয়াতে মিথ্যা বয়ান কি ঠেকানো যাচ্ছে? ফ্যাক্টচেকিংয়ের শক্তি কি এসব বয়ানের ধার কমাতে পারছে? এখন পর্যন্ত অন্তত তেমন প্রমাণ নেই।
রাজনৈতিক মেরুকরণ এবং ভুল তথ্যের ওপর গবেষণা করেন এমন একজন বিশেষজ্ঞ, কার্ডিফ ইউনিভার্সিটির রাষ্ট্রবিজ্ঞানের প্রভাষক ড. জোসেফ ফিলিপসের মতে, রাজনীতিতে অশালীন ভাষা ব্যবহার কোনো নতুন বিষয় নয়, বরং এটি একটি পুরোনো প্রবণতা।
ঐতিহাসিকভাবে রাজনীতিকেরা আনুষ্ঠানিক বক্তব্যে খুব কমই অশালীন শব্দ ব্যবহার করেন। দৃষ্টান্ত হিসেবে আমেরিকার প্রেসিডেন্টদের কথা ধরলে, ১৯১৯ সালে উড্রো উইলসন প্রথম এই প্রথা ভাঙেন। তবে গত ১০ বছরে এ ধরনের শব্দের ব্যবহার ব্যাপকভাবে বেড়েছে। চলতি বছরের শুরুর দিক পর্যন্ত তথ্য অনুযায়ী, প্রেসিডেন্ট, ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং প্রেসিডেন্ট প্রার্থীরা অন্তত ৬৯২ বার অশালীন শব্দ ব্যবহার করেছেন।
এর মধ্যে ৮৭ শতাংশ (৬০৫ বার) ব্যবহার ঘটেছে গত ১০ বছরে, এবং ৭৮ শতাংশ (৫৩৮ বার) ব্যবহার করেছেন মাত্র দুজন রাজনীতিক—ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং জো বাইডেন। উল্লেখযোগ্যভাবে, উভয় নেতাই তাঁদের মেয়াদকালে অশালীন শব্দের ব্যবহার বাড়িয়েছেন। ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে অশ্লীল শব্দের ব্যবহার তাঁর প্রথম মেয়াদের চেয়ে বেশি। বাইডেন কিছুটা ‘সুশীল’ শব্দ ব্যবহার করলেও, ট্রাম্পের শব্দভান্ডার অনেক বৈচিত্র্যময়, প্রচুর ‘অশ্লীল’ শব্দের সমাহার।
মজার ব্যাপার হলো, রাজনীতিতে ভদ্র ব্যবহার, শালীন পোশাক ও শব্দের ব্যবহার, সুষ্ঠু শৃঙ্খলাপূর্ণ সামাজিক জীবনযাপন ইত্যাদি সভ্যতার উপাদান ভোটের রাজনীতিতে বরাবরই প্রভাব রেখেছে। কিন্তু ইদানীং এসব নিয়ে মানুষের আকাঙ্ক্ষার ঘাটতি দেখা না গেলেও, এর ব্যত্যয় ভোটে খুব একটা প্রভাব ফেলছে না। আবারও দৃষ্টান্ত হিসেবে আমরা আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে নিতে পারি। ট্রাম্পের প্রথম ও দ্বিতীয় মেয়াদের সময়কার নির্বাচনে বিভিন্ন মিডিয়াতে ব্যাপকভাবে ভুল ও মিথ্যা তথ্য ছড়ানো হয়েছে। বলতে গেলে, এর প্রতিক্রিয়ায় ফ্যাক্টচেকিং বিষয়টা মূল ধারায় উঠে এসেছে। লিবারেল গণমাধ্যম ও ব্যক্তিরা এসব মিথ্যা ডিবাঙ্ক করার পেছনে কম অর্থ, শ্রম ও সময় ব্যয় করেননি! কিন্তু বাস্তবে ভোটে এর কোনো প্রভাব প্রতিফলিত হয়নি।
এই ঘটনাকে অনেকের কাছে কাউন্টার ইনটিউটিভ বা অস্বাভাবিক মনে হতে পারে। তবে এর পেছনে কিছু বাস্তব কারণ রয়েছে। কারণগুলোর একটি সারসংক্ষেপ করলে দাঁড়ায়:
বর্তমান সময়ে রাজনৈতিক বিশ্বাসযোগ্যতা তলানিতে এসে ঠেকেছে। বিশেষ করে লিবারেল প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি প্রান্তিক মানুষের আস্থার সংকট তৈরি হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে একজন রাজনীতিবিদের ‘প্রকৃত’ বা ‘বিশ্বাসযোগ্য’ (অথেনটিক বলা ভালো) হওয়াকে জনগণ বিশেষ গুরুত্ব দেয়। অশালীন ভাষার ব্যবহার নেতাদের আরও বেশি অথেনটিক এবং অনানুষ্ঠানিক হিসেবে উপস্থাপন করছে। যেমন বাইডেন ভাইস প্রেসিডেন্ট থাকাকালে অফ-রেকর্ডে ওবামার সঙ্গে কথোপকথনে অশালীন শব্দ ব্যবহার করেছিলেন। সেটিকে লিবারেলরা নিখাদ মানবীয় আবেগ বলে সেলিব্রেট করেছিলেন। সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে এসে প্রতিষ্ঠান প্রশ্নবিদ্ধ হওয়ায় আনুষ্ঠানিকতায় মানুষ আস্থা হারাতে বসেছে। ফলে শালীন ও প্রমিত ভাষার ব্যবহার আবেদন তো তৈরি করছেই না, বরং প্রগাঢ় সন্দেহ তৈরি করছে।
আবার পপুলিস্ট বা জনতুষ্টিবাদী আন্দোলনের এই যুগে, রাজনীতিবিদদের জন্য ‘সাধারণ মানুষ’ হিসেবে নিজেদের উপস্থাপন করা রাজনৈতিকভাবে লাভজনক। সাধারণ মানুষ দৈনন্দিন জীবনে বহু অশালীন শব্দ ব্যবহার করে। তাই রাজনৈতিক বক্তৃতায় এসব শব্দ ব্যবহার করা রাজনীতিকদের আরও বেশি গ্রহণযোগ্য এবং সাধারণের কাছাকাছি হিসেবে উপস্থাপন করে।
যুক্তরাষ্ট্রে সাম্প্রতিক এক জরিপে দেখা গেছে, নতুন প্রজন্মের কাছে বিভিন্ন পরিস্থিতিতে অশালীন শব্দ ব্যবহার করা আগের চেয়ে বেশি গ্রহণযোগ্য। এই প্রবণতা চলতে থাকলে, যাঁরা অশালীন ভাষার কারণে রাজনীতিবিদদের সমালোচনা করেন, সেই গোষ্ঠীর সংখ্যা ক্রমেই হ্রাস পাবে। শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শালীনতা, সভ্যতা, ভব্যতার ওপর যেভাবে জোর দিয়ে থাকে, তাতে তারা দ্রুতই প্রান্তিক হয়ে পড়তে পারে।
আরেকটি বড় বিষয় হলো, পুরোনো রাজনৈতিক ব্যবস্থার প্রতি মানুষের পুঞ্জীভূত ক্ষোভ, প্রতিহিংসা ও প্রতিশোধপরায়ণতায় পর্যবসিত হতে দেখা যাচ্ছে। বিশেষ করে জেন-জি আন্দোলনগুলোতে সেই ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটছে নির্বিচার সহিংসতায়। এই র্যাডিক্যাল অবস্থান জনগণকে চরম রাজনৈতিক আনুগত্যের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এই আনুগত্য এতটাই শক্তিশালী যে পছন্দের নেতার ভাষা নিয়ে কিছুটা অস্বস্তি ও বিরক্তি থাকলেও প্রতিপক্ষের প্রতি ক্ষোভের কাছে সেটি তুচ্ছ মনে হচ্ছে। তাই, পছন্দের নেতার অশালীন ভাষা রাজনৈতিক আনুগত্যে তেমন প্রভাব ফেলছে না।
একইভাবে রাজনৈতিক নেতাদের মিথ্যাচারও ভোটারদের মনে তেমন নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে না। রাজনৈতিক এলিট, রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠান, করপোরেট ও তথাকথিত ডিপস্টেট বৈষম্য নিরসনের মাধ্যমে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গঠনে ধারাবাহিকভাবে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। ফলে নব্য রক্ষণশীলদের নতুন বয়ান তৈরির আগেই সাধারণ মানুষ এসব প্রতিষ্ঠানকে প্রতিপক্ষ সাব্যস্ত করে ফেলেছে। ফলে এই নিবর্তনমূলক ব্যবস্থা ভেঙে ফেলার প্রতিশ্রুতি নিয়ে হাজির হওয়া রাজনৈতিক নেতারা মিথ্যা বললেও, সেই গল্প মূলত ক্ষুব্ধ জনতার ‘কনফারমেশন বায়াসকে’ শক্তিশালী করছে। যতই ফ্যাক্টচেক, মূলধারার গণমাধ্যমে ডিবাঙ্ক করা হোক না কেন—লিবারেলদের কোনো প্রচেষ্টাই কাজে আসছে না।
সম্প্রতি নিকোলেটা ক্যাভাজ্জা এবং মার্গারিটা গুইডেত্তির লেখা ‘সোয়েরিং ইন পলিটিক্যাল ডিসকোর্স: হোয়াই ভালগারিটি ওয়ার্কস’ শীর্ষক গবেষণাপত্রে এমন পর্যবেক্ষণই উঠে এসেছে। তাঁরা আরও দেখিয়েছেন, অশালীন ভাষা ব্যবহারের ইতিবাচক প্রভাব পুরুষ রাজনীতিকদের ক্ষেত্রে বেশি শক্তিশালী। কারণ, নারী প্রার্থীরা সাধারণত এমনিতেই ইতিবাচকভাবে মূল্যায়িত হন। তাই তাঁদের অশালীন ভাষা ব্যবহার গ্রহণযোগ্যতায় তেমন কোনো প্রভাব ফেলে না। এমনকি অশালীন ভাষা ব্যবহারের ফলে প্রার্থীর প্রতি একটি ইতিবাচক ধারণা তৈরি হয়, যা শেষ পর্যন্ত তাঁকে ভোট দেওয়ার সম্ভাবনা বাড়াতে সাহায্য করে। যদিও গবেষণায় অংশগ্রহণকারীরা সচেতনভাবে অশালীন ভাষার ব্যবহারকে কম বিশ্বাসযোগ্য বলে মনে করেছেন। কিন্তু বাস্তবে এটি তাঁদের ওপর ইতিবাচক প্রভাবই ফেলেছে। এতে বোঝা যায়, অশালীন ভাষার কার্যকারিতা সম্ভবত অবচেতনে কাজ করে।
বলা যেতে পারে, রাজনৈতিক বক্তৃতায় অশালীন ভাষা কেবল একটি আবেগ প্রকাশের উপায় নয়, বরং এটি একটি কৌশলগত যোগাযোগমাধ্যম হিসেবেও কাজ করতে শুরু করেছে। এই প্রবণতা একটি বৃহত্তর রাজনৈতিক পরিবর্তনের ইঙ্গিত বহন করছে। অশালীন শব্দ ব্যবহার এখন আর ব্যতিক্রম নয়, বরং রাজনৈতিক যোগাযোগের একটি কৌশল!
ডোনাল্ড ট্রাম্পের উত্থানের পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে অশালীন ভাষার ক্রমবর্ধমান ব্যবহার দেখা যাচ্ছে। এ নিয়ে অনেকের বিস্ময়, অস্বস্তি ও অসন্তোষ দৃশ্যমান। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ভুল ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মিথ্যা তথ্যের ছড়াছড়ি, মিথ্যা বয়ান। এর বিপরীতে ফ্যাক্টচেকারদের ক্যারিয়ারেরও উত্তরোত্তর উন্নতি ঘটছে।
কিন্তু বাস্তবে এতে কোনো কাজ হচ্ছে কি? মিডিয়াতে মিথ্যা বয়ান কি ঠেকানো যাচ্ছে? ফ্যাক্টচেকিংয়ের শক্তি কি এসব বয়ানের ধার কমাতে পারছে? এখন পর্যন্ত অন্তত তেমন প্রমাণ নেই।
রাজনৈতিক মেরুকরণ এবং ভুল তথ্যের ওপর গবেষণা করেন এমন একজন বিশেষজ্ঞ, কার্ডিফ ইউনিভার্সিটির রাষ্ট্রবিজ্ঞানের প্রভাষক ড. জোসেফ ফিলিপসের মতে, রাজনীতিতে অশালীন ভাষা ব্যবহার কোনো নতুন বিষয় নয়, বরং এটি একটি পুরোনো প্রবণতা।
ঐতিহাসিকভাবে রাজনীতিকেরা আনুষ্ঠানিক বক্তব্যে খুব কমই অশালীন শব্দ ব্যবহার করেন। দৃষ্টান্ত হিসেবে আমেরিকার প্রেসিডেন্টদের কথা ধরলে, ১৯১৯ সালে উড্রো উইলসন প্রথম এই প্রথা ভাঙেন। তবে গত ১০ বছরে এ ধরনের শব্দের ব্যবহার ব্যাপকভাবে বেড়েছে। চলতি বছরের শুরুর দিক পর্যন্ত তথ্য অনুযায়ী, প্রেসিডেন্ট, ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং প্রেসিডেন্ট প্রার্থীরা অন্তত ৬৯২ বার অশালীন শব্দ ব্যবহার করেছেন।
এর মধ্যে ৮৭ শতাংশ (৬০৫ বার) ব্যবহার ঘটেছে গত ১০ বছরে, এবং ৭৮ শতাংশ (৫৩৮ বার) ব্যবহার করেছেন মাত্র দুজন রাজনীতিক—ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং জো বাইডেন। উল্লেখযোগ্যভাবে, উভয় নেতাই তাঁদের মেয়াদকালে অশালীন শব্দের ব্যবহার বাড়িয়েছেন। ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে অশ্লীল শব্দের ব্যবহার তাঁর প্রথম মেয়াদের চেয়ে বেশি। বাইডেন কিছুটা ‘সুশীল’ শব্দ ব্যবহার করলেও, ট্রাম্পের শব্দভান্ডার অনেক বৈচিত্র্যময়, প্রচুর ‘অশ্লীল’ শব্দের সমাহার।
মজার ব্যাপার হলো, রাজনীতিতে ভদ্র ব্যবহার, শালীন পোশাক ও শব্দের ব্যবহার, সুষ্ঠু শৃঙ্খলাপূর্ণ সামাজিক জীবনযাপন ইত্যাদি সভ্যতার উপাদান ভোটের রাজনীতিতে বরাবরই প্রভাব রেখেছে। কিন্তু ইদানীং এসব নিয়ে মানুষের আকাঙ্ক্ষার ঘাটতি দেখা না গেলেও, এর ব্যত্যয় ভোটে খুব একটা প্রভাব ফেলছে না। আবারও দৃষ্টান্ত হিসেবে আমরা আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে নিতে পারি। ট্রাম্পের প্রথম ও দ্বিতীয় মেয়াদের সময়কার নির্বাচনে বিভিন্ন মিডিয়াতে ব্যাপকভাবে ভুল ও মিথ্যা তথ্য ছড়ানো হয়েছে। বলতে গেলে, এর প্রতিক্রিয়ায় ফ্যাক্টচেকিং বিষয়টা মূল ধারায় উঠে এসেছে। লিবারেল গণমাধ্যম ও ব্যক্তিরা এসব মিথ্যা ডিবাঙ্ক করার পেছনে কম অর্থ, শ্রম ও সময় ব্যয় করেননি! কিন্তু বাস্তবে ভোটে এর কোনো প্রভাব প্রতিফলিত হয়নি।
এই ঘটনাকে অনেকের কাছে কাউন্টার ইনটিউটিভ বা অস্বাভাবিক মনে হতে পারে। তবে এর পেছনে কিছু বাস্তব কারণ রয়েছে। কারণগুলোর একটি সারসংক্ষেপ করলে দাঁড়ায়:
বর্তমান সময়ে রাজনৈতিক বিশ্বাসযোগ্যতা তলানিতে এসে ঠেকেছে। বিশেষ করে লিবারেল প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি প্রান্তিক মানুষের আস্থার সংকট তৈরি হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে একজন রাজনীতিবিদের ‘প্রকৃত’ বা ‘বিশ্বাসযোগ্য’ (অথেনটিক বলা ভালো) হওয়াকে জনগণ বিশেষ গুরুত্ব দেয়। অশালীন ভাষার ব্যবহার নেতাদের আরও বেশি অথেনটিক এবং অনানুষ্ঠানিক হিসেবে উপস্থাপন করছে। যেমন বাইডেন ভাইস প্রেসিডেন্ট থাকাকালে অফ-রেকর্ডে ওবামার সঙ্গে কথোপকথনে অশালীন শব্দ ব্যবহার করেছিলেন। সেটিকে লিবারেলরা নিখাদ মানবীয় আবেগ বলে সেলিব্রেট করেছিলেন। সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে এসে প্রতিষ্ঠান প্রশ্নবিদ্ধ হওয়ায় আনুষ্ঠানিকতায় মানুষ আস্থা হারাতে বসেছে। ফলে শালীন ও প্রমিত ভাষার ব্যবহার আবেদন তো তৈরি করছেই না, বরং প্রগাঢ় সন্দেহ তৈরি করছে।
আবার পপুলিস্ট বা জনতুষ্টিবাদী আন্দোলনের এই যুগে, রাজনীতিবিদদের জন্য ‘সাধারণ মানুষ’ হিসেবে নিজেদের উপস্থাপন করা রাজনৈতিকভাবে লাভজনক। সাধারণ মানুষ দৈনন্দিন জীবনে বহু অশালীন শব্দ ব্যবহার করে। তাই রাজনৈতিক বক্তৃতায় এসব শব্দ ব্যবহার করা রাজনীতিকদের আরও বেশি গ্রহণযোগ্য এবং সাধারণের কাছাকাছি হিসেবে উপস্থাপন করে।
যুক্তরাষ্ট্রে সাম্প্রতিক এক জরিপে দেখা গেছে, নতুন প্রজন্মের কাছে বিভিন্ন পরিস্থিতিতে অশালীন শব্দ ব্যবহার করা আগের চেয়ে বেশি গ্রহণযোগ্য। এই প্রবণতা চলতে থাকলে, যাঁরা অশালীন ভাষার কারণে রাজনীতিবিদদের সমালোচনা করেন, সেই গোষ্ঠীর সংখ্যা ক্রমেই হ্রাস পাবে। শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শালীনতা, সভ্যতা, ভব্যতার ওপর যেভাবে জোর দিয়ে থাকে, তাতে তারা দ্রুতই প্রান্তিক হয়ে পড়তে পারে।
আরেকটি বড় বিষয় হলো, পুরোনো রাজনৈতিক ব্যবস্থার প্রতি মানুষের পুঞ্জীভূত ক্ষোভ, প্রতিহিংসা ও প্রতিশোধপরায়ণতায় পর্যবসিত হতে দেখা যাচ্ছে। বিশেষ করে জেন-জি আন্দোলনগুলোতে সেই ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটছে নির্বিচার সহিংসতায়। এই র্যাডিক্যাল অবস্থান জনগণকে চরম রাজনৈতিক আনুগত্যের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এই আনুগত্য এতটাই শক্তিশালী যে পছন্দের নেতার ভাষা নিয়ে কিছুটা অস্বস্তি ও বিরক্তি থাকলেও প্রতিপক্ষের প্রতি ক্ষোভের কাছে সেটি তুচ্ছ মনে হচ্ছে। তাই, পছন্দের নেতার অশালীন ভাষা রাজনৈতিক আনুগত্যে তেমন প্রভাব ফেলছে না।
একইভাবে রাজনৈতিক নেতাদের মিথ্যাচারও ভোটারদের মনে তেমন নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে না। রাজনৈতিক এলিট, রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠান, করপোরেট ও তথাকথিত ডিপস্টেট বৈষম্য নিরসনের মাধ্যমে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গঠনে ধারাবাহিকভাবে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। ফলে নব্য রক্ষণশীলদের নতুন বয়ান তৈরির আগেই সাধারণ মানুষ এসব প্রতিষ্ঠানকে প্রতিপক্ষ সাব্যস্ত করে ফেলেছে। ফলে এই নিবর্তনমূলক ব্যবস্থা ভেঙে ফেলার প্রতিশ্রুতি নিয়ে হাজির হওয়া রাজনৈতিক নেতারা মিথ্যা বললেও, সেই গল্প মূলত ক্ষুব্ধ জনতার ‘কনফারমেশন বায়াসকে’ শক্তিশালী করছে। যতই ফ্যাক্টচেক, মূলধারার গণমাধ্যমে ডিবাঙ্ক করা হোক না কেন—লিবারেলদের কোনো প্রচেষ্টাই কাজে আসছে না।
সম্প্রতি নিকোলেটা ক্যাভাজ্জা এবং মার্গারিটা গুইডেত্তির লেখা ‘সোয়েরিং ইন পলিটিক্যাল ডিসকোর্স: হোয়াই ভালগারিটি ওয়ার্কস’ শীর্ষক গবেষণাপত্রে এমন পর্যবেক্ষণই উঠে এসেছে। তাঁরা আরও দেখিয়েছেন, অশালীন ভাষা ব্যবহারের ইতিবাচক প্রভাব পুরুষ রাজনীতিকদের ক্ষেত্রে বেশি শক্তিশালী। কারণ, নারী প্রার্থীরা সাধারণত এমনিতেই ইতিবাচকভাবে মূল্যায়িত হন। তাই তাঁদের অশালীন ভাষা ব্যবহার গ্রহণযোগ্যতায় তেমন কোনো প্রভাব ফেলে না। এমনকি অশালীন ভাষা ব্যবহারের ফলে প্রার্থীর প্রতি একটি ইতিবাচক ধারণা তৈরি হয়, যা শেষ পর্যন্ত তাঁকে ভোট দেওয়ার সম্ভাবনা বাড়াতে সাহায্য করে। যদিও গবেষণায় অংশগ্রহণকারীরা সচেতনভাবে অশালীন ভাষার ব্যবহারকে কম বিশ্বাসযোগ্য বলে মনে করেছেন। কিন্তু বাস্তবে এটি তাঁদের ওপর ইতিবাচক প্রভাবই ফেলেছে। এতে বোঝা যায়, অশালীন ভাষার কার্যকারিতা সম্ভবত অবচেতনে কাজ করে।
বলা যেতে পারে, রাজনৈতিক বক্তৃতায় অশালীন ভাষা কেবল একটি আবেগ প্রকাশের উপায় নয়, বরং এটি একটি কৌশলগত যোগাযোগমাধ্যম হিসেবেও কাজ করতে শুরু করেছে। এই প্রবণতা একটি বৃহত্তর রাজনৈতিক পরিবর্তনের ইঙ্গিত বহন করছে। অশালীন শব্দ ব্যবহার এখন আর ব্যতিক্রম নয়, বরং রাজনৈতিক যোগাযোগের একটি কৌশল!
যশোর-খুলনা অঞ্চলের দুঃখ বলা হয় ভবদহকে। কারণ, প্রায় চার দশক ধরে এ অঞ্চলের লাখ লাখ মানুষ এক অভিশপ্ত জলাবদ্ধতার শিকার। বছরের অধিকাংশ সময়ই তারা পানির মধ্যে নিমজ্জিত থাকে। বিভিন্ন সরকারের আমলে জলাবদ্ধতা নিরসনে নানা প্রকল্প গ্রহণ করা হলেও কোনোটাই তাদের জীবনে স্বস্তি বয়ে আনেনি।
১২ ঘণ্টা আগেকাতারের আকাশে সেই রাতের নীরবতা হঠাৎই ভেঙে গেল এক ভয়ংকর বিস্ফোরণের গর্জনে। দোহায় হামাসের এক শীর্ষ নেতাকে লক্ষ্য করে ইসরায়েলের ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ যেন শুধু একটি বাড়ি নয়, ভেঙে দিল গোটা মধ্যপ্রাচ্যের দীর্ঘদিনের নিরাপত্তা-সমীকরণের দেয়াল। কাতার—যে নগরী এত দিন কূটনৈতিক আলোচনার মঞ্চ ছিল...
১২ ঘণ্টা আগেগাজার বোমা আর ক্ষুধার ঘায়ে জর্জরিত ফিলিস্তিনিদের ক্ষতে ক্ষণিকের হলেও স্বস্তির পরশ দিচ্ছে তাদের রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পথে স্বীকৃতির ‘ঘনঘটা’। ইতিহাসের পরিহাস, স্বীকৃতিদাতা কিছু দেশেরই অস্ত্রশস্ত্র, কূটনৈতিক সমর্থনে পুষ্ট হয়ে ফিলিস্তিনিদের পীড়ন করে এসেছে ক্ষমতাদর্পী ইসরায়েল। ইসরায়েল গাজার সাধারণ বাসিন্দাদ
১ দিন আগেবাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে আওয়ামী লীগের পরেই বড় দল হলো বিএনপি। ২০২৪ সালের জুলাই আন্দোলনে আওয়ামী লীগের পতনের পর এখন বিএনপিই বড় দল। এই দল স্বৈরাচার এরশাদবিরোধী আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। জুলাই আন্দোলনের পটপরিবর্তনের পর জামায়াতে ইসলামী এখন বিএনপির বড় প্রতিপক্ষ। একসময় এ দুটি দল জোটবদ্ধ
১ দিন আগে