মুহাম্মদ জাভেদ হাকিম
পরদিন শুক্রবার। তাই বৃহস্পতিবার রাতে ঘুম হারাম। রাতভর এপাশ-ওপাশ করতে করতে ভোর চারটা। এর মাঝেই মোবাইল ফোন বাজতে শুরু করে। অমনি বিছানা ছেড়ে শুরু হলো বের হওয়ার জোর চেষ্টা।
এমনই এক শুক্রবার মোটরবাইকে ঝকঝকে নতুন সিংগাইর সড়ক ধরে মিতরা, ঝিটকা পেরিয়ে মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার আন্ধারমানিক ঘাট। ও হ্যাঁ, নতুন সড়কের বর্ণনা কিছুটা না দিলেই নয়। ধল্লা ব্রিজ পার হওয়ার পর থেকে চোখ স্রেফ আটকে থাকবে পথের দুধারের নিসর্গে। আনমনেই হয়তো গেয়ে উঠবেন—পিচ ঢালা এই পথটারে ভালোবেসেছি...।
মানিকগঞ্জে যাওয়ার এই নতুন সড়কে এখনো ফিটনেসবিহীন যানবাহন চলাচল তেমন একটা চোখে পড়েনি। ফলে বাইকে ইচ্ছেমতো গতিতে রাইড দেওয়া যায়।
ঘাটে বসে চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে যাত্রীবাহী ট্রলার ছাড়ার সময় হলো। চা-দোকানিকে অনুরোধ করে তাঁর দোকানের পাশেই বাইক রেখে ট্রলারে উঠি। ঢেউতোলা প্রমত্তা পদ্মা। ঝলমলে তপ্ত রোদে ছাউনিবিহীন ট্রলার। কিছুক্ষণ চলার পরেই দেখা গেল আকাশে কালো মেঘের ঘনঘটা। হঠাৎ তুফান উঠলে কী হতে পারে, সেদিকে খেয়াল নেই কারও; বরং রোদের তেজ কমে যাওয়ায় মহা খুশি সবাই। প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা পর ট্রলার ভিড়ল লেছড়াগঞ্জ ঘাটে। যাত্রী দেখে ভাড়ায় খাটা বাইকারদের হাঁকডাক। কিন্তু আমাদের সেদিকে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই।
আমরা হাঁটতে শুরু করলাম। সবুজে ঘেরা মেঠো পথ। খানিকটা দূরেই একজনের নেটের মতো ব্যাগে কিছু একটা দেখতে পেয়ে তাকে থামালাম। ব্যাগ খুলতেই দেখি সাপের মতো কিছু একটা! প্রবল উৎসাহ নিয়ে জিজ্ঞেস করতেই বলল, এটা বামবউস মাছ। সাপের মতো আকৃতির বিশাল মাছটি হাতে নিয়ে ছবি তুলে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট দিতেই প্রচুর লাইক-কমেন্ট! বিভিন্ন জনের নানান মন্তব্যের মাধ্যমে জানা গেল, এর সঠিক নাম বামোশ। সচরাচর ধরা পড়ে না। খেতেও নাকি দারুণ স্বাদ।
মাছ নিয়ে ফটোশুট শেষে গ্রামের দিকে এগোতে থাকি। এবার চোখে পড়ল ভুট্টাখেত। কৃষকেরা সমানতালে গাছ থেকে ছিঁড়ে ভুট্টা জমা করছেন। তাঁদের সঙ্গে আমরাও যোগ দিলাম। ভ্রমণ মানেই বিনোদনের পাশাপাশি যাপিত জীবনের শিক্ষা।
এরপর লেছড়াগঞ্জ চরের পাটগ্রাম নামের একটি গ্রামের দিকে এগোতে থাকি। যেতে যেতে বাজার পেরিয়ে আরেক নদীর ধারে। নদীর তীর, আশপাশের পরিবেশ আর স্বচ্ছ পানি দেখে সেখানেই বসে পড়লাম। মানিকগঞ্জ নিবাসী বন্ধু মেহেদীকে মোবাইল ফোনে কল দিয়ে নদীর নাম জিজ্ঞাসা করতেই জানাল—ইছামতী। যে যার মতো দ্রুত হ্যামোক টানিয়ে, পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়ি। আহ্, সেই মজা ইছামতীতে ডুবসাঁতারে! ফিরে গিয়েছিলাম শৈশবের টলটলে বুড়িগঙ্গার পানি। ডুবসাঁতার, উল্টো সাঁতারসহ ইচ্ছেমতো ইছামতীর পানিতে আমরা দাপাদাপি করি।
এর মাঝে নামাজ আদায় শেষ। হেঁটে ও ঘোড়ার গাড়িতে চড়ে লেছড়াগঞ্জ ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম আমরা ঘুরে ঘুরে দেখি। চরজুড়ে ভুট্টাখেত। প্রচুর গাছগাছালিতে নানান পাখির কলতান। তালগাছগুলোতে বাবুই পাখির বাসা। এত বাসা আজকাল কোথাও তেমন চোখে পড়ে না। চরের বাসিন্দারাও বেশ বন্ধুবৎসল। রয়েছে আশ্রয়ণ প্রকল্পের বসতঘর।
সাধারণত বর্ষা কিংবা শরতে লেছড়াগঞ্জের জমিতে পানি থাকে ছুঁই ছুঁই। কিন্তু বন্যা হলে চরের বাসিন্দাদের সরে যেতে হয়। প্রতিবছর লেছড়াগঞ্জের চর এক পাশে বিলীন হয় পদ্মার বুকে, আরেক পাশে জমি জেগে ওঠে। ফলে এর সঠিক আয়তন রেকর্ড করা যায় না। একূল ভাঙে, ওকূল গড়ে—এই তো নদীর খেলা। নদীভাঙন এলাকার মানুষের মুখে মুখে এই কষ্টের বুলি যুগ-যুগান্তর ধরে চলে আসছে। বিদ্যুৎবিহীন নিঝুম চরাঞ্চলের নয়নাভিরাম নৈসর্গিক দৃশ্য দেখতে দেখতে বেলা গড়াল অনেক। তাই আর দেরি না করে ফিরতি ট্রলার ধরতে হয়।
যেভাবে যাবেন
মানিকগঞ্জ জেলার হরিরামপুর উপজেলার লেছড়াগঞ্জ যাওয়ার জন্য মোটরবাইকারদের ঢাকা থেকে সাভারের হেমায়েতপুর হয়ে সিংগাইর-ঝিটকা সড়কে হরিরামপুরের আন্ধারমানিক বাজারে যেতে হবে। সেখান থেকে এক ঘণ্টা পরপর ট্রলার ছেড়ে যায় লেছড়াগঞ্জ ঘাটের উদ্দেশে। সেখান থেকে মোটরবাইক বা ঘোড়ার গাড়িতে পাটগ্রাম। তবে হেঁটে যাওয়ার আনন্দ ভ্রমণে ভিন্নমাত্রা যোগ হবে। এ ছাড়া ঢাকার গাবতলী বাস টার্মিনাল থেকে বিভিন্ন পরিবহনের বাস মানিকগঞ্জ রুটে চলাচল করে। ট্রলার বা ঘোড়ার গাড়ি—সব বাহনেই ভাড়া ঠিক করে নিতে হবে আগে।
খাবারদাবার
লেছড়াগঞ্জ মানিকগঞ্জ জেলার অন্তর্গত হলেও জায়গাটা দুর্গম চরাঞ্চল। সুতরাং শুকনো খাবার অবশ্যই সঙ্গে নিতে হবে।
সতর্কতা
প্রমত্তা পদ্মা নদী পাড়ি দিতে হয়। তাই লাইফ জ্যাকেটসহ নিজ নিজ নিরাপত্তার বিষয় অবশ্যই বিবেচনায় রাখতে হবে।
পরদিন শুক্রবার। তাই বৃহস্পতিবার রাতে ঘুম হারাম। রাতভর এপাশ-ওপাশ করতে করতে ভোর চারটা। এর মাঝেই মোবাইল ফোন বাজতে শুরু করে। অমনি বিছানা ছেড়ে শুরু হলো বের হওয়ার জোর চেষ্টা।
এমনই এক শুক্রবার মোটরবাইকে ঝকঝকে নতুন সিংগাইর সড়ক ধরে মিতরা, ঝিটকা পেরিয়ে মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার আন্ধারমানিক ঘাট। ও হ্যাঁ, নতুন সড়কের বর্ণনা কিছুটা না দিলেই নয়। ধল্লা ব্রিজ পার হওয়ার পর থেকে চোখ স্রেফ আটকে থাকবে পথের দুধারের নিসর্গে। আনমনেই হয়তো গেয়ে উঠবেন—পিচ ঢালা এই পথটারে ভালোবেসেছি...।
মানিকগঞ্জে যাওয়ার এই নতুন সড়কে এখনো ফিটনেসবিহীন যানবাহন চলাচল তেমন একটা চোখে পড়েনি। ফলে বাইকে ইচ্ছেমতো গতিতে রাইড দেওয়া যায়।
ঘাটে বসে চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে যাত্রীবাহী ট্রলার ছাড়ার সময় হলো। চা-দোকানিকে অনুরোধ করে তাঁর দোকানের পাশেই বাইক রেখে ট্রলারে উঠি। ঢেউতোলা প্রমত্তা পদ্মা। ঝলমলে তপ্ত রোদে ছাউনিবিহীন ট্রলার। কিছুক্ষণ চলার পরেই দেখা গেল আকাশে কালো মেঘের ঘনঘটা। হঠাৎ তুফান উঠলে কী হতে পারে, সেদিকে খেয়াল নেই কারও; বরং রোদের তেজ কমে যাওয়ায় মহা খুশি সবাই। প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা পর ট্রলার ভিড়ল লেছড়াগঞ্জ ঘাটে। যাত্রী দেখে ভাড়ায় খাটা বাইকারদের হাঁকডাক। কিন্তু আমাদের সেদিকে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই।
আমরা হাঁটতে শুরু করলাম। সবুজে ঘেরা মেঠো পথ। খানিকটা দূরেই একজনের নেটের মতো ব্যাগে কিছু একটা দেখতে পেয়ে তাকে থামালাম। ব্যাগ খুলতেই দেখি সাপের মতো কিছু একটা! প্রবল উৎসাহ নিয়ে জিজ্ঞেস করতেই বলল, এটা বামবউস মাছ। সাপের মতো আকৃতির বিশাল মাছটি হাতে নিয়ে ছবি তুলে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট দিতেই প্রচুর লাইক-কমেন্ট! বিভিন্ন জনের নানান মন্তব্যের মাধ্যমে জানা গেল, এর সঠিক নাম বামোশ। সচরাচর ধরা পড়ে না। খেতেও নাকি দারুণ স্বাদ।
মাছ নিয়ে ফটোশুট শেষে গ্রামের দিকে এগোতে থাকি। এবার চোখে পড়ল ভুট্টাখেত। কৃষকেরা সমানতালে গাছ থেকে ছিঁড়ে ভুট্টা জমা করছেন। তাঁদের সঙ্গে আমরাও যোগ দিলাম। ভ্রমণ মানেই বিনোদনের পাশাপাশি যাপিত জীবনের শিক্ষা।
এরপর লেছড়াগঞ্জ চরের পাটগ্রাম নামের একটি গ্রামের দিকে এগোতে থাকি। যেতে যেতে বাজার পেরিয়ে আরেক নদীর ধারে। নদীর তীর, আশপাশের পরিবেশ আর স্বচ্ছ পানি দেখে সেখানেই বসে পড়লাম। মানিকগঞ্জ নিবাসী বন্ধু মেহেদীকে মোবাইল ফোনে কল দিয়ে নদীর নাম জিজ্ঞাসা করতেই জানাল—ইছামতী। যে যার মতো দ্রুত হ্যামোক টানিয়ে, পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়ি। আহ্, সেই মজা ইছামতীতে ডুবসাঁতারে! ফিরে গিয়েছিলাম শৈশবের টলটলে বুড়িগঙ্গার পানি। ডুবসাঁতার, উল্টো সাঁতারসহ ইচ্ছেমতো ইছামতীর পানিতে আমরা দাপাদাপি করি।
এর মাঝে নামাজ আদায় শেষ। হেঁটে ও ঘোড়ার গাড়িতে চড়ে লেছড়াগঞ্জ ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম আমরা ঘুরে ঘুরে দেখি। চরজুড়ে ভুট্টাখেত। প্রচুর গাছগাছালিতে নানান পাখির কলতান। তালগাছগুলোতে বাবুই পাখির বাসা। এত বাসা আজকাল কোথাও তেমন চোখে পড়ে না। চরের বাসিন্দারাও বেশ বন্ধুবৎসল। রয়েছে আশ্রয়ণ প্রকল্পের বসতঘর।
সাধারণত বর্ষা কিংবা শরতে লেছড়াগঞ্জের জমিতে পানি থাকে ছুঁই ছুঁই। কিন্তু বন্যা হলে চরের বাসিন্দাদের সরে যেতে হয়। প্রতিবছর লেছড়াগঞ্জের চর এক পাশে বিলীন হয় পদ্মার বুকে, আরেক পাশে জমি জেগে ওঠে। ফলে এর সঠিক আয়তন রেকর্ড করা যায় না। একূল ভাঙে, ওকূল গড়ে—এই তো নদীর খেলা। নদীভাঙন এলাকার মানুষের মুখে মুখে এই কষ্টের বুলি যুগ-যুগান্তর ধরে চলে আসছে। বিদ্যুৎবিহীন নিঝুম চরাঞ্চলের নয়নাভিরাম নৈসর্গিক দৃশ্য দেখতে দেখতে বেলা গড়াল অনেক। তাই আর দেরি না করে ফিরতি ট্রলার ধরতে হয়।
যেভাবে যাবেন
মানিকগঞ্জ জেলার হরিরামপুর উপজেলার লেছড়াগঞ্জ যাওয়ার জন্য মোটরবাইকারদের ঢাকা থেকে সাভারের হেমায়েতপুর হয়ে সিংগাইর-ঝিটকা সড়কে হরিরামপুরের আন্ধারমানিক বাজারে যেতে হবে। সেখান থেকে এক ঘণ্টা পরপর ট্রলার ছেড়ে যায় লেছড়াগঞ্জ ঘাটের উদ্দেশে। সেখান থেকে মোটরবাইক বা ঘোড়ার গাড়িতে পাটগ্রাম। তবে হেঁটে যাওয়ার আনন্দ ভ্রমণে ভিন্নমাত্রা যোগ হবে। এ ছাড়া ঢাকার গাবতলী বাস টার্মিনাল থেকে বিভিন্ন পরিবহনের বাস মানিকগঞ্জ রুটে চলাচল করে। ট্রলার বা ঘোড়ার গাড়ি—সব বাহনেই ভাড়া ঠিক করে নিতে হবে আগে।
খাবারদাবার
লেছড়াগঞ্জ মানিকগঞ্জ জেলার অন্তর্গত হলেও জায়গাটা দুর্গম চরাঞ্চল। সুতরাং শুকনো খাবার অবশ্যই সঙ্গে নিতে হবে।
সতর্কতা
প্রমত্তা পদ্মা নদী পাড়ি দিতে হয়। তাই লাইফ জ্যাকেটসহ নিজ নিজ নিরাপত্তার বিষয় অবশ্যই বিবেচনায় রাখতে হবে।
এশিয়ার জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্রগুলোর অন্যতম ইন্দোনেশিয়া; বিশেষ করে বালি। কিন্তু কখনো কি ভেবে দেখেছেন, বালির বাইরে ইন্দোনেশিয়ায় আরও অনেক কিছু দেখার আছে? হ্যাঁ, আছে। বালি ছাড়াও দেশটিতে এমন পাঁচটি দ্বীপ আছে, যেগুলো এখনো কম পরিচিত।
১ ঘণ্টা আগেভ্রমণের সময় ব্যাগের অতিরিক্ত ওজন অনেকের জন্য ঝামেলার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এতে বিমানবন্দরে বাড়তি চার্জ দিতে হয়। এতে খরচও বাড়ে। এ জন্য কিছু সহজ কৌশল মেনে চললে এই খরচ এড়ানো যায়।
৪ ঘণ্টা আগেযুক্তরাষ্ট্রে জুলাই মাসে বিদেশি পর্যটকের সংখ্যা কমেছে ৩ শতাংশের বেশি। এটি গত মাসেই শুধু নয়, চলতি বছরের শুরু থেকে যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণে অনীহা তৈরি হয়েছে আন্তর্জাতিক পর্যটকদের।
৫ ঘণ্টা আগেইউরোপের বিভিন্ন দেশে গণপর্যটনের বিরুদ্ধে চলছে প্রতিবাদ। স্পেনের বিভিন্ন শহরের রাস্তায় বিক্ষোভ, ভেনিসে এক ধনকুবেরের বিয়েতে বিক্ষোভকারীদের হানা, লুভর মিউজিয়ামের কর্মীদের অতিরিক্ত ভিড়ের কারণে কাজ বন্ধ করে দেওয়ার মতো ঘটনা ঘটছে সেখানে।
৬ ঘণ্টা আগে