Ajker Patrika

ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি: সূর্য ওঠার পথে আরেক ধাপ

সুমন কায়সার
ইসরায়েলের নৃশংসতা থামাতে নিষেধাজ্ঞার মতো বাড়তি ব্যবস্থা দরকার। ছবি: এএফপি
ইসরায়েলের নৃশংসতা থামাতে নিষেধাজ্ঞার মতো বাড়তি ব্যবস্থা দরকার। ছবি: এএফপি

গাজার বোমা আর ক্ষুধার ঘায়ে জর্জরিত ফিলিস্তিনিদের ক্ষতে ক্ষণিকের হলেও স্বস্তির পরশ দিচ্ছে তাদের রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পথে স্বীকৃতির ‘ঘনঘটা’। ইতিহাসের পরিহাস, স্বীকৃতিদাতা কিছু দেশেরই অস্ত্রশস্ত্র, কূটনৈতিক সমর্থনে পুষ্ট হয়ে ফিলিস্তিনিদের পীড়ন করে এসেছে ক্ষমতাদর্পী ইসরায়েল। ইসরায়েল গাজার সাধারণ বাসিন্দাদের অবর্ণনীয় দুর্ভোগের অবসান ঘটাতে দ্রুত যুদ্ধবিরতিতে রাজি না হলে স্বীকৃতির পথে হাঁটার ঘোষণা কিছুদিন আগেই (বিভিন্ন সময়ে) দিয়েছিলেন ১০টি দেশের নেতারা। রোববার তাদের মধ্যে চারটি দেশ (যুক্তরাজ্য, কানাডা, পর্তুগাল ও অস্ট্রেলিয়া) স্বীকৃতির ঘোষণা দেয়। নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের বার্ষিক অধিবেশনের আগে আগে ফ্রান্স ও সৌদি আরবের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এক বৈশ্বিক শীর্ষ সম্মেলনে আসে ফ্রান্সসহ ছয় দেশের স্বীকৃতির ঘোষণা। শিগগির স্বীকৃতির পথে আছে স্পেন, সুইডেন, নরওয়ে, আয়ারল্যান্ড ও নিউজিল্যান্ড।

দীর্ঘদিন ধরে স্থবির হয়ে থাকা ‘দ্বিরাষ্ট্রভিত্তিক সমাধান’ প্রক্রিয়া আবার চাঙা করার লক্ষ্যে এই শীর্ষ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। ফ্রান্স ছাড়া সোমবার স্বীকৃতি দেওয়া অন্য পাঁচ দেশ হচ্ছে বেলজিয়াম, লুক্সেমবার্গ, মাল্টা, অ্যান্ডোরা ও স্যান মারিনো। কয়েক দশক ধরে কার্যকারিতা তথা প্রাসঙ্গিকতা হারিয়ে ফেলার অভিযোগ উঠেছে জাতিসংঘের বিরুদ্ধে। পাঁচ স্থায়ী সদস্যের ভেটো ক্ষমতার জেরে নখদন্তহীন হয়ে পড়া এই বিশ্ব সংস্থার অধিবেশনকে অনেকে বলেন নিছক ‘টকিং শপ’। তবে ২০২৫ সালের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনটিকে হয়তো অন্তত একটি স্থায়ী সদস্যদেশের (ফ্রান্স) ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দান এবং ‘দ্বিরাষ্ট্রভিত্তিক সমাধান’ নিয়ে শীর্ষ সম্মেলনের মতো ঘটনার কারণে আলাদাভাবে মনে রাখা হবে। গাজা পরিস্থিতি তথা ফিলিস্তিন ইস্যু অধিবেশনের আলোচ্যসূচির শীর্ষেও থাকতে পারে। এবারের অধিবেশনে উপস্থিত থাকবেন ১৪০ জনের বেশি বিশ্বনেতা।

সব মিলিয়ে এ পর্যন্ত জাতিসংঘের সদস্যদেশগুলোর প্রায় ৮০ শতাংশই স্বীকৃতি দিয়েছে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে। এর ফলে ‘নিজ ভূমে পরবাসী’ ফিলিস্তিনিদের স্বাধীন রাষ্ট্র মেনে নেওয়ার জন্য ইসরায়েলের এবং তার এক নম্বর পৃষ্ঠপোষক যুক্তরাষ্ট্রের ওপর চাপ ব্যাপকভাবে বাড়ল। এবং দৃশ্যত এই চাপ বাড়তেই থাকবে।

ইসরায়েল রাষ্ট্রটি তার প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিশ্বসমাজে এই পর্যায়ের ‘একঘরে’ কখনোই হয়নি। দীর্ঘদিনের মিত্ররা তার নীতির সমালোচনায় মুখ খুলতে বাধ্য হয়েছে; বিশেষ করে গাজায় হামাসের হামলার প্রতিশোধ নিতে প্রায় দুই বছর ধরে ইসরায়েল ফিলিস্তিনিদের ওপর যে নজিরবিহীন ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে, তা-ই ত্বরান্বিত করেছে এই পরিস্থিতিকে।

এই মুহূর্তে ফিলিস্তিনকে একযোগে একগুচ্ছ দেশের স্বীকৃতির তাৎপর্য কী, তা নিয়ে অনেক কথাই হচ্ছে। অনেকে গাজায় ইসরায়েলের অব্যাহত ধ্বংস ও হত্যাযজ্ঞ আর যুক্তরাষ্ট্রসহ মিত্রদেশগুলোর সামরিক, কূটনৈতিক সমর্থন বহাল থাকার বিবেচনা থেকে বিষয়টি নিছক প্রতীকী হিসেবে আখ্যায়িত করছেন। তবে এর বিপরীত মতও আছে। এবং সেই প্রবণতাই দৃশ্যত বেশি জোরালো।

যুক্তরাষ্ট্র, নরওয়েসহ পশ্চিমা মিত্রদের মধ্যস্থতায় অর্জিত অসলো (যাকে নামকাওয়াস্তে বলে উড়িয়ে দিয়েছেন কেউ কেউ) চুক্তি মুখ থুবড়ে পড়ার অনেক দিন পর সাম্প্রতিক স্বীকৃতিগুলোর মাধ্যমে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার তৎপরতা আবার চাঙা হচ্ছে। নিছক নীতিনৈতিকতার তাগিদ থেকে এই স্বীকৃতির ঢেউ শুরু হয়েছে, তা নয়। তা ছাড়া নিজ দেশের জনমতের প্রবল চাপ তো ছিলই। ইসরায়েলের ঘনিষ্ঠ মিত্রদের অনেকে এখন দুই বছর ধরে চলমান নজিরবিহীন হত্যা আর ধ্বংসযজ্ঞের দায়ের ভাগীদার হওয়া নিয়ে উদ্বিগ্ন। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত ও জাতিসংঘ এবং বিশ্বের বিভিন্ন মানবাধিকার প্রতিষ্ঠান গাজায় যা চলছে, তাকে গণহত্যা বলে রায় দিয়েছে। যুদ্ধ থামানোর বিষয়ে ইসরায়েলের টানা একগুঁয়েমি ও ঔদ্ধত্যে বিরক্ত ইউরোপীয় নেতারা শেষ পর্যন্ত গাজায় রক্তক্ষয়ের অবসান ঘটাতে তাঁদের হাতে থাকা কিছু তাস খেলতে চাইছেন। মিত্র যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সরাসরি সংঘাতে না গিয়েও তা সম্ভব।

এখন স্বীকৃতিতে বিশেষ উৎসাহিত না হওয়াদের দলও খুব ছোট নয়। তাদের এই মনোভাবের পেছনে কাজ করছে মধ্যপ্রাচ্যের এই প্রধান সংকট সমাধানের অতীত চেষ্টাগুলোর পরিণতির তিক্ত স্মৃতি। যেমন নিষেধাজ্ঞার মতো কোনো সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ ছাড়া যুক্তরাজ্যের স্বীকৃতিকে ‘একটি ফাঁকা পদক্ষেপ’ আখ্যা দিয়েছে মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। গণহত্যায় হাত মেলানোর দায় থেকে বাঁচতেই যুক্তরাজ্য এই স্বীকৃতি দিয়েছে এমন সমালোচনাও রয়েছে। খোদ ব্রিটিশ আন্দোলনকর্মীদেরই সংগঠন কেজ ইন্টারন্যাশনাল এমন অভিযোগ করেছে। ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সময়ের সঙ্গে তুলনা করে সংগঠনটি আরও বলেছে, ‘এই স্বীকৃতি এসেছে ৭৭ বছর দেরিতে।’

মধ্যপ্রাচ্যে দ্বন্দ্ব-সংঘাত নিরসন, মানবাধিকার ইত্যাদি নিয়ে কাজ করে কাউন্সিল ফর আরব-ব্রিটিশ আন্ডারস্ট্যান্ডিং। এর পরিচালক ক্রিস ডয়েল রাখঢাক না করেই বলেছেন, গাজায় ইসরায়েলের গণহত্যা ঠেকাতে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি মোটেই যথেষ্ট নয়। তাঁর মতে, যেসব দেশ স্বীকৃতি দিচ্ছে, ঠিক তারাই এই গণহত্যা বন্ধ করতে চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে। ইসরায়েলের নৃশংসতা থামাতে নিষেধাজ্ঞার মতো বাড়তি ব্যবস্থা দরকার। তাঁর সঙ্গে একমত আরও অনেকে।

তারপরও মনে রাখা দরকার, ফিলিস্তিনিদের সাম্প্রতিক স্বীকৃতির নেতৃত্বে রয়েছে বরাবর ইসরায়েলের জোরদার সমর্থক হিসেবে পরিচিত পশ্চিমারা। অতীতে ইসরায়েলের দখলদারত্ব এবং অসামঞ্জস্যপূর্ণ সামরিক অভিযানে মানবিক বিপর্যয়ে কাগুজে নিন্দা ছাড়া কার্যত নিষ্ক্রিয়তা দেখিয়ে এসেছে তারা। দীর্ঘদিনের সেই নৈতিক ও রাজনৈতিক অবস্থানে পরিবর্তনের স্পষ্ট ইঙ্গিত এই স্বীকৃতি।

আন্তর্জাতিক আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর ওপর আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে কিছু বাধ্যবাধকতাও আসবে। তাদের এখন একটি ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের রাজনৈতিক অখণ্ডতাকে সম্মান করতে হবে। তার অর্থ দাঁড়ায়, ফিলিস্তিনের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের অবৈধ কোনো কর্মকাণ্ডে তারা সায় দিতে পারবে না। একে অর্জন বলে মানতেই হবে।

বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর ইসরায়েল ফিলিস্তিনিদের এই উল্লেখযোগ্য মাত্রার স্বীকৃতির জবাব কীভাবে দেয়, তা নজর রাখার মতো বিষয়। তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় নেতানিয়াহু আবারও বলেছেন, একটি ফিলিস্তিন রাষ্ট্র কখনোই হবে না। গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীও তাদের হামলায় একটুও ক্ষান্ত দেয়নি। ইসরায়েলি নেতারা স্বীকৃতির বিষয়টিকে ‘সার্কাস’ ও ‘হামাসের জন্য পুরস্কার’ বলে অভিহিত করেছেন। উগ্রপন্থী নেতাদের কথায় ধারণা করা হচ্ছে, নেতানিয়াহু অধিকৃত পশ্চিম তীরের কিছু অংশ বা পুরোটাই ইসরায়েলের ভূখণ্ডের সঙ্গে যুক্ত করে নেওয়ার ঘোষণা দিতে পারেন। এরই মধ্যে মিত্র যুক্তরাজ্য ও জার্মানিকে সেই পথে না হাঁটতে সতর্ক করে দিয়েছে দেশটি। আরও ফিলিস্তিন ভূখণ্ড সংযুক্ত করার চেষ্টা সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের অন্য দেশগুলোও ভালোভাবে নেবে না। ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার জন্য মার্কিন-মধ্যস্থতায় আব্রাহাম চুক্তি সই করা সংযুক্ত আরব আমিরাত ইতিমধ্যে বলেছে, ভূখণ্ড সংযুক্তিকরণ হবে একটি ‘লাল রেখা’, যা অতিক্রম করা যাবে না। সৌদি আরবও গাজায় ইসরায়েলি হামলা শুরুর পর থেকে একাধিকবার বলেছে, ফিলিস্তিনিদের জন্য একটি অর্থপূর্ণ রাজনৈতিক সম্ভাবনা না দেওয়া পর্যন্ত তারা আগ্রহ থাকলেও আব্রাহাম চুক্তিতে যোগ দেবে না। এমন অবস্থায় নেতানিয়াহু যে এক কঠিন চাপে পড়েছেন, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।

