আমিনুল ইসলাম নাবিল, ঢাকা
এই শহরে পেতে রাখা ফাঁদে শুধু নাম, স্থান আর ধরন পরিবর্তন হয়; ফলাফল একটাই ‘মৃত্যু’। বাসা থেকে বেরিয়ে আবার নিরাপদে ফিরতে পারাই যেন বড় সৌভাগ্যের ব্যাপার! কখন যে বাস পিষে দেবে কিংবা হাঁটাপথে মাথায় পড়বে ইট—সেটির নিশ্চয়তা নেই। অন্ধকার গলিতে ছিনতাইকারীর কবলে পড়েও হারাতে পারেন প্রাণ, কিংবা ফাঁকা বাসে ড্রাইভার-হেলপারের পাশবিক লালসার শিকারও হতে পারেন। রাস্তার চ্যালেঞ্জ উতরে ‘বেঁচে গেলাম’ বলে আত্মতুষ্টির সুযোগও নেই। কেননা, পরিবার কিংবা বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে মেতে ওঠার জায়গাও নিরাপদ নয়। বেইলি রোডের ঘটনা সেটিই প্রমাণ করল।
প্রতিটি ঘটনাতেই কদিন খুব বিলাপ চলে। কান্নাকাটি থামলেই বসে নানা আলোচনা-সমালোচনার আসর। আলোচনায় ঘি ঢালে ব্যক্তির রাজনৈতিক, ধর্মীয়সহ আরও নানা পরিচয়। কী নিয়ে যে আলোচনা শুরু হয়েছিল, সেটিই তখন মনে করা মুশকিল হয়ে দাঁড়ায়। ভিউ বাণিজ্যের কথা না-ইবা বললাম। ইস্যুকে বাঁচিয়ে রেখে ভিউ বাড়িয়ে টাকা কামানোই তাঁদের ধান্দা। সোশ্যাল মিডিয়ায় বিতর্কের ভিড়ে কখন যে মূল বিষয়টা গায়েব হয়ে যায়, সেটি টেরই পাওয়া যায় না! ঘুরতে ঘুরতে দেখা যায় শেষমেশ দায়ভারটা গিয়ে পড়ে ভুক্তভোগীরই ঘাড়ে। এই যেমন—কোনো নারীকে যদি ধর্ষণ করে হত্যা করা হয়, তখন আলোচনার মঞ্চ দখল করে—‘ধর্ষণের জন্য পোশাক দায়ী কি না।' ইনিয়ে-বিনিয়ে এসব খুনকেই যেন ন্যায্যতা দেওয়ার চেষ্টা!
বেইলি রোডের ঘটনাটিই দেখুন—৪৬টি তাজা প্রাণ নিমেষেই নিভে গেল। এ ঘটনায় আমাদের কারোরই (সাধারণ মানুষ) আসলে তেমন কিছুই করার নেই। যাঁদের করার কথা, তাঁদের বিরুদ্ধে কথা বলার সাহসটুকুও আমাদের নেই। যেকোনো ঘটনার পর তাই সহজ সমাধান হিসেবে আমরা বেছে নিয়েছি, ইনিয়ে-বিনিয়ে ভুক্তভোগীদের ওপরই দোষ চাপানো কিংবা এমন কারও ওপর দায় দেওয়া, যাদের গালি দেওয়া মোটামুটি নিরাপদ।
এই যে হুট করে রেস্টুরেন্ট কালচার কেন গড়ে উঠল, সোশ্যাল মিডিয়ায় শো-অফ জেনারেশন কেন কিংবা ফুড ভ্লগাররা কেন সেফটি নিয়ে কথা বলেন না—এসব নিয়ে প্রশ্ন তোলা মূলত ক্ষমতার বিরুদ্ধে কথা বলতে না পারার অপারগতা থেকেই।
বিশ্বের অন্য কোনো দেশে কি মানুষ রেস্টুরেন্টে খেতে যায় না? গাছ কেটে, খাল ভরাট করে, মাঠ দখল করে বিনোদনকেন্দ্রগুলোকে কেন গলাটিপে হত্যা করা হলো—এই বিষয়ে কিন্তু আলোচনা কম। ভবনের নকশা থেকে শুরু করে সব জায়গায় গলদ। সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল ছাড়া এসব সাধারণ মানুষের পক্ষে ঠিক করা আদৌ কি সম্ভব?
প্রশ্ন হচ্ছে—ফুড ভ্লগারদেরই যদি এসব সেফটি নিয়ে কাজ করতে হয়, তাহলে সেফটির বিষয় দেখভালে রাষ্ট্র যাঁদের বেতন দিচ্ছে, তাঁরা কি ফুড ভ্লগিংয়ের কাজ শুরু করবেন? সোশ্যাল অ্যাওয়ারনেস বাড়িয়ে যদি সবকিছু পার পাওয়াই যেত, তাহলে তো আর রাষ্ট্রকাঠামোর প্রয়োজন ছিল না। বুলি না আউড়িয়ে, একে ওপরকে দোষারোপ না করে আমাদের উচিত কার্যকর প্রতিবাদে শামিল হওয়া, সেটি না পারলে অন্তত চুপ থাকা।
আলোচনা-সমালোচনা ও সোশ্যাল মিডিয়ায় বিতর্কের ভিড়ে যাঁদের বিরুদ্ধে আঙুল তোলা দরকার ছিল, তাঁরা নির্বিঘ্নেই পার পেয়ে যাচ্ছেন। তাঁরা হয়তো এসব আলোচনাতে খুশিই হন; আবার নতুন করে মুনাফার ছক কষেন; কেউ আবার বান্ডিল পকেটে ভরে কলমের একটি খোঁচা দিয়ে মেতে ওঠেন অট্টহাসিতে।
এরপর আবার হয়তো অন্য কেউ, অন্য কোনো স্থানে কিংবা অন্য কোনোভাবে অপমৃত্যুর তালিকায় উঠে আসবে। তখনো আমরা কদিন কান্নাকাটির পর মেতে উঠব পরস্পর দোষারোপে, বিতর্ক ও আলোচনা-সমালোচনায়।
লেখক: আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক
এই শহরে পেতে রাখা ফাঁদে শুধু নাম, স্থান আর ধরন পরিবর্তন হয়; ফলাফল একটাই ‘মৃত্যু’। বাসা থেকে বেরিয়ে আবার নিরাপদে ফিরতে পারাই যেন বড় সৌভাগ্যের ব্যাপার! কখন যে বাস পিষে দেবে কিংবা হাঁটাপথে মাথায় পড়বে ইট—সেটির নিশ্চয়তা নেই। অন্ধকার গলিতে ছিনতাইকারীর কবলে পড়েও হারাতে পারেন প্রাণ, কিংবা ফাঁকা বাসে ড্রাইভার-হেলপারের পাশবিক লালসার শিকারও হতে পারেন। রাস্তার চ্যালেঞ্জ উতরে ‘বেঁচে গেলাম’ বলে আত্মতুষ্টির সুযোগও নেই। কেননা, পরিবার কিংবা বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে মেতে ওঠার জায়গাও নিরাপদ নয়। বেইলি রোডের ঘটনা সেটিই প্রমাণ করল।
প্রতিটি ঘটনাতেই কদিন খুব বিলাপ চলে। কান্নাকাটি থামলেই বসে নানা আলোচনা-সমালোচনার আসর। আলোচনায় ঘি ঢালে ব্যক্তির রাজনৈতিক, ধর্মীয়সহ আরও নানা পরিচয়। কী নিয়ে যে আলোচনা শুরু হয়েছিল, সেটিই তখন মনে করা মুশকিল হয়ে দাঁড়ায়। ভিউ বাণিজ্যের কথা না-ইবা বললাম। ইস্যুকে বাঁচিয়ে রেখে ভিউ বাড়িয়ে টাকা কামানোই তাঁদের ধান্দা। সোশ্যাল মিডিয়ায় বিতর্কের ভিড়ে কখন যে মূল বিষয়টা গায়েব হয়ে যায়, সেটি টেরই পাওয়া যায় না! ঘুরতে ঘুরতে দেখা যায় শেষমেশ দায়ভারটা গিয়ে পড়ে ভুক্তভোগীরই ঘাড়ে। এই যেমন—কোনো নারীকে যদি ধর্ষণ করে হত্যা করা হয়, তখন আলোচনার মঞ্চ দখল করে—‘ধর্ষণের জন্য পোশাক দায়ী কি না।' ইনিয়ে-বিনিয়ে এসব খুনকেই যেন ন্যায্যতা দেওয়ার চেষ্টা!
বেইলি রোডের ঘটনাটিই দেখুন—৪৬টি তাজা প্রাণ নিমেষেই নিভে গেল। এ ঘটনায় আমাদের কারোরই (সাধারণ মানুষ) আসলে তেমন কিছুই করার নেই। যাঁদের করার কথা, তাঁদের বিরুদ্ধে কথা বলার সাহসটুকুও আমাদের নেই। যেকোনো ঘটনার পর তাই সহজ সমাধান হিসেবে আমরা বেছে নিয়েছি, ইনিয়ে-বিনিয়ে ভুক্তভোগীদের ওপরই দোষ চাপানো কিংবা এমন কারও ওপর দায় দেওয়া, যাদের গালি দেওয়া মোটামুটি নিরাপদ।
এই যে হুট করে রেস্টুরেন্ট কালচার কেন গড়ে উঠল, সোশ্যাল মিডিয়ায় শো-অফ জেনারেশন কেন কিংবা ফুড ভ্লগাররা কেন সেফটি নিয়ে কথা বলেন না—এসব নিয়ে প্রশ্ন তোলা মূলত ক্ষমতার বিরুদ্ধে কথা বলতে না পারার অপারগতা থেকেই।
বিশ্বের অন্য কোনো দেশে কি মানুষ রেস্টুরেন্টে খেতে যায় না? গাছ কেটে, খাল ভরাট করে, মাঠ দখল করে বিনোদনকেন্দ্রগুলোকে কেন গলাটিপে হত্যা করা হলো—এই বিষয়ে কিন্তু আলোচনা কম। ভবনের নকশা থেকে শুরু করে সব জায়গায় গলদ। সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল ছাড়া এসব সাধারণ মানুষের পক্ষে ঠিক করা আদৌ কি সম্ভব?
প্রশ্ন হচ্ছে—ফুড ভ্লগারদেরই যদি এসব সেফটি নিয়ে কাজ করতে হয়, তাহলে সেফটির বিষয় দেখভালে রাষ্ট্র যাঁদের বেতন দিচ্ছে, তাঁরা কি ফুড ভ্লগিংয়ের কাজ শুরু করবেন? সোশ্যাল অ্যাওয়ারনেস বাড়িয়ে যদি সবকিছু পার পাওয়াই যেত, তাহলে তো আর রাষ্ট্রকাঠামোর প্রয়োজন ছিল না। বুলি না আউড়িয়ে, একে ওপরকে দোষারোপ না করে আমাদের উচিত কার্যকর প্রতিবাদে শামিল হওয়া, সেটি না পারলে অন্তত চুপ থাকা।
আলোচনা-সমালোচনা ও সোশ্যাল মিডিয়ায় বিতর্কের ভিড়ে যাঁদের বিরুদ্ধে আঙুল তোলা দরকার ছিল, তাঁরা নির্বিঘ্নেই পার পেয়ে যাচ্ছেন। তাঁরা হয়তো এসব আলোচনাতে খুশিই হন; আবার নতুন করে মুনাফার ছক কষেন; কেউ আবার বান্ডিল পকেটে ভরে কলমের একটি খোঁচা দিয়ে মেতে ওঠেন অট্টহাসিতে।
এরপর আবার হয়তো অন্য কেউ, অন্য কোনো স্থানে কিংবা অন্য কোনোভাবে অপমৃত্যুর তালিকায় উঠে আসবে। তখনো আমরা কদিন কান্নাকাটির পর মেতে উঠব পরস্পর দোষারোপে, বিতর্ক ও আলোচনা-সমালোচনায়।
লেখক: আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক
দেশের দু’টি সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ—ঢাকা ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রশিবিরের অভাবনীয় উত্থান সাম্প্রতিক ছাত্রসংসদ নির্বাচনে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। যে সংগঠনটি অতীতে রাজনৈতিক সহিংসতা, সন্ত্রাস ও সাম্প্রদায়িক রাজনীতির কারণে নিষিদ্ধ ছিল, তারাই কীভাবে এত সংখ্যক পদে জয়ী হলো—এই প্রশ্ন শিক্ষিত সমাজকে
৩ ঘণ্টা আগেযশোর-খুলনা অঞ্চলের দুঃখ বলা হয় ভবদহকে। কারণ, প্রায় চার দশক ধরে এ অঞ্চলের লাখ লাখ মানুষ এক অভিশপ্ত জলাবদ্ধতার শিকার। বছরের অধিকাংশ সময়ই তারা পানির মধ্যে নিমজ্জিত থাকে। বিভিন্ন সরকারের আমলে জলাবদ্ধতা নিরসনে নানা প্রকল্প গ্রহণ করা হলেও কোনোটাই তাদের জীবনে স্বস্তি বয়ে আনেনি।
২০ ঘণ্টা আগেডোনাল্ড ট্রাম্পের উত্থানের পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে অশালীন ভাষার ক্রমবর্ধমান ব্যবহার দেখা যাচ্ছে। এ নিয়ে অনেকের বিস্ময়, অস্বস্তি ও অসন্তোষ দৃশ্যমান। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ভুল ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মিথ্যা তথ্যের ছড়াছড়ি, মিথ্যা বয়ান। এর বিপরীতে ফ্যাক্টচেকারদের ক্যারিয়ারেরও উত্তরোত্তর উন্নতি ঘটছে।
২০ ঘণ্টা আগেকাতারের আকাশে সেই রাতের নীরবতা হঠাৎই ভেঙে গেল এক ভয়ংকর বিস্ফোরণের গর্জনে। দোহায় হামাসের এক শীর্ষ নেতাকে লক্ষ্য করে ইসরায়েলের ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ যেন শুধু একটি বাড়ি নয়, ভেঙে দিল গোটা মধ্যপ্রাচ্যের দীর্ঘদিনের নিরাপত্তা-সমীকরণের দেয়াল। কাতার—যে নগরী এত দিন কূটনৈতিক আলোচনার মঞ্চ ছিল...
২০ ঘণ্টা আগে