Ajker Patrika

৩৫ ভাগ বাসাভাড়া পেয়েও কলেজ কক্ষে বসবাস করছেন অধ্যক্ষ

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি
কলেজ ভবনের কক্ষে বিছানা পেতে বসবাস করছেন চিলমারী সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. মজিবল হায়দার চৌধুরী। ছবি: আজকের পত্রিকা
কলেজ ভবনের কক্ষে বিছানা পেতে বসবাস করছেন চিলমারী সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. মজিবল হায়দার চৌধুরী। ছবি: আজকের পত্রিকা

চতুর্থ গ্রেডে বেতনভুক্ত শিক্ষক। সঙ্গে বেতনের ৩৫ ভাগ পান বাসাভাড়া। এরপরও কলেজ ভবনের কক্ষে বিছানা পেতে বসবাস করছেন কুড়িগ্রামের চিলমারী সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. মজিবল হায়দার চৌধুরী। সরকারি নির্দেশনা ও প্রশাসনিক নীতিমালা উপেক্ষা করে কলেজ অধ্যক্ষের এভাবে বসবাস করাকে বেআইনি ও নৈতিকতাবিরোধী বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

অধ্যাপক ড. মজিবল হায়দার চৌধুরী মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) হিসেবে রয়েছেন। ২০২৫ সালের এপ্রিল মাসে তিনি চিলমারী সরকারি কলেজে অধ্যক্ষ হিসেবে সংযুক্ত হন। তখন থেকেই তিনি কলেজ প্রশাসনিক ভবনের দ্বিতীয় তলার একটি কক্ষে রাতযাপনসহ বসবাস করে আসছেন।

এ ছাড়া তাঁর বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতা, কলেজের বিভিন্ন ক্রয়সংক্রান্ত বিষয়ে অনিয়ম, সরকারি বরাদ্দ করা অর্থ তছরুপ এবং একাডেমিক কাউন্সিলকে এড়িয়ে কলেজের কয়েকটি কক্ষের দেয়াল ভেঙে নকশা পরিবর্তনের অভিযোগ উঠেছে। তবে তাঁর বিভিন্ন পদক্ষেপে কলেজটির একাডেমিক কার্যক্রমে ইতিবাচক পরিবর্তনসহ নকলমুক্ত পরিবেশে পরীক্ষা পরিচালনা নিশ্চিত করা সম্ভব হয়েছে বলেও কলেজসূত্রে জানা গেছে।

অধ্যক্ষ ড. মজিবল হায়দার চৌধুরী নিয়মবহির্ভূতভাবে কলেজে বসবাসের কথা স্বীকার করলেও তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অন্যান্য অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন। তাঁর দাবি, কলেজের প্রতিটি কাজ কমিটির মাধ্যমে হয়। সেখানে অধ্যক্ষের কিছু করার এখতিয়ার নেই।

কলেজটির শিক্ষক ও কর্মচারীরা জানান, অধ্যক্ষ মজিবল হায়দার চৌধুরী কুমিল্লা জেলার বাসিন্দা। তিনি কলেজ প্রশাসনিক ভবনের দ্বিতীয় তলার একটি কক্ষে রাত্রিযাপনসহ বসবাস করেন। সেখানে তাঁর জন্য বিছানা ও আসবাবপত্র রাখা হয়েছে। অথচ তিনি সরকারি বেতনের সঙ্গে ২৪ হাজার টাকার বেশি বাসাভাড়া ভোগ করছেন।

সরেজমিনে এসব অভিযোগের দৃশ্যমান সত্যতা পাওয়া গেছে। প্রশাসনিক ভবনের দ্বিতীয় তলায় একটি কক্ষে বিছানা ও আসবাবপত্র রয়েছে।

কলেজের একাডেমিক কাউন্সিলের কোষাধ্যক্ষ প্রভাষক জিয়াউর রহমান বলেন, অধ্যক্ষ নিয়মবহির্ভূতভাবে কলেজ ভবনে রাত্রি যাপন করেন। কলেজটিতে তিনি স্বেচ্ছাচারিতা চালু করেছেন। ক্রয় কমিটি, উন্নয়ন কমিটি শুধু নামমাত্র। অধ্যক্ষ নিজের ইচ্ছামতো রেজল্যুশন লিখে শিক্ষকদের স্বাক্ষর নেন। কেউ স্বাক্ষর দিতে না চাইলে তিনি নানা রকম হয়রানির হুমকি দেন।

কলেজটির একাডেমিক কাউন্সিল ও টিচার্স কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক প্রভাষক গোলাম ফারুক বলেন, ‘কলেজে আবাসিক ভবন নেই। সরকার আমাদের মূল বেতনের সঙ্গে ৩৫ ভাগ বাসাভাড়া দেয়। এরপরও অধ্যক্ষ স্যার কলেজ কক্ষে রাত যাপন করছেন। তিনি যে কক্ষে অবস্থান করছেন, সেটি পরীক্ষার সময় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ হিসেবে ব্যবহার করা হতো। তিনি ওই কক্ষে বসবাস করার কারণে এখন পরীক্ষার সময় আমাদের নানান জটিলতায় পড়তে হচ্ছে।’

এ শিক্ষক নেতা আরও বলেন, ‘অধ্যক্ষ স্বেচ্ছাচারিতা ও নানা অনিয়মে জড়িত। কলেজের তিনটি কক্ষের দেয়াল ভাঙা হয়েছে। এতে একাডেমিক কাউন্সিলের অনুমোদন দরকার হলেও তা নেওয়া হয়নি। ক্রয়সংক্রান্ত কমিটি থাকলেও তিনি নিজে কেনাকাটা করেন। পরে ভয়ভীতি দেখিয়ে শিক্ষকদের স্বাক্ষর নেন। এসিআর খারাপ করে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে আমার কাছেও স্বাক্ষর নেওয়া হয়েছে। তদন্ত করলে সব অভিযোগের প্রমাণ বেরিয়ে আসবে।’

অধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. মজিবল হায়দার চৌধুরী বলেন, ‘আমার পরিবার কুমিল্লায় স্থায়ী। চিলমারীতে থাকার বাসা না পেয়ে অনিচ্ছাসত্বেও কলেজের একটি কক্ষে থাকি। এটা ঠিক না হলেও এতে কলেজের পরিবেশ ও নিরাপত্তা ফিরে এসেছে। এখন যেহেতু বিষয়টি নিয়ে সবাই আপত্তি করছে, আমি এটা আর করব না।’

অন্যান্য অভিযোগ প্রসঙ্গে অধ্যক্ষ বলেন, ‘কলেজটিতে শিক্ষা ও পরীক্ষার পরিবেশ ছিল না। আমি যোগদানের পর সেগুলো ঠিক করেছি। ক্রয়সহ সব বিষয়ে কমিটি করা আছে। কমিটির সদস্যরা সব করেন। কুমিল্লায় দাম কম হওয়ায় কিছু জিনিস তাঁরাই আমাকে কিনে আনতে বলেন। কমিটির সদস্যরা সরকারি প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা। তাঁরা সব জেনেবুঝে সচেতনভাবে স্বাক্ষর করার পর আর কোনো কথা বলার সুযোগ নেই। এখন অস্বীকার করলে আমি তাহলে কোথায় যাব? আগে ক্লাস হতো না, শিক্ষকেরা ইচ্ছামতো আসা-যাওয়া করতেন। এখন আমি সবকিছু নিয়মের মধ্যে এনেছি। ফলে অনেকেই আমার বিরুদ্ধে বিষোদগার করছেন। এটা উচিত নয়।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘জুলাই যোদ্ধাদের’ দাবি মেনে সনদের অঙ্গীকারনামায় জরুরি সংশোধন আনল কমিশন

অঙ্গীকারনামায় সংশোধনীর পরও বিক্ষোভ, মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ রণক্ষেত্র

দুই দাবিতে জুলাই সনদ স্বাক্ষরের মঞ্চে অবস্থান ‘জুলাই যোদ্ধাদের’

জুলাই জাতীয় সনদের ৫ নম্বর দফা সংশোধনের যে প্রস্তাব দিলেন সালাহউদ্দিন

জুলাই জাতীয় সনদে স্বাক্ষর করলেন প্রধান উপদেষ্টা ও রাজনৈতিক নেতারা

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