Ajker Patrika

২০ দফায় শর্তসাপেক্ষে সম্মতি দিল হামাস, ইসরায়েলকে বোমা হামলা বন্ধের নির্দেশ ট্রাম্পের

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৪ অক্টোবর ২০২৫, ০৯: ২৬
নেতানিয়াহু কিছুতেই স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার বিষয়টি মানতে নারাজ। ছবি: সংগৃহীত
নেতানিয়াহু কিছুতেই স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার বিষয়টি মানতে নারাজ। ছবি: সংগৃহীত

দুই বছর ধরে চলা গাজা যুদ্ধের অবসানে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ২০ দফা শান্তি পরিকল্পনার মূল কিছু শর্ত মেনে নিতে রাজি হয়েছে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাস। হামাসের এই আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়ার পরপরই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইসরায়েলকে অবিলম্বে গাজায় বোমাবর্ষণ বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন। তবে হামাসের নিরস্ত্রীকরণ এবং ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহারসংক্রান্ত প্রধান জটিলতাগুলো এখনো অমীমাংসিত রয়ে গেছে।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নিজেকে গাজায় শান্তি প্রতিষ্ঠার একমাত্র সক্ষম ব্যক্তি হিসেবে দাবি করে আসছেন। তিনি এই যুদ্ধ শেষ করার জন্য উল্লেখযোগ্য রাজনৈতিক পুঁজি বিনিয়োগ করেছেন। শান্তিতে নোবেল পাওয়ার জন্যও উঠেপড়ে লেগেছেন তিনি। এই যুদ্ধ ইসরায়েলকে বিশ্বমঞ্চে ক্রমবর্ধমানভাবে বিচ্ছিন্ন করে তুলেছে এবং হাজার হাজার মানুষের প্রাণহানি ঘটিয়েছে।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ট্রাম্প হামাসকে তাঁর ২০ দফা পরিকল্পনা গ্রহণের জন্য আগামীকাল রোববার পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছিলেন, অন্যথায় ভয়াবহ পরিণতির মুখোমুখি হওয়ার হুঁশিয়ারিও দিয়েছিলেন তিনি। জবাবে হামাস গতকাল শুক্রবার তাদের আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানায়। হামাসের জবাবে ট্রাম্প আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, হামাস ‘স্থায়ী শান্তির জন্য প্রস্তুত’। ট্রুথ সোশ্যালে তিনি সরাসরি নেতানিয়াহু সরকারের প্রতি চাপ সৃষ্টি করে লেখেন, ‘ইসরায়েলকে অবিলম্বে গাজায় বোমাবর্ষণ বন্ধ করতে হবে, যাতে আমরা জিম্মিদের নিরাপদে এবং দ্রুত বের করে আনতে পারি!’ প্রেসিডেন্ট আরও যোগ করেন, এই উদ্যোগ কেবল গাজা নিয়ে নয়, বরং ‘মধ্যপ্রাচ্যে দীর্ঘকাল ধরে প্রত্যাশিত শান্তি প্রতিষ্ঠার’ বিষয়।

হামাস তাদের জবাবে জানায়, তারা ‘যুদ্ধ শেষ করা, বন্দিবিনিময় এবং মানবিক সহায়তা অবিলম্বে প্রবেশের জন্য আরব, ইসলামি বিশ্ব ও আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টার পাশাপাশি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রচেষ্টার প্রশংসা করে।’ তারা এসব প্রস্তাব বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় মাঠ পর্যায়ের শর্তাবলি সাপেক্ষে ট্রাম্পের প্রস্তাবিত বন্দিবিনিময় শর্ত অনুযায়ী জীবিত ও মৃত সব বন্দীকে হস্তান্তর করতে সম্মত হওয়ার কথা জানায়। তারা এই চুক্তির বিস্তারিত আলোচনা শুরু করার জন্য মধ্যস্থতাকারীদের মাধ্যমে আলোচনার অংশ হওয়ার প্রস্তুতির কথা নিশ্চিত করেছে।

যদিও জিম্মি মুক্তির বিষয়ে সম্মতি এসেছে, তবে চুক্তির কয়েকটি মূল শর্ত নিয়ে বড় ধরনের মতবিরোধ এখনো বিদ্যমান। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের হাতে আসা হামাসের জবাবে দেখা যায়, তারা গাজার নিরস্ত্রীকরণ এবং সামরিক শক্তি হ্রাস করার শর্তে সম্মত হয়নি। এই শর্ত ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র উভয়েরই দীর্ঘদিনের দাবি ছিল। হামাস এর আগেও এমন প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে।

এ ছাড়া, হামাস অবিলম্বে গাজা থেকে সম্পূর্ণ সেনা প্রত্যাহারের দাবি জানালেও ট্রাম্পের ২০ দফা পরিকল্পনায় ধাপে ধাপে ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহারের কথা বলা হয়েছে। হামাস এতে সম্মত হয়নি। হামাসের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা আল জাজিরাকে স্পষ্ট করে জানিয়েছেন, ইসরায়েলি দখলদারির শেষ না হওয়া পর্যন্ত হামাস অস্ত্র সমর্পণ করবে না।

হামাস আরও জানায়, তারা ফিলিস্তিনি জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে গঠিত এবং আরব ও ইসলামি বিশ্ব সমর্থনপুষ্ট স্বাধীন (টেকনোক্র্যাট) একটি ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে গাজার প্রশাসনের দায়িত্ব হস্তান্তর করতে প্রস্তুত।

তবে হামাসকে রাজনৈতিক ক্ষমতা থেকে দূরে রাখার ট্রাম্পের প্রস্তাব সম্পর্কে তারা সরাসরি কিছু বলেনি, বরং ভবিষ্যতের যেকোনো ফিলিস্তিনি জাতীয় আলোচনায় তারা ‘অন্তর্ভুক্ত থাকবে এবং তাতে অবদান রাখবে’ বলে জানিয়েছে।

এদিকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইসরায়েলকে বোমাবর্ষণ বন্ধের নির্দেশ দিলেও গাজার বর্তমান চিত্র ভিন্ন। বাসিন্দারা জানিয়েছেন, ট্রাম্পের বার্তা প্রকাশের পরেও ইসরায়েলি ট্যাংকারগুলো গাজা সিটির প্রাণকেন্দ্র তালাতিনি স্ট্রিটে বোমাবর্ষণ করেছে। এমনকি হামাসের বিবৃতি প্রকাশের এক ঘণ্টার মধ্যেই ইসরায়েলি সামরিক বিমান গাজা সিটির রেমাল পাড়ার বেশ কয়েকটি বাড়িতে আক্রমণ তীব্র করে তোলে। খান ইউনিসেও হামলার খবর পাওয়া গেছে।

হামাসের আংশিক সম্মতি এবং ট্রাম্পের নির্দেশনার বিষয়ে ইসরায়েল সরকার এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো মন্তব্য করেনি। তবে ইসরায়েলের পার্লামেন্টের বিরোধীদলীয় নেতা ইয়ার লাপিদ চুক্তির বিস্তারিত চূড়ান্ত করতে দ্রুত আলোচনা শুরু করার জন্য প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

বলতে গেলে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের পর থেকেই অভ্যন্তরীণভাবে প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু এক কঠিন রাজনৈতিক সংকটের মধ্যে পড়েছেন। একদিকে জিম্মিদের পরিবার এবং যুদ্ধক্লান্ত সাধারণ জনগণের পক্ষ থেকে যুদ্ধ অবসানের ক্রমবর্ধমান চাপ; অন্যদিকে তাঁর কট্টর ডানপন্থী জোটের অংশীদাররা গাজায় অভিযান কোনোভাবেই শিথিল না করার দাবিতে অনড়।

ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ দ্রুততার সঙ্গে হামাসের অঙ্গীকার বাস্তবায়নের ওপর জোর দিয়েছেন। ইতালি, যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপের আরও কয়েকটি দেশ হামাসের সম্মতিকে স্বাগত জানিয়েছে। মধ্যস্থতাকারী দেশ কাতার জানিয়েছে, তারা মিশর ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ট্রাম্পের গাজা পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে।

উল্লেখ্য, সর্বশেষ ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাস পরিচালিত ইসরায়েলে হামলার পর এই যুদ্ধের সূত্রপাত হয়। ইসরায়েলের তথ্য অনুযায়ী, ওই হামলায় প্রায় ১ হাজার ২০০ জন নিহত হন এবং ২৫১ জনকে জিম্মি করা হয়। ইসরায়েল বলছে, এখনো ৪৮ জন জিম্মি গাজায় আটক আছেন, যাঁদের মধ্যে ২০ জন জীবিত বলে ধারণা করা হচ্ছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, ইসরায়েলের অব্যাহত অভিযানে এ পর্যন্ত ৬৬ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের অধিকাংশই বেসামরিক নাগরিক। গত মাসে জাতিসংঘের তদন্ত কমিশন ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গাজায় ‘গণহত্যা’ চালানোর অভিযোগ এনেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত