মিশকাতুল ইসলাম মুমু
ঢাকায় প্রতিদিন আমরা যে শ্বাস গ্রহণ করি, তার প্রতিটি কণায় লুকিয়ে আছে অদৃশ্য বিষ, যা নিঃশব্দে আমাদের দেহকে দুর্বল করে দিচ্ছে, কেড়ে নিচ্ছে সুস্থতার অধিকার। একসময় যাকে বলা হতো প্রাণের শহর, আজ তা যেন বিষে ভরা এক মৃত্যুপুরী। ঢাকার বাতাস আর নিছক বাতাস নয়—এ যেন নিশ্বাসের আড়ালে লুকিয়ে থাকা এক অদৃশ্য হত্যাকারী।
ঢাকা বিশ্বের অন্যতম জনবহুল এবং দ্রুত বর্ধনশীল শহর। উন্নয়নের হাতছানি যেমন এখানে অসংখ্য মানুষের জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন ঘটিয়েছে, তেমনি অপরিকল্পিত নগরায়ণ, শিল্পায়ন এবং জনসংখ্যার অস্বাভাবিক বৃদ্ধি এই শহরের পরিবেশের ওপর ফেলেছে এক ভয়াবহ প্রভাব। নির্মল বাতাস আজ এখানে দুর্লভ। শীতের শুষ্ক মৌসুম এলেই ধোঁয়াশা আর ধুলার এক অসহ্য চাদরে ঢেকে যায় আকাশ, যা কেবল দৃষ্টিসীমাকেই সীমিত করে না, বরং শ্বাস নিতেও কষ্ট হয়। গ্রীষ্মের দাবদাহের সঙ্গে যখন মেশে যানবাহনের বিষাক্ত ধোঁয়া এবং নির্মাণাধীন এলাকার ধুলাবালু, তখন পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে ওঠে। বর্ষার আগমন কিছুটা স্বস্তি নিয়ে এলেও, দূষণের মূল উৎসগুলো তখনো সক্রিয় থাকে, যার ফলে বাতাসের গুণগত মানের তেমন কোনো উল্লেখযোগ্য উন্নতি দেখা যায় না।
বিশ্ব বায়ুমান পর্যবেক্ষণকারী প্রতিষ্ঠান এয়ার ভিজ্যুয়ালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ঢাকার একাধিক এলাকা বর্তমানে বিশ্বের দূষিত শহরের তালিকায় শীর্ষস্থানীয়। বিশেষত, শীতকালে ঢাকা প্রায়ই বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরের তালিকায় এক নম্বরে উঠে আসে। একিউআই (বায়ুমান সূচক) স্কোর ২০০ ছাড়িয়ে গেলে এটি বিশেষ শ্রেণির মানুষের জন্য অস্বাস্থ্যকর এবং ৩০১ থেকে ৫০০-এর মধ্যে স্কোর হলে তা বিপজ্জনক হয়ে দাঁড়ায়। অথচ ঢাকায় এই স্কোর প্রায়ই অতিরিক্ত মাত্রায় পৌঁছে যাচ্ছে, যা প্রাণঘাতী রোগের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে।
ঢাকা মহানগরীতে প্রতিদিন লাখ লাখ যানবাহন চলাচল করে, যার মধ্যে অনেক পুরোনো ও অননুমোদিত গাড়ি রয়েছে। এসব গাড়ির ইঞ্জিন থেকে নির্গত বিষাক্ত ধোঁয়া এবং নিম্নমানের জ্বালানি ব্যবহারের ফলে পরিবেশে কার্বন মনোক্সাইড, সালফার ডাই-অক্সাইডসহ নানা ক্ষতিকর গ্যাসের পরিমাণ আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে যাচ্ছে। যানজট পরিস্থিতিকে আরও ভয়াবহ করে তোলে, কারণ স্থবির গাড়িগুলো ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকে ক্রমাগত দূষণ ছড়িয়ে যায়। শহরের আশপাশে গড়ে ওঠা অসংখ্য শিল্পকারখানা ও ইটভাটা থেকে নির্গত ধোঁয়া, যা শহরের বাতাসের পিএম ২.৫ (অতিসূক্ষ্ম বস্তুকণা) মাত্রা বাড়াচ্ছে এবং অপরিশোধিত বর্জ্য ঢাকার বাতাসে মিশে গিয়ে দূষণকে আরও তীব্র করে তুলছে। শীতকালে এই ইটভাটাগুলোর কার্যক্রম বেড়ে যাওয়ায় দূষণের মাত্রাও আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ে। নির্মাণকাজের অনিয়ন্ত্রিত ধুলাবালুও ঢাকার বাতাস দূষণের অন্যতম কারণ; শহরের বিভিন্ন জায়গায় প্রতিনিয়ত ভবন নির্মাণ ও রাস্তাঘাট সংস্কারের ফলে বাতাসে স্থায়ীভাবে ধুলার আস্তর গড়ে উঠছে। শহরের গৃহস্থালির বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অব্যবস্থা, যত্রতত্র আবর্জনা ফেলে রাখা বা পোড়ানোর মাধ্যমে বাতাসে বিষাক্ত গ্যাস ছড়িয়ে দেয়। এই সমস্যাগুলোর সঙ্গে জলবায়ুগত ও ভৌগোলিক কারণও যুক্ত রয়েছে; বিশেষ করে শীতকালে বাতাসের গতি কমে যাওয়ায় দূষিত কণাগুলো বাতাসে ছড়িয়ে পড়ার বদলে ভূপৃষ্ঠের কাছাকাছি জমা হয়ে থাকে। শুষ্ক আবহাওয়া ধুলাবালু উড়তে সাহায্য করে, ফলে বাতাসের গুণগত মান আরও খারাপ হয়।
ঢাকার বিষাক্ত বাতাস আমাদের স্বাস্থ্য ও অর্থনীতির ওপর ফেলছে মারাত্মক ও সুদূরপ্রসারী প্রভাব। দূষিত বায়ুর কারণে শ্বাসকষ্ট, হাঁপানি, ব্রঙ্কাইটিস, ফুসফুসের ক্যানসারসহ নানা শ্বাসযন্ত্রের রোগ দ্রুত বাড়ছে, যার প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়ছে শিশু ও বয়স্কদের ওপর। শিশুদের ফুসফুসের স্বাভাবিক বিকাশে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে, যা ভবিষ্যতে দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করতে পারে। একই সঙ্গে হৃদ্রোগ, উচ্চ রক্তচাপ এবং মস্তিষ্কের কার্যকারিতা হ্রাসের মতো সমস্যাও ক্রমবর্ধমান। গর্ভবতী নারীরা এই দূষিত বাতাসের সংস্পর্শে এলে তা তার অনাগত সন্তানের ওপরও ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে।
শুধু স্বাস্থ্যে নয়, অর্থনীতিতেও এই দূষণের নেতিবাচক প্রভাব স্পষ্ট। দূষণজনিত অসুস্থতায় মানুষের কর্মক্ষমতা কমে যাওয়ায় উৎপাদনশীলতা হ্রাস পাচ্ছে এবং সরকারের স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি, কৃষি ও অন্যান্য প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর পড়ছে বিরূপ প্রভাব, যা টেকসই উন্নয়নের পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও ঢাকার দূষিত বাতাস দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করছে, যার ফলে বিদেশি বিনিয়োগ ও পর্যটনের সম্ভাবনাও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
এই ভয়াবহ বায়ুদূষণ পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পেতে হলে ঢাকার বাতাসকে পুনরায় নির্মল করার লক্ষ্যে জরুরি ভিত্তিতে সমন্বিত ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন। সরকার, জনগণ এবং সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে একযোগে কাজ করতে হবে। প্রথমত, যানবাহন থেকে নির্গত কালো ধোঁয়া নিয়ন্ত্রণে আনতে পুরোনো ও ফিটনেসবিহীন গাড়ি সড়ক থেকে অপসারণ, উন্নতমানের জ্বালানির ব্যবহার নিশ্চিতকরণ এবং নিয়মিত ইঞ্জিন পরীক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। একই সঙ্গে গণপরিবহনব্যবস্থা আধুনিক ও কার্যকর করে ব্যক্তিগত গাড়ির ওপর নির্ভরতা কমাতে হবে—মেট্রোরেল ও বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পের দ্রুত বাস্তবায়ন এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। দ্বিতীয়ত, শিল্পকারখানা ও ইটভাটার দূষণ নিয়ন্ত্রণে পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি ব্যবহারে উৎসাহ এবং দূষণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে। তৃতীয়ত, নির্মাণকাজের সময় ধুলা নিয়ন্ত্রণে কার্যকর নিয়মকানুন প্রণয়ন ও তার কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে—যেমন নির্মাণস্থলে পানি ছিটানো, কাপড়ে ঢেকে রাখা ইত্যাদি বাধ্যতামূলক করতে হবে। চতুর্থত, বর্জ্য ব্যবস্থাপনার আধুনিকীকরণ এবং জনগণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধিও অত্যন্ত জরুরি; বর্জ্য পৃথক্করণ, সঠিক প্রক্রিয়াকরণ এবং যত্রতত্র ফেলা ও পোড়ানোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। পঞ্চমত, শহরের চারপাশে সবুজ বেষ্টনী তৈরি ও ব্যাপক বৃক্ষরোপণ কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে, যা বায়ু পরিশোধনের প্রাকৃতিক উপায়। এ ছাড়া বায়ুদূষণের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে জনগণের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য গণমাধ্যম, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে কাজে লাগিয়ে পরিবেশবান্ধব জীবনযাপনে উৎসাহিত করতে হবে। একই সঙ্গে, বায়ুমানের নিয়মিত পর্যবেক্ষণ ও তা জনগণের সামনে উপস্থাপনের জন্য উন্নত বায়ু পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন ও তথ্য প্রকাশের ব্যবস্থা করতে হবে, যাতে সবাই সচেতন হয়ে প্রয়োজনীয় সতর্কতা নিতে পারে। সবশেষে, আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও উন্নত দেশগুলোর অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে দীর্ঘমেয়াদি ও টেকসই কৌশল গ্রহণ করতে হবে এবং পরিবেশ সুরক্ষার জন্য বৈশ্বিক চুক্তি ও প্রটোকলগুলো যথাযথভাবে অনুসরণ করতে হবে। এই সব উদ্যোগ সমন্বিতভাবে বাস্তবায়ন করতে পারলেই ঢাকার বাতাস আবার স্বচ্ছ ও সুস্থ করা সম্ভব হবে।
লেখক: শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
ঢাকায় প্রতিদিন আমরা যে শ্বাস গ্রহণ করি, তার প্রতিটি কণায় লুকিয়ে আছে অদৃশ্য বিষ, যা নিঃশব্দে আমাদের দেহকে দুর্বল করে দিচ্ছে, কেড়ে নিচ্ছে সুস্থতার অধিকার। একসময় যাকে বলা হতো প্রাণের শহর, আজ তা যেন বিষে ভরা এক মৃত্যুপুরী। ঢাকার বাতাস আর নিছক বাতাস নয়—এ যেন নিশ্বাসের আড়ালে লুকিয়ে থাকা এক অদৃশ্য হত্যাকারী।
ঢাকা বিশ্বের অন্যতম জনবহুল এবং দ্রুত বর্ধনশীল শহর। উন্নয়নের হাতছানি যেমন এখানে অসংখ্য মানুষের জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন ঘটিয়েছে, তেমনি অপরিকল্পিত নগরায়ণ, শিল্পায়ন এবং জনসংখ্যার অস্বাভাবিক বৃদ্ধি এই শহরের পরিবেশের ওপর ফেলেছে এক ভয়াবহ প্রভাব। নির্মল বাতাস আজ এখানে দুর্লভ। শীতের শুষ্ক মৌসুম এলেই ধোঁয়াশা আর ধুলার এক অসহ্য চাদরে ঢেকে যায় আকাশ, যা কেবল দৃষ্টিসীমাকেই সীমিত করে না, বরং শ্বাস নিতেও কষ্ট হয়। গ্রীষ্মের দাবদাহের সঙ্গে যখন মেশে যানবাহনের বিষাক্ত ধোঁয়া এবং নির্মাণাধীন এলাকার ধুলাবালু, তখন পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে ওঠে। বর্ষার আগমন কিছুটা স্বস্তি নিয়ে এলেও, দূষণের মূল উৎসগুলো তখনো সক্রিয় থাকে, যার ফলে বাতাসের গুণগত মানের তেমন কোনো উল্লেখযোগ্য উন্নতি দেখা যায় না।
বিশ্ব বায়ুমান পর্যবেক্ষণকারী প্রতিষ্ঠান এয়ার ভিজ্যুয়ালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ঢাকার একাধিক এলাকা বর্তমানে বিশ্বের দূষিত শহরের তালিকায় শীর্ষস্থানীয়। বিশেষত, শীতকালে ঢাকা প্রায়ই বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরের তালিকায় এক নম্বরে উঠে আসে। একিউআই (বায়ুমান সূচক) স্কোর ২০০ ছাড়িয়ে গেলে এটি বিশেষ শ্রেণির মানুষের জন্য অস্বাস্থ্যকর এবং ৩০১ থেকে ৫০০-এর মধ্যে স্কোর হলে তা বিপজ্জনক হয়ে দাঁড়ায়। অথচ ঢাকায় এই স্কোর প্রায়ই অতিরিক্ত মাত্রায় পৌঁছে যাচ্ছে, যা প্রাণঘাতী রোগের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে।
ঢাকা মহানগরীতে প্রতিদিন লাখ লাখ যানবাহন চলাচল করে, যার মধ্যে অনেক পুরোনো ও অননুমোদিত গাড়ি রয়েছে। এসব গাড়ির ইঞ্জিন থেকে নির্গত বিষাক্ত ধোঁয়া এবং নিম্নমানের জ্বালানি ব্যবহারের ফলে পরিবেশে কার্বন মনোক্সাইড, সালফার ডাই-অক্সাইডসহ নানা ক্ষতিকর গ্যাসের পরিমাণ আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে যাচ্ছে। যানজট পরিস্থিতিকে আরও ভয়াবহ করে তোলে, কারণ স্থবির গাড়িগুলো ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকে ক্রমাগত দূষণ ছড়িয়ে যায়। শহরের আশপাশে গড়ে ওঠা অসংখ্য শিল্পকারখানা ও ইটভাটা থেকে নির্গত ধোঁয়া, যা শহরের বাতাসের পিএম ২.৫ (অতিসূক্ষ্ম বস্তুকণা) মাত্রা বাড়াচ্ছে এবং অপরিশোধিত বর্জ্য ঢাকার বাতাসে মিশে গিয়ে দূষণকে আরও তীব্র করে তুলছে। শীতকালে এই ইটভাটাগুলোর কার্যক্রম বেড়ে যাওয়ায় দূষণের মাত্রাও আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ে। নির্মাণকাজের অনিয়ন্ত্রিত ধুলাবালুও ঢাকার বাতাস দূষণের অন্যতম কারণ; শহরের বিভিন্ন জায়গায় প্রতিনিয়ত ভবন নির্মাণ ও রাস্তাঘাট সংস্কারের ফলে বাতাসে স্থায়ীভাবে ধুলার আস্তর গড়ে উঠছে। শহরের গৃহস্থালির বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অব্যবস্থা, যত্রতত্র আবর্জনা ফেলে রাখা বা পোড়ানোর মাধ্যমে বাতাসে বিষাক্ত গ্যাস ছড়িয়ে দেয়। এই সমস্যাগুলোর সঙ্গে জলবায়ুগত ও ভৌগোলিক কারণও যুক্ত রয়েছে; বিশেষ করে শীতকালে বাতাসের গতি কমে যাওয়ায় দূষিত কণাগুলো বাতাসে ছড়িয়ে পড়ার বদলে ভূপৃষ্ঠের কাছাকাছি জমা হয়ে থাকে। শুষ্ক আবহাওয়া ধুলাবালু উড়তে সাহায্য করে, ফলে বাতাসের গুণগত মান আরও খারাপ হয়।
ঢাকার বিষাক্ত বাতাস আমাদের স্বাস্থ্য ও অর্থনীতির ওপর ফেলছে মারাত্মক ও সুদূরপ্রসারী প্রভাব। দূষিত বায়ুর কারণে শ্বাসকষ্ট, হাঁপানি, ব্রঙ্কাইটিস, ফুসফুসের ক্যানসারসহ নানা শ্বাসযন্ত্রের রোগ দ্রুত বাড়ছে, যার প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়ছে শিশু ও বয়স্কদের ওপর। শিশুদের ফুসফুসের স্বাভাবিক বিকাশে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে, যা ভবিষ্যতে দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করতে পারে। একই সঙ্গে হৃদ্রোগ, উচ্চ রক্তচাপ এবং মস্তিষ্কের কার্যকারিতা হ্রাসের মতো সমস্যাও ক্রমবর্ধমান। গর্ভবতী নারীরা এই দূষিত বাতাসের সংস্পর্শে এলে তা তার অনাগত সন্তানের ওপরও ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে।
শুধু স্বাস্থ্যে নয়, অর্থনীতিতেও এই দূষণের নেতিবাচক প্রভাব স্পষ্ট। দূষণজনিত অসুস্থতায় মানুষের কর্মক্ষমতা কমে যাওয়ায় উৎপাদনশীলতা হ্রাস পাচ্ছে এবং সরকারের স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি, কৃষি ও অন্যান্য প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর পড়ছে বিরূপ প্রভাব, যা টেকসই উন্নয়নের পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও ঢাকার দূষিত বাতাস দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করছে, যার ফলে বিদেশি বিনিয়োগ ও পর্যটনের সম্ভাবনাও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
এই ভয়াবহ বায়ুদূষণ পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পেতে হলে ঢাকার বাতাসকে পুনরায় নির্মল করার লক্ষ্যে জরুরি ভিত্তিতে সমন্বিত ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন। সরকার, জনগণ এবং সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে একযোগে কাজ করতে হবে। প্রথমত, যানবাহন থেকে নির্গত কালো ধোঁয়া নিয়ন্ত্রণে আনতে পুরোনো ও ফিটনেসবিহীন গাড়ি সড়ক থেকে অপসারণ, উন্নতমানের জ্বালানির ব্যবহার নিশ্চিতকরণ এবং নিয়মিত ইঞ্জিন পরীক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। একই সঙ্গে গণপরিবহনব্যবস্থা আধুনিক ও কার্যকর করে ব্যক্তিগত গাড়ির ওপর নির্ভরতা কমাতে হবে—মেট্রোরেল ও বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পের দ্রুত বাস্তবায়ন এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। দ্বিতীয়ত, শিল্পকারখানা ও ইটভাটার দূষণ নিয়ন্ত্রণে পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি ব্যবহারে উৎসাহ এবং দূষণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে। তৃতীয়ত, নির্মাণকাজের সময় ধুলা নিয়ন্ত্রণে কার্যকর নিয়মকানুন প্রণয়ন ও তার কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে—যেমন নির্মাণস্থলে পানি ছিটানো, কাপড়ে ঢেকে রাখা ইত্যাদি বাধ্যতামূলক করতে হবে। চতুর্থত, বর্জ্য ব্যবস্থাপনার আধুনিকীকরণ এবং জনগণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধিও অত্যন্ত জরুরি; বর্জ্য পৃথক্করণ, সঠিক প্রক্রিয়াকরণ এবং যত্রতত্র ফেলা ও পোড়ানোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। পঞ্চমত, শহরের চারপাশে সবুজ বেষ্টনী তৈরি ও ব্যাপক বৃক্ষরোপণ কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে, যা বায়ু পরিশোধনের প্রাকৃতিক উপায়। এ ছাড়া বায়ুদূষণের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে জনগণের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য গণমাধ্যম, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে কাজে লাগিয়ে পরিবেশবান্ধব জীবনযাপনে উৎসাহিত করতে হবে। একই সঙ্গে, বায়ুমানের নিয়মিত পর্যবেক্ষণ ও তা জনগণের সামনে উপস্থাপনের জন্য উন্নত বায়ু পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন ও তথ্য প্রকাশের ব্যবস্থা করতে হবে, যাতে সবাই সচেতন হয়ে প্রয়োজনীয় সতর্কতা নিতে পারে। সবশেষে, আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও উন্নত দেশগুলোর অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে দীর্ঘমেয়াদি ও টেকসই কৌশল গ্রহণ করতে হবে এবং পরিবেশ সুরক্ষার জন্য বৈশ্বিক চুক্তি ও প্রটোকলগুলো যথাযথভাবে অনুসরণ করতে হবে। এই সব উদ্যোগ সমন্বিতভাবে বাস্তবায়ন করতে পারলেই ঢাকার বাতাস আবার স্বচ্ছ ও সুস্থ করা সম্ভব হবে।
লেখক: শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
একটি সফল গণ-অভ্যুত্থানের মাত্র এক বছরের মধ্যে প্রশ্নটি সর্বব্যাপী হয়ে উঠেছে। কারণ, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে যে বৈষম্যহীন অন্তর্ভুক্তিমূলক গণতান্ত্রিক দেশ এবং ‘দায় ও দরদের সমাজ’ গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয়েছিল, গত এক বছরের চলার পথ তার ধারেকাছেও নেই। বরং এক বছর ধরে দেশবাসী দেখে...
৯ ঘণ্টা আগে২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে ছাত্র আন্দোলন একটি স্ফুলিঙ্গ ছড়িয়েছিল বাংলাদেশের রাজনীতিতে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের দমন-পীড়ন, নির্বাচনী ব্যবস্থার ভেঙে পড়া কাঠামো এবং প্রচলিত দেউলিয়া রাজনীতির বিপরীতে তরুণদের নবজাগরণ এমন এক সম্ভাবনার জন্ম দিয়েছিল, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে নতুন একটি অধ্যায়ের সূচনা করতে পারত..
৯ ঘণ্টা আগেচীনের বেইজিং শহরের তিয়েনআনমেন স্কয়ারের পূর্ব দিকে যে জাতীয় জাদুঘরটি রয়েছে, তা আধুনিককালে যাত্রা শুরু করলেও এর পেছনে জড়িয়ে আছে ১১৩ বছরের ইতিহাস। চীনের এই জাতীয় জাদুঘরের সূচনা ঘটে দুটি আলাদা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে—ন্যাশনাল মিউজিয়াম অব চায়নিজ হিস্টোরি ও মিউজিয়াম অব দ্য চায়নিজ রেভল্যুশন...
৯ ঘণ্টা আগেছোট মেয়েটার বিয়ে হয়ে গেছে। কিন্তু সে পড়াশোনা করতে ভালোবাসে। বিয়ে হলে পড়াশোনা করা যাবে না—এ রকম কোনো আইন নেই এই দেশে। কিন্তু বিয়ের পর যখন ঝিনাইদহের মহেশপুরের ভারত সীমান্তসংলগ্ন স্বরুপপুর-কুসুমপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে মেয়েটা ক্লাস করতে গেছে, তখন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক তাকে বের করে দিয়েছেন। তাঁর যুক্তি
৯ ঘণ্টা আগে