লন্ডনে ‘রাতারাতি’ প্যালেস্টাইন মিশন থেকে প্যালেস্টাইন এম্বাসিতে রূপ নেওয়া ভবনটির সামনে সোমবার ওড়ানো হয়েছে চার রঙা ফিলিস্তিন পতাকা। যুক্তরাজ্যের ঘোষিত স্বীকৃতি উদ্‌যাপনেই এই আনুষ্ঠানিকতার আয়োজন। হ্যামারস্মিথের ৫ নম্বর গালেনা রোডের লাল ইটের ভবনটির সামনে সমবেতদের অন্য কারও মনে এসেছিল কি না কে জানে, নতুন ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূত হুসান জোমলত ঠিকই ইঙ্গিত করলেন ব্যালফুর ঘোষণার দিকে। ব্রিটেনের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আর্থার ব্যালফুরের ঘোষণার ধারাবাহিকতায় ইসরায়েল রাষ্ট্রের পত্তন বিপর্যয় ডেকে এনেছে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ফিলিস্তিনির জন্য। সেই ব্রিটেনেরই এক শতাব্দীর বেশি পরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইভেট কুপার এখন বলছেন, ‘ইসরায়েলের পাশাপাশি ফিলিস্তিনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয়তা’ থেকে তার দেশের স্বীকৃতি দেবার সিদ্ধান্ত।’

ব্যালফুরের ঘোষণা আর স্বীকৃতির কথা জানিয়ে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের টুইটার পোস্টের মধ্যে সময়ের ব্যবধান ১১০ বছর প্রায়। এর মধ্যে টেমস নদী দিয়ে যেমন গড়িয়ে গেছে অনেক পানি, তেমনি ঐতিহাসিক ‘প্যালেস্টাইনের’ মরুর বুকে বয়ে গেছে কয়েক প্রজন্মের লাখো ফিলিস্তিনির রক্ত আর অশ্রুর কতশত অদেখা নদী।

যুক্তরাষ্ট্রসহ মিত্রদের হস্তক্ষেপের মধ্য দিয়ে ইসরায়েলের রাশ টানা না হলে এসব কূটনৈতিক উদ্যোগে কোনো ফায়দা আসবে না—অনেক পর্যবেক্ষকের এই সতর্কতার পরও বলা যায়, গতি অতিধীর হলেও ইতিহাসের চাকার পুরো পাক ঘোরা হয়তো শেষ হতে চলেছে। বিশ্বের নানা প্রান্তে কিছুদিন ধরে তারই আভাস। অনেক ছবির মধ্যে খোদ যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসসহ দেশজুড়ে শহর-জনপদের মিছিল, ফ্রান্সের কয়েক ডজন শহরের মেয়রের ফিলিস্তিনের পতাকা উড়িয়ে দেওয়া আর এখনো স্বীকৃতি দিতে গড়িমসি করা ইতালির শহর-বন্দর অচল করা গণবিক্ষোভ সে কথাই বলে। অভ্যন্তরীণ রাজনীতি ও অর্থনীতি এবং আঞ্চলিক পররাষ্ট্রনীতির বাধ্যবাধকতা আর ‘মিলিটারি ইন্ডাস্ট্রিয়াল কমপ্লেক্সের’ স্বার্থচিন্তার পরও নিজের ভাবমূর্তি আর অবস্থানের ক্ষতি করে মার্কিন সরকারের ইসরায়েলকে অন্ধভাবে রক্ষা করে যাওয়ার দিনও হয়তো ফুরিয়ে আসছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ড. ইউনূসের সফরসঙ্গী হয়েও ফখরুল–আখতাররা ভিভিআইপি সুবিধা পাননি কেন—জানাল প্রেস উইং

এক নারীকে স্ত্রী দাবি করে দুই পুরুষের টানাটানি, শেষে ৩ জনই কারাগারে

আ.লীগের ঝটিকা মিছিল: মানিকগঞ্জের প্যানেল মেয়র আরশেদ আলীসহ চারজন কারাগারে

অবসরে যাওয়া দুই কর কমিশনারকে পদোন্নতি

স্পিকারের বাসভবনই হবে প্রধানমন্ত্রীর অস্থায়ী আবাস

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত