Ajker Patrika

৩৮ টাকার শেয়ার ৯ হাজারে উঠে এখন ৯০০ টাকায়

আসাদুজ্জামান নূর, ঢাকা 
৩৮ টাকার শেয়ার ৯ হাজারে উঠে এখন ৯০০ টাকায়

৩৮ টাকার শেয়ার কারসাজির মাধ্যমে মাত্র সাত মাসে ৮ হাজার ৯৪১ টাকায় ওঠে, পরে দর কমে ৯০০ টাকার আশপাশে নেমেছে। হিমাদ্রি লিমিটেড নামের এই কোম্পানি এসএমই মার্কেটে তালিকাভুক্ত। দেশের পুঁজিবাজারে এত অল্প সময়ে এমন প্রভাব বিরল। সাত মাসে দর বেড়েছে প্রায় ২৩ হাজার শতাংশ এবং কারসাজি চক্র কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিলেও জরিমানা হয়েছিল মাত্র দেড় কোটি টাকা।

২০২৩ সালের ২৭ এপ্রিল কোম্পানির শেয়ারের দর ছিল ৩৮ টাকা ৮০ পয়সা। কারসাজি চক্রের মাধ্যমে ১৬ নভেম্বর ২০২৩ পর্যন্ত দাম বেড়ে ৮ হাজার ৯৪১ টাকা ২০ পয়সা হয়। এর পর থেকে শেয়ারের দর কমতে শুরু করে। সবশেষ গত মঙ্গলবার লেনদেন শেষে এটি দাঁড়ায় ৯৪০ টাকার আশপাশে। এসএমই এই কোম্পানির শেয়ারের সংখ্যা কম হওয়ায় অল্প লেনদেনে দাম বেড়ে যাওয়ার সুযোগ বেশি। কারসাজি সাধারণত নিজেদের মধ্যে লেনদেন করে শেয়ারের দর বাড়ায় এবং পরে সাধারণ বিনিয়োগকারীর কাছে উচ্চ দামে বিক্রি করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়।

কোম্পানির মোট শেয়ারের সংখ্যা ২৬ লাখ ২৫ হাজার এবং পরিশোধিত মূলধন ২ কোটি ৬২ লাখ ৫০ হাজার টাকা। এর মধ্যে ৬৬ শতাংশ মালিকানা উদ্যোক্তা ও পরিচালকের হাতে, ২ শতাংশ সরকারের হাতে এবং ৩২ শতাংশ সাধারণ বিনিয়োগকারীর কাছে।

২০২৪ সালে বিএসইসির তৎকালীন কমিশন ২৭ এপ্রিল থেকে ১৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কারসাজি বিশ্লেষণ করে। এই সময়ে শেয়ারের দর ৩৮ টাকা ৮০ পয়সা থেকে ৬ হাজার ৪৭৪ টাকা পর্যন্ত বেড়েছিল। পরে আরও অন্তত দুই মাস কারসাজি চলছিল এবং শেয়ারের দর বৃদ্ধি পেয়ে ৮ হাজার ৯৪১ টাকা হয়। তদন্তে এক ব্যক্তি ও তিন প্রতিষ্ঠানকে ১ কোটি ৭০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। এর মধ্যে ব্রোকারেজ হাউস ইনোভা সিকিউরিটিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রফিকুল বারী ও তাঁর প্রতিষ্ঠান এআর ট্রেডার্সকে ১ কোটি টাকা, মেসার্স অভি ব্রিকসকে ৬০ লাখ এবং মুনীর ট্রেডার্সকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। তবে ওই তদন্তে দেখা গিয়েছিল, সংশ্লিষ্টরা ৮২ কোটি টাকা মুনাফা লুফে নিয়েছিল। অর্থাৎ শাস্তি ছিল নামমাত্র।

এদিকে সাম্প্রতিক সময়ে হিমাদ্রি লিমিটেডের শেয়ারে বড় ধরনের লেনদেন পরিলক্ষিত হয়েছে। গত ৩১ জুলাই কোম্পানির ৭ হাজার ৭২৯টি শেয়ার হাতবদল হয়েছে, যা ছিল টানা দুই বছরের অধিক সময়ের মধ্যে সর্বোচ্চ লেনদেন। ২১ সেপ্টেম্বর কোম্পানির ৫ হাজার ৮০টি শেয়ার লেনদেন হয়েছে। গত মঙ্গলবার ৪ হাজার ২১টি শেয়ার লেনদেন হয়।

ওভার দ্য কাউন্টার মার্কেট (ওটিসি) থেকে হিমাদ্রি লিমিটেডসহ চার কোম্পানি ও দুটি নতুন কোম্পানি নিয়ে ২০২১ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ডিএসইর এসএমই প্ল্যাটফর্মের যাত্রা শুরু হয়েছিল। প্ল্যাটফর্মটি চালুর চার বছর অতিবাহিত হলেও বাজারটিতে বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ তেমন বাড়েনি।

বিশ্লেষক ও পুঁজিবাজার সংস্কার টাস্কফোর্সের সদস্য অধ্যাপক আল-আমিন এ প্রসঙ্গে আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘হিমাদ্রীর আয়, সম্পদমূল্য ও লভ্যাংশ আকর্ষণীয় হওয়ায় দর বাড়া কিছুটা স্বাভাবিক। তবে এসএমই বাজারে সাধারণ বিনিয়োগকারীর অংশগ্রহণ কম এবং বড় বিনিয়োগকারীরা লেনদেন করে। বড় মূলধন কোম্পানির শেয়ারের কারসাজি যেমন হয়, এখানে মূলধন কম হওয়ায় দর দ্রুত বৃদ্ধি পেতে পারে।’

অপরদিকে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির পরিচালক আবুল কালাম বলেন, ‘এসএমইতে লিস্টেড শেয়ার ১০ টাকা থেকে ৯ হাজার টাকায় ওঠে। এখানে কারসাজি অস্বীকারযোগ্য নয়। আগের কমিশন শাস্তি দিয়েছে। তবে পরবর্তী পরিস্থিতি সার্ভেইল্যান্সের মাধ্যমে জানা হবে। প্রয়োজন হলে পুনরায় তদন্ত হবে।’

কারসাজির প্রসঙ্গে মন্তব্য জানতে মোবাইলে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও হিমাদ্রি লিমিটেডের কোম্পানি সচিব মোজতবা হায়দার চৌধুরী ফোন ধরেননি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

শুধু থালাবাটি নয়, এনসিপির জন্য আছে লাউ-বেগুন-কলাসহ ৫০ প্রতীক

এনসিপিকে শাপলা দিলে মামলা করব না, তবে ইসি দিতে পারে না: মান্না

সুমুদ ফ্লোটিলা দখলে ইসরায়েলি আক্রমণ অব্যাহত, আটক বেড়ে ৩১৭

ট্রাম্পের ভিসা কড়াকড়ির পর ভারতের দিকেই ঝুঁকছে মার্কিন কোম্পানিগুলো

পুরুষেরা কেন নারীর চেয়ে কম বাঁচেন—নতুন গবেষণায় চমকপ্রদ তথ্য

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত