চিররঞ্জন সরকার
কান টানলে যেমন মাথা আসে, তেমনি ছাতার প্রসঙ্গ এলেও অনিবার্যভাবেই মাথা এসে যায়। বর্তমানে এই বর্ষা-বাদলের দিনে ছাতা ছাড়া মাথার কথা চিন্তাও করা যায় না। আসলে মাথা নিয়ে আমাদের মাথাব্যথার অন্ত নেই। শরীরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গই হচ্ছে মাথা। সবকিছু বাদ দিলে হয়তো মাথা সচল থাকে; কিন্তু মাথা বাদ দিলে সমস্তই অচল। তাই এ মাথাকে রক্ষা করতে আমাদের সারাক্ষণই মাথা ঘামাতে হয়। আমরা বলতে পারি: ‘সবার ওপরে মাথা সত্য, তাহার ওপরে নাই।’ আর এই ‘হেড’-কে ‘শেড’ দিতে মানুষ আবিষ্কার করেছে ছাতা। মানুষের অনেক সুমহান সৃষ্টি, এমনকি অনেক সুমহান সভ্যতা ধ্বংস হয়ে গেলেও ছাতা আজও অক্ষয় কীর্তি হিসেবে টিকে আছে। মাথাকে বাঁচাতে ছাতার এ ভূমিকা সত্যিই বিস্ময়কর। ছাতার সঙ্গে মাথার এই চমৎকার সম্পর্কের কারণে কবিও আনন্দে লিখেছেন: ‘পেটের উপর বুকের বসতি,/বুকের উপর মাথা/তাহারও উপর মুখের বসতি,/তাহার ওপর ছাতা।’
সমাজে মাথার মূল্য যাঁদের যত বেশি, তাঁরাই তত বেশি ছাতা ব্যবহার করেন। আমাদের সমাজে যাঁরা আমজনতা হিসেবে চিহ্নিত অর্থাৎ নিম্নবিত্ত, গরিব, কৃষক, মজুর, মুটেরা বড় বেশি ছাতা ব্যবহার করেন না। কারণ, তাঁরা জানেন, জীবনে তাঁদের মাথার মূল্য নেই, প্রয়োজনও নেই। তাই তাঁদের মাথা রোদে-জলে খোলা থেকে ওয়াটারপ্রুফ হয়ে যায়। কিন্তু মধ্যবিত্ত বা উচ্চবিত্তদের বেলায় তা হয় না। এই শ্রেণির লোকজন মাথা খাটিয়ে এবং মাথা বেচেই খান। তাঁদের জীবনে মাথার মূল্যই বেশি। তাই তাঁদের মাথা বাঁচানোর জন্য ‘ওপরে ছাতা’র দরকার হয়। যাঁর যত মূল্যবান মাথা, তাঁর তত মূল্যবান ছাতা।
আদি মানবেরা গাছের ছাল, পাতার তৈরি ছাতা দিয়েই প্রথম যাত্রা শুরু করে। সভ্যতার বিবর্তনের পথ ধরে এসেছে কাপড়ের ছাতা, প্লাস্টিকের ছাতা, এনালগ থেকে অটোমেটিক ছাতা। ছাতার আধুনিক সংস্করণ হচ্ছে রেইনকোট। বর্তমানে নানা রঙের, নানা বর্ণের, নানা সাইজের ছাতায় বাজার ছেয়ে গেছে। বাঙালি জীবনে ছাতা শুধু মাথায় সীমাবদ্ধ নেই। নির্বোধ বাঙালি জাতিকে প্রজনন-নিয়ন্ত্রণের উপায়-উপাত্ত জানাতে ‘সবুজ ছাতা’ কর্মসূচি চালু হয়েছে। এই ‘সবুজ ছাতা’ চিহ্নিত অফিসে আপনি গেলেই প্রয়োজনীয় ‘সেবা-পরামর্শ’ পেতে পারেন।
একসময় ছাতা দেখে মানুষ চেনা যেত। যার ছাতায় যত বেশি তালি, জীবনে সে তত বেশি হোঁচট ও ঠোক্কর খাওয়া লোক। নতুন ছাতা যার, তিনি ছাতা হারাতে ওস্তাদ। তারা সাধারণত ভাবপ্রবণ, উদাসীন বা কবি প্রকৃতির মানুষ। আর সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও যাঁদের ছাতা নেই, তাঁরা অত্যন্ত সুবিধাবাদী। দরকারমতো এঁর-ওঁর ছাতার তলায় কাজ চালিয়ে নেন এবং নিজে কোনো দায় না নিয়ে অন্যের ঘাড়ে চাপাতে চান। দলবদলকারী রাজনীতিবিদদের মতো এই ছাতাহীন ব্যক্তিরাও অত্যন্ত বিপজ্জনক।
আমাদের বেঁচে থাকার জন্য ছাতা নামক ক্ষুদ্র বস্তুটির ভূমিকা সত্যিই অপরিসীম। ছাতাহীন অবস্থায় আমরা কেউই বুঝি ভালোভাবে বাঁচতে পারি না। এ দেশে মতলববাজ, খুনি-সন্ত্রাসী-লম্পট, চাঁদাবাজ, ঋণখেলাপি, কালোটাকার মালিক, অর্থ পাচারকারী, চোর থেকে শুরু করে বুদ্ধিজীবী পর্যন্ত সবাই চান ক্ষমতাসীন দলের রাজনৈতিক ছাতার নিচে আশ্রয় নিতে। ওদিকে সরকারের ছাতা হচ্ছে আমলা, সেনা ও ব্যবসায়ী। বিপদে পড়লে আমাদের দেশে কম-বেশি সবাই শক্তিমানের ছাতার নিচে আশ্রয় নেন।
বর্তমান যুগে সাফল্যের অন্যতম শর্তই হচ্ছে, যখন যার ছাতার তলায় লাভ বেশি, সেই ছাতার নিচে আশ্রয় নেওয়া। এ ক্ষেত্রে নীতি-নৈতিকতা-আদর্শ হচ্ছে বাতিল জিনিস। সুযোগমতো ছাতা ধরতে পারলে বা যোগ্য ছাতার তলায় আশ্রয় নিতে পারলে অনেক কিছুই অর্জন করা যায়। খুনের মামলা থেকে রেহাই, শত শত কোটি টাকার ব্যাংকঋণ, লাইসেন্স-পারমিট, মন্ত্রিত্ব–সবকিছুই বাগানো সম্ভব।
এ দেশের আমজনতা ছাড়া সবারই কম-বেশি ছাতা আছে। আমজনতা নিজেরাই যেন ব্যাঙের ছাতা। অকারণে অবহেলায় জন্ম নেয়, অতঃপর দলিত-মথিত হয়ে মারা পড়ে। ক্ষমতার পালাবদল হয়, সিংহাসনের ছাতা বদলে যায়। কিছু লোক আঙুল ফুলে কলাগাছ বনে যায়। কিন্তু আমজনতার মাথার ছাতা হয়ে কেউ আসে না। এই লকডাউনকালেও না। বর্ষা-বাদল-জলাবদ্ধতার দিনেও না।
হায়, লকডাউনে জীবন-জীবিকা থমকে যাওয়া এই বর্ষা ঋতুতে জল-বৃষ্টি থেকে আমজনতার মাথা কে রক্ষা করবে?
লেখক: গবেষক ও রম্যলেখক
কান টানলে যেমন মাথা আসে, তেমনি ছাতার প্রসঙ্গ এলেও অনিবার্যভাবেই মাথা এসে যায়। বর্তমানে এই বর্ষা-বাদলের দিনে ছাতা ছাড়া মাথার কথা চিন্তাও করা যায় না। আসলে মাথা নিয়ে আমাদের মাথাব্যথার অন্ত নেই। শরীরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গই হচ্ছে মাথা। সবকিছু বাদ দিলে হয়তো মাথা সচল থাকে; কিন্তু মাথা বাদ দিলে সমস্তই অচল। তাই এ মাথাকে রক্ষা করতে আমাদের সারাক্ষণই মাথা ঘামাতে হয়। আমরা বলতে পারি: ‘সবার ওপরে মাথা সত্য, তাহার ওপরে নাই।’ আর এই ‘হেড’-কে ‘শেড’ দিতে মানুষ আবিষ্কার করেছে ছাতা। মানুষের অনেক সুমহান সৃষ্টি, এমনকি অনেক সুমহান সভ্যতা ধ্বংস হয়ে গেলেও ছাতা আজও অক্ষয় কীর্তি হিসেবে টিকে আছে। মাথাকে বাঁচাতে ছাতার এ ভূমিকা সত্যিই বিস্ময়কর। ছাতার সঙ্গে মাথার এই চমৎকার সম্পর্কের কারণে কবিও আনন্দে লিখেছেন: ‘পেটের উপর বুকের বসতি,/বুকের উপর মাথা/তাহারও উপর মুখের বসতি,/তাহার ওপর ছাতা।’
সমাজে মাথার মূল্য যাঁদের যত বেশি, তাঁরাই তত বেশি ছাতা ব্যবহার করেন। আমাদের সমাজে যাঁরা আমজনতা হিসেবে চিহ্নিত অর্থাৎ নিম্নবিত্ত, গরিব, কৃষক, মজুর, মুটেরা বড় বেশি ছাতা ব্যবহার করেন না। কারণ, তাঁরা জানেন, জীবনে তাঁদের মাথার মূল্য নেই, প্রয়োজনও নেই। তাই তাঁদের মাথা রোদে-জলে খোলা থেকে ওয়াটারপ্রুফ হয়ে যায়। কিন্তু মধ্যবিত্ত বা উচ্চবিত্তদের বেলায় তা হয় না। এই শ্রেণির লোকজন মাথা খাটিয়ে এবং মাথা বেচেই খান। তাঁদের জীবনে মাথার মূল্যই বেশি। তাই তাঁদের মাথা বাঁচানোর জন্য ‘ওপরে ছাতা’র দরকার হয়। যাঁর যত মূল্যবান মাথা, তাঁর তত মূল্যবান ছাতা।
আদি মানবেরা গাছের ছাল, পাতার তৈরি ছাতা দিয়েই প্রথম যাত্রা শুরু করে। সভ্যতার বিবর্তনের পথ ধরে এসেছে কাপড়ের ছাতা, প্লাস্টিকের ছাতা, এনালগ থেকে অটোমেটিক ছাতা। ছাতার আধুনিক সংস্করণ হচ্ছে রেইনকোট। বর্তমানে নানা রঙের, নানা বর্ণের, নানা সাইজের ছাতায় বাজার ছেয়ে গেছে। বাঙালি জীবনে ছাতা শুধু মাথায় সীমাবদ্ধ নেই। নির্বোধ বাঙালি জাতিকে প্রজনন-নিয়ন্ত্রণের উপায়-উপাত্ত জানাতে ‘সবুজ ছাতা’ কর্মসূচি চালু হয়েছে। এই ‘সবুজ ছাতা’ চিহ্নিত অফিসে আপনি গেলেই প্রয়োজনীয় ‘সেবা-পরামর্শ’ পেতে পারেন।
একসময় ছাতা দেখে মানুষ চেনা যেত। যার ছাতায় যত বেশি তালি, জীবনে সে তত বেশি হোঁচট ও ঠোক্কর খাওয়া লোক। নতুন ছাতা যার, তিনি ছাতা হারাতে ওস্তাদ। তারা সাধারণত ভাবপ্রবণ, উদাসীন বা কবি প্রকৃতির মানুষ। আর সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও যাঁদের ছাতা নেই, তাঁরা অত্যন্ত সুবিধাবাদী। দরকারমতো এঁর-ওঁর ছাতার তলায় কাজ চালিয়ে নেন এবং নিজে কোনো দায় না নিয়ে অন্যের ঘাড়ে চাপাতে চান। দলবদলকারী রাজনীতিবিদদের মতো এই ছাতাহীন ব্যক্তিরাও অত্যন্ত বিপজ্জনক।
আমাদের বেঁচে থাকার জন্য ছাতা নামক ক্ষুদ্র বস্তুটির ভূমিকা সত্যিই অপরিসীম। ছাতাহীন অবস্থায় আমরা কেউই বুঝি ভালোভাবে বাঁচতে পারি না। এ দেশে মতলববাজ, খুনি-সন্ত্রাসী-লম্পট, চাঁদাবাজ, ঋণখেলাপি, কালোটাকার মালিক, অর্থ পাচারকারী, চোর থেকে শুরু করে বুদ্ধিজীবী পর্যন্ত সবাই চান ক্ষমতাসীন দলের রাজনৈতিক ছাতার নিচে আশ্রয় নিতে। ওদিকে সরকারের ছাতা হচ্ছে আমলা, সেনা ও ব্যবসায়ী। বিপদে পড়লে আমাদের দেশে কম-বেশি সবাই শক্তিমানের ছাতার নিচে আশ্রয় নেন।
বর্তমান যুগে সাফল্যের অন্যতম শর্তই হচ্ছে, যখন যার ছাতার তলায় লাভ বেশি, সেই ছাতার নিচে আশ্রয় নেওয়া। এ ক্ষেত্রে নীতি-নৈতিকতা-আদর্শ হচ্ছে বাতিল জিনিস। সুযোগমতো ছাতা ধরতে পারলে বা যোগ্য ছাতার তলায় আশ্রয় নিতে পারলে অনেক কিছুই অর্জন করা যায়। খুনের মামলা থেকে রেহাই, শত শত কোটি টাকার ব্যাংকঋণ, লাইসেন্স-পারমিট, মন্ত্রিত্ব–সবকিছুই বাগানো সম্ভব।
এ দেশের আমজনতা ছাড়া সবারই কম-বেশি ছাতা আছে। আমজনতা নিজেরাই যেন ব্যাঙের ছাতা। অকারণে অবহেলায় জন্ম নেয়, অতঃপর দলিত-মথিত হয়ে মারা পড়ে। ক্ষমতার পালাবদল হয়, সিংহাসনের ছাতা বদলে যায়। কিছু লোক আঙুল ফুলে কলাগাছ বনে যায়। কিন্তু আমজনতার মাথার ছাতা হয়ে কেউ আসে না। এই লকডাউনকালেও না। বর্ষা-বাদল-জলাবদ্ধতার দিনেও না।
হায়, লকডাউনে জীবন-জীবিকা থমকে যাওয়া এই বর্ষা ঋতুতে জল-বৃষ্টি থেকে আমজনতার মাথা কে রক্ষা করবে?
লেখক: গবেষক ও রম্যলেখক
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস স্বয়ং একাধিকবার বলেছেন, আগামী জাতীয় নির্বাচন এমন এক আবহে অনুষ্ঠিত হবে যে তা শুধু দেশে নয়, সারা পৃথিবীতে সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও সর্বজনে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের একটি অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। এটা তাঁর নিজের এবং অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে
১১ ঘণ্টা আগেসোমবার, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫। আস্থা আছে কি না, স্বপ্রণোদিত হয়ে যাচাই করতে গিয়ে বিপাকে পড়েন ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রী ফ্রাঁসোয়া বাইরু। সংসদে ১৯৪ জন সংসদ সদস্য তাঁর ওপর আস্থা জানিয়ে ভোট দিলেও ৩৬৪ জন তাঁকে লাল কার্ড দেখিয়ে দিয়েছেন। উল্লেখ্য, ফ্রান্সের আইনপ্রণেতা হচ্ছেন মোট ৫৭৭ জন। ফলে মাত্র ৯ মাস ক্ষমতায়
১১ ঘণ্টা আগেসময় এখন অদ্ভুত এক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে। মানুষ তার হাজার বছরের ইতিহাসে অনেক বিপ্লবের সাক্ষী হয়েছে—কৃষি, শিল্প, তথ্যপ্রযুক্তি। প্রতিটি বিপ্লব আমাদের জীবনধারায় গভীর পরিবর্তন এনেছে, কেউ কেউ পেছনে পড়ে গেছে, কেউ সামনের সারিতে উঠে এসেছে। কিন্তু এইবার যা আসছে, তা হয়তো আর কাউকে কেবল পেছনেই ফেলবে না; বরং মানুষক
১১ ঘণ্টা আগেবাংলাদেশে ১৯৭২ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত কীটনাশক ব্যবহারের পরিমাণ প্রায় ১০ গুণ বেড়েছে, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকি তৈরি করছে। আজকের পত্রিকায় ১০ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত ‘সেন্টার ফর অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড বায়োসায়েন্স ইন্টারন্যাশনাল’ (ক্যাবি) আয়োজিত এক কর্মশালায় এই উদ্বেগজনক তথ্য উঠে এসেছে।
১১ ঘণ্টা আগে