Ajker Patrika

উপেক্ষিত শিশু অধিকার

এ আর সালাউদ্দিন ফেরদৌস
উপেক্ষিত শিশু অধিকার

প্রতিটি শিশুর আছে ভালোবাসা, নিরাপত্তা, শিক্ষা ও সুস্থভাবে বেড়ে ওঠার অধিকার। তারা যাতে হাসিমুখে, স্বপ্নভরা চোখে পৃথিবীকে চিনতে পারে—সেই অধিকার সুরক্ষিত রাখা রাষ্ট্রের নৈতিক দায়িত্ব। অথচ বাস্তবতায় ভিন্ন চিত্রই দেখা যায়। আজও সমাজের মধ্যে অসংখ্য শিশু তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত। ক্ষুধার্ত পেটে ঘুমাতে যাওয়া, ফুটপাতে অভিভাবকহীনভাবে বেঁচে থাকা, শিক্ষা থেকে বঞ্চিত এবং কঠিন শ্রমে নিয়োজিত থাকার ঘটনাগুলোই স্পষ্ট করে রাষ্ট্র এই শিশুদের নিয়ে ভাবে না।

জাতিসংঘের শিশু অধিকার সনদ (১৯৮৯) অনুযায়ী, শিশুর ব্যক্তিত্ব, মেধা ও শারীরিক সক্ষমতা সর্বোচ্চভাবে বিকাশের সুযোগ নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের প্রধান দায়িত্ব। বাংলাদেশও ১৯৯০ সালে এই সনদে স্বাক্ষর করে এবং শিশুদের অধিকার রক্ষায় বেশ কিছু আইনি ও নীতিগত পদক্ষেপ গ্রহণ করে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো শিশু আইন, ২০১৩ এবং শিশু নীতিমালা, ২০১১। এ আইনে শিশুশ্রম নিরোধ, শিশু নির্যাতন প্রতিরোধ, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকরণ এবং বিশেষ প্রয়োজনে শিশুর কল্যাণে রাষ্ট্রীয় হস্তক্ষেপের বিধান রাখা হয়েছে।

বাংলাদেশে শিশু শ্রম একটি উল্লেখযোগ্য সমস্যা। যেখানে ৫-১৭ বছর বয়সী আনুমানিক ৪.৯ মিলিয়ন শিশু কোনো না কোনো অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত। এই শিশুর অনেকেই বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে কাজ করে। বিশেষ করে কলকারখানা এবং যানবাহনে, যা তাদের স্বাস্থ্য এবং মানসিক বিকাশের ওপর যথেষ্ট ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে। কিন্তু রাস্তাঘাটে বের হলে হরহামেশাই দেখা মেলে শিশুরা বাসে, চায়ের দোকানে, মনোহারি দোকানসহ বিভিন্ন জায়গায় কাজ করছে, যা পুরোপুরি বন্ধ করতে হবে।

ঘরহীন, অভিভাবকহীন সব শিশু যেন তাদের সব ধরনের মৌলিক অধিকার পায়, সেটা রাষ্ট্রকে নিশ্চিত করতে হবে। আইন করে শিশু শ্রম পুরোপুরিভাবে বন্ধ করতে হবে এবং যেসব প্রচলিত আইন আছে, সেগুলোর যথাযথ প্রয়োগ করতে হবে।

শুধু আইন করেই নয়, শিশুদের অধিকার রক্ষার জন্য চাই সচেতন সমাজ ও মানবিক মনোভাব। শিশুদের মানসিক ও সৃজনশীল বিকাশে পরিবার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং সমাজকে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করতে হবে। প্রত্যেক শিশুর জন্য নিরাপদ খেলার মাঠ, মানসম্মত শিক্ষাব্যবস্থা, পুষ্টিকর খাদ্য এবং ভালোবাসাময় পরিবেশ নিশ্চিত করাই আমাদের প্রধান অঙ্গীকার হওয়া উচিত।

শিশুদের অধিকার রক্ষা শুধু সরকার বা সংস্থার দায়িত্ব নয়—এটি আমাদের সবার নৈতিক দায়িত্ব। বিপ্লবী কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের বিখ্যাত ‘ছাড়পত্র’ কবিতার ভাষায় বলতে চাই-

‘চলে যাব-তবু আজ যতক্ষণ দেহে আছে প্রাণ

প্রাণপণে পৃথিবীর সরাব জঞ্জাল,

এ বিশ্বকে এ-শিশুর বাসযোগ্য ক’রে যাব আমি-

নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।’

শিশুদের জন্য একটি বাসযোগ্য সুস্থ পৃথিবী গড়ে তোলার সেই অঙ্গীকারটা আমাদের সবার মধ্যে থাকা উচিত। তাই আসুন, আমরা সবাই মিলে একটি নিরাপদ ও সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়ে তুলি, যেখানে প্রতিটি শিশু তার অধিকার ভোগ করতে পারবে।

লেখক: শিক্ষার্থী, কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সাইপ্রাসে বিপুল জমি কিনছে ইসরায়েলিরা, দেশ বেদখলের শঙ্কা রাজনীতিবিদদের

যুদ্ধের পর এ যেন এক নতুন ইরান, জনগণের মতো বদলে গেছে সরকারও

কর্মীদের হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার নিষিদ্ধ করল বিমান বাংলাদেশ

বংশরক্ষায় মৃত ছেলের শুক্রাণু চান মা, সংরক্ষণের নির্দেশ মুম্বাই হাইকোর্টের

আমাকে ধর্ষণের সময় পাশে দাঁড়িয়ে দেখছিল দুই যুবক: ধর্ষণের শিকার তরুণী

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত